পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ও পবিত্র আক্বায়িদ উনাদের দৃষ্টিতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতা ও ফাযায়িল-ফযীলত

উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সহ সকল উম্মাহাতুল্ মু’মিনীন আলাইহিন্নাস্ সালাম উনারা ছিলেন পুত:পবিত্র ও বেমিছাল মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ। কিন্তু সবযুগেই কিছু মুনাফিক্ব, কাফির, বদচরিত্র ও ফিৎনাবাজ লোক উনাদের পবিত্রতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে। নাঊযু বিল্লাহ। মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল্ আলামীন তিনি হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম ও হযরত উম্মাহাতুল্ মু’মিনীন আলাইহিন্নাস্ সালাম উনাদের পবিত্রতার বিষয়ে পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে ঘোষণা করেছেন। যেমনটি ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلنَّبِـيُّ اَوْلٰـى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنفُسِهِمْ ۖ وَاَزْوَاجُه اُمَّهَاتُهُمْ ۗ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈমানদার উনাদের নিকট উনাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। আর উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মুমিন উনাদের মাতা” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
অর্থাৎ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস্ সালাম উনারা সমস্ত উম্মতের নিকট নিজের মায়ের মতোই।
নিজের মাকে যেমন তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান করা ফরয, তা থেকে লক্ষ কোটিগুণ বেশি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা আহলিয়া উনাদেরকে সম্মান-ইজ্জত মুবারক করা প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরয। নিজের মাকে যেরূপ বিয়ে করা হারাম, তেমনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও কোন (পুরুষ) উম্মতের জন্য বিয়ে করা হারাম।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান-
وَلَا اَنْ تَنْكِحُوْا اَزْوَاجَهٗ مِنْ بَعْدِهٖ اَبَدًا ۚ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায়ের পর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তোমরা বিয়ে করবেনা, তোমাদের জন্য উনাদেরকে বিয়ে করা হারাম।” )পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ফযীলত মুবারক সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا نِسَاءَ النَّبِـيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ ۚ
অর্থ: “হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্যান্য মহিলাদের মতো নন।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)
অর্থাৎ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন দুনিয়ার অন্য কোন মানুষের মতো নন, তেমনি উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা দুনিয়ার অন্য কোন মহিলার মতো নন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পূত-পবিত্রা এবং সুমহান চরিত্র মুবারক উনার অধিকারিণী করে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য উনাদের একটি খাছ লক্বব মুবারক হলো اَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَاتٌ ‘আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত’ অর্থাৎ পূত-পবিত্রা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّـمَا يُرِ‌يْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّ‌جْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيْرً‌ا
অর্থ: “হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সর্বপ্রকার অপবিত্রতা, অশালীনতা দূর করতে। তিনি আপনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রা করতে চান।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অর্থ এটা নয় যে, হযরত আহলে বাইত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে কোন প্রকার অপবিত্রতা রয়েছে যা থেকে উনাদেরকে পবিত্র করতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং স্বীয় ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উনাদের পবিত্রতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। যেমন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবী হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার পরও উনাকে চল্লিশ বছর বয়স মুবারক-এ আনুষ্ঠানিকভাবে নবী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মূলত: কোন প্রকার অশ্লীল ও অশালীন কাজ তো দূরের কথা, কোন প্রকার অশোভনীয় ও মুরুওওয়াতের খিলাফ কাজও হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক ফরমান,
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ مَنْ يَاْتِ مِنْكُنَّ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ يُضَاعَفْ لَـهَا الْعَذَابُ ضِعْفَيْنِ ۚ وَكَانَ ذٰلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرً‌ا
অর্থ: “হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গিনী আলাইহিন্নাস সালাম! আপনাদের মধ্যে কেউ যদি কোন প্রকার স্পষ্ট শালীনতার খিলাফ কাজে জড়িত হন, তবে উনাকে দ্বিগুণ অসন্তুষ্টি দেয়া হবে। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষে অত্যন্ত সহজ।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে দ্বিগুণ শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তার অর্থ হলো উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় ছোহবত অর্জন ও সঙ্গিনী হওয়ার কারণে উনাদের মর্যাদা-মর্তবা মুবারক অন্যান্যদের তুলনায় সীমাহীন উর্ধ্বে। উনারা যে বেমেছাল ফযীলত, মর্যাদা ও মর্তবা মুবারক উনাদের অধিকারিণী ছিলেন, তারই দলীল পেশ করেছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে।
অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেও হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পবিত্রতা, ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা মুবারক বর্ণিত রয়েছে।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عِنْ حَضْرَةْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحَبُّ النِّسَاءِ اِلَـيَّ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ وَمِنَ الرِّجَالِ اَبُوْهَا.
অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান, মহিলাদের মধ্যে আমার নিকট হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম ও পুরুষদের মধ্যে উনার পিতা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনারা সর্বাধিক প্রিয়।” )মুসলিম, বুখারী, ইবনে মাজাহ, কানযুল উম্মাল ৩৪৩৪৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ حَضْرَةْ مُسْلِمِ الْبَطِيْنِ مُرْسَلًا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَضْرَةْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ زَوْجَتِـىْ فِـى الْـجَنَّةِ.
অর্থ: “হযরত মুসলিম আল বাত্বীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি জান্নাতে আমার আহলিয়া হিসেবে থাকবেন।” (ত্ববাক্বাতে ইবনে সা’দ শরীফ, কানযুল উম্মাল শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَةِ اَبِـى مُوْسٰى رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فَضْلَ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيدِ عَلَى سَائِرِ الطَّعَامِ.
অর্থ: “হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ফযীলত অন্যান্য মহিলাদের উপর এতো বেশি যেমন খাদ্যের মধ্যে ছারিদের ফযীলত বা শ্রষ্ঠত্ব।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ, কানযুল উম্মাল শরীফ, মিশকাত শরীফ ৫০৯)
মূলত: উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সহ সকল উম্মাহাতুল্ মু’মিনীন আলাইহিন্নাস্ সালাম উনারা ছিলেন পুত:পবিত্র ও বেমিছাল মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী। আর বিপরীত দিকে উনাদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ লেপনকারীরা মিথ্যাবাদী, মুনাফিক্ব, ফিৎনাকারী ও বদচরিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বর্তমানে কিছু কবি, সাহিত্যিক, অজ্ঞ লোকেরা উনাদের সম্পর্কে মিথ্যা লেখালেখি করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার কোশেশ করছে। আসলে এরাই চরম মিথ্যাবাদী, বদচরিত্র, মুর্খ ও মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত।