লক্বব ব্যবহার করা পীরের আলামত নয় বরং তা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত ছাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম উনারা এবং সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ব্যবহার করেছেন। কাজেই লক্বব ব্যবহার উনাদেও সুন্নত।
১. ‘খলীফাতুল্লাহ’ উনার সঠিক ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিনিধি| স্বয়ং মহান আল্লাহ পাকই উনার কালামে পাকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে উনার ‘খলীফা বা প্রতিনিধি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে,انى جاعل فى الارض خليفة
অর্থাৎ “আমি যমীনে খলীফা প্রেরণ করবো।” (সূরা বাক্বারা/৩০)
উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত মূল খলীফা বা প্রতিনিধি হচ্ছেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর উনার সাহায্যকারী হিসেবে ‘খলীফাতুল্লাহ’ বা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিনিধি হচ্ছেন হযরত আদম আলাইহিস সালামসহ সকল নবী ও রসূল। আর পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ। কাজেই প্রত্যেক ওলীআল্লাহ বা হক্কানী আলিমই যমীনে ‘খলীফাতুল্লাহ’ বা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিনিধি। একথা তো একজন সাধারণ মুসলমানও জানে। আর হাদীছ শরীফ-এর তার প্রমাণ রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
من امر بالمعروف ونهى عن المنكر فهو خليفة الله فى الارض وخليفة كتابه وخليفة رسوله.
অর্থ: যে ব্যক্তি সৎ কাজের আদেশ করেন এবং অসৎ কাজে নিষেধ করেন সে ব্যক্তি খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু কিতাবিল্লাহ ও খলীফাতু রসূলিল্লাহ। (মুকাশাফাতুল কুলূব/৪৮)
কাজেই কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, যাঁরা হক্কানী-রব্বানী আলিম-উলামা বা আউলিয়ায়ে কিরাম তারা অবশ্যই ‘খলীফাতুল্লাহ’ বা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিনিধি।‘খলীফাতুল্লাহ’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা বা প্রতিনিধি। ‘খলীফাতুল্লাহ’ সম্পর্কে বলতে হয় যে, সমস্ত মানুষই যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, انى جاعل فى الارض خليفة অর্থাৎ “আমি যমীনে খলীফা প্রেরণ করবো।” এখানে হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও উনার সন্তানদেরকে ‘খলীফাতুল্লাহ’ বলা হয়েছে। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من امر بالمعروف ونهى عن المنكر فهو خليفة الله فى الارض وخليفة كتابه وخليفة رسوله.
অর্থ:- যে ব্যক্তি সৎ কাজের আদেশ করেন এবং অসৎ কাজে নিষেধ করেন সে ব্যক্তি খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু কিতাবিল্লাহ ও খলীফাতু রসূলিল্লাহ। (মুকাশাফাতুল কুলূব-৪৮)
২. ‘খলীফাতু রসূলিল্লাহ’ এর সঠিক ব্যাখ্যা ও জবাব: বাতিলপন্থি ওহাবীদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু অশুদ্ধই নয় বরং মুর্খতাসূচক ও কুফরীমূলকও বটে। কারণ তারা উক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কয়েকজন খলীফাকে অস্বীকার করেছে। যেমন- আমীরুল মু’মিনীন হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেইে খিলাফত পরিচালনা করেছেন। এছাড়া সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খলীফা।
কাজেই রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খলীফা শুধু ৪ জন একথা মোটেও সত্য নয় বরং সম্পূর্ণ মিথ্যা ও দলীলবিহীন। তাছাড়া উপরে বর্ণিত হাদীছ শরীফেই স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, যারা সৎ কাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করে তারা সকলেই ‘খলীফাতু রসূলিল্লাহ।’
