মানুষ ইন্তেকালের পর সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ ফিতা, বরকতময় কাগজের টুকড়া বা ওছিয়তপূর্ণ কিছু কপালে বেধে দেয়া বা দাফনের সাথে দেয়া মূলত সুন্নাতে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং নাযাত লাভের সার্টিফিকেট


মানুষ ইন্তেকালের পর সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ ফিতা, বরকতময় কাগজের টুকড়া বা ওছিয়তপূর্ণ কিছু কপালে বেধে দেয়া বা দাফনের সাথে দেয়া মূলত সুন্নাতে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং নাযাত লাভের সার্টিফিকেট
দুনিয়াতে কত রকম সার্টিফিকেটই তো আছে। ডাক্তারী সার্টিফিকেট, ইঞ্জিনিয়ারীং সার্টিফিকেট, চারিত্রিক সার্টিফিকেট, স্কলারশিপ তথা খুদ-কুড়া শিপের সার্টিফিকেট- এমনকি ডেড সার্টিফিকেটও। এই রকম হাজারো সার্টফিকেটের জন্য মানুষ যারপর নাই ব্যাতিব্যস্ত। একটা ৬০ বছরের যিন্দেগীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই কেটে যায় এরুপ একটা দুনিয়াবী সার্টিফিকেটের পিছনে দৌড়াতে। এই সার্টিফিকেট কে কেন্দ্র করে অনিয়ম, দূর্নীতি, হত্যা, লুন্ঠণসহ অনেক পাপাচার সংঘটিত হয়। এতকিছুর পরও কখনো এই সার্টিফিকেট অকেজোও হয়ে যায় অর্থাৎ তাতে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা সম্ভব হয় না। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে এটাই কি আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত ছিল যে আমরা দুনিয়ার এসব সার্টিফিকেটের পেছনে দৌড়াবো? কখনোই না। আমাদের যেহেতু ইন্তেকাল করতে হবেই সেক্ষেত্রে নাযাতের সার্টিফিকেট বেশ জরুরী।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
كل نفس ذائقة الموت ثم إلينا ترجعون
অর্থ: প্রত্যেক নফছকে ইন্তেকালের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।(পবিত্র ও সম্মানিত সুরা আনকাবুত শরীফ; পবিত্র ও সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
منها خلقناكم وفيها نعيدكم ومنها نخرجكم تارة أخرى
অর্থ: তোমদেরকে এই মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে, আর এই মাটির মধ্যেই তোমদের দাফন করা হবে, আর এই মাটি থেকেই তোমদের উত্তোলন করা হবে।(পবিত্র ও সম্মানিত সুরা ত্বহা শরীফ; পবিত্র ও সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৫)
প্রসঙ্গত ফিকিরের বিষয় এই যে, আমাদের প্রত্যেকেই ইন্তেকাল করতে হবে। কিন্তু ইন্তেকালের পর আমাদের সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যাবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক হরেছেন, মানুষ ইন্তেকাল করলে তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যাতিত, এক ছদাকাতুল জারিয়াহ, দুই এমন ইলিম যা মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয় এবং তার দ্বারা উপকার হয় তিন নেক আওলাদ যে তার জন্য দুয়া করে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
তাহলে নাযাতের জন্য দলীল হিসেবে আমরা কি কিছু নিয়ে যাচ্ছি? নাযাতের জন্য আমরা কি চিন্তা বা ফিকির করছি? হ্যাঁ তবে নাযাতের জন্য অনেক মুহিব্বীন আশিক্বীন বিভিন্ন ওছীয়ত করে যান যে আমার ইন্তেকালের পর আমার কাফনের ভেতর অমুক জিনিস বা অমুক দ্রব্য দিয়ে দিবেন অথবা অনেকে জুব্বা কোর্তা তথা দেয়ার জন্য বলে থাকেন। আবার অনেকেই সম্মানিত সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ লোগো সম্বলিত ব্যাস বা ফিতা উনার কপালে দেয়ার ওছীয়াত করে যান বা অনেকে ওছীয়াত অনুযায়ী দিয়ে থাকেন। তবে সেই দলীলগুলো বা সেরকম কিছু কাফনের কাপরের মধ্যে, কপালে বা কবরের মাঝে দেয়া সম্মানিত শরীয়তসম্মত কিনা বা দিলে তা কি ফায়দা দিবে তা জানা অত্যান্ত জরুরী বিষয়।
