পবিত্র সুন্নতী চুল রাখার শরয়ী বিধান
نَـحْمَدُهٗ وَنُصَلِّىْ وَنُسَلِّـمُ عَلـٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ وَعَلـٰى وَالِدَىْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَضْرَتْ اُمَّهَاتِ الْـمُؤْمِنِيْنَ عَلَيْهِنَّ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اَهْلِ بَيْتِهِ الْكَرِيْمِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ وَ اَصْحَابِه رضوان اللهُ تَعَالـٰى عليهم اَمَّا بَعْدُ:
খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন আপনারা তা শক্ত করে আকড়ে ধরুন তথা পালন করুন আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকুন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ-পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
من تمسك بسنى عند فساد امتى فله اجر مأة شهيد.
অর্থ:- “যে ব্যক্তি আমার উম্মতের আখেরী যামানাতে ফিতনা-ফাসাদের যুগে কোন একটা সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরে রাখবে, তাকে একশত শহীদের ছাওয়াব প্রদান করা হবে।”
এক হাজার হিজরী শতকের পরবর্তী সময়কে আখেরী জামানা বলা হয়েছে। এ সময় সুন্নত পালনের অনেক ফযীলত ও মর্যাদা রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
من احب سنتى فقد احبنى ومن احبنى كان معى فى الجنة.
অর্থ:- “যে আমার সুন্নত মুবারককে মহব্বত করে (অর্থাৎ অনুসরণ করে) সে যেন আমাকে মহব্বত করে। আর যে আমাকে মহব্বত করে, জান্নাতে সে আমার সাথে থাকবে।” (তিরমিযী শরীফ)
সম্মানিত সন্নত মুবারকের মধ্যে একটি বিশেষ সুন্নত মুবারক হলো মাথার চুল রাখা। আর তা কিভাবে রাখতে হবে এবং সুন্নতী পদ্ধতি কি, সে বিষয়গুলোর বর্ণনা করে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করার লক্ষেই এই ‘পবিত্র সুন্নতী চুল রাখার শরয়ী বিধান’ নামক সংক্ষিপ্ত রেছালা মুবারক প্রকাশ করা হলো।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে খাছভাবে ক্ববুল করুন। আমীন!
চুল রাখার সুন্নতী তরতীব
*************************************************
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত পালন করার তাগিদ দিয়ে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন,
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থ:-“তোমাদের জন্য আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহ্যাব/২১)
উনার অন্যতম আদর্শ মুবারকগুলোর বিশেষ একখানা বিশেষায়িত বিষয় হলো চুলের সুন্নত। তাই এ বিষয়ে এখন আমরা আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ!
পুরুষদের জন্য বাবরী চুল রাখাই খাছ সুন্নত। কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদাই নূরুল ফাতহ্ বা সুন্নতী বাবরী চুল মুবারক রেখেছেন। তা তিন পদ্ধতিতে:
১. ওয়াফরা তথা কানের লতি পর্যন্ত চুল।
২. লিম্মা তথা কাধ ও কানের লতির মাঝামাঝি বরাবর বড় রাখা।
৩. জুম্মা তথা উভয় কাঁধ বরাবর পর্যন্ত আলম্বিত চুল।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা ‘আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক দুই কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। (সুনানে আবু দাউদ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قَالَتْ كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ الْوَفْرَةِ، وَدُونَالْجُمَّةِ
অর্থ: হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক কাধের উপর এবং কানের নীচ পর্যন্ত লম্বা ছিল। (আবু দাউদ শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ الْبَرَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَادَ مُحَمَّد بْنُ سُلَيْمَانَ لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ
অর্থ: হযরত বারা বিন আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা ‘আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরীধারী, লাল ইয়ামেনী চাদরের আবরণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে অধিক সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক কাধ পর্যন্ত লম্বা ছিল। (আবু দাউদ শরীফ)
এখানে স্মরনীয় যে, পুরুষের চুল ঘাড় স্পর্শ করা ও ঘাড় অতিক্রম করাটা হারাম। আর মহিলাদের চুলঘাড়ের উপরে ছোট করে রাখা হারাম।
মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়েমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। বাবরী চুল সুন্নত-এর পক্ষে আমরা অসংখ্য হাদীস শরীফ থেকে কয়েকখানা হাদীস শরীফ পেশ করলাম। যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه كان يضرب شعر النبى صلى الله عليه وسلم منكبيه.