সুতরাং তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে হাদীছ শরীফ বিরোধী প্রমাণিত হলো। আর হাদীছ শরীফ বিরোধী বক্তব্য প্রদান করা সুস্পষ্টরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
৩. ‘ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত’ এর সঠিক ব্যাখ্যা ও জবাবঃ “শরীয়ত ও তরীক্বতের নির্ধারিত কোন ইমাম নেই” বাতিলপন্থী ওহাবীদের এ বক্তব্যটিও জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। কারণ একজন সাধারণ মুসলমানও জানেন যে, চার মাযহাবের ৪ জন সম্মানিত ইমাম উনারা মূলতঃ শরীয়তেরই ইমাম। অর্থৎ ইমামুম শরীয়ত। আর তরীক্বার ৪ জন সম্মানিত ইমাম উনারা মূলতঃ তরীক্বতেরই ইমাম। অর্থাৎ ইমামুত তরীক্বত। কাজেই শরীয়ত ও তরীক্বতের নির্ধারিত কোন ইমাম নেই তাদের একথা কি করে সত্য ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
তাছাড়া ‘ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত’ এটা নতুন কোন লক্বব নয়। হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আহমদ বিল হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযতর বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হরযত বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অসংখ্য আলিম-উলামা ও পীর মাশায়েখগণ উনাদের লক্বব বা উপাধি ছিলো ‘ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত।’
৪. ‘ইমামুল আইম্মাহ’ অর্থঃ সমস্ত ইমামদের ইমাম। এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, ‘ইমামদের ইমাম।’ আর ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সমস্ত ইমামদের ইমাম বা সর্দার একথাও সঠিক নয়। কারণ উনার পূর্বে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা রয়েছেন। তবে কি তিনি উনাদেরও ইমাম? মূলতঃ ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অবশ্যই ‘ইমামদের ইমাম অর্থাৎ ইমামুল আইম্মাহ’। তবে উনার যামানার জন্য। কারণ প্রত্যেকের লক্বব বা উপাধিগুলোই উনার যামানার জন্য প্রযোজ্য। তা ব্যাপক অর্থে কখনোই ব্যবহৃত হবেনা। যদি ব্যাপক অর্থে ধরা হয় তবে তো বাতিলপন্থী ওহাবীদের মুরব্বী আশরাফ আলী থানবীও কািফর সাব্যস্ত হয়। কারণ তার একটি লক্বব রয়েছে, ‘হাকীমুল উম্মত’ এর অর্থ দাড়ায় আশরাফ আলী থানবী হরযত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম এমনকি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামসহ সকল নবীদের হাকীম (নাউযুবিল্লাহ)। কেননা উনারা সকলেই তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এক্ষেত্রে বাতিলপন্থী ওহাবীরা কি জবাব দিবে?
স্মর্তব্য যে, ‘ইমামুল আইম্মাহ’ নতুন কোন লক্বব নয় এবং শুধু ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লক্বব নয়। বরং ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ আরো অনেকেরই লক্বব বা উপাধি হচ্ছে ‘ইমামুল আইম্মাহ।’ কাজেই ইমামুল আইম্মাহ লক্বব ব্যবহার করা শরীয়ত বিরোধী হলে উনারা কখনোই তা ব্যবহার করতেন না।
৫. ‘মুহিউস সুন্নহ’ অর্থঃ সুন্নত যিন্দাকারী, এ ব্যাপারে তারা যা লিখেছে, তা তাদেরকে চরম প্রতারক, মিথ্যাবাদী ও জাহিল বা গ-মূর্খ হিসেবেই সাব্যস্ত করেছে। কারণ শুধু আলিমরা কেন সারা বিশ্বের আলিম উরামা ও সাধারণ লোক সকলেই খুব ভালো করেই জানে ও মনে প্রাণে বিশ্বাসও করেও যে, রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনি স্বয়ং নিজে সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পূঙ্খানুপুক্ষ্ম অনুসরণ-অনুকরণ করেন। উনার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে লক্ষ লক্ষ লোক সুন্নত সম্পর্কে জানতে পারছে ও সুন্নতের আমল করছে। কাজেই তিনি যে ‘মুহইস সুন্নাহ’ এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ করার কোনই অবকাশ নেই। কারণ বাতিলপন্থী ওহাবীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ, তারা রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কোন একটি আমলও দলীল দ্বারা সুন্নতের খিলাফ প্রমাণ করতে পারবেনা। সুতরাং ‘মুহিউস সুন্নাহ’ লক্বব বা উপাধিকে যারা অস্বীকার করে তারাই মূলতঃ সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। যা সকলেরই জানা।
