সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ভুল, বিভ্রান্তিমুলক কুফরী বক্তব্যের উপযুক্ত জবাব

  • ‘মীলাদুন নবী’ শব্দের শরয়ী কোন ভিত্তি নেই, তাই এটি পরিত্যাজ্য। নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘মীলাদুন নবী’ শব্দের শরয়ী কোন ভিত্তি নেই, তাই এটি পরিত্যাজ্য। নাঊযুবিল্লাহ!
    এর জাওয়াব হলো- উক্ত উলামায়ে সূ’রা তাদের বক্তব্যে ‘ঈদ’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘মীলাদুন নবী’ শব্দ ব্যবহার করে প্রমাণ করেছে যে, তারা খোদ ইবলিসেরই একান্ত অনুসারী। কারণ নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমন উপলক্ষে কেবল ইবলিস ও তার চেলারাই নাখুশি বা নারাজী প্রকাশ করেছিল। অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার আগমন উপলক্ষে স্বয়ং আল্লাহ পাক- উনার নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশতাকুল, জান্নাতের অধিবাসীগণ এবং বনের পশু-পাখিরা পর্যন্ত। খুশি প্রকাশ করে উনারা ছানা-ছিফত বর্ণনা করেছিলেন এবং পাঠ করেছিলেন ছলাত-সালাম। সুবহানাল্লাহ!
    অতএব, মুসলমানগণ শুধু ‘মীলাদুন নবী’ নয় বরং উনারা ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পরিভাষা ব্যবহার করে থাকেন।
    মূলত ‘ঈদ’ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা। আর ‘মীলাদ’ ও ‘নবী’ দুটি শব্দ একত্রে মিলে ‘মীলাদুন নবী’ বলা হয়। ‘মীলাদ’-এর তিনটি শব্দ রয়েছে- ميلادমীলাদ, مولد মাওলিদ ও مولود মাওলূদ। ميلاد‘মীলাদ’ অর্থ জন্মের সময়, مولد ‘মাওলিদ’ অর্থ জন্মের স্থান, مولود ‘মাওলূদ’ অর্থ সদ্যপ্রসূত সন্তান। আর النبى ‘নবী’ শব্দ দ্বারা নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
    অর্থাৎ আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থে ميلاد النبى ‘মীলাদুন নবী’ বলতে নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফকে বুঝানো হয়ে থাকে। আর পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থে ميلاد النبى ‘মীলাদুন নবী’ বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করা, উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা, উনার পুতঃপবিত্র জীবনী মুবারকের সামগ্রীক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করাকে বুঝানো হয়।
    অতএব, ‘মীলাদুন নবী’ শব্দটি যদিও খাছ কিন্তু মাফহূম বা ভাবার্থ হিসেবে এটি আম বা এর অর্থ ব্যাপক। কেননা, ‘মীলাদুন নবী’-এর উদ্দেশ্য হলো নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা উনার আহকাম বা নির্দেশাবলী খাছভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। যার মাধ্যমে মানুষ তাদের সৃষ্টি, তাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা সম্পর্কে। অবহিত হয়েছে, আরো অবহিত হয়েছে তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে। অর্থাৎ তারা যদি আল্লাহ তায়ালা’ উনার সেই আহকাম মেনে চলে তাহলে তারা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনাদের মুহব্বত-মা’রিফাত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দী লাভ করবে।
    কাজেই, যেই হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার ওসীলায় সেই আহকাম বা নির্দেশাবলী এই উম্মত লাভ করলো সেই হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার মুবারক আগমন উপলক্ষে উনার স্মরণের জন্য এই উম্মতের উচিত তথা উম্মতের জন্য ফরয খুশি প্রকাশ করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে। (সূরা ইউনুস-৫৮)
    এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
    قال على رضى الله تعالى عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنةبغير حساب.

     

    অর্থ: হযরত আলী কররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো এবং তাতে সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী খুশি প্রকাশ করলো সে অবশ্যই ঈমানের সাথে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ!

  • রবীউল আউয়াল শরীফ মাস হিসেবে বিশেষভাবে সীরাতুন নবী মাহফিল করা যেতে পারে।

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, রবীউল আউয়াল শরীফ মাস হিসেবে বিশেষভাবে সীরাতুন নবী মাহফিল করা যেতে পারে।
    এর জাওয়াব হলো- রবীউল আউয়াল শরীফ মাস হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ তথা বিলাদত শরীফ-এর মাস। কাজেই সেই বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উম্মাহকে ঈদ তথা খুশি প্রকাশ করতে হবে অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বা উদযাপন করতে হবে। এটা উম্মাহর জন্য ফরয।
    এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে। (সূরা ইউনুস-৫৮)
    মূলত ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করতে হবে এবং উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করতে হবে এবং এ উপলক্ষেই মাহফিল বা মজলিসের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার মুহব্বত ও ইতায়াতের মাধ্যমে উনার শাফায়াত ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
    সুতরাং, যারা রবীউল আউয়াল শরীফ মাসে সীরাতুন নবী’র মাহফিলের কথা বলে তাদের সে বক্তব্য সম্পূর্ণ গুমরাহীমূলক। কারণ ‘মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ’ সীরাতুন নবীর জন্য নির্দিষ্ট মাস নয় যে, এ মাসে বিশেষভাবে সীরাতুন নবীর মাহফিল করতে হবে। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীরাত মুবারকের আলোচনা তো বছরের যে কোন সময় যে কোন দিন যে কোন সপ্তাহ ও মাসে করা যেতে পারে এবং সে হুকুমই কালামুল্লাহ শরীফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে।
    আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
    انا ارسلنك شاهدا ومبشرا ونذيرا لتؤمنوا بالله ورسوله وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصيلا.
    অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী হিসেবে এ কারণে যে, তোমরা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনবে এবং উনার খিদমত করবে, উনাকে ইজ্জত-সম্মান করবে এবং উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করবে সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সবসময়।” (সূরা ফাতহ-৯)
    অতএব, রবীউল আউয়াল শরীফ যেহেতু মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাস সেহেতু এ মাসে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেই মাহফিল করতে হবে অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিল করতে হবে।

  • ‘ইসলামের সোনালী যুগ তথা খইরুল কুরুনে কেউ এমন কোন ঈদ, উৎসব পালন করেননি। তাই এটা পরিত্যাজ্য।’

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘ইসলামের সোনালী যুগ তথা খইরুল কুরুনে কেউ এমন কোন ঈদ, উৎসব পালন করেননি। তাই এটা পরিত্যাজ্য।’
    এর জাওয়াব হলো- খইরুল কুরুন হচ্ছে পর্যায়ক্রমে ছাহাবী, তাবিয়ী ও তাবি’ তাবিয়ীনগণের যুগ। আর উক্ত তিন যুগের প্রথম যুগই হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের যুগ এবং সে যুগেই ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উদযাপিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.

     

    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)
    হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.

     

    অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজ গৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ছলাত-সালাম (দুরূদ শরীফ) পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা-৩৫৫)
    অতএব প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক- উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার যামানাতেই অর্থাৎ খইরুল কুরুনের প্রথম যুগেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ‘ঈদে মীলানদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উপলক্ষে মাহফিল করেছেন এবং সে মাহফিলে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হয়ে ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উদযাপনকারীগণকে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও শাফায়াত লাভের সুসংবাদ দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উপলক্ষে মাহফিল করবে উনাদের জন্যেও একই সুসংবাদ দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
    অতএব, ‘খইরুল কুরুনের মধ্যে কেউ এমন কোন ঈদ, উৎসব পালন করেননি’ উলামায়ে সূ’দের এ কথা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো এবং সাথে সাথে তাদের জিহালতীও পরিস্ফুটিত হলো।
    উল্লেখ্য, কোন আমল খইরুল কুরুনের মধ্যে না থাকলে যে তা পরিত্যাজ্য হবে এ কথা সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ ও কুরআন-সুন্নাহ’র খিলাফ। বরং কোন আমল গ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয় হওয়ার জন্য খইরুল কুরুন শর্ত নয়। শর্ত হচ্ছে সে আমল কুরআন-সুন্নাহ সম্মত কি না? যদি কুরআন-সুন্নাহ সম্মত হয় তাহলে তা গ্রহণীয়। আর যদি কুরআন-সুন্নাহ সম্মত না হয় তবে তা বর্জনীয় বা পরিত্যাজ্য।
    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غيره ان ينقص من اجرهم شىء .

     

    অথ: হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)
    অতএব, খইরুল কুরূনের মধ্যে কেউ এমন কোন ঈদ, উৎসব পালন করেননি’ উলামায়ে সূ’দের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও কুরআন-সুন্নাহ’র খিলাফ তথা কুফরী বলে প্রমাণিত হলো।

  • ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বর্ণিত সকল বর্ণনাই মওজু’ বা জাল। নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বর্ণিত সকল বর্ণনাই মওজু’ বা জাল। নাঊযুবিল্লাহ!
    এর জাওয়াব হলো- কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের কাছে ইসলামী শরীয়তের সমস্ত বর্ণনা বা দলীলই মওজু’ বা জাল। ফলে, তারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর কোন বর্ণনাই গ্রহণ করে না বা মানে না। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, একবার যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমাম আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে এক খ্রিস্টান বাহাছ করার জন্য আসলো।

    ইমাম আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথমেই সেই খ্রিস্টান ব্যক্তিকে বললেন, আপনি কি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস স্বীকার করেন? সে ব্যক্তি জবাব দিল যে, আমি ঐসব কোনটিই স্বীকার করি না। তখন হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তাহলে আপনার সাথে বাহাছ করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি চলে যান।
    একইভাবে বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদ আ’যম, আওলাদুর রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম যখন কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস থেকে অসংখ্য দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এ ফতওয়া প্রকাশ করলেন যে, ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও সাইয়্যিদে ঈদে আকবার অর্থাৎ মহান ও বড় দিন বা ঈদেরও সাইয়্যিদ বা শ্রেষ্ঠ এবং এ ঈদ পালন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। এবং তা রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও শাফায়াত লাভের কারণ, সর্বোপরি আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি পাওয়ার মাধ্যম বা ওসীলা।

    তখন ইহুদী, নাছারা, কাফির, মুশরিকদের এজেন্ট ও অনুসারী উলামায়ে সূ’রা কোনরূপ দলীল-প্রমাণ ব্যতীত মনগড়াভাবে প্রচার শুরু করলো যে, ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বর্ণিত সকল বর্ণনাই মওজু’ বা জাল। নাঊযুবিল্লাহ!
    অতএব, যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয-এর স্বপক্ষে যেসব আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণের কিতাবের বর্ণনা বা উদ্ধৃতি তথা ইজমা’ ও ক্বিয়াস থেকে দলীল হিসেবে পেশ করা হয়েছে। উলামায়ে ছূ’দের ক্ষমতা থাকলে তারা যেন সেসব দলীল মওজু’ বা জাল প্রমাণ করে। কিন্তু তারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত অবধি তা পারবে না।

  • ‘ইসলামী শরীয়তের নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবপত্রে ঈদে মীলাদুন নবী-এর বৈধতা দেয়া হয়নি।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘ইসলামী শরীয়তের নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবপত্রে ঈদে মীলাদুন নবী-এর বৈধতা দেয়া হয়নি।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো- ইহুদী, নাছারা, কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের কাছে দ্বীন ইসলাম তথা ইসলামী শরীয়তের কোন গুরুত্ব নেই। ফলে তাদের নিকট ইসলামী শরীয়তের কোন কিতাবেরও কোন গুরুত্ব নেই। তা কুরআন শরীফই হোক কিংবা হাদীছ শরীফ-এর কোন কিতাবই হোক অথবা অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের কোন কিতাবই হোক।

    অন্যথায় যেখানে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরামগণের লিখিত বিশ্বসমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ অসংখ্য কিতাবের দলীল-আদিল্লাহ’র মাধ্যমে যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এ অকাট্যভাবে ফতওয়া প্রকাশ বা প্রদান করা হয়েছে যে, মু’মিন-মুসলমানদের জন্য শুধু ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা-এর দু’ ঈদই নয়, এ দু’ ঈদ ব্যতীত তাদের জন্য আরো অনেক ঈদ রয়েছে এবং সমস্ত ঈদের সাইয়্যিদ বা সেরা ঈদ হচ্ছে ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এবং এ ঈদ পালন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয। সুবহানাল্লাহ!

