(১) খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يا نساء النبى لستن كاحد من النساء
অর্থ: “হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ আপনারা কোন মহিলাদের মতো নন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাই যদি কোন মহিলাদের মতো না হন তাহলে তিনি অন্য পুরুষদের মত হন কি করে?
অতএব প্রতিভাত হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো মত নন।
(২) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لست كاحد منكم
অর্থ: আমি তোমাদের কারো মতো নই। (বুখারী শরীফ)
আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
ايكم مثلى
অর্থ: তোমাদের মধ্যে কে আছ আমার মতো? (বুখারী শরীফ)
কাজেই, উক্ত ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রতীয়মান হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো মত নন।
(৩) মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে আমার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্বীয় উম্মতকে বলে দিন-
ان اتبع الا ما يوحى الى
অর্থ: আমি তো কেবল তাই অনুসরণ করে চলি, যা আমার প্রতি ওহী মুবারক করা হয়। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫০)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى
অর্থ: তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেন না। (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না বা কোন কাজ করেননা কিন্তু অন্যরা তা নয়। কাজেই, এখানেও প্রমাণিত হলো, তিনি অপর কারো মত নন।
(৪) সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ১৫৮নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হে আমার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
قل انى رسول الله اليكم جميعا
অর্থ: আপনি বলুন, হে মানুষেরা! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।
অনুরূপ ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ارسلت الى الخلق كافة
অর্থ: আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্য রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।
উক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারাও সুষ্পষ্টরূপে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো মত নন। কেননা একমাত্র তিনিই সমস্ত মানুষ এবং সমস্ত সৃষ্টি তথা সমস্ত মাখলূক্বাতের জন্য নবী ও রসূল হিসেবে মনোনীত ও প্রেরিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
(৫) সূরা আম্বিয়া শরীফ ১০৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
وما ارسلناك الا رحمة للعالـمين
অর্থ: আমি আপনাকে সমগ্র আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।
আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারাও দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো মতো নন।
(৬) মুসনাদে আব্দির রযযাক, দালায়িলুন নুবুবওওয়াত, বায়াহক্বী, হাকিম, নূরে মুহম্মদী ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত আছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ পাক হিসেবেই ‘নূর’ মুবারক সৃষ্টি করেন এবং উক্ত নূর মুবারকই তিনি এবং উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক থেকেই তিনি আকৃতি মুবারক ধারণ করেন। যার কারণে উনাকে নূরে মুজাসসাম বলা হয়। কিন্তু আর কাউকে তা বলা হয় না।
এ হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রকাশিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো মতো নন।
(৭) নাওয়াদিরুল উছূল, খাছায়িছুল কুবরা, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, মাকতূবাত শরীফ ইত্যাদি বিশ্বখ্যাত কিতাবসমূহে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকের ছায়া ছিল না। কিন্তু অন্য সব মানুষের ছায়া রয়েছে। উক্ত হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও প্রতিফলিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো মতো নন।
(৮) বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, খাছায়িছুল কুবরা ইত্যাদি ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুশশিফা মুবারক পান করার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জান্নাত লাভের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছেন। উক্ত বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো মত নন।
(৯) মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ, খছায়িছুল কুবরা, আবু ইয়ালা ইত্যাদি ছহীহ ও নির্ভরয়োগ্য কিতাবসমূহে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে, যে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল আহমার মুবারক পান করেছেন তিনি উনাদের জন্যও জান্নাত লাভের সুসংবাদ দিয়েছেন। এ বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি অন্য কারো মতো নন।
(১০) শিফা শরীফ, খছায়িছুল কুবরা, শরহে শামায়িলে তিরমিযী ইত্যাদি কিতাবসমূহে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকে এমনকি উনার কাপড় মুবারকেও মশা-মাছি বসতোনা। এ বর্ণনা দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো মত নন।
এমনিভাবে অসংখ্য অগণিত কারণ উল্লেখ রয়েছে; যার দ্বারা অকাট্যভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য কারো মত নন। উনার মেছাল উনি নিজেই। উনার মেছাল বা তুলনা নেই। তিনি সৃষ্টি তথা মালূক্বাতের মধ্যে একক, যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি খালিক্ব মালিক রব হিসেবে একক। মহান আল্লাহ পাক উনার যেমন সমকক্ষ কেউ নেই তদ্রুপ উনার যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও সমকক্ষ কেউ নেই। মোটকথা মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার মাক্বাম বা মর্যাদা। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন, এছাড়া সমস্ত মর্যাদার অধিকারী তিনি।
সুতরাং, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য ও একান্ত কর্তব্য।