বিলাদত দিবস বা জন্মদিন প্রতিবছরই পালন করা সুন্নাত ও ফযিলতের কারন

বিলাদত দিবস বা জন্মদিন প্রতিবছরই পালন করা সুন্নাত

অনেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবস তথা ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রতিবছর জন্মদিন পালন বা উদযাপন করাকে দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে নাজায়িয বা হারাম বলে থাকে। তাদের যুক্তি হলো, প্রতিবছর তো আর তিনি বিলাদত মুবারক গ্রহণ করছেন না তাহলে প্রতিবছর ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উদযাপন কী করে হতে পারে? তাই বিলাদত শরীফ দিবস নাকি পালন করা যাবে না। সম্মানিত দ্বীন-ইসলাম উনার মধ্যে নাকি এর কোনোই ভিত্তি নেই। নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে ভুল, মনগড়া এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ বিলাদত বা জন্মদিন উদযাপনের দলীল পবিত্র দ্বীন-ইসলাম উনার মধ্যে স্পষ্টরূপে বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ سَيّدُ الاَيَّامِ وَاَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ وَهُوَ اَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ الاَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيْهِ خَـمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلَى الْأَرْضِ وَفِيْهِ تَوَفَّى اللهُ حَضْرْتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ اللهَ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا اِلَّا اَعْطَاهُ مَا لَـمْ يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُّقَرَّبٍ وَلَا سَـمَاءٍ وَلَا اَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَـحْرٍ اِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ‏.
অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমআ শরীফ উনার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এদিনটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।

এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৭, আল্ মু’জামুল কবীর লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫১১, বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭৩)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী পবিত্র জুময়ার দিন হচ্ছে আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিলাদত বা জন্ম মুবারকের দিন। যা বিশ্বমুসলিম পবিত্র জুমুয়ার ছলাত আদায় করার মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে।

এছাড়াও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবস তো অবশ্যই বরং অন্যান্য মুসলমান উনাদের জন্মদিন পালন করেছেন বলেও বর্ণনা রয়েছে।

হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের বিখ্যাত সঙ্কলক ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে ২ খানা বাব বা পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন যথাক্রমে –

بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত।

بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা।

بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – “শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের খানা খেয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ بِلَالِ بْنِ كَعْبٍ الْعَكِّيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ زُرْنَا حَضْرَتْ يَـحْيَى بْنَ حَسَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـي قَرْيَتِهِ اَنَا وَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ بْنُ اَدْهَمَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ قَرِيرٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ مُوسَى بْنُ يَسَارٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَجَاءَنَا بِطَعَامٍ، فَاَمْسَكَ حَضْرَتْ مُوسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ حَضْرَتْ يَـحْيَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَمَّنَا فِـي هٰذَا الْمَسْجِدِ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَنَّى حَضْرَتْ اَبَا قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً، يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، فَوُلِدَ لِاَبِـيْ غُلَامٌ، فَدَعَاهُ فِـي الْيَوْمِ الَّذِيْ يَصُوْمُ فِيْهِ فَاَفْطَرَ، فَقَامَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَكَنَسَهُ بِكِسَائِهِ، وَاَفْطَرَ حَضْرَتْ مُوْسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَضْرَتْ اَبُو عَبْدِ اللهِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَبُو قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اسْـمُهُ جَنْدَرَةُ بْنُ خَيْشَنَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ.

অর্থ : “হযরত বিলাল ইবনে কা’বিল ‘আক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি, হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল আযীয ইবনে কুদাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মূসা ইবনে ইয়াসার ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাসতিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে উনার গ্রামে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাস্তিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের জন্য খাবার আনলেন। হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রোযাদার হওয়ায় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিনানা গোত্রীয় একজন ছাহাবী, যাঁর উপনাম হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি চল্লিশ বছর যাবত এই মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি এক দিন রোযা রাখেন এবং এক দিন বিরতি দেন। আমার একজন ভাই জন্মগ্রহণ করলে আমার পিতা উনাকে দাওয়াত দেন। সেটি ছিল উনার রোযা রাখার দিন। তিনি রোযা ভাঙ্গলেন। হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে উনার চাদরখানা হাদিয়া দেন এবং হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রোযা ভাঙ্গেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছাহাবী হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক হযরত জানদারা ইবনে খায়শানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দা’ওয়াতি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৩)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে শিশুর জন্মদিনেই জন্মদিন পালনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার চুড়ান্ত সন্তুষ্টি মুবারক দুনিয়াতেই প্রাপ্ত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাদ্য গ্রহণ করেছেন।

আবার بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – “সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দাওয়াতে এসে খানাপিনা করেছেন এবং শিশুর জন্য দোয়া করেছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ لَمَّا وُلِدَ لِـي اِيَاسٌ دَعَوْتُ نَفَرًا مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَطْعَمْتُهُمْ فَدَعَوْا فَقُلْتُ‏‏ اِنَّكُمْ قَدْ دَعَوْتُـمْ فَبَارَكَ اللهُ لَكُمْ فِيْمَا دَعَوْتُـمْ وَاِنّـيْ اِنْ اَدْعُوْ بِدُعَاءٍ فَاَمّنُوْا قَالَ‏ فَدَعَوْتُ لَهُ بِدُعَاءٍ كَثِيْرٍ فِـيْ دِينِهِ وَعَقْلِهِ وَكَذَا قَالَ‏‏ فَاِنّـيْ لَاَتَعَرَّفُ فِيْهِ دُعَاءَ يَوْمِئِذٍ‏.‏

অর্থ : “হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার আওলাদ ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দাওয়াত করে খাবার পরিবেশন করেন। উনারা দোয়া মুবারক করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা দোয়া মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের দোয়া মুবারক উনার উসীলায় আপনাদের বরকত মুবারক দান করুন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন বললেন, তিনিও কতগুলো দোয়া করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেন আমীন বলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি উনার আওলাদের দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের জন্য অনেক দোয়া করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দু‘য়ায়ি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৫)

সুতরাং জন্মদিন পালন বা উদযাপন করা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার রীতি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ব্যাপারে শিক্ষা মুবারক প্রদান করেছেন বলেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাবার খেয়েছেন, এমনকি রোযা ভঙ্গ করে খাবার খেয়েছেন এবং দোয়া মুবারক করেছেন। তাই বিলাদত দিবস পালন করাকে হারাম বলা সুস্পষ্ট কুফরী। যেহেতু এই বিষয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শিক্ষা দিয়েছেন।

তাই জন্মদিন পালন করা হারাম নয়, বরং জন্মদিনের নাম করে সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ কোন কাজ করা হারাম। কিন্তু বাতিলপন্থিরা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষ্যে উনার জন্য খুশী মুবারক প্রকাশ করাকে বিদয়াত ফতোয়া দেয়। নাঊযুবিল্লাহ!

এখন আসি বিলাদত বা জন্মদিন প্রতি বছর পালন করা যাবে কি না। কারণ বাকিলপন্থিরা বলে থাকে যে, প্রতিবছর বিলাদত শরীফ পালন করতে হলে নাকি যার বিলাদত শরীফ পালন করা হচ্ছে উনাকে প্রতিবছর জন্ম গ্রহণ করতে হবে। এটি সম্পূর্ণ মনগড়া ও বানোয়াট ও কুফরীমূলক কথা। কেননা উপরোল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র জুময়া উনার দিনকে আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক বিলাদত বা জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর উনার জন্মদিন কিন্তু সমস্ত মুসলমান প্রতি সপ্তাহে পালন করে থাকে। তাহলে বিরুদ্ধবাদীরা কি বলবে পবিত্র জুময়া পালন জায়িয নেই বা হারাম? নাঊযুবিল্লাহ! নাকি উক্ত পবিত্র জুমুয়া পালন করতে হলে আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে প্রতি সপ্তাহে পবিত্র জুমুয়ার দিবসে আলাদাভাবে বিলাদত বা জন্ম মুবারক গ্রহণ করতে হবে? নাঊযুবিল্লাহ! এহেন জিহালতী বক্তব্য একমাত্র ইবলিশ শয়তান এবং তার অনুসারীদের পক্ষেই দেয়া সম্ভব।

শুধু তাই নয়, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর উনার রাতকে হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এ মুবারক রাতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ (1) وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ (2) لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে পবিত্র ক্বদর উনার রাতে নাযিল করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বদর কি? (অর্থাৎ আপনি জানেন)। লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদর উনার রাত হলো হাজার মাস হতে উত্তম।” (পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

এখন যে ক্বদরের রাতে পবিত্র ক্বুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার কারণে উক্ত ক্বদর উনার রাতকে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলা হলো, তাহলে সে ক্বদর শরীফ উনার রাতকে উদযাপন করতে হলে বাতিলপন্থিদের ভাষায় প্রতি বছর পবিত্র শবে ক্বদরের রাতে আবার পুনরায় নতুনভাবে কুরাআন শরীফ নাযিল হতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ! তা কি আদৌ সম্ভব ও যুক্তিযুক্ত এবং শরীয়তসম্মত? কখনোই নয়। মূলত প্রতিবছর বিলাদত দিবস পালন করতে করা সম্পূর্ণরূপে শরীয়তসম্মত এবং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।

 

তথ্যসুত্র: গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