মসজিদে নববী বা রওযা শরীফ-উনাদের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া হারাম ও নাজায়িয। আর আমভাবে কা’বা শরীফ-উনাদের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী এবং খাছভাবে হারাম ও নাজায়িয। অতঃপর আমভাবে নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নতের খেলাফ বা মাকরূহ এবং হুযূরী বিনষ্ট হওয়ার কারণ।


সুওয়াল:- আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ২০তম সংখ্যঅর “সুওয়াল-জাওয়াব” বিভাগের একটি সুওয়ালের জাওয়াবে দেখতে পেলাম যে, কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববীর ছবিযুক্ত জায়নামাজে নামায পড়া ও উক্ত ছবিকে পা দ্বারা দলিত করা মাকরূহ ও আদবের খেলাফ এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরী। আর এর সপক্ষে দলীলও পেশ করা হয়েছে। কিন্তু অনেকে বলে থাকে, এটা যদি নামায়েয হতো, তবে সউদী আরবসহ বিশ্বের অগণিত মুসলমান তা করতো না, সুতরাং এটা জায়িয।
আর ইদানিংকালে কিছু মাসিক পত্রিকায়ও এটাকে জায়িয বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। যেমন- চট্টগ্রামস্থ পটিয়া মাদরাসার মুখপত্র মাসিক “আত-তাওহীদ” মে ’৯৭ইং সংখ্যায় নি¤েœাক্ত সমস্যা-সমাধান ছাপানো হয়-
(১) সমস্যা:- জয়নামাযে মক্কা-মদীনার ফটো পা দ্বারা মাড়ানো হয়, তা কি বেয়াদবী নয়? জায়নামাযে এসব ছবি সংযোজনের পেছনে কি কোন চক্রান্ত আছে?
সমাধান:- কা’বা শরীফের ফটো সম্বলিত জায়নামায পদদলিত করতে কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু তা ফটোই মাত্র। শরীয়তে ফটোকে সম্মান করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। (মজমুয়ায়ে ফতওয়া-২/৪৮৫)
(২) আর মওদুদী প্রবর্তিত তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র “মাসিক পৃথিবী-মে/৯৭ সংখ্যার ৫, ৬নং প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েঠেছ, কা’বা ঘরের ছবি অঙ্কিত জায়নামাযে নামায পড়া জায়িয। এখন আমাদের জানা ও বুঝার বিষয় হলো, এ ব্যাপারে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ফতওয়া সঠিক না মাসিক আত-তাওহীদ ও পৃথিবীর বক্তব্য সঠিক? আর আত-তাওহীদে মজমুয়ায়ে ফতওয়ার যে দলীল পেশ করা হয়েছে তাই বা কতটুকু সঠিক ও গ্রহণযোগ্য? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে বিস্তারিত ফতওয়া দানে বিভ্রান্তি দূর করবেন বলে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী।
জাওয়াব: “পবিত্র কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববীর” ছবি সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া সম্পর্কিত” মাসিক আত-তাওহীদ ও পৃথিবীর উক্ত বক্তব্য- দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর, অসম্পূর্ণ ও জেহালতপূর্ণ হয়েছে; ভুল তো অবশ্যই।
জাওয়াব: “পবিত্র কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববীর” ছবি সম্বলিত জয়নামাজে নামায পড়া সম্পর্কিত” মাসিক আত-তাওহীদ ও পৃথিবীর উক্ত বক্তব্য- দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর, অসম্পূর্ণ ও জেহালতপূর্ণ হয়েছে; ভুল তো অবশ্যই।
বিশেষ করে, “মাসিক আত-তাওহীদ” পত্রিকায় “মজমূয়ায়ে ফতওয়ার” যে দলীল পেশ করা হয়েছে তা এক্ষেত্রে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় এবং মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উক্ত বক্তব্য দ্বারা কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফের ছবি পা দ্বারা মাড়ানো কখনোই জায়িয প্রমাণিত হয় না। তাওহীদ কর্তৃপক্ষ উক্ত কিতাবের বক্তব্যের সঠিক মর্মার্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েই বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছে। যেমন- মাওলানা আব্দুল হাই লাখনোবী ছাহেব উনার মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই-এর ৪৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
