মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, الله اعلم حيث يحعل رسلته
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বাধিক জ্ঞাত আছেন রিসালত কাকে দেয়া আবশ্যক।” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৪)
পবিত্র নুবুওওয়াত ও রিসালত সাধনালব্ধ কোনো বিষয় নয়। “এটা মহান আল্লাহ পাক উনার একান্ত ফজল ও করম। তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে তা দান করেন।”
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন। এছাড়া যত মর্যাদা-মর্তবা রয়েছে, সকল মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী তিনি।
উনার পবিত্র অজুদ বা নূর মুবারকই সর্বপ্রথম সৃষ্টি। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اول ما خلق الله نورى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।”
তবে তিনি সর্বশেষে দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
انا خاتم النبيين لا نبى بعدى.
অর্থ: “আমি নবীগণ উনাদের মধ্যে সর্বশেষ। আমার পরে কোনো নবী নেই।”
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে সৃষ্টি করে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার পেশানী মুবারকে স্থাপন করেন। মূলত, সেই নূর মুবারক উনাকে সম্মানার্থে তিনি সম্মানিত হলেন। আর সেই সম্মানের কারণে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুবারক নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, উনারা যেন আবুল বাশার হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে সিজদা করেন। আবুল বাশার হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার আওলাদ এবং নবী-রসূল হযরত শীস আলাইহিস সালাম উনাকে তিনি ওসীয়ত মুবারক করেন যে,
ان لا يوضع هذا النور الا فى المطهرات من النساء.
অর্থ: “এই পবিত্র নূর মুবারক উনাকে পবিত্রা মহিলা ব্যতীত অন্য কারো নিকট যেন আমানত রাখা না হয়।” (সীরাতুল হালাবিয়া-১/৪৭, মাওলেদুল মুনাবী)
“তাহ্ক্বীকুল মাক্বাম আলা কিফাইয়াতিল আওয়াম” কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.
অর্থ: “আমি সবসময় পবিত্র পুরুষগণ উনাদের পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্রা মহিলাগণ উনাদের রেহেম শরীফে স্থানান্তরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ!
নিম্নে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নসব মুবারক তুলে ধরা হলো।
১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
২। যাবীহুল্লাহিল মুকাররম, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অতি প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আর্ব্দু রহমান।” আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা সেই প্রিয় নামেরই অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া ১/৯)
৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম। তিনি উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ .ছিলেন। (রওদুল উন্ফ ১/২৩)
তিনি সেই ব্যক্তি যিনি জাহিলী যুগেই নিজের জন্য শরাবকে হারাম করেছেন। তিনি ছিলেন মুসতাজাবুদ দাওয়াত। কুরাইশদের সহনশীল ধৈর্যশীল এবং সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। মানুষ উনার দানশীলতার জন্য উনাকে “ফাইয়াজ” লক্ববে অবহিত করতেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৯)
৪। সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস্ সালাম।
৫। সাইয়্যিদুনা হযরত আবদে মানাফ আলাইহিস্ সালাম। উনার নাম মুগীরা।
তিনি অতি সুন্দর সীরত-ছূরত মুবারকের অধিকারী ছিলেন। সেই সৌন্দর্যের কারণে উনাকে ‘উপত্যকার চাঁদ’ লক্বব মুবারকে সম্বোধন করা হতো।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/১৩ রওদুল উন্ফ ১/২৫, তারিখতু তাবারী ১/২৩৭)
মূলত, সেই পবিত্র নসবনামার সকলেরই আকৃতি-প্রকৃতি, সীরত-ছূরত মুবারক ছিলো অতি উজ্জ্বল এবং সৌন্দর্যময়। সে কারণ হলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক বা নূর মুবারক উনার অবস্থান।
৬। সাইয়্যিদুনা হযরত কুসাই আলাইহিস্ সালাম।
৭। সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস্ সালাম।
৮। সাইয়্যিদুনা হযরত র্মুরা আলাইহিস্ সালাম।
৯। সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব আলাইহিস্ সালাম।
১০। সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস্ সালাম।
১১। সাইয়্যিদুনা হযরত গালিব আলাইহিস্ সালাম।
১২। সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহির আলাইহিস্ সালাম।
১৩। সাইয়্যিদুনা হযরত মালিক আলাইহিস্ সালাম।
১৪। সাইয়্যিদুনা হযরত নযর আলাইহিস্ সালাম।
১৫। সাইয়্যিদুনা হযরত কিনানাহ্ আলাইহিস্ সালাম।
১৬। সাইয়্যিদুনা হযরত খুযাইমাহ্ আলাইহিস্ সালাম।
১৭। সাইয়্যিদুনা হযরত মাদ্রিকাহ্ আলাইহিস্ সালাম।
উনার নাম মুবারক আমর। এই কারণে উনাকে মাদরিকাহ্ বলা হয় যে, তিনি সেই যুগের সমস্ত সম্মান-ইজ্জত ও গৌরবের অধিকারী ছিলেন। উনার মধ্যে আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক এমন উজ্জ¦লভাবে প্রকাশ ঘটেছিল, যা সবাই দেখতে পেতেন।” সুবহানাল্লাহ! (রওদুল উন্ফ ১/৩০)
