চন্দ্র বিদারণ বা শাক্কুল ক্বমার: সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মু’জিযা শরীফ ও ইলমে গইব উনার সুস্পষ্ট প্রমাণ

اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ وَإِنْ يَرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُسْتَمِرٌّ وَكَذَّبُوا وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءَهُمْ وَكُلُّ أَمْرٍ مُسْتَقِرٌّ .
অর্থ: “ক্বিয়ামত নিকটবর্তী। চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোনো নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে এটা তো চিরাচরিত যাদু। তারা মিথ্যারোপ করছে এবং নিজেদের নফসের অনুসরণ করছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে স্থীরীকৃত হয়।” (পবিত্র সূরা আল ক্বামার শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৩)
জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার লাঠি মুবারক উনার আঘাতে লহিত সাগর বিদীর্ণ করেছিলেন বলে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে প্রমাণ পাওয়া যায় এবং উনার লাঠি মুবারক উনার আঘাতে একটি পাথরে ১২টি পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হওয়ার প্রমাণও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পাওয়া যায়। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আঙ্গুল মুবারকের ইশারায় আকাশের চাঁদকে দ্বিখ-িত করেছেন বলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে প্রমাণ রয়েছে।
হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মু’জিযা শরীফ ছিলো যমীনে; কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম উনার মুজিযা শরীফ ছিলো যমীনে, আসমানে এবং সম্মানিত বেহেশত উনার মধ্যেসহ সর্বত্র।
হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মু’জিযা শরীফ ছিলো অন্য বস্তুর সহায়তায়। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা শরীফ ছিলো বিনা উসীলায়।
হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মু’জিযা শরীফ ছিলো বাহিরের বস্তুর সাহায্যে। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা শরীফ ছিলো স্বয়ং উনার নিজের। মূলত, তিনি নিজেই ছিলেন অনবদ্য মু’জিযা শরীফ। অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বাহ্যিক মু’জিযা শরীফ হাদিয়া করা হয়েছিলো। কিন্তু স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই মু’জিযা শরীফ হিসেবে পাঠানো হয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ৬৫ হাজার মু’জিযা শরীফ হযরত মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা লিপিবদ্ধ করেছেন। (পয়গামে মোহাম্মদী, বাংলা- সোলায়মান নদভী) যদিও এখানে মাত্র ৬৫ হাজার মু’জিযা শরীফ উনার বর্ণনা রয়েছে, প্রকৃতপক্ষে কোটি কোটি অর্থাৎ অসংখ্য ও অগণিত মু’জিযা শরীফ রয়েছে যা কোন কায়িনাতের পক্ষে গণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়।
আল্লামা হযরত শরফুদ্দীন বুসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন খ্যাতনামা মুহাদ্দিছ, ঐতিহাসিক ও ছূফী সাধক ছিলেন। উনার রচিত “ক্বছীদায়ে বুরদা শরীফ” বা ‘নবী প্রশস্তি’ কাব্য গ্রন্থখানি মুসলিম জাহানে এবং আলিম সমাজে উচ্চ প্রশংসিত কিতাব হিসেবে বিবেচিত ও পরিচিত। উক্ত গ্রন্থের বিভিন্ন ভাষ্য বা শরাহ লিখিত হয়েছে। উক্ত গ্রন্থে “শাক্কুল ক্বামার বা চন্দ্র বিদারণের” ঘটনাটি অতি চমৎকারভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক উনার অসীম কুদরত মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবু জাহিলের হাতের মুঠোয় লুকায়িত পাথর-কঙ্কর থেকে পবিত্র কালিমা শাহাদত শরীফ পাঠ করিয়েছিলেন এবং দূরের পাথরকে উনার আদেশ মুবারকে পানিতে সন্তরণ করায়ে নিজের কাছে এনেছিলেন। আবু জাহিল এতোকিছু দেখেও এগুলোকে যাদু বলে অস্বিকার করে। নাউযুবিল্লাহ!
অবশেষে সে ইয়েমেন দেশের শাসক হাবীব ইবনে মালেকের সাহায্য প্রার্থনা করে। হাবীব ইবনে মালেক দলবলসহ পবিত্র মক্কা শরীফে উপস্থিত হয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আবূ জাহিল সাক্ষাত মুবারক উনার আরজু করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাক্ষাত মুবারক দেয়ার লক্ষ্যে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালামসহ সেখানে উপস্থিত হলেন। আবু জাহিলের ইঙ্গিতে হাবীব ইবনে মালেক আরজু করে বললো- যারা পূর্বে নবী-রসূল হিসেবে আগমন করেছিলেন, উনারা অনেক মু’জিযা শরীফ দেখিয়েছেন। আপনি সত্য নবী হলে দয়া করে আকাশের চাঁদকে দ্বিখ-িত করে দেখান।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’রাকায়াত নামায আদায় করে আঙ্গুল মুবারক দিয়ে চাঁদকে ইশারা করতেই চাঁদ দু’টুকরা হয়ে আবু কোবায়েছ পর্বতের দু’দিকে অবস্থান করলো। সুবহানাল্লাহ!
আমেরিকার চন্দ্র বিজয়ী নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে চাঁদ দ্বিখ-িত হওয়ার প্রমাণ পেয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সত্যতা স্বীকার করে মুসলমান হয়ে গেছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গইব উনার অধিকারী কিনা তা জানার জন্য হাবীব ইবনে মালেক পুনরায় আরজু প্রকাশ করে বলল, আমি দেশ থেকে আসার সময় মনে মনে একটি নিয়ত করে এসেছি। আপনি আমার মনের সে গায়েবী বা গোপন কথাটি বলতে পারলে বুঝে নেব- আপনি সত্য নবী। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, “তোমার একমাত্র মেয়ে আজন্ম পঙ্গু। তুমি মনে মনে নিয়ত করেছো- আমি সত্য নবী প্রমাণিত হলে তুমি আমার কাছে তোমার মেয়ের রোগমুক্তির জন্য দোয়া চাইবে। যাও! তোমার মেয়ে আরোগ্য লাভ করেছে এবং সে মুসলমানও হয়ে গেছে।” সুবহানাল্লাহ! এ কথা শুনেই হাবীব ইবনে মালিক পবিত্র কালিমা তাইয়্যিবা পাঠ করে মুসলমান হয়ে যান। কিন্তু আবু জাহিল আবু জাহিলই রয়ে যায়।
এজন্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, “সূর্য উল্টো পানে ফিরে এলো; চাঁদ ইশারায় দু’ টুকরো হলো। হে অন্ধ ও গোমরাহ ওহাবীরা! তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক মু’জিযা শরীফ উনার কুদরত ও শক্তি দেখে নাও এবং উনার ইলমে গইব উনার প্রমাণ নাও।”
হাবীব ইবনে মালেক ইয়েমেন ফিরে গিয়ে রাত্রি বেলায় ঘরে পৌঁছে দেখলেন- মেয়ে সুস্থ হয়ে পিতার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। সুবহানাল্লাহ!
চন্দ্র বিদারণের ঘটনাটি সংক্ষিপ্ত আকারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। সীরাত গ্রন্থসমূহেও বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। (আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া শরীফ)