    এতদসত্ত্বেও মুসলমান ছূরতে মুনাফিক, ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিকদের ঘৃণ্য এজেন্ট ও অনুসারী উলামায়ে সূ’গং সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য দলীল-প্রমাণ ব্যতীত মনগড়াভাবে প্রচার করে যাচ্ছে যে, ইসলামী শরীয়তের নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে ‘ঈদে মীলাদুন নবী’-এর বৈধতা দেয়া হয়নি। নাঊযুবিল্লাহ!

    আসলে এসব উলামায়ে সূ’ গংদেরকেই আল্লাহ পাক সূরা আ’রাফ-এর মধ্যে চতুষ্পদ জন্তুর মতো বরং তার চেয়েও নির্বোধ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, তারা এমন যে, তাদের অন্তর থাকার পরও তারা বুঝবে না, চোখ থাকার পরও তারা দেখবে না এবং কান থাকার পরও তারা শুনবে না এবং এরা জাহান্নামী হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

    এ প্রসঙ্গে “সূরা আরাফ”-এর ১৭৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
    لقد ذرانا لجهنم كثيرا من الجن والانس لهم قلوب لا يفقهون بها ولهم اعين لايبصرون بها ولهم اذان لا يسمعون بها اولئك كالانعام بل هم اضل اولئك هم الغفلون.
    অর্থ: “আমি জিন-ইনসানের মধ্য হতে অনেককে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ অনেকেই তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমলের কারণে জাহান্নামী হবে। তাদের অন্তর থাকার পরও তারা বুঝবে না, চক্ষু থাকার পরও তারা দেখবে না এবং কান থাকার পরও তারা শুনবে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো। বরং তার চেয়েও নির্বোধ। এবং তারা হচ্ছে চরম গাফিল অর্থাৎ তারা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে চরম জাহিল। উনাদের যিকির ও ছানা-ছিফত করার ব্যাপারে অমনোযোগী।”

    উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ-এ সূরা মারইয়াম-এর মধ্যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর মুবারক দিনে উনাদের প্রতি আল্লাহ পাক-উনার পক্ষ থেকে সালাম অর্থাৎ খাছ রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
    وسلم عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا.
    অর্থ: উনার প্রতি সালাম (শান্তি) যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন। (সূরা মারইয়াম-১৫)

    অনুরূপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম সম্পর্কে উনার নিজের বক্তব্য কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
    والسلم على يوم ولدت ومو اموت ويوم ابعث حيا.
    অর্থ: আমার প্রতি সালাম যেদি আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো। (সূরা মারইয়াম-৩৩)

    এছাড়া সূরা মায়িদা-এর মধ্যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-উনার প্রতি আসমানী (বেহেশতী) খাদ্যের এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটিকে উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল উম্মতদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

    যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম দোয়া করেছিলেন-
    اللهم ربنا انزل علينا مائدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا واية منك وارزقنا وانت خير الرازقين. قال الله انى منزلها عليكم فمن يكفر بعد منكم فانى اعذبه عذابا لا اعذبه احدا من العالمين.
    অর্থ: আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্তী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। আল্লাহ পাক বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে ও তার নাযিলের দিনটিকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি সারা ক্বায়িনাতের অপর কাউকে দিব না। (সূরা মায়িদা-১১৪,১১৫)

    একইভাবে হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ ও প্রসিদ্ধ কিতাব ইবনে মাজাহ ও মিশকাত শরীফ-এ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি, উনার যমীনে আগমন এবং বিছাল শরীফ-এর দিন জুমুআর দিনকে ঈদের দিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এই জুমুআর দিনকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা অপেক্ষা মহান দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن عبيد بن السباق مرسلا وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنه متصلا قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يوم جعله الله عيدا فاغسلوا ومن كان عنده طيب فلا يضره ان يمس منه وعليكم بالسواك.
    অর্থ: হযরত উবায়িদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসালসূত্রে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুআর দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যে দিনটিকে আল্লাহ পাক ঈদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত)

    عن ابى ليلة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله فيه ادم الى الاوض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسأل العبد فيها شيأ الا اعطاه ما لايسأل حراما وفيه تقوم الساعة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا ارض ولا رياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة.
    অর্থ: হযরত আবূ লায়লা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে উনাকে বিছাল শরীফ দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ পাক-উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশ্তা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

    عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما افترى ادم الخطيئة قال يارب اسألك بحق محمد لما غفرت لى فقال الله يا ادم وكيف عرفت محمدا ولم اخلقه؟ قال يا رب لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى فرأيت على قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلمت أنك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك فقال الله صدقت يا ادم انه لاحب الخلق الى ادعنى بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد ما خلقتك. هذا حديث صحيح الاسناد.
    অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম- উনার দোয়া ক্ববূলের সময় হলো। তখন তিনি দুয়া করলেন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম-উনার ওয়াসীলায় প্রার্থনা করছি, অতএব আমার দুয়া ক্ববূল করুন। আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে চিনলেন, অথচ এখনো উনাকে দুনিয়ায় প্রেরণ করিনি? জবাবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম বললেন, হে আমার রব! আপনি যখন আমাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারকে তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ ফুকে দেন, তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করে আরশের খুঁটিসমূহে লিখিত দেখতে পাই-
    لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم
    (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ বা মাবূদ নেই সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-উনার রসূল।’ তখন আমি বুঝতে পারলাম আপনার নাম মুবারকের সাথে যাঁর নাম মুবারক সংযুক্ত আছে তিনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সবচেয়ে মুহব্বতের হবেন। আল্লাহ পাক বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম আপনি ঠিকই বলেছেন, কারণ তিনি সৃষ্টির মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মুহব্বতের। হযরত আদম আলাইহিস সালাম বললেন, আয় আল্লাহ পাক! উনার ওসীলায় আমার প্রার্থনা ক্ববূল করুন। আল্লাহ পাক বললেন, আমি আপনার দুয়া কবূল করলাম। যদি আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না। সুবহানাল্লাহ! এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।
    (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ্ ১ম খ- ৮৮ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুস্তাদরাক ২য় খ- ১০৬৯ পৃষ্ঠা, আত তাওয়াস্সুল ১১৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরুদ দুররিল মানছূর লিস সুয়ূত্বী ১ম খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ১১ খ- ৪৫৫ পৃষ্ঠা)

    এখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন যদি ঈদ ও রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিলের দিন হয় এমনকি সামান্য এক খাদ্যের খাঞ্চা নাযিলের দিন যদি ঈদ তথা খুশির দিন হয়, তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুন নাবিইয়ীন, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন ঈদ বা খুশির দিন হবে না কেন? এবং হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার যমীনে আগমন ও বিদায়ের কারণে জুমুআর দিন যদি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়ে মহান বা শ্রেষ্ঠ হয় তাহলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালামসহ কোন নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সৃষ্টি করা হতো না। শুধু তাই নয়, আসমান-যমীন, লওহো, কলম, আরশ-কুরসী, জিন-ইনসান, ফেরেশতা, জান্নাত-জাহান্নাম এক কথায় কায়িনাতের কোন কিছুকেই সৃষ্টি করা হতো না, তাহলে উনার যমীনে আগমন তথা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন কত মহান, কত খুশির হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

    ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ইসলামী শরীয়তের অসংখ্য কিতাবাদির মধ্য হতে কেবলমাত্র মূল কিতাব কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ থেকে প্রদান করা হলো। যাতে একমাত্র কাফির ব্যতীত কোন মুসলমানের পক্ষে ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’-এর বৈধতার ব্যাপারে কোন প্রকার চু-চেরা না থাকে।

  • ‘বিশাল সংখ্যক ছাহাবীর মধ্যে একজনকেও এমন পাওয়া যায়নি যিনি গুরুত্বের সাথে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করেছেন। উনারা কেন করেননি? কারণ ইসলামে এই জাতীয় অনুষ্ঠানের কোন অবকাশ নেই।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে ছূ’রা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘বিশাল সংখ্যক ছাহাবীর মধ্যে একজনকেও এমন পাওয়া যায়নি যিনি গুরুত্বের সাথে এই দিনটি উদযাপন করেছেন। উনারা কেন করেননি? কারণ ইসলামে এই জাতীয় অনুষ্ঠানের কোন অবকাশ নেই।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো- উলামায়ে ছূ’দের উক্ত বক্তব্য সরাসরি হাদীছ শরীফ বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। কারণ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

    হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.
    অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজ গৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার শানে ছলাত-সালাম (দুরূদ শরীফ) পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা-৩৫৫)

    অতএব, হাদীছ শরীফ-এর এরূপ সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী বর্ণনা থাকার পরেও জাহিল, গুমরাহ, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরকার লোকদের বক্তব্যের ক্ষেত্রে বলতে হয়, পেঁচা সূর্য দেখতে পায় না বলে কি এ কথা আদৌ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হবে যে, সূর্য উদিত হয়নি? কস্মিনকালেও নয়।

  • ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামে নেই।

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে ছূ’রা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামে নেই।
    এর জাওয়াব হলো- পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই দ্বীন ইসলামে রয়েছে।

    যেমন এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে। (সূরা ইউনুস-৫৮)

    আর হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে-
    عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.

    অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজ গৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার শানে ছলাত-সালাম (দুরূদ শরীফ) পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা-৩৫৫)

    কাজেই প্রতিভাত হলো যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন ইসলামে রয়েছে।
    তবে তা উলামায়ে ছূ’দের প্রবর্তিত দ্বীনে মওদূদী ও দ্বীনে দেওবন্দীর মধ্যে নেই। আর দ্বীনে মওদূদী ও দ্বীনে দেওবন্দীর মধ্যে না থাকার কারণেই উক্ত দ্বীন দ্বয়ের অনুসারীরা পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করে থাকে। শুধু তাই নয়, দ্বীন ইসলামের আরো অনেক বিষয়ই তাদের প্রবর্তিত মনগড়া দ্বীনের মধ্যে নেই। যেমন- আল্লাহ পাক- উনার হাবীব তিনি নূর মুবারক-এর সৃষ্টি, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারী, তিনি হাযির-নাযির, তিনি আমাদের মত মানুষ নন, উনার ছায়া মুবারক ছিল না, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ সুন্নত ইত্যাদি। বরং এসবের বিপরীতে দ্বীন ইসলামে যেসব বিষয় হারাম ও কুফরী সে বিষয়গুলোই তাদের প্রবর্তিত দ্বীনের মধ্যে রয়েছে। যেমন- ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র করা, নারী নেতৃত্ব গ্রহণ করা, ছবি তোলা, টিভি দেখা, বেপর্দা হওয়া, গান-বাজনা করা, খেলাধুলা করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মূর্তি বানানো, মূর্তি রাখা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, সুদ-ঘুষ খাওয়া, শরাব পান করা, ব্যভিচার করা ইত্যাদি। নাঊযুবিল্লাহ!

