সুওয়াল: আলাইহিস সালাম বাক্যটির অর্থ কি? অনেকের ধারণা যে, ‘আলাইহিস সালাম এ দুআ সম্বলিত বাক্যটি শুধুমাত্র হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য নির্দিষ্ট। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যতীত অন্য কারো ক্ষেত্রে ব্যবহার করাটা নাকি শরীয়ত সম্মতন নয়। এ বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: ‘আলাইহিস সালাম’ বাক্যটির অর্থ হলো উনার উপর সালাম অর্থাৎ খাছ শান্তি বর্ষিত হোক।
উল্লেখ্য, এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাত হলে সালাম দেয়া ও নেয়া পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই নির্দেশ।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবাক হয়েছে-
اذا حييتم بتحية فحيوا باحسن منها او ردوها ان الله كان على كلى شىء حسيبا
অর্থ: যখন তোমাদেরকে কেউ সালাম দেয় তখন তোমরাও তদপেক্ষা উত্তম বাক্যে সালামের জবাব প্রদান করো অথবা তদানুরূপই জবাব প্রদান করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: আয়াত শরীফ ৮৬)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه ان رجلا سال رسول الله صلى الله عليه وسلم اى الاسلام خير قال تطعم الطعام وتقرئ السلام على من عرفت ومن لـم تعرف.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, সম্মানিত ইসলাম উনার কোন বিষয়টি উত্তম? তিনি বললেন, (ক্ষুধার্তকে) খাদ্য খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকল মুসলমানকে সালাম দেয়া। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারককৃত
وتقرئ السلام
বাক্যাংশের ব্যাখায় মিশকাত শরীফ মুল কিতাবের কিতাবুল আদব, সালাম অধ্যায়ে ৩৯৭ নং পৃষ্ঠার হাশিয়ায় বর্ণিত রয়েছে-
واقرى عليه السلام فانه حين يبلغه سلامه يحمله على ان يقرى السلام ويرده.
অর্থাৎ, আমি বলবো, তার প্রতিও সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক। (এরূপ জাওয়াব) যখন কেউ তার কাছে কারো সালাম নিয়ে এসে বলবে যে, তিনি সালাম দিয়েছেন এবং সালাম গ্রহীতাও তার সালামের জাওয়াব দিবেন। এরূপ বর্ণনা ‘মাজমাউল বিহার’ কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এক মুসলমানের উপর আরেক মুসলমানের সদ্ব্যবহারের ছয়টি হক্ব রয়েছে। তারমধ্যে প্রথমটিই হচ্ছে
يسلم عليه اذا لقيه
অর্থাৎ “যখন কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে তাকে সালাম দিবে।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মূল কথা হলো, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাথে সালাম বিনিময়ের যে উদ্দেশ্য; কোন মুসলমানের নামের সাথে আলাইহিস সালাম ব্যবহারের সে একই উদ্দেশ্য।
আর একজনের সালাম আরেকজনের নিকট পৌঁছানোর মাসয়ালা হলো যে, সে বলবে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। এর উত্তরে সালামের উত্তরদাতা বলবেন-
وعليكم السلام وعليه السلام
অর্থাৎ: “আপনার প্রতি এবং যিনি সালাম পাঠিয়েছেন উনার প্রতিও সালাম অর্থাৎ শান্তি বর্ষিত হোক।”
দেখা যাচ্ছে, সালাম প্রেরণকারী ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দানকালে উনার ক্ষেত্রে
‘আলাইহিস সালাম’ ব্যবহৃত হচ্ছে। عليه السلام
কাজেই, বলার অবকাশ রাখে না যে, ‘আলাইহিস সালাম’ বাক্যটি হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যতীত অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধানে নিষেধ তো নেই বরং আদেশ রয়েছে।
স্মরণীয় যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার অনেক বিষয়ে দু’ ধরণের ফতওয়া বা মাসয়ালা বর্ণনা করা হয়। এক. আম বা সাধারণ মাসয়ালা। দুই. খাছ বা বিশেষ মাসয়ালা।
প্রথমত: সাধারণ মাসয়ালা হলো, কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উনার সাথে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। এবং এটা উম্মতের জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ করেছেন-
يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ: হে ঈমানদাররা! তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠ করো এবং সালামের মতো সালাম পেশ করো অর্থাৎ আদব রক্ষা করে তথা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করো। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
দ্বিতীয়ত: অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক উনার সাথে ‘আলাইহিস সালাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। এটাও ফরযের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ উনার অনেক আয়াত শরীফ-এ উনাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হওয়ার বিষয়টি ইরশাদ মুবারক হয়েছে।
যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
سلم على نوح فى العالـمين.
