সম্মানিত ও পবিত্র মাযার শরীফ যিয়ারত করা খাছ সুন্নত মুবারক এবং ভেঙ্গে দেয়ার চিন্তা করা তো বটেই বরং বিরোধিতা করাও কুফরী।
অনেকে কবর যিয়ারতকে বিদয়াত, শিরিক বলে থাকে , শুধু তাই নয় তারা যিয়ারতকে কবর পূজা বলেও আখ্যায়িত করে থাকে ! শুধু তাই নয়, তারা সারা বিশ্বে সকল মাযার শরীফ ভেঙ্গে ফেলার জন্য চেষ্টা করছে এবং অনেক মাযার শরীফ ভেঙ্গেও ফেলেছে।
নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক !
তাই এ সকল বিষয়কে সামনে রেখে এই লিখনীর প্রয়াস। আশাকরি এ দলীল সমূহ বাতিল ওহাবীদের মোকাবিলায় আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের কাজে আসবে।
আসুন আমরা বিস্তারিত দলীল আদিল্লা দ্বারা প্রমান পেশ করি মাজার শরীফ বা কবর যিয়ারত করা খাস সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত !
সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে এরশাদ হয়েছে–
عن ابن عمر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم من زار قبري وجبت له شفاعتي
অর্থ: হযরত ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরশাদ করেছেন, যে ব্যাক্তি আমার কবর ( রওজা শরীফ) যিয়ারত করলো তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।”
দলীল–
√ জামে ছগীর ১৭১ পৃষ্ঠা
√ শিফাউস সিকাম ২
√ ওফাউল ওফা ৩৯৪ পৃষ্ঠা !
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ যিয়ারত প্রসঙ্গে শতাধিক হাদীস শরীফ আছে।
প্রয়োজনে সেগুলা পরে উল্লেখ করা যেতে পারে !
আরো একটি গুরুত্বপূর্ন সহীহ হাদীস শরীফে বর্নিত আছে-
قال رسول الله صلي الله عليه و سلم لامدينت بها قبري و بها بيتي و تربتي وحق علي كل مسلم زيارتها
অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মদীনা শরীফ আমার ঘর, আর আমার কবরও মদীনা শরীফই হবে। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত এর যিয়ারত করা।”
দলীল-
√ মিশকাত শরীফ।
√ মিরকাত শরীফ।
√ আশয়াতুল লুময়াত।
√ শরহূত ত্বীবি।
এসকল হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহম্মদ ইউসুফ বিন নূরী বলেন-
دهب جمرة الامة الي ان ريارة قبره صلي الله عليه و سلم اعظع القربات
والسفر اليها جاءز بل مندوب مسر وعيتها محل اجماع بلا نزاع
অর্থ: জমহুর উম্মত এর মাযহাব হল রওজা মুবারক যিয়ারত করা উত্তম ইবাদত, আর নিয়ত করে সফর করা শুধু জায়েজই নয় বরং মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত এতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই।”
দলীল-
√ শরহে তিরমিযী ৩য় খন্ড ৩২৯ পৃষ্ঠা।
√ মা’আরিফুস সুনান।
এবার আসুন কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে অন্যান্য হাদীস শরীফ গুলা লক্ষ্য করি।
বিখ্যাত হাদীস শরীফের কিতাব ” মিশকাত শরীফে ” কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে ” যিয়ারাতুল কুবুর” বা কবর যিয়ারত নামক একটা অধ্যায় রচনা করা হয়েছে !
সেখান থেকে কিছু দলীল পেশ করা হলো –
عن بريدة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم كنت نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها
অর্থ : হযরত বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো।”
দলীল-
√ মুসলিম শরীফ
√ মিশকাত শরীফ ১৬৭০ ( বাংলা অনুবাদ, সুবিধার জন্য হাদীস নম্বর বাংলা অনুবাদ কিতাব থেকে দেয়া হলো যাতে সবাই সহজেই খুজে পায় )
كنت نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فا نها نزهد في الدنيا وتذكرة الاخرة
অর্থ : হযরত ইবনে মাসুদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, নিশ্চয়ই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম , এখন তোমরা তা করতে পারো। কেননা উহা দুনিয়ার আসক্তি কমায় এবং আখিরাতকে স্মরন করায় !”