سوال(১৮৭) بیت اللہ اور روضہء رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کا نقشہء مبارکہ و اجب التعظیم ھے یا نھین؟
جواب:- شریعت محمدیہ مین نقشہ کی تعظیم و اجب نھین- اگر کوئی اس کو چاک بھی کرئے توماخوذ نہ ھوگا- اور انحضرت صلی اللہ علیہ وسلم سے نقشئے روضئے اقدس کے بارہ مین کئی حکم ثابت نھین- یھان تک کہ اگر کوئی شخص حج کرے اور روضئے اقدس کی زیارت کرنے کے بجائے صرف نقشہ کی زیارت کرے تو بقول رسول پاک جفانی یہ زیارت بھی کافی نہ ھوگی اسی طرح نقشئے بیت اللہ پر بیت اللہ کا حکم نھی ھوگا اور نقشہ کی زیابت اجابت دعا کا وقت نھین اور اس نقشہ کے طواف کی بھی کوئی حقیقت نھین اور اگر کسی نے نقشہ کو قبلہ بنا کر اس کی طرف نماز پرہ لے تو درست نہ ھوگی دونون نقشہ بمنزلہ ائنہ کے ھین جس سے کعبہ مکرمہ اور روضئے اقدس کی ھیئت و صورت معلوم ھو جائے ھے اس سے زائد کچہ نھیی-

অর্থ:- প্রশ্ন:- (৭৮১) কা’বা শরীফ এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফের নকশা (ছবি) মুবারকের তা’যীম করা ওয়াজিব কিনা?
উত্তর: হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীয়তে নকশা বা ছবিকে তা’যীম করা ওয়াজিব নয়। যদি কেউ তা ছিড়েও ফেলে তবে শাস্তির উপযুক্ত হবে না। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে রওজা শরীফ সম্পর্কে কোন নির্দেশ প্রমাণিত নেই। তথাপিও কেউ যদি হজ্জ করে এবং রওজা শরীফ জিয়ারত করার পরিবর্তে নকশাকে জিয়ারত করে, তবে হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে উক্ত জিয়ারতের হক্ব আদায় হবে না। অনুরূপ কা’বা শরীফের নকশা বা ছবির হুকুম (মুল) কা’বা শরীফের মত নয় এবং নকশা বা ছবির যিয়ারত দোয়া কবুলের সময় নয়। আর কা’বা শরীফের নকশার তাওয়াফেরও কোন গুরুত্ব নেই। যদি কেউ কা’বা শরীফের নকশাকে কেবলা বানিয়ে নামায পড়ে, তবে জায়িয হবে না। উভয় নক্শা আয়নার ন্যায়, যদ্বারা মক্কা শরীফ ও রওজা শরীফের অবস্থা ও আকৃতি বুঝা যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়;
উল্লেখ্য, প্রথমত: মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, মূল কা’বা শরীফেরও ও রওজা শরীফের যেরূপ আহকাম ও তা’যীম-তাকরীম, সেরূপ তার নকশা বা ছবির নয় অর্থাৎ মূল কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফের যিয়ারতের দ্বারা যেরূপ ফযীলত হাছিল হয় তদ্রুপ তার নকশা বা ছবির যিয়ারতের মাধ্যমে কস্মিনকালেও হাছিল হয় না। এর দ্বারা এটা বুঝা যায় না যে, কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফের নকশা বা ছবি পা দ্বারা দলিত করা বা মাড়ানো জায়িয ও সেগুলো সম্মান বা তা’যীম- তাকরীমের উপযুক্ত নয়। কাজেই এ ব্যাপারে মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উক্ত বক্তব্যকে দলীল হিসেবে পেশ করা জেহালত বৈ কিছুই নয়।
দ্বিতীয়ত: যদিও ধরে নেই যে, মজমুয়ায়ে ফতওয়ার বক্তব্য দ্বারা কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফের নক্শা পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয বলা হয়েছে। তবুও তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মাওলানা আব্দুল হাই লাখনোবী সাহেব উনার উক্ত বক্তব্যের সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীলই পেশ করেননি।
কাজেই মাওলানা আব্দুল হাই লাখনোবী সাহেব বা অন্য কেউ ফতওয়া দিলেই যে, তা জায়িয হবে শরীয়তের কোথাও তা উল্লেখ করা হয়নি। বরং হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
كلمة حكمة من سفيه فا قبلها وكلمة سفيهة من حكيم فا تر كها.