    এসব উলামায়ে ছূ’দের সম্পর্কেই নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষরাও কখনো শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তাহলে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না।’
    হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولاابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولا يفتنونكم.
    অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ)

  • .‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি ঈদ হতো এবং সকল ঈদের সেরা ঈদ হতো, তবে এখানে ছলাত থাকতো, খুতবা থাকতো। ছলাত ডবল হতো, খুতবা ডবল হতো। কিন্তু এখানে ছলাত, খুতবা নেই।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি ঈদ হতো এবং সকল ঈদের সেরা ঈদ হতো, তবে এখানে ছলাত থাকতো, খুতবা থাকতো। ছলাত ডবল হতো, খুতবা ডবল হতো। কিন্তু এখানে ছলাত, খুতবা নেই।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো:- পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ অর্থাৎ সকল ঈদের সেরা ঈদ সেহেতু এ ঈদে এমন ছলাত রয়েছে যেই ছলাত শুধু ডবলই নয় বরং দায়িমী ছলাত। এ ছলাত শুরু হয়েছে সৃষ্টির শুরু থেকে এবং এটা জারী থাকবে অনন্তকাল ধরে। কারণ এ ছলাত স্বয়ং আল্লাহ পাক পড়েন। সুবহানাল্লাহ!

    এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
    إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.
    অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এবং উনার ফেরেশতারা নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ছলাত পড়েন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার শানে ছলাত পড়ো এবং সেই সাথে যথাযথ সম্মানে সালামও পেশ করো।” (সূরা আহযাব, আয়াত শরীফ ৫৬)

    উক্ত আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক মু’মিন-মুসলমানদের জন্য এ ছলাত পড়া ফরয-ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এমনকি এ ছলাত অন্য ইবাদতসমূহের মধ্যেও পড়ার হুকুম রয়েছে। বিশেষ করে দোয়া বা মুনাজাতকে বলা হয়েছে ইবাদতের মগজ।

    যেমন হাদীছ শরীফ-এর ইরশাদ হয়েছে-
    الدعاء مخ العبادة.
    অর্থ: দোয়া হলো ইবাদতের মগজ বা সারবস্তু।

    আর সেই দুয়া বা মুনাজাত ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত উনার শানে ছলাত পড়া না হবে। সুবহানাল্লাহ!
    যেমন হাদীছ শরীফ-এর বর্ণিত রয়েছে-
    عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال ان الدعاء موقوف بين السماء والارض لايصعد منها شىْء حتى تصلى على نبيك.
    অর্থঃ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই দুয়া আসমান ও যমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ না করবে ততক্ষণ তোমার কোন দুয়াই আল্লাহ পাক-এর নিকট পৌঁছবেনা।

    ‘তাইসীরুল উছূল’ কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
    الدعاء موقوف بين السماء والارض لا يصعد حتى يصلى على النبى صلى الله عليه وسلم. صلوا على اول الدعاء واوسطه واخره.
    অর্থঃ “দুয়া আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত দুয়া উপরে উঠে না বা কবুল হয় না। সুতরাং তোমরা দুয়ার শুরুতে, মধ্যখানে ও শেষে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করো।”

    অতএব, এ ছলাতের গুরুত্ব কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একইভাবে এ ঈদে এত বিশাল ও এত ব্যাপক খুতবা রয়েছে, যে খুতবা (হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার আলোচনা, প্রশংসা, মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত, ছানা-ছিফত) ক্বিয়ামত পর্যন্ত বর্ণনা করা হলেও তা শেষ হবে না। সুবহানাল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক নিজেই ইরশাদ করেন-
    ورفعنا لك ذكرك.
    অর্থ: ‘হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার আলোচনা বা খুতবাকে বুলন্দ করেছি।’ (সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত শরীফ ৪)

    এবং আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে আদেশ করেছেন যে-
    إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا. لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا.
    অর্থঃ ‘তোমরা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার খিদমত করো, উনাকে সম্মান করো এবং সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদাসর্বদা উনার প্রশংসা, ছানা-ছিফত, মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করো। এক কথায় উনার শানে খুতবা প্রদান করো।’ (সূরা ফাতহ, আয়াত শরীফ ৮-৯) সুবহানাল্লাহ!

    স্মরণীয় যে, সব ঈদের হুকুম এক রকম নয়। যেমন ঈদুল ফিতরের বিশেষ আমল হলো ঈদের নামাযের পূর্বে ছদকাতুল ফিতর আদায় করা। আর ঈদুল আযহার বিশেষ আমল হলো ঈদের নামাযের পরে পশু কুরবানী করা। যার প্রত্যেকটি ওয়াজিব। এ দু’ঈদে কিন্তু রোযা রাখা হারাম। কিন্তু জুমুআর দিন ও আরাফা’র দিন মুসলমানদের এ দু’ ঈদে রোযা রাখা হারাম নয় বরং অশেষ ফযীলতের কারণ। আর এ দু’ ঈদের আমলের মধ্যে কুরবানী কিংবা ছদক্বাতুল ফিতর কোনটিই নেই। বরং জুমুআর দিনে যুহরের নামাযের পরিবর্তে কেবলমাত্র পুরুষ, বালিগ, সুস্থ, মুক্বীম ব্যক্তির জন্য মসজিদে গিয়ে খুতবাসহ নামায আদায় করতে হয়। আর মহিলাদের জন্য জুমুআর দিনে আলাদা কোন ছলাতও নেই, আবার খুতবাও নেই। আর আরাফা’র দিনে শুধুমাত্র যারা হজ্জে যেয়ে থাকেন তাদের জন্য ৯ই যিলহজ্জ আরাফা’র ময়দানে অবস্থান করাটা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। আর শুধুমাত্র হাজীগণের জন্য আরাফা’র ময়দানে যুহর ও আছর নামায পড়তে হয়। ঈদের দিন হওয়া সত্ত্বেও আরাফা’র ময়দানে আলাদা কোন ছলাত নেই। আর খুতবা শুধুমাত্র হাজীগণের জন্যই। হাজীগণ ব্যতীত দুনিয়ার কোন মুসলমানের জন্য হোক সে পুরুষ অথবা মহিলা আরাফা’র দিন ঈদের দিন হওয়া সত্ত্বেও আলাদা কোন ছলাতও নেই, খুতবাও নেই। আর অন্যান্যদের জন্য আরাফা’র দিন রোযা রাখা খাছ সুন্নত এবং অশেষ ফযীলতের কারণ।

    এছাড়া হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম- উনার প্রতি খাঞ্চা নাযিলের দিনকে যে ঈদের দিন সাব্যস্ত করা হয়েছে সে ঈদ উপলক্ষে কোন খুতবা ও ছলাত (নামায) রয়েছে কি? বরং সে ঈদ উপলক্ষে কেবল খাদ্য গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ঈদ হলেই যে খুতবা ও ছলাত থাকতে হবে, তা নয়। বরং একেক ঈদের একেক হুকুম, যা আল্লাহ পাক- উনার কুদরতের অন্তর্ভুক্ত।
    অতএব, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে উলামায়ে সূ’দের প্রদত্ত বক্তব্য চরম জিহালত ও মূর্খতা বলেই প্রমাণিত হলো।

  • “নবীজীর জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। তাই মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়।”

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, “নবীজীর জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। তাই মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়।”

    এর জাওয়াব হলোঃ উলামায়ে সূ’দের উক্ত কথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। কারণ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর নির্দেশ হলো যে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন বা আমল করা অবশ্যই ঠিক।

    এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন-
    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ.
    অর্থ: “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ পাক- উনার ইতায়াত করো এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর উনাদের ইতায়াত করো। অতঃপর যখন কোন বিষয়ে উলিল আমরগণের মাঝে ইখতিলাফ দেখতে পাবে তখন (সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য) তোমরা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করো অর্থাৎ যে উলিল-আমরের কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল বেশি হবে উনারটিই গ্রহণ করো।” (সূরা নিসা, আয়াত শরীফ ৫৯)

    প্রকাশ থাকে যে, ইখতিলাফ বা মতভেদ দুই রকমের হয়ে থাকে।
    (১) শুধু হক্বের জন্য হক্ব তালাশীগণের ইখতিলাফ। যেমন- ঈমানের শর্ত হিসেবে কেউ উল্লেখ করেছেন,
    التصديق باالجنان والاقرار باللسان.
    অর্থ: “অন্তরে বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি।”
    আবার কেউ উল্লেখিত দু’টি শর্তের সাথে তৃতীয় শর্ত হিসেবে
    والعمل بالاركان.
    অর্থ: “ফরযসমূহ আমল করা” উল্লেখ করেছেন।
    অনুরূপ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি বিষয় বা আমলের ক্ষেত্রে তার মাসয়ালা-মাসায়িল, হুকুম-আহকাম বর্ণনার ব্যাপারে ইখতিলাফ পরিলক্ষিত হয়।

    এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
    اختلاف العلماء رحمة.
    অর্থ: “হক্কানী-রব্বানী আলিমগণের ইখতিলাফ রহমতের কারণ।”

    যেমন- হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ ইখতিলাফ করে হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী, হাম্বলী- ৪টি মাযহাবকেই হক্ব বলে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং এর উপরই উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

    (২) হক্ব তালাশীগণের সাথে নাহক্বপন্থীদের ইখতিলাফ বা মতবিরোধ। যেমন- হক্বপন্থীদের আক্বীদা হলো আল্লাহ পাক এক এবং অদ্বিতীয়। নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শেষ নবী ও রসূল। তিনি নূরের সৃষ্টি। তিনি ইলমের গইবের অধিকারী ইত্যাদি। কিন্তু এসবের বিপরীত হলো বাতিলপন্থীদের আক্বীদা। যেমন- তাদের কারো আক্বীদা হলো, আল্লাহ পাক তিনজন অর্থাৎ তারা ত্রিত্ববাদ বা তিন খোদায় বিশ্বাসী। নাঊযুবিল্লাহ! কারো আক্বীদা হলো- আল্লাহ পাক, উনার হাবীব শেষ নবী ও রসূল নন। নাঊযুবিল্লাহ। কারো আক্বীদা হলো, তিনি নূরের সৃষ্টি নন। নাঊযুবিল্লাহ! তিনি ইলমে গইবের অধিকারী নন। নাঊযুবিল্লাহ! ইত্যাদি।

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় যদি পালন করা ঠিক না হয় তাহলে কি আল্লাহ পাক, আল্লাহ পাক উনার হাবীব, ঈমান-ইসলাম সব বাদ দিতে হবে? কস্মিনকালেও নয়। বরং আল্লাহ পাক যে নির্দেশ দিয়েছেন, যেখানে মতভেদ হবে সেখানে যে উলিল আমরের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দলীল বেশি হবে, উনারটিই গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং, যে ব্যক্তি বলবে মতভেদপূর্ণ বিষয় পালন করা ঠিক নয়, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মুরতাদ ও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।

    আর কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে তখন যেই মতটি অত্যধিক ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবে তা আমল করতে হবে। মতভেদ আছে বলে, মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলদের উক্তি বৈ কিছুই নয়। এ বক্তব্যও কুরআন-সুন্নাহ’র সম্পূর্ণ বিপরীত ও কুফরীর শামিল।