অর্থ: বিশ্ববাসীর মধ্যে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: আয়াত শরীফ ৭৯)
سلم على ابراهيم.
অর্থ: হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: আয়াত শরীফ ১০৯)
سلم على موسى وهرون.
অর্থ: হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: আয়াত শরীফ ১২০)
سلم على ال ياسين.
অর্থ: হযরত ইল্ইয়াসীন আলাইহিস সালাম উনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: আয়াত ১৩০)
سلم على الـمرسلين.
হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮১)
একইভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
سلم عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا.
অর্থ: উনার প্রতি সালাম (শান্তি বা অবিভাদন) যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহন করেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ গ্রহন করেন এবং যেদিন তিনি ক্বিয়ামত দিবসে পুনরুত্থিত হবেন। (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: আয়াত শরীফ ১৫)
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ আযওয়াজ-আহলিয়া অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা উনার পবিত্র যাত মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে উনারা উনার সম্মানে সম্মানিত। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উনাদের নামের সাথেও আলাইহিস সালাম ও আলাইহাস সালাম সংযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।
অনুরূপ হুকুম অন্যান্য হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত পিতা মাতা আলাইহিমুস সালাম, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম ও আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও।
এ বিষয়ে যেমন রয়েছে নক্বলী তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল তদ্রƒপ রয়েছে আক্বলী তথা জ্ঞানভিত্তিক দলীল।
যেমন সূরা নমল-এর ৫৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قل الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى
অর্থ: (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, সমস্ত প্রশংসাই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে এবং সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক উনার মনোনীত বান্দাগণ উনাদের প্রতি।”
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে, পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের ধ্বংসযজ্ঞ কিছু অবস্থা বর্ণনা করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ, আপনার উম্মতকে দুনিয়ার ব্যাপক আযাব থেকে নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার যারা মনোনীত বান্দা উনাদের প্রতি সালাম বা শান্তির সুসংবাদ দান করুন।
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে আছে, আয়াত শরীফ-এ
عباده الذين اصطفى
‘মনোনীত বান্দা’ বলতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে। হযরত ইমাম ছুফিয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এ মতই গ্রহন করেছেন। মূলত
عباده الذين اصطفى
এ আয়াতে কারীমা দ্বারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাসহ সমস্ত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কুরতুবী, ইবনে কাছীর, তাফসীরে কবীর ইত্যাদি)
অনুরূপ ব্যাখ্যা ‘মাআরেফুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর পবিত্র কোরআনুল কারীম’ যা সউদী শাসক বাদশা ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজীজের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাপানো হয়েছে, উক্ত কিতাবের ৯৯৯নং পৃষ্ঠার মধ্যেও উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রেও ‘আলাইহিস সালাম’ বলা জায়িয রয়েছে।
উল্লেখ্য, মি’রাজ শরীফকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার সমীপে সমস্ত পবিত্রতা, ছলাত-সালাম নিবেদন করে বললেন-
التحيات لله والصلوات والطيبات
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনিও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته.