৬. ‘মাহিউল বিদয়াত’ অর্থ: বিদয়াতের মূলোৎপাটনকারী। মূলতঃ যিনি ‘মুহইস সুন্নাহ’ বা সুন্নত যিন্দকারী তিনিই ‘মাহিউল বিদয়াত’ অর্থাৎ বিদয়াতের মূলোৎপাটনকারী। কেননা হাদীছ শরীফ-এ-ই রয়েছে, “যখন কেউ একটি সুন্নত যিন্দা করলো বা আমল করলো তখন একটি বিদয়াতের মৃত্যু ঘটলো বা মূলোৎপাটন হলো।”
বাতিলপন্থি ওহাবীদের প্রতি এ ব্যাপারেও চ্যালেঞ্জ রইলো যদি সাহস থাকে তবে প্রকাশ্য বাহাছে বসে জনগণের সামনে দলীল দিয়ে প্রমাণ করুন রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম- উনার কোন আমলটা বিদয়াত। একটি আমলও তারা দেখাতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। পক্ষান্তরে আমরা প্রমাণ করে দিতে পারবো যে, তাদের অধিকাংশ আমলগুলোই বিদয়াত।
৭. ‘কুতুবুল আলম’ অর্থ: সমস্ত পৃথিবীর বুযূর্গ। মূলত: তারা ‘কুতুবুল আলম’ এর যে অর্থ করেছে সে অর্থটা শুদ্ধ নয়। বরং সঠিক অর্থ হচ্ছে আলমের কুতুব বা যিম্মাদার অর্থাৎ যাদের ওসীলায় বা মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশ্ব পরিচালনা করেন। তারাই হলেন, ‘কুতুবুল আলম, পৃথিবীতে বহু কুতুবুল আলম ছিলেন এখনো আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন আর বস্তুত: এ বিষয়টা সম্পূর্ণরূপেই ইলমে তাছাউফের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাছাউফ শূণ্য ব্যক্তিরা ‘কুতুবুল আলম’ এর ‘ক’ ও বুঝবেনা। তাই তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, “……….. এটা তো মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভাল জানেন।” আমাদের প্রশ্ন? বাকীগুলো কি মহান আল্লাহ পাক উনি ভালো জানেন না? বাতিলপন্থি ওহাবীরা সেগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার চেয়ে ভালো জানে? নাউযুবিল্লাহ।
৮. গাউছুল আ’যম’ অর্থ: ‘সবচেয়ে বড় সাহায্যকালী।’ এর সঠিক ব্যাখ্যা ও জবাব: আউলিয়াকুল শিরোমনি, বিশ্বখ্যাত ওলী হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য লক্বব বা উপাধির মধ্যে একটি বহুল প্রসিদ্ধ লক্বব হচ্ছে ‘গাউছুল আ’যম।’ যা বিশ্বের সকল হক্কানী আলিম উলামা বা ওলীগণ উনারা মানেন ও স্বীকার করেন। যদি ‘গাউছুল আ’যম’ লক্বব ব্যবহার করা শিরক হতো তবে হক্কানী আলিম উলামা ও ওলীগণ উনারা তা মানতেন না ও স্বীকার করতেন না। মূলত: বাতিলপন্থি ওহাবীরা উপরোক্ত বক্তব্যের মাধ্যেমে এটাই প্রমাণ করতে চায় যে, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ দাবি করেছেন তাই তিনি ‘মুশরিক’ নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। যারা সর্বজনমান্য ওলী হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ‘মুশরিক’ বলতে পারে তারা যে রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কেও মিথ্যাচারিতার আশ্রয় নেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
স্মর্তব্য যে, ‘সবচেয়ে বড় ইমাম’ যে আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটা বোধ হয় বাতিলপন্থি ওহাবীরাও স্বীকার করবে। যতি তাই হয় তবে হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘ইমামে আ’যম’, স্বীকার করে থাকে? মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ এ নিজেকে বান্দা ও উম্মতের হাকীম বলে উল্লেখ করেছেন। ওহাবীদের মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী ‘হাকীমুল উম্মত’ দাবি করলো কি করে? এটা কি শিরক নয়?
কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেকে ‘মাওলানা’ বলে উল্লেখ করেছেন। আমাদের প্রশ্ন ওহাবীরা নিজেদেরকে ‘মাওলানা’ বলে প্রচার করে কিভাবে? এতে কি শিরক হয়না?
৯. ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ অর্থ: ইসলামের দলীল। এর সঠিক ব্যাখ্যা ও জবাব: জাহিলরাই যে সকল ফিৎনা ও গোমরাহীর মূল এটাই তার একটি বাস্তব প্রমাণ। জাহিলরা লিখেছে, “ইসলামের দলীল হচ্ছে কুরআন-হাদীছ।” অথচ ইসলাম বা শরীয়তের দলীল হচ্ছে, চারটি। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। আর যারা প্রত্যেক বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী কথা বলেন, আক্বীদা পোষণ করনে ও আমল করেন তারাই হচ্ছেন, হুজ্জাতুল ইসলাম। কুরআন শরীফ-এ উনাদেরকে ‘উলিল আমর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকেই ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ হিসেবে মশহুর ছিলেন। বাতিলপন্থি ওহাবীদের মুরুব্বীরাও ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ হিসেবে মানে স্বীকার করে এমনকি কোন কোন কিতাবে উনাকে ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
১০. ছাহিবু সুলতানিন নাছীর অর্থ: সাহায্যপ্রাপ্ত বাদশার বন্ধু। তাদের এ অর্থটি সঠিক নয় বরং এর সঠিক অর্থ হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে বড় সাহায্যপ্রাপ্ত। অর্থাৎ যিনি সর্বক্ষেত্রেই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সাহায্য প্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন ‘ছহিবু সুলতানিন নাছীর।’ মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনারা যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে খাছ সাহায্যপ্রপ্ত হন তা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ-ই স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে।
১১. সাইয়্যিদুল আউলিয়া: অর্থ: ওলীকুল শিরোমনিদের সর্দার। এর সঠিক জবাব: তারা উক্ত লক্ববের যে অর্থ করেছে তা ঠিক নয় বরং সঠিক অর্থ হলো, ‘ওলীগণের সর্দার।’ আর হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘ওলীগণ উনাদের সর্দার’ একথা ঠিকই রয়েছে। তবে অবশ্যই এটা উনার যামানার জন্য খাছ। কারণ উনার পূর্বে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা রয়েছেন এবং পরে ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি রয়েছেন। উনারাও ওলীগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তবে কি ওহাবীদের মতে বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার থেকেও বড়? (নাউযুবিল্লাহ) কাজেই প্রত্যেক যামানাতেই ওলীদের একজন সর্দার বা প্রধান থাকেন আর তিনি হচ্ছেন সেই যামানার “সাইয়্যিদুল আউলিয়া” বা ওলীদের সর্দার।
১২. সুলতানুল আরিফীন অর্থ: আরিফ বিল্লাহদেও সর্দার (মারিফত)। এর সঠিক জবাব: হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেক মশহুর ওলীগণ উনাদের লক্বব ছিলো “য়ুলতানুল আরিফীন”। বাতিলপন্থী ওহাবীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন! উনারা যে, “সুলতানুল আরিফিন” বা আরিফবিল্লাহদের সর্দার ছিলেন উনারা জানলেন কিভাবে? উনারা যেভাবে জেনেছেন রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনিও সেভাবে জেনেছেন। আশরাফ আলী থানভীর একটি লক্বব দেয়া হয়েছে ‘রঈসুল মুফাসসিরীন’। এখন থানবী শিষ্যদের নিকট আমাদের প্রশ্ন হলো- থানভী কি করে জানলো যে, সকল মুফাসসিরগণ তাকে সর্দার বানিয়েছে? আর ‘রঈসুল মুফাসসিরীন’ হচ্ছেন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। থানবী কি করে উনার সমকক্ষতা দাবি করলো? এর কোন জবাব বাতিল পন্থি ওহাবীদের নিকট আছে কি?
