সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার পরিচিতি
=================================================
উত্তর:‘সাইয়্যিদ’ অর্থ শ্রেষ্ঠ, এবং আ’ইয়াদ হচ্ছে ঈদ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ: খুশি । আর ‘শরীফ’ অর্থ সম্মানিত বা মর্যাদাবান । সুতরাং সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অর্থ সকল ঈদের সাইয়্যিদ বা সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ দুনিয়াতে আগমন মুবারক উপলক্ষে সর্বশ্রেষ্ট ঈদ পালন বা খুশি মুবারক প্রকাশ করাই হচ্ছে ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’। যা সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে পরিচিত।
=================================================
অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে, কিভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতে হবে? এই বিষয়ে অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে, উনার বেলাদত শরীফ (আগমন) উনার সম্মানার্থে, কিভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ পালন করতে হবে এর উত্তর স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই বলে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّا اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا ◌ لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَاَصِيْلًا
অর্থ: “হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনো এবং তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, সম্মান মুবারক করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রদত্ত আদেশ মুবারক অর্থাৎ “তোমরা আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ( تُعَزِّرُوهُ ‘তুয়াযযিরূহু’) খিদমত মুবারক করো, تُوَقِّرُوهُ ‘তুয়াক্বিরূহু’ তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক করো, تُسَبِّحُوهُ ‘তুসাব্বিহূহু’ উনার ছানা-ছিফত মুবারক অর্থাৎ প্রশংসা মুবারক করো।” এই বিষয়গুলোর অর্থাৎ এই আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মেছদাক হয়ে -‘ফালইয়াফরাহু’ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতে হবে।
আর সেই লক্ষ্যে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক, তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক ও উনার প্রশংসা মুবারক করার লক্ষ্যে যামানার ইমাম, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল, মুজাদ্দিদে আ’যম, হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম, রাজারবাগ শরীফ উনার মাঝে জারী করেছেন অনন্তকাল ব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল। তিনি এমন একজন ওলীআল্লাহ যিনি সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক তালাশ করে থাকেন।
সুতরাং দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানগণ উনাদের উচিত হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সংসর্গে আসা এবং দায়িমীভাবে ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি মুবারক প্রকাশ এর মাধ্যম দিয়ে হাক্বীক্বীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার লক্ষে রাজারবাগ শরীফ আসা।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا.
অর্থ : “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যিনারা সকাল ও সন্ধ্যায় উনাদের পালনকর্তাকে উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের উদ্দেশ্যে ডেকে থাকেন (যিকির করেন) এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য্যে মোহগ্রস্থ হয়ে উনাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিবেন না। ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করবেন না, যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল করে দিয়েছি, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার খেলাফ বা বিপরীত।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
=================================================
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বেলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে, উনার জন্য ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি মুবারক প্রকাশ করা ইবাদত যা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مّن رَّبّكُمْ وَشِفَاءٌ لّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْـمَةٌ لّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ : “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্যে তাশরীফ মুবারক এনেছেন মহান নছীহত মুবারক দানকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ শিফা মুবারক দানকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত মুবারক দানকারী ও খাছভাবে ঈমানদারদের জন্য, আমভাবে সমস্ত কায়িনাতের জন্য মহান রহমত মুবারক দানকারী (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ফদ্বল বা অনুগ্রহ মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক(হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার জন্য তারা যেনো সম্মানিত ঈদ উদযাপন তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এই খুশি মুবারক প্রকাশ বা ঈদ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া-আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
অনেকে অজ্ঞতার কারনে বলে থাকে এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার কথা বলা হয়নি। নাউঝুবিল্লাহ!!
অথচ উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহূল মায়ানী ৬ খন্ড ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اخرج ابو الشيخ عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الفضل العلم و الرحمة محمد صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আবুশ শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত “নিশ্চয় ‘ফদ্বল’ দ্বারা উদ্দেশ্য ইলম, আর ‘রহমত’ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
ইমাম ইবনে জাওযি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ
أن فضل الله: العلم، ورحمته: محمد صلى الله عليه وسلم، رواه الضحاك عن ابن عباس.
অর্থঃ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্নিত “ অনুগ্রহ বলতে কুরআন শরীফ, রহমত বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উনাকেই বুঝানো হয়েছে।” [যা’আদ আল মাসীর ৪:৪০]
ইমাম আবু হাইয়ান আল আন্দালুসি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন
الفضل العلم والرحمة محمد صلى الله عليه وسلم
অর্থঃ অনুগ্রহ মানে জ্ঞান, রহমত বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে (তাফসীর আল বাহর আল মুহীতঃ ৫/ ১৭১)
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ
وأخرج أبو الشيخ عن ابن عباس رضي الله عنهما في الآية قال: فضل الله العلم، ورحمته محمد صلى الله عليه وسلم، قال الله تعالى { وما أرسلناك إلا رحمة للعالمين } [الأنبياء: ১০৭].
আবু শেখ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্নিত “ অনুগ্রহ বলতে কুরআন শরীফ, রহমত বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে । আল্লাহ পাক বলেন” নিশ্চয় আমি আপনাকে সারা আলমের জন্য রহমত স্বরুপ পাঠিয়েছি ” পবিত্র সুরা আম্বিয়া ১০৭। [দূর আল মানসুর ৪:৩৩০]
এবং পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
وعن أبي أمامة قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم إن الله تعالى بعثني رحمة للعالمين
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক আমাকে তামাম আলমের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন (তাবরানী শরীফ, মিশকাত ৩৬৫৪, মিরকাত শরীফ, দালায়েলুন নবুওয়াত লি আবু নুয়াইম ১)
সুতরাং উপরোক্ত দলিলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য “ফাল ইয়াফরাহু” বা খুশি মুবারক প্রকাশ করা ইবাদত। সুবহানআল্লাহ!
আর আল্লাহ পাক উনার এই আদেশ মুবারক পালনার্থে যামানার ইমাম, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল, মুজাদ্দিদে আ’যম, হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম রাজারবাগ শরীফ উনার মাজে জারী করেছেন অনন্তকাল ব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল। হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এমন একজন ওলীআল্লাহ যিনি সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক তালাশ করে থাকেন। তাই দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের উচিত হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সংসর্গে আসা এবং দায়িমীভাবে ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি মুবারক প্রকাশ করার জন্য রাজারবাগ শরীফে আসা।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا.
অর্থ : “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যাঁরা সকাল ও সন্ধ্যায় উনাদের পালনকর্তাকে উনার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ডেকে থাকেন (যিকির করেন) এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য্যে মোহগ্রস্থ হয়ে উনাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিবেন না। ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করবেন না, যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল করে দিয়েছি, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার খেলাফ বা বিপরীত।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
=================================================
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বেলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে, উনার জন্য ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি মুবারক প্রকাশ করাটা ফরজ যা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক
যেমন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য “ফাল ইয়াফরাহু” বা খুশি মুবারক প্রকাশ করার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مّن رَّبّكُمْ وَشِفَاءٌ لّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْـمَةٌ لّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ : “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্যে তাশরীফ মুবারক এনেছেন মহান নছীহত মুবারক দানকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ শিফা মুবারক দানকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত মুবারক দানকারী ও খাছভাবে ঈমানদারদের জন্য, আমভাবে সমস্ত কায়িনাতের জন্য মহান রহমত মুবারক দানকারী (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ফদ্বল বা অনুগ্রহ মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক ( হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার জন্য তারা যেনো সম্মানিত ঈদ উদযাপন তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এই খুশি মুবারক প্রকাশ বা ঈদ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া-আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
উল্লিখিত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করতে আদেশ মুবারক করেছেন
এই বিষয়ে ঊছুলে ফিক্বাহ উনার সমস্ত কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, الامر للوجوب
অর্থাৎ আদেশসূচক বাক্য দ্বারা সাধারণত ফরয-ওয়জিব সাব্যস্ত হয়ে থাকে।
যেমন উছুলুশ শাশী কিতাবের ‘কিতাবুল্লাহ’ অধ্যায়ের ‘আমর’ পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে,
والصحيح من المذهب ان موجبه الوجوب
অর্থ: “ আমাদের হানাফী মাযহাবের বিশুদ্ধ মত হলো- নিশ্চয় কুরআন শরীফ- এর আমর বা নিদর্শনগুলো পালন করা ফরজ বা ওয়াজিব।
যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اقيموا الصلوة
অর্থাৎ “তোমরা নামায আদায় করো।”
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই পবিত্র নামায ফরয সাব্যস্ত হয়েছে।
অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
واعفوا للحى
অর্থাৎ “তোমরা (পুরুষরা) দাড়ি লম্বা করো।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয সাব্যস্ত হয়েছে।
আবার অনেকে তাদের অজ্ঞতার কারণে বলতে চান যে এখানে রহমত বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়নি! নাউঝুবিল্লাহ
এই বিষয়ে তাফসীরে রুহূল মায়ানী ৬ খন্ড ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اخرج ابو الشيخ عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الفضل العلم و الرحمة محمد صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আবুশ শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত “নিশ্চয় ‘ফদ্বল’ দ্বারা উদ্দেশ্য ইলম, আর রহমত দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম।”
ইমাম ইবনে জাওযি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ
أن فضل الله: العلم، ورحمته: محمد صلى الله عليه وسلم، رواه الضحاك عن ابن عباس.
অর্থঃ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্নিত “ অনুগ্রহ বলতে কুরআন শরীফ, রহমত বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। [যা’আদ আল মাসীর ৪:৪০]
ইমাম আবু হাইয়ান আল আন্দালুসি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন “
الفضل العلم والرحمة محمد صلى الله عليه وسلم
অর্থঃ অনুগ্রহ মানে জ্ঞান, রহমত বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে।( তাফসীর আল বাহর আল মুহীতঃ ৫/ ১৭১)
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ
وأخرج أبو الشيخ عن ابن عباس رضي الله عنهما في الآية قال: فضل الله العلم، ورحمته محمد صلى الله عليه وسلم، قال الله تعالى { وما أرسلناك إلا رحمة للعالمين } [الأنبياء: ১০৭].
আবু শেখ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্নিত “ অনুগ্রহ বলতে কুরআন শরীফ, রহমত বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে । আল্লাহ পাক বলেন” নিশ্চয় আমি আপনাকে সারা আলমের জন্য রহমত স্বরুপ পাঠিয়েছি ” পবিত্র সুরা আম্বিয়া ১০৭। [দূর আল মানসুর ৪:৩৩০]
এই বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
وعن أبي أمامة قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم إن الله تعالى بعثني رحمة للعالمين
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক আমাকে তামাম আলমের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন (তাবরানী শরীফ, মিশকাত ৩৬৫৪, মিরকাত শরীফ, দালায়েলুন নবুওয়াত লি আবু নুয়াইম ১)
সুতরাং স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল উপরোক্ত আয়াত শরীফে ‘রহমত’ বলতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। এবং উনার জন্য “ফাল ইয়াফরাহু” বা খুশি মুবারক প্রকাশ করা ফরয।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এই আদেশ মুবারক পালনার্থে যামানার ইমাম, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল, মুজাদ্দিদে আ’যম, হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম রাজারবাগ শরীফ উনার মাজে জারী করেছেন অনন্তকাল ব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল।
হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এমন একজন ওলীআল্লাহ যিনি সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক তালাশ করে থাকেন। তাই দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানদের উচিত হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সংসর্গে আসা এবং দায়িমীভাবে ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি মুবারক প্রকাশ করার জন্য রাজারবাগ শরীফে আসা।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا.
অর্থ : “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যাঁরা সকাল ও সন্ধ্যায় উনাদের পালনকর্তাকে উনার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ডেকে থাকেন (যিকির করেন) এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য্যে মোহগ্রস্থ হয়ে উনাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিবেন না। ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করবেন না, যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল করে দিয়েছি, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার খেলাফ বা বিপরীত।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার জন্য ‘ফালইয়াফরাহু’ তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করা কেন এবং কিভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ
অর্থ : “আমি জিন ও ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৫৬)
এখন ইবাদত বা আমলের মধ্যে কোন ইবাদত বা আমল সর্বশ্রেষ্ঠ তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। এবং তা প্রকাশ করার লক্ষ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مّن رَّبّكُمْ وَشِفَاءٌ لّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْـمَةٌ لّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ : “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্যে তাশরীফ মুবারক এনেছেন মহান নছীহত মুবারক দানকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ শিফা মুবারক দানকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত মুবারক দানকারী ও খাছভাবে ঈমানদারদের জন্য, আমভাবে সমস্ত কায়িনাতের জন্য মহান রহমত মুবারক দানকারী (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ফদ্বল বা অনুগ্রহ মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন; সেজন্য তারা যেনো সম্মানিত ঈদ উদযাপন তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এই খুশি মুবারক প্রকাশ বা ঈদ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া-আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
অর্থাৎ فَلْيَفْرَحُوْا ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত বা আমল। আর এই فَلْيَفْرَحُوْا ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি প্রকাশ করার বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন,
هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থাৎ “এই খুশি প্রকাশ করাটা হবে বান্দা-বান্দির জন্য সব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য জমা করে রাখে।”
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার জন্য “ফালইয়াফরাহু” তথা খুশী মুবারক প্রকাশ করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।
এছাড়াও সহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক না করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কিছুই সৃষ্টি মুবারক করতেন না”। (দালায়েলুন নাবায়িয়্যাহ, মুসতাদরাক আল হাকেম, আল মাদখাল, আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ, শেফাউস সিকাম)
উনার অস্থিত্ব মুবারক উনার উছিলাতেই সমস্ত কিছু অস্থিত্ব মুবারক লাভ করেছে। আমরা অন্যান্য ইবাদত যেমন নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত সর্বোপরি সর্বশ্রেষ্ট এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক উনার মাধ্যম দিয়েই লাভ করেছি। শুধু আমরা না হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে সমস্ত হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম এমনকি সৃষ্টির শুরু থেকে এই পর্যন্ত জিনারা যা কিছু লাভ করেছেন সমস্ত কিছুই উনার মাধ্যম দিয়েই লাভ করেছেন । এই বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّـمَا اَنَا قَاسِمٌ وَاللهِ يُعْطِىْ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি হচ্ছি বণ্টনকারী। আর যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন দাতা।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার ফজল এবং রহমত মুবারক হিসেবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যদি আমরা লাভ না করতাম তাহলে কোন নিয়ামতই আমরা লাভ করতে পারতাম না। সুতরাং উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করাই হচ্ছে সমস্ত কিছু থেকে শ্রেষ্ট। এমন শ্রেষ্ট যে কুফরী শিরিকী ও এই আমল বিনষ্ট করতে পারে না।
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার জন্য ‘ফালইয়াফরাহু’ তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করাই যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত এবং কুফরী শিরিকী করলে দ্বারাও যে এই আমল বিনষ্ট হয় না তা কাট্টা কাফির আবু লাহাব কে দিয়েই মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রকাশ করে দিয়েছেন। সে বিষয়টা হচ্ছে আবু লাহাব কাট্টা কাফির চিরজাহান্নমী হওয়ার পরেও, নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার আগমনের দিনে খুশি প্রকাশ করাই প্রতি সোমবার দিনে তাকে পানি পান করানো হয়। এই বিষয়ে পবিত্র বুখারী শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
قال حضرت عروة رضي الله عنه وثويبة مولاة لابي لهب كان ابو لهب اعتقها فارضعت النبي صلي الله عليه و سلم فلما مات ابو لهب اريه بعض اهله بشر حيبة قال له ماذا لقيت قال ابو لهب لم الق بعد كم غير اني سقيت في هذه بعتاقتي ثويبة
অর্থ : হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বর্ননা করেন, হযরত সুয়াইবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী এবং আবু লাহাব হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত(আগমন) শরীফে খুশি হয়ে উনার খিদমত করার জন্য ওই বাঁদীকে আযাদ করে দিয়েছিলো ! এরপর আখেরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি দুধ পান করান । অতঃপর আবু লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন অর্থাৎ তার ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, আবু লাহাব সে ভিষন কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে! তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে ? আবু লাহাব উত্তরে বললো, যখন থেকে আপনাদের থেকে দূরে রয়েছি তখন থেকেই ভীষন কষ্টে আছি !
তবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত(আগমন) শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বাঁদী সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে দু’আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ/মুক্তি দেয়ার কারনে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠান্ডা ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি !””
( সহীহ বুখারী শরীফ – কিতাবুন নিকাহ- ২য় খন্ড ৭৬৪ পৃষ্ঠা )
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার, হাফিজে হাদীস, হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিজে হাদীস, হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনাদের বুখারী শরীফের শরাহতে উল্লেখ করেছেন-
وذكر السهيلي ان العباس قال لما مات ابو لهب رايته في منامي بعد حول في شر حال فقال ما لقيت بعد كم راحة الا ان العذاب يخفف عني في كل يوم اثنين وذلك ان النبي صلي الله عليه و سلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها
অর্থ: হযরত ইমাম সুহাইলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে ! সে বললো, ( হে ভাই হযরত আব্বস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোন শান্তির মুখ দেখি নাই।
তবে হ্যাঁ, প্রতি সোমবার শরীফ যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারন হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত (আগমন) শরীফ এর দিন ছিলো সোমবার শরীফ ! সেই সোমবার শরীফ এ হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাঁদী সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আবু লাহাবকে জানালেন তখন আবু লাহাব বিলাদত শরীফের খুশির সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনাকে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয় !””
(ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা , ওমদাতুল ক্বারী লি শরহে বুখারী ২০ খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা, মাওয়াহেবুল লাদুননিয়াহ ১ম খন্ড, শরহুয যারকানী ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা )
বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে লিখেন-
قال النبي صلي الله عليه و سلم رايت ابا لهب في النار يصيح العطش العطش فيسقي من الماء في نقر ابهامه فقلت بم هذا فقال بعتقي ثويبة لانها ارضعتك
অর্থ : হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও ! পানি দাও !
অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে। আমি বললাম, কি কারনে এ পানি পাচ্ছো ? আবু লাহাব বললো, আপনার বিলাদত(আগমন) শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহা উনাকে মুক্ত করার কারনে এই ফায়দা পাচ্ছি ! কেননা তিনি আপনাকে দুধ মুবারক পান করিয়েছেন !””( তারীখে ইয়াকুবী ১ম খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা )
সুতরাং প্রমানিত হল হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে উনার জন্য ‘ফালইয়াফরাহু’ তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত যা কুফরী শিরিকী করলেও ধ্বংস হয় না।
আর এই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত বা আমল পালনার্থে যামানার ইমাম, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল, মুজাদ্দিদে আ’যম, হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম রাজারবাগ শরীফ উনার জারী করেছেন অনন্তকাল ব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদশরীফ মাহফিল। হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এমন একজন ওলীআল্লাহ যিনি সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক তালাশ করে থাকেন। তাই দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের উচিত হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সংসর্গে আসা এবং দায়িমীভাবে ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি প্রকাশ করার জন্য রাজারবাগ শরীফে আসা।কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا.
অর্থ : “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যাঁরা সকাল ও সন্ধ্যায় উনাদের পালনকর্তাকে উনার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ডেকে থাকেন (যিকির করেন) এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য্যে মোহগ্রস্থ হয়ে উনাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিবেন না। ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করবেন না, যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল করে দিয়েছি, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সম্মানিত শরীয়তে উনার খেলাফ বা বিপরীত।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
=================================================
বর্তমানে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী খেদমত মুবারক ও তাযীম তাকরীম মুবারক করার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছেন হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। যিনাদের খেদমত মুবারক, তা’যীম তাকরীম মুবারক ও সানাসিফত মুবারক উনার মাধ্যম দিয়ে হাক্বীক্বীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু পালন করা সহয ও সম্ভব হবে।
যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُل لَّا اَسْاَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرًا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبٰـى
অর্থ : (হে আমার হাবীব হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাচ্ছি না, (তোমরা কোন বিনিময় দিতেও পারবে না, কোন বিনিময় দেয়ার চিন্তা করাও কুফরী হবে) তোমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, আমার যাঁরা আহাল ও ইয়াল, আওলাদ যাঁরা রয়েছেন, আহলে বাইত যাঁরা রয়েছেন উনাদের প্রতি তোমরা মুহব্বত পোষন করবে ও সৎ ব্যবহার করবে, উনাদের খিদমত করবে, তা’যীম-তাকরীম করবে সবদিক থেকে। উনাদেরকে যেভাবে তোমাদের খিদমতের আঞ্জাম দেয়া দরকার, তা’যীম-তাকরীম করা দরকার, ছানা-ছিফত করা দরকার সেভাবে তোমরা করবে।
অর্থাৎ বর্তমানে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের تُعَزِّرُوهُ ‘তুয়াযযিরূহু’ (খিদমত মুবারক করে), تُوَقِّرُوهُ ‘তুয়াক্বিরূহু’ (তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক করে) এবং تُسَبِّحُوهُ ‘তুসাব্বিহূহু’ (উনার প্রশংসা মুবারক) করলে বা করতে পারলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার হাক্বীক্বী খেদমত মুবারক, তা’যীম-তাকরীম মুবারক ও প্রশংসা, ছানা-ছিফত মুবারক এর হক আদায় হবে।
আবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحِبُّوا اللهَ لِمَا يَغْذُوكُمْ مِنْ نِعَمِهِ وَاَحِبُّوْنِـىْ بِـحُبِّ اللهِ وَاَحِبُّوا اَهْلَ بَيْتِى لِـحُبِّى.
