মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সম্বলিত দিবসগুলিকে স্মরণ করিয়ে দিন সমস্ত কায়িনাতকে। নিশ্চয়ই এর মধ্যে ধৈর্যশীল ও শোকরগোজার বান্দা-বান্দীদের জন্য ইবরত ও নছীহত রয়েছে।
ঐতিহাসিক সুমহান বরকতময় ২৮শে ছফর শরীফ- হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত মুবারক দিবস।
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ তথা পবিত্র শাহাদাত দিবস হচ্ছে পবিত্র ২৮শে ছফর শরীফ। সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মুবারক ও মর্তবা মুবারক সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয হচ্ছে- আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেয়া।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম বা আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা এবং উনাদের খিদমত মুবারক করা, উনাদের সাওয়ানেহে উমরী মুবারক জানা সকলের জন্যই ফরয। হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখায় পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। হিজরী ৩য় সনে পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনার ১৫ তারিখ ইয়াওমুল আরবিয়া বা বুধবার তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।
হযরত আলী ইবনে আবী তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন: যখন হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে তাশরীফ মুবারক আনেন এবং ইরশাদ মুবারক করেন: আমার সন্তান উনাকে আমাকে দেখান, উনার কী নাম মুবারক রেখেছেন? আমি বললাম: আমি উনার নাম মুবারক রেখেছি- হারব (যুদ্ধ)। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: বরং তিনি ‘হাসান’। অর্থাৎ উনার নাম মুবারক হযরত ‘হাসান’ আলাইহিস সালাম। উনার জিসিম মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সর্বাপেক্ষা বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিহযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অপেক্ষা অপর কেউ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করার পর হিজরী ৪০ সনের পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খিলাফত মুবারক গ্রহণ করলেন। ৪০ হাজার লোক উনার পবিত্র হাত মুবারকে বাইয়াত হন। তিনি সম্মানিত খিলাফত ৬ মাস পর্যন্ত পরিচালনা করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার পরে সম্মানিত খিলাফত মুবারক ৩০ বছর। তন্মধ্যে ২৯ বছর ৬ মাস পূর্ববর্তী খলীফাগণ উনাদের সময়ে অতিবাহিত হয়। বাকি ৬ মাস আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পূর্ণ করেন।
ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শত্রুরা উনাকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। নাউযুবিল্লাহ! ফলে প্রতিবারই তিনি অসুস্থতা গ্রহণ করেন এবং এ অবস্থায় তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ গিয়ে দোয়া করার মাধ্যমে সুস্থতা গ্রহণ করেন। কিন্তু শেষবার অর্থাৎ ষষ্ঠবার যে বিষ পান করানো হয় তা ছিলো অত্যন্ত মারাত্মক বিষ, অর্থাৎ হিরক চূর্ণ। ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত ছিলো এই যে, তিনি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাযের সময় পানি মুবারক পান করতেন। উনি যে কলসি মুবারক থেকে পানি মুবারক পান করতেন সে কলসি মুবারক উনার মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন যেন কেউ কিছু ফেলতে বা বিষ মিশ্রিত করতে না পারে। কিন্তু শত্রুরা হিরকচূর্ণ কলসি মুবারক উনার মুখে বেঁধে রাখা কাপড়ে মিশিয়ে দেয়। হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতিদিনের ন্যায় পানি মুবারক পান করার জন্য কলসি মুবারক থেকে পাত্রে পানি মুবারক ঢাললেন, তখন হিরকচূর্ণ বিষসহ পানি পাত্রে পড়লো। তিনি তা পান করার সাথে সাথে মারাত্মক বিষক্রিয়া শুরু হলো। ফলে তিনি মারাত্মক অসুস্থতা গ্রহণ করেন। এবার আর উনার পক্ষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ যাওয়া সম্ভব হলো না। হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুঝতে পারলেন যে, উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার সময় নিকটবর্তী। তাই তিনি হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সংবাদ দিলেন। তিনি আসলে হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ভাই! এই সম্মানিত খিলাফত উনার জন্য আমাদের সম্মানিত পিতা শহীদ হয়েছেন। আমিও শহীদ হচ্ছি। কাজেই এই সম্মানিত খিলাফত উনার আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি এই সম্মানিত খিলাফত থেকে দূরে থাকবেন। সম্মানিত খিলাফত ফিরিয়ে দেয়ার শর্ত বাতিল করে দেয়া হলো। এ কারণেই হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত খিলাফত ফিরিয়ে নেননি।
মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণে ৪৯ হিজরী সনের পবিত্র ২৮শে ছফর শরীফ প্রায় ৪৬ বৎসর অর্থাৎ ৪৫ বৎসর ৬ মাস ১৩ দিন বয়স মুবারক-এ তিনি পবিত্র শাহাদাত গ্রহণ করেন বা পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার মধ্যে অবস্থিত।
হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম হচ্ছেন সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর উনাকে অনুসরণ করা ফরয। যে বিষয়টি ফরয, সে বিষয়ে ইলম অর্জন করাও ফরয। তাই উনার বরকতময় সাওয়ানেহে উমরী মুবারক বা জীবনী মুবারক জানাও সকলের জন্য ফরয। পাশাপাশি ৯৭ ভাগ মুসলমান দেশের সরকারের জন্যও ফরয হচ্ছে, উনার পবিত্র জীবনী মুবারক মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি এ পবিত্র দিবসটি পালনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি ছুটির ব্যবস্থা করা।