অর্থ:- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথার বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮৭৬ পৃষ্ঠা, শামায়িলুত্ তিরমিযী, শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان تعر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى شحمة اذنيه.
অর্থ:- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা, শামায়িলুত্ তিরমিযী, শামায়িলুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
عن انس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يضرب شعره منكبيه.
অর্থ:- “হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কাঁধ মুবারক পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিলো।” (মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ ২য় খন্ড ২৯১ পৃষ্ঠা)
عن البراء رضى الله تعالى عنه قال كان النبى صلى الله عليه وسلم له شعر يبلغ شحمة اذنيه.
অর্থ:- “হযরত বারায়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।” (আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)
عن قتادة رضى الله تعالى عنه قال قلت لانس كيف كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لم يكن باجعد ولا بالسبط كان يبلغ شعره شحمة اذنيه.
অর্থ:- “হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক কেমন ছিলো? তিনি জবাবে বললেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক সম্পূর্ণরূপে কোঁকড়ানোও ছিলো না, আবার সম্পূর্ণরূপে সোজাও ছিলো না। উক্ত বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারকে পৌঁছত।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী)
عن قتادة رضى الله تعالى عنه قال سالت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه عن شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم رجلا ليس بالسبط ولا الجعد بين اذنيه وعا تقيه.
অর্থ:- “হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক না অধিক কোঁকড়ানো ছিলো এবং না অধিক সোজা ছিলো। বরং দু’অবস্থার মাঝামাঝি ছিলো। আর উক্ত বাবরী চুল মুবারক লম্বায় ছিলো, তাঁর উভয় কান ও তাঁর উভয় কাঁধ মুবারকের মাঝ বরাবর।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى نصف اذنيه.
অর্থ:- “হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কান মুবারকের মাঝামাঝি (অর্ধ) পর্যন্ত লম্বা ছিলো।”(শামায়িলুত্ তিরমিযী, মুসলিম শরীফ)
وكانت جمته تضرب شحمة اذنيه.
অর্থ:- “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারক তাঁর দু’কানের লতি মুবারক পর্যন্ত লম্বা ছিলো।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী, মুসলিম শরীফ)
يجاوز شعره شحمة اذنيه اذا هو وفره.
অর্থ:- “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক যখন তাঁর দু’কানের লতি মুবারক অতিক্রম করে যেত তখন তিনি তাঁর বাবরী চুল মুবারক ওয়াফরা পর্যন্ত লম্বা করতেন।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী ২ পৃষ্ঠা)
عن عائشة رضى الله تعاى عنها قالت كنت اغتسل انا ورسول الله صلى الله عليه وسلم من اناء واحد وكان له شعر فوق الحمة ودون الوفرة.
অর্থ:- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই পাত্রে গোছল করতাম। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক ছিলো জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের উপরে এবং ওয়াফরা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের নিচে।” (শামায়িলুত্ তিরমিযী, মিশকাত শরীফ)
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان شعر رسول الله صلى الله عليه وسلم فوق الوفرة ودون الجمة.
অর্থ:- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাবরী চুল মুবারক ছিলো ওয়াফরা বিশিষ্ট। বাবরী চুল মুবারকের উপরে এবং জুম্মা বিশিষ্ট বাবরী চুল মুবারকের নিচে।”(আবূ দাউদ শরীফ ২য় খন্ড ২২৩-২২৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মাযহুদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৭৬ পৃষ্ঠা)
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم شعرأ دون الجمة وفوق الوفرة.