অর্থ : “তোমরা যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কারণ তিনি তোমাদের খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন, সমস্ত ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করতেছেন। কাজেই উনার নিয়ামতের কারণে উনার ইজ্জত-সম্মানের কারণে উনাকে তোমরা মুহব্বত করো। আর আমাকে অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত কর খালিক্ব, মালিক রব আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দী হাছিলের লক্ষ্যে। আর আমার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো নূরে জাসমুসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে, উনার মুহব্বতের কারণে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করে উনাদের تُعَزِّرُوهُ ‘তুয়াযযিরূহু’ বা খিদমত মুবারক করার মাধ্যমে, تُوَقِّرُوهُ ‘তুয়াক্বিরূহু’ বা তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক করার মাধ্যমে এবং تُسَبِّحُوهُ ‘তুসাব্বিহূহু’ বা উনাদের প্রশংসা মুবারক করার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার تُعَزِّرُوهُ ‘তুয়াযযিরূহু’ (খিদমত মুবারক), تُوَقِّرُوهُ ‘তুয়াক্বিরূহু’ (তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক) এবং تُسَبِّحُوهُ ‘তুসাব্বিহূহু’ (উনার প্রশংসা মুবারক) করা সম্ভব।
আর তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আখাচ্ছুল খাছ আওলাদ, হযরত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যামানার ইমাম, মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল, মুজাদ্দিদে আ’যম, হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার খিদমত মুবারক, তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক ও উনার প্রশংসা মুবারক করতে হবে। হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক, তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক ও উনার প্রশংসা মুবারক করার লক্ষ্যে রাজারবাগ শরীফে জারী করেছেন অনন্তকাল ব্যাপী অর্থাৎ অনির্দিষ্ট কাল ব্যাপী সাইয়্যিদুল শরীফ তথা হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলােইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশী তথা ঈদ পালন করে উনার সুমহান সম্মানার্থে মাহফিল। তাই দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের উচিত হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সংসর্গে আসা এবং দায়িমীভাবে ‘ফালইয়াফরাহু’ বা খুশি প্রকাশ করার জন্য রাজারবাগ শরীফে আসা।
=================================================
উম্মতদের কতক্ষণ বা কতদিন পর্যন্ত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ট ঈদ পালন তথা খুশী মুবারক প্রকাশ করতে হবে।
এই বিষয়ে অনেকে মনে করে থাকে হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য শুধূমাত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ একদিন খুশী প্রকাশ করলেই হবে। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে তাদের এই ধারণা ভুল। নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার জন্য খুশী মুবারক তথা ঈদ পালন করা শুধুমাত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ একদিনের সাথে সংশ্লিষ্ট না। একজন উম্মতের জন্য এই খুশী প্রতিটা সেকেন্ড এর খুশী। আর এই খুশী মুবারক অনন্তকাল ব্যাপী প্রকাশ করতে হবে। এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক। যে আদেশ মুবারক হাক্বীক্বীভাবে পালন করেছেন সাহাবা ই কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ।
এই বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক বলেন-
” وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصيلا
“অর্থাৎ তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, তা’যীম-তাকরীম মুবারক অর্থাৎ সম্মান মুবারক করো, উনার ছানা-ছিফত মুবারক অর্থাৎ প্রশংসা মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা”
(পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯) সুবহানাল্লাহ।
সুতরাং প্রমাণিত হল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশী প্রকাশ শুধুমাত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ একদিন করলেই হবে না এবং এই ঈদ তথা খুশী প্রকাশ একদিনের সাথে সংশ্লিষ্টও না। এই খুশী প্রতিটা সেকেন্ড এর খুশী। আর এই খুশী মুবারক অনন্তকাল ব্যাপী প্রকাশ করতে হবে। যা করতে হবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক এর পরিপূর্ণ অনুসরণ অনুকরণ, উনার খিদমত মুবারক, সম্মান তথা তা’যীম- তাকরীম মুবারক, ছানা-ছিফত তথা প্রসংশা মুবারক এর মাধ্যম দিয়ে।
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে এক শ্রেণীর বাতিল ফেরকার লোকেরা বলে থাকে ঈদে মীলাদুন্নবী আবার কেমন ঈদ এবং শরীয়তে নাকি দু ঈদ ব্যতিত আর কোন ঈদ নাই !! নাউযুবিল্লাহ
মূলত দুই ঈদ ব্যাতীত আর কোন ঈদ নাই। এই কথার মত হাস্যকর কথা আমরা কমই শুনেছি। যারা এই কথা বলে তাদের জীবন কতটা যে নিরানন্দ তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। মহান আল্লাহ পাক হয়তো তাদের জীবন থেকে সকল সুখ শান্তি উঠিয়ে নিয়েছেন তাদের বেয়াদবির কারনে। যারা বলে দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী। আর পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারীরা কাফির।
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে আমার নামে মনগড়া মিথ্যা কথা বললো, সে দুনিয়াই থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারন করে নিলো। (বুখারী শরীফ ১১০)
সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে অসংখ্য ঈদ থাকার পরও যারা বলে দুই ঈদ ব্যাতীত ঈদ নাই তারা পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপকারী। কারন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই দুই ছাড়া আরো অনেক ঈদের কথা উল্লেখ করেছেন।
ক) যেমন পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমান গণ উনারদের জন্য ঈদের দিন। পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেঃ
عن حضرت عبيد بن السباق رضي الله عنه مرسلا قال قال رسول اللهصلي الله عليه و سلم في جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يومجعله الله عيدا
অর্থ : হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ননা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুআর দিন বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায় ! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন !” (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮, মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ عُبَيْدِ ابْنِ السَّبَّاقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي جُـمُعَةٍ مِنَ الْـجُمَعِ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا فَاغْتَسِلُوْا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهٗ طِيْبٌ فَلَا يَضُرُّهٗ اَنْ يـَّمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ
অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক পবিত্র জুমুআ উনার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআহ উনার দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদ উনার দিন সাব্যস্ত করেছেন। তাই তোমরা গোসল কর আর যার নিকট সুগন্ধি রয়েছে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য।” সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)
এই জুমুআর দিন কতবড় ঈদের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন জানেন কি ? দেখুন পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الـجمعة سيد الايام واعظمها عندالله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر
অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৩৭,মুজামুল কবীর তাবরানী ৪৫১১, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাকী : হাদীস ২৯৭৩, মিশকাত শরীফ)
এবার দেখূন কেন জুমুয়ার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত:
ان من افضل ايامكم يوم الـجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।’ (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫, তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ –কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)
দেখা যাচ্ছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, দুনিয়ায় আগমন, বিছাল শরীফ এর জন্য পবিত্র জুমুয়ার দিন এত শ্রেষ্ঠ যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতেও বেশি শ্রেষ্ঠ, এবং ঈদের দিন।
খ) সহীহ হাদীস শরীফ উনার দ্বারা প্রমানিত সম্মানিত আরাফার দিন ও ঈদের দিনঃ
عَنْ حَضْرَتْ عَمَّارِ بْنِ اَبِـي عَمَّارٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَرَاَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ (اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلاَمَ دِيْنًا) وَعِنْدَهٗ يَهُوْدِيٌّ فَقَالَ لَوْ اُنْزِلَتْ هٰذِهٖ عَلَيْنَا لَاتَّـخَذْنَا يَوْمَهَا عِيْدًا. قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ فَإِنَّـهَا نَزَلَتْ فِيْ يَوْمِ عِيْدٍ فِيْ يَوْمِ جُـمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ.
অর্থ : “হযরত আম্মার ইবনে আবূ আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদা ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। ……. (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)’ এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তখন উনার নিকট এক ইয়াহূদী ছিল, সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম। এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন ঈদ ছিলো- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন!” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ ৩৩১৮)
عَنْ حَضْرَتْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ الْيَهُوْدَ قَالُوْا لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنَّكُمْ تَقْرَءُوْنَ اٰيَةً لَوْ اُنْزِلَتْ فِيْنَا لَاتَّـخَذْنَا ذٰلِكَ الْيَوْمَ عِيْدًا. فَقَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنّـيْ لَاَعْلَمُ حَيْثُ اُنْزِلَتْ وَاَىُّ يَوْمٍ اُنْزِلَتْ وَاَيْنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيْثُ اُنْزِلَتْ اُنْزِلَتْ بِعَرَفَةَ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاقِفٌ بِعَرَفَةَ.
অর্থ : “হযরত তারিক ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদী লোকেরা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, আপনারা এমন একটি আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে থাকেন তা যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হতো, তবে এ দিনটিকে আমরা খুশির দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি জানি, ওই আয়াত শরীফ খানা কখন (কোথায়) ও কোন দিন নাযিল হয়েছিল। আর যখন তা নাযিল হয়েছিল তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায় অবস্থান মুবারক করছিলেন (তাও জানি)। পবিত্র আয়াত শরীফ খানা আরাফা উনার দিন নাযিল হয়েছে; নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন আরাফা উনার ময়দানেই অবস্থান মুবারক করছিলেন।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তাফসীর : হাদীছ শরীফ নং ৭২৪৪, নাসাঈ শরীফ শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : হাদীছ শরীফ নং ৩০০২, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৯০)
উক্ত হাদীস শরীফসমূহ উনাদের মধ্যে জুমুয়ার দিনের সাথে সাথে আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
গ) সহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত আইয়ামে তাশরীকের দিন ঈদের দিনঃ
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَوَيَوْمَ النَّحْرِ وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِعِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ
অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থ্যাৎ ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। (দলীল: নাসাঈ শরীফ কিতাবুল হজ্জ : হাদীস নম্বার ৩০০৪, আবু দাউদ – কিতাবুছ সিয়াম : হাদীস ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: হাদীস ৭৭৩)
ঘ) পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে মুসলমান গণ উনাদের জন্য প্রতি মাসে চারদিন বা পাঁচদিন ঈদের দিনঃ
لكل مؤمن في كل شهر اربعة اعياد اوخمسة اعياد
অর্থ : হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন মুসলমানদের, প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে।’ ( কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খন্ড – বাবু ছালাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া )
ঙ) রোজদারদের জন্য ইফতারের সময় ঈদের সময়ঃ
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ اٰدَمَ يُضَاعَفُ الْـحَسَنَةُ بِعَشْرِ اَمْثَالِـهَا اِلٰى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ اِلٰى مَا شَاءَ اللهُ يَقُوْلُ اللهُ اِلَّا الصَّوْمَ فَاِنَّهٗ لِيْ وَاَنَا اَجْزِيْ بِهٖ يَدَعُ شَهْوَتَهٗ وَطَعَامَهٗ مِنْ اَجْلِيْ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهٖ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبّهٖ وَلَـخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ اَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে রোযা ব্যতীত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রোযা আমার জন্য। আমি স্বয়ং রোযার প্রতিদান দিবো। বান্দারা আমার জন্য তাদের নফসানিয়ত ও পানাহার তরক করেছে। রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি। একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের সময়।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুস সাওম; মুসলিম শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ১১৫৩; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩৮; মিশকাত শরীফ, সুনানে নাসাঈ শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ২২১৫)
দেখুন, উক্ত হাদীস শরীফে রোজাদার দের জন্য দুটি ঈদ বা খুশির কথা বলা হইছে। একটা তার ইন্তেকালের পর আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে , ইফতার করার সময়।
ইফতার দুই প্রকার –
(১) ইফতারে কুবরা, (২) ইফতারে ছোগরা।
কুবরা হচ্ছে, ঈদুল ফিতর যা পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত। আর ছুগরা হচ্ছে, রোজাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকেন।
এটি প্রতিবছর ২৯ বা ৩০ দিন হয়ে থাকে। এছাড়া সুন্নত রোজা হিসাবে আরো রোজা রয়েছে, যেমন- মুহররম শরীফ মাসে ৯,১০ বা ১০,১১ তারিখ দুইটি রোজা এবং এর সাথে আরো ১ টি রাখা হয়, মোট ৩ টি। শাওয়াল শরীফ মাসে ৬ টি রোজা। যিলহজ্জ শরীফ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯ টি রোজা। এবং বাকি ১১ মাসে ৩টি করে সুন্নত রোজা , মোট ৩৩ টি রোজা।
এই রোজাদার দের প্রতিটি ইফতার হলো ঈদ। সুবহানাল্লাহ্!
আসুন আমারা মোট ঈদ সংখ্যা হিসাব করি —
বছরে ৫২ টি জুমাবার + ৫২ টি সোমবার শরীফ + আরফার দিন+ আইয়ামে তাশরীক ৩ দিন+ রমাদ্বান শরীফে ৩০ টি + বাকি ১২ মাসে ৩ করে ৩৪ টি + যিলহজ্জ শরীফ মাসে ৯ টি + মুহররম মাসে ২ টি + পহেলা রজব ১ টি + ২৭ শে রজব ১টি + ১৫ শাবান ১ টি = (৫২+৫২+৩০+১+৩+৩৩+৯+২+১+১)
= ১৮৪ টি ঈদ ! সুবহানাল্লাহ্ !
সূতরাং হাদীস শরীফ থেকেই ১৮৪ টা ঈদ প্রমাণিত হলো।
চ) এছাড়াও বিশেষ কোন নিয়ামত নাযিলের দিন ঈদের দিন:
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
অর্থঃ ঈসা ইবন মারিয়ম আলাইহিস সালাম বললেন- “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে খাদ্যসহ একটি খাঞ্ঝা নাযিল করুন। খাঞ্ঝা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্ঝাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আমাদের কে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। (সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
ছ) শবে বরাত শরীফ হচ্ছে ফেরশতা আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের ঈদের দিন:
“লাইলাতুর বরাত ও লাইলাতুল কদর হচ্ছে ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের জন্য ঈদের দিন” (গুনিয়াতুত ত্বলেবীণ ৩৬৫ পৃষ্ঠা)
জ) দুইয়ের অধিক ঈদের কথা একসাথে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে:
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيّنُوا اَعْيَادَكُمْ بِالتَّكْبِيْرِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর ধ্বনী দ্বারা সৌন্দর্য্যমন্ডিত করো।” (আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫০৯)
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য হাদীস শরীফ উনার মধ্যে اعياد (আইয়াদ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর اعياد (আইয়াদ) শব্দ ঈদ عيد শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ একটি ঈদকে আরবীতে বলা হয়عيد (ঈদ) দু’টি হলেعيدان (ঈদাইনে) আর দু’য়ের অধিক ঈদকে বলেاعياد (আইয়াদ) । সূতরাং হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত আইয়াদ শব্দ দ্বারা প্রমানিত হলো দুই ঈদের বেশি ঈদ রয়েছে। অতএব হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দ চয়নই প্রমাণ করে ঈদ দু’য়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অসংখ্য হতে পারে।
এই পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই দেখা গেলো, এক হাদীস শরীফেই তিনটা ঈদের কথা বলা হয়েছে। এখন বলুন কিভাবে বলা যায় দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই? একমাত্র চরম স্তরের মূর্খ ছাড়া কেউ বলতে পারে না যে দুই ঈদের ব্যতীত আর ঈদ নাই।
অতএব প্রমানিত হলো যে, শরীয়তে দুই ঈদ ব্যতীত আরো অনেক ঈদ আছে! যা পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারাই প্রমানিত সুতরাং যারা বলে, দুই ঈদ ব্যতীত আর ঈদ নাই তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফের খেলাফ ও কুফরীমূলক প্রমানিত হলো।
=================================================
এক শ্রেনীর বাতিল ফিরকার লোক পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অর্থাৎ সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্বীকার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে একটা প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে থাকে। তারা বলে থাকে, “নবীজী(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম) উনার বিছাল (ইন্তিকাল) শরীফ দিবস হচ্ছে দুঃখের দিন,আর দুঃখের দিনে খুশি প্রকাশ করাটা নাকি অন্যায়।”নাউযুবিল্লাহ।
প্রকৃত বিষয় হচ্ছে বাতিল ফির্কাদের এই বক্তব্যটা সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র হাদীস শরীফ উনাদের খেলাফ হওয়ায় তা কুফরী মূলক হয়েছে। কেননা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ( ইন্তেকাল),পুনরুত্থান প্রত্যকটি রহমত,বরকত,ঈদ বা খুশি মুবারক প্রকাশের কারন। সুবহানাল্লাহ্।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিষয়ে ইরশাদ মুবারক করেন ,
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : উনার প্রতি সালাম ( শান্তি), যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন !” (সূরা মারইয়াম শরীফ: আয়াত শরীফ ১৫)
অনুরুপ হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা তিনি নিজেই বলেন-
وَالسَّلَامُ عَلَىَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ اَمُوْتُ وَيَوْمَ اُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ : আমার প্রতি সালাম বা শান্তি যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি , যেদিন পুনুরুত্থিত হবো!” (সূরা মারইয়াম শরীফ: আয়াত শরীফ ৩৩)
উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় থেকে আমরা জানতে পারলাম, নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের বিছাল শরীফের(ইন্তেকাল) দিবসও শান্তির দিন।
আর পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন –
عن ابن مسود رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي عليه و سلم حياتيخير لكم و مماتي خير لكم
অর্থ : আমার হায়াত-বিছাল (ইন্তেকাল) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ বা উত্তম বা খায়ের বরকতের কারন।” (দলীল- কানযুল উম্মাল শরীফ : হাদীস ৩১৯০৩, জামিউছ ছগীর ৩৭৭০, শিফা শরীফ ২য় খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা) উক্ত হাদীস শরীফদ্বয়ের সনদ সহীহ। দেখা গেল উক্ত হাদীস শরীফ উনার মধ্যে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং ইরশাদ মুবারক করতেছেন, উনার বিছাল শরীফ এর দিনও কল্যাণময়।
এছাড়া পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে —
ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ : তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে, জুমুয়ার দিন। এদিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এদিনেই তিনি বিছাল (ইন্তেকাল) শরীফ লাভ করেন !” (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫,তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ – কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)
অতপর এই জুমুয়ার দিন ঈদের দিন ঘোষনা করে ইরশাদ মুবারক হয়েছে —
انهذايوم جعله اللهعيدا
অর্থ : এ জুমুয়ার দিন হচ্ছে এমন একটি দিন, যেদিনকে মহান আল্লাহ পাক ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।” (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮,মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীস শরীফ থেকে প্রমানিত হলো জুমুয়ার দিন আল্লাহ পাক এর নবী এবং রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সে দিনটিকে খুশির দিন হিসাবে নিদৃষ্ট করে দিয়েছেন। এবং স্বয়ং নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
এখন বাতিলপন্থী ওহাবী/ দেওবন্দীরা কি বলবে যে, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছাল শরীফ উনার দিন ঈদ পালন করতে বলে অন্যায় করেছেন ?? নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক। তারা কখনোই হা বলতে পারবে না , কারন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন এবং বিছাল শরীফ উভয়ই খুশি বা ঈদের দিন ! যারা শোকের বা কষ্টের দিন বলবে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
এছাড়াও সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা হচ্ছে কারো ইন্তেকালের পর তিন দিনের বেশি শোক প্রকাশ করা যাবে না। যে বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمّ عَطِيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا قَالَتْ كُنَّا نُنْهٰى اَنْ نُـحِدَّ عَلٰى مَيّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ اِلَّا عَلٰى زَوْجٍ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَّعَشْرًا.
অর্থ : “হযরত উম্মু আতিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কারো ইন্তিকালে তিন দিনের পর আর শোক প্রকাশ করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে স্বামীর জন্য আহলিয়া চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে।” (মুয়াত্তা মালিক শরীফ, বুখারী শরীফ : কিতাবুত তালাক : হাদীছ শরীফ নং ৫৩৪১, মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তালাক : হাদীছ শরীফ নং ১৪৯৩, আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
সূতরাং দেখা গেলো ইন্তেকালের ৩ দিন পর আর শোক পালন করা যাবে না। যদি কেউ কারো ইন্তেকালের ৩ দিন পরও শোক পালন করে সেটা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাপ হবে। হাদীস শরীফ উনার বিরোধীতা হবে। আর সবচাইতে বড় কথা হলো হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হচ্ছেন হায়াতুন্নবী। উনি পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে জীবীত রয়েছেন। উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উপলক্ষে শোক প্রকাশ স্পষ্ট গোমরাহী ও হায়াতুন্নবী অস্বীকার করার নামান্তর।
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَلاَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَحْيَاءُ فِيْ قُبُوْرِهِمْ يُصَلُّوْنَ
অর্থ : “হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের রওযা শরীফ উনাদের মধ্যে জীবিত, উনারা নামায আদায় করেন।’’ (আবূ ইয়ালা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪২৫, হায়াতুল আম্বিয়া লিল বাইহাকী ১ম খ- ৭৩ পৃষ্ঠা)
“শহীদগণ যেহেতু দলীলের ভিত্তিতে জীবীত প্রমাণিত, কোরআন শরীফ উনার মধ্যে তার সুষ্পষ্ট র্বণনা আছে, সুতরাং নবীগণ জীবিত থাকবেন। কারণ উনারা শহীদগণ হতে উত্তম।’’ (ফাতহুল বারী-৬/২৮৮)।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ اَنَّ اللهَ تَعَالٰى حَرَّمَ عَلَى الْاَرْضِ اَنْ تَأْكُلَ اَجْسَادَ الْاَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَنَبِىُّ اللهِ حَىٌّ يُرْزَقُ
অর্থ : হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক যমীনের উপর ভক্ষণ করা হারাম করেছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩৬, সুনানে দারীমী : হাদীছ শরীফ নং ১৫৭২, মিশকাত শরীফ, জালাউল আফহাম ৬৩ পৃষ্ঠা, তাযকিরাতুল হুফফাজ : হাদীছ শরীফ নং ১০৮৫)
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে –
اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ قَبْرِه حَىٌّ
অর্থ : “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রওযা মুবারকে জীবিত অবস্থায়ই আছেন।” (মিরকাত শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন –
لَيْسَ هُنَا مَوْتٌ وَلَاَفَوْتٌ بَلْ هُوَ اِنْتِقَالٌ مّنْ حَالٍ اِلٰى حَالٍ وَاِرْتِـحَالٌ مّنْ دَارٍ اِلٰى دَارٍ وَاِنَّ الْـمُعْتَقَدَ الْـمُحَقَّقَ اِنَّه حَىٌّ يُرْزَقُ
অর্থ : “এখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য মৃত্যুও নেই, নিঃশেষ হওয়াও নেই। বরং এক শান মুবারক হতে অন্য শান মুবারক উনার দিকে স্থানান্তরিত হওয়া এবং এক মুবারক ঘর হতে অন্য মুবারক ঘরে হিজরত করা। নিশ্চিত বিশ্বাস এই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াত মুবারক-এ (জীবিত) আছেন এবং সম্মানিত রিযিকপ্রাপ্ত হচ্ছেন।” (শরহুশ শিফা শরীফ ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৫২, মিরকাত শরীফ)
শুধু তাই নয়, দেওবন্দীদের মুরুব্বী মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন লিখেছে,
হযরত আবুল মাওয়াহেব শাযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন- একবার স্বপ্নযোগে হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাৎলাভ করলাম। তিনি নিজের সম্পর্কে বললেন- আমি মৃত নই। আমার পরলোক গমনের বিষয়টা এরূপ যে, যারা আল্লাহ প্রদত্ত রূহানী জ্ঞান থেকে বঞ্চিত,আমি তাদের দৃষ্টির আড়ালে পরলোকবাসী। কিন্তু যারা আল্লাহর দেওয়া রূহানী জ্ঞান রাখে, তাদের মধ্যে আমি জীবিতই রয়েছি। আমি যেমন তাদের দেখতে পাই তারাও আমার সাক্ষাৎলাভ করে। [তবক্কাতুল কোবরা] (দলীল- স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬৮ পৃষ্ঠা, মদীনা পাবলিকেশান্স)
উক্ত হাদীস শরীফ উনার আলোকে প্রমাণ হলো সকল নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগন উনারা পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে জীবীত। সকল নবীদের নবী রসূলদের রসূল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওজা শরীফ উনার মাঝে জীবীত। তাহলে কি করে বলা যেতে পারে যে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ শোকের দিন। নাউযুবিল্লাহ!! যিনি হায়াতুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কি করে শোক দিবস পালন করা যেতে পারে? যারা হায়াতুন্নবী মানে না,সহীহ হাদীস শরীফ উনাকে অস্বীকারকারী, তারাই বলে থাকে ১২ ই রবিউল শরীফ শোকের দিন।
অতএব, সম্মানিত শরীয়ত উনার অকাট্য দলীল আদীল্লার দ্বারা প্রমান হলো, কারো পক্ষে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ এর দিন ১২ই রবীউল আওয়াল শরীফ উনাকে শোকের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা সম্ভব নয় !!
যারা শোকের কথা বলবে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ এবং পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অস্বীকার করে ঈমানহারা হবে !
তাই আখেরী রসূল, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনাকে নিয়ামত মনে করে উক্ত দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করতে হবে !