আপনার উপর সালাম (শান্তি) এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত রহমত ও বরকত।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের প্রতি এত মেহেরবান ও দয়ালু যে, উনার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে প্রদত্ব সালাম, রহমত ও বরকতের হিসসা উম্মতও যাতে লাভ করেন সেজন্য তিনি পূনরায় বললেন-
السلام علينا وعلى عباد الله الصالـحين
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ব সালাম, রহমত, বরকত আমাদের উপর অর্থাৎ সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার যারা ছালিহীন বা নেককার বান্দা উনাদেরও উপর।
প্রতিভাত হলো যে, আমরা নামাযে যে তাশাহহুদ পাঠ করে থাকি যা প্রত্যেক নামাযে পাঠ করা ওয়াজিব; সেখানে যারা নেককার, আল্লাহওয়ালা বান্দা উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক’ এ দুয়া প্রতিনিয়ত করছি।
তাশাহহুদ পাঠের এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে السلام (সালাম) শব্দের ব্যবহার জায়িয।
এছাড়া অনেক দুরূদ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার আল-আওলাদ অর্থাৎ পবিত্র বংশধর উনাদের শানে ছলাত-এর সাথে সালাম উনার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। যেমন-
اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا وسيلتى اليك واله وسلم.
উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিয়্যীনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা ওয়াসীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি আপনার প্রতি আমার ওসীলা এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।
اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا معدن الجود والكرم واله وسلم.
উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিয়্যিনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা মা’দানিল জূদি ওয়াল কারামি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি দান ও বখশীশের খনি এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।
اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا النبى الامى واله وسلم.
উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিয়্যীনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা আন্নাবিয়্যীল উম্মিয়্যি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম ।
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক যিনি প্রধান ও মূল নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।
স্মরণীয় যে, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৭ম খ- ২২৮ পৃষ্ঠায় পবিত্র সূরা নমল শরীফ উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে-
والارجح فى مثل لقمان ومريم والـخضر والاسكندر الـمختلف فى نبوته ان يقال رضى الله عنه او عنها ولو قال عليه السلام او عليها السلام لا بأس به.
অর্থ: অতএব প্রণিধানযোগ্য উদাহরণ হলো: হযরত লুক্বমান, হযরত মারইয়াম, হযরত খিযির, হযরত সেকেন্দার যুল ক্বরনাইন। উনাদের নবী হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকার করণে উনাদের শানে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা আনহা বলা হয়। আর কেউ যদি উনাদের শানে আলাইহিস সালাম অথবা আলাইহাস সালাম বলে, এতে কোনই অসুবিধা নেই।
মূল কথা হলো: উল্লেখিত ব্যক্তিগণ উনারা কেউই নবী-রসূল ছিলেন না। বরং উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন বিশেষ শ্রেণীর ওলীআল্লাহ।
এখন উনাদের শানে যদি আলাইহিস সালাম কিংবা আলাইহাস সালাম ব্যবহারে কোন রকম অসুবিধা বা নিষেধ না থাকে তাহলে অন্যান্য বিশেষ শ্রেণীর পুরুষ ওলীআল্লাহ হোন কিংবা মহিলা ওলীআল্লাহ হোন উনাদের শানে অসুবিধা বা নিষেধ হবে কেন? বরং ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার করাটাই আদব এবং ফযীলত হাছিলের কারণ। যার কারণে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, যামানার শ্রেষ্ঠতম মুজতাহিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদ আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন ছাহাবা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রত্যেকের শান মুবারক-এ আলাইহিস সালাম ও আলাইহাস সালাম ব্যবহার করার অনন্য তাজদীদ মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আর আক্বলী দলীল প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাদিম হলেন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনিসহ সমস্ত হযরত ফেরেশতা উনাদেরকেও আলাইহিমুস সালাম বলা হয়।
উনাদের যারা খাদিম হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নামে যদি আলাইহিস সালাম যুক্ত হতে পারে তাহলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের নাম মুবারকে আলাইহিস সালাম যুক্ত হবে না কেন? মূলত: কারো নাম মুবারকে আলাইহিস সালাম যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক হক্বদার উনারাই। আর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের ঐকমত্য হলো, কোন হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা-মাতা কেউই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। উনারা প্রত্যেকেই ঈমানদার ছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত, মক্ববুল বান্দা-বান্দী এবং যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এরপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা পুত-পবিত্রা আহলিয়া-আযওয়াজ আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানে সম্মানিত। উনারা হলেন উম্মতের মা। উম্মতের রূহানী ও ঈমানী পিতা হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ যদি আলাইহিস সালাম ব্যবহার অপরিহার্য হয় তাহলে যারা উম্মতের রূহানী ও ঈমানী মা উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহাস সালাম-এর ব্যবহার অপরিহার্য হবে না কেন?
অতঃপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আল-আওলাদ বা সন্তান-সন্ততি উনারা তো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র যাত মুবারক উনার অংশ, পবিত্র দেহ মুবারক উনার অংশ। কাজেই, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানের মতোই উনাদের আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মান করা ফরয-ওয়াজিব।
অতএব বলার অপেক্ষা রাখে না, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহিস সালাম ব্যবহার করাটাই হচ্ছে উনাদের হক্ব।
তৃতীয়ত: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ-এ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
رضى الله عنهم ورضوا عنه
অর্থাৎ- আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ)
চতুর্থত: হযরত তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম যাঁরা অতীত হয়ে গেছেন উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ যুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان رحمة الله قريب من الـمحسنين
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনীন বা আল্লাহওয়ালা উনাদের নিকটে।
উপরে বর্ণিত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, আম বা সাধারণ মাসয়ালা বা ফতওয়া হলো, কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। আর উনার সম্মানিত পিতা-মাতা এবং উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ- হযরত উম্মুল মু’মিনীন ও আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহিস সালাম কিংবা আলাইহাস সালাম যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।
অনুরূপভাবে অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং উনাদের পিতা-মাতা ও আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে ‘আলাইহিস সালাম’ কিংবা ‘আলাইহাস সালাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ ও রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।
আর হযরত তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম যাঁরা অতীত হয়েছেন উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ বলতে হবে বা লিখতে হবে। এটা হলো আম বা সাধারণ মাসয়ালা বা ফতওয়া।
আর খাছ বা বিশেষ ফতওয়া মতে, ব্যক্তি বিশেষে আলাইহিস সালাম বা আলাইহাস সালাম, রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, রহমতুল্লাহি আলাইহি বা রহমতুল্লাহি আলাইহা ইত্যাদির মধ্যে ব্যতিক্রম বলা বা লিখা জায়িয রয়েছে। তবে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এ বাক্যটি অন্যদের জন্য ব্যবহার জায়িয থাকলেও তা শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ বলা বা লেখার ক্ষেত্রে খাছ করে নেয়া উচিত এবং এটা আদবেরও অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া অন্যান্য বাক্যগুলি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। ফলে, উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে হযরত লুক্বমান আলাইহিস সালাম, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাদের নাম মুবারক উচ্চারণকালে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একইভাবে হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম, হযরত রহিমা আলাইহাস সালাম, হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম, হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম, হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহাস সালাম ব্যবহার করা হয়।
আবার উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, পুরুষের জন্য একজনের ক্ষেত্রে আলাইহিস সালাম, দুইজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমাস সালাম, তিন বা ততোধিক হলে আলাইহিমুস সালাম ব্যবহার করার নিয়ম। আর মহিলার জন্য একজনের ক্ষেত্রে আলাইহাস সালাম, দুইজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমাস সালাম এবং তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে আলাইহিন্নাস সালাম ব্যবহার করার নিয়ম।