দলীল-
√ ইবনে মাজাহ
√ মিশকাত শরীফ ১৬৭৭
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফের কিছু কবরের নিকট গেলেন অতঃপর তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, সালাম হোক তোমাদের প্রতি হে কবরবাসী !”
দলীল-
√ তিরমীযি শরীফ
√ মিশকাত শরীফ ১৬৭৩
সহীহ হাদীস শরীফে বর্নিত আছে-
عن محمد بن النعمان يرفع الحديث الي النبي صلي الله عليه و سلم قال من زار قبر ابويه او احدهما في كل جمعة غفر له و كتب برا
অর্থ: হযরত ইবনে নোমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ননা করেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক জুমুয়ার দিন নিজ পিতা-মাতা অথবা তাদের মধ্যে একজনের কবর যিয়ারত করবে তাকে মাফ করে দেয়া হবে |”
দলীল–
√ শুয়াইবিল ঈমান লিল বায়হাক্বী
√ মিশকাত ১৬৭৬
এ পবিত্র হাদীস শরীফেও একক ভাবে কবর যিয়ারত করার কথা বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি তাঁর পিতা মাতার যিয়ারত করতে যাবে সে বাড়ী থেকে নিয়ত করেই রওয়ানা হবে অর্থাৎ যিয়ারতকারী একমাত্র কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে কবরস্থানে গমন করবে। আর এ ক্ষেত্রে দূরবর্তী কিংবা নিকটবর্তী দূরত্বের কোন পার্থক্য নাই। নিকটেও যে হুকুম দূরেও একই হুকুম।
এ প্রসংগে আল্লামা আব্দুর রহমান যাফীরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ولا فرق في الزيارة بين كون المقابر قريبة او بعيدة
অর্থ: কবর যিয়ারতের ক্ষেত্রে নিকট ও দূরের কোন পার্থক্য নাই।”
দলীল-
√ কিতাবুল ফিক্বাহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া ১ম খন্ড ৫৪০ পৃষ্ঠা।
হযরত আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ندب الزيارة وان بعد محلها
অর্থ: দূরবর্তী স্থানেও (কবর) যিয়ারতের জন্য গমন করা মোস্তাহাব।”
দলীল-
√ শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠা।
এছাড়া আরো অসংখ্য সহীহ হাদীস শরীফে কবর যিয়ারত করার ব্যাপারে বলা হয়েছে। এসকল হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস , হাফিযে হাদিস , আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
اعلم ان استحباب زيارة القبور قد ثبت بهذه الا حاديث ال جال والنساء جميعا وقد اختلفوا في النساء
অর্থ : জেনে রাখুন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত এ সকল হাদীসের রায় অনুযায়ী মোস্তাহাব প্রমানিত, তবে মহিলাদের ব্যাপারে মতানৈক্য আছে।”
দলীল-
√ ফতহুল বারী ফি শরহে বোখারী ৩য় খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা |
বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وبزيارة القبور اي لا با با ءس بهابل تندب
অর্থ- কবর যিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা মোস্তাহাব!
দলীল-
√ ফতোয়ায়ে শামী ২/২৪২
শুধু তাই নয় ওহুদ যুদ্ধে শহীদ গনের মাজার শরীফ যিয়ারত করার জন্য স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই প্রতি বছর ওহুদ প্রঙ্গনে যেতেন !
যেটা বর্নিত আছে —
وفيه يستحب ان يزور شهداء جبل احد لماروي ابن ابي شيبة ” ان النبي صلي الله عليه وسلم كان ياء تي قبور الشهداء باحد علي رأس كل حول فيقول السلا عليكم بما صبرتم فنعم عقبي الدار
অর্থ : ওহুদ পাহাড়ের শহীদগনের ( কবর) যিয়ারত করা মোস্তাহাব। ইবনে আবী শায়বা হতে বর্নিত আছে , হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বৎসরান্তে ওহুদের শহীদগনের কবর যিয়ারত করতে আসতেন। অতঃপর বলতেন, তোমাদের প্রতি সালাম , যেমন তোমরা ধৈর্য ধারন করেছিলে তেমনি পরকালে উত্তম বাস স্থান লাভ করেছ।”
দলীল–
√ ফতোয়ায়ে শামী ২য় খন্ড ২৩৪ পৃষ্ঠা !