=================================================
পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করা তথা ঈদ পালন করা ফরজ।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, শাফেউল মুজনেবীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হচ্ছেন সমস্ত কায়িনাত বা সৃষ্টি জগতের মূল উৎস। তিনি মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার সকল নিয়ামত মুবারক উনার উৎস। উনার সন্তুষ্টি মুবারক ব্যতিত মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। উনাকে যে ব্যক্তি মুহব্বত মুবারক করে মহান আল্লাহ পাকে তাকে মুহব্বত করেন। আর উনাকে মুহব্বত মুবারক না করে কারো পক্ষে মু’মিন হওয়া কষ্মিনকালেও সম্ভব নয়।
এই বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন-
لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ وفي رواية من ماله و نفسه
অর্থ: “কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান সন্তুতি, এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি মুহব্বত না করবে। অন্য বর্ননায় এসেছে, তার ধন সম্পদ এবং জীবনের চাইতে বেশি মুহব্বত না করবে।”
(বুখারী শরীফ ১/৭-কিতাবুল ঈমান- হাদীস নম্বর ১৪ এবং ১৫)
এই পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই বুঝা গেলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছুর চাইতে বেশি মুহব্বত করাই হচ্ছে ঈমান। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে উনার আগমন উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করাটাই হচ্ছে ঈমানদাগণ উনাদের বৈশিষ্ট্য। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই, খুশি প্রকাশ করেন সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা, এক কথায় সমস্ত সৃষ্টি জগৎ।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার দিন সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো কে জানেন? সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো ইবলিশ শয়তান । সে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, কষ্টে সে রীতিমত কান্না করছে।
حكى السهيلي عن تفسير بقي بن مخلد الحافظ : أن إبليس رن أربع رنات; حين لعن ، وحين أهبط ، وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وحين أنزلت الفاتحة
“শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল ,প্রথম বার যখন মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন; দ্বিতীয়বার যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়। তৃতীয়বার, যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত(আগমণ) শরীফ হয়। এবং চতুর্থবার যখন সূরা ফাতেহা শরীফ নাযেল হয়।”
(দলীল: আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২য় খণ্ড ২৬৬, ২৬৭,পৃষ্ঠা লেখক: আবুল ফিদা হাফিজ ইবনে কাছির আদ দামেষ্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি। প্রকাশনা: মাকতাবাতুল মা’রেফা, বয়রুত লেবানন।)
‘ঈদ’(عيد) অর্থ খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা। আর ‘মীলাদ’(ميلاد) অর্থ জন্মের সময় বা দিন। ‘আন নাবিইয়্য’(النبى) শব্দ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়। কাজেই আভিধানিক অর্থে ‘ঈদু মীলাদিন নাবিইয়ি’(عيد ميلاد النبى) বলতে নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-উনার সম্মানার্থে বেলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করাকেই বুঝায়।
আর পারিভাষিক অর্থে ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবস উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করা, উনার ছানা-ছিফত, ফাযায়িল-ফযীলত, শান-মান মুবারক বর্ণনা করা, উনার প্রতি ছলাত-সালাম ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা, উনার পূত পবিত্রতম জীবনী মুবারক-উনার সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনা মুবারক কে বুঝায়।
এবার দেখুন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন প্রসঙ্গে মু’মিন মুসলমানদের কি আদেশ মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ : হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি উম্মাহকে বলে দিন , মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুবারক উনার সজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এ খুশি প্রকাশ করাটা সবচাইতে উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করে রাখে !” (পবিত্র সূরা ইউনূছ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসিরে বিখ্যাত মুফাসসির, সমগ্র মাদ্রাসায় যিনার তাফসীর পড়ানো হয়, হাফিযে হাদীস, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন–
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ فِي الْاٰيَةِ فَضْلِ اللهِ اَلْعِلْمُ وَ رَحْـمَتِه مُـحَمَّدٌ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالٰي وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْـمَةً لّلْعٰلَمِيْنَ
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসিরে এখানে আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বলতে ‘ইলিম’ বুঝানো হয়েছে। আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে ‘হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনাকে। যেমন, আল্লাহ পাক বলেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।”
দলীল-
√তাফসীরে দূররুল মানছুর –১০নংসূরা–১১পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮আয়াত।
√তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী।
√তাফসীরে কবীর।
তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৬ষ্ঠ খন্ড ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য রয়েছে,
اخرج ابو الشيخ عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الفضل العلم و الرحمة محمد صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আবুশ শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত “নিশ্চয়ই “ফদ্বল” দ্বারা উদ্দেশ্য ইলম, আর ‘রহমত’ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”।
তাহলে দেখা যাচ্ছে ঈদ পালন করাটা মহান আল্লাহ পাক উনারই আদেশ। আর আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।
এই বিষয়ে ঊছুলে ফিক্বাহ উনার সমস্ত কিতাবেই উল্লেখ আছে যে,
الامر للوجوب
অর্থাৎ আদেশসূচক বাক্য দ্বারা সাধারণত ফরয-ওয়জিব সাব্যস্ত হয়ে থাকে। যেমন উছুলুশ শাশী কিতাবের ‘কিতাবুল্লাহ’ অধ্যায়ের ‘আমর’ পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে,
والصحيح من المذهب ان موجبه الوجوب
অর্থ: “ আমাদের হানাফী মাযহাবের বিশুদ্ধ মত হলো- নিশ্চয় কুরআন শরীফ- এর আমর বা নিদর্শনগুলো পালন করা ফরজ বা ওয়াজিব। যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اقيموا الصلوة
অর্থাৎ “তোমরা নামায আদায় করো।” পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই পবিত্র নামায ফরয সাব্যস্ত হয়েছে।
অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
واعفوا للحى
অর্থাৎ “তোমরা (পুরুষরা) দাড়ি লম্বা করো।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয সাব্যস্ত হয়েছে।
তদ্রুপ সূরা ইউনূছ শরীফ উনার ৫৮নং আয়াত শরীফ উনার فليفرحوا বা খুশি মুবারক প্রকাশ করা বা ঈদ পালন করো এটা আদেশ সূচক বাক্য। এ আদেশ মুবারক এর দ্বারাই খুশি মুবারক প্রকাশ করা বা ঈদ পালন করা ফরজ ও ওয়াজিব প্রমানিত হয়। সুবহানাল্লাহ্ !
এছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ পাক ঈদ পালন করতে বলেছেন, উনার প্রদত্ত নিয়ামতক মুবারক স্মরন করতে বলেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ
অর্থ :“তোমাদের যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরন কর।” (সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
প্রশ্ন হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে বড় নিয়ামত কি ?
এ ব্যাপারে সমস্ত জগৎবাসী একমত যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সবচাইতে বড় নিয়মত হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি” শুধু তাই নয় সমস্ত জাহানের সকল নিয়মাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই হাদীয়া মুবারক করা হয়েছে। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন “আননি’মাতিল কুবরা আলাল আলাম”। অর্থাৎ, সমস্ত কায়িনাতের সবচাইতে বড় নিয়ামত। সুবহানাল্লাহ্ !
মহান আল্লাহ পাক সূরা আল ইমরান শরীফ উনার ১০৩ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সেটাই বলছেন, তোমাদের যে নিয়ামত ( হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামত উনার যিকির করো, স্বরন করো, আলোচনা করো, খুশি প্রকাশ করো। সুবহানাল্লাহ্ !
সূতরাং উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমেই বুঝা যাচ্ছে, সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে উনার স্বরনে খুশি মুবারক প্রকাশ করা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক।
আর বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তির দিন যে ঈদের দিন সেটা স্পষ্ট কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই আছে। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
অর্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা।( পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ১১৪)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত হয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে একটি খাঞ্চা ভর্তি খাবার চাইলেন, এবং এই নিয়ামত পূর্ন খাবার নাযিল হওয়ার দিনটা উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরুপ হবে বললেন। এই খাদ্য সহ খাঞ্চা নাযিল হওয়ার দিন যদি ঈদের দিন হয়, তাহলে সমগ্র জগৎ এর নিয়ামত, সকল নিয়ামতের মূল,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন এর দিন মুবারক কি ঈদ হবেনা? এই দিনে কি খুশি করা যাবে না ??
অবশ্যই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিন ঈদ হবে, শুধু তাই না বরং কুল কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ তথা ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ হবে। সুবহানাল্লাহ্ !!
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ,সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মুবারক উনার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এবং উনার আগমন মুবারক উপলক্ষে শুকরিয়া আদায় এবং ঈদ পালন করার কথা স্পষ্ট বর্ননা করা হয়েছে !
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার প্রিয়তম হাবীব, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন সম্পর্কে অনেক আয়াত শরীফ নাজিল করেছেন। যেমন,
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ◌ لِّتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
অর্থ : “হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনো এবং তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, সম্মান মুবারক করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ :পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ : তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান,মু’মিনদের প্রতি স্নেহশীলএবং দয়ালু।” (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৮)
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ :“হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
অর্থ :“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শোনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا◌ وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا
অর্থ : “হে আমার হবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভয় প্রদর্শনকারী এবং আমার নির্দেশে আমার দিকে আহ্বানকারী ও নূরানী প্রদীপ রুপে প্রেরন করেছিঅ” ( পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ :পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৫,৪৬ )
قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
অর্থ :“নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এক মহান নূর ( হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন।” (পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী- রসূল আলাইহিমুস সালামগন উনাদের থেকে এ মর্মে ওয়াদা নিলেন যে, আমি আপনাদের কিতাব ও হিকমত হাদিয়া করবো। অতঃপর আপনাদের প্রদত্ত কিতাবের সত্য প্রতিপাদনকারী হিসাবে একজন রসূল (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করবেন ! আপনারা অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত করবেন ! মহান আল্লাহ পাক বললেন, আপনারা কি আমার এ ওয়াদা স্বীকার ও গ্রহণ করলেন ? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম”
(পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত শরীফে রহমাতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে ! আর উনার আগমন উপলক্ষে ঈদ পালন করার কথা স্পষ্ট ভাবে কুরআন শরীফে ঘোষণা করে দিয়েছেন —
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مّن رَّبّكُمْ وَشِفَاءٌ لّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْـمَةٌ لّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ দূরকারী, মহান হিদায়েত ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করো। তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো তিনিই হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭- ৫৮)
তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৬ষ্ঠ খন্ড ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য রয়েছে,
اخرج ابو الشيخ عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الفضل العلم و الرحمة محمد صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আবুশ শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত “নিশ্চয়ই “ফদ্বল” দ্বারা উদ্দেশ্য ইলম, আর ‘রহমত’ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”।
এ আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হাফিজে হাদীস, ইমামুল মুফাসসিরিন জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বরাত দিয়ে বলেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ فِي الْاٰيَةِ فَضْلِ اللهِ اَلْعِلْمُ وَ رَحْـمَتِهٖ مُـحَمَّدٌ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالٰي وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْـمَةً لّلْعٰلَمِيْنَ
অর্থ : উক্ত আয়াত শরীফে অনুগ্রহ বলতে ইলমকে বুঝানো হয়েছে এবং রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ! যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, আমিতো আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি !””
দলীল-
√তাফসীরে দূররে মানছুর
√তাফসীরে রুহুল মায়ানী !
√তাফসীরে কবীর।
কুরআন শরীফ উনার সরাসরি পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দলীল দ্বারাই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমান হলো! কারন মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মুবারক উনার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেই আগমন উপলক্ষে ঈদ পালন করতে বলেছেন সুবহানআল্লাহ !!
শুধু তাই নয় স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফের সু সংবাদ পূর্ববর্তী নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে দান করেছেন !
কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়-
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ
অর্থ :“হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফে আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূল উনার সুসংবাদ দানকারী যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
এ আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের মীলদ শরীফ সম্পর্কে বলেন–
“আমি তোমাদের আমার পূর্বের কিছু কথা জানাবো! তা হলো- আমি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া আমি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ ও আমার মাতার সুস্বপ্ন ! আমার বিলাদতের সময় আমার মাতা দেখতে পান যে, একখানা নূর মোবারক বের হয়ে শাম দেশের রাজ প্রসাদ সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে।”
দলীল-
√মুসনাদে আহমদ ৪র্থ খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা !
√মুস্তদরেকে হাকিম ২য় খন্ড ৬০১ পৃষ্ঠা !
√মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা !
উপরোক্ত আয়াত শরীফ থেকে আমরা দেখতে পেলাম স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুসংবাদ দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের মীলাদ শরীফ উনার বর্ননা দিলেন।সুবহানাল্লাহ্ !!
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন –
اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ
অর্থ : “তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্বরন করো।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
অর্থ : “আপনার রব উনার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।”( পবিত্র সূরা আদ্ব দ্বুহা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)
উক্ত নিয়ামত সমূহের ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
“আল্লাহ পাক উনার কসম ! তারা ( যারা নবীজী উনার বিরোধীতা করেছিলো) কুরায়িশ কাফির আর হযরত সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত !” (বুখারী শরীফ ১/২২১)
আর নিয়ামত পূর্ন দিন সমূহ স্বরন করা বা আলোচনা করার বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরোদ মুবারক হয়েছে–
وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
অর্থ : “আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করান। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল শোকরগুযার বান্দাদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।”
(পবিত্র সূরা ইব্রাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করা এবং এ দিবসে খুশি প্রকাশ করার কথা সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার থেকে প্রমান হলো।
সুতরাং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন দিবসে ঈদ পালন করা, উনার আলোচনা মুবারক করা,পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে অকাট্যভাবে প্রমানিত হলো।
সুবহানাল্লাহ্।
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা সর্বশ্রেষ্ট ঈদ,ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা কখনোই বিদয়াত বা নতুন বিষয় নই, যারা বিদয়াত বলে, তারা তাদের জিহালতের কারনেই বলে থাকে।
মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার ঈদে মীলাদে (হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করেছেন। উনার পবিত্র বিলাদত শরীফের বার হচ্ছে ইয়াওমুল ইছনাইন বা সোমবার। এই দিনে শুকরিয়া আদায় করে তিনি রোজা রাখতেন। অর্থাৎ মীলাদে হাবীবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করেছেন।
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيْثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.
অর্থ : “হযরত আবূ ক্বাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী মুবারক বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২২৬০৩)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার থেকে জানা যায় যে, পবিত্র সোমবার শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক ও আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ লাভের দিন। এই দিনে রোযা রাখার ইঙ্গিত অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে।
এর থেকেও প্রমাণিত হয় যে, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং বরকতী বিশেষ দিন সমূহের দিন খুশি প্রকাশ করা বা তা পালন করতে হবে। কারন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার আগমনের বারে শুকরিয়া আদায় করে রোজা রাখতেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে নিজেই নিজের আগমন দিবস পালন করেছেন।
আর এই রোজা রাখাকে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ পালনের ভিত্তি হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সূয়ূতি রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। নিম্নে সে দলীল উল্লেখ করা হয়েছে:
“আর স্থান ও কালের ফযীলতের ভিত্তি হচ্ছে ওইগুলোতে সম্পনকৃত ইবাদতসমূহ, যেগুলো আল্লাহ্ পাক ওইগুলোর সাথে, অর্থাৎ ওই কাল ও স্থানগুলোর সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। কেননা, একথা সর্বজন বিদিত যে, স্থান ও কালের মহত্ব (বুযুর্গী) তো (কখনো) ওইসব সত্তা থেকে হয় না বরং সেগুলোর এসব বুযুর্গী ওইগুলোর অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যাদি (অথবা সম্পর্ক ইত্যাদি)’র কারণেই অর্জিত হয়ে থাকে, যেগুলোর সাথে এ স্থান ও কাল নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। এখন আপনারা ওইসব বৈশিষ্ট্য ও বরকতরাজি দেখুন, যেগুলো আলাহ্ তা‘আলা রবিউল আউয়াল মাস ও সোমবারের সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। আপনি কি দেখেননি যে, সোমবার রোযা রাখলে বড় ফযীলত রয়েছে? কেননা, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বেলাদত শরীফ এ দিনে হয়েছে। সুতরাং যখন এ মাস আসে, তখন এ মাসের উপযোগী সম্মান প্রদর্শন ও গুরুত্ব প্রদান করা, আর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –উনার অনুসরণ করা উচিৎ। কারণ, উনার পবিত্র অভ্যাস ছিলো যে, তিনি ফযীলতমণ্ডিত সময়গুলোতে বেশী ইবাদত করতেন এবং অধিক পরিমাণে দান-খায়রাত করতেন।
প্রসঙ্গে আমি (ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূত্বী) ও মীলাদের (বৈধতার) জন্য একটি মূলনীতি বের করেছি। তাহচ্ছে- ইমাম বায়হাক্বী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) হযরত আনাস রাদ্বিয়ালাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুবূয়ত মুবারক প্রকাশের পর নিজের আক্বীক্বা মুবারক করেছেন, অথচ উনার সম্মানিত দাদা হযরত আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বেলাদত শরীফের সপ্তম দিনে উনার আক্বীকা মুবারক করেছিলেন। আর আক্বীক্বা দ্বিতীয়বার করা যায় না। সুতরাং এই আক্বীকা মুবারকের কারণ এটা বলা যাবে যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য তা করেছেন যে, তিনি তাঁকে‘রাহমাতাল্লিল আ-লামীন’ (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) করেছেন এবং উম্মতের জন্য উনার বেলাদত শরীফের উপর আলাহর শোকর আদায় করাকে শরীয়তসম্মত করার জন্য পুনরায় আক্বীক্বা মুবারক করেছেন।
যেমন তিনি স্বয়ং নিজের উপর দুরূদ পাঠ করতেন। সুতরাং আমাদেরও উচিত হবে মীলাদে পাকে লোকজনকে জমায়েত করে, তাদেরকে খানা খাইয়ে এবং অন্যান্য বৈধপন্থায় খুশী মুবারক প্রকাশ করে মহামহিম আল্লাহ পাক পাক উনার শুকরিয়া আদায় করা।
হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র আশুরা শরীফ উনার দুই রোজাকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ভিত্তী হিসাবে দলীল দিয়েছেন। তিনি বলেছেন শুকরিয়া স্বরূপ এ রোজা রাখা হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের শুকরিয়া বিভিন্ন ভাবে করা যায়। রোজা রেখে, সিজদা করে, তিলওয়াত করে, দান ছদকা করে। আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সবচাইতে বড় নিয়ামত মুবারক।” (হুসনুল মাকাছিদ ফি আমালিল মাওলিদ ৬৩, আল হাবী লিল ফতওয়া ১০৫, সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১ম খন্ড ৩৬৬ পৃষ্ঠা, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন ২৩৭ পৃষ্ঠা)
সূতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশী মুবারক প্রকাশ করে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত তো নয়ই বরং খাছ সুন্নাত মুবারক হিসেবেই প্রমানিত হলো।
=================================================
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন কোন আমল নয়। জেনে রাখুন স্বয়ং আখেরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার বিলাদত শরীফ আলোচনা করেছেন।
পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ان الله خلق الخلق فاختار من الخلق بنى ادم عليه السلام، واختار من بين ادم العرب، واختار من العرب مضر، واختار من مضر قريشا، واختار من قريش بنى هاشم، واختارنى من بنى هاشم فانا من خيار الى خيار
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন মাখলূক সৃষ্টি করেন তখন সব মাখলুকের মধ্যে বনী আদম উনাদেরকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনীত করেন। বনী আদমের মধ্যে আরবকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে পছন্দ করেন। আরবের মধ্যে মুদ্বারকে, মুদ্বারের মধ্যে কুরাইশকে, কুরাইশ-এর মধ্যে বনী হাশিমকে এবং বনী হাশিম-এর মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মনোনীত করেন। নিশ্চয়ই আমি সর্বোত্তমের মধ্যে সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ!
(বায়হাক্বী শরীফ, ত্ববরানী শরীফ, খাছায়িছুল কুবরা, আবূ নায়ীম)
عن العباس رضى الله تعالى عنه انه جاء الى النبى صلى الله عليه و سلم فكانه سمع شيئا فقام النبي صلى الله عليه و سلم على المنبر فقال من انا ؟ فقالوا انت رسول الله فقال انا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب عليهما السلام. ان الله خلق الخلق فجعلنى فى خيرهم ثم جعلهم فرقتين فجعلنى فى خيرهم فرقة ثم جعلهم قبائل فجعلنى فى خيرهم .قبيلة ثم جعلهم بيوتا فجعلنى فى خيرهم بيتا فانا خيرهم نفسا وخيرهم بيتا
অর্থ: হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমীপে উপস্থিত ছিলাম। ইতোপূর্বে কোনো কোনো লোক আমাদের বংশ মর্যাদা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলো। সম্ভবত এ সংবাদ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক কর্ণগোচর হয়েছিলো। এ সময় উনার দরবার শরীফ-এ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে আরোহণ করতঃ উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে?” তখন সকলে সমস্বরে উত্তর দিলেন, “আপনি হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “আমি হচ্ছি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পুত্র, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পৌত্র। মহান আল্লাহ পাক আমাকে কুল-মাখলূকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, মাখলূকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গোত্র কুরাইশ খান্দানে এবং কুরাইশ গোত্রের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হাশেমী শাখায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাত মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘর মুবারক এ আমাকে প্রেরণ করেছেন।” (তিরমীযী শরীফ: হাদীস শরীফ ৩৫৩২, মুসনাদে আহমদ: হাদীস ১৭৯১ মিশকাত, মিরকাত, ১১/৫৭, আহমদ, কানযুল উম্মাল/২১৯৪৭)
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ قَسَّمَ الْـخَلْقَ قِسْمَيْنِ فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهِـمَا قِسْمًا ثُـمَّ جَعَلَ الْقِسْمَيْنِ اَثْلَاثًا فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا ثُلُثًا ثُـمَّ جَعَلَ الْاَثْلَاثَ قَبَائِلَ فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا قَبِيْلَةً ثُـمَّ جَعَلَ الْقَبَائِلَ بُيُوْتًا فَجَعَلَنِىْ فِىْ خَيْرِهَا بَيْتًا فَذٰلِكَ قَوْلُهٗ تَعَالـٰى اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُـمْ تَطْهِيْراً فَاَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম ভাগে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উভয় ভাগকে তিন প্রকারে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম প্রকারে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর প্রত্যেক প্রকারকে গোত্রে গোত্রে বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম গোত্র মুবারক-এ রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর গোত্রকে সম্মানিত আহাল বা পরিবার মুবারক-এ বিভক্ত করে আমাকে সর্বোত্তম মহাসম্মানিত আহাল বা পরিবার মুবারক-এ রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘হে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।’ সুবহানাল্লাহ! আর আমি এবং আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা অর্থাৎ আমরা সকলেই যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বায়হাক্বী, আশ শিফা ১/৩২৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৪২, আল মা’রিফাতু ওয়াত তারীখ ১/৪৯৮, খছাইছুল কুবরা ১/৬৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৫ ইত্যাদি)
সুতরাং সহীহ হাদীস শরীফ থাকার পরও যারা বিরোধীতা করে, সুন্নতকে বিদয়াত বলে তাদের ঈমান অছে কিনা আপনাদের কাছে প্রশ্ন রইলো…….!
=================================================
উত্তর: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার সুমহান বিলাদত শরীফ সর্ম্পকে আলোচনা করেছেন-
দেশের সকল মাদ্রাসাসমূহে পঠিত হাদীছ শরীফ-এর বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “মেশকাতুল মাছাবীহ এর ৫১৩ পৃষ্ঠায় “ ফাযায়েলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ” নামক অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
عن حضرت عرباض بن سارية رضى الله تعالى عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال انى عبد الله وخاتم النبيين وان آدم لمنجدل فى طينته وسأخبركم عن ذلك دعوة أبى ابراهيم عليه السلام وبشارة حضرت عيسى عليه السلام ورؤيا امى التى رأت، وكذلك امهات النبيين يرين، وأن ام رسول الله صلى الله عليه وسلم رأت حين وضعته نورا أضاءت له قصور الشام
অর্থ: “হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি তখন থেকে আল্লাহ পাক উনার আবদ তথা হাবীব এবং আমি খাতামুন নাবিইয়ীন তথা আখিরী নবী নিশ্চয়ই যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি মৃত্তিকায় অবস্থান করছিলেন। তোমাদের নিকট খবর পৌঁছেছে ওই ব্যাপারে যে আমি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া মুবারক, আমি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ এবং আমি আমার মা (হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম) উনার স্বপ্ন মুবারক। যা আমার সম্মানিত মা জননী তিনি মুবারক স্বপ্ন দেখেছেন অনুরূপ স্বপ্ন হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জননীগণ উনারাও দেখেছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ক্ষনে উনার সম্মাণিত মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি এক নূর মুবারক দেখতে পান। সেই নূর মুবারক-এর আলোয় শাম তথা সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ আলোকিত হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ!
(সহীহ ইবনে হিব্বান: হাদীস ৬৪০৪, মুসতাদরেকে হাকীম: হাদীস ৩৬২৩, সিয়ারু আলামীন আননুবুলা পৃষ্ঠা ৪৬, মুসনাদে তয়লাসী: হাদীস ১২৩৬, মুসনাদে বাযযার ৪১৯৯, দালায়েলুন নুবুওওয়াত-১ম খন্ডের ৮৩ পৃষ্ঠা ,শোয়াবুল ঈমান-২য় জিঃ, ১৩৪ পৃষ্ঠা, শরহুসসুন্নাহ ও মসনদে আহমাদ)
নিম্নে কতিপয় কিতাবের নাম দেয়া হলো:
1. দালায়েলুন নবুওয়াত লি ইমাম বায়হাক্বী
2. সহীহ ইবনে হিব্বান
যেখানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই নিজের পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার আলোচনা মুবারক করেছেন, সেখানে আমরা করলে এটা বিদয়াত হবে কেন?