অনুরূপভাবে ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ ব্যবহারের নিয়ম হলো- একজন পুরুষের ক্ষেত্রে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা-এর পর ‘আনহু’ দুইজনের ক্ষেত্রে ‘আনহুমা’ এবং তিন বা ততোধিকের জন্য ‘আনহুম’। আর একজন মহিলার ক্ষেত্রে ‘আনহা’, দুইজনের ক্ষেত্রে ‘আনহুমা’ এবং তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে ‘আনহুন্না’ ব্যবহার করা।
একইভাবে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ ব্যবহারের নিয়ম হলো: একজন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রহমতুল্লাহি’ শব্দের পর ‘আলাইহি’ দু’জনের ক্ষেত্রে ‘আলাইহিমা’, তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে ‘আলাইহিম’। আর মহিলার ক্ষেত্রে একজন হলে ‘আলাইহা’, দু’জন হলে ‘আলাইহিমা’ এবং তিন বা অধিকজন হলে ‘আলাইহিন্না’।
অতএব, যাদের ধারণা বা বক্তব্য ‘আলাইহিস সালাম’ দুআ সম্বলিত বাক্যটি শুধুমাত্র হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য নির্দিষ্ট আর অন্য কারো ক্ষেত্রে জায়িয বা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয় , তাদের সে ধারণা বা বক্তব্য আদৌ শুদ্ধ নয় বরং সম্পূর্ণরূপে দলীলবিহীন, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর।
আসলে ক্বিল্লতে ইলম ও ক্বিল্লতে ফাহাম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝই হচ্ছে সমস্ত ফিতনার মূল। ফার্সীতে একটি প্রবাদ আছে, “নীম হেকীম খতরে জান, নীম মোল্লা খতরে ঈমান।” অর্থাৎ আধা কবিরাজ বা ডাক্তার মানুষের জীবন নাশ করে আর আধা মোল্লা অর্থাৎ মালানা-মুফতী মানুষের ঈমান নষ্ট করে।
যার কারণে নামধারী মালানা, মুফতী, ইমাম, খতীব, ওয়ায়িজ, মুফাসসিরে কুরআন, শায়খুল হাদীছ ইত্যাদি খেতাবধারী হলেই তাকে অনুসরণ করা যাবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত খিতাবধারী ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ অনুসারী না হবে অর্থাৎ তাদের আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী না হবে, পবিত্র সুন্নত উনার পাবন্দ না হবে, সর্বপ্রকার হারাম কাজ যেমন ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা, টিভি দেখা, টিভিতে প্রোগ্রাম করা, খেলাধুলা করা, খেলাধুলা দেখা, গান-বাজনা শোনা, ভোট দেয়া, নির্বাচন করা, গণতন্ত্র করা, নারী নেতৃত্ব সমর্থন করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা ইত্যাদি থেকে বেঁচে না থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে না। কেননা উল্লেখিত খিতাব ধারণ করে যারা সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী তথা হারাম নাজায়িয কাজ করে এবং কাফির-মুশরিকদের প্রবর্তিত হরতাল, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ, ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি করে তারা উলামায়ে হক্ব উনাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তারা হচ্ছে উলামায়ে ‘সূ’ অর্থাৎ নিকৃষ্ট আলিমদের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় দাজ্জালে কাযযাব অর্থাৎ চরম মিথ্যাবাদী, মুনাফিক এবং জাহান্নামী বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় তাদেরকে জাহান্নামের সবচেয়ে কঠিন শাস্তিযোগ্য স্থান জুব্বল হুযনের অধিবাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ উনাদের সঠিক ফায়ছালা, মাসয়ালা বা ফতওয়া জানার জন্য কেবলমাত্র উলামায়ে হক্ব উনাদের নিকট থেকে জানতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। কারণ যাঁরা উলামায়ে হক্ব উনারা মনগড়াভাবে আমল করেন না এবং মাসয়ালা বা ফতওয়া প্রদান করেন না। বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার উছূল পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস অনুযায়ী নিজেরা আমল করেন এবং অন্যদেরকে আমল করতে বলেন।