অর্থ:- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক ছিলো জুম্মার নিচে এবং ওয়াফরা-এর উপরে। অর্থাৎ জুম্মা এবং ওয়াফা-এর মাঝামাঝি যাকে লিম্মা বলা হয়।” (ইবনে মাজাহ্ শরীফ ২৬৭ পৃষ্ঠা)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুন্ডাতেন। এছাড়া তিনি কখনো মাথা মুন্ডন করেননি। এ সময় তিনি মাথা মুন্ডানোকে চুল ছোট করে রাখার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। সম্মানিত হজ্জ ও পবিত্র উমরা পালনে চুল মুন্ডানো ব্যতিত অন্য সময় উপরোক্ত তিন পদ্ধতির বাবরী রাখাই খাছ সুন্নত। অন্য কোন পদ্ধতি সুন্নত বলা যাবে না।
হ্যাঁ, হযরত কাররামুল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনিসহ আরো কিছু হয়রত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা ‘আনহুম উনাদের থেকে চুল মুন্ডানো সুন্নতে ছাহাবা হিসেবে মশহুর রয়েছে। তবে সেটা উনাদের জন্যই খাছ ছিল। হযরত কাররামুল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র চুল মুবারক ছোট রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাব দিয়েছিলেন যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “গোসলের সময় একটি চুলও যদি শুকনা থাকে, তাহলে গোসল শুদ্ধ হবে না। আর আমার মাথার চুল মুবারক যেহেতু খুব ঘন, সেহেতু সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য আমি আমার চুল মুবারক ছোট রাখি।” আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরাহ ব্যতীত কখনই মাথার চুল মুবারক মুন্ডন করেননি। যেমন, “জামউল ওসায়িল ফি শারহিশ্ শামায়িল” কিতাবের ১ম খন্ডের ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان المصطفى كان لا يحلق شعره لغير نسك.
অর্থ:- “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ব্যতীত অন্য কোন সময় তাঁর মাথার চুল মুবারক মুন্ডন করেননি।” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
لحلق رأسه لاجل النسك.
অর্থাৎ- “একমাত্র হজ্বের কারণেই মাথা মুন্ডন করেছেন। ” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
لم يحلق النبى رأسه ৃ.. الا عام الحديبية تم عام عمرة القضاء ثم عام حجة الوداع.
অর্থ:- “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ার বৎসর, উমরাতুল ক্বাযার বৎসর এবং বিদায় হজ্বের বৎসর ব্যতীত অন্য কোন সময় তাঁর মাথা মুবারকের চুল মুবারক মুন্ডন করেননি।”“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খন্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
مندانا سنت نهي.
অর্থাৎ- “মাথা মুন্ডন করা সুন্নত নয়।”
মাথা মুন্ডন করা খারিজীদের আলামত বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অধিক মাত্রায় মাথা মুন্ডন করা খারিজীদের আলামত। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال يخرج ناس من قبل المشرق ويقرئون القران لايجاوز تراقيهم يمرقون من ادين كما يمرق اسهم من الرمية ثم لايعودون فيه حتى يعود السهم الى فوقه قيل ماسيماهم قال سيما هم التحليق. وفى قوله صلى الله عليه وسلم سيما هم التحليق تنصيص على هؤلاء القوم الخارجين من المشرق.