পবিত্র ও সম্মানতি হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
حديث بسم الله وعلى ملة رسول الله عن ابن عمر : أن النبي صلى الله عليه و سلم كان إذا أدخل الميت القبر ( وقال أبو خالد مرة إذا وضع الميت في لحده ) قال مرة بسم الله وبالله وعلى ملة رسول الله وقال مرة بسم الله وبالله وعلى سنة رسول الله صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যখন কোন মায়্যিতকে কবরে রাখা হয় বা কবরের নিকট নিয়ে যাওয়া হয় তখন বলা উচিত, মহান আল্লাহ পাক উনার নামে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিল্লাতে দেয়া হলো (তিরমিযী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফ)
আবারো জানা দরকার, দুনিয়াতে কত রকম সার্টিফিকেটই আছে। পরীক্ষার সার্টিফিকেট, ডাক্তারী সার্টিফিকেট, ইঞ্জিনিয়ারীং সার্টিফিকেট, চারিত্রিক সার্টিফিকেট, স্কলারশিপ তথা খুদ-কুড়া শিপের সার্টিফিকেট- এমনকি ডেড সার্টিফিকেটও। এই রকম হাজারো সার্টফিকেটের জন্য মানুষ যারপর নাই ব্যাতিব্যস্ত। একটা ৬০ বছরের যিন্দেগীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই কেটে যায় এরুপ একটা দুনিয়াবী সার্টিফিকেটের পিছনে দৌড়াতে। এই সার্টিফিকেট কে কেন্দ্র করে অনিয়ম, দূর্নীতি, হত্যা, লুন্ঠণ অনেক কিছুই সংঘটিত হয়। এতকিছুর পরও কখনো এই সার্টিফিকেট অকেজোও হয়ে যায় অর্থাৎ তাতে সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা সম্ভব হয় না। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে এটাই কি আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত ছিল যে আমরা দুনিয়ার এসব সার্টিফিকেটের পেছনে দৌড়াবো? কখনোই না। বরং আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত ছিল উম্মাহর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের জীবনচরিত। এটা কোনো মানুষের কথা নয়। এটা স্বয়ং খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সুমহান আদেশ মুবারক। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের ন্যায় ঈমান আনয়ন কর।”
উপরোল্লিখিত কোনো সার্টফিকেটরই ধারধারে উনারা মুহতাজ ছিলেন না। তবে হ্যাঁ, উনারাও সার্টিফিকেটের জন্য মরিয়া ছিলেন। এমন সার্টিফিকেট, যা পেলেই যিন্দেগীটা নিয়ামতপূর্ণ হয়। ইহকার-পরকাল স্বার্থক হয়। সেই সার্টিফিকেট বা সনদের আকাঙ্খী, প্রত্যাশী উনারা ছিলেন। কোন সেই সনদ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সেই সার্টিফিকেট বা সনদের ব্যাপারে। আসুন জেনে নেই।
একদিন জান্নাতি যুবকদের সাইয়্যিদ, ইমামুস ছানী হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম কথা প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনাকে ‘গোলামের ছেলে গোলাম’ বলে সম্বোধন করলেন। তো হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা তিনি উনার সম্মানিত পিতা আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুক্বে আ’যম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার নিকট বিষয়টা পেশ করলেন যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে ‘গোলামে ছেলে গোলাম’ বলে সম্বোধন করেছেন। এবং সাথে সাথে তিনি উনার পিতার নিকট এর ফায়সালা কী হতে পারে তা জানতে চাইলেন। তখন আমিরুল মু’মিনীন হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, তিনি