কাজেই, যারা উলামায়ে হক্ব উনারাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় ওলী, আউলিয়া, আহলে যিকির, ছদিক্বীন, ছলিহীন, মুহসিনীন ইত্যাদি নামে পরিচিত। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় ‘ওরাছাতুল আম্বিয়া’ ফক্বীহ, ওলী, আউলিয়া ইত্যাদি নামে পরিচিত।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم
অর্থ: নিশ্চয়ই এই (পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের) ইলমই হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন। অতএব তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন বা ইলম গ্রহণ করছো তাকে লক্ষ্য করো অর্থাৎ যাচাই বাছাই করো যে, তার আক্বীদা শুদ্ধ আছে কিনা, আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ আছে কিনা। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক না করুন, কেউ যদি বাতিল আক্বীদাপন্থী কোন ব্যক্তির অনুসারী হয়, তাহলে তার আক্বীদা ও আমল নষ্ট হয়ে সে জাহান্নামী হয়ে যাবে। অতএব, সাবধান থাকতে হবে বাতিল আক্বীদাপন্থী ৭২টি ফিরক্বার উলামায়ে ‘সূ’দের থেকে। এরা বাইরের দেশ থেকে আগন্তুক কেউ তা নয় বরং এরা আপনারই মহল্লার, মসজিদেরই ইমাম, খতীব, আপনারই ভাই, ভাতিজা, চাচা, বন্ধু, প্রতিবেশির মধ্যেই পরিচিত কেউ না কেউ।
প্রশ্ন আসতে পারে, এরা বাতিল আক্বীদাপন্থী হলো কিভাবে? এর জাওয়াবে বলতে হয়, বাতিল আক্বীদাপন্থী কোন আলিম নামধারী ব্যক্তির কাছ থেকে তা’লীম বা শিক্ষা পেয়ে বাতিল আক্বীদার অনুসারী হয়ে তারাও সেটা প্রচার করছে। নাউযুবিল্লাহ!
যেমন তারা বলছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের মতো দোষে-গুণে মানুষ, নাউযুবিল্লাহ! মানুষ হিসেবে উনারও গুনাহখতা ছিল, যার কারণে তিনিও তওবা করেছেন, ইস্তিগফার করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! তিনি মাটির তৈরি মানুষ, তিনি নূরে তৈরি নন। নাউযুবিল্লাহ! ইত্যাদি। তারা আরো বলছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি নন নাউযুবিল্লাহ। তারা আরো বলছে, বর্তমান যুগে ছবি, টিভি জায়িয নাউযুবিল্লাহ! বর্তমানে অত পর্দা লাগে না নাউযুবিল্লাহ! খেলাধুলা জায়িয নাউযুবিল্লাহ! এত সুন্নত লাগেনা নাউযুবিল্লাহ! দাড়ি না রাখলেও অসুবিধা নেই নাউযুবিল্লাহ! শুধু পবিত্র কুরআন শরীফ পড়লে ও আমল করলেই যথেষ্ট, পবিত্র হাদীছ শরীফ আমল না করলেও চলে। নাউযুবিল্লাহ! ওলীআল্লাহ উনাদের নিকট বাইয়াত হওয়ার প্রয়োজন নেই নাউযুবিল্লাহ! এ শ্রেণীর লোকদেরই বক্তব্য হচ্ছে, আলাইহিস সালাম শুধুমাত্র হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ব্যতীত আর কারো শানে বা নামে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করা জায়িয নেই। নাউযুবিল্লাহ!
অথচ এসব বিষয় সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ খিলাফ বা বিরোধী।
কাজেই, কোন বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা বা মাসয়ালা জানতে হলে শুধুমাত্র উলামায়ে হক্ব যারা, উনাদের নিকট জানতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون
অর্থ: যদি তোমরা না জান তাহলে যাঁরা আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালা উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করো।
আর যারা আহলে যিকির হবেন উনারা অবশ্যই দলীল সহকারে জিজ্ঞাসিত বিষয় জানিয়ে দিবেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক হলো-
هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين
অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে তোমরা দলীল পেশ করো।
অর্থাৎ উলামায়ে হক্ব যারা হবেন উনাদের প্রতিটি বিষয় দলীল সাপেক্ষে হবে। আক্বীদা হোক, আমল হোক, বক্তব্য হোক, লিখনী হোক, উনারা মনগড়াভাবে নিজেরা যেমন আমল করবেন না, অন্যকেও আমল করতে বলবেন না।
অতএব, যে কোন বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা জানতে হলে উলামায়ে হক্ব উনাদের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া উচিত।