অর্থ:- “হেকমত ও জ্ঞানমূলক কথা (যা শরীয়ত সম্মত) তা যদি কোন মূর্খলোকও বলে, তবে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। আর মূর্খসূচক কথা (যা শরীয়ত বিরোধী) তা যদি জ্ঞানী নামধারী ব্যক্তিও বলে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।”
কাজেই মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা যদিও কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফের নকশা পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয প্রমাণিত হয় না। তারপরও যদি জায়িয ধরে নেয়া হয় তথাপিও তা গ্রহণযোগ্য নয় যেহেতু উক্ত বক্তব্যের সপক্ষে কোন দলীল নেই। মূলত: এটা মাওলানা আব্দুল হাই লাখনোবী ছাহেবের ব্যক্তিগত অভিমত, যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ।
তৃতীয়ত: “মাসিক আত-তাওহীদ পত্রিকায় মজমুয়ায়ে ফতওয়ার বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে যে, শরীয়তে নকশা বা ফটোকে তা’যীম করার কোন বাধ্যবাধ্যকতা নেই।”
একথার জবাচেব বলতে হয় যে, হ্যাঁ এটা অবশ্যই সত্য যে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের নক্শা বা ছবিকে তা’যীম করা ওয়াজিব। তবে উছূলের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
ما ادى الى الحرام فهو حرام.
অর্থাৎ যে আমল মানুষকে হারামের দিকে নিয়ে যায়, তাও হারাম।
উদাহারণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, যেমন- হরতাল, লংমার্চ, গণতন্ত্র, ভোট ও নির্বাচন ইত্যাদি যা মানুষকে নানাবিধ হারাম কাজে মশগুল করে দেয়। যেমন হরতাল করলে মুসলমানের কষ্ট হয়, সম্পদের ক্ষতি হয়, লংমার্চ, গণতন্ত্র, ভেট ও নির্বাচনের দ্বারা বেদ্বীন-বদ্দ¦ীনদের অনুসরণ করা হয়। অথচ মুসলমানদের ধন-সম্পদের ক্ষতি করা, তাদেরকে কষ্ট দেয়া ও বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুসরণ করা হারাম নাজায়িয ও কুফরী। তাই এগুলো আমল করা হারাম ও এর থেকে বেঁচে থাকা ফরয।
অনুরূপ কুরআন ও হাদীছে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, দাঁড়ী কাটা হারাম। অথচ ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা হারাম। কারণ দাড়ি কাটার কারণে শয়তানকে অনুসরণ করা হয়, মহিলাদের আকৃতি ধারণ করা হয় এবং মুশরেক-মজুসী ও ইহুদী-নাছারাদের অনুসরণ করা হয়। যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই হারাম। তাই দাড়ি কাটা হারাম, আর হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরয। অর্থাৎ কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয।
অতএব, উপরোক্ত উছূল ও আলোচনার ভিত্তিতে এটাই সাবেত হয় যে, কুরআন শরীফ ও হাীচ৬ শরীফে যদিও স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের নকশা বা ছবিকে তা’যীম করা ওয়াজিব। কিন্তু কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে এটা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বিশেষভাবে সম্মানিত বা তা’যীম প্রাপ্ত ও আল্লাহ পাক উনর অসংখ্য নির্দনসমূহের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ পাক উক্ত নিদর্শনসমূহকে তাযীম করার নির্দেশ দিয়েছেন ও অবমাননা করতে নিষেধ করেছেন।
কাজেই উক্ত কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের নকশা বা ছবিকে পা দিয়ে মাড়ানো বা পায়ের নীচে রাখার অর্থই হচ্ছে মূল কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের সম্মান বিনষ্ট করা ও সেগুলোকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। অথচ তা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী। তাই কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের ছবি পায়ের নীচে রাখা অবশ্যই আদবের খিলাফ ও স্থান বিশেষে হারাম ও কুফরী।