১৮। সাইয়্যিদুনা হযরত ইলিয়াস আলাইহিস্ সালাম। তিনি ছিলেন উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা হযরত ইলিয়াস আলাইহিস্ সালাম উনাকে গালি দিও না। কারণ, তিনি ছিলেন প্রকৃত মু’মিন। তিনিই উনার পিঠ মুবারক উনার মধ্যে আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তালবিয়া (যা হজ্জের মধ্যে পড়া হয়) পাঠ শুনতে পেতেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭, রওদুল উন্ফ- ১/৩০)
১৯। সাইয়্যিদুনা হযরত মুদ্বার আলাইহিস্ সালাম।
উনার কন্ঠস্বর মুবারক ছিলো অত্যন্ত সুন্দর। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা হযরত মুদ্বার আলাইহিস সালাম উনাকে গালি দিও না, মন্দ বলিও না। কারণ তিনি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার পবিত্র দ্বীন উনার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭ রওদুল উন্ফ ১/৩০)
২০। সাইয়্যিদুনা হযরত নিযার আলাইহিস্ সালাম।
তিনি স্বীয় চক্ষু মুবারক উনার সামনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক দেখতে পেতেন।” সর্বপ্রথম আরবী ভাষায় বিশুদ্ধ কিতাব তিনিই রচনা করেন। (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২১। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’য়াদ আলাইহিস্ সালাম।
তিনি জিহাদপ্রিয় ছিলেন অর্থাৎ তিনি বড় মুজাহিদ ছিলেন। এমন কোনো জিহাদ নেই যে, তিনি বিজয়ী হননি। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২২। সাইয়্যিদুনা হযরত আদ্নান আলাইহিস্ সালাম।
২৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আদ্দ আলাইহিস্ সালাম।
২৪। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’কুম আলাইহিস্ সালাম।
২৫। সাইয়্যিদুনা হযরত নাহুর আলাইহিস্ সালাম।
২৬। সাইয়্যিদুনা হযরত তারিহ্ আলাইহিস্ সালাম।
২৭। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়ারিব আলাইহিস্ সালাম।
২৮। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াশ্যুব আলাইহিস্ সালাম।
২৯। সাইয়্যিদুনা হযরত নাবিত আলাইহিস্ সালাম।
৩০। সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম।
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল।
৩১। সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম।
তিনি মুসলিম মিল্লাতের পিতা। মহান আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল। উনার উপর ১০খানা ছহীফা নাযিল হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!
৩২। সাইয়্যিদুনা হযরত তারাহ আলাইহিস্ সালাম।
যদিও কেউ কেউ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার পিতা হিসাবে আযরের নাম উল্লেখ করেছে। নাউযুবিল্লাহ! এটা কুফরী আক্বীদা। কারণ আযর কাফির ছিলো। তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও অশুদ্ধ এবং কাট্টা কুফরী। কারণ ‘সীরাতুল হালাবিয়া’সহ অন্যান্য সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে
اجمع اهل الكتاب على أن ازر كان عمه. والعرب سمى العم ابا كما تسمى الخالة
অর্থাৎ আহলে কিতাবগণ উনাদের ইজমা হয়েছে যে, আযর ছিল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার চাচা। আরবরা সাধারণত চাচাকে বাবা বলে সম্বোধন করেন। যেমন খালাকে মা বলে সম্বোধন করতেন। (সীরাতুল হালাবিয়া-১/৪৫)
৩৩। সাইয়্যিদুনা হযরত নাহুর আলাইহিস্ সালাম।
৩৪। সাইয়্যিদুনা হযরত আরগুবী আলাইহিস্ সালাম।
৩৫। সাইয়্যিদুনা হযরত সারিহ্ আলাইহিস্ সালাম।
৩৬। সাইয়্যিদুনা হযরত ফালিহ্ আলাইহিস্ সালাম।
৩৭। সাইয়্যিদুনা হযরত আবির আলাইহিস্ সালাম।
৩৮। সাইয়্যিদুনা হযরত শালিখ আলাইহিস্ সালাম।
৩৯। সাইয়্যিদুনা হযরত আরফাখ্শাজ আলাইহিস্ সালাম।
৪০। সাইয়্যিদুনা হযরত শাম আলাইহিস্ সালাম।
৪১। সাইয়্যিদুনা হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম।
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল। সুবহানাল্লাহ!
৪২। সাইয়্যিদুনা হযরত লাম্ক আলাইহিস্ সালাম।
৪৩। সাইয়্যিদুনা হযরত মাতুশালাখ আলাইহিস্ সালাম।
৪৪। সাইয়্যিদুনা হযরত আখনুখ আলাইহিস্ সালাম।
যিনি হযরত ইদ্রীস আলাইহিস্ সালাম নামে মাশহুর। উনার উপর ৩০খানা ছহীফা নাযিল হয়েছিল। (তারিখুত তাবারী ১/৫১৮)
৪৫। সাইয়্যিদুনা হযরত ইর্য়াদ আলাইহিস্ সালাম।
৪৬। সাইয়্যিদুনা হযরত মাহ্লাইল আলাইহিস্ সালাম।
৪৭। সাইয়্যিদুনা হযরত কাইনান আলাইহিস্ সালাম।
৪৮। সাইয়্যিদুনা হযরত আনুশ আলাইহিস্ সালাম।
৪৯। সাইয়্যিদুনা হযরত শীস আলাইহিস্ সালাম।
তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছিলেন। উনার উপর ৫০খানা সহীফা নাযিল হয়েছিল।
৫০। সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম শফীউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম।
তিনি সর্বপ্রথম নবী ও রসূল। উনার উপর ১০খানা ছহীফা নাযিল হয়েছিল।
(দালায়িলুন্ নবুওওয়াত লিল বাইহাক্বী ১/১৭৯- সীরাতু ইবনে হিশাম- ১/১-২, সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৯, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, তারিখুত্ তাবারী ১/৪৯৭ রাওদুল উন্ফ ১/২৩ শরহুল আল্লামাতিয্ যারকানী ১/৩৫ ইত্যাদি)