    স্মরণীয় যে, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর দিন। এটাই সবচেয়ে ছহীহ ও মশহূর মত।
    যেমন, এ প্রসঙ্গে হাফিয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন-
    عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله تعالى عنهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول.
    অর্থ: “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল।” (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া)

    উক্ত হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ বলেছেন,
    “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত্ তাহযীব)

    “দ্বিতীয় বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনে মীনা। তিনিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ্,তাক্বরীব)

    আর তৃতীয় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এ দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবীর বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার পবিত্র বিলাদত দিবস।” এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই ইমামগণের ইজ্মা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ )

    উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার পবিত্র বিলাদত দিবস। এটাই ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দুর্বল। অতএব, তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

  • .‘নবীজীর জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে।’

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘নবীজীর জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে।’

    এর জাওয়াব হলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর সঠিক তারিখ ১২ই রবীউল শরীফ সম্পর্কে যারা চু-চেরা করে থাকে তারা দু’ দিক থেকে কাফির।

    প্রথমত তারা হাদীছ শরীফ-এর বর্ণনাকে অস্বীকার করার কারণে কাফির। যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    روى ابو بكر ابن ابى الشيبة بسند الصحيح عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله تعالى عنهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول.
    অর্থ: হযরত হাফিয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন, হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল। (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

    এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই ইমামগণের ইজমা’ (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ)

    দ্বিতীয়ত কালামুল্লাহ শরীফ-এ বর্ণিত ‘নাসী’কে স্বীকার করে নেয়ার কারণে কাফির। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
    إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِينَ كَفَرُواْ يُحِلِّونَهُ عَامًا وَيُحَرِّمُونَهُ عَامًا لِّيُوَاطِؤُواْ عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللّهُ فَيُحِلُّواْ مَا حَرَّمَ اللّهُ
    অর্থ: “নিশ্চয়ই নাসী তথা মাসকে আগে পিছে করা কুফরীকে বৃদ্ধি করে থাকে। এর দ্বারা কাফিরেরা গুমরাহীতে নিপতিত হয়। তারা (ছফর মাসকে) এক বছর হালাল করে নেয় এবং আরেক বছর হারাম করে নেয়; যাতে আল্লাহ পাক- উনার হারামকৃত মাসগুলোর গণনা পূর্ণ করতে পারে।” (সূরা তওবা, আয়াত শরীফ ৩৭)

    অর্থাৎ জাহিলিয়াতের যুগে কাফির, মুশরিকরা ছফর মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করতো। তাই তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক এ মাসটিকে আগে-পিছে করতো। আরেকটি কারণ হলো, যখন তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ করার প্রয়োজন মনে করতো বা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো তখন তারা ছফর মাসকে আগে পিছে করে হারাম মাসের সংখ্যা নিরূপন করতো। যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। (তাফসীরে দুররে মানছূর)

    এছাড়াও কাফির, মুশরিকরা তাদের নিজেদের স্বার্থে দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্য বছরকে বারো মাসে গণনা না করে কোন কোন বছর দশ মাস থেকে সতের মাস পর্যন্ত গণনা করতো, যা নাসী হিসেবে মশহুর। এর কারণে নূরে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর তারিখ ও বার কস্মিনকালেও মিলানো সম্ভব নয়। কারণ বিলাদত শরীফ থেকে বিদায় হজ্জ পর্যন্ত প্রায় তেষট্টি (৬৩) বছর। এই তেষট্টি বছর যাবৎ কাফির, মুশরিকরা নাসী করেছে। আর এই জন্যই বিদায় হজ্জের সময় খুতবাতে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাস, তারিখ, বার, স্থান সমস্ত কিছু নতুন করে ফায়সালা করেছেন। যা বিদায় হজ্জের খুতবায় বর্ণিত রয়েছে।
    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى بكرة رضى الله تعالى عنه قال خطبنا النبى صلى الله عليه وسلم يوم النحر قال ان الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق الله السموات والارض السنة انثى عشر شهرا منها اربعة حرم ثلث متواليات ذو القعدة وذوالحجة والمحرم ورجب مضر الذى بين جمادى وشعبان وقال اى شهر هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس ذا الحجة قلنا بلى قال اى بلد هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس البلدة قلنا بلى قال فاى يوم هذا قلنا الله ورسوله اعلم فسكت حتى ظننا انه سيسميه بغير اسمه قال اليس يوم النحر قلنا بلى قال فان دماءكم واموالكم واعراضكم عليكم حرام كحرمة يومكم هذا فى بلدكم هذا فى شهركم هذا وستلقون ربكم فيسئلكم عن اعمالكم الا فلا ترجعوا بعدى ضلالا يضرب بعضكم رقاب بعض الا هل بلغت قالوا نعم قال اللهم اشهد فليبلغ الشاهد الغائب فرب مبلغ اوعى من سامع.
    অর্থ: হযরত আবূ বাক্রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর দিনে (দশই যিলহজ্জ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করলেন এবং বললেন, বৎসর ঘুরে এসেছে তার গঠন অনুযায়ী, যেদিন আল্লাহ তায়ালা আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন। বৎসর বার মাসে। তার মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। তিনটি পর পর এক সাথে- যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুহররম এবং চতুর্থ মাস মুদ্বার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদাল উখরা ও শা’বানের মধ্যখানে অবস্থিত। অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটি কোন্ মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক অবগত। অতঃপর তিনি এতক্ষণ চুপ রইলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, এটি কি যিলহজ্জ নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর তিনি বললেন, এটি কোন্ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক অবগত। অতঃপর তিনি এতক্ষণ চুপ রইলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, এটি কি পবিত্র মক্কা শহর নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর তিনি বললেন, এটি কোন্ দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক অবগত। অতঃপর তিনি এতক্ষণ চুপ রইলেন যাতে আমরা ভাবলাম যে, সম্ভবতঃ তিনি এর অন্য নাম করবেন। তৎপর বললেন, এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান তোমাদের জন্য পবিত্র যেমন তোমাদের এই মাস, এই শহর ও এই দিন পবিত্র। তোমরা শীঘ্রই আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট পৌঁছবে আর তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সাবধান! আমার পর তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে একে অন্যের জীবননাশ করো না। বলুন, আমি কি তোমাদেরকে (আল্লাহ তায়ালা উনার বিধান) পৌঁছাইনি? ছাহাবায়ে কিরামগণ বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ পাক! আপনি সাক্ষি থাকুন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে এটা পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা, অনেক এমন ব্যক্তি যাকে পরে পৌঁছানো হয় সে আসল শ্রোতা অপেক্ষা ও এর অধিক উপলব্ধিকারী ও হিফাযতকারী। (বুখারী ও মুসলিম)

    অতএব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ-এর সঠিক তারিখ ১২ রবীউল আউয়াল শরীফ ব্যতীত অন্য যেসব তারিখ ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে তা কাফিরদের নাসী তথা মাস, দিন, তারিখ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বর্ণিত রয়েছে। ফলে তা মানা বা গ্রহণ করা বা স্বীকার করা প্রত্যেকটিই কুফরীর সামিল।

  • ‘নবীজীর ইন্তিকাল দিবস হচ্ছে দুঃখের দিন। আর দুঃখের দিনে খুশি প্রকাশ করাটা অন্যায়।’

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘নবীজীর ইন্তিকাল দিবস হচ্ছে দুঃখের দিন। আর দুঃখের দিনে খুশি প্রকাশ করাটা অন্যায়।’

    এর জাওয়াব হলো- উক্ত বক্তব্য কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর সম্পূর্ণ খিলাফ। যা কাট্টা কুফরী। কেননা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ, পুনরুত্থান প্রত্যেকটিই রহমত, বরকত ও সাকীনার কারণ এবং ঈদ বা খুশি প্রকাশের কারণ।

    যেমন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-وسلم عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا.
    অর্থ: ‘উনার প্রতি সালাম (শান্তি) যে দিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন।’ (সূরা মারইয়াম, আয়াত শরীফ ১৫)

    অনুরূপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম সম্পর্কে উনার নিজের বক্তব্য কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
    والسلم على يوم ولدت ومو اموت ويوم ابعث حيا.
    অর্থ: ‘আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যে দিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি এবং যেদিন পুনরুত্থিত হবো।’ (সূরা মারইয়াম, আয়াত শরীফ-৩৩)

    আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে- আল্লাহ পাক- উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
    حياتى خير لكم ومماتى خير لكم.
    অর্থ: ‘আমার হায়াত-মউত সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ বা খায়ের-বরকতের কারণ।’ (কানযুল উম্মাল)

    এছাড়া হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে- আল্লাহ পাক- উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
    ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض.
    অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।’ (নাসায়ী শরীফ)

    অতঃপর আল্লাহ পাক- উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
    ان هذا يوم جعله الله عيدا.
    অর্থ: ‘এ জুমুআর দিন হচ্ছে এমন একটি দিন যে দিনকে আল্লাহ পাক ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)

    প্রতিভাত হলো যে, জুমুআর দিনটি আল্লাহ পাক- উনার নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম- উনার বিছাল শরীফ-এর দিন হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সে দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাহলে কি আল্লাহ পাক অন্যায় করেছেন? নাঊযুবিল্লাহ!

    আর আল্লাহ পাক- উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই জুমুআর দিনকে খুশির দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে তিনিও কি এ ঘোষণা দিয়ে অন্যায় করেছেন? নাঊযুবিল্লাহ!

    অতএব, উলামায়ে সূ’দের বক্তব্য মুতাবিক যদি নবীগণের বিছাল শরীফ-এর দিন খুশি প্রকাশ করা অন্যায়মূলক কাজ হয় তাহলে তাদের ভাষায় বলতে হয় যে, ‘আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর দিনকে খুশির দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করে এবং আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই দিনকে খুশির দিন ঘোষণা দিয়ে অন্যায় করেছেন।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এ আক্বীদা যদি কোন ব্যক্তি বা মুসলমান পোষণ করে তবে সে কাট্টা কাফির হয়ে চিরজাহান্নামী হবে।
    উল্লেখ্য, নবীজীর ইন্তিকাল দিবসকে দুঃখের দিন বলে যারা উক্ত দিনে খুশি প্রকাশ না করে শোক পালন করতে চায়, সেটা সম্পূর্ণরূপে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কাজ।
    কারণ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    امرنا ان لا نحد على ميت فوق ثلاث الا لزوج.
    অর্থ: ‘আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা যেন কারো ইনতিকালে তিন দিনের পর আর শোক প্রকাশ না করি। তবে স্বামীর জন্য স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে।’ (মুয়াত্তা- ইমাম মালিক, বুখারী, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারিমী)

    অতএব, শরীয়তের দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা নবীজীর বিছাল শরীফ-এর দিন ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফকে কারো পক্ষেই শোকের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। কাজেই, যেদিনটি শোকের দিন নয়, সেদিন কি করে শোক পালন করবে? তাই আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফকে নিয়ামত মনে করে উক্ত দিনে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করাই হচ্ছে প্রত্যেক উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

  • ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবায়ে কিরাম পালন করেননি বিধায় সেটা নাজায়িয ও বিদআত।’

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবায়ে কিরাম পালন করেননি বিধায় সেটা নাজায়িয ও বিদআত।’