উদাহারণ স্বরূপ বলা যায় যে, কদু খাওয়া সুন্নত, আর কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে, কদুকে তা’যীমকরা ওয়াজিব। কিন্তু আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, কদুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা করা কুফরী। তাই এক্ষেত্রে কদুকে তাযীম করা ওয়াজিব। কাজেই ক’াবা শরীফ ও রওযা শরীফের নকশাকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যেহেতু কুফরী, সেহেতু তার তা’যীম-তাকরীম করা সেক্ষেত্রে ওয়াজিব।
আরো উল্লেখ্য যে, আমভাবে একথা বলা কখনো শুদ্ধ হবে না যে, ফটোকে তা’যীম করার বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ এরূপ অনেক বস্তু বা বিষয়ের ছবি রয়েছে যেগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা ফরয-ওয়াজিব। যেমন- পবিত্র কুরআন শরীফের ছবি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যবহৃত দ্রব্য-সামগ্রী- যথা- পাগড়ী, জুব্বা, লাঠি, না’লাইন শরীফ ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হলো, তাওহীদ কর্তৃপক্ষ- “এগুলো ফটোই মাত্র” একথা বলে উল্লেখিত বস্তু সমূহের ছবি বা ফটো পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয ফতওয়া দিবে কি? তাদের ফতওয়া মুতাবেক যদি কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের নকশা পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয হয়, তবে কুআরন শরীফ ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম উনার ব্যবহৃত দ্রব্য-সা¤্রগ্রীর ছবি বা ফটোও পা দ্বারা মাড়ানো জায়িয হবে। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) । অথচ তা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।
মুলত: মজমুয়ায়ে ফতওয়ার উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা মূল কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের সাথে তার নকশার কতটুকু পার্থক্য রয়েছে অর্থাৎ নকশা যে, মূল কা’বা শরীফ নয় এবং এর তাওয়াফ বা জিয়ারতের দ্বারা যে হাক্বীক্বী ফযীলত হাছিল হয় না তা বর্ণনা করা হয়েছে। তাই বলে উক্ত নকশাকে তা’যীম করা যাবে না বা তা পা দ্বারা মাড়িয়ে অবমাননা করা জায়িয, তা বলা হয় নাই। কাজেই এ ব্যাপারে মজমুয়ায়ে ফতওয়ার দলীল পেশ করা তাওহীদ কর্তৃকপক্ষের জেহালত ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।
তাড়াছা আত-তাওহীদ পত্রিকার জাওয়াব নাক্বেছ বা অসম্পূর্ণ হয়েছে কারণ তাদের প্রশ্ন করা হয়েছে কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফ উভয়টির সম্পর্কে কিন্তু তারা জবাবে শুধুমাত্র কা’বা শরীফের কথা বলেছে। প্রশ্নকারীদের আরেকটি প্রশ্ন ছিল………এটা বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র কিনা? এ প্রশ্ন তাওহীদ কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণই এড়িয়ে গেছে, যা স্পষ্ট প্রতারণা ও অজ্ঞতা।
মূলকথা হলো- কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফের ছবি সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ, আদবের খেলাফ ও স্থান বিশেষে কুফরী। আর এ ব্যাপারে মাসিক আত-তাওহীদ ও পৃথিবীর বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও গুমরাহী মূলক।
নি¤েœ এ ব্যাপারে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কা’বা শরীফের ফযীলত:
প্রথমত: উল্লেখ্য যে, পূণ্যভূমি মক্কা শরীফে অবস্থিত পবিত্র কা’বা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থিত মসজিদে নববী মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে সম্মাণিত ও মর্যাদা সম্পন্ন স্থান। পবিত্র কা’বা শরীফের মর্যাদা ও ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন-
ان اول بيت وضع للناس للذى بيكة مباركة وهدى للعالمين وفيه ايات يينات مقام ابراهيم ومن دخلها كان امنا.