যে এ কথা বলেছেন তা লিখিত আনতে হবে। উনার পুত্র তা নিয়ে আসলেন। তারপর হযরত ফারুক্বে আযম আলাইহিস সালাম তিনি জানালেন যে, ওমুক দিন নির্দিষ্ট সময়ে সকলের সামনে এর ফায়সালা হবে। সুতরাং, নির্ধারিত সময়ে সকলেই উপস্থিত হলেন। সেখানে অত্যন্ত তা’যীম, তাকরীমের সহিত হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকেও দাওয়াত দেয়া হয়। তিনিও উপস্থিত ছিলেন। সকলের উপস্থিতিতে হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ঘটনা বর্ণনা করলেন। তারপর লিখিত সেই কাগজ খানা যেখানে লিখা ছিল- ‘গোলামের ছেলে গোলাম’ সেই কাগজখানা দেখিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, সম্মানিত উপস্থিতি! আপনার সাক্ষী থাকুন। জান্নাতের যুবকদের সাইয়্যিদ, ইমামুস ছানী হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম আমার ছেলেকে ‘গোলামের ছেলে গোলাম’ বলে সম্বোধন করেছেন। অর্থ্যাৎ এটা সেই সুমহান বাণী, সেই সুমহান সনদ- যার জন্য তথা উনাদের গোলাম হওয়ার জন্য আমি আমার সমস্ত জীবন কুরবান করে দিয়েছি। পিতা, মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বিত্ত-বৈভব, প্রতিপত্তি সব কিছু ত্যাগ করেছি। আজ আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইমাম তিনি আমাকে, আমার ছেলেক গোলাম বলে সম্বোধন করেছেন। আপনারা স্বাক্ষী থাকুন আমি আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান আহলে বাইত শরীফ তথা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস উনার গোলাম।” অতপর উনার বিছাল শরীফের পর উক্ত সুমহান সনদ খানা তিনি উনার রওযা মুবারকে উনার সাথে দিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। সুবহানাল্লাহ!

এখন ফিকিরের বিষয়, উনারা তো জান্নাতবাসী হওয়ার সনদ অনেক আগেই পান। তারপরও আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের গোলাম হওয়ার, খাদিম হওয়ার আরজু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সর্বদাই করেছেন, যার কারণে উনারা সেই সুমহান সনদ পেয়েছেন। আর সেই সনদ উনাদের রওযা মুবারকে দেয়ার জন্য ওছীয়ত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
যদি তাই হয় তাহলে আমরা কেন আমাদের কবরে উনাদের সুন্নত আদায়ের লক্ষে কোন লেখা, সার্টিফিকেট, ব্যাস বা বরকতময় ফিতা দিতে পারবো না। অবশ্যই পারবো বরং এটা দিলে উনাদের পবিত্র সুন্নাত মুবারক পালন হবে। সুবহানাল্লাহ!
আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
﴿يا أيها الذين آمنوا أطيعوا الله وأطيعوا الرسول وأولي الأمر منكم
অর্থ: হে ঈমানদারগন! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য কর, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরন কর এবং উলিল আমর উনাদের অনুসরন কর।
আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين
আমার পর আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নাত মুবারক যারা পালন করবেন ও অনুসরন অনুকরন করবেন উনারাই হিদায়েতের উপর থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
اقتدوا بالذين من بعدي من أصحابي أبي بكر وعمر
আমার পর আমার সম্মানিত ছাহবী হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাদের ইক্তিদা তথা অনুসরন করুন।
সেই হিসেবে উনাদের সুন্নত আদায়ের লক্ষে কোন লেখা, সার্টিফিকেট, ব্যাস বা বরকতময় ফিতা আমরা কবরের মধ্যে বা কারো কাপালে লাগানো অবশ্যই শরীয়তসম্মত। এমনকি উনাদের পবিত্র সুন্নত মুবারক এবং বরকত ও এককালীন নাযাতের সার্টিফিকেট। সুবহানাল্লাহ!