পবিত্র হিজরত মুবারক ও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিদমত মুবারক যা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সুমহান শান সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি।
আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বুযুর্গী ও ফযীলত মুবারক বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি একাধিক স্থানে উনার পবিত্র ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন। উনার প্রশংসায় অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পরে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী তিনিই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট মুবারক করার লক্ষ্যে উনার মাল ও জান সব মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ উনি মাল ও জানের চেয়েও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অধিক মুহব্বত করতেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনে কামিল হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত করবে।” অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তার মাল ও জান হতেও যতক্ষণ পর্যন্ত বেশি মুহব্বত না করবে।”
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক উনার কথা জানালেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে প্রিয় ছাহাবী খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আমাকে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ যেতে হবে। আর সেই পবিত্র হিজরত মুবারকের সময় আপনিই হবেন আমার একমাত্র সঙ্গী। কাজেই আপনি হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকুন। পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক এলে আমি আপনাকে জানাবো।
এদিকে এ ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র হিজরত মুবারক করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। পবিত্র হিজরত মুবারক উনার পথে বিশ্রাম নেয়ার উদ্দেশ্যে গারে ছুর বা ছাওর পর্বতের গুহায় প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে অনেক ছিদ্র রয়েছে। সে ছিদ্রতে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু থাকতে পারে এ আশঙ্কায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পাগড়ী মুবারক ও চাদর মুবারক টুকরো টুকরো করে ছিদ্রের মুখগুলো বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু একটি ছিদ্র বন্ধ করার মতো কোনো কাপড় অবশিষ্ট রইলো না। তাই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ পা মুবারক উনার গোড়ালি মুবারক দ্বারা উক্ত ছিদ্রের মুখে চাপ দিয়ে রাখলেন।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার উক্ত জানু মুবারক উনার উপর মাথা মুবারক রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
উল্লিখিত ছিদ্রের ভিতর অবস্থান করছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার যুগের একটি সাপ। সাপটি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যিয়ারত লাভ করার উদ্দেশ্যই এখানে অবস্থান করছিল। সাপটি শত চেষ্টা করেও বের হতে না পেরে অপারগ হয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পা মুবারকে আঘাত করলো। আঘাতের সাথে সাথে বিষের ক্রিয়ায় এবং বিষের যন্ত্রণায় উনার চোখ মুবারক দিয়ে দর দর করে পানি মুবারক পড়তে লাগলো। তবুও তিনি নিজ পা মুবারক একটুও নড়াচড়া করলেন না যেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক উনার কোনো ব্যাঘাত না হয়। হঠাৎ করে উনার চোখ মুবারক উনার এক ফোঁটা পানি মুবারক আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক উনার উপর পড়লো। সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক ভেঙে গেলো। দেখলেন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বিষের যন্ত্রণায় কাঁদছেন।
এ অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ মুখ মুবারক থেকে একটু নূরুল বারাকাত মুবারক (থু থু) মুবারক হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! আপনার এ অবস্থা হওয়ার সাথে সাথে কেন আমাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করলেন না?” জবাবে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ঘুম মুবারক উনার ব্যাঘাত ঘটবে এবং আপনার সাথে বেয়াদবী হবে ভেবে আমি কোনো নড়াচড়া করিনি এবং আপনাকে ঘুম মুবারক থেকে জাগ্রত করিনি। সুবহানাল্লাহ!
ফিকিরের বিষয় যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কত গাঢ় মুহব্বত ছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এত গাঢ় মুহব্বত উনার পরিপ্রেক্ষিতে উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে কোনো ব্যক্তি আমাদের প্রতি যে কোনো প্রকারের ইহসান করেছে আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, কিন্তু হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার ইহসান ব্যতীত। তিনি আমাদের প্রতি যে ইহসান করেন তার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন উনাকে প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করেনি যতখানি উপকৃত করেছে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ধন-সম্পদ। আর আমি যদি আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রেখ! নিশ্চয়ই (তোমাদের সঙ্গী) অর্থাৎ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ তায়ালা উনার বন্ধু।” (তিরমিযী শরীফ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মুবারক শানে খুশি প্রকাশ করে মাল, জান বিলিয়ে দেয়াই হলো পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার অন্যতম মুবারক শান, যা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম দেখিয়ে দিয়েছেন, ইবরত রেখে গিয়েছেন পরবর্তীদের জন্য।