অর্থ: “ নিশ্চয়ই (কা’বা শরীফ যমীনে অবস্থিত) প্রথম ঘর, যা বরকতময় মক্কা শরীফে মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে এবং সমস্ত আলমের জন্য হিদায়েত স্বরূপ। আর তন্মধ্যে মাক্বামে ইব্রাহীম স্পষ্ট নিদর্শন, যে ব্যক্তি কা’বা শরীফে হেরেম শরীফে) প্রবেশ করলো, সে ব্যক্তি নিরাপত্তা লাভ করলো।”
আর পবিত্র কা’বা শরীফের ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- ان الله فى كل يوم وليلة ينزل على هذا البيت مأة وعشرين رحمة- ستون للطانفين. اربعون للمصلين وعشرون للناظرين.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমাামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক প্রতিদিন ও রাত্রে পবিত্র কা’বা শরীফের উপর একশত বিশটি (১২০) রহমত নাযিল করেন। তন্মধ্যে তাওয়াফকারীদের জন্য ষাটটি, নামাযীদের জন্য চল্লিশটি ও দর্শনার্থদের জন্য বিশটি রহমত নাযিল করেন।”
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র মক্কা শরীফ, কা’বা শরীফ ও তৎসংলগ্ন স্থান ও বস্তুসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে সম্মাণিত ও মর্যাদা প্রাপ্ত। শুধু তাই নয়, সেগুলেঅর কোন কোনটা আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহেরও অন্তর্ভুক্ত।
মূলত: কা’বা শরীফের এ ফযীলত ও মর্যদার কারণেই আমাদের হানাফী যাযহাবের ফতওয়া মুতাবেক কা’বা শরীফের ছাগে উঠা মাকরূহ তাহরীমী। শুধু তাই নয় ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ আছে, বিনা জরুরতে সাধারণ মসজিদের ছাদে উঠাও মাকরূহ। তাই যে সকল জায়নামাযে পবিত্র কা’বা শরীফের ছবি রয়েছে, তাতে নামায পড়া আদব ও তাক্বওয়ার খেলাফ বা মাকরূহ তানযীহী। কেননা তা মাটিতে বিছানোর কারণে পদদলিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যদি তুচ্ছ-তাচ্ছিলা বা অবজ্ঞা করে কা’বা শরীফের নকশা পা দ্বারা মাড়ায় বা দলিত করে তবে স্পষ্ট কুফরী।
বেয়াদবদের প্রসঙ্গে মসনবী শরীফে উল্লেখ আছে যে,

بے ادب محروم گشت از لطف رب
অর্থাৎ “বেয়াদব আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত।”
মদীনা শরীফের ফযীলত:
দ্বিতীয়ত: উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায় পবিত্র মদীনা শরীফকে অশেষ ফযীলত ও মর্যদা দান করেছেন। মদীনা শরীফের মর্যদা ও ফযীলত ও মর্যদা দান করেছেন। মদীনা শরীফের মর্যাদা ও ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر بن سمورة قال- سمعت رسول الله يقول ان الله سمى المدنة طابة.
অর্থ:- হযরত জাবির ইবনে সমূরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি শুনেছি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক মদীনা শরীফের নাম দিয়েছেন (ত্ববাহ) পবিত্র।”
অন্য হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى عليه وسلم- المدينة حرام مابين عير الى ثور فمن احدث فيها حدثا او اوى محدثا فعليه لعنة الله والملنكة والناس اجمعين لا يقبل منه صرف ولا عدل.
অর্থ:- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মদীনা শরীফ হারাম (সম্মানিত) আইর থেকে সাওর পর্যন্ত। এর মধ্যে যে ব্যক্তি শরীয়ত বিরোধী কাজ করবে এবং শরীয়ত বিরোধী কাজকে প্রশ্রয় দিবে, তার উপর আল্লাহ পাক, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আর তার কোন নফল ও ফরয ইবাদত কবুল হবে না।”
আর সকল ইমাাম মুজতাহিদগণের মতেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে শায়িত আছেন অর্থাৎ রওযা শরীফের মাটি মুবারকের মর্যাদা ও ফযীলত আরশ, কুরসী, লৌহ-কলম অর্থাৎ সব কিছু থেকেই অধিক। তাই যে সকল জায়নামাযে পবিত্র রওযা শরীফের ছবি রয়েছে, তাতে নামায পড়া সম্পূর্ণরূপেই নাজায়িয। কেননা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফের উর উঠা বা পা রাখা সম্পূর্ণই হারাম। যদি এহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের জন্য করে, তবে স্পষ্ট কুফরী শুধু তাই নয়, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট বা সম্পর্কযুক্ত যা কিছু রয়েছে, সেগুলোকে তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান করা সকলের জন্যই ফরয। আর সেগুলোকে এহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কবীরা গুণাহ ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তাই কোন কোন কিতাবে উল্লেখ আছে যে, কেউ যদি কোন চুল বা দাড়ী হতে নিয়ে বলে যে এগুলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল বাড়ি মুবারক। তবে যারা এটা শুনবে বা দেখবে, তাদের জন্য তা সাথে সাথে বিশ্বাস করা ও তাঁর তা’যীম-তাকরীম করা ফরয।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ফক্বীহ ও আলিম, বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরতুল আল্লামা কাজী আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
اعلم ان حرمة النبى صلى الله عليه وسلم بعد موته وتوقيره وتعظيمه لا زم كما كان حال حباته وذالك عند ذكره صلى الله وذكر حديثه وسنته وسماع اسمه وسيرته.