    এর জাওয়াব হলো- আল্লাহ পাক সূরা আ’রাফ-এর ১৭৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এর মধ্যে উলামায়ে সূ’দের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন,
    لقد ذرانا لجهنم كثيرا من الجن والانس لهم قلوب لا يفقهون بها ولهم اعين لايبصرون بها ولهم اذان لا يسمعون بها اولئك كالانعام بل هم اضل اولئك هم الغفلون.
    অর্থ: “আমি জিন-ইনসানের মধ্য হতে অনেককে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ অনেকেই তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমলের কারণে জাহান্নামী হবে। তাদের অন্তর থাকার পরও তারা বুঝবে না, চক্ষু থাকার পরও তারা দেখবে না এবং কান থাকার পরও তারা শুনবে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো। বরং তার চেয়েও নির্বোধ। এবং তারা হচ্ছে চরম গাফিল অর্থাৎ তারা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে চরম জাহিল। উনাদের যিকির ও ছানা-ছিফত করার ব্যাপারে অমনোযোগী।” (সূরা আ’রাফ, আয়াত শরীফ ১৭৯)

    এই যদি হয় উলামায়ে সূ’দের প্রকৃত পরিচয় তাহলে তাদেরকে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা’ ও ক্বিয়াস-এর দলীল দিয়ে যতই বুঝানো হোক, দলীল দেখানো হোক, দলীল শুনানো হোক সেটা তারা কখনোই বুঝবে না, দেখবে না এবং শুনবেও না। যেমনিভাবে বুঝা, দেখা ও শুনা সম্ভব নয় গরু, গাধা ইত্যাদি চতুষ্পদ জন্তুর পক্ষে।

    অথচ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

    হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.
    অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজ গৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার শানে ছলাত-সালাম (দুরূদ শরীফ) পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা-৩৫৫)

    অতএব, যেখানে একাধিক হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে মজলিসের আয়োজন করেছেন এবং সে মজলিসে স্বয়ং নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হয়ে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও শাফায়াতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
    সেখানে কি করে উলামায়ে সূ’রা এ কথা বলতে পারলো যে, ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবায়ে কিরাম পালন করেননি বিধায় সেটা নাজায়িয ও বিদআত। নাঊযুবিল্লাহ!

    মূলত এরাই হলো হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত দাজ্জালে কায্যাব এবং এদেরই জায়-ঠিকানা হচ্ছে জুব্বুল হুযুন। যেই জুব্বুল হুযুনের ভয়াবহ শাস্তি দেখে স্বয়ং জাহান্নাম প্রতিদিন চারশ’ বার পানাহ তলব করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!

    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تعوذوا بالله من جب الحزن قالوا يا رسول الله وما جب الحزن قال واد فى جهنم يتعوذ منه جهنم كل يوم اربع مائة مرة قيل يارسول الله ومن يدخلها قال القراء المرائون باعمالهم وفى رواية اخرى وان من ابغض القراء الى الله تعالى الذين يزورون الامراء.
    অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একবার হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা ‘জুব্বুল হুযন’ হতে আল্লাহ তায়ালার নিকট পানাহ চাও। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘জুব্বুল হুযন কি? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, জাহান্নামের মধ্যে একটি উপত্যকা যা হতে (জাহান্নামের অধিবাসী তো দূরের কথা) স্বয়ং জাহান্নামও দৈনিক চার শতবার পানাহ চেয়ে থাকে। ছাহাবায়ে কিরামগণ পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাতে কারা প্রবেশ করবে? তিনি বললেন, ক্বারী-হাফিয-মাওলানা যারা লোক দেখানো আমল করে থাকে। এদের মধ্যে আবার তারাই আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত, যারা আমীর-উমারাদের সাথে মেলামেশা করে থাকে। (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ)

  • বিদআত যতই সুন্দর হোক না কেন তা বর্জনীয়

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, বিদআত যতই সুন্দর হোক না কেন তা বর্জনীয়।

    এর জাওয়াব হলোঃ উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্যও কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। কারণ সব বিদআতই বর্জনীয় নয়। বরং যেসব বিষয় বিদআতে সাইয়িয়াহ অর্থাৎ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ, সেগুলো বর্জনীয়। যেমন ইসলামের নামে ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি দেখা ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা ইত্যাদি।

    আর যা বিদআতে হাসানাহ অর্থাৎ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত তা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ বিদআতে হাসানাহ তিন প্রকার। ১. ওয়াজিব, ২. মুস্তাহাব-সুন্নত, ৩. মুবাহ।
    এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غيره ان ينقص من اجرهم شىء.
    অথ: হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

    উল্লেখ্য, বিদআতে হাসানাহকে বিদআত লিদদ্বীনও বলা হয় অর্থাৎ যা দ্বীনের জন্য সাহায্যকারী। কেউ কেউ আবার এই বিদআতে হাসানাহকে বিদআতে লুগাবীও বলে থাকেন। অর্থাৎ যদিও শাব্দিক অর্থে বিদআত বলা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা সুন্নতেরই অন্তর্ভুক্ত। কারণ উক্ত হাদীছ শরীফ-এ ‘সুন্নত’ শব্দটিই প্রকৃতপক্ষে উল্লেখ রয়েছে।

    এছাড়া হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ’র কিতাবসমূহে স্বয়ং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত অনেক আমলকেও বিদআত অর্থাৎ বিদআতে হাসানাহ বা উত্তম বিদআত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন মিশকাত শরীফ-এ উল্লেখ আছে, “আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তারাবীহ নামায নিয়মিতভাবে জামায়াতে পড়ার আমল জারী বা উদ্ভাবন করার পর তিনি নিজেই বলেন-
    نعمت البدعة هذه.
    এ পদ্ধতিটি উত্তম বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।”

    অনুরূপভাবে ফিক্বাহ’র বিখ্যাত কিতাব ‘দুররুল মুখতার’-এর ১ম খ- ৩৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
    كذالك نقول فى الاذان بين يدى الخطيب فيكون بدعة.
    অর্থাৎ- তৃতীয় খলীফা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উদ্ভাবিত জুমুআর দিনে মসজিদের বাইরে একটি আযান বৃদ্ধি করা ও পূর্বের আযানকে (যা বর্তমানে ছানী আযান নামে পরিচিত) মিম্বরের সম্মুখে, খতীবের সামনে নিয়ে আসার আমলকেও বিদআত তথা বিদআতে হাসানাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

    আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    ما راه المؤمنون حسن فهو عند الله حسن.
    অর্থ: ‘মু’মিনগণ যা ভাল মনে করেন তা আল্লাহ পাক- উনার কাছে ভাল বলেই বিবেচিত।’ (মিশকাত শরীফ)

    এখন কথা হলো, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম ও দুররুল মুখতার কিতাবের মুছান্নিফ কি জানতেন না যে, খুলাফায়ে রাশিদীন বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আমলগুলো সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত? অবশ্যই জানতেন। তাহলে উল্লেখিত আমলকে উনারা বিদআত বলে উল্লেখ করলেন কেন? যেহেতু উল্লেখিত আমলগুলো আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে দ্বীনের খাতিরে বা দ্বীনের সাহায্যের জন্য নতুন উদ্ভাবিত কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত আমল। তাই লুগাতী বা শাব্দিক অর্থে উক্ত আমলকে বিদআত বা বিদআতে হাসানাহ বলা হয়েছে। হাক্বীক্বীত এগুলোও সুন্নত তথা সুন্নতে ছাহাবা’র অন্তর্ভুক্ত। কেননা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن العرباض ين سارية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهدين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.
    অর্থ: হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও খুলাফায়ে রাশিদীনগণের উদ্ভাবিত সুন্নতগুলো অবশ্যই পালনীয়। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আকড়ে ধরে থাক।’ (মিশকাত শরীফ)

    অতএব, বিদআত মাত্রই পরিত্যাজ্য বা বর্জর্নীয় নয়। যদি বিদআত মাত্রই পরিত্যাজ্য হয় তবে তারাবীহ নামাযের জামাআত ও জুমুআর আযানকেও পরিত্যাজ্য বা বর্জনীয় বলতে হবে। আর এটা বললে কি ঈমান থাকবে? কস্মিনকালেও ঈমান থাকবে না। কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে।

  • জন্মাষ্টমী, বৌদ্ধপূর্ণিমা, যিশুর জন্ম দিনের মত ঈদে মীলাদুন নবী নামে বিধর্মীয় সংস্কৃতি পালন করা হচ্ছে । নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, জন্মাষ্টমী, বৌদ্ধপূর্ণিমা, যিশুর জন্ম দিনের মত ঈদে মীলাদুন নবী নামে বিধর্মীয় সংস্কৃতি পালন করা হচ্ছে । নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো- উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য হাদীছ শরীফ-এর সরাসরি মুখালিফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে।
    কারণ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

    অতএব, উলামায়ে সূ’দের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলে অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করলে যদি বিধর্মীয় সংস্কৃতি পালন করা হয় তাহলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কি তা করেছেন? নাঊযুবিল্লাহ! আর উনারা সেটা করেছেন বললে কি ঈমান থাকবে? বলার অপেক্ষা রাখে না, আদৌ ঈমান থাকবে না। বরং কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে।
    উল্লেখ্য, উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য মুতাবিক পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলে যদি সেটা জন্মাষ্টমী, বৌদ্ধপূর্ণিমা ও যিশুর জন্মদিনের মত বিধর্মীয় সংস্কৃতি পালন করা হয়, তাহলে বলতে হয় যে, স্বয়ং আল্লাহ পাকই সর্বপ্রথম সেসব বিধর্মীয় সংস্কৃতি পালন করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!

    কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাকই উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ফেরেশতাগণসহ অন্যান্যদেরকেও খুশি প্রকাশ করার জন্য হুকুম দিয়েছেন।

    যেমন- এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশতাকুল, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিল বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করেছিলেন এবং উনার প্রতি পাঠ করেছিলেন ছলাত-সালাত ও তাসবীহ তাহলীল।” সুবহানাল্লাহ!

    একইভাবে মহান আল্লাহ পাক এই উম্মতের প্রতিও নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে।
    এই প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে। (সূরা ইউনুস, আয়াত শরীফ-৫৮)

    অতএব, উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য আল্লাহ পাক উনার শানে এমন কাট্টা কুফরী যে, কেউ যদি তা কল্পনাও করে সে কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে।
    শুধু তাই নয়, ইসলাম ও মুসলমানদের কোন বিষয় সর্বোপরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত কোন বিষয় বিধর্মী-বিজাতীয়দের সাথে তুলনা দেয়া ও দেয়ার কল্পনা করাটাই কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হওয়ার কারণ।

    আরো উল্লেখ্য, উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের বিরোধী হওয়ার কারণেও কাট্টা কুফরী হয়েছে। কেননা ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ সকলেই ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত ও বিশ্বসমাদৃত ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- “বিশিষ্ট তাবিয়ী ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    قال الحسن البصرى رحمة الله عليه وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهْبًا فَاَنْفَقْتُهٗ عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
    অর্থ: আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ব্যয় করতাম।” সুবহানাল্লাহ!

    শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
    অর্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো, খাদ্য তৈরি করলো, জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং তথা সুন্নাহ উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।” সুবহানাল্লাহ!

    সাইয়্যিদুত ত্বায়িফাহ হযরত জুনাইদ বাগদাদী ক্বাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    قال جنيد البغدادى رحمة الله عليه مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدَرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالاِيْمَانِ.
    “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে বেহেশতী হবে।” সুবহানাল্লাহ!

    সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন-
    قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ” مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
    অর্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্্যাপন করা হয়, সেখানে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক- উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরীল, হযরত মীকাঈল, হযরত ইসরাফীল ও হযরত আযরাঈল আলাইহিমুস সালাম মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” সুবহানাল্লাহ!