=================================================
মহান আল্লাহ পাক বলেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থ:“হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করো। এই খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে সব কিছুর চাইতে উত্তম।” (পবিত্র সূরা ইউনূছ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
আমরা মু’মিন মুসলমান, নবীজীর আশেকগন এই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত “অনুগ্রহ ও রহমত’ বলতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বুঝে থাকি। বাতিল ফির্কা তখন দলীল দেয় অনেক মুফাসসির তো এই আয়াতে “অনুগ্রহ ও রহমত” বলতে ১)কুরআন শরীফ ২)ইসলাম, ৩)ইলম, ৪)হেদায়েত, ৫)নেক আমল ইত্যাদি বুঝিয়েছেন (যদিও শক্ত দলীল দ্বারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে)
হ্যাঁ, ভালো কথা। কোন সমস্যা নাই। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, যদি অনুগ্রহ ও রহমত এর অর্থ কুরআন শরীফ ধরা হয় তবে কুরআন শরীফ পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করতে হবে। কারন কুরআন শরীফ আল্লাহ পাকের নিয়ামত।
যদি ইসলাম, ইলম, হেদায়েত, নেক আমল ধরা হয় তবে অর্থ হচ্ছে এই সকল নিয়ামত পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করতে হবে। অর্থাৎ নিয়ামত পাওয়ার জন্য খুশি প্রকাশ করতে হবে এই কনসেপ্টে আপনিও একমত হলেন।
এবার পয়েন্টে আসেন, যদি রহমাতুল্লীল আ’লামীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না পেতেন তবে কি আপনি কুরআন শরীফ পেতেন? ইসলাম পেতেন? ইলিম পেতেন? হেদায়েত পেতেন? নেক আমল পেতেন?
এসকল আমল, নেক আমল হিসাবে প্রকাশ হয়েছে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের ফলে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সবচাইতে বড় এবং মূল নিয়ামত হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সবচাইতে বড় অনুগ্রহ হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। আর তিনিতো সমগ্র আলমের রহমত, যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
মোটকথা হচ্ছে যদি আমরা হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি মুবারক প্রকাশ করি তাহলে এই খুশি প্রকাশের মাধ্যমে কুরআন শরীফ ,ইসলাম, ইলিম, হেদায়েত, নেক আমল সবকিছুর জন্য শুকরিয়া ও খুশি প্রকাশ হয়ে যায়। কারন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হচ্ছেন “জামিউন নিয়ামত”। সুবহানাল্লাহ।
এখন যদি প্রশ্ন করি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে আপনি কি খুশি?
মনে হয় না, মুসলমানদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি বা দল আছে যে বা যারা বলবে যে খুশি নয়। নাউযুবিল্লাহ। অস্বীকার করার সুযোগই নেই। খুশি নয় বললে সে ঈমানদারই থাকতে পারবে না। কারন একমাত্র ইবলিশ ই নাখোশ ছিলো (বিদায়া ওয়ান নিহায়া)। নাউযুবিল্লাহ।
অর্থাৎ সবাই খুশি। তাহলে এই খুশি মুবারক প্রকাশের কথা স্বীকার করতে এত গড়িমসি কেন? কেন এত দ্বিধা দন্দ? কেন এত বির্তক?
যদি মু’মিন মুসলমান হন তবে তো আপত্তি করার সুযোগ নেই। তাই আসুন সবাই একযোগে অন্তরের অন্তস্থল থেকে বলুন,
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি মুবারক প্রকাশ করো। এই খুশি মুবারক প্রকাশ করাই হচ্ছে সব কিছুর চাইতে উত্তম যা তোমরা জমা কর। (পবিত্র সূরা ইউনূছ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
=================================================
হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক। আর উনাকে পাওয়ার কারনে ঈদ বা খুশি মুবারক প্রকাশ করা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি। (সূরা আম্বিয়া ১০৭)
সমগ্র জগতে রহমত হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনাকে রহমত হিসাবেই প্রেরন করা হয়েছে।মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ثُمَّ تَوَلَّيْتُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ ۖ فَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَكُنتُم مِّنَ الْخَاسِرِينَ
অর্থ: “তারপরেও তোমরা তা থেকে ফিরে গেছ। কাজেই আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত যদি তোমাদের উপর না থাকত, তবে অবশ্যই তোমরা ধবংস হয়ে যেতে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪ )
এই আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে দেওবন্দীদের অন্যতম মুরুব্বী পাকিস্তানের মুফতে শফী তার “মাআরেফুল কুরআন” লিখেছে “আর হাদীস শরীফ উনার ভিত্তিতে আযাব অবর্তীন না হওয়াটা যেহেতু মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকত। কাজেই কোন কোন তাফসীর কারক মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আর্বিভাবকেই আল্লাহ পাক উনার রহমত ও করুনা বলে বিশ্লেষন করেছেন।”(তাফসীরে মারেফুল কুরআন : সূরা বাক্করা শরীফ উনার ৬৪ নং আয়াত শরীফ উনার তাফসীর)
বর্তমান সময়ে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধীতা কারীদের অন্যতম মুরুব্বী মুফতে শফীর তাফসীর থেকে পাওয়া গেলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনকে রহমত ও অনুগ্রহ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক সেই বিষয়টা স্পষ্ট করে বলে দিলেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত (নূরে মুজাসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার জন্য খুশি প্রকাশ করো। এই খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে সব কিছুর চাইতে উত্তম। (পবিত্র সূরা ইউনূছ শরীফ :পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ-এ بفضل এবং برحمته দ্বারা কাকে বুঝানো হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, যা ‘তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৬ষ্ঠ খন্ড ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য রয়েছে,
اخرج ابو الشيخ عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الفضل العلم و الرحمة محمد صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আবুশ শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত “নিশ্চয়ই “ফদ্বল” দ্বারা উদ্দেশ্য ইলম, আর ‘রহমত’ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (দলীল- তাফসীরে দূররুল মানছুর –১০নংসূরা–১১পারা- সূরা ইউনূছ৫৮আয়াত, তাফসীরে কবীর)
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ‘রহমত’ দ্বারা কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থ দাড়াচ্ছে, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ এবং রহমত হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের কারনে খুশি বা ঈদ পালন করো।
উপরোক্ত পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ১০৭ নং আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৬৪ নং আয়াত শরীফ থেকে আমরা জানতে পারলাম “রহমত” হচ্ছেন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
উছুলে তাফসীরে, তাফসীর করার কয়েকটা প্রকারের কথা উল্লেখ করা আছে। প্রথমত, আয়াত শরীফ দিয়ে আয়াত শরীফের তাফসীর। দ্বিতীয়ত, হাদীস শরীফ দ্বারা আয়াত শরীফের তাফসীর। তৃতীয়ত, হযরত সাহাবায়ে কিরাম উনাদের ব্যাখা দ্বারা আয়াত শরীফ এর তাফসীর। চর্তুথত, ইমাম মুস্তাহিদ উনাদের ব্যাখা দ্বারা আয়াত শরীফ এর তাফসীর। আসুন এবার আমরা পবিত্র সূরা ইউনুছ এর ৫৮ নম্বর আয়াত শরীফ উনার তাফসীর এই চার প্রক্রিয়ায় দেখবো।
মহান আল্লাহ পাক বলেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত পাওয়ার কারনে খুশি প্রকাশ করো। এই খুশি প্রকাশ করা হচ্ছে সব কিছুর চাইতে উত্তম। (পবিত্র সূরা ইউনূছ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
এই আয়াত শরীফে “রহমত” কে এইটা জানতে পারলেই ঈদে মীলাদুন্নবী পালনের বিষয়টা পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। আসুন তাফসীর গুলো দেখা যাক-
১. আয়াত শরীফ উনার দ্বারা তাফসীর:
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি। (সূরা আম্বিয়া ১০৭)
এই আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত এর সংজ্ঞা দিয়ে দিলেন। নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহ পাক উনার রহমত। সূতরাং রহমত পাওয়ার কারনে খুশি মুবারক প্রকাশ করা কার আদেশ মুবারক ভেবে দেখেন।
২. পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারা আয়াত শরীফ উনার তাফসীর:
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ اُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِـيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّ اللهَ تَعَالٰى بَعَثَنِيْ رَحْـمَةً لّـِلْعَالَمِيْنَ
অর্থ : “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তামাম আলমের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে পাঠিয়েছেন।” (ত্ববারানী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি আবু নুয়াইম)
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার দ্বারা সূরা ইউনূছ শরীফ উনার ৫৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ এর ব্যাখা পাওয়া গেলো। স্বয়ং নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ পাক উনার রহমত। সূতরাং নবীজীকে পাওয়ার কারনে খুশি মুবারক প্রকাশ করতে হবে এটা হাদীস শরীফ উনার ব্যাখা দ্বারা প্রমান হলো।
৩. হযরত সাহাবায়ে কিরাম উনাদের ব্যাখা দ্বারা আয়াত শরীফ এর তাফসীর: সূরা ইউনূছ শরীফ উনার ৫৮ নং আয়াত শরীফের তাফসীরে ‘তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৬ষ্ঠ খন্ড ১৪১ পৃষ্ঠা’য় উল্লেখ্য রয়েছে,
اخرج ابو الشيخ عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الفضل العلم و الرحمة محمد صلى الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত আবুশ শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত “নিশ্চয়ই “ফদ্বল” দ্বারা উদ্দেশ্য ইলম, আর ‘রহমত’ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (দলীল- তাফসীরে দূররুল মানছুর –১০নংসূরা–১১পারা- সূরা ইউনূছ৫৮আয়াত, তাফসীরে কবীর)
সূতরাং তাফসীরকারক দের মাথার তাজ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, পবিত্র সূরা ইউনূছ শরীফ উনার ৫৮ নং আয়াত শরীফ এ রহমত দ্বারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে।
৪. ইমাম মুস্তাহিদ উনাদের ব্যাখা দ্বারা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর: হাফিজে হাদীস, মুজাদ্দিদে যামান, বিখ্যাত হযরত মুফাসসির জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাজুল মানতেকীন ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বিখ্যাত মুফাসসির আল্লাম আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তাফসীরে বর্ণিত রহমত হচ্ছেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । (তাফসীরে দূররুল মানছুর –১০নংসূরা–১১পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮ আয়াত, তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী, তাফসীরে কবীর)
উপরোক্ত চার প্রকার তাফসীর থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হলো, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ফদ্বল বা অনুগ্রহ মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন; সেজন্য তারা যেনো সম্মানিত ঈদ উদযাপন তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এই খুশি মুবারক প্রকাশ বা ঈদ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া-আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
=================================================
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার জন্য ২৪ ঘণ্টাই খুশি মুবারক প্রকাশ করতেন । সুবহানাল্লাহ।
এই বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –
جَاءَ الْمَوْتُ بِـمَا فِيْهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِـمَا فِيْهِ. قَالَ حَضْرَتْ اُبَـىٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ِاِنّـِيْ اُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِـيْ فَقَالَ مَا شِئْتَ، قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ، قَالَ مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قُلْتُ النّـِصْفَ، قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ، قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قُلْتُ اَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِـيْ كُلَّهَا، قَالَ اِذًا تُكْفٰى هَـمُّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ.
অর্থ: “হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনার উপর বেশি বেশি ছলাত পাঠ করতে চাই, তাহলে আমি কী পরিমাণ সময় আপনার উপর ছলাত পাঠ করবো? (অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি কত ঘণ্টা আপনার উপর ছলাত মুবারক পাঠ করবো?)আখিরী রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা।
আমি বললাম: এক চতুর্থাংশ সময় (তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টা) আপনার উপর ছলাত পাঠ করবো? আখিরী রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে।
আমি বললাম: তাহলে আমি অর্ধেক সময় (তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা) আপনার উপর ছলাত পাঠ করবো?
আখিরী রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে।
আমি বললাম: তাহলে আমি আমার তিন ভাগের দুই ভাগ সময় (তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা) আপনার উপর ছলাত পাঠ করবো ? আখিরী রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা, আপনি করুন। তবে যদি এর চেয়ে বেশি সময় করেন, তাহলে তা আপনার জন্য উত্তম হবে।
তখন আমি বললাম: তাহলে আমি আমার সম্পূর্ণ সময় (তথা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৪ ঘণ্টাই) আপনার উপর ছলাত পাঠ করবো?
তখন আখিরী রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যদি আপনি এরূপ করতে পারেন, তাহলে আপনার সমস্ত নেক মাক্বছূদগুলো পূর্ণ করে দেয়া হবে এবং আপনার সমস্ত গুনাহখতাগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!(তিরমিযী শরীফ -কিয়ামত অধ্যায়- হাদীস নম্বর ২৪৬০ হাসান সহিহ, মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ ২/৪২১, শুয়াবুল ঈমন শরীফ ৩/১৩৮, মিশকাত শরীফ, জামিউল আহাদীছ শরীফ ৩২/৩৭৩, জামিউল উছূল শরীফ ১১/৮৪৬৭, রিয়াদুছ ছালিহীন ১/৩৪৭)
=================================================
যারা সিয়া সিত্তার অন্যতম কিতাব “মুসলিম শরীফের” হাদীস শরীফমানে তারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরোধীতা করতে পারে না। এই বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে একটা হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে,
عَنْ أَبِى قَتَادَةَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم … وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ.
অর্থ: হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার উনার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জওয়াবে বলেছিলেন, ইহা এমন একখানা দিন যে দিনে আমি দুনিয়ায় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এ দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রকাশ করা হয়েছে তথা এ দিনে আমার উপর পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল শুরু হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ মুসলিম – পরিচ্ছেদ: ইস্তিহবাবু ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়ামিন মিন্ কুল্লি শাহরিন ওয়া ছাওমি ইয়াওমি আরাফাতা ওয়া আশূরা ওয়াল ইছনাঈন ওয়াল খমীছ- হাদীস নম্বর ১১৬১)
এছাড়া উক্ত হাদীস শরীফ ছহীহ ইবনি খুযাইমাহ কিতাবুছ ছিয়াম বাবু ইস্তিহ্বাবি ছওমি ইয়াওমিল্ ইছনাইন ইযিন্ নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুলিদা ইয়াওমুল্ ইছনাইনি ওয়া ফীহি ঊহিয়া ইলাইহি ওয়া ফীহি মাতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধ্যায়ে-
عَنْ اَبِىْ قَتَادَةَ الاَنْصَارِىِّ رضى الله عنه قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَقْبَلَ عَلَيْهِ عُمَرُ عليه السلام فَقَالَ يَا نَبِىَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَوْمُ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ؟ قَالَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ اَمُوْتُ فِيهِ.
অর্থ: হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছুহবত মুবারকে ছিলাম, এমন সময় সেখানে হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন এবং আরজ করলেন, হে মহান আল্লাাহ তায়ালার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সোমবার রাখা কেমন? জাওয়াবে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: আমি এ দিন মুবারকে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছি এবং এ দিন মুবারকে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করব। । সুবহানাল্লাাহ। (ছহীহ ইবনি খুযাইমাহ ৩/২৯৮ কিতাবুছ ছিয়াম : হাদীছ ২১১৭)
উক্ত হাদীস শরীফ থেকে যে বিষয়গুলো পরিষ্কার হচ্ছে সেটা হলো-
১) হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের বিলাদত শরীফ পালন বা ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করেছেন।
২) ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন উপলক্ষে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রেখেছেন।
৩) এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, প্রতি সপ্তাহে বিলাদত শরীফের যে বার অর্থাৎ সোমবার সেদিন নিদৃষ্ট করে নিয়ে পালন করেছেন।
৪) পরবর্তী উম্মত যদি ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করে তবে সেটা সুন্নাতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হবে।
৫) কেউ যদি ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করা বিদয়াত বলে তাহলে একটি খাছ সুন্নতকে বিদয়াত বলার কারনে কুফরী হবে।
৬) কেউ যদি বলে ঈদে মীলাদে হাবীবী খাইরুল কুরুনে ছিলো না,কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা হবে।
৭) কেউ যদি বলে ৬০০ হিজরীর পরে ঈদে মীলাদে হাবীবী চালু হয়েছে সেটা নবীজীর প্রতি স্পষ্ট অপবাদ দেয়া হবে।
এখন বাতিল ফির্কারা যে কথাটা বলে থাকে তা হচ্ছে,
প্রশ্ন: ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা রেখেছেন, আপনারা কি রোজা রাখেন? রোজা না রেখে আপনারা কেন খাওয়া দাওয়া অনুষ্ঠান করেন?
উত্তর: হ্যাঁ আমরাও রোজা রাখি। তবে আপনাদের এই প্রশ্নের মাধ্যমে কিন্তু এটাই প্রমাণিত হলো শরীয়তে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবীর দলীল রয়েছে। সূতরাং আপানারা ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিদয়াত বলতে পারেন না। আপনাদের এই প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে রোজা রেখেছেন সেটা কেন রেখেছেন? অবশ্যই শুকরিয়া স্বরূপ।কারন তিনি হচ্ছেন সবচাইতে বড় নিয়ামত। আর আল্লাহ পাক নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বলেছেন। নবীজীর বিলাদত শরীফ এবং বিলাদত শরীফের বার ও তারিখ সবকিছু হচ্ছে নিয়ামতপূর্ণ।নিয়ামত প্রাপ্তি হচ্ছে খুশির বিষয়, আনন্দের বিষয়, শুকরিয়া আদায় করার বিষয়। নিয়ামতের শুকরিয়া প্রকাশ করার অন্যতম উপায় হচ্ছে ইবাদত। যেটা রোজা রেখে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন। এর থেকেও প্রমাণিত হয় যে, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং বরকতী বিশেষ দিন সমূহের দিন খুশি প্রকাশ করা বা তা পালন করতে হবে। কারন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার আগমনের বারে শুকরিয়া আদায় করে রোজা রাখতেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে নিজেই নিজের আগমন দিবস পালন করেছেন। সূতরাং এই সুস্পষ্ট শরীয়তসম্মত আমলকে অস্বীকার করার কোন উপায় নাই।
আর যেহেতু ইবাদতের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করতে হয় তাই কেউ যদি ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন উপলক্ষে রোজা রাখে, সলাত- সালাম পাঠ করে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, যিকির করে, মানুষকে খাবার খাওয়ায়, দান ছ্বদকা করে, কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ থেকে আলোচনা করে সবই গ্রহনযোগ্য। কারন প্রতিটিই ইবাদতের অর্ন্তভূক্ত। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রোজা রেখে শুকরিয়া আদায় করে ঈদে মীলাদে হাবীবী পালনের বিষয়টা স্পষ্ট করে দিলেন। এখন উম্মত যেকোন শরীয়ত সম্মত উপায়ে শুকরিয়া আদায় করতে পারবে।
আর এই রোজা রাখাকে ঈদে মীলাদে হাবীবী পালনের ভিত্তি হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সূয়ূতি রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। নিম্নে সে দলীল উল্লেখ করা হয়েছে:
আর স্থান ও কালের ফযীলতের ভিত্তি হচ্ছে ওইগুলোতে সম্পনকৃত ইবাদতসমূহ, যেগুলো আল্লাহ্ পাক ওইগুলোর সাথে, অর্থাৎ ওই কাল ও স্থানগুলোর সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। কেননা, একথা সর্বজন বিদিত যে, স্থান ও কালের মহত্ব (বুযুর্গী) তো (কখনো) ওইসব সত্তা থেকে হয় না বরং সেগুলোর এসব বুযুর্গী ওইগুলোর অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যাদি (অথবা সম্পর্ক ইত্যাদি)’র কারণেই অর্জিত হয়ে থাকে, যেগুলোর সাথে এ স্থান ও কাল নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। এখন আপনারা ওইসব বৈশিষ্ট্য ও বরকতরাজি দেখুন, যেগুলো আলাহ্ তা‘আলা রবিউল আউয়াল মাস ও সোমবারের সাথে নির্দিষ্ট করেছেন। আপনি কি দেখেননি যে, সোমবার রোযা রাখলে বড় ফযীলত রয়েছে? কেননা,হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বেলাদত শরীফ এ দিনে হয়েছে। সুতরাং যখন এ মাস আসে, তখন এ মাসের উপযোগী সম্মান প্রদর্শন ও গুরুত্ব প্রদান করা, আর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – এর অনুসরণ করা উচিৎ। কারণ, তাঁর পবিত্র অভ্যাস ছিলো যে, তিনি ফযীলতমণ্ডিত সময়গুলোতে বেশী ইবাদত করতেন এবং অধিক পরিমাণে দান-খায়রাত করতেন।
প্রসঙ্গে আমি (ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূত্বী) ও মীলাদের (বৈধতার) জন্য একটি মূলনীতি বের করেছি। তাহচ্ছে- ইমাম বায়হাক্বী হযরত আনাস রাদ্বিয়ালাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুবূয়ত প্রকাশের পর নিজের আক্বীক্বা করেছেন, অথচ উনার দাদা হযরত আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বেলাদত শরীফের সপ্তম দিনে তাঁর আক্বীকা করেছিলেন। আর আক্বীক্বা দ্বিতীয়বার করা যায় না। সুতরাং এই আক্বীকা মুবারকের কারণ এটা বলা যাবে যে, তিনি আলাহ্ তা‘আলার এ শুকরিয়া আদায় করার জন্য তা করেছেন যে, তিনি তাঁকে‘রাহমাতালিল আ-লামীন’ (সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত) করেছেন এবং উম্মতের জন্য তাঁর বেলাদত শরীফের উপর আলাহর শোকর আদায় করাকে শরীয়তসম্মত করার জন্য পুনরায় আক্বীক্বা করেছেন। যেমন তিনি সশরীরে নিজের উপর দুরূদ পড়তেন। সুতরাং আমাদেরও উচিত হবে মীলাদে পাকে লোকজনকে জমায়েত করে, তাদেরকে খানা খাইয়ে এবং অন্যান্য বৈধপন্থায় খুশী প্রকাশ করে মহামহিম আলাহ্ তা‘আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করা।
হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র আশুরা শরীফের দুই রোজাকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনেন ভিত্তী হিসাবে দলীল দিয়েছেন। তিনি বলেছেন শুকরিয়া স্বরূপ এ রোজা রাখা হয়। আল্লাহ পাকের নিয়ামতের শুকরিয়া বিভিন্ন ভাবে করা যায়। রোজা রেখে, সিজদা করে, তিলওয়াত করে,দান ছদকা করে। আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সবচাইতে বড় নিয়ামত।” (হুসনুল মাকাছিদ ফি আমালিল মাওলিদ ৬৩, আল হাবী লিল ফতওয়া ১০৫, সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১ম খন্ড ৩৬৬ পৃষ্ঠা, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন ২৩৭ পৃষ্ঠা)
সবচাইতে বড় কথা এই বিশেষ দিবস সমূহ পালনের আদেশ স্বয়ং আল্লাহ পাক দিয়েছেন। বিশেষ দিন সমূহ স্মরন সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّـهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
অর্থ: তাদেরকে আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ করান। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা ইব্রাহিম ৫)
ফিকিরের বিষয় হচ্ছে , নবীজীর আগমনের দিবস কতটা তাৎপর্যপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ। এই দিন হচ্ছে অন্য সকল দিনের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। আর এমন দিনের স্মরন করানোর আদেশ আল্লাহ পাক নিজেই দিয়েছেন। আল্লাহ পাকের আদেশ অনুযায়ী এই বিশেষ দিন স্মরন করা, সে দিনের বিশেষ ঘটনাবলী আলোচনা করা, সে দিন যার কারনে শ্রেষ্ঠ হলো উনার ছানা সিফত করা, শুকরিয়া আদায় করা এটা আল্লাহ পাকের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।
আর এদিন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা ও শুকরিয়া আদায় করা একমাত্র ধৈয্যশীল ও শোকর গুজার বান্দাদের পক্ষেই সম্ভব। কোন নবী বিদ্বেষী বিদয়াতি ওহাবীদের পক্ষে সম্ভব নয়।
বিদয়াতি ওহাবীরা আরো একটা আপত্তি উত্থাপন করে, মুসলিম শরীফের উক্ত হাদীস শরীফেতো বিলাদত শরীফ ছাড়াও নবুওয়াত শরীফ প্রকাশ ও কুরআন শরীফের নাযিলের বিষয় বলা হয়েছে। সেটার কি ফয়সালা?