অর্থ:- “জেনে রাখ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওফাতের পর উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তা’যীম-তাকরীম করা ঐরূপই ওয়াজিব, যেরূপ হায়াত মুবারকে ওয়াজিব ছিল। কাজেই উনার বরকতময় জীবনী শ্রবণকালে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকালে, নাম মুবারক উচ্চারণকালে এবং উনার বরকতময় ও উৎকৃষ্টতম আখলাকের কথা শ্রবণকালে, উনার প্রতি তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব।”
কেননা মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وتعزروه وتوقروه.
অর্থ:- “তোমরা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা’যীম-তাকরীম কর।”
সুতরাং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম-তাকরীম বা শানের খিলাফ হওয়ার কারণে, মসজিদে নববী বা রওযা শরীফের ছবি সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া হারাম আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কুফরী।
মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দশনসূহ:
তৃতীয়: উল্লেখ্য যে, পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী ও তৎসলগ্ন পবিত্র রওজা শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার شعار নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যই দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অশেষ কল্যাণের কারণ।
মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
ومن يعظم شعائر الله قاتها من تقوى القوب.
অর্থ:- “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, নিশ্চয় তা তার জন্য অন্তরে তাক্বওয়া বা পবিত্রতার কারণ।” (সূরা হজ্জ/৩২)
আল্লাহ পাক অন্যত্র আরো বলেন,
ومن بعضم حرمة الله فهو خير له عند ريه.
অর্থ:- “আল্লাহ পাক যেসকল বস্তুকে সম্মানিত করেছেন, তাকে যে ব্যক্তি সম্মান করলো, এটা তার জন্য কল্যাণ বা ভালাইয়ের কারণ।” (সূরা হজ্জ/৩০)
অতএব, উপরোক্ত আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা এটাই ছাবেত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলের জন্যই ফরয। আর সেগুলোর অবমাননা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয কাজেই কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু উক্ত নির্দশনসমূহকে পায়ের নিচে রাখা বা সেগুলোকে পদদলিত করা আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহবে অবমাননা করার শামিল যা শুধু আদবের খেলাফই নয় বরং স্থান ও ক্ষেত্র বিশেষে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। তাই মহান আল্লাহ পাক ইরমাদ করেন,
يا ايها الذين امنوا لا تحلوا شعائر الله.
অর্থ:- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের অবমাননা করো না।” (সূরা মায়েদা/২)
নক্শা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া হুকুম:
উল্লেখ্য ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নতের খিলাফ বা মাকরূহ। হাদীছ শরীফে রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন নামায আদায় করতেন, তখন সম্মুখ থেকে ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত কাপড় সরিয়ে ফেলতেন।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن عائشة رضى الله عنها- كان لها ثوب فيه تصاوير مهدود الى سهوة فكان النبى صلى الله عليه وسلم يصلى اليه فقال اخريه عنى- قالت فاخرته. (رواه النسائى)
অর্থ:- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “উনার একটি ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত কাপড় ছিল, যা ঘরে এক কোনে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায আদায় করার সময় ওটা উনার সামনে পড়তো। তাই তিনি বলেন, হে আয়িশা! কাপড়টি আমার নিকট থেকে দূরে সরিয়ে নাও, হযরত আয়িশা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অত:পর আমি ওটা সরিযে নিলাম।” (নাসাঈ শরীফ)
