প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের ছহীহ আক্বীদা উনাদের সংক্ষিপ্তসার আক্বাইদসমূহ

প্রকৃত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা ও আমল, ইলমে ফিকাহ:

১. মহান আল্লাহ পাক, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সমস্ত নবী ও রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের শান, মান, মর্যাদা, মর্তবা অনুযায়ী পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অর্থ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে হবে।

২. মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘মুনাব্বির’ তথা আলোদানকারী বা হিদায়াতকারী অর্থে নূর। আলো অর্থে নূর নন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে আলো অর্থে নূর বলা কুফরী।

৩. মহান আল্লাহ পাক উনার আকার-আকৃতি রয়েছে বিশ্বাস করা কুফরী।

৪. পবিত্র কুরআন শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম বা বাণী মুবারক। যা ‘গাইরু মাখলূক’ বা সৃষ্ট নয়। কালামুল্লাহ শরীফ উনাকে মাখলূক বা সৃষ্ট বলা কুফরী।

৫. হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস্ সালাম, সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং নৈকট্যপ্রাপ্ত সমস্ত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদেকে জান্নাতী হিসেবে বিশ্বাস করা।

৬. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী নন বরং নূরের তৈরী অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম (আপাদমস্তক নূর)।

৭. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাত্রিতে জিসিম মুবারক ও রূহ মুবারক উনাদের সমন্বয়ে অর্থাৎ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে পবিত্র আরশে মুয়াল্লায় সাক্ষাত মুবারক করা সত্য।

৮. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলনা।

৯. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই হায়াতুন্ নবী।

১০. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গাইব উনার অধিকারী অর্থাৎ মুত্তালাউন আলাল গাইব।

১১. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় হাযির-নাযির।

১২. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাশার, তবে আমাদের মত নন।

১৩. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা-মাতা উনারা অবশ্যই জান্নাতী।

১৪. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় মাতা আলাইহাস সালাম উার বাম পার্শ্বের মুবারক পাঁজর উনার নীচ দিয়ে আগমন করেছেন।

১৫. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম।

১৬. আওলাদে রসূল তথা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত জুযে ঈমান বা পবিত্র ঈমাণ উনার অঙ্গ।

১৭. পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা জায়িয ও পবিত্র সুন্নাত।

১৮. আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ বা আগমন উপলক্ষে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা ফরযে আইন।

১৯. মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও ক্বিয়াম করা জায়িয ও পবিত্র সুন্নত।

২০. ইয়া নবী ইয়া রসূল’ বলে সম্বোধন করা জায়িয ও দলীল সম্মত।

২১. সকল নবী ও রসূল আলাইহিমুছ্ ছলাতু ওয়াস্ সালামগণ মাছূম বা নিষ্পাপ।

২২. মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার পিতা ছিলেন হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম।

২৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ মিয়ারে হক্ব তথা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।

২৪. শাইখাইন অর্থাৎ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম এবং হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনাদেরকে অন্য ছাহাবীদের উপর প্রাধান্য দেয়া।

২৫. আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জামাতা অর্থাৎ হযরত উছমান গণী আলাইহিস সালাম ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে বিশেষভাবে মুবারক সম্মান করা।

২৬. পবিত্র মদীনা শরীফ উনাকে পবিত্র কাবা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ থেকে সম্মান করা।

২৭. দুই ক্বিবলা অর্থাৎ পবিত্র কাবা শরীফ এবং পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনাদেরকে ক্বদর করা।

২৮. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদেরকে সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল বিশ্বাস করা।

২৯. হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী এই সম্মানিত চার মাযহাব উনার যেকোন একটি মাযহাব উনার অনুসরণ করা ফরযে আইন।

৩০. ইলমে তাছাওউফ (বা ইলমুস্ সুলূক, ইলমুত্ ত্বরীক্বত, ইলমুস্ সির, ইলমুল্ হাক্বীক্বত) অর্জন করা প্রত্যেকের জন্য ফরযে আইন।