    অতএব প্রমাণিত হলো, মহান আল্লাহ পাক- উনার মনোনীত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ এবং ওলীআল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের আমলকে বিধর্মীদের কালচারের সাথে তুলনা দেয়া সুস্পষ্ট কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
    উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত ও প্রতিভাত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ দিবসকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ফেরেশতাগণ, ছাহাবায়ে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম সকলেরই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

    এখানে উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত কোন আমল অন্য কোন ধর্মাবলম্বী পালন করলে যে তা মুসলমানের জন্য পালন করা যাবে না এ আক্বীদা বা বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও কুফরী।

    যেমন, বিধর্মীদের অনেকে দাড়ি রাখে, সেজন্য মুসলমান কি দাড়ি রাখা ছেড়ে দিবে? কখনোই নয়। বিধর্মীদের অনেকে আবার পাগড়ি পরিধান করে যেমন- কাদিয়ানী, শিখ ও শিয়া সম্প্রদায়, সেজন্য মুসলমানগণ কি পাগড়ি পরিধান করা ছেড়ে দিবে? কস্মিনকালেও নয়। বরং মুসলমানগণ যে বিষয়টি পালন করবে সে বিষয়টি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত হলেই তা পালন করবে। আর কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত না হলে তা পালন করা যাবে না।

    আরো উল্লেখ্য, মুসলমানদের জন্য দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের কোন আমল, তর্জ-তরীক্বা বা নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
    কাজেই, মুসলমানরা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের অনুসরণ করে জন্মাষ্টমী, বৌদ্ধপূর্ণিমা ও যিশুর জন্ম দিনের মতো ঈদে মীলাদুন নবী পালন করছে এ বক্তব্য আদৌও শুদ্ধ নয়; বরং কাট্টা কুফরী। প্রকৃতপক্ষে বিধর্মীরাই ইসলাম ও মুসলমানদের থেকে নিয়ে অনেক বিষয়ই গ্রহণ করেছে ও করে থাকে।
    অতএব, ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম ও মুসলমানদের এ রহমত, বরকত, সাকীনা ও ফযীলতপূর্ণ আমলটি বিধর্মী-বিজাতীয়দের কালচারের সাথে তুলনা করা বা তুলনা দেয়াটা কাট্টা কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

  • ‘কোন এক বাদশাহর মনে এই চিন্তার উদয় হলো, ‘খ্রিস্টানরা যখন ঈসা আলাইহিস সালাম উনাদের জন্মদিন পালন করে তখন আমরা কেন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত পালন করবো না? এই ভাবনা থেকেই সেই বাদশাহ মীলাদুন নবীর সূচনা করে।’

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘কোন এক বাদশাহর মনে এই চিন্তার উদয় হলো, ‘খ্রিস্টানরা যখন ঈসা আলাইহিস সালাম উনাদের জন্মদিন পালন করে তখন আমরা কেন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত পালন করবো না? এই ভাবনা থেকেই সেই বাদশাহ মীলাদুন নবীর সূচনা করে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলোঃ উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল, মনগড়া, ধারণাপ্রসূত, দলীলবিহীন এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সূচনা কোন বাদশাহ করেননি; বরং এর সূচনা স্বয়ং আল্লাহ পাকই করেছেন। কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাকই উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ফেরেশতাগণসহ অন্যান্যদেরকেও খুশি প্রকাশ করার জন্য হুকুম দিয়েছেন

    যেমন- এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশতাকুল, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিল বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করেছিলেন এবং উনার প্রতি পাঠ করেছিলেন ছলাত-সালাম ও তাসবীহ তাহলীল। সুবহানাল্লাহ!

    একইভাবে মহান আল্লাহ পাক এই উম্মতের প্রতিও নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে।
    যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস, আয়াত শরীফ-৫৮)

    এ হুকুম বা নির্দেশের কারণে স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেন।
    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

    অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর খুলাফায়ে রাশিদীনগণের প্রত্যেকেই উনাদের খিলাফতকালে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদান করেছেন।
    যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম‘ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
    قَالَ اَبُوْ بَكْرِنِ الصِّدِِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِىْ فِىْ الْجَنَّةِ.
    অর্থ: “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!

    وَقَالَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْيَا الاِسْلامَ.
    অর্থ: “হযরত উমর ফারূকআলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!

    وَقَالَ عُثْمَانُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَاََنَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرٍ وَحُنَيْنٍ.
    অর্থ: “হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করলো সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!

    وَقَالَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لِِّقِرَائَتِهٖ لايَخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا بِالاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ.
    অর্থ: “হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহুআলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!

    এমনিভাবে পরবর্তী সময়ে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ধারা অব্যাহত বা জারী রেখেছেন ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ।
    যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত আলীআলাইহিস সালাম উনার ছাত্র ও খলীফা, বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    قال الحسن البصرى رحمة الله عليه وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهْبًا فَاَنْفَقْتُهٗ عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
    অর্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’ সুবহানাল্লাহ!

    হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
    অর্থ: ‘যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো, খাদ্য তৈরি করলো, জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!

    সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফাহ হযরত জুনাইদ বাগদাদী ক্বাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    قال جنيد البغدادى رحمة الله عليه مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدَرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالاِيْمَانِ.
    অর্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে বেহেশ্তী হবে।” সুবহানাল্লাহ!

    হযরত ইমাম মারূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    قال المعروف الكرخى رحمة الله عليه مَنْ هَيَّأَ طَعَامًا لاَجْلِ قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَمَعَ اِخْوَانًا وَاَوْقَدَ سِرَاجًا وَلبِسَ جَدِيْدًا وَتَبَخَّرَ وَتَعَطَّرَ تَعْظِيْمًا لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَشَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الْفِرْقَةِ الاُوْلٰى مِنَ النَّبِيّنَ وَكَانَ فِىْ اَعْلٰى عِلِّيِّيْن.
    অর্থ: “যে ব্যক্তি ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিসে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাক পরিধান করে, সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, আল্লাহ পাক তাকে নবী আলাইহিমুস সালামগণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাক্বামে অধিষ্ঠিত হবেন।” সুবহানাল্লাহ্!

    হযরত ইমাম সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    قال السر سقتى رحمة الله عليه مَنْ قَصَدَ مَوْضعًا يُقْرَأُ فِيْهِ مَوْلِِدُ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ قَصَدَ رَوْضَةً مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ لاَنَّهٗ مَا قَصَدَ ذٰلِكَ الْمَوْضعَ اِلا لِمُحَبَّةِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
    অর্থ: “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করলো সে যেন নিজের জন্য জান্নাতে রওযা বা বাগান নির্দিষ্ট করলো। কেননা সে তা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর আল্লাহ পাক- উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ্!

    হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
    مَا مِنْ شَخْصٍ قَرَاَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مِلْحٍ اَوْ بُرٍّ اَوْشَىء اٰخَرَ مِنَ الْمَأكُوْلاتِ اِلا ظَهَرَتْ فِيْهِ الْبَركَةُ فِىْ كُلِّ شَىء. وَصَلَ اِِلَيْهِ مِنْ ذٰلِكَ الْمَأكُوْلِ فَاِنَّهٗ يَضْطَرِبُ وَلا يَسْتَقِرُّ حَتى يَغْفِرَ اللهُ لاٰكِلِهٖ.
    অর্থ: যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্য দ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন, তাতে বরকত হবেই। উক্ত খাদ্য-দ্রব্য মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাক- উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয় না।” সুবহানাল্লাহ!

    এই উপমহাদেশে যিনি হাদীছ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসার করেছেন, যিনি ক্বাদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযূর্গ, ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
    مَنْ عَظَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ بِمَاۤ اَمْكَنَهٗ مِنَ التَّعْظِيْمِ وَالاِكْرَامِ كَانَ مِنَ الْفَائزِيْنَ بِدَارِ السَّلامِ.
    অর্থ: “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করবে, সে জান্নাতে বিরাট সফলতা লাভ করবে।”

    মুসলমানদের মধ্যে পৃথিবীতে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন। যিনি উনার যামানার মুজাদ্দিদ এবং সুলত্বানুল আরিফীন ছিলেন, হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
    قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ” مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.
    অর্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক- উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক উনাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরায়ীল, মীকায়ীল, ইসরাফীল ও আযরায়ীল আলাইহিমুস্্ সালামগণ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। যখন উনারা ইনতিকাল করেন তখন আল্লাহ পাক উনাদের জন্য মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর উনাদের অবস্থান হয় আল্লাহ পাক- উনার সন্নিধানে ছিদক্বের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ্!

    অতএব, কোন বাদশাহর ভাবনা-চিন্তার উদয় থেকে ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সূচনা হয়েছে’- এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী তথা কাট্টা কুফরী বলে প্রমাণিত হলো। কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি কখনই মুসলমান থাকতে পারে না। বরং সে মুরতাদ, মুনাফিক ও কাফিরে পরিণত হয়ে যায়। নাঊযুবিল্লাহ!

  • ‘ইসলামে যদি নবী-রসূল ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের জন্মবার্ষিকী পালনের দ্বার উমুক্ত করে, তাহলে মুসলমানরা কি সারা বৎসর বার্ষিকী পালন ব্যতীত অন্য কোন কাজের জন্য এক মুহূর্তও সুযোগ পেত?’ নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘ইসলামে যদি নবী-রসূল ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের জন্মবার্ষিকী পালনের দ্বার উমুক্ত করে, তাহলে মুসলমানরা কি সারা বৎসর বার্ষিকী পালন ব্যতীত অন্য কোন কাজের জন্য এক মুহূর্তও সুযোগ পেত?’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো- জাহিল, গুমরাহ, ভন্ড উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য মনগড়া, দলীলবিহীন এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ দ্বীন ইসলামে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন উদযাপনের দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن عبيد بن السباق مرسلا وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنه متصلا قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى جمعة من الجمع يامعشر المسلمين ان هذا يوم جعله الله عيدا فاغسلوا ومن كان عنده طيب فلا يضره ان يمس منه وعليكم بالسواك.
    অর্থ: “হযরত উবায়িদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসালসূত্রে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুআর দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যে দিনটিকে আল্লাহ পাক ঈদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত শরীফ)

    অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ পাক জুমুআর দিনটিকে মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, হাদীছ শরীফ-এ এই জুমুআর দিনটি আল্লাহ পাক উনার নিকট ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মহান বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই জুমুআর দিনে আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং এই দিনে তিনি যমীনে আগমন করেছেন এবং এই দিনে তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।
    যেমন এপ্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى ليلة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله فيه ادم الى الاوض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسأل العبد فيها شيأ الا اعطاه ما لايسأل حراما وفيه تقوم الساعة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا ارض ولا رياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة.
    অর্থ: “হযরত আবূ লায়লা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে উনাকে বিছাল শরীফ দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ পাক-উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশ্তা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ)

    যার ফলশ্রুতিতে মু’মিন-মুসলমানগণ সারা বছরই জুমুআর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করে যাচ্ছেন। তাই বলে কি মুসলমানগণ অন্য কাজ-কারবার বন্ধ করে দিয়েছেন? আদৌ করেননি। কাজেই উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য থেকেই বুঝা যায় তারা কত বড় মূর্খ ও জাহিল।আর তাদের সে জিহালতপূর্ণ, অসার, অযৌক্তিক বক্তব্য হাদীছ শরীফ-এর সরাসরি বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী বলেই প্রমাণিত হলো।

    এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, উনার যমীনে আগমন ও বিদায়ের দিন হওয়ার কারণে জুমুআর দিনকে আল্লাহ পাক এই উম্মতের জন্য ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। এমনকি জুমুআর দিনকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মহান বলে ঘোষণা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
    ফলে মুসলমানগণ সারা বছরই জুমুআর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করছেন। এতে তাদের অন্য কাজ করার যেমন সুযোগ থাকছে তদ্রুপ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার খাছ নায়িব হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণের বিলাদত ও বিছাল শরীফ উপলক্ষে যত পর্ব বা অনুষ্ঠানই পালন করা হয়, তাতে কোন কাজই বন্ধ থাকে না। বরং সব কাজই জারী রেখেই তা করা হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ!