অন্য হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে,
عن انس رضى الله عنه قال- كان قرام لعا ئشة سترت به جائب بيتها- فقال النبى صلى الله به وبسلماميطى عنى لا تزال نصاويرر تعرض لى فى صلاتى- (رواه البخارى)
অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট একটি ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত পর্দা ছিল, যা তিনি ঘরের এক পাশে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, হে আয়িশা! পর্দাটি আমার সম্মুখ থেকে দূরে সরিয়ে নাও। কারণ এর ছবি বা নকশাগুলো নামাযে আমার দৃষ্টি ও মন আকৃষ্ট করে বা হুযূরীর ব্যাঘাত ঘটায়।” (বুখারী শরীফ)
তাই সকল ফিক্বাহের কিতাবসমূহে মসজিদের ভিতর অত্যাধিক কারুকার্জ করাকে মাকরূহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা তাতে মুছল্লীদের নামাযে হুজুরী বা একনিষ্ঠতার ব্যাঘাত ঘটে।
অতএব, উপরোক্ত এলাচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী ও অন্যান্য সম্মাণিত বস্তুসমূহের ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া খিলাফে সুন্নত বা মাকরূহ। কেননা তাতে নামাযীর হুজুরীর বিঘœ ঘটে। সুতরাং এ কারণেও কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববীর ছবিযুক্ত জায়নামায পরিহার করতে হবে।
কোন রাষ্ট্র, গোত্র ও ব্যক্তি শরীয়তের দলীল নয়:
আরো উল্লেখ্য যে, যারা বলে থাকে যে- কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববীর ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া যদি আদবের খিলাফ, মাকরূহ ও স্থান এবং ক্ষেত্র বিশেষে হারাম ও কুফরী হয়ে থাকে, তবে সউদী আরবসহ সারা বিশ্বের অসংখ্য মুসলমান, যারা উক্ত জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়ছেন, তারা কি নামায়িয কাজ করছেন? তাদের আমল দ্বারা কি প্রমাণিত হয় না যে, উহা জায়িয?
তাদের এ কথার জবাবে বলতে হয় যে, ইসলামী শরীয়ত কোন রাষ্ট্র, গোত্র ও ব্যক্তিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে না। যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত রাষ্ট্র, গোত্র ও ব্যক্তি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর পরিপূর্ণ কায়িম না থাকবে। কারণ উপরোক্ত চারটিই হচ্ছে- শরীয়তের দলীল। কাজেই যে আমল কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত, তা যদি অল্প সংখ্যক লোকও আমল করে, তবে সেটাই গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। আর যে আমল কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফ, ুজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বা বিপরীত, তা যদি অধিকাংশ লোকও আমল করে, তবুও সেটা পরিত্যাজ্য। বরং তা অনুসরণ করা গুমরাহীতে নিপতিত হওয়ার কারণ।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
وان تطع من اكثر فى الارض يصلوك عن سبيل الله.
অর্থ:- “তোমরা যদি যমীনের অধিকাংশ লোককে অনুসরণ কর, তবে সে অধিকাংশ লোক) তোমাদেরকে আল্লাহ পাক উনার রাস্তা থেকে বিভ্রান্ত করে দিবে।”
কারণ যমীনের অধিকাংশ লোকই হিদায়েত প্রাপ্ত নয় বরং বেদ্বন-বদদ্বীন ও গুমরাহ।