৩১. হক্কানী মুর্শিদ বা শাইখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরযে আইন।

৩২. ক্বলবী যিকির করা ফরয।

৩৩. মুর্শিদ বা শাইখ উনাকে ‘ক্বিবলা’ বলা জায়িয।

৩৪. ওলীআল্লাহগণ উনাদের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা সুন্নত।

৩৫. ‘ক্বিয়ামত পর্যন্ত প্রতি হিজরী শতকের শুরুতে একজন করে মুজাদ্দিদ (দীন সংস্কারক) আগমন করবেন’ ইহা বিশ্বাস করা।

৩৬. ওলীআল্লাহগণ উনাদের কারামত অকাট্য সত্য। সমষ্টিগত কারামত উনাকে অবিশ্বাসকারী কাফির।

৩৭. পরহিযগার এবং ফাসিক উভয় ব্যক্তির জানাযার নামায পড়া।

৩৮. নেক্কার এবং সাধারণ ফাসিক উভয় ইমামের পেছনে নামায পড়া জায়িয মনে করা।

৩৯. ন্যায় পরায়ণ কোন খলীফা উনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা।

৪০. উভয় পায়ের চামড়ার মুজার উপর মাসেহ করা।

৪১. তাকদীর তথা ভাল-মন্দ মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে হওয়াকে বিশ্বাস করা।

৪২. সমস্ত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ও সুন্নতে যায়িদাহ্ বা মুস্তাহাব আমলও আদায় করা।

৪৩. হালাল ও হারাম উভয় প্রকার খাদ্য রিযিক। ইহা কারো জন্য হালাল আবার কারো জন্য হারাম। যা সম্মানিত শরীয়ত উনার মানদণ্ড হিসেবে নির্ণিত।

৪৪. পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা হারাম।

৪৫. পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে হরতাল করা হারাম।

৪৬. পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে মৌলবাদ দাবী করা হারাম।

৪৭. পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে লংমার্চ করা হারাম।

৪৮. পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে ব্লাসফেমী আইন চাওয়া হারাম।

৪৯. পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে কুশপুত্তলিকা দাহ করা হারাম।

৫০. ছবি, টেলিভিশন, ভিসিআর, ভিডিও ইত্যাদি ছবি সংশ্লিষ্ট সবকিছুই হারাম।

৫১. পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে নারী নেতৃত্ব মানা হারাম।

৫২. পর্দা করা ফরয, বেপর্দা হওয়া হারাম।

৫৩. জন্মনিয়ন্ত্রণ করা নাজায়িয।

৫৪. পবিত্র রওযা শরীফ ও কা’বা শরীফ উনাদের ছবি সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া নাজায়িয ও হারাম। এছাড়া সাধারণ মসজিদের ছবি সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।

৫৫. তাহাজ্জুদ নামায সহ সর্ব প্রকার নফল নামায (ছলাতুল কুসূফ-সূর্যগ্রহণের নামায, ছলাতুল খুসূফ-চন্দ্রগ্রহণের নামায ও ইস্তিস্কার-বৃষ্টি প্রার্থনার নামায ব্যতীত) জামায়াতে আদায় করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।

৫৬. মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম।

৫৭. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত।

৫৮. সম্মানিত শরীয়তে উমরী ক্বাযা নামায রয়েছে।

৫৯. মুসাফিরের জন্য মসজিদে গিয়ে নামায পড়া শর্ত নয়।

৬০. আখিরী যোহর অবশ্যই সম্মানিত শরীয়তে রয়েছে

৬১. হালকী নফল বসে পড়াই খাছ সুন্নত ও অধিক ফযীলতের কারণ।

৬২. হানাফী মাযহাব মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদের (ভঙ্গের) কারণ।