    তবে যারা নবী-রসূল ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের শত্রু কেবল তাদেরই শয়তানী কাজের অসুবিধা হয়ে থাকে। যার কারণে তারা বলে থাকে যে, উক্ত অনুষ্ঠান পালন করা হলে অন্য কোন কাজের জন্য এক মুহূর্তও সুযোগ পাওয়া যাবে না। নাঊযুবিল্লাহ!

    অথচ নবী-রসূল ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের এসব অনুষ্ঠান উম্মতের জন্য রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের কারণ। বিশেষ করে আখিরী রসূল, নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার আগমন তথা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করাটা আল্লাহ পাক উম্মতের জন্য ফরয করে দিয়েছেন।
    এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস,আয়াত শরীফ-৫৮)

    মূলত উম্মতের দায়িত্বই হচ্ছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জন করা। এ মর্মে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
    والله ورسوله احق ان يرضوه ان كانوا مؤمينين
    অর্থ: ‘তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের কর্তব্য হচ্ছে- তারা যেন আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করে। উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার অধিক হক্বদার।’ (সূরা তওবা, আয়াত শরীফ-৬২)

    কাজেই, মুসলমানদের আলাদা কোন কাজ নেই। বরং মুসলমান যে কাজই করবে তা করতে হবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার সন্তুষ্টির জন্যে, উনার স্মরণে ও অনুসরণে।

    অতএব, মুসলমান সারা বছরেই ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবে এটাই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
    انا ارسلنك شاهدا ومبشرا ونذيرا لتؤمنوا بالله ورسوله وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصيلا.
    অর্থ: ‘তোমরা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার খিদমত করো, উনাকে সম্মান করো, এবং সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার প্রশংসা, ছানা-ছিফত, মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করো।’ (সূরা ফাতহ, আয়াত শরীফ-৯) সুবহানাল্লাহ!

  • .‘নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছাড়াও ইসলামে কম-বেশি সোয়া লাখের মত নবী-রসূল, সোয়া লাখের বেশি ছাহাবী, লক্ষ লক্ষ গাওছ, কুতুব আওলিয়ার জামাত ছিলেন। তাহলে এতজনের বার্ষিকী কিভাবে পালন সম্ভব। তাই ইসলাম বার্ষিকী পালনের প্রথা বন্ধ করে দিয়েছে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার উলামায়ে সূ’ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছাড়াও ইসলামে কম-বেশি সোয়া লাখের মত নবী-রসূল, সোয়া লাখের বেশি ছাহাবী, লক্ষ লক্ষ গাওছ, কুতুব আওলিয়ার জামাত ছিলেন। তাহলে এতজনের বার্ষিকী কিভাবে পালন সম্ভব। তাই ইসলাম বার্ষিকী পালনের প্রথা বন্ধ করে দিয়েছে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো:- জাহিল, গুমরাহ, ভ- উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

    কেননা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, যখন নূরে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদীনা শরীফ-এ তাশরীফ নিলেন, সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন ইহুদী সম্প্রদায় আশূরার দিন রোযা রাখছে। তাদেরকে রোযা রাখতে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা এ দিনে কেন রোযা রাখছো?’ তারা বলল, এই দিনে আমাদের যিনি নবী ও রসূল হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি আল্লাহ পাক তাওরাত শরীফ নাযিল করেছিলেন এবং উনাকে উনার ক্বওমসহ লোহিত সাগর পার করিয়ে নিয়েছিলেন এবং উনার শত্রু ফিরআউন ও তার সঙ্গীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন, সেজন্য হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম শুকরানাস্বরূপ রোযা এদিনে রেখেছেন তাই আমরাও এ দিনে খুশি প্রকাশ করে রোযা রেখে থাকি। এটা শুনে আল্লাহ পাক- উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের চেয়ে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার বেশি হক্বদার। এটা বলে তিনিও রোযা রাখলেন এবং উনার উম্মতদেরকে রোযা রাখার আদেশ করলেন। সুবহানাল্লাহ!

    প্রকৃতপক্ষে এ আশূরার দিনটি শুধু হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার ঘটনার জন্যেই যে খুশি প্রকাশের দিন তা নয় বরং হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আখিরী রসূল, নূরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এই আশূরার দিনে।

    অতএব, আশূরার দিনে খুশি প্রকাশ করাটা আমভাবে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস উনাদের উপলক্ষেই হচ্ছে। আর এই দিনকে পালন করা বা সম্মান করার জন্য শরীয়তে আদেশ করা হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    اكرموا عاشوراء من المحرم من اكرم عاشوراء من المحرم اكرم الله بالجنة ونجاه من النار.
    অর্থ: ‘তোমরা আশূরা মিনাল মুহররমকে সম্মান করো। যে ব্যক্তি আশূরা মিনাল মুহররমকে সম্মান করবে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাত দিয়ে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে সম্মানিত করবেন। সুবহানাল্লাহ!

    প্রমাণিত হলো, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা সংঘটিত দিনসমূহ পালন করা বা তাতে খুশি প্রকাশ করাটা দ্বীন ইসলাম জারী রেখেছে। আদৌ বন্ধ করেনি।
    অতএব, উলামায়ে সূ’রা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য প্রদানের কারণে কাট্টা মুরতাদ এবং ডাহা মিথ্যা বলার কারণে চরম মিথ্যাবাদী বলে পরিগণিত।

  • .‘কোন বিদআতই ইসলামী শরীয়তের অংশ হতে পারে না। কারণ তা গুমরাহী। যদিও মানুষ তা ভাল মনে করে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রাএবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘কোন বিদআতই ইসলামী শরীয়তের অংশ হতে পারে না। কারণ তা গুমরাহী। যদিও মানুষ তা ভাল মনে করে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো:- উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্যও কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে। কারণ যা বিদআতে হাসানাহ তা অবশ্যই ইসলামী শরীয়তের অংশ বা অন্তর্ভুক্ত। এবং শরীয়তে এই বিদআতকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- ১. ওয়াজিব, ২. মুস্তাহাব-সুন্নত, ৩. মুবাহ।

    এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غيره ان ينقص من اجرهم شىء.
    অথ: হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

    মূলত যা বিদআতে হাসানাহ প্রকৃতপক্ষে তা সুন্নতেরই অন্তর্ভুক্ত।
    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এর মশহূর কিতাব ‘মিশকাত শরীফ’-এ উল্লেখ আছে, ‘আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তারাবীহ নামায নিয়মিতভাবে জামাআতে পড়ার আমল জারী বা উদ্ভাবন করার পর তিনি নিজেই বলেন-
    نعمت البدعة هذه.
    অর্থ: এ পদ্ধতিটি উত্তম বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।’

    অনুরূপভাবে ফিক্বাহ’র বিখ্যাত কিতাব ‘দুররুল মুখতার’-এর ১ম খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
    كذالك نقول فى الاذان بين يدى الخطيب فيكون بدعة.
    অর্থাৎ- তৃতীয় খলীফা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উদ্ভাবিত জুমুআর দিনে মসজিদের বাইরে একটি আযান বৃদ্ধি করা ও পূর্বের আযানকে (যা বর্তমানে ছানী আযান নামে পরিচিত) মিম্বরের সম্মুখে, খতীবের সামনে নিয়ে আসার আমলকেও বিদআত তথা বিদআতে হাসানাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

    আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    ما راه المؤمنون حسن فهة عند الله حسن.
    অর্থ: ‘মু’মিনগণ যা ভাল মনে করেন তা আল্লাহ পাক- উনার কাছে ভাল বলেই বিবেচিত।’ (মিশকাত শরীফ)

    এখন কথা হলো, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম ও দুররুল মুখতার কিতাবের মুছান্নিফ কি জানতেন না যে, খুলাফায়ে রাশিদীন বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আমলগুলো সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত? অবশ্যই জানতেন। তাহলে উল্লেখিত আমলকে তারা বিদআত বলে উল্লেখ করলেন কেন? যেহেতু উল্লেখিত আমলগুলো আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে দ্বীনের খাতিরে বা দ্বীনের সাহায্যের জন্য নতুন উদ্ভাবিত কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত আমল। তাই লুগাতী বা শাব্দিক অর্থে উক্ত আমলকে যদিও বিদআত তথা বিদআতে হাসানাহ বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলো ‘সুন্নত তথা সুন্নতে ছাহাবা’র অন্তর্ভুক্ত। কেননা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
    عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهدين.
    ‘তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও খুলাফায়ে রাশিদীনগণের উদ্ভাবিত সুন্নতগুলো অবশ্যই পালনীয়।’ (মিশকাত শরীফ)

    অতএব প্রমাণিত হলো, যেসব বিষয় বিদআতে হাসানাহ তা অবশ্যই ইসলামী শরীয়তের অংশ বা অন্তর্ভুক্ত। তা গুমরাহী বা বর্জনীয় কোনটিই নয়; বরং তা আল্লাহ পাক উনার নিকট হাসান বা উত্তম।

    কাজেই, বিদআতে হাসানাহকে শরীয়তের অংশ নয় বলা এবং সেটাকে গুমরাহী বা বর্জনীয় বলার অর্থই হচ্ছে শরীয়ত ও সুন্নতকে অস্বীকার করা। আর শরীয়ত ও সুন্নতকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।

    আর বিদআতে হাসানাহ-এর বিপরীতে যে বিদআতকে শরীয়তসম্মত নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হচ্ছে বিদআতে সাইয়িয়াহ। এই প্রকার বিদআতই হচ্ছে গুমরাহী। এবং তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য; যদিও মানুষ সেটা ভাল মনে করুক না কেন। যেমন- ইসলামের নামে ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি দেখা ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা ইত্যাদি।

    এ প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليه وزرها وزر من عمل بها من بعده.
    অর্থ: হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে কেউ দ্বীন ইসলামে শরীয়তবিরোধী কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করলো তার গুনাহ সেতো পাবেই এবং তার পরেও যারা সে পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তাদের গুনাহও তার আমলনামায় বর্তাবে।’ নাঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)

  • ‘সুস্থ বিবেকও যা সমর্থন করতে পারে না, তেমনি একটি হলো ঈদে মীলাদুন নবী।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘সুস্থ বিবেকও যা সমর্থন করতে পারে না, তেমনি একটি হলো ঈদে মীলাদুন নবী।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো:- জাহিল, গুমরাহ, ভন্ড উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ইসলামের তথা কুরআন ও সুন্নাহ’র বিষয়গুলো গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন মানুষের সুস্থ বা অসুস্থ বিবেক সমর্থন করা বা না করার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। বরং আল্লাহ পাক যেভাবে যা নাযিল করেছেন সেভাবে তা বিশ্বাস করতে হবে ও পালন করতে হবে।

    যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
    اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ.
    অর্থ: “আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সেটা তোমরা অনুসরণ করো বা পালন করো।” (সূরা লুক্বমান, আয়াত শরীফ- ২১)

    আরো ইরশাদ হয়েছে-
    وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.
    অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন বা তিনি তোমাদেরকে যা করতে বলেছেন তা তোমরা পালন করো। আর যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাককে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর, আয়াত শরীফ-৭)

    বুঝা গেল, আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীয়তের যে হুকুম-আহকাম দিয়েছেন তা বিনা চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল-এ, বিনা প্রশ্নে, বিনা সন্দেহে মানতে হবে, গ্রহণ করতে হবে। তবেই সে মুসলমান। অন্যথায় শরীয়তের হুকুম-আহকামের মধ্যে কেউ যদি নিজস্ব কোন চিন্তা কিংবা মত প্রবেশ করাতে চায়, তাহলে নিঃসন্দেহে সে ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

    অতএব, স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই যেখানে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং খুশি প্রকাশ করার জন্য বান্দাকে নির্দেশ করেছেন এবং স্বয়ং হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যেখানে খুশি প্রকাশ করে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের জন্য রহমত, মাগফিরাত, শাফায়াত ও নাজাতের সুসংবাদ দান করেছেন।

    এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস, আয়াত শরীফ-৫৮)

    আর নূরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণকে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত তারাও রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও শাফায়াত লাভ করবে।”

    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

    হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.
    অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজ গৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার শানে ছলাত-সালাম (দুরূদ শরীফ) পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা-৩৫৫)

    এতদসত্ত্বে সেখানে এমন কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছে যে, তার সুস্থ বিবেক ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমর্থন করতে পারে না?