অতএব, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববীর ছবিযুক্ত এবং অথ্যাধিক নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নত ও আদবের খিলাফ তথা মাকরূহ এবং স্থান ও ক্ষেত্র বিশেষে হারাম ও কুফরী। তাই যমীনের অধিকাংশ লোকও যদি তা আমল করে, তবুও তা আমল করা জায়িয হবে না। যদি সউদী আরবে চালু থাকলে অধিকাংশ লোক আমল করলেই তা জায়িয হয়, তবে সউদী আরবে যে টেলিভিশন, ভিসিআর, ভিডিও ইত্যাদি চালু রয়েছে এবং যমীনের অধিকাংশ লোক শরাব পান করছে, বেপর্দা হচ্ছে, নামায পড়ছে না, দাড়ি রাখছে না। তাদের বক্তব্য মুতাবেক টেলিভিশন, ভিসিআর, ভিডিও দেখা, শরাব পান করা ইত্যাদি সবই জায়িয। যেহেতু তা সউদী আরবে রয়েছে এবং অধিকাংশ লোক করছে। (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)
জায়নামাযে কা’বা ও রওজা শরীফের নকশা বিধর্মীদের একটি সূক্ষ্ম চক্রান্ত:
স্মর্তব্য যে, ইহুদী-নাছারা তথা এক কথায় সমস্ত বিধর্মীরা মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা নষ্ট করার জন্য নানারূপ চক্রান্ত বা কৌশল অবলম্বন করছে। এদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- الكفر ملة واحدة অর্থাৎ “সমস্ত কাফিররা, বিধর্মীরা মিলে এক দল।”
তারা সম্মিলিত চক্রান্ত বা কৌশলের মাধ্যমে মুসলমানদের পবিত্র ও সম্মাণিত স্থান- পবিত্র কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফ সংলগ্ন মসজিদে নববীসহ ইত্যাদির ছবি জায়নামাযে ছাপিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ সম্মাণিত স্থানসমূহকে মানুষের পায়ের নিচে এনে দিয়েছে। যার ফলে মুসলমানগণ সেগুলোকে পদদলিত করবে এবং দীরে দীরে সেগুলোর থেকে মুসলমানের শ্রদ্ধা-ভক্তি, তা’যীম-তাকরীম উঠে যাবে। কাজেই বিধর্মীদের এ ধোকা থেকে নিজ ঈমানকে হিফাযত করা এবং মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের তা’যীম-তাকরীম রক্ষা করা আর সেগুলোকে অবমাননা করা হতে বিরত থাকা সকলের জন্যই দায়িত্ব ও কর্তব্য তথা ফরয।
উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে সাব্যস্ত হলো যে, সাধারণভাবে কা’বা শরীফের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ তানযীহী ও আদবের খিলাফ। আর মসজিে নববীর ছবি যদি রওজা শরীফসহ হয়, তবে তাতে নামায পড়া সম্পূর্ণই হারাম। এগুলো আল্লাহ পাক উনার (شعار) বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত, এগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা সকলের উপরই অপরিহার্য কর্তব্য। তাছাড়া আমভাবে সকলের মতেই ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নতের খিলাফ বা মাকরূহ এবং হুজুরী বিনষ্ট হওয়র কারণ। আর পবিত্র কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফের ছবি জায়নামাযে ছাপানো বিধর্মীদের একটি চক্রান্ত, যাতে করে মানুষ সেগুলোর থেকে শ্রদ্ধা-ভক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই এ ধরণের জায়নামায পরিত্যাগ করা সকলের জন্যই অপরিহার্য কর্তব্য। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত।
দলীলসমূহ: ১. বুখারী শরীফ, ২. মুসলিম শরীফ, ৩. নাসাঈ, ৪. মেশকাত, ৫. ফাতহুল বারী, ৬. ওমদাতুল ক্বারী, ৭. এরশাদুস সারী, ৮. তাইসীরুল ক্বারী, ৯. শরহে নববী, ১০. মেরকাত, ১১. লুময়াত, ১২. আশয়াতুল লুময়াত, ১৩. শরহুত ত্বীবী, ১৪. তা’লীকুছ ছবীহ ১৫. মুযাহেরে হক্ব, ১৬. মিরআতুল মানাযীহ, ১৭. তাফসীরে খাযেন, ১৮. বাগবী, ১৯. আহকামুল কুরআন, ২০. কবীর, ২১. দুররে মানছুর, ২২. যাদুল মাসীর, ২৩. ফাতহুল ক্বাদীর, ২৪. আবী সাউদ, ২৫. তাবারী, ২৬. ইবনে কাছীর, ২৭. মায়ারেফুল কুরআন, ২৮. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ২৯. তাতার খানিয়া, ৩০. বাজ্জাজিয়া, ৩১. কাজীখান, ৩২. খুলাছাতুল ফতওয়া, ৩৩. মাবছুত, ৩৪. হেদায়া, ৩৫. নেহায়া, ৩৬. এনায়া, ৩৭. বেক্বায়া, ৩৮. সেক্বায়া, ৩৯. বাহরুর বায়েক, ৪০. মারাকিউল ফালাহ, ৪১. তাহতাবী, ৪২. কিতাবুশ শেফা, ৪৩. উছূলুশ শাশী, ৪৪. নুরুল আনোয়ার, ৪৫. আক্বায়েদে নসফী, ৪৬. ফিক্বহুল আকবার, ৪৭. তাকমীলুল ঈমান, ৪৮. ইমদাদুল আহকাম, ৪৯. রহীমিয়া, ৫০. মাহমুদিয়া, ৫১. দুররুল মুখতার ইত্যাদি।