পবিত্র যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থঃ زكوة ‘যাকাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি, বরকত, পবিত্রতা ইত্যাদি। যেহেতু পবিত্র যাকাত প্রদানে যাকাতদাতার মাল বাস্তবে কমে না; বরং বৃদ্ধি পায়, পবিত্র হয় এবং কৃপণতার কলুষ হতে নিজেও পবিত্রতা লাভ করে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সরাসরি ৩২ বার زكوة ‘যাকাত’ শব্দ মুবারক উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে ২৬ স্থানে সরাসরি পবিত্র নামায উনার সাথে সাথেই, ২ স্থানে পবিত্র অর্থে এবং ৪ স্থানে স্বতন্ত্রভাবে পবিত্র যাকাত উনার কথা উল্লেখ আছে। আবার পবিত্র যাকাত উনাকে ৯ বার صدقات ‘ছদাকাত’ এবং ৪৩ বার انفاق ‘ইনফাক্ব’ শব্দ মুবারক দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে انفاق ‘ইনফাক্ব’ শব্দটি ব্যাপক, صدقة ‘ছদক্বাহ’ শব্দটি সাধারণ ও زكوة ‘যাকাত’ শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে কখনো কখনো এর কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও এ তিনটি শব্দ মুবারক একে অন্যের স্থলে ব্যবহার হয়ে থাকে। সে হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ৮২ বার যাকাত শব্দ মুবারক উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ১৫০ বারেরও অধিক খরচের বিষয়ে বলা হয়েছে।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যেখানে কোন বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র একবার আদেশ মুবারক করলেই তা সমস্ত কায়িনাতের জন্য পালন করা ফরযে আইনের উপর ফরয হয়ে যায়। সেখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি ৩২ বার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র যাকাত উনার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। তাহলে পবিত্র যাকাত উনার গুরুত্ব কতখানি তা ফিকির করতে হবে।
সম্মানিত যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ : زكوة ‘যাকাত’ শব্দের একটি আভিধানিক অর্থ হ”েছ বরকত বা বৃদ্ধি। যেহেতু সম্মানিত যাকাত আদায়ের ফলে যাকাতদাতার মাল বাস্তবে কমে না; বরং বৃদ্ধি পায়, বরকত হয়। আর ‘যাকাত’ শব্দের অন্য আরেকটি আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। যেহেতু সম্মানিত যাকাত আদায়ের ফলে সম্পদ হারাম হওয়া থেকে পবিত্র হয় এবং জিসমানী ও রূহানী মুহলিকাত বা কলুষতা হতে পবিত্রতা লাভ হয়।
সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (الـحوائج الاصلية) বা মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত যদি কোন মাল বা অর্থ-সম্পদ নিছাব পরিমাণ তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য অথবা এ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ কারো অধীনে পূর্ণ এক বছর থাকে তাহলে তা থেকে ৪০ ভাগের ১ ভাগ মাল বা অর্থ-সম্পদ সম্মানিত যাকাত বা ছদকা গ্রহণের উপযোগী কোন গরীব, ফকীর-মিসকীন মুসলমানকে তথা পবিত্র শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত খাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সš‘ষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বিনা স্বার্থে ও বিনা শর্তে প্রদান করাকে সম্মানিত যাকাত বলে।
الزكوة واجبة علي الـحر الـمسلم البالغ العاقل اذا ملك نصابا كاملا ملكا تاما وحال عليه الـحول
অর্থ: বয়স্ক সু¯’ মস্তিস্ক স্বাধীন মুসলমান যখন নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হন এবং উক্ত সম্পদ উনার অধিকারে পূর্ণ এব বছর থাকে তখন উনার উপর যাকাত ফরয হয়। (মুখতাসারুল কুদূরী, কিতাবুয যাকাত, পৃষ্ঠা ১১৫, প্রকাশনী মুওয়াসসাতুর রাইয়্যান)
আবার, প্রাপ্ত বয়স্ক, সু¯’ মস্তিস্কসম্পন্ন নিছাব পরিমাণ বর্ধনশীল সম্পদের অধিকারী প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তির পক্ষ থেকে উক্ত নিছাবের উপর পূর্ণ এক চন্দ্র বছর অতিবাহিত হলে, সম্মানিত শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মালিক বানিয়ে দেয়াকে সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় সম্মানিত যাকাত বলে। (আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৬-২৫৭)