বর্নিত আছে, পরবর্তীতে খলিফাতুল মুসলেমীন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও আমিরুল মু’মিনিন ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই ধারাকে বজায় রেখেছিলেন। উনারাও উহুদ জিহাদে শহীদ গনের মাজার শরীফ যিয়ারত করতে যেতেন।”
দলীল-
√ উমদাতুল ফিক্বাহ।
সেটার ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ندب الزيارة وان بعد محلها
অর্থ : দূরবর্তী স্থানেও ( কবর) যিয়ারতের জন্য গমন মুস্তাহাব !”
দলীল-
√ শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠা !
বিখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব “ফিক্বহুস সুন্নাহ” কিতাবে এ প্রসংগে উল্লেখ আছে-
زيارة القبور مشتحبة للرجال
অর্থ: পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব।”
দলীল-
√ ফিক্বহুস সুনান ১ম খন্ড ৪৯৯ পৃষ্ঠা।
বিখ্যাত হাদীস শরীফ বিশারদ, হাফিজে হাদীস আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন-
لان السيدة فاطمة رضي الله عنها كنت تزور قبر حمز كل جمعة و كانت عايشة رضي الله عنها تزور قبر اخيها عبد الرحمن بمكة كذا
অর্থ: হযরত সাইয়্যিদা ফাতিমাতুয যাহরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা প্রতি শুক্রবার হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কবর যিয়ারত করতে যেতেন, অনুরূপ ভাবে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা স্বীয় ভাই আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কবর যিয়ারত করার জন্য মক্কা শরীফ যেতেন।”
দলীল-
√ উমদাতুল ক্বারী ফি শরহে বুখারী ৮ম খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠা।
শুধু তাই নয় শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম, ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ যিয়ারত করার জন্য আসতেন ! যেটা ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেই বলেন-
اني لاتبرك بابي حنيفة واجءي الي قبره فاذا عرضت لي حاجة صليت ر كعتين و ساءلت الله تعالي عند قبره فتقضي سريعا
অর্থ : নিশ্চয়ই আমি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বরকত হাসিল করি। যখন আমার কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন আমি উনার মাজার শরীফে এসে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি। অতঃপর উনার উসীলা দিয়ে আল্লাহ পাকের নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রর্থনা করি।তা অতি তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যায়।”
দলীল–
√ ফতোয়ায়ে শমী, মুকাদ্দিমা ১ম খন্ড ৫৫ পৃষ্ঠা
এছাড়াও সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, তাবেয়িন, তাবে তাবেঈন রহমাতুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন উনাদের কবর যিয়ারত করার অসংখ্য দলীল প্রমাণ রয়েছে।
বিখ্যাত ওলী আল্লাহ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুলত্বনুল হিন্দ হাবীবুল্লাহ খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমেরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। এতে যিয়ারত ভিন্ন আর অন্য কোন উদ্দেশ্যে ছিলো না।”
দলীল-
√ সিরাতে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
আর এ প্রসংগে ওহাবীদের ইমাম আশরাফ আলী থানবী ফতোয়া দিয়েছে-
“পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। যিয়ারত অর্থ দেখাশুনা। সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন কবর যিয়ারত করা উচিত। সেদিন শুক্রবার হওয়াই সবচাইতে ভালো। বুজুর্গানে দ্বীনের কবর যিয়ারত করার জন্য সফরে যাওয়াও দুরস্ত আছে।”
দলীল-
√ ইমদাদুল ফতোয়া।
দেওবন্দী সকল গুরুদের পীর হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “যিয়াউল ক্বুলুব” কিতাবের শেষে তার অনুসারীদের জন্য “কতিপয় বিশেষ উপদেশ” অনুচ্ছেদে লিখেন-
” মাশায়েখ ও পীর আওলিয়াগনের মাজার যিয়ারত করবেন। অবসর সময় তাদের মাজারের পার্শ্বে এসে রূহানিয়াতসহ মুতাওয়াজ্জুহ হবে এবং স্বীয় পীর মুর্শিদের সরতে তাদের ধ্যান করবে ও ফয়েজ হাসিল করতে সচেষ্ট হবে। কারন তারা আল্লাহ ও রসূলের স্থলাভিষিক্ত বলে গন্য। আর এসবই বরকতময় কর্ম।”
শুধু তাই নয়, ইমামগন জীবনে একবার কবর যিয়ারত ওয়াজিব ফতোয়া দিয়েছেন। ইমাম ইবনে হাজম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-
“জীবনে একবার কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব।”
দলীল-
√ আইনী ৪র্থ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা।
√ ফতহুল মুলহীম ২য় খন্ড ৫১ পৃষ্ঠা।
√ বজলুল মাজহুদ ৪ খন্ড ২১৪ পৃষ্ঠা।
এছাড়া আরো অসংখ্য দলীল রয়েছে , যার দ্বারা প্রমানিত হয় মাজার শরীফ বা কবর যিয়ারত করা সুন্নত !
