সম্মানিত পবিত্র শরীয়ত মতে যাদের উপর পবিত্র যাকাত আদায় করা ফরয

সম্মানিত পবিত্র শরীয়ত মতে যাদের উপর পবিত্র যাকাত আদায় করা ফরয।

==> (১) পবিত্র যাকাতদাতাকে মুসলমান হতে হবে।
(২) বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক।
(৩) আক্বেল বা বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন।
(৪) আযাদ বা স্বাধীন।
(৫) নিছাব অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য বা টাকা অর্থাৎ নিছাব পূর্ণ হওয়া।
(৬) যদি এককভাবে কোন পণ্য বা দ্রব্যের মূল্য নিছাব পরিমাণ না হয় কিন্তু ব্যক্তির সবগুলো সম্পদের মূল্য মিলিয়ে একত্রে সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য মূল্যের সমান হয় তবে ওই ব্যক্তির নিছাব পূর্ণ হবে। অর্থাৎ নিছাবের একক মালিক হওয়া।
(৭) সাংসারিক প্রয়োজনে গৃহীত ঋণ কর্তনের পর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে পবিত্র যাকাত দিতে হবে।
(৮) হাওয়ায়েযে আছলিয়ার অতিরিক্ত।
(৯) বর্ধনশীল মাল যেমন- স্বর্ণ, চান্দি, নগদ টাকা, মালে তিজারত বা ব্যবসায়িক মাল এবং সায়েমা বা চারণ ভূমিতে বিচরণকারী পশু।
(১০) বর্ষ পূর্ণ হতে হবে অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ সম্পদ তার অধীনে পূর্ণ ১ বছর থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنِ اسْتَفَادَ مَالًا فَلَا زَكٰوةَ عَلَيْهِ حَتَّى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ عِنْدَ رَبّهِ.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোন মাল লাভ করেছে, তা এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ওই মালের পবিত্র যাকাত নেই।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুয যাকাত ‘আন্না রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : বাবু মাজায়া লা যাকাতা ‘আলাল মালিল মুসতাফাদ্বি হাত্তা ইয়াহূলা ‘আলাইহিল হাওলু : হাদীছ শরীফ নং ৬৩১ ও ৬৩২)

আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ اُمُّ الْمـُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ قَالَتْ : لَيْسَ فِي مَالٍ زَكٰوةٌ حَتَّى يَـحُولَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ.

অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে পবিত্র যাকাত ফরয হবে না।” (ইবনে আবী শায়বা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৩২২)

আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضَرَتْ عَلِىّ عَلَيْهِ السَّلَامَ مرفوعا ليس فى مال زكوة حتى يـحول عليه الـحول.
অর্থ : “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে পবিত্র যাকাত ফরয হবে না।” (আবূ দাউদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ফী যাকাতিস সায়িমাহ : হাদীছ শরীফ নং ১৫৭৩; মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল শরীফ : ১ম খ- : পৃষ্ঠা ১৪৮ : বাবু মুসনাদে আলী ইবনে আবি ত্বলিব আলাইহিস সালাম : হাদীছ শরীফ নং ১২৬৪; দারে কুতনী শরীফ : ২য় খ- : পৃষ্ঠা ৪৭০ : হাদীছ শরীফ নং ১৮৯২)

আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ فِي مَالِ الْمُسْتَفِيْدِ زَكٰوةٌ حَتَّى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ

অর্থ : “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে পবিত্র যাকাত ফরয হবে না।” (দারে কুতনী শরীফ : ২য় খ- : পৃষ্ঠা ৪৬৮ : হাদীছ শরীফ নং ১৮৮৮; সুনানে কুবরা বায়হাক্বী শরীফ : ৪র্থ খ- : ১০৪ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৭১১৫)

যদিও যাকাত ফরয হওয়ার জন্য বর্ষ পূর্ণ হওয়া শর্ত অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ সম্পদ কারো অধীনে পূর্ণ ১ বছর থাকা শর্ত। কিন্তু বর্ষপূর্ণ হওয়ার পূর্বেও যাকাত প্রদান করা যায়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامَ اَنَّ حَضْرَتِ الْعَبَّاسٍ عَلَيْهِ السَّلَامَ سَاَلَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ تَعْجِيْلِ صَدَقَتِهِ قَبْلَ اَنْ تَـحِلَّ فَرَخَّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ.

অর্থ : “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, একবার হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আপন যাকাত বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই দেয়া সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে পবিত্র যাকাত প্রদানে অনুমতি দিলেন।” (আবূ দাউদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ফী তা’যীলিয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১৬২৪, তিরমিযী শরীফ : কিতাবুয যাকাত ‘আন্না রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : বাবু মাজায়া ফী তা’যীলিয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ৬৭৮; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু তা’যীলিয যাকাতি ক্ববলা মাহিল্লিহা : হাদীছ শরীফ নং ১৭৯৫)

আবার বছরের শুরুতে ও শেষে নিছাব ঠিক থাকলেও বছরের মাঝখানে যদি কমেও যায়, তবু যাকাত দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন, বছরের শুরু এবং শেষে তথা নির্ধারিত তারিখে নিছাব ঠিক থাকলে তাকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত দিতে হবে, যদিও মাঝখানে কখনো নিছাব থেকে কিছু অংশ কমে যায়। এরপরও তাকে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। (কুদূরী, আল হিদায়া)