৬৩. বাংলা ভাষায় জুমুয়ার খুৎবা দেয়া বিদয়াত

৬৪. পবিত্র ঈদ ও পবিত্র জুমুয়ার খুৎবায় লাঠি ব্যবহার করা সুন্নত।

৬৫. পবিত্র মসজিদে ছানী জামায়াত করা জায়িয।

৬৬. জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়া পবিত্র সুন্নত।

৬৭. আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বন করা মুস্তাহাব সুন্নত।

৬৮. দাফনের পর কবরে আযান দেয়া বিদয়াত, তালক্বীন দেয়া পবিত্র সুন্নত।

৬৯. পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জানাযা নামায ও আযানের পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়িয ও পবিত্র সুন্নত।

৭০. রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়।

৭১. পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে, ইলম শিক্ষা দিয়ে উজরত বা বিনিময় নেয়া জায়িয।

৭২. সব ধরণের টুপি সুন্নত নয়। বরং চার টুকরা বিশিষ্ট সূতি কাপড়ের গোল, মাথার সাথে লেগে থাকে এবং সাদা রংয়ের টুপি দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে পরিধাণ করা পবিত্র খাছ সুন্নত মুবারক।

৭৩. কালো, সাদা ও সবুজ রংয়ের ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করা দায়িমী সুন্নত মুবারক।

৭৪. পাগড়ীর উপর রুমাল পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক।

৭৫. হানাফী মাযহাব মতে, পুরুষের জন্য লাল, হলুদ, জাফরানী রংয়ের যেকোন পোশাক ও রুমাল ব্যবহার করা নাজায়িয ও হারাম।

৭৬. কোনা ফাঁড়া কোর্তা সুন্নত নয়। বরং গোল, নিছফুস্ সাক্ব, গুটলী ওয়ালা, সূতি ও সাদা রংয়ের কামীছ পরিধাণ করাই খাছ সুন্নত মুবারক।

৭৭. ইযার বা ফাঁড়া-সেলাইবিহীন লুঙ্গী পরিধাণ করা খাছ সুন্নত মুবারক।

৭৮. বাবরী ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতীতে চুল রাখা পবিত্র সুন্নত নয়।

৭৯. এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয, গোঁফ ছোট করে রাখা সুন্নত, মুণ্ডন করা বিদয়াত।

৮০. লক্বব ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক।

৮১. নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা খাছ সুন্নত মুবারক।

৮২. ওসীলা গ্রহণ করা বা ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয।

৮৩. কদমবুছী করা খাছ সুন্নত।

৮৪. দোয়াল্লীনকে যোয়াল্লীন পড়লে নামায ফাসেদ হয়ে যায়।

৮৫. মেয়েদের হাতে ও পায়ে মেহেদী-মেন্দী ব্যবহার করা সুন্নত মুবারক।

৮৬. তাকবীরে তাশরীক তিনবার পাঠ করা মুস্তাহাব-সুন্নত মুবারক।

৮৭. খাসি কুরবানী করা জায়িয ও সুন্নত মুবারক।

৮৮. কুরবানীর দিনে হাঁস-মুরগী যবেহ করা আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী, আর খাছ ফতওয়া মতে হারাম।

৮৯. সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সকল খেলাধুলাই হারাম এবং অশ্লীলতা বিস্তারক কাজ।

৯০. সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তাবলীগে আম করা ফরযে আইন নয়, বরং ফরযে কিফায়া।

৯১. পুনর্জন্ম ও জন্মান্তর বিশ্বাস করা কুফরী। কেননা তা মুশরিক ও হিন্দুদের আক্বীদা বা বিশ্বাস।

৯২. গান-বাজনা করা ও শোনা হারাম।

৯৩. ধূমপান করা (তথা বিড়ি, সিগারেট, তামাক, গুল, হুক্কা ইত্যাদি খাওয়া) হারাম।

এখানে পবিত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার কতিপয় আক্বীদা ও মাসয়ালা-মাসায়িল উল্লেখ করা হল আকিদা ও আমল সঠিক করে মুক্তি পাবার জন‌্য।