ফয়সালা হচ্ছে, মূল নিয়ামত হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি যদি না তাশরীফ নিতেন তবে অন্য কোন কিছুর অস্তিত্বই হতো না। অন্য বিষয় সমূহ নিয়ামতপূর্ণ হয়েছে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের মাধ্যমে। সূতরাং হাদীস শরীফে শুকরিয়া আদায়ের মূল উপলক্ষ্য হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, আর উনার সাথে সংশ্লিষ্ঠ হওয়ার কারনে অন্যবিষয় সমূহ মর্যাদাবান হয়েছে।
তারা আরো বলে, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করেছেন, আপনারা বছরে একদিন পালন করেন কেন?
এর জবাবে বলতে হয়, আমরা বছরে শুধূ একদিন ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করি না। বরং বছরের প্রতিটি দিনই ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করে থাকি। যেরূপ পালন করেছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন উনারা (http://bit.ly/2gaDfsm) । আমরা প্রতিদিনতো বটেই, অনন্তকালব্যাপী মীলাদে হাবীবী পালন করতে চাই, কবরে হাশরে, মিযানে, জান্নাতে সবখানেই। ১২ রবিউল আউয়াল জাঁকজমকের সাথে করা হয় কারন সেই দিবস হচ্ছে খাছ একটা দিবস। ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ এনেছেন (http://bit.ly/2fZhJby )।
যেহেতু ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত তাই সমগ্র মুসলিম মিল্লাতে এটা পালিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে (http://bit.ly/2gGmgyR)। হাজার বছর ধরে পালিত হয়ে আসা একটা সুন্নত আমলের বিরোধীতা ৩০/৪০ বছর ধরে আগাছার মত গজিয়ে ওঠা নব্য ওহাবীরা ছাড়া কেউ করে নাই (http://bit.ly/2gT5Ssq)।
=================================================
মীলাদ শরীফ উনার আমলটা স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা পালন করেছেন !
যেটা সহীহ হাদীস শরীফ উনার কিতাবে এরশাদ মুবারক হয়েছে !!
পবিত্র হাদীস শরীফ সমূহ বর্ননা করেছেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যার সম্পর্কে সারা দুনিয়া বাসী সবার আস্থা রয়েছে ! যিনি মুসলমানদের ভিতর সব চাইতে বেশি কিতাব লিখেছেন, যিনি ছিলেন দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ , ইসলামের এমন কোন বিষয় নাই যে বিষয়ে তিনি কিতাব লিখেন নাই ! তিনি ছিলেন হাফিযে হাদীস ,তিনি তিন লক্ষ এরও বেশি হাদীস শরীফ এর হাফিয ছিলেন !
তাফসীর শাস্ত্রে উনার ছিল অগাধ ইলিম !
উনাকে তাজুল মুফাসসিরিন বলা হয় ! তিনি ছিলেন যামানার লক্ষস্থল ইমাম ,খাতেমুল হুফ্ফাজ , রয়িসুল মুহাদ্দেসীন , রেজাল শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ!
যিনি জাগ্রত অবস্থায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে সত্তর বারের বেশি দেখেছেন ! উনার তাফসীর সমগ্র মাদ্রাসায় পড়ানো হয় ,উনার তাফসীর না পড়ে কেউ মুফাসসির হয় না, তিনি আর কেউ নন, সবার পরিচিত তাফসীরে জালালাইন
শরীফ এর মুসান্নিফ হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি !
উনার সম্পর্কে বলা আছে —
رايت رسول الله صلي الله عليه و سلم في اليقظة بضعا و سبعين مرة
অর্থ : হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আখেরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জাগ্রত অবস্থায় সত্তর বারের বেশি দেখেছি !”
(আল ইয়াকীতু ওয়াল জাওয়াহের ১ম খন্ড ১৩২ পৃষ্ঠা, দালায়িলুছ ছুলুক)
সেই বিখ্যাত ইমাম, হাফিযে হাদীস, মুজাদ্দিদে জামান জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব “সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” এ দুই খানা হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন!!!
যার মাধ্যম দিয়ে প্রমাণিত হয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ঈদে মীলাদে হবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন। অতঃপর সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে এ নিয়ম পালিত হয়ে আসছে।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,–>>
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِه وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ، فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত মুবারক ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ!!
(সুবুলুলহুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহুআলাই হি ওয়া সাল্লাম – হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি , মাওলুদুল কবীর -হাফিযে হাদীস , ইমামইবনে হাযর মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আত তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযার -শায়খ হাফিযে হাদীস আবিল খত্তাব ইবনে দাহিয়্যা রহমাতুল্লাহি আলাইহি , দুররুল মুনাযযাম – সপ্তম অধ্যায় – প্রথম পরিচ্ছেদ,ইশবাউল কালাম, হাক্বীকতে মুহাম্মদী মীলাদে আহমদী ৩৫৫ পৃষ্ঠা ।)
সুবহানাল্লাহ্ !!
সুতরাং অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমান হলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে মীলাদ শরীফ হয়েছে এবং তিনি নিজে এই কাজের জন্য কি ফযীলত হবে সেটা বর্ননা করেছেন !!
সুতরাং যারা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করেন, তারা অপ্রাসঙ্গিক তর্ক না করে পোস্টটা দলীল দ্বারা খন্ডন করুন । দলীল ছাড়া কারো কথা গ্রহনযোগ্য নয় ।
=================================================
বাতিল ফির্কা একটা আপত্তি করে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ছাড়াও বিছাল শরীফের তারিখ। এই দিনতো শোকের দিন (নাউযুবিল্লাহ)। তাহলে এই দিন কি ঈদ পালন করা যাবে?
অবশ্যই পালন করা যাবে। এ বিষয়ে অনেক দলীল পেশ করা হয়েছে পূর্বে। আজকে সে বিষয়ের অবতারনা করবো না। আজকে সরাসরি বিরোধীতাকারীদের মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবীর বক্তব্য থেকেই বিষয়টা তুলে ধরবো। থানবীর লিখিত বইটির নাম হচ্ছে ‘নশরুত্যীব’। বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে ‘যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা’ আর অনুবাদ করেছে দেওবন্দীদের আরেক মুরুব্বী আমিনুল ইসলাম লালবাগ মসজিদের সাবেক খতিব। তো আসুন দেখা যাক উক্ত বইতে কি আছে-

থানবীর লিখনী থেকে প্রমাণ হলো হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের দিন রহমত, নিয়ামত, কল্যান অার কোনভাবেই মুছিবতের বা শোকের দিবস নয়।
=================================================
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই নিজের প্রশংসা মুবারক করেছেন। এবং এই বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم جلس ناس من اصحاب رسول الله عليه وسلم فخرج حتى اذا دنا منهم سمعهم يتذاكرون قال بعضهم ان الله اتخذ ابراهيم خليل الله وقال اخر موسى عليه السلام كلمة تكليما وقال اخر فعيسى عليه السلام كلمة الله وروحه وقال اخر ادم اصطفاه الله فخرج عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم وقال سمعت كلامكم وعجبكم ان ابراهيم خليل الله وهو كذالك وموسى عليه السلام نجى الله وهو كذالك وعيسى عليه السلام كلمة الله وهو كذالك وادم اصطفاء الله وهو كذالك الا وانا حبيب الله ولافخر وانا حامل لواء الحمد يوم القيمة تحته ادم فمن دونه ولا فخر وانا اول شافع واول مشفع يوم القيمة ولافخر وانا اول من يحرك حلق الجنة فيفتح الله لى ويدخلنى ومعى فقراء المؤمنين ولافخر وانا اكرم الاولين والاخرين على الله ولافخر.
অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত একদা কতিপয় ছাাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এক স্থানে বসে কিছু বিষয় আলোচনা করতে ছিলেন এমন সময় আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে উনাদের নিকটবর্তী হয়ে সে আলোচনা শুনতে পেলেন। উনাদের মধ্যে একজন আলোচনা করলেন যে মহান আল্লাহ পাক হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে খলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আরেকজন বললেন মহান আল্লাহ পাক হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার সাথে সরাসরী কথা বলেছেন। আরেকজন বললেন, মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে কালিমাতুল্লাহ ও রুহুল্লাহ করেছেন। অন্য আরেকজন বললেন মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে খাছ ভাবে (কুদরতী হাতে সৃষ্টি) মনোনীত করেছেন। এমন সময় আল্লাহ পাক উনার নবী সাইয়্যিদুল খালায়িক্ব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের সামনে হাজির হয়ে বললেন, আমি আপনাদের কথা/আলোচনা ও পূর্ববর্তী নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মর্যাদা বর্ণনা করে আশ্চর্য হওয়ার অবস্থা শ্রবন করেছি। আপনারা জেনে রাখেন, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনি খলীলুল্লাহ ছিলেন এটা সত্য কথাই, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম নাজিউল্লাহ ছিলেন এটাও সত্য কথা, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনার রুহু ও কালিমা ছিলেন এটাও সত্য কথা। আর হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি খাছ ভাবে মনোনীত করেছেন। এটাও সত্য কথা। তবে আপনারা সাবধান হয়ে যান (আমার ব্যাপারে আপনারা জেনে রাখ) আমি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব তাতে আমরা কোন ফখর নেই। একমাত্র আমার হাতেই কিয়ামতের দিন প্রশংসার পতাকা থাকবে যার অধীনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে সমস্ত নবী রসূল, সমস্ত কায়িনাত সেই পতাকা তলে আশ্রয় নিবেন তাতেও আমার কোন ফখর নেই। ক্বিয়ামতের দিন আমিই সর্ব প্রথম সুপারিশ করব এবং আমার সুপারিশই সর্ব প্রথম কবুল করা হবে তাতেও আমার কোন ফখর নেই, আমিই ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বেহেস্তের দরজায় নাড়া দিব। আমার জন্য সর্ব প্রথম বেহেস্ত খোলা হবে, আমি এবং আমর কিছু খাছ উম্মত সর্ব প্রথম বেহেস্তে প্রবেশ করব তাতেও আমার কোন ফখর নেই, সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল কায়িনাতের মধ্যে আমিই সর্বাধিক সম্মানিত তাতেও আমার কোন ফখর নেই। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী – কিতাবুল মানাকিব হাদীস: ৩৬১৬ , দারেমী ৪৭, মিশকাত, কানযুল উম্মাল)
আলোচ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যম দিযে যে বিষয়গুলো প্রতিভাত হয়। যথা:-
১. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম গণ-এর ফযীলত, মর্যাদা, মর্তবা, শান-শওকত নিয়ে আলোচনা করতেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তা সমর্থনও করলেন এমনকি তা নিষেধ না করে স্বয়ং নিজের প্রশংসা মুবারক উনাদেরকে জানিয়ে দিলেন।
২. পরবর্তীদের জন্য পূর্ববর্তীদের ছানা-ছিফত প্রশংসা মুবারক করা তথা উম্মতের জন্য উনাদের নবীর শানে মীলাদুন নবী করা সুন্নত।
৩. ক্ষেত্র বিশেষে নিজের প্রশংসা নিজে করাও সুন্নত।
৪. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনিই উনাকে মুহব্বত মুবারক করেন। সেই মুহব্বত মুবারকের কারনেই মহান আল্লাহ পাক সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন। হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে এসেছে- মহান আল্লাহ পাক বলেন,
كُنْتُ كَنْزَا مُخْفِيًّا فَاَحْبَبْتُ اَنْ اُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الْخَلْقَ لِاُعْرَفَ.
অর্থঃ- আমি গুপ্ত ছিলাম। তখন আমর মুহব্বত হলো যে, আমি প্রকাশিত হই, তখনই আমি সৃষ্টি করলাম (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লা আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে)। (আল মাকাসিদুল হাসানা ৮৩৮, কাশফূল খিফা/২০১৩, আসনাল মুত্বালিব/ ১১১০, তমীযুত তসীয়ূত তীব/১০৪৫, আসরারুল মারফুআ/৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০, আত্ তায্কিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬)
নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাবীবুল্লাহ হওয়ার কারণেই মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকের সাথে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারককে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। উনার উসীলাতেই সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন, উনার মুবারক উসীলাতেই মহান বারে এলাহী সমগ্র মাখলুকাতকে রহমত বরকত সাকীনা দান করেছেন এমনকি স্বয়ং রব্বুল আলামীন উনার রুবুবিয়্যত মুবারক প্রকাশ করেন উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায়।
৫. সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম, সমস্ত ক্বায়িনাত, সমস্ত মাখলুকাত এককথায় মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত কিছুই ইহকাল ও পরকালে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধীন হবে।
৬. সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় খাছ খাছ উম্মতগণ সহ জান্নাতে প্রবেশ করবেন। সর্ব প্রথম তিনিই জান্নাত খোলার জন্য জান্নাতের দরজায় কড়া নাড়া দিবেন এবং উনার জন্যই উহা খোলা হবে। এর পূর্বে কোন মাখলুকাতই জান্নাত দেখতেও পারবেনা, তাতে প্রবেশও করতে পারবেনা।
৭. সৃষ্টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মর্যাদা ও মর্তবার অধিকারী হচ্ছেন আফদ্বালুল কায়িনাত, খইরু খলক্বিল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সকল মাখলুকাতই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায় মর্যাদা লাভ করেছে। এমনকি কোন নবীকে নবুওয়াত দেয়া হয়নি কোন রসূলকে রিসালত দেয়া হয়নি। যতক্ষন পর্যন্ত সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম গণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বীকৃতি না দিয়েছেন। সুতরাং নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের নুবূওয়াত ও রিসালত আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায়ই লাভ করেছেন।
আল্লাহ পাক উনার কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ-্উনার প্রতিটি পারায়, প্রতিটি সূরায়, প্রতি আয়াত শরীফ-এ, প্রতি শব্দে, অক্ষরে, হরকতে ও নুক্তায় নুক্তায় মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত, মর্যাদা, মর্তবা শান-শওকত বর্ণনা করা হয়েছে।
এক কথায় মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যত মর্যাদা-মর্তবা রয়েছে সমস্ত মর্যাদা ও মর্তবার অধিকারী হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন নূরে মাজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। তিনি শুধুমাত্র আল্লাহ পাক নন, এছাড়া আর যত মর্যাদা ও মর্তবা রয়েছে। সমস্ত মর্যাদা ও মর্তবার অধিকারী হচ্ছেন আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
যে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই উনার প্রশংসা মুবারক করেছেন, সেখানে আমরা উম্মত হয়ে যদি প্রসংসা করি ওহাবীদের গা জ্বালা করে কেন???
=================================================
বিভিন্ন বাতিল ফিরকার লোকেরা বলে থাকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ তথা সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার কেমন ঈদ যেখানে ছলাত নাই খুতবা নাই? যেহেতু সকল ঈদের সেরা ঈদ সেহেতু ছলাত ডাবল হতো, খুতবাও ডবল হতো। কিন্তু ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদ হলে ছলাত, খুতবা নেই কেন??
আমরা বলতে চাই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু সাইয়্যিদুল আইয়াদ, অর্থাৎ সকল ঈদের সেরা ঈদ সেহেতু এ ঈদে এমন ছলাত রয়েছে, সে ছলাত শুধু ডবলই নয় বরং দায়িমী ছলাত। এ ছলাত শুরু হয়েছে সৃষ্টির শুরু থেকে এবং এটা জারী থাকবে অনন্তকাল ধরে। কারণ এ ছলাত স্বয়ং আল্লাহ পাক পড়েন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক এবং উনার ফেরেশতা ( আলাইহিমুস সালাম গন) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার শান মুবারক এ ছলাত পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার শান মুবারক এ ছলাত পাঠ করো এবং সেই সাথে যথাযথ সম্মানে সালাম মুবারক পেশ করো।” (সূরা আহযাব/৫৬)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ-্উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক মু’মিন-মুসলমানদের জন্য এ ছলাত পড়া ফরয-ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এমনকি এ ছলাত অন্য ইবাদতসমূহের মধ্যেও পড়ার হুকুম রয়েছে। বিশেষ করে দোয়া বা মুনাজাতকে বলা হয়েছে ইবাদতের মগজ।
যেমন হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن انس رضى الله تعال عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الدعاء مخ العبادة .
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, দোয়া হলো ইবাদতের মগজ বা সারবস্তু।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আর সেই দোয়া বা মুনাজাত ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত উনার শান মুবারক এ ছলাত শরীফ পাঠ না করা হবে। সুবহানাল্লাহ!
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ-্উনার মধ্যেে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال ان الدعاء موقوف بين السماء والارض لايصعد منها شىْء حتى تصلى على نبيك.
অর্থ: “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই দোয়া আসমান ও যমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ না করবে, ততক্ষণ তোমার কোন দোয়াই আল্লাহ পাক-এর নিকট পৌঁছবেনা।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
“তাইসীরুল উছূল” কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
الدعاء موقوف بين السماء والارض لا يصعد حتى يصلى على النبى صلى الله عليه وسلم. صلوا على اول الدعاء واوسطه واخره .
অর্থ: “দোয়া আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে। যতোক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা না হয়, ততোক্ষণ পর্যন্ত দোয়া উপরে উঠে না বা কবুল হয় না। সুতরাং, তোমরা দোয়ার শুরুতে, মধ্যখানে ও শেষে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করো।”
অতএব, এ ছলাতের গুরুত্ব কত বেশি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একইভাবে এ ঈদে এতো বিশাল ও এতো ব্যাপক খুতবা রয়েছে, যে খুতবা (হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার আলোচনা, প্রশংসা, মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত, ছানা-ছিফত) ক্বিয়ামত পর্যন্ত বর্ণনা করা হলেও তা শেষ হবে না। সুবহানাল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-
ورفعنا لك ذكرك .
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার আলোচনা মুবারক বা খুতবা মুবারককে বুলন্দ করেছি।” (সূরা আলাম নাশরাহ-৪)। সুবহানাল্লাহ!
এবং আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে আদেশ করেছেন যে-
انا ارسلنك شاهدا ومبشرا ونذيرا. لتؤمنوا بالله ورسوله وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصيلا .
অর্থ: “তোমরা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার খিদমত মুবারক করো, উনাকে সম্মান মুবারক করো এবং সকাল-সন্ধ্যা, অর্থাৎ সদাসর্বদা উনার প্রশংসা মুবারক, ছানা-ছিফত মুবারক, মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করো। এক কথায় উনার শান মুবারক এ খুতবা প্রদান করো।” (সূরা ফাতহ- ৮, ৯) সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, সব ঈদের হুকুম এক রকম নয়। যেমন ঈদুল ফিতরের বিশেষ আমল হলো ঈদের নামাযের পূর্বে ছদকাতুল ফিতর আদায় করা। আর ঈদুল আযহার বিশেষ আমল হলো ঈদের নামাযের পরে পশু কুরবানী করা। যার প্রত্যেকটি ওয়াজিব। এ দু’ঈদে কিন্তু রোযা রাখা হারাম। কিন্তু জুমুআর দিন ও আরাফা’র দিন যে দু দিনকে হাদীস শরীফে ঈদের দিন বলা হয়েছে। মুসলমানদের জন্য এ দু’ ঈদে রোযা রাখা হারাম নয় বরং অশেষ ফযীলতের কারণ। আর এ দু’ ঈদের আমলের মধ্যে কুরবানী কিংবা ছদক্বাতুল ফিতর কোনটিই নেই। বরং জুমুআর দিনে যুহরের নামাযের পরিবর্তে কেবলমাত্র পুরুষ, বালিগ, সুস্থ, মুক্বীম ব্যক্তির জন্য মসজিদে গিয়ে খুতবাসহ নামায আদায় করতে হয়। আর মহিলাদের জন্য জুমুআর দিনে আলাদা কোন ছলাতও নেই, আবার খুতবাও নেই। আর আরাফার দিনে শুধুমাত্র যারা হজ্জে যেয়ে থাকেন, তাদের জন্য ৯ই যিলহজ্জ আরাফার ময়দানে অবস্থান করাটা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। আর শুধুমাত্র হাজ্বীগণের জন্য আরাফা’র ময়দানে যুহর ও আছর নামায পড়তে হয়। ঈদের দিন হওয়া সত্ত্বেও আরাফা’র ময়দানে আলাদা কোন ছলাত নেই। আর খুতবা শুধুমাত্র হাজীগণের জন্যই। হাজ্বীগণ ব্যতীত দুনিয়ার কোন মুসলমানের জন্য, হোক সে পুরুষ অথবা মহিলা তার জন্য আরাফা’র দিন ঈদের দিন হওয়া সত্ত্বেও আলাদা কোন ছলাতও নেই, খুতবাও নেই। আর অন্যান্যদের জন্য আরাফা’র দিন রোযা রাখা খাছ সুন্নত এবং অশেষ ফযীলতের কারণ।
অতএব, সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে উলামায়ে ছূদের প্রদত্ত বক্তব্য চরম জিহালতপূর্ণ ও মূর্খতাপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো।
=================================================
বর্তমানে কাফির-মুশরিকদের এজেন্ট মুসলমান নামধারী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে গোয়েন্দাবাহিনী-প্রতিরক্ষা বাহিনী খুব চিন্তার মধ্যে আছে। কিন্তু খুব সহজে হিসেব করলে একজন মুসলমান ও সন্ত্রাসীর মধ্যে তফাৎ হচ্ছে পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন। সুবহানাল্লাহ।
বর্তমানে সারা বিশ্বে যারা সন্ত্রাসীপনা করে সম্রাজ্যবাদীদের আক্রমণের মওকা তৈরী করছে তারা প্রায় সবাই ওহাবী-সালাফি আকিদ্বাভূক্ত । আর এই আকিদ্বাভূক্ত দলগুলো কিন্তু পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে না। কথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস, আল কায়েদা, জেএমবি, আল শাবাব, তালেবান, বোকো হারাম, তাকফিরি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, আল নুসরা ফ্রন্ট (সিরিয়ান আল কায়েদা), হিযবুত তাহরীর এই প্রত্যেকটি সন্ত্রাসী । এই সকল নামধারী ইসলামী দলগুলো পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তো পালন করে না, বরং পালন করলে তাদেরকে হত্যা করার হুমকি দেয় । তাই পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে এমন বিষয় যা পালনের দ্বারাই নির্ধারিত হয় কে মুসলমান আর কে সন্ত্রাসী।
=================================================
বর্তমানে যারা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করে থাকে তারা মূলত বিদয়াতী।
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রথম বিরোধীতা শুরু হয় সউদ পরিবার যখন ১৯৩২ সালে জাজিরাতুল আরবের ক্ষমতা দখল করে তখন থেকে। উল্লেখ্য ব্রিটিশ গোয়েন্দা টিই লরেন্সের সহায়তায় মরু ডাকাত সউদ পরিবার (সউদ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী ছিলো) জারিরাতুল আরবের ক্ষমতা দখল করে এবং আরবের নামের পূর্বে নিজ পরিবারের নাম সংযুক্ত করে সউদী আরব নামকরণ করে। এছাড়া হারাম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। এরপর প্রায় পবিত্র জান্নাতুল বাকিতে আক্রমণ চালিয়ে ১০ হাজার সাহাবীর পবিত্র মাজার শরীফ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। তারা ওহাবী-সালাফি মতবাদ প্রচার শুরু করে। সেই মতবাদের অংশ হচ্ছে সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরোধীতা করা। উল্লেখ্য এজন্য সারা বিশ্বে প্রায় ৪৭টি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সরকারিভাবে পালন করা হলেও মিডলইস্টে তিনটি দেশে পালন করা হয় না। তিনটি দেশ হলো- ইসলারাইল, সৌদি আরব ও কাতার।
=================================================
কিছু বাতিল ও গোমরাহ ফেরকার লোকেরা বলে থাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলামে নাকি দিবস পালন করা হারাম! বলার বিষয় হল যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে দিবস পালনের বিধান হারাম-ই হয়ে থাকে তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ বা পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ তালাশ করতে কেন বললেন?