এখন বর্তমানে কিছু মাজারে শরীয়ত বিরোধী কাজ দেখা যায় । যেমন- গান-বাজনা, নারী পুরুষ অবাধ মেলামেশা ,বিভিন্ন নেশা করা,সিজদা ইত্যাদি !! এগুলো মোটেই জায়িয নেই , এগুলা প্রতিরোধ করতে হবে।
কিন্তু তাইবলে যিয়ারত ত্যাগ করা যাবে না।
যেটা ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন–
ولا تترك لما يحصل عندها من منكراتو مفا سد كختلاط الرجال بالنساء وغير ذلك لان القربات لا تترك لمثلذلك بل علي الا نسان فعلها و انكار البدع بل و ازالتها ان امكن
” সেখানে যদি শরীয়ত বিরোধী কাজ পরিলক্ষিত হয়, যেমন মহিলা পুরুষ একত্র মিশ্রন, তথাপি কবর যিয়ারত ত্যাগ করা যাবে না। বরং মানুষের নব উদ্ভাবিত( বিদয়াত) কাজকে দূর করতে হবে।
দলীল–
√ দুররুল মোখতার ২য় খন্ড ২৪২ পৃষ্ঠা !
আর মহিলাদের যিয়ারতের ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছে। যেহেতু মহিলাদের ব্যাপারে বেপর্দা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে , এছাড়া তাদের দ্বারা বিভিন্ন বিলাপ , ক্রন্দন ইত্যাদি হয়ে থাকে তাই এদের ব্যাপারে ইমাম মুস্তাহিদ গন মাকরুহ ফতোয়া দিয়েছেন !
তবে যদি পর্দার খেলাপ না হয় এবং অন্যান্য শরীয়তের খিলাপ কিছু না হয় তবে মহিলারাও যিয়ারত করতে পারবে !
দলীল–
√ শামী
√ মারাকিউ ফালাহ
√ শরহে সুন্নাহ
উপরোক্ত দলীল আদিল্লা দ্বারা যিয়ারত সুন্নাত প্রমান হলো। এখন এই সুন্নতকে যারা পূজা বলে কটাক্ষ করবে নিঃসন্দেহে সেটা কুফরী হবে। কারন সুন্নতকে অবজ্ঞা করা কুফরী !
মাযার শরীফ যিয়ারত সম্পর্কে এত সহীহ দলীল থাকার পরও বর্তমানে ইহুদী এজেন্ট সালাফী , লা মাযহাবী, দেওবন্দী, তবলিগীরা পবিত্র মাযার শরীফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। সিরিয়াতেতো অনেক মাযার শরীফ ধ্বংসই করে দিয়েছে তারা। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও ওহাবী দেওবন্দীরা মাযার শরীফে হামলা করছে। এই সকল বাতিল ফির্কা মাযার শরীফের বিরুদ্ধে যে সকল আপত্তি উত্থাপন করে সে গুলা হচ্ছে-
(১) মাযার শরীফে নাকি পুজা হয়। সে কারনে তাদের প্রচলিত একটা শব্দ হচ্ছে মাযার পুজা।
(২) মাযার শরীফ যিয়ারত নাকি শিরক।
আসলে তাদের কল্পনাপ্রসূত ভিত্তিহীন আপত্তির কোন স্থানই পবিত্র শরীয়তের মধ্যে নাই। মাযার শরীফ হচ্ছে যিয়ারতের স্থান অর্থাৎ কোন নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে স্থানে শায়িত আছেন সেটাই হচ্ছে মাযার শরীফ। ছিয়া ছিত্তার পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত মাযার শরীফ যিয়ারত করা খাছ সুন্নত। এবং নিয়ামত অর্জন করার একটি অন্যতম স্থান।
এখানে যেহেতু আল্লাহ পাক উনার নিকটবর্তী মানুষ গন শায়িত আছেন তাই এই সব স্থানে অবিরত রহমত নাজিল হয়।
মুসলমানদের রহমত শূন্য করে দেয়ার জন্য ইহুদীদের ষড়যন্ত্র হচ্ছে মাযার শরীফ বিরোধী প্রচারনা চালানো। এ প্রচারনা পাবলিকের সামনে গ্রহনযোগ্য করার জন্য ইহুদীরা আরো একটা ষড়যন্ত্র করে সেটা হচ্ছে মাযার শরীফকে কেন্দ্র করে কিছু ভন্ড বিদয়াতি ফকির নেশাখোর জটাধারীকে নিয়োগ দেয়। এরা মাযার শরীফকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গানবাজনা, বেপর্দা মহিলার সমাগম, নেশাখোর দিয়ে বিভিন্ন শরীয়ত বিবর্জিত কাজ জারি করে দেয়া।
এররর ইহুদীদের প্লান অনুযায়ী তাদের নিয়োজিত এজেন্ট ওহাবী সালাফীরা এই সকল কাজকে পুঁজি করে মাযার শরীর যিয়ারতকে হারাম, শিরক বলে ফতোয়া জারি করে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে মাযার শরীফ ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!!
সম্মানিত পাঠকগন ! আপনারা এবার বলুন কিছু ভন্ড বিদয়াতি ফকিরের বেশরা কাজের জন্য মাযার শরীফ কি দোষ করলো ?
যেখানে প্রয়োজন ছিলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাযার শরীফ থেকে সকল বিদয়াতি হারাম কাজ মুক্ত করে সুন্নতী কায়দায় যিয়ারতের পরিবেশ সৃষ্টি করা। সেটা না করে এরা আজ মাযার শরীফ ধ্বংস এবং যিয়ারতকারীদের মাজারপুজারী বলে আখ্যা দিচেছ।
আল্লাহ ক্ষমা করুন , কোন মসজিদে যদি গান বাজনার প্রচলন হয় সেক্ষেত্রে কি ঐ মসজিদে গান বাজনা বন্ধ করতে হবে নাকি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলতে হবে নাকি মাসজিদে জামায়াত বন্ধ করতে হবে ?
মাযার শরীফ সংক্রান্ত এসকল ইহুদীদের ষড়যন্ত্র রোধ করতে সকলের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এবং সুন্নতের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী এসকল ইহুদী সালাফীদের মুখোশ খুলে মানুষকে সচেতন করা।
যারা মাযার শরীফের বিরুদ্ধে কথা বলছে মূলত এরা ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী। এই ওহাবীদের কিছু কর্মকাণ্ড এখানে সংযুক্ত করে দেয়া হলো, যেগুলা দেখলে সহজে বুঝতে পারেন একমাত্র ইহুদী এজেন্ট ওহাবী সালাফী দেওবন্দীরাই মাযার শরীফের বিরোধীতা করে।
আসুন জেনে নেই, ইহুদী বংশোদ্ভূত সউদী সরকার ১৯২৫ সালে ক্ষমতায় বসার পর মক্কা ও মদীনা শরীফে কি কি ইসলামী ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে:
মসজিদ:
১) সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র ঐতিহাসিক মসজিদ ও মাজার শরীফ।
২) হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহা ঐতিহাসিক মসজিদ।
