প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বাইদ

আক্বায়িদু আহলিস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ্
আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনার আভিধানিক অর্থ

আভিধানিক অর্থ
‘আহলুন’ অর্থ: দল, ফিরক্বা, মিল্লাত, পরিবার-পরিজন, স্ত্রী, অধিকারী, যোগ্য, উপযুক্ত, বাসিন্দা, অধিবাসী, লোকজন ইত্যাদি। ‘আস্ সুন্নাহ’ অর্থ: পবিত্র সুন্নত মুবারক, আদর্শ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, রীতি, নীতি, নিয়ম, পথ, পন্থা, স্বভাব ইত্যাদি।

‘আল জামায়াহ’ অর্থ: দল, জামায়াত, উম্মত, সম্প্রদায়, বড় দল ইত্যাদি।

একত্রে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ’ অর্থ: পবিত্র সুন্নত উনার অনুসারী বড় হক্ব দল।

পারিভাষিক অর্থ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ নবীউল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং ইমাম, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, ফক্বীহ, গাউছ, কুতুব, ওলী, আবদাল, নক্বীব, নজীব রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যে মত ও পথের উপর প্রতিষ্ঠিত তাকে ‘আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত‘ (বা সুন্নতের পূর্ণ অনুসারী বড় হক্ব দল) বলে।

আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনার নাম মুবারক
১. আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনার অন্যান্য নাম মুবারক ‘আল ফিরক্বাতুন্ নাজিয়াহ’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তিদানকারী ও মুক্তিপ্রাপ্ত দল’।

২. ‘আহলুল্ হক্ব’ বা সত্যনিষ্ঠ দল’।

৩. ‘আছ ছিরাতুল্ মুস্তাক্বীম’ বা সরল-সঠিক পথ।

৪. ‘ফিরকাতুছ্ ছিদ্দীক্বীন’ বা ওলীআল্লাহগণ উনাদের পথ।

৫. ‘আল মাযাহিবুল আরবায়াহ’ বা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব চতুষ্ঠয়’।

৬. ‘মাযহাবুল মাতুরীদী’।

৭. ‘মাযহাবুল আশয়ারী’।

৮. ‘আক্বায়িদুল্ হানাফিয়্যাহ’ ইত্যাদি।

বাতিল দলের দৃষ্টিতে ‘ফিরক্বাতুন নাজিয়াহ’-উনার নাম
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম হযরত শাইখ সাইয়্যিদ মুহ্ইদ্দীন মুহম্মদ আব্দুল ক্বাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘গুনিয়াতুত্ ত্বালিবীন, কিতাব উনার দ্বিতীয় অংশের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন,

১. ‘ক্বদরিয়াহ্’ ও ‘মু’তাযিলা’ ফিরক্বার লোকেরা ‘নাজিয়াহ’ ফিরক্বা-কে ‘মুজবিরাহ’ বলে তোহমত দেয়।

২. ‘মুরজিয়াহ্’ ফিরক্বার লোকেরা ‘নাজিয়াহ’ ফিরক্বাকে ‘শাকাকিয়াহ’ বলে তোহমত দেয়।

৩. ‘রাফিযাহ’ ফিরক্বার লোকেরা ‘নাজিয়াহ’ ফিরকাকে ‘নাছিবাহ’ বলে তোহমত দেয়।

৪. ‘জাহমিয়াহ’ ও ‘নাজ্জারিয়াহ’ ফিরকার লোকেরা ‘নাজিয়াহ’ ফিরক্বাকে ‘মুশাব্বিহা’ বলে তোহমত দেয়।

৫. ‘বাতিনিয়্যাহ’ ফিরক্বার লোকেরা ‘নাজিয়াহ’ ফিরক্বাকে ‘হাশবিয়াহ’ বলে তোহমত দেয়।

আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনার আক্বায়িদী মাযহাব:
মূলত: ‘আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত’ বা ‘আল ফিরক্বাতুন্ নাজিয়াহ’ উনার আক্বায়িদ উনার মৌলিক মাসয়ালাসমূহ নির্নয় করেন ইমামে আ’যম হাকিমুল হাদীছ হযরত ইমাম আবূ হানীফা ত্বাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সেখান থেকে পরবর্তীতে সে মাসয়ালা সমূহের দলীলভিত্তিক বিস্তারিত রূপ দান করেন।

১. হযরত আবূ মানছূর মাতুরীদী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। (বিছাল শরীফ: ৩৩৩ হিজরী)

২. হযরত আবুল হাসান আশয়ারী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৩৩০ হিজরীর কিছু বেশী)। তাই ‘আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত’ বা ‘আল ফিরক্বাতুন্ নাজিয়াহ’-উনার আক্বায়িদী মাযহাব হলো ২টি।

১. ‘আক্বায়িদুল মাতুরীদী’ পরবর্তী হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ এ আক্বীদা উনাতে বিশ্বাসী।

২. ‘আক্বায়িদুল্ আশয়ারী’: মালিকী শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীগণ এ আক্বীদা উনাতে বিশ্বাসী।

মূলত: আক্বায়িদুল মাতুরীদী ও আক্বায়িদুল আশয়ারী উনাদের মূল ভিত্তি হলো ‘আক্বায়িদুল হানাফী’। ইহাই অধিক ছহীহ্ উক্তি।

আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনার ফিক্বহী মাযহাব:
‘আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত’ বা ‘আল ফিরক্বাতুন্ নাজিয়াহ’ ফিক্বহী মাসয়ালার দৃষ্টিতে ৪ ভাগে বিভক্ত।

১. ‘মাযহাবুল হানাফী’ বা হানাফী মাযহাব:

ত্বাবিয়ী ইমামে আ’যম হাকিমুল হাদীছ হযরত ইমাম আবূ হানীফা কুফী নাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ: ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ: ১৫০ হিজরী) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাযহাব হচ্ছে ‘হানাফী মাযহাব’। ইহাই সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব। সারাবিশ্বে ৯০ শতাংশ লোক এ মাযহাব উনার অনুসারী।

২. মাযহাবুল মালিকী বা মালিকী মাযহাব:

তাবে তাবিয়ীন হযরত ইমাম মালিক বিন আনাস মাদানী নাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ: ৯০ মতান্তরে ৯৩ হিজরী, বিছাল শরীফ: ১৭৯ হিজরী) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাযহাব হচ্ছে ‘মালিকী মাযহাব’।

৩. ‘মাযহাবুশ্ শাফিয়ী বা শাফিয়ী মাযহাব:

হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহম্মদ শাফিয়ী আসক্বালানী নাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ: ১৫০ হিজরী, বিছাল শরীফ: ২০৪ হিজরী) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাযহাব হচ্ছে ‘শাফিয়ী মাযহাব’।

৪. ‘মাযহাবুল হাম্বলী বা হাম্বলী মাযহাব:

হযরত ইমাম আহমদ ইবনে মুহম্মদ হাম্বল বাগদাদী নাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ: ১৬৪ হিজরী, বিছাল শরীফ: ২৪১ হিজরী) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাযহাব হচ্ছে ‘হাম্বলী বা হানাবালা মাযহাব’।

স্মরণীয় যে, এই চার মাযহাবই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত। প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর জন্য এই সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোন একটি মাযহাবের অনুসরণ করা ফরযে আইন। মাযহাব প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার করা হারাম ও কুফরী। লা মাযহাবীরাই মূলতঃ বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভূক্ত। যে, যে-মাযহাবের অনুসারী তাকে আজীবন সেই মাযহাবেরই আনুগত্য করে যেতে হবে। মাযহাব পবিরর্তন করা হারাম ও নাজায়িয। ইহাই ছহীহ্ ফায়সালা।