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –
عَنْ اُمّ الْمُؤْمِنِيْن حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصِدّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَـحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে পবিত্র শবে ক্বদর বা লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো।” (বুখারী শরীফ : কিতাবু ফাদ্বলি লাইলাতিল ক্বদর : বাবু তার্হারী লাইলাতিল ক্বদরি ফিল উইতি মিনাল আশরি আওয়াখিরি : হাদীছ শরীফ নং ২০১৭)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত আছে-
عَنْ اُمّ الْمُؤْمِنِيْن حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصِدّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَاَم قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُـجَاوِرُ فِي الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ وَيَقُوْلُ تَـحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الْاَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো।” (বুখারী শরীফ : কিতাবু ফাদ্বলিল লাইলাতুল ক্বদরি : বাবু তার্হারী লাইলাতিল ক্বদরি ফিল উইতি মিনাল আশরি আওয়াখিরি : হাদীছ শরীফ নং ২০২০)
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ বা পবিত্র শবে ক্বদর শরীফ তালাশ কী কোন দিবস পালন নয়?
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র আশূরা শরীফ পালন করলেন, এ দিবস উপলক্ষ্যে কেন রোযা রাখলেন এবং উম্মতকে রোযা রাখতে বললেন?
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ فَرَاَى الْيَهُودَ تَصُوْمُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ مَا هٰذَا. قَالُوْا هٰذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هٰذَا يَوْمٌ نَـجَّى اللهُ بَنِـي اِسْرَائِيْلَ مِنْ عَدُوّهِمْ فَصَامَهٗ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ. قَالَ فَاَنَا اَحَقُّ بِـمُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنْكُمْ (نَـحْنُ اَحَقُّ بِـمُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنْكُمْ.) فَصَامَهٗ وَاَمَرَ بِصِيَامِهٖ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীরা পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন রোযা রেখে থাকে। তিনি উম্মতকে তা’লীম প্রদানের জন্য তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন ইয়াহুদীরা বললো, ওই দিনে ফির‘আঊন ও তার সৈন্যবাহিনী পানিতে ডুবে ধবংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো। আর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সঙ্গী-সাথীরা যুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এজন্য আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে রোযা পালন করি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমিই বেশি হক্বদার। (ইবনে মাজাহ শরীফ উনার রেওয়াতে- তোমাদের চেয়ে আমরাই বেশি হক্বদার।) অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন রোযা রাখলেন এবং ওই মুবারক দিনে সবাইকে রোযা রাখার হুকুম মুবারক দিয়েছেন।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুছ্ ছওম : বাবু ছিয়ামি ইয়াউমি আশূরা : হাদীছ শরীফ নং ২০০৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুছ্ ছওম : বাবু ছিয়ামি ইয়াউমি আশূরা : হাদীছ শরীফ নং ১৭৩৪)
তাহলে কী আশূরা শরীফ পালন বন্ধ করে দিতে হবে, এ দিবস উপলক্ষ্যে রোযা পালন বন্ধ করে দিতে হবে? সর্বোপরি মুসলমানদের জন্য বছরে ২টি বিশেষ দিবস- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা। এই ২টি বিশেষ দিবস পালনও কী বন্ধ করে দিতে হবে? বাস্তবতা হচ্ছে- সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে যদি দিবস পালনের বিধান না-ই থাকতো বা হারাম হতো তাহলে উক্ত দিবসগুলো কখনোই আসতো না। তাই ‘সম্মানিত দ্বীন ইসলামে দিবস পালন করা হারাম’ এ ধরনের মন্তব্য কুফরীর শামিল। কেননা এ ধরনের মন্তব্য প্রদান করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার নামান্তর।
=================================================
অনেক আলেম নামধারী জাহিল প্রকৃতির লোকেরা বলে থাকে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল( ইন্তেকাল) শরীফ এর দিন, তাই এই দিন খুশি প্রকাশ করা জাবে না বরং তারা বলে থাকে এই দিনে নাকি দু:খ প্রকাশ করতে হবে!! নাউজুবিল্লাহ।
মূলত এই ধরনের আলেম নামধারী জাহেল প্রকৃতির যে সকল লোক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিছালী(ইন্তেকাল) শান মুবারক প্রকাশ উনার দিবসকে শোকের দিন বলে এবং উক্ত দিনে খুশি মুবারক প্রকাশ না করে শোক পালন করতে চায়, সেটা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কাজ।
কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –
عَنْ حَضْرَتْ اُمّ عَطِيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا قَالَتْ كُنَّا نُنْهٰى اَنْ نُـحِدَّ عَلٰى مَيّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ اِلَّا عَلٰى زَوْجٍ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَّعَشْرًا.
অর্থ : “হযরত উম্মু আতিয়্যাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কারো ইন্তিকালে তিন দিনের পর আর শোক প্রকাশ করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে স্বামীর জন্য আহলিয়া চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে।” (মুয়াত্তা মালিক শরীফ, বুখারী শরীফ : কিতাবুত তালাক : হাদীছ শরীফ নং ৫৩৪১, মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তালাক : হাদীছ শরীফ নং ১৪৯৩, আবূ দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
সুতরাং ইন্তিকালের ৩ দিন পর আর শোক পালন করা যাবে না। যদি কেউ কারো ইন্তিকালের ৩ দিন পরও শোক পালন করে সেটা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ হবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধিতা হবে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন হায়াতুন নবী। তিনি পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে জীবিত আছেন। উনার পবিত্র বিছালী শান প্রকাশ উপলক্ষ্যে শোক প্রকাশ স্পষ্ট গোমরাহী ও হায়াতুন নবী অস্বীকার করার নামান্তর।
=================================================
অনেকে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু উনার বিলাদত(জম্ম) শরীফ উনার তারিখ ১২ রবিউল আউয়াল নাকি ভুল। তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই যে, ১২ তারিখ ই হচ্ছে সহিহ এবং গ্রহনযোগ্য মত এবং অন্যান্য মতগুলোই মূলত বাতিল মত ।
মূলত ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ ই নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম উনার আগমন যা সহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। এই বিষয়টি কাটানোর জন্য কোন ঐতিহাসিক গ্রন্থ কিংবা কোন অ্যাস্ট্রোনোমারের তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। যারা ৯ তারিখকে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত দিবস বলে দাবি করে, তারা সহিহ হাদীস শরীফকে দুর্বল বলে মাহমুদ পাশা নামক এক মিশরীয় নাস্তিকের বক্তব্য রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় ঐ গোষ্ঠীটি সহীহ হাদীস শরীফকে জইফ বলে নাস্তিকদের কথা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে।
৯ তারিখ প্রমাণের জন্য নাস্তিক মাহমুদ পাশার যে চরম গাণিতিক ভুল বিশ্লেষণকে পুঁজি করা হয় তার বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে যে, দশম হিজরীর মাহে শাওয়ালের শেষ তারিখে সূর্যগ্রহণ হয়েছিল আর একই দিনেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছেলে আউলাদ মুবারক হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বিছাল(ইন্তেকাল) শরীফ গ্রহণ করেন। আর এই হিসাব অনুযায়ী গণনা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দুনিয়ার যমীনে আগমনের তারিখ রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের ৯ তারিখ প্রমাণ করা ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে।
যেহেতু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ৮ম হিজরী সনের যিলহজ্জ শরীফ মাসে দুনিয়ার যমীনে আগমন করেন। আর হাদীছ শরীফ অনুযায়ী তিনি ১৬ মাস যমীনে অবস্থান মুবারক করেন।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَلْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ مَاتَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ ابْنُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ ابْنُ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا فَاَمَرَ بِهٖ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ يُّدْفَنَ فِى الْبَقِيْعِ وَقَالَ اِنَّ لَهٗ مُرْضِعًا يُّرْضِعُهٗ فِى الْـجَنَّةِ
অর্থ: “হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক যখন ১৬ মাস, তখন তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে দাফন মুবারক করার জন্য নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উনার জন্য জান্নাত-এ একজন দুধপানকারিনী রয়েছেন, যিনি উনাকে দুধ মুবারক পান করাবেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ৩০/৫২০, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/২৫১, আল আহাদ ওয়াল মাছানী ৫/৫৬৪, তারীখুল মদীনা ১/৯৭)
অনুরূপ বর্ণনা আস সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী, শরহু মা‘আনিল আছার, মুছান্নাফে আবী শায়বাহ, মা’রিফাতুছ ছাহাবাহ লিআবী নাঈম, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক্ব ইত্যাদি কিতাবসমূহেও রয়েছে।
হিসেবে করে দেখা যায়, ৮ম হিজরী সনের যিলহজ্জ শরীফ মাসের পরবর্তী ১৬ মাস পর উনার বিছাল শরীফ গ্রহণের মাস হচ্ছে রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস। কোন ভাবেই শাওওয়াল শরীফ মাস হয় না।
আর তাই ১০ম হিজরী সনের শাওওয়াল শরীফ মাসের শেষ তারিখ ৬৩২ সালের ৭ নভেম্বরকে সূর্যগ্রহণের তারিখ ধরে সে হিসেব অনুযায়ী গণনা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দুনিয়ার যমীনে আগমনের তারিখ রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের ৯ তারিখ প্রমাণ করার অপচেষ্টা একটি প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।
আসল কথা হচ্ছে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ১০ম হিজরী সনের ১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার), প্রায় ১৬ মাস (১৫ মাস ৮ দিন) বয়সে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে-
ومات يوم الثلاثاء لعشر ليال خلون من شهر ربيع الأول سنة عشر.
অর্থ : “তিনি ১০ম হিজরী সনের ১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। (সুবুলুলহ হুদা ওয়ার রশাদ ১১/২৪, ওয়াকিদী, মুখতাছারু তারীখে দিমাশক্ব ৪/৪৬৫)
যদিও হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বিছাল শরীফ গ্রহণের দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেদিনে সূর্যগ্রহণ হওয়ার কথা নয়। কেননা কোন আরবী (চন্দ্র) মাসের ২য় সপ্তাহে কখনো সূর্যগ্রহণ হয় না, সাধারণভাবে আরবী মাসের শেষের দিকে সূর্যগ্রহণ হয়ে থাকে।
বস্তুত এই সূর্যগ্রহণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার একটি মুজিযা শরীফ ছিলো। আর এই সূর্যগ্রহণের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-উনার অপরিসীম মর্যাদা মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
তাই এই সূর্যগ্রহণের বিষয়টিকে সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগন এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন যে, এটি ছিল সূর্যের শোক প্রকাশ। সুবহানাল্লাহ! এই মতের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে অনেক ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম শক্ত জবাবও দিয়েছেন।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ১০ম হিজরী সনের শাওওয়াল শরীফ মাসে শেষ তারিখে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেননি বরং তিনি ১০ হিজরী সনের ১০ই রবীউল আউওয়াল শরীফে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছেন। তাই ১০ম হিজরী সনে শাওওয়াল শরীফ মাসে শেষ তারিখে সূর্যগ্রহণের তারিখ ধরে সে হিসেব অনুযায়ী গণনা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দুনিয়ার যমীনে আগমনের তারিখ রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের ৯ তারিখ প্রমাণ করার অপচেষ্টা একটি প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।
দ্বিতীয় আরেকটি ভুল হচ্ছে- ১০ম হিজরী সনের শাওওয়াল শরীফ মাসে শেষ তারিখে সূর্যগ্রহণের তারিখ ধরে সে হিসেব অনুযায়ী গণনা করে আমুল ফীল বা হস্তির বছর রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের ১লা তারিখ ধরা হয়েছে ৫৭১ ঈসায়ী সনের ১২ই এপ্রিল। কিন্ত সে বছর পবিত্র মক্কা শরীফে ১১ই এপ্রিলই যে খালি চোখে রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখা গিয়েছিল তার প্রমাণ নাস্তিক মাহমুদ পাশা দিতে পারেনি। তাহলে একটি অগ্রহণযোগ্য ও অনুমান ভিত্তিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আমুল ফীল বা হস্তির বছর রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের ১লা তারিখ ১২ই এপ্রিল ধরা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বস্তুত সৌর বছরের হিসাব দিয়ে চন্দ্র বছরের হিসাব মিলানো সহজ নয়। কেননা সৌর বছর হয় ৩৬৫ দিনে (অধিবর্ষে ৩৬৬ দিন) আর চন্দ্র বর্ষ হয় ৩৫৪/৩৫৫ দিনে। এছাড়াও আরবী মাস শুরু হয় সূর্যাস্তের সাথে সাথে আর সৌর সন শুরু হয় রাত ১২টার পর থেকে।
তার উপর তৎকালীন আরবে নাসী (মাস আগে–পিছে) করা হতো। তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কখনো কখনো ১৭ মাসেও বছর গণনা করতো। কোন সময়ে এই অতিরিক্ত মাসগুলো সংযোজন করতো তার কোন দলীল-প্রমাণ নেই। এমনকি যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য ছফর মাসকে মুহররম মাসের আগে গণনা করতো। এমন পরিস্থিতিতে ক্যালকুলেশন বা গণনা পদ্ধতি অবলম্বন করে হিসাব মিলানো কখনোই সম্ভব নয়। আর তাই নাস্তিক মাহমুদের হিসাব অনুযায়ী আমুল ফীল বা হস্তির বছর ৫৭১ ঈসায়ী হচ্ছে। অথচ বছরটি হচ্ছে ৫৭০ ঈসায়ী।
কেননা বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ لِاَرْبَعِيْنَ سَنَةً مّنْ مُلْكِ كِسْرٰي انَوْشِيْرْوَان
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। তখন ছিলো শাসক নাওশেরাওয়ার শাসনকালের ৪০তম বছর।” (তারীখে ইবনে খালদুন ২য় খ- ৩৯৪ পৃষ্ঠা)
আর হিসাব অনুযায়ী ৫৭০ ঈসায়ী সন হচ্ছে ইরানের শাসক নাওশেরাওয়ারের ৪০তম বছর।
তাহলে যেখানে ঈসায়ী সন হিসেবে ১ বছরের একটি তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে সেখানে এটা কি করে বলা যেতে পারে যে, আমুল ফীল বা হস্তির বছর রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের ১২ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ছিল না। নাঊযুবিল্লাহ!
তাই এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দুনিয়ার যমীনে আগমনের তারিখ হচ্ছে ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, সেদিনটি ছিল- ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার)।
عَنْ حَضْرَتْ عَفَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلِيْمِ بْنِ حَيَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَعِيْدِ بْنِ مِينَا رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيّ وَحَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِـيْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الْاَوَّلِ.
অর্থ : “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-উনার বিলাদত শরীফ হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়েছিল।” সুবহানাল্লাহ! (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আছ ছিহ্হাহ্ ওয়াল মাশাহীর ১ম খ- ২৬৭ পৃষ্ঠা)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনার সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত তাহযীব শরীফ)
“দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ণনাকারী যথাক্রমে হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ শরীফ, তাক্বরীব শরীফ)
সনদের উপরের দুজন তো ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাদের তো কোন তুলনাই নেই। অপর তিন জন রাবী হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সলিম ইবনে হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে রেজালের কিতাবে বলা হয়েছে উনারা উচ্চ পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম, সিকাহ, তীক্ষ স্মরণশক্তিসম্পন্ন, বিশস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।’’ (খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা, ত্বাকরীবুত তাহযীব ২য় খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা, সমূহ রেজালের কিতাব)
আর হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী। এই বিশুদ্ধ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-উনার বিলাদত শরীফ দিবস।”
এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই হযরত ইমামগণের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ শরীফ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব শরীফ, মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ইত্যাদি)
সুতরাং প্রমাণিত হল ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ ই হচ্ছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার সহিহ তারিখ।
=================================================
অনেক গাধা দাবি করে, ইসলামে নাকি জন্মদিন পালন করা হারাম। তাহলে জুমুয়ার দিন পালন করা কি? অথচ এ গাধাগুলো ঠিক ঠিক জুমার দিনকে পালন করে থাকে। অথচ এ বোকাগুলো জানে না, জুমার দিনটি হচ্ছে প্রথম নবী হযরত আদম আলাইহি সালামে উনার সম্মানিত সৃষ্টি দিবস। হাদীস শরীফেএ ইরশাদ মুবারক হয়েছে-“সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই পবিত্র দিনে হজরত আদম আলাইহি সালাম উনাকে কে সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছিল এবং এই দিনে উনাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। (মুসলিম শরিফ)
হযরত আদম আলাইহি সালাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করার দিনটি যদি মুসলমানরা পালন করে থাকে, জন্মদিন পালন করা হারাম কে বললো ?? গাধাগুলো বুঝেও না, জন্মদিন পালন করা হারাম নয়।
কেননা, হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের বিখ্যাত সঙ্কলক ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে ২ খানা বাব বা পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন যথাক্রমে –
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত।
بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা।
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – “শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের খানা খেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ بِلَالِ بْنِ كَعْبٍ الْعَكِّيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ زُرْنَا حَضْرَتْ يَـحْيَى بْنَ حَسَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـي قَرْيَتِهِ اَنَا وَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ بْنُ اَدْهَمَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ قَرِيرٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ مُوسَى بْنُ يَسَارٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَجَاءَنَا بِطَعَامٍ، فَاَمْسَكَ حَضْرَتْ مُوسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ حَضْرَتْ يَـحْيَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَمَّنَا فِـي هٰذَا الْمَسْجِدِ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَنَّى حَضْرَتْ اَبَا قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً، يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، فَوُلِدَ لِاَبِـيْ غُلَامٌ، فَدَعَاهُ فِـي الْيَوْمِ الَّذِيْ يَصُوْمُ فِيْهِ فَاَفْطَرَ، فَقَامَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَكَنَسَهُ بِكِسَائِهِ، وَاَفْطَرَ حَضْرَتْ مُوْسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَضْرَتْ اَبُو عَبْدِ اللهِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَبُو قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اسْـمُهُ جَنْدَرَةُ بْنُ خَيْشَنَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ.
অর্থ : “হযরত বিলাল ইবনে কা’বিল ‘আক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি, হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল আযীয ইবনে কুদাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মূসা ইবনে ইয়াসার ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাসতিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে উনার গ্রামে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাস্তিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের জন্য খাবার আনলেন। হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রোযাদার হওয়ায় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিনানা গোত্রীয় একজন ছাহাবী, যাঁর উপনাম হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি চল্লিশ বছর যাবত এই মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি এক দিন রোযা রাখেন এবং এক দিন বিরতি দেন। আমার একজন ভাই জন্মগ্রহণ করলে আমার পিতা উনাকে দাওয়াত দেন। সেটি ছিল উনার রোযা রাখার দিন। তিনি রোযা ভাঙ্গলেন। হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে উনার চাদরখানা হাদিয়া দেন এবং হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রোযা ভাঙ্গেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছাহাবী হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক হযরত জানদারা ইবনে খায়শানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দা’ওয়াতি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে শিশুর জন্মদিনেই জন্মদিন পালনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার চুড়ান্ত সন্তুষ্টি মুবারক দুনিয়াতেই প্রাপ্ত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাদ্য গ্রহণ করেছেন।
আবার بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – “সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দাওয়াতে এসে খানাপিনা করেছেন এবং শিশুর জন্য দোয়া করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ لَمَّا وُلِدَ لِـي اِيَاسٌ دَعَوْتُ نَفَرًا مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَطْعَمْتُهُمْ فَدَعَوْا فَقُلْتُ اِنَّكُمْ قَدْ دَعَوْتُـمْ فَبَارَكَ اللهُ لَكُمْ فِيْمَا دَعَوْتُـمْ وَاِنّـيْ اِنْ اَدْعُوْ بِدُعَاءٍ فَاَمّنُوْا قَالَ فَدَعَوْتُ لَهُ بِدُعَاءٍ كَثِيْرٍ فِـيْ دِينِهِ وَعَقْلِهِ وَكَذَا قَالَ فَاِنّـيْ لَاَتَعَرَّفُ فِيْهِ دُعَاءَ يَوْمِئِذٍ.
অর্থ : “হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার আওলাদ ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দাওয়াত করে খাবার পরিবেশন করেন। উনারা দোয়া মুবারক করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা দোয়া মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের দোয়া মুবারক উনার উসীলায় আপনাদের বরকত মুবারক দান করুন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন বললেন, তিনিও কতগুলো দোয়া করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেন আমীন বলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি উনার আওলাদের দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের জন্য অনেক দোয়া করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দু‘য়ায়ি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৫)
সুতরাং জন্মদিন পালন বা জন্মোৎসব করা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার রীতি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ব্যাপারে শিক্ষা মুবারক প্রদান করেছেন বলেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাবার খেয়েছেন এমনকি রোযা ভঙ্গ করে খাবার খেয়েছেন এবং দোয়া মুবারক করেছেন। তাই জন্মোৎসব পালন করাকে হারাম বলা সুস্পষ্ট কুফরী। যেহেতু এই বিষয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শিক্ষা দিয়েছেন।
তাই জন্মদিন পালন করা হারাম নয়, বরং জন্মদিনের নাম করে হারাম কোন কাজ করা হারাম। কিন্তু গাধাগুলো মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার জন্য খুশী মুবারক প্রকাশ করাকে বিদয়াত ফতোয়া দেয়। এই সকল বিভ্রান্ত লোকদের জন্য মুসলমানরা আজ দ্বিধাবিভক্ত এবং মুসলমানদের এই করুণ অবস্থা।
=================================================
অনেক জাহেল প্রকৃতির লোকেরা বলে থাকে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলিাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদে হলে এই ঈদে নামাজ কত? এই মূর্খদের নিকট আমাদের প্রশ্ন ঈদ হলে তার সাথে নামাজ থাকতে হবে এমন শর্ত শরীয়তে কোথায় আছে?
অথচ পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ উনার থেকে প্রমানিত যে জুমুয়ার দিন ঈদের দিন। আমি প্রশ্ন করবো এই ঈদে নামাজ কত রাকাত?? চালাকী করে হয়তো বলতে পারেন জুমুয়ার নামাজই হচ্ছে ঈদের নামাজ। এই চালাকীর জবাব আগেই দিয়ে দিই, জুমুয়ার নামাজ ঈদের নির্দিষ্ট নামাজ নয়। বরং যোহরের স্থলাভিষিক্ত এই নামাজ। যোহরের ৪ রাকাত ফরজের পরিবর্তে ২ রাকাত নামাজ পড়া হয়। আর বড় কথা হচ্ছে দুই ঈদ বা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজ সকালে পড়া হয়। তাহলে জুমুয়ার দিন ঈদের দিন হওয়ার পর সকালে ঈদের নামাজ পড়া হয় না কেন?
পবিত্র তিরমিযী শরীফ এ আছে, আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ যিলহজ্জ ঈদের দিন। এখন জবাব দিন ৯ যিলহজ্জ আরাফার দিন ঈদের কোন নামাজ আপনারা পড়েন? এর পর আইয়ামে তাশরীক ১১-১৩ যিলহজ্জও ঈদের দিন। (পবিত্র তিরমিযী শরীফ) এই ঈদের দিনে কত রাকাত নামাজ পড়েন?
কোন মুসলমানের সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তার কানে আযান-ইকামত দেয়া হয়। কিন্তু এই আযান-ইকামতের পরে কোন নামায আদায় করা হয় না কেন? মুসলমানদের বিবাহের অনুষ্ঠানে খুৎবা পাঠ করা হয় কিন্তু খুৎবার আগে বা পরে কোন নামায আদায় করা হয় না কেন?