৩) আল মানরাতাইন মসজিদ।
৪) নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশধর হযরত জাফর ইবনে ছদ্বিক রহমতুল্লাহি’র পুত্র হযরত আলী আল উরাইদি রহমতুল্লাহি মসজিদ এবং মাজার শরীফের গম্বুজ। ২০০২ সালের ১৩ আগস্ট তা ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করা হয়।
৫) খন্দকের ময়দানে ৪টি ঐতিহাসিক মসজিদ।
৬) আবু রাশিদ মসজিদ
৭) হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ, মদীনা শরীফ।
৮) রাজত আল শামস মসজিদ, মদীনা শরীফ।
মাজার শরীফ:
১) জান্নাতুল বাক্বি, মদীনা শরীফ। যেখানে প্রায় ৭ হাজার সাহাবীর মাজার শরীফ বিদ্যামান ছিলো। ১৯২৫ সালের ৮ই শাওয়াল সউদ ইহুদীরা জান্নাতুল বাকিতে হামলা ও লুটপাট চালায়। তারা নবীজির পবিত্র বংশধর এবং সম্মানিত সাহাবীগণের পবিত্র মাজার শরীফগুলো সাথে জঘণ্যধরনের বেয়াদবি করে। (নাউযুবিল্লাহ)।
২) জান্নাতুল মুয়াল্লা, মক্কা শরীফ। সেখানে নবীজির পারিবারিক অতি ঘনিষ্টজনদের, যেমন: নবীজির সম্মানিত পূর্বপুরুষ এবং উম্মুল মু’মীনিন হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা’র পবিত্র মাজার শরীফ ছিলো। ১৯২৫ সালে এ পবিত্রস্থান ধ্বংস করে সউদী ইহুদীরা।
৩) নবীজি সম্মানিত আব্বাজানের পবিত্র মাজার শরীফ ধ্বংস করা হয়।
৪) নবীজির সম্মানিত আম্মাজানের পবিত্র মাজার শরীফ ধ্বংস করা হয় ১৯৯৮ সালে।
৫) নবীজির সম্মানিত বংশধর হযরত মুসা কাজিম রহমতুল্লাহির সম্মানিত আম্মাজান এবং হযরত জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহি’র সম্মানিত স্ত্রী’র পবিত্র মাজার শরীফ ধ্বংস করা হয়।
৬) উহুদের ময়দানে শহীদান সাহাবীগণের পবিত্র মাজার শরীফ ধ্বংস করা হয়।
৭) ১৯৭৫ সালে জেদ্দায় সকল মানুষের মাতা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামের সম্মানিত রওজা শরীফ ধ্বংস এবং সিলগালা করে দেয়া হয়।
ঐতিহাসিক সম্মানিত স্থান সমূহ:
১) নবীজি যে পবিত্র ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
২) হযরত খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার উনার পবিত্র ঘর। যেখনে জন্ম গ্রহণ করেন সম্মানিত নবী কন্যা হযরত ফাতিমাতুজ জাহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং সম্মানিত নবী পুত্র হযরত কাসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
৩) হিজরতের পরে নবীজি মদীনা শরীফে যে ঘরে গিয়ে অবস্থান করেছিলেন।
৪) দ্বার-ই-আরকাম, ইসলামের প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র।
৫) সম্মানিত নবীপূত্র হযরত ইব্রাহীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র পবিত্র জন্মস্থান।
৬) নবীজির সম্মানিত বংশধর হযরত জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহির পবিত্র ঘর।
৭) হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র পবিত্র ঘর, যেখানে হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু জন্মগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, প্রায় ১৩০০ বছর ইসলাম একভাবে চলে আসছিলো। কিন্তু ১৯২৫ সালে ব্রিটিশ সহযোগীতায় সউদী ইহুদীরা ক্ষমতায় বসার পর তাদের ফতওয়া বিভাগ থেকে অপব্যাখ্যামূলক ফতওয়া দিতে থাকে এবং এ জঘন্য অপকর্মে লিপ্ত হয়। এই জঘন্য কর্মের মাধ্যমে তারা একদিক থেকে সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে বেয়াদবি করে, অন্যদিকে মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্যশূণ্য করে ফেলে।
বলাবাহুল্য মুসলমানদের কেন্দ্রস্থালে আসন গেড়ে ফেলা এ ইহুদীদের বিরুদ্ধে অনেক আগেই জিহাদ করা ফরজ ছিলো। কিন্তু আফসুস মুসলমানদের জন্য, যারা জ্ঞানের অভাবে এখনও গাফেল রয়েছে।