১৩. ইমামুল মুজতাহিদীন’ অর্থ চার মাযহাবের ইমামদের ইমাম। তারা যে অর্থ করেছে তা মোটেও শুদ্ধ নয়। বরং সঠিক অর্থ হলো ‘মুজতাহিদগণ উনাদের ইমাম।’ এ ব্যাপারে যে মন্তব্য করা হয়েছে তার জবাব ৪নং ‘ইমামুল আইম্মাহ’ লক্ববের জবাবে রয়েছে।
১৪. ‘জামিউল আলক্বাব’ অর্থ: সমস্ত ভাল গুণের অধিকারী। আমাদের প্রশ্ন: তবে কি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও অন্যান্য নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা সমস্ত ভালো গুণের অধিকারী ছিলেন না? বাতিলপন্থি ওহাবীদের মতে কি উনার খারাপ গুণের অধিকারী ছিলেন? (নাউযুবিল্লাহ) এর জবাব কি?
তাছাড়া বান্দা যদি সমস্ত ভালো গুণের অধিকারী নাই হতে পারে তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ কেন বললেন যে, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত হও।” এতে কি বুঝা যায়না যে বান্দার পক্ষে সমস্ত ভালো গুণাবলী অর্জন করা সম্ভব।
১৫. আওলাদে রসূল’ অর্থ রসূল-উনার সন্তান। বাতিলপন্থিদের উক্ত লক্ববের যে, অর্থ এবং মন্তব্য করেছে তা একজন আশাদ্দুদ দরজার জাহিলের পক্ষেও করা সম্ভব নয়। কাজেই তারা যেহেতু আশাদ্দুদ দরজার জাহিলের চেয়ে নিকৃষ্ট তারা তারা ‘আওলাদে রসূল’ অর্থ করেছে ‘রসূল উনার সন্তান’। অথচ একজন সাধারণ লোকও জানে যে, আওলাদে রসূল’ অর্থ হচ্ছে, রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর। অর্থাৎ যিনি সাইয়্যিদ বংশ বা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের বংশের উনারাই হচ্ছেন আওলাদে রসূল। পৃথিবীতে অসংখ্য অগনতি আওলাদে রসূল রয়েছেন। এমনকি যারা লিখেছে আওলাদে রসূল অর্থ রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তান। সেই বাতিলপন্থি ওহাবীদেরই অনেক মুরুব্বী রয়েছে মৃত ও জীবিত যারা নিজেদেরকে আওলাদে রসূল বলে দাবি করে ও কিতাব বা পোষ্টারে লিখেও থাকে। যেমন হুসাইন আহমদ মাদানী, আসয়াদ মাদানী প্রমূখ। বাতিলপন্থি ওহাবীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন! ১৪০০ বৎসর পর হুসাইন আহমদ মাদানী, আসয়াদ মাদানী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তান হয়ে আসলো কিভাবে? তোমরা তাদেরকে কখনো ভ- ফতওয়া দিয়েছো কি?
১৬. সাইয়্যিদুনা’ অর্থ: আমাদের সকলের সর্দার। এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হয়েছে যে, মানবকুলের সর্দার তো রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনায় না গিয়ে বাতিলপন্থী ওহাবীদেরকে একটি প্রশ্ন করেই শেষ করতে চাই। প্রশ্নটি হলো, আমরা সকলেই দরূদ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘মাওলানা’ বলে সম্বোধন করে থাকি যার অর্থ আমাদের সকলের মুনিব। অথচ বাতিলপন্থী ওহাবীরা নিজেদেরকে ‘মাওলানা’ বলে দাবি করে এবং নিজে হাতে নামের পূর্বে লিখে থাকে। এতে কি সমস্ত মানবকুলের মুনিব দাবি করা হয়না?
কাজেই তাদের মতে যদি ‘সাইয়্যিদুনা’ লক্বব ব্যবহার করলে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমকক্ষ দাবি করা হয়, তবে তো ‘মাওলানা’ লক্বব ব্যবহার করলেও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমকক্ষ দাবি করা হবে। মূলত: ‘সাইয়্যিদুনা ও মাওলানা’ যখন হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ব্যবহৃত হবে তখন অর্থ হবে আমাদের সর্দার ও মুনিব। কেনান ওলীগণ উনাদের লক্ববগুলো উানদের যামানার জন্য খাছ।
১৭. ‘সাইয়্যিদুস সাক্বালাইন’ অর্থাৎ জিন ও ইনসানের সর্দার বা সাইয়্যিদ।
১৮. খাইরুল আলামীন’ অর্থাৎ তামাম জগতের উত্তম মানুষ।
১৯. আকরামুন নাস’ অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ মযার্দার অধিকারী।
২০. বদরুম মুনীর’ অর্থাৎ নূরানী চাঁদ।
২১. মুযহিরুশ শরীয়াহ’ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত যাহির বা প্রকাশকারী।
২২. রাফীয়ে দারাজাত’ অর্থাৎ বুলন্দ মর্যাদার অধিকারী।
২৩. হাবীবুল্লাহ’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু। হাবীবুল্লাহ’ঃ সুলতানুল হিন্দ ও খাজা ছাহেব হিসাবে খ্যাত হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য-অগণিত লক্বব মুবারক উনার মধ্য হতে একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক হলো ‘হাবীবুল্লাহ’। যা উনার ইন্তিকালের সময় কপাল মুবারকে সোনালী অক্ষরে কুদরতীভাবে ভেসে উঠেছিলো। যেটা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনাকে দান করেছেন। (মুঈনুল হিন্দ ও সকল জীবনীগ্রন্থ) স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার “সখী বা দানশীল” উম্মতকে লক্বব বা উপাধী দিয়েছেন ‘হাবীবুল্লাহ’। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, السخى حبيب الله ولوكانا فاسقا অর্থাৎ “সখী বা দানশীল ব্যক্তি ‘হাবীবুল্লাহ’ বা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু, যদিও তার কিছু ত্রুটি থাকে।” (লুগাতুল হাদীছ) সমস্ত লক্বব ব্যবহার করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্মত ও সুন্নত।
২৪. সাইয়্যিদুছ ছাক্বালাইন’ উনার অর্থ হলো বর্তমান যামানার জিন-ইনসানের সাইয়্যিদ বা সর্দার। “প্রত্যেকের লক্ববগুলোই উনার যামানার জন্য খাছ বা প্রযোজ্য।” যেমন- ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি লক্বব হচ্ছে ‘ইমামুল আ’যম’ উনার অর্থ হচ্ছে সকল ইমামের বড় ইমাম। তবে কি তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের চেয়েও বড় ইমাম? না বরং উনার যামানার সকল ইমামের বড় ইমাম।
২৫. খাযীনাতুর রহমাহ’ মহান আল্লাহ পাক তিনি দয়ালু তোমরাও দয়ালু হও। অতএব, বান্দাদের মধ্য হতে যিনি অত্যাধিক দয়ালু তিনিই ‘খাযীনাতুর রহমাহ’। অনুরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনি তামাম সৃষ্টির সাহায্যকারী, তোমরা সৃষ্টির সাহায্য কর। সুতরাং বান্দাদের মধ্য হতে যিনি অত্যাধিক সাহায্যকারী তিনিই ‘মুগীছুল ওয়ারা বা গাউছুল আ’যম অর্থাৎ বড় সাহায্যকারী।’