বরং ঈদের নামাজ কয় রাকাত বলে তারা বিদয়াতের জন্ম দিচ্ছে। ঈদ হলে তার সাথে নামাজ সংশ্লিষ্ট নয়। শুধু ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনের জন্য নামাজকে খাছ করা হয়েছে, অন্যসব ঈদের জন্য নয়। সূতরাং এমন বিভ্রান্তি মূলক প্রশ্ন তুলে সাধারণ লোকদের ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা করা কখনোই উচিত হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি ধোঁকাবাজদের পছন্দ করেন না।
=================================================
আলেম নামধারী অনকে জহেল প্রকৃতির লোকেরা বলে থাকে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নাকি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানে বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। আল্লাহকে ডাকার পরিবর্তে নাকি নবীজী( ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে ডাকা এবং উনার সাহায্য চাওয়া পর্যন্ত রূপ নিতে পারে। এবং এই বিষয়ে তারা একটা হাদীস শরীফে উল্লেখ করে যেমন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “আমার এমনভাবে প্রশংসা করো না যেমনটি খ্রীস্টানরা মরিয়মের পুত্রকে করে থাকে। কেননা আমি তাঁর বান্দাহ মাত্র। সুতরাং [আমার সম্পর্কে] বল: আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল।” (বুখারী)
মূলত এই বিষয়ে তাদের বক্তব্যে উল্লিখিত হাদীস শরীফ হতে এটা সুস্পষ্ট যে, খ্রীষ্টানরা হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক সাব্যস্ত করতো, যা একটি মহা শিরক। আর তাই উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাতে এধরনের গর্হিত কাজে লিপ্ত না হয়ে পড়ে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক সাব্যস্ত না করে, সেজন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতকে সতর্ক-সাবধান করে দিয়েছেন। কিন্তু এর দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন বন্ধের কিংবা উনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা না করার দলীল পেশ করা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّا اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا ◌ لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَاَصِيْلًا ◌
অর্থ: “হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনো এবং তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, সম্মান মুবারক করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)
সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দায়িমীভাবে সম্মান মুবারক করা মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
حَدَّثَتْنِي حَضْرَتْ مَيْمُونَةُ بِنْتُ الْـحَارِثِ زَوْجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّمَ بَاتَ عِنْدَهَا فِي لَيْلَتَهَا فَقَامَ يَتَوَضَّاُ لِلصَّلاةِ فَسَمِعَتْهُ يَقُوْلُ فِي مُتَوَضَّئِهِ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ ثَلاثًا نُصِرْتَ نُصِرْتَ ثَلاثًا فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ سَـمِعْتُكَ تَقُولُ فِي مُتَوَضَّئِكَ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ ثَلاثًا نُصِرْتَ نُصِرْتَ ثَلاثًا كَاَنَّكَ تُكَلِّمُ اِنْسَانًا فَهَلْ كَانَ مَعَكَ اَحَدٌ؟ فَقَالَ هَذَا رَاجِزُ بَنِي كَعْبٍ يَسْتَصْرِخُنِي وَيَزْعُمُ اَنَّ قُرَيْشًا اَعَانَتْ عَلَيْهِمْ بَنِي بَكْرٍ
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছালিছ ‘আশারা আলাইহাস সালাম বর্ণনা করেন, একরাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। তিনি যথারীতি তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের জন্য উঠলেন এবং অযু মুবারক করার জন্য গমন করলেন। অতঃপর আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি অযুখানায় তিনবার “লাব্বাইক” (আমি তোমার কাছে উপস্থিত) এবং তিনবার “নুছিরতা” (সাহায্য করা হল) বললেন। যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অযু মুবারক করে বের হলেন তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি শুনতে পেলাম- আপনি অযুখানায় তিনবার ‘লাব্বাইকা’ এবং তিনবার ‘নুছিরতা’ বলেছেন। যেন আপনি কোন মানুষের সাথে কথা বলছিলেন। আপনার কাছে আমি ব্যতীত কেউ ছিলেন কি? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত রাজিয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কাছে ফরিয়াদ করছেন। কুরাইশরা উনার উপর বনী বকর গোত্রকে লেলিয়ে দিয়েছে।” (মু’জাম আছ ছগীর লি তাবরানী, ২য় খ-, হাদীছ শরীফ নং ৯৬৮, মু’জাম আছ কবীর লি তাবরানী, ২৩ খ-, ৪৩৩ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ১০৫০)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানরত হযরত রাজিয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাহায্যের ফরিয়াদ করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে হযরত রাজিয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফরিয়াদ শুনেছেন এবং উনাকে সাহায্য করেছেন। সুব্হানাল্লাহ!
সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। সুতরাং উনার প্রতি সম্মানের বাড়াবাড়ি হয়ে যায়, আল্লাহকে ডাকার পরিবর্তে নবীজীকে ডাকা এবং উনার সাহায্য চাওয়া পর্যন্ত রূপ নিতে পারে’ এ ধরনের উক্তি করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা এ ধরনের কথা বলা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান মর্যাদা মুবারক উনার খিলাফ।
=================================================
কিছু লোক এমন আছে যারা বলে, “সারা বিশ্বে মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে, আর আপনারা ঈদে মীলাদুন নবী উপলক্ষে খুশি করছেন।” যারা এ ধরনের বক্তব্য দেয় তারা নিতান্তই জাহেল বা মূর্খ। একটি কথা কারোই অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, মুসলমানরা ইসলাম পালন ছেড়ে দেওয়ায় দরূণ এই করুন অবস্থা। মুসলমানরা কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ থেকে দূরে সরে যাওয়ায় মুসলমানদের এত হেনস্থা ও অধপতন।
কিন্তু কেন এই অবস্থা ?? মুসলমানরা আসলে কোন আমল ছেড়ে দিয়েছে ??
এই বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে ঈরশাদ মুবারক করেন- ‘‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’’ (সূরা ইব্রাহীম : ৭)
অবশ্যই আমাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনাকে পাওয়ার জন্য আমরা শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আর সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই শুকরিয়া আদায় করার জনই করা হয় । বর্তমানে মুসলমানরা যদি সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতে পারতো, তবে অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দিতেন, মুসলমানদের সমৃদ্ধি দিতেন। কিন্তু যেহেতু মুসলমানরা তা সঠিকভাবে করছে না তাই মুসলমানদের এত করুণ অবস্থা। মুসলমানরা ধাপে ধাপে নির্যাতিত হচ্ছে।
এই বিষয়ে হাফিজুল হাদীছ আবুল ফয়েয হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
لَازَالَ اَهْلُ الْـحَرَمَيْنِ الشَّرِيْفَيْنِ وَالْـمِصْرِ وَالْيَمَنِ وَالشَّامِ وَسَائِرِ بِلَادِ الْعَرَبِ مِنَ الْـمَشْرِقِ وَالْـمَغْرِبِ يَـحْتَفِلُوْنَ بِـمَجْلِسِ مَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَفْرَحُوْنَ بِقُدُوْمِ هِلَالِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَيَغْتَسِلُوْنَ وَيَلْبَسُوْنَ الثّيَابَ الْفَاخِرَةَ وَيَتَزَيّـِنُوْنَ بِاَنْوَاعِ الزّيْنَةِ وَيَتَطَيّـِبُوْنَ وَيَكْتَحِلُوْنَ وَيَأْتُوْنَ بِالسُّرُوْرِ فِىْ هٰذِهِ الْاَيَّامِ وَيَبْذُلُوْنَ عَلَى النَّاسِ بِـمَا كَانَ عِنْدَهُمْ مِنَ الْـمَضْرُوْبِ وَالْاَجْنَاسِ وَيَهْتَمُّوْنَ اِهْتِمَامًا بَلِيْغًا عَلَى السّمَاعِ وَالْقِرَاءَةِ لِـمَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَنَالُوْنَ بِذَالِكَ اَجْرًا جَزِيْلًا وَفَوْزًا عَظِيْمًا.
অর্থ : “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেছেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান, এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন। উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য অর্জন করেছেন তা প্রকাশ করতেন।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান লি শেখ ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ৯ম খ-, পৃষ্ঠা ৫৬; মীলাদুল উরুস- উর্দু “বয়ান-ই-মিলাদুন নবী”, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫, লাহোর; দুররুল মুনাজ্জাম, পৃষ্ঠা ১০০-১০১; মীলাদুন নবী, পৃষ্ঠা ৫৮)
সুতরাং যারা বলে- “সারা বিশ্বে মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে, আর আপনারা ঈদে মীলাদুন নবী নিয়ে খুশি করছেন?” তারা জাহিল, অকৃতজ্ঞ ও লানতপ্রাপ্ত ছাড়া অন্যকিছু নয়।
=================================================
অনেকে বলে থাকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলােইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাহফিলে অনেক বিদয়াত পাপাচার হই তাই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু পালন করাই নাকি বিদয়াত মূলত তাদের এই বক্তব্য হচ্ছে, মাথাই ব্যাথা হলে পুরো মাথা কেটে ফেলার মত। ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের নামে অনেকে হারাম কাজ করতে পারে, কিন্তু সেটার দায় তো মাহফিলের উপর বর্তাবে না। যেমন বাংলাদেশের অনেক কওমী মাদ্রাসায় অপকর্মের ঘটনা পেপার পত্রিকায় নিয়মিত আসে, তাই বলে কি এখন মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে হবে ? উপরে যে যুক্তি পেশ করা হয়েছে তাতে সমস্ত কওমী মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে হবে। তারা করবে কি??
=================================================
বিভিন্ন বাতিল ও গোমরাহ ফেরকার লোকেরা ১২ শরীফ পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে বলে থাকে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনি নাকি ৯ রবিউল আউয়াল শরীফ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। মূলত তাদের বক্তব্যই ভুল এবং বিদ্ধেষ প্রসূত।
কারণ নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন তা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাই প্রমাণিত।
মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اَخْرَجَ أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ فِىْ كِتَابِهٖ قَالَ حَدَّثَنَا عَفَّان عَنْ سَلِيمِ بْنِ حَيَّانَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ مِينَا، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْانْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَعَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّهُمَا قَالَا وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِـىْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ. هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ عَلـٰى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ وَجَامِعِ اَئِمَّةِ الْـحَدِيْثِ.
অর্থ: “হযরত আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় কিতাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন ‘আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, আর তিনি সালীম ইবনে হাইয়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি সা‘ঈদ ইবনে মীনা’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে আর হযরত সা‘ঈদ ইবনে মীনা’ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের থেকে বর্ণনা করেন। উনারা দু’জন বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন,নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমুল ফীল (হস্তীর বছর) মহাপবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুলূগুল আমানী মিন আসরারিল ফাত্হির রব্বানী ২০তম খ- ১৮৯ পৃ., আছ ছিহ্হাহ ওয়াল মাশাহীর ১ম খ- ২৬৭ পৃ.)
সমস্ত আইম্মাতুল হাদীছ তথা হাদীছ শরীফ উনার সমস্ত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শর্ত অনুযায়ী ছহীহ। সুবহানাল্লাহ! যেমন উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা মুত্তাছিল সনদ তথা অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত, বর্ণনাকারীদের সকলেই ‘আদ্ল বা নির্ভরযোগ্য, ন্যায়-পরায়ণ, দ্বীনদার ও উন্নত শিষ্টাচারের অধিকারী।সকলেই প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী, অধিক নির্ভরযোগ্য কোন বর্ণনাকারী থেকে এর বিপরীত কোন বর্ণনা বিদ্যমান নেই সুতরাং উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা شَاذّ( শায) নয়। সনদে বা মতনে প্রচ্ছন্ন কোনো ক্রটি বা عِلَّة বিদ্যমান নেই। উক্ত পবিত্র হাদীস শরীফখানা দুইজন বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের থেকে বর্ণিত, যিনারা হচ্ছেন মুকাছ্ছিরীন রাবী তথা সবার্ধিক সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সমর্থনে মুরসাল হাদীছ শরীফ রয়েছে এবং উক্ত হাদীছ শরীফখানা উনার সমর্থনে উম্মতের মশহূর আক্বওয়াল (বর্ণনা) রয়েছে। যাঁরা রাবীর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই-বাছাইয়ের ইলম রাখেন, উনাদের দৃষ্টিতে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানার বর্ণানাকারী উনারা প্রত্যেকেই চরম বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য।
সুতরাং কোন প্রকার সন্দেহ-সংসয় ছাড়াই নিশ্চিতভাবে এ সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়াও উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার সমর্থনে উম্মতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হযরত ইমাম ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত ইমাম ইবনে জায্যার রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি , হযরত ইমাম ত্বীবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত ইমাম ইবনে বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা ইজমা’ বর্ণনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (শরহুয যারক্বানী ১/২৪৮, মা ছাবাত বিসসুন্নাহ ২৩৯, সীরাতু খতামুল আম্বিয়া ১২)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দুইজন সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য ইমাম উনারা উনাদের স্বীয় কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার সকল রাবীগণ থেকে ছিহাহ সিত্তার ইমামগণসহ আরো অন্যান্য সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য ইমামগণ স্বীয় কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ লিপিবদ্ধ করেছেন। যিনাদের সনদে বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে হিব্বান শরীফ, আবূ না‘ঈম শরীফ, বাইহাক্বী শরীফ, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ শরীফসহ বিভিন্ন কিতাবে ২৫টির ও অধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই যারা পবিত্র ১২ই শরীফ উনার পরিবর্তে অন্য কোনো তারীখকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হিসেবে সাব্যস্ত করতে চায়, তারা কি আলোচ্য সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ন্যায় এরূপ বিশুদ্ধ কোনো সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দেখাতে পারবে? কস্মিনকালেও পারবে না। যদি তাই হয়, তাহলে তাদের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে- মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ তারীখ হিসেবে মেনে নেয়া। এরপরেও যারা মানবে না, সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তারা হচ্ছে লা-মাযহাবী, ওহাবী-সালাফী, মুনাফিক্ব-উলামায়ে সূ’ ও বাতিল ৭২ ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। না‘ঊযুবিল্লাহ!
=================================================
অ্যাস্ট্রোনমারদের গবেষণায় নির্ভুলভাবে প্রমাণ হয় ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফই হচ্ছে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন (জন্ম) এর দিন।
যেমন দেখুন নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায় গ্রহণের দিন ছিলো: হিজরী সন: ১১ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল
ঈসায়ী সন: ৬৩২ সাল, ৮ই জুন
বার: সোমবার
**(১ নং দ্রষ্টব্য দেখুন)
Back Calculation করে দেখা যায়, ৫৭০ ঈসায়ী সনে রবীউল আউায়াল মাস শুরু হয়েছিলো: হয়, ২৩ শে এপ্রিল ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে। (যদি সফর মাস ২৯শে দিনে হয়) অথবা,২৪ শে এপ্রিল ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে। (যদি সফর মাস ৩০ দিনে হয়)
কিন্তু, এটা নিশ্চিত ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে সফর মাস ৩০ দিনের হয়েছিলো। **(সূত্র: ২ নং দ্রষ্টব্য দেখুন) সে অনুযায়ী আপনি নিজেই গণনা করলে পাবেন:
৫৭০ সালের ৫ই মে সোমবারই হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
তাহলে আমরা দেখতে পেলাম-
বিলাদত দিবস : ৫ই মে, ৫৭০ ঈসায়ী সন ৫৩ পূর্ব হিজরী সোমবার
বিদায় দিবস : ৮ই জুন, ৬৩২ ঈসায়ী সন, ১১ হিজরী সোমবার
দুই ইংরেজী সনের সময়ের পার্থক্য-
৬২ বছর ১ মাস ৩ দিন
সুতরাং চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী-
৬২x৩৬৫+৩১+৩= (২২৬৬৪ ভাগ ৩৫৫ দিন)= ৬৩+ বৎসর
১ নং দ্রষ্টব্য: আখেরী চাহার শোম্বা বলা হয় সফর মাসের শেষ বুধবারকে, কিন্তু কোন তারিখ নিদ্দিষ্ট করা হয় না। এর কারণ সফর মাসের শেষ বুধবার ছিলো হিজরী মাসের ৩০ তারিখ, যা সব সময় আসে না। তাই পরবর্তীতে এ দিনটি যেন প্রতি বছর পালন করা যায় সেই সুবিধার্থে সফর মাসের শেষ বুধবার ধরে দিনটি পালন করা হয়। এখন ৩০ তারিখ যদি বুধবার ধরা হয়, তবে আপনি নিজেই হাতে গুনে দেখুন ১২ তারিখ সোমবারই হয়।
২ নং দ্রষ্টব্য: ৫৭০ ঈসায়ী সন ৫৩ পূর্ব হিজরীতে সফর মাস যে ৩০ দিন ছিলো তার প্রমাণ দুটি:
ক) চাঁদ গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যায়, নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরফের আগে পর পর ৪ চন্দ্র মাস ৩০ দিন করে হয়েছিলো।
খ) যদি সফর মাস ৩০ না হয়, তবে বিলাদত দিবস সোমবার হয় না। অথচ সহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলেছেন উনার বিলাদত শরীফ গ্রহণ হয়েছে সোমবার দিন। তাই অ্যাস্ট্রোনমার বা জোর্তিবিজ্ঞানীদের গবেষণায় নির্ভুল ভাবে প্রমাণিত যে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাদত শরীফের দিন অবশ্যই ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
=================================================
নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দিন বিলাদত শরীফ (জন্ম) গ্রহণ করেন সেই দিন চাঁদ কেমন ছিলো ?? আসুন, ইতিহাস ও বিজ্ঞান মিলিয়ে নেই
উল্লিখিত পবিত্র রাতটি প্রসঙ্গে স্বয়ং নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম বলেন, ‘এটা ছিলো চন্দ্রের আলোয় আলোকিত রাত। চারপাশে কোন প্রকার অন্ধকার ছিলো না। সে সময় হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সন্তানাদিদের নিয়ে হারাম শরীফ-্উনার দিকে যান বাইতুল্লাহ শরীফ-এর ভাঙা দেয়াল মেরামত করার জন্য। (সূত্র: প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক আল্লামা হায়তামী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কর্তৃক রচিত ‘আননি ‘মাতুল কুবরা আলাল আলম)
অনেকে দাবি করে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ নাকি ২, ৮ কিংবা ৯ই রবিউল আউয়াল তারিখে। কিন্তু এগুলো ভুল। কেননা্ ঐদিনের ঘটনাবলী এবং অ্যাস্ট্রোনমাদের গবেষণায় বলে দিচ্ছে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ছিলো ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ। সুবহানাল্লাহ। কারণ- ২ রা রবীউল আউয়াল হবার সম্ভাবনা একারণেই নেই যে সেদিন চাঁদ উদয় হবার পর প্রায় ১ ঘণ্টা পর চাঁদ অস্ত গিয়েছিলো। ৯ ই রবীউল আউয়াল হবার সম্ভাবনা নেই কারণ সেদিন চাঁদের আলো ততটা তীক্ষ্ণ ছিলনা, ৮৬ ভাগ আলোকিত ছিল। আর ১২ ই রবীউল আউয়াল শরীফ চাঁদ ১০০ ভাগ আলোকিত ছিল। অর্থাৎ হযরত মা আমিনা আলাইহাস সালাম উনার ভাষ্য অনুযায়ী যা জোছনার রাত ছিল। সুবহানাল্লাহ।
=================================================
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তাজদীদ আন নাযীরু, আন নাজমুছ ছাক্বিবু, আন নূরুম মুজাসসামু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার দিনই হচ্ছে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদু ঈদে আকবর এবং তা পালন করা জিন-ইনসান তো অবশ্যই বরং কুল-কায়িনাতের জন্য ফরয আর এই মুবারক তাজদীদই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক ।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
محمد رسول الله
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” (পবিত্র সূরা ফাতহ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক ফরমান,
وما محمد الا رسول
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূলুল্লাহ ব্যতীত আর কিছুই নন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্যে রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (মুসলিম শরীফ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু আমাদেরই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নন; বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সহ সমস্ত মাখলুকাতের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাক্বাম। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক নন। এছাড়া বাকি সমস্ত মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী তিনি। সুবহানাল্লাহ!
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে- কোনো ব্যক্তি যদি ক্বিয়ামত পর্যন্ত শুধু لا اله الا الله“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পড়ে তারপরেও সে ঈমানদার হতে পারবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত না “মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” না পড়বে। সম্মানিত বেহেশত উনার দরজায়, গাছের পাতায় পাতায়, হুর-গেলমানদের কপালে কপালে কুদরতীভাবে সোনালী হরফে লিখা রয়েছে-
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। এই পবিত্র কালিমা শরীফ শুধু উম্মতে হাবীবী তথা আমাদের জন্যই খাছ নয়; বরং সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মাখলুকাতের, এমনকি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও পবিত্র কালিমা শরীফ হচ্ছে এই পবিত্র কালিমা শরীফ।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘হাবীবুল্লাহ’ হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন।
এ সম্পর্কে হাদীছে কুদসী শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে,
كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف
অর্থ: “আমি গুপ্ত ছিলাম। আমার মুহব্বত হলো যে, আমি জাহির হই। তখন আমি আমার (রুবুবিয়্যত) জাহির করার জন্যই সৃষ্টি করলাম মাখলূকাত (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে)।” (আল মাকাসিদুল হাসানা/ ৮৩৮, কাশফূল খিফা/২০১৩, আসনাল মুত্বালিব/১১১০, তমীযুত তীব/১০৪৫, আসরারুল মারফুআ/৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০, আত তাযকিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬, সিররুল আসরার, কানযুল উম্মাল)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
لولاك لما اظهرت الربوبية
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে আমি আমার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করতাম না।” (কানযুল উম্মাল)
হাদীছে কুদসী শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتانى جبريل عليه السلام فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لولاك ماخلقت الجنة ولولاك ماخلقت النار
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন: হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম আমার নিকট আগমন করে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এই বলে পাঠিয়েছেন যে, আপনি যদি না হতেন তবে আমি জান্নাত ও জাহান্নাম কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” (দায়লামী, কানযুল উম্মাল-৩২০২২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি স্বীয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক না করতেন, তাহলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এই সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন “আমি যদি আমার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হযরত মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক না করতাম তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” (মুসতাদরেকে হাকীম)
এমনকি কাউকে কোনো পবিত্র নুবুওওয়াত মুবারক, কোনো রিসালত মুবারক দেয়া হতো না বা প্রকাশ পেতো না যতোক্ষণ পর্যন্ত না আপনার প্রতি পবিত্র ঈমান আনা হতো। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “রোযাদারের জন্য দুটি খুশি বা ঈদ। একটা হচ্ছে ইফতার করার সময়। আর একটা মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ মুবারক উনার সময়।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ عُبَيْدِ ابْنِ السَّبَّاقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي جُـمُعَةٍ مِنَ الْـجُمَعِ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا فَاغْتَسِلُوْا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهٗ طِيْبٌ فَلَا يَضُرُّهٗ اَنْ يـَّمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ
অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক পবিত্র জুমুআ উনার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআহ উনার দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদ উনার দিন সাব্যস্ত করেছেন। তাই তোমরা গোসল কর আর যার নিকট সুগন্ধি রয়েছে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য।” সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)এছাড়াও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আরাফা উনার দিনকেও ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, –
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ سَيّدُ الاَيَّامِ وَاَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ وَهُوَ اَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ الاَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيْهِ خَـمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلَى الْأَرْضِ وَفِيْهِ تَوَفَّى اللهُ حَضْرْتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ اللهَ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا اِلَّا اَعْطَاهُ مَا لَـمْ يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُّقَرَّبٍ وَلَا سَـمَاءٍ وَلَا اَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَـحْرٍ اِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ.
অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমআ শরীফ উনার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এদিনটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৭, আল্ মু’জামুল কবীর লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫১১, বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭৩)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,-
قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَـمَ اللّٰـهُمَّ رَبَّنَا اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَـنَا عِيْدًا لّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مّنْكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ ◌ قَالَ اللهُ اِنّــِيْ مُنَزِّلُـهَا عَلَيْكُمْ ۖ فَمَنْ يَكْفُرْ بَعْدُ مِنْكُمْ فَاِنّـِـيْ اُعَذّبُهٗ عَذَابًا لَّا اُعَذّبُهٗ اَحَدًا مّنَ الْعَالَمِيْنَ ◌
অর্থ : “হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহি তিনি বলেন, আয় আমাদের রব মহান আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্তী) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষ্যটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন।
নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবেনা বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪-১১৫)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, আবুল বাশার হযরত আদম শফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আগমন ও বিছাল শরীফ এর দিন হওয়ার কারণে পবিত্র জুময়া উনার দিন যদি পবিত্র ঈদ উনার দিন হয় এবং তা পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহা উনার দিন থেকেও সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ হয়, পবিত্র আরাফা উনার দিন যদি পবিত্র ঈদ উনার দিন হয়, রোযাদারের জন্য যদি ইফতারের সময় ঈদ হয়, খাঞ্চা নাযিলের কারণে খাঞ্চা নাযিলের উক্ত দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং উনার উম্মতের জন্য খুশির দিন হয় এবং সে দিনকে খুশির দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হতে হয়; তাহলে যিনি সৃষ্টি না হলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান-যমীন, আরশ-কুরসী, লওহ, কলম, জামাদাত-শাজারাত-হাজারাত, জিন-ইনসান কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না, কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম সৃষ্টি হতেন না, হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনারাও সৃষ্টি হতেন না। রোযা, নামায, যাকাত এমনকি খোদ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অজুদ মুবারক খুঁজে পাওয়া যেতো না, শুধু তা-ই নয় স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াতকেও প্রকাশ করতেন না, তাহলে সেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই দিন যে তারিখে এই দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনলেন, সেই পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার দিন কি পবিত্র ঈদ উনার দিন হবে না, অন্যান্য ঈদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাবান ও ফযীলতপূর্ণ হবে না এবং সমস্ত মাখলুকাতের জন্য তা পালন করা ফরয-ওয়াজিব হবে না?