    প্রকৃতপক্ষে এসব লোক আদৌ সুস্থ বিবেকধারী নয় বরং এরা হলো কালামুল্লাহ শরীফ-এ বর্ণিত বিবেকহীন চতুষ্পদ জন্তুর মতো নির্বোধ। উপরন্তু চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষা আরো অধিক নির্বোধ। কেননা এদের কান থাকার পরও এরা শুনে না, চোখ থাকার পরও এরা দেখে না এবং অন্তর থাকার পরও এরা উপলব্ধি করে না। এদেরকে মূলত জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

  • ‘রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় এসে দু’ঈদ ব্যতীত সব ঈদ বাতিল ঘোষণা করেছেন।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা এবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ‘রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় এসে দু’ঈদ ব্যতীত সব ঈদ বাতিল ঘোষণা করেছেন।’ নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো:- জাহিল, গুমরাহ, ভ- উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমুআর দিনকে ঈদের দিন ঘোষণা করেছেন সেটা তো মদীনা শরীফ-এই ঘোষণা করেছেন এবং সে ঘোষণা অদ্যাবধি পর্যন্ত জারী রয়েছে এবং ক্বিয়ামত অবধি জারী থাকবে। যদি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা- এ দু’ঈদ ব্যতীত অন্যসব ঈদ বাতিলই করতেন তাহলে তো জুমুআর আমল বন্ধ হয়ে যেতো।

    একইভাবে আরাফা’র দিনকেও ঈদের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। যদি দু’ঈদ ব্যতীত অন্যসব ঈদ বাতিল করা হতো তাহলে আরাফা’র দিনের আমলও বন্ধ হয়ে যেতো। কিন্তু তা তো হয়নি। বরং তা জারী রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে এবং সর্বোপরি যেই ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি আক্রোশ বশতঃ মুরতাদ উলামায়ে ছূ’রা আল্লাহ পাক- উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার শানে মিথ্যা তোহমতের পরিণাম ফল জাহান্নাম অবধারিত জেনেও উনার শানে তা লেপন করছে; সেই ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে মদীনা শরীফ-এই আনছারী ছাহাবী হযরত আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজ বাড়িতে মাহফিলের আয়োজন করেছেন এবং সেই মাহফিলে স্বয়ং আল্লাহ পাক- উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হয়ে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুসংবাদ দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

  • হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর কায়রোর খলীফাগণ ঈদে মীলাদুন নবী প্রবর্তন করেন। তারা ছিল উবাইদী, যিন্দীক, রাফিজী, শিয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রাএবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর কায়রোর খলীফাগণ ঈদে মীলাদুন নবী প্রবর্তন করেন। তারা ছিল উবাইদী, যিন্দীক, রাফিজী, শিয়া। নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো:- উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, মনগড়া, উদ্ভট, দলীলবিহীন এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কায়রোর কোন খলীফা প্রবর্তন করেননি; বরং এর প্রবর্তন স্বয়ং আল্লাহ পাকই করেছেন। কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাকই উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ফেরেশতাগণসহ অন্যান্যদেরকেও খুশি প্রকাশ করার জন্য হুকুম দিয়েছেন।

    যেমন- এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশতাকুল, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিল বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করেছিলেন এবং উনার প্রতি ছলাত-সালাম ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেছিলেন।

    একইভাবে মহান আল্লাহ পাক এই উম্মতের প্রতিও নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে।
    এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস, আয়াত শরীফ-৫৮)

    এ হুকুম বা নির্দেশের কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেন।

    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

    অতএব, উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী তথা কাট্টা কুফরী বলে প্রমাণিত হলো। আর কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি কখনই মুসলমান থাকতে পারে না। বরং সে মুরতাদ, মুনাফিক ও কাফিরে পরিণত হয়ে যায়।

  • সপ্তম হিজরীতে ইরাকের ইরবাল শহরের বাদশাহ মুজাফফর আবূ সাঈদ ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ চালু করেন।

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রাএবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, সপ্তম হিজরীতে ইরাকের ইরবাল শহরের বাদশাহ মুজাফফর আবূ সাঈদ ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ চালু করেন।

    এর জাওয়াব হলো:- উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, মনগড়া, উদ্ভট, দলীলবিহীন এবং তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর মুখালিফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত বাদশাহ চালু করেননি; বরং স্বয়ং আল্লাহ পাকই তা চালু করেছেন। কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাকই উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ফেরেশতাগণসহ অন্যান্যদেরকেও খুশি প্রকাশ করার জন্য হুকুম দিয়েছেন।

    যেমন- এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশতাকুল, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিল বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে তারা উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করেছিলেন এবং উনার প্রতি ছলাত-সালাম ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেছিলেন।

    একইভাবে মহান আল্লাহ পাক এই উম্মতের প্রতিও নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
    قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
    অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস, আয়াত শরীফ-৫৮)

    এ হুকুম বা নির্দেশের কারণে স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই অর্থাৎ প্রথম হিজরী সনেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেন।

    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
    অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

    অতএব, মুরতাদ উলামায়ে সূ’রা যে কত বড় মিথ্যাবাদী ও মুনাফিক তা তাদের উক্ত বক্তব্যে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। কারণ একবার তারা বলছে, চতুর্থ হিজরীতে কায়রোর খলীফাগণ ঈদে মীলাদুন নবী প্রবর্তন করেন। আরেকবার তারা বলছে, সপ্তম হিজরীতে বাদশাহ মুজাফফর আবূ সাঈদ তা প্রবর্তন করেন। নাঊযুবিল্লাহ!

  • ঈদে মীলাদুন নবী পালনকারী ইরাকের ইরবাল শহরের বাদশাহ মুজাফফর আবূ সাঈদ ছিলেন মূর্খ ও যিন্দীক। নাঊযুবিল্লাহ!

    ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রাএবং টিভি চ্যানেলে বলেছে, ঈদে মীলাদুন নবী পালনকারী ইরাকের ইরবাল শহরের বাদশাহ মুজাফফর আবূ সাঈদ ছিলেন মূর্খ ও যিন্দীক। নাঊযুবিল্লাহ!

    এর জাওয়াব হলো:- উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থসমূহ ও নির্ভরযোগ্য বহু কিতাবে উক্ত বাদশাহকে নেককার, পরহেযগার, আলিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাফিযে হাদীছ হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ “সিয়ারু আলাম আন নুবালা”-এর ২২তম জিঃ ৩৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেন, “বাদশাহ হযরত মালিক মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও উত্তম স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছগণকে অত্যন্ত ভাল বাসতেন।”

    এ মহান বাদশাহর প্রশংসায় উনার সমকালীন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী ইবনে হযরত খাল্লিক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান” গ্রন্থের ৪র্থ জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-
    وكرم الاخلاق كثير التواضع حسن العقيدة سالم البطاقة شديد الميل الى اهل السنة والجماعة لاينفق عند من ارباب العلوم سوى الفقها والمحدثين ومن عداهما لايعطيه شيأ الا تكلفا.
    অর্থ: “বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রশংসনীয় বা উত্তম চরিত্রের অধিকারী, অত্যধিক বিনয়ী ছিলেন। উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।”

    বিখ্যাত তাফসীরকারক ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা হযরত ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”-এর ১৩তম জিঃ ১৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেন-
    الملك المظفر بن زين الدين ابو سعيد كوكبرى احد للاجواد السادات الكبراء والملوك الامجادلة اثر حسنة.
    অর্থ: “বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন আবূ সাঈদ কাওকাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি অত্যধিক দানশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্যতম একজন ছিলেন। সাথে সাথে তিনি সম্মানিত বাদশাহও ছিলেন। উনার বহু পুণ্যময় কাজের আলামত এখনও বিদ্যমান রয়েছে।”

    এ মহান বাদশাহ বিশুদ্ধ আক্বীদা ও উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন এবং তিনি যে তরতীবে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল উদযাপন করতেন তা শরীয়তসম্মত ছিল বলেই সে যামানার প্রায় সকল আলিম-উলামা পীর-মাশায়িখ, ছূফী-দরবেশ, ক্বারী, ওয়ায়িজ উক্ত মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলে উপস্থিত হতেন। সুবহানাল্লাহ!

    আল্লামা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ সম্বন্ধে উনার ‘হুসনুল মাক্বাছীদ ফী আমালিল মাওয়ালিদ’ কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছ আল্লামা হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন যে-
    وكان شهما شجاعا بطلا عالما عادلا رحمه الله واكرم مثواه.
    অর্থ: ‘তিনি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, সাহসী, বীর্যবান, আলিম ও ন্যায় বিচারক ছিলেন। আল্লাহ পাক উনার উপর রহম করুন এবং উনাকে সম্মানিত বাসস্থান দান করুন।’

    এমনিভাবে উক্ত বাদশাহর ছানা-ছিফত ও প্রশংসার বিবরণ সীরাতে শামী, সীরাতে হালাবিয়াহ, সীরতে নববিয়াহ ও যুরকানী ইত্যদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।

    অতএব, উক্ত বাদশাহকে মূর্খ ও যিন্দীক অভিহিত করে শরীয়তের ফতওয়া মুতাবিক উলামায়ে ছূ’রা নিজেরাই মূর্খ ও যিন্দীক হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। কারণ, কেউ যদি কাউকে কোন অপবাদ দেয়, সে যদি তার উপযুক্ত না হয় তাহলে যে অপবাদ দিয়েছে সেটা তার উপরই বর্তাবে এবং উক্ত অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েই সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
    যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
    عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان العبد اذا لعن شيأ صعدت اللعنة الى السماء فتغلق ابواب السماء دونها ثم تهبط الى الارض فتغلق ابوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشمالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذى لعن فاذا كان لذالك اهلا والا رجعت الى قائلها.
    অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন কোন বান্দা কোন বস্তুকে অভিসম্পাত করে তখন সেই অভিসম্পাত আকাশে উঠে, তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন সেই অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন যমীনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিকে ও বাম দিকে যায় এবং যখন সেখানেও কোন রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়, তবে তার উপর পতিত হয়; অন্যথায় অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে।।” (আবূ দাউদ শরীফ)