সুওয়াল: কেউ কেউ বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিন্দিগী মুবারক দু’ভাগে বিভক্ত। ১. ব্যক্তিগত যিন্দিগী, ২. নুবুওওয়াতী যিন্দিগী। তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وما محمد الا رسول
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ব্যতীত কিছু নন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وما ينطق عن الـهوى ان هو الا وحى يوحى
অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেননা।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪)
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
الا وانا حبيب الله
অর্থ: “সাবধান! আমি হলাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (তিরমিযী শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন। আর তিনি পরিপূর্ণরূপে ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
কাজেই যিনি নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবে সৃষ্টি হয়েছেন এবং উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারক ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাহলে উনার সম্পর্কে একথা কি করে বলা যেতে পারে যে, উনার ব্যক্তিগত যিন্দিগী রয়েছে? নাঊযুবিল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই নুবুওওয়াতী, রিসালতী ও হাবীবী যিন্দিগী মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
কোন নবী কিংবা রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী রয়েছে এ প্রকারের প্রশ্ন করা ও আক্বীদা পোষণ করা উভয়টিই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
কারণ, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বপ্নও ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ উনারা ঘুমের মধ্যেও নবী-রসূল হিসেবেই থাকেন, ব্যক্তি হিসেবে নয়। আর সজাগ অবস্থায় অর্থাৎ চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, আলাপ-আলোচনা, ওয়ায-নছীহত ইত্যাদি সর্বাবস্থায় তো অবশ্যই উনারা নবী ও রসূল হিসেবে অবস্থান করেন। তাই সর্বাবস্থায়ই উনাদের প্রতি ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে। এমনকি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিছানা মুবারক-এ থাকা অবস্থায়ও উনার প্রতি ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে।
তাহলে এটা কি করে বলা যেতে পারে যে, নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক রয়েছে?
আরো উল্লেখ্য, যদি বলা হয় কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক রয়েছে, তাহলে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি কখন নবী হিসেবে থাকেন আর কখন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে থাকেন? অর্থাৎ তিনি কত সময় ব্যাপী নবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আর কত সময়ব্যাপী ব্যক্তি হিসেবে ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করেন? তা কস্মিনকালেও প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
কারণ, আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণ পাই যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের প্রতি চব্বিশ ঘন্টাই ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে। এমনকি স্বপ্নেও উনাদের প্রতি ওহী মুবারক নাযিল হতো ও হয়েছে। যার কারণে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের স্বপ্নও ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। এর বহু প্রমাণ রয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قال يبنى انى ارى فى الـمنام انى اذبحك
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার ছেলে (হযরত ঈসমাঈল আলাইহিস সালাম!) নিশ্চয়ই আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে যবেহ (কুরাবানী) করছি।” (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০২)
অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে মিনা ওখানে নিয়ে শোয়ায়ে কুরবানী করার উদ্দেশ্যে গলা মুবারক-এ ছুরি চালাচ্ছিলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক পুনরায় নাযিল করলেন-
قد صدقت الرؤيا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আপনি আপনার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন।” (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৫)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী বলতে কোন যিন্দিগীই ছিলনা। উনাদের সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই ছিলো নুবুওওয়াতী ও রিসালতী যিন্দিগী মুবারক। সুতরাং ব্যক্তিগত যিন্দিগী ছিলো বলে মত পোষণ করা ও বিশ্বাস করা উভয়টিই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।