অর্থ:- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, পূর্ব এলাকা থেকে একদল লোক আত্মপ্রকাশ করবে তারা কুরআন শরীফ পড়বে কিন্তু তাদের পাঠ তাদের গলার নিচে নামবে না। তারা তাদের দ্বীনকে এমনভাবে উপেক্ষা করবে যেভাবে তীর শিকার অতিক্রম করে যায়। তীর যেমন স্বস্থানে ফিরে আসেনা তদ্রুপ তারাও দ্বীনের দিকে ফিরে আসবেনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তাদের চেনার চিহ্ন কি? তিনি বললেন, তাদের চিহ্ন হলো, তারা মাথা মুন্ডন করবে। তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, তাদের পরিচয় হলো, তারা মাথা মুন্ডন করবে। মূলতঃ তারা হচ্ছে পূর্ব এলাকার খারিজী সম্প্রদায়।” (বুখারী শরীফ)
চুল রাখার ক্ষেত্রে একটি নিষিদ্ধ পদ্ধতি হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল, মাথার এক পাশের চুল কামিয়ে ফেলা, আরেক দিকের চুলকে রেখে দেয়া। এ পদ্ধতি নিষিদ্ধ তথা হারাম। তাই এ পদ্ধতিতে চুল রাখা জায়েজ নয়।
আর মেয়েদের চুল পুরুষদের বিপরীত তথা লম্বা রাখা সুন্নত। মেয়েদের জন্য চুল মন্ডন করা বা কেটে ছেলেদের মতো করে ফেলা নিষেধ। কাধেঁর চেয়ে ছোট রাখা জায়িয নেই। আবার এতো বড় রাখা উচিত নয় যে, গোছলের সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর হয়। বরং পিঠ বা কোমর পর্যন্ত রাখা ভালো। সে মুতাবিক কোমরের নিচের অংশ কেটে ফেলা জায়িয হবে। অবশ্য না কাটলেও কোনো সমস্যা নেই। (তিরমিযী শরীফ, মুসলিম শরীফ) পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে,ওই মহিলাদের উপর লা’নত যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। (বুখারী শরীফ)
মহিলাদের চুল রাখার সুন্নতী পদ্ধতি
মেয়েদের চুল মুন্ডন করা বা কেটে ছেলেদের মতো করে ফেলা নিষেধ। আবার এতো বড় রাখা উচিত নয় যে, গোছলের সময় পানি পৌঁছানো কষ্টকর হয়। বরং পিঠ বা কোমর পর্যন্ত রাখা ভালো। সেমতে কোমরের নিচের অংশ কেটে ফেলা জায়েয হবে। অবশ্য না কাটলেও কোনো সমস্যা নেই। (তিরমিজি শরিফ ১/১৮২, মুসলিম শরিফ ১/১৪৮)
নারীর মাথার চুল কাটার বিধান
যদি এমন স্টাইলে চুল কাটা হয় যা অবিকল পুরুষদের মত বুঝা যায়। যদি কাফির-ফাসিক নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয়। যদি পর পুরুষের মাধ্যমে চুল কাটা হয় (যেমনটি বর্তমান যুগে কিছু কিছু সেলুনে ঘটে থাকে।) যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া তাহলে তা হারাম। হারাম হওয়ার কারণও স্পষ্ট।
কিন্তু যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীকে খুশি করার জন্য তার চুল কাটে এবং এতে তার স্বামী তাকে আরও বেশি ভালবাসে তাহলে তার জন্য চুল কাটা জায়েয হবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এমনভাবে উনাদের মাথার চুল কাটতেন যে, তা কাঁধ থেকে একটু নিচে যেত বা কান বরাবর হত।” (মুসলিম শরীফ)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়- “এতে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের চুল কেটে হালকা করা জায়েয।” (শরহে মুসলিম)
খতিমাহ বা পরিশিষ্ট
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা একথা সুস্পষ্ট যে, চুল রাখার মধ্যেও সম্মানিত সুন্নতী তর্জ তরীক্বা রয়েছে। আর এজন্য সকলেই যেন সম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী চুল রাখতে পারেন এবং কাটতে পারেন সেই লক্ষেই এই রেছালা পাঠ করে সেই মুতাবিক আমল করে হাক্বীক্বী আল্লাহওয়ালা হওয়ার জন্য কোশেষ করতে হবে।
খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার সাথে সাথে সমস্ত মহিলাকূলকে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত যাওজাতুল মুকাররমাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার থেকে তা’লীম নিয়ে ও মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে সমস্ত পুরুষ মহিলা জিন ইনসানকে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে যিকির ফিকির করে অন্তর ইছলাহ করে ফায়িজ তাওয়াজ্জুহ হাছিল করে হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করার খাছ তাওয়ীক্ব নছীব করুন। আমীন!
গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