২৬. কাইয়্যূমুয যামান” মহান আল্লাহ পাক তিনি যামানা বা যুগের রক্ষা বা নিয়ন্ত্রণকারী। আবার পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, অনেক গাউছ, কুতুব, আবদাল বা ওলীআল্লাহ রয়েছেন যাদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি যামানাকে রক্ষা বা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। কাজেই যাদের মাধ্যমে যামানা রক্ষা বা নিয়ন্ত্রণ করা হয় তারাই “কাইয়্যূমুয যামান”। এটা নতুন কোনো লক্বব নয় স্বয়ং হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার ছেলে ইমাম মা’ছূম রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবুল ঊলা, ইমাম হুজ্জাতুল্লাহ নকশবন্দ, হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ফুরফুরা শরীফ উনার মুজাদ্দিদে যামান হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও উনার ছেলে হযরত আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সকলেরই লক্বব ছিলো ‘কাইয়্যূমুয যামান’।
২৭. সাইয়্যিদু উলদি আদম’ সকল আদম সন্তানের সরদার।
প্রত্যেক যামানার মুজাদ্দিদ বা ইমাম তথা ওলীআল্লাহ উনার যামানার সকল আদম সন্তান তথা মানুষের সর্দার। ওলীআল্লাহ উনাদের লক্ববগুলো উনাদের যামানার জন্য খাছ। উনার পূর্বের ও পরের কেউ এর অন্তর্ভুক্ত হবেন না। যেমন “মাকতূবাত শরীফ” উনার মধ্যে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে বলেছেন, ‘আমার ক্বদম মুবারক সকল ওলীআল্লাহ উনাদের গর্দানে’ এটা উনার যামানার জন্য খাছ। কেননা উনার পূর্বে রয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও পরে রয়েছেন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। কাজেই উনাদের সকলের গর্দানে বড় পীর ছাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কদম নয়। বরং উনার যামানার সকল ওলীআল্লাহ উনাদের গর্দানে উনার ক্বদম মুবারক।
ঠিক অনুরূপভাবেই ‘মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল আদম সন্তানের সর্দার।’ এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রত্যেক যামানার মুজাদ্দিদ বা ইমাম তথা ওলীআল্লাহ উনার যামানার সকল আদম সন্তান তথা মানুষের সর্দার।
২৮. মাওলানা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে আমাদের সকলের মুনীব বা সর্দার। এককথায় মুরুব্বী বা অভিভাবক।
২৯. ইমামুল আইম্মাহ”- ইমামদের ইমাম। মূলত আমরা বার বার বলে আসছি এখনও বলছি প্রত্যেক ওলীআল্লাহ উনার লক্ববই উনার যামানার জন্য খাছ। এতে পূর্ববর্তী কেউ অন্তর্ভুক্ত হবেন না। অর্থাৎ লক্ববগুলো ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হবে না। সুতরাং এর অর্থ হলো বর্তমান যামানার সমস্ত ইমামদের ইমাম।
৩০. মুহইস সুন্নাহ’- সুন্নত যিন্দাকারী। রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সুন্নতের ইত্তিবা করেন। উনার ছোহবতে যারা যায় তারাও অসংখ্য অগণিত সুন্নত উনার আমল করেন। অর্থাৎ তিনি প্রতি ক্ষেত্রেই যেমন চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছদ, কথা-বার্তা তথা, মাথার তালু থেকে পায়ের তলা চব্বিশ ঘন্টা প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি বিষয়ে সম্মানিত সুন্নত উনার ইত্তিবা করে থাকেন। অর্থাৎ একজন ওলী মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষে উম্মত হিসেবে যতগুলো সুন্নত পালন করা সম্ভব তিনি তার সবগুলোই পালন করে থাকেন। তাই তিনি ‘মুহইস সুন্নাহ’। সুবহানাল্লাহ!