অবশ্যই অবশ্যই সেই দিন পবিত্র ঈদের দিন হবে, সকল ঈদের সেরা ঈদ তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদু ঈদে আকবর হবে এবং তা পালন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য তো অবশ্যই এমন কি সমস্ত মাখলুকাতের জন্য ফরয-ওয়াজিব হবে। আর তা পালন না করলে কঠিন শাস্তিতে গ্রেফতার হতে হবে।
আর এটাই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক। আর এই মুবারক তাজদীদ-ই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক। কেননা অন্যান্য মুজাদ্দিদগণ উনাদের তাজদীদসমূহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাথে সম্পৃক্ত। আর এই মুবারক তাজদীদ স্বয়ং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিষ্ঠাতা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত। যিনি না হলে খোদ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অজুদ মুবারক পাওয়া যেতো না।
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক উনার মর্যাদা, বুযুর্গী, সম্মান অন্যান্য তাজদীদসমূহের তুলনায় অনেক বেশি। আর এর তাজদীদকারী সুমহান মুজাদ্দিদ উনার মর্যাদা, সম্মান, বুযুর্গীও অন্যান্য মুজাদ্দিদ উনাদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এই তাজদীদ মুবারক-ই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক তাজদীদ। আর এর তাজদীদকারী মুজাদ্দিদই হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ। আর এই জন্যই উনার দ্বারা শোভা পেয়েছে এই তাজদীদ মুবারক করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সুমহান মুজাদ্দিদ উনাকে চেনার এবং উনার এই মুবারক তাজদীদকে বুঝার তাওফীক দান করুন, কবুল করুন, মদদ করুন। (আমীন)
=================================================
বিভিন্ন বাতিল ও গোমরাহ ফেরকার লোকেরা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে বলে থাকে, রোযা নাকি ঈদ এর বিপরীত এবং নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি উনার জম্মদিনে রোযা রেখেছেন আর আমরা ঈদ পালন করাই নাকি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করি !!
প্রকৃত বিষয় হল, সাওম বা রোযা ঈদের বিপরীত এ ধরনের কোন কথা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধানে নেই। তাই রোযা রেখে যেমন ঈদ পালন করা যায়, তেমনি রোযা না রেখেও ঈদ পালন করা যায়। অর্থাৎ ‘ঈদ ও রোযা কখনো এক সাথে হয় না’ -এ ধরনের বক্তব্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র ৯ যিলহজ্জ শরীফ (যা ইয়াওমুল আরাফাহ বা পবিত্র আরাফা উনার দিন ) সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَمَّارِ بْنِ اَبِـي عَمَّارٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَرَاَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ (اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلاَمَ دِيْنًا) وَعِنْدَهٗ يَهُوْدِيٌّ فَقَالَ لَوْ اُنْزِلَتْ هٰذِهٖ عَلَيْنَا لَاتَّـخَذْنَا يَوْمَهَا عِيْدًا. قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ فَاِنَّـهَا نَزَلَتْ فِيْ يَوْمِ عِيْدٍ فِيْ يَوْمِ جُـمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ.
অর্থ : “হযরত আম্মার ইবনে আবূ আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদা ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। …. (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)’ এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তখন উনার নিকট এক ইয়াহূদী ছিল, সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম। এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন ঈদ ছিলো- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন!” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ ৩৩১৮)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, পবিত্র আরাফা উনার দিবস মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। কিন্তু ঈদের দিবস হওয়া সত্ত্বেও পবিত্র আরাফা উনার দিবসে রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبـِى قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يُكَفّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهٗ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهٗ.
অর্থ : “হযরত আবূ ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আরাফাহ দিবসে রোযা রাখবে তার পিছনের এক বছরের এবং সামনের এক বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : বাবু ইসতিহ্বাবি ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়্যামিন মিন কুল্লি শাহরিন ওয়া ছওমি ‘আরাফাতা ওয়া ‘আশূরায়া ওয়া ইছনাইনি ওয়া খ¦মীস : হাদীছ শরীফ নং ১১৬২; আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছাওম : বাবু ফী ছাওমিদ্ দাহ্রি তাত্বওউ‘য়া : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৫; তিরমিযী শরীফ : কিতাবুছ ছাওম : বাবু মা জায়া ফী ফাদ্বলি ইয়াওমি আরাফাহ : হাদীছ শরীফ নং ৭৪৯; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুছ ছিয়াম : হাদীছ শরীফ নং ১৭৩০)
সুতরাং পবিত্র আরাফা উনার দিবস মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হওয়া সত্ত্বেও এ দিবসে রোযা রাখার বিধান সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে রয়েছে। তাহলে সাওম বা রোযা হল ঈদের বিপরীত। সাওম বা রোযা পালন করলে ঈদ পালন করা যায় না, ঈদ ও সাওম কখনো এক সাথে হয় না। এই কথাগুলো কত বড় মিথ্যাচার ও পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকারের নামান্তর তা সহজেই বোধগম্য।
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী বছরে ৫ দিন রোযা রাখা হারাম।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قد منع صيام خـمسة ايام يوم عيد الفطر وعيد الاضحى وثلاثة ايام بعده.
অর্থ : “বছরের পাঁচদিন রোযা রাখা নিষেধ। তা হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিত্বর উনার দিন, পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন। আর পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার পরের তিন দিন।”
এখন উপরোক্ত হাদীছ শরীফ অনুযায়ী পবিত্র কুরবানী উনার দিন ও পরবর্তী ৩ দিন অর্থাৎ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ উনার ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ রোযা রাখা হারাম
আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ اَيَّامٍ اَحَبُّ اِلٰى اللهِ اَنْ يَّتَعَبُّدَ لَهُ فِيْهَا مِنْ عَشْرِ ذِى الْـحِجَّةِ يَعْدِلُ صِيَامُ كُلّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَ قِيَامُ كُلّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দিনসমূহের মধ্যে এমন কোন দিন নেই যে দিন সমূহের ইবাদত মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার প্রথম দশ দিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক প্রিয় বা পছন্দনীয়। পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১ম দশ দিনের প্রতি দিনের পবিত্র রোযা উনার ফযীলত হচ্ছে ১ বছর রোযা রাখার সমপরিমাণ এবং প্রতি রাতের ইবাদত উনার ফযীলত হচ্ছে পবিত্র ক্বদরের রাত উনার ইবাদতের সমপরিমাণ।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুছ ছওম : বাবু মা জায়া ফীল ‘আমালি ফী আইয়্যামিল ‘আশর : হাদীছ শরীফ নং ৭৫৮)
অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১ম দশ দিনের, প্রতি দিনের পবিত্র রোযা উনার ফযীলত ১ বছর রোযা রাখার সমপরিমাণ। কিন্তু পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০ম তারিখ হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আদ্বহা। তাহলে সে দিন রোযা রাখা যায় কিভাবে? সে দিন রোযা রাখা হারাম।
পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন খাদ্য গ্রহণের নিয়ম সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لاَ يَـخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَأْكُلَ وَكَانَ لاَ يَأْكُلُ يَوْمَ النَّحْرِ حَتَّى يَرْجِعَ.
অর্থ : “হযরত ইবনে বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ঈদুল ফিত্বর উনার দিন কিছু না খেয়ে বের হতেন না, আর পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছু খেতেন না।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুস সিয়াম : হাদীছ শরীফ নং ১৮২৮)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে- “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত অন্য কিছু খেতেন না।” (মুস্তাদরিকে হাকিম : হাদীছ শরীফ নং ১১২৭; বাদায়িউছ ছানায়ে ১/৩২৪; বাহরুর রায়িক ২/১৬৩)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে দিনে খাদ্য গ্রহণ শুরু করার দ্বারাই ১টি পূর্ণ রোযা রাখার ফযীলত হাছিল করা যায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিনেও রোযার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, সাওম বা রোযা ঈদের বিপরীত নয়। অর্থাৎ সাওম পালন করলেও ঈদ পালন করা যায়। ঈদ ও সাওম কখনো এক সাথে হয় আবার কখনো এক সাথে হয় না। তাই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিবস উপলক্ষ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোযা রেখেছেন বিধায় উক্ত মহান দিনে ঈদ পালন করা যাবে না- এর স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের কোন বিধানই নেই। বরং উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রমাণিত যে, ঈদের দিনেও রোযা রাখা যায় এবং রোযা রেখেও ঈদ পালন করা যায় এবং ঈদ পালন করাটা কখনোই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা নয়। আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান যেখানে যেভাবে বলা হয়েছে সেখানে সেভাবেই মানতে হবে। নিজের মনগড়া মত প্রদান করার কোন সুযোগ নেই।
কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِي الْـحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰى اَشَدّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ ◌
অর্থ : “তোমরা কী কিতাবের কিছু মানবে আর কিছু অস্বীকার করবে? যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে দূর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)
=================================================
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরবিরুধীতা কারীরা বলে থাকে,আলাদা করে নাকি প্রশংসা করার জন্য ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার দরকার নেই”
মূলত আযান, ইক্বামত, খুতবায় যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হওয়ার পরও আলাদাভাবে নামায আদায় করতে হয়, যিকির-আযকার করতে হয়, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে হয়। ঠিক তেমনিভাবে আযান, ইক্বামত, খুতবায় মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হওয়ার পরপরই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হয়, এর পরও মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ আলাদাভাবেই অনন্তকাল ধরে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে আদেশ মুবারক করেছেন।
একইভাবে নামাযের মধ্যে দুরূদ শরীফ পাঠ করা সত্ত্বেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ আলাদাভাবেই অনন্তকাল ধরে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে মহান আল্লাহ পাক আদেশ মুবারক করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيّ ۚ يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلّمُوْا تَسْلِيْمًا ◌
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার শান মুবারক-এ ছলাত শরীফ পেশ করছেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার খিদমত মুবারক-এ ছলাত শরীফ পেশ করো এবং সেই সাথে যথাযথ সম্মানে সালাম মুবারক পেশ করো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
এই ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ কতক্ষণ পেশ করতে হবে তা মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি। তবে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথমেই যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ছলাত শরীফ পাঠ করছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন অনন্ত-অনাদি। তাই তিনি অনাদিকাল থেকে অনন্তকালের জন্যই উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পাঠ করছেন। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করছেন। সুতরাং মানুষের জন্যও ফরয হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অনন্তকাল ধরে ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করা। যদিও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক তারা আযান, ইক্বামত, খুতবায় উচ্চারণ করুন না কেন।
অধিকন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّا اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشّرًا وَّنَذِيْرًا ◌ لّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِه وَتُعَزّرُوْهُ وَتُوَقّرُوْهُ وَتُسَبّحُوْهُ بُكْرَةً وَّاَصِيْلًا ◌
অর্থ : “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে। অতএব, তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনো এবং তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, সম্মান মুবারক করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো।” (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮-৯)
সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক অনন্তকাল ধরেই করতে হবে, উনাকে অনন্তকাল ধরেই সম্মান মুবারক করতে হবে, উনার খিদমত মুবারক অনন্তকাল ধরেই করতে হবে।
অর্থাৎ অনন্তকাল ধরেই উনার প্রতি ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করতে হবে। এমনকি হযরত আম্বিয়া ওয়া মুরসালূন আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নুবুওওয়াত-রিসালাত মুবারকও হাদিয়া করা হয়েছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে মেনে নেয়ার এবং সর্ব বিষয়ে উনার খিদমত মুবারক করার শর্তে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيّيْنَ لَمَا اٰتَيْتُكُم مّنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدّقٌ لّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِه وَلَتَنصُرُنَّه ۚ قَالَ اَاَقْرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِيْ ۖقَالُوْا اَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُم مّنَ الشَّاهِدِيْنَ ◌
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে হযরত নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ববিষয়ে উনার খিদমত মুবারক করবেন। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ! আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আলাভাবে খিদমত মুবারক করার অর্থাৎ উনার প্রতি ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করার শর্তেই যেখানে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নুবুওওয়াত-রিসালাত মুবারকও হাদিয়া করা হয়েছে। সেখানে আলাদা করে প্রশংসা করার জন্য পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার দরকার নেই বলা কতবড় কুফরী তা সহজেই বুঝা যায়।
মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদ্বেষীদের পক্ষেই এ ধরনের উক্তি করা সম্ভব।
অথচ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দায়িমী ছলাত শরীফ আদায় করার জন্য বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরজু পেশ করার প্রেক্ষিতে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ الطُّفَيْلِ بْنِ اُبَـىّ بْنِ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا ذَهَبَ ثُلُثَا اللَّيْلِ قَامَ فَقَالَ يَا اَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا اللهَ اذْكُرُوا اللهَ جَاءَتِ الرَّاجِفَةُ تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ جَاءَ الْمَوْتُ بِـمَا فِيْهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِـمَا فِيْهِ. قَالَ اُبَىٌّ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّـِي اُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ اَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِـي فَقَالَ مَا شِئْتَ. قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ. قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ. قُلْتُ النِّصْفَ. قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ. قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ. قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ. قُلْتُ اَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِـي كُلَّهَا. قَالَ اِذًا تُكْفَى هَـمُّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ. قَالَ اَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ.
অর্থ : “হযরত তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বলেন, একদা রাতের দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুতবা মুবারক প্রদান করার জন্য দাঁড়ালেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, হে মানুষেরা! মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করুন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করুন। ভূমিকম্প এসেছে, তার সাথে মহামারীও এসেছে, যেভাবে মৃত্যু আসার সেভাবে মৃত্যুও এসেছে। হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার জন্য ছলাত মুবারক, সালাম মুবারক, ছানা-ছিফত মুবারক বেশি বেশি করতে চাই। কত সময় ধরে আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু সম্ভব করুন। তাহলে চার ভাগের এক ভাগ (অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা) আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু সম্ভব করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে। তিনি বললেন, তাহলে অর্ধেক সময় (২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা) আপনার আমি ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে কি হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতটুকু সম্ভব আপনি করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ (২৪ ঘণ্টায় ১৬ ঘণ্টা) আমি আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে কি হবে? শুনে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু ইচ্ছা পারেন করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে।
তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আমি আমার জিন্দেগীর সমস্ত সময় (২৪টা ঘণ্টাই) আমি আপনার ছানা-ছিফত মুবারক উনার মধ্যে ব্যয় করবো। সুবহানাল্লাহ! এটা শুনে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি খুশি হয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, খুব উত্তম! আপনি যদি এটা করতে পারেন তাহলে আপনার জিন্দেগীর যত নেক মকছুদ সবগুলো পুরা করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! এবং আপনার জিন্দেগীর যত গুনাহ-খাতা রয়েছে সব ক্ষমা করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ : কিতাবু ছিফাতিল ক্বিয়ামাতি ওয়া রিক্বাক্ব ওয়া ওয়ারা : হাদীছ শরীফ নং ২৪৫৭; মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ ২/৪২১; শু‘য়াবুল ঈমান শরীফ ৩/১৩৮; জামিউল আহাদীছ শরীফ ৩২/৩৭৩; জামিউল উছূল শরীফ ১১/৮৪৬৭; রিয়াদুছ ছলিহীন ১/৩৪৭)
সুতরাং আলাদাভাবে মীলাদ শরীফ-দুরূদ শরীফ আদায়ের বিরোধিতা করা মহান আল্লাহ পাক উনাকে কটুক্তি করার শামিল। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দা-বান্দিকে দায়িমীভাবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করতে আদেশ মুবারক করেছেন।
=================================================
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরুধীতাকারীরা বলে থাকে “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের আগে নাকি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ঠিকমত আদায় করতে হবে।কিয়ামতের ময়দানে নাকি এসবের হিসেব নেওয়া হবে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের নয়।”
তাদেরকে বলতে চাই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের জন্য নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায়ের শর্ত আরোপ করা হয়নি। বরং সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত বিনা শর্তেই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেছে।
কেউই নামায, রোযা পালন করে কামিয়াবী হাছিল করতে পারবে না, নাজাত লাভ করতে পারবে না, যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত মুবারক লাভ করা না যায়। পক্ষান্তরে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা এমন একটি ইবাদত যা অন্য সমস্ত ইবাদত অপেক্ষা সর্বোত্তম। আর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের জন্য শাফায়াত সুনিশ্চিত, নাজাতও সুনিশ্চিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ.
অর্থ : “আমি জিন ও ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ হতে সুস্পষ্ট যে, মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করার জন্য। আর মহান আল্লাহ পাক তিনিই ইবাদতের নিয়ম-নীতি, তরতীব বা পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। সেই মহান আল্লাহ পাক তিনিই সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন কোন ইবাদত সর্বোত্তম।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مّن رَّبّكُمْ وَشِفَاءٌ لّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ ◌
অর্থ : “হে মানবজাতি! অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ দূরকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত দানকারী ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন; সেজন্য তারা যেনো ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
মানুষ দুনিয়া আখিরাতের জন্য যা সঞ্চয় করে তাহলো ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, আহাল-ইয়াল বা পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি, নেক আমল- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, দান-খয়রাত ইত্যাদি। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সমস্ত কিছু থেকেও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে খুশি মুবারক প্রকাশ করাকে সর্বোত্তম ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তাই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কটাক্ষ করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। কেননা কেউই নামায রোযা পালন করে কামিয়াবী হাছিল করতে পারবে না, নাজাত লাভ করতে পারবে না, যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত মুবারক লাভ করা না যায়। পক্ষান্তরে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা এমন একটি ইবাদত যা অন্য সমস্ত ইবাদত অপেক্ষা সর্বোত্তম। আর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের জন্য শাফায়াত সুনিশ্চিত, নাজাতও সুনিশ্চিত।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِه وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ وَكَانَ يُعَلّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারক আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাজাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
যেহেতু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে শাফায়াত সুনিশ্চিত করেছেন, নাজাত সুনিশ্চিত করেছেন। আর উনাদের অনুসরণে পরবর্তী উম্মতের জন্যও শাফায়াত মুবারক ও নাজাতের সুনিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ وَاَعَدَّ لَـهُمْ جَنَّاتٍ تَـجْرِي تَـحْتَهَا الْاَنْـهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا اَبَدًا ۚ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ ◌
অর্থ : “হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অগ্রগণ্য এবং উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণকারী সকলের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট আর উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে পেরেছেন। আর উনাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সম্মানিত জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত। সেখানে উনারা চিরকাল থাকবে। এটাই হলো মহান কামিয়াবী।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
সুতরাং, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হচ্ছে মুসলমান উনাদের জন্য সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রথম দায়িত্ব-কর্তব্য। যা পালন করা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফরয। নামায রোযা পালন করাও মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফরয। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক না আনলে নামায রোযা কিছুই ফরয হতো না, সেহেতু উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি মুবারক প্রকাশ করাই সর্বপ্রধান ও সর্বোত্তম ইবাদত। অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা নামায রোযা পালনের চেয়েও উত্তম ইবাদত। তাই সর্বোচ্চ খুশি সহকারে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন তো করতেই হবে, অন্যান্য সকল ফরয ইবাদত যেমন নামায রোযা পালনও করতে হবে, ছেড়ে দেয়া যাবে না। আবার কিয়ামতের ময়দানে সমস্ত আমলের হিসেব নেয়া হলেও পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীদের কোন হিসেবই নেয়া হবে না। কারণ উনারা দুনিয়াতেই ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে গিয়েছেন, যা উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
=================================================
বিভিন্ন বাতিল ফিরকার লোকেরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে বলে থাকে ‘জম্মোৎসব পালন করা নাকি পৌত্তলিক রীতি এবং কোনো ধর্মগ্রন্থ বা নাবীদের শিক্ষায় নাকি এর কোন অস্তিত্ব নেই। !!’ নাউযুবিল্লাহ।
অথচ জন্মোৎসব পালন বা জন্মদিন উৎযাপন মোটেও কোন পৌত্তলিক রীতি নয়। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই এর ভিত্তি প্রমাণিত। আর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের শিক্ষা প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় উম্মতকে দিয়ে গিয়েছেন।
জন্মোৎসব পালন বা জন্মদিন উৎযাপনের বিষয়টি কয়েকভাবে হতে পারে।
১. কোন শিশু যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিনই শিশুর অভিভাবক কর্তৃক কোন অনুষ্ঠান বা খানাপিনার আয়োজন।
২. শিশুর জন্মের ৭ম দিনে শিশুর আক্বীক্বা দিয়ে নাম রেখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
৩. প্রত্যেক বছর জন্মদিনের তারিখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
কোন শিশু যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিনই শিশুর অভিভাবক কর্তৃক কোন অনুষ্ঠান বা খানাপিনার আয়োজন।
এই বিষয়ে হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের বিখ্যাত সঙ্কলক ইমাম হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে ২ খানা বাব বা পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন যথাক্রমে –
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত।
بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা।
بَابُ الدَّعْوَةِ فِي الْوِلَادَةِ – “শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াত” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে শিশুর জন্মগ্রহণ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের খানা খেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ بِلَالِ بْنِ كَعْبٍ الْعَكِّيِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ زُرْنَا حَضْرَتْ يَـحْيَى بْنَ حَسَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـي قَرْيَتِهِ اَنَا وَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ بْنُ اَدْهَمَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ قَرِيرٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَ حَضْرَتْ مُوسَى بْنُ يَسَارٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَجَاءَنَا بِطَعَامٍ، فَاَمْسَكَ حَضْرَتْ مُوسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ حَضْرَتْ يَـحْيَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَمَّنَا فِـي هٰذَا الْمَسْجِدِ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَنَّى حَضْرَتْ اَبَا قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً، يَصُوْمُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، فَوُلِدَ لِاَبِـيْ غُلَامٌ، فَدَعَاهُ فِـي الْيَوْمِ الَّذِيْ يَصُوْمُ فِيْهِ فَاَفْطَرَ، فَقَامَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيمُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَكَنَسَهُ بِكِسَائِهِ، وَاَفْطَرَ حَضْرَتْ مُوْسٰى رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَضْرَتْ اَبُو عَبْدِ اللهِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَبُو قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اسْـمُهُ جَنْدَرَةُ بْنُ خَيْشَنَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ.
অর্থ : “হযরত বিলাল ইবনে কা’বিল ‘আক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি, হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল আযীয ইবনে কুদাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মূসা ইবনে ইয়াসার ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাসতিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে উনার গ্রামে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। হযরত ইবনে হাসান বাকরী ফালাস্তিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের জন্য খাবার আনলেন। হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রোযাদার হওয়ায় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিনানা গোত্রীয় একজন ছাহাবী, যাঁর উপনাম হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি চল্লিশ বছর যাবত এই মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি এক দিন রোযা রাখেন এবং এক দিন বিরতি দেন। আমার একজন ভাই জন্মগ্রহণ করলে আমার পিতা উনাকে দাওয়াত দেন। সেটি ছিল উনার রোযা রাখার দিন। তিনি রোযা ভাঙ্গলেন। হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উঠে দাঁড়িয়ে উনাকে উনার চাদরখানা হাদিয়া দেন এবং হযরত মূসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রোযা ভাঙ্গেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ছাহাবী হযরত আবূ কিরসাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক হযরত জানদারা ইবনে খায়শানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দা’ওয়াতি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে শিশুর জন্মদিনেই জন্মদিন পালনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার চুড়ান্ত সন্তুষ্টি মুবারক দুনিয়াতেই প্রাপ্ত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার রোযা ভঙ্গ করে জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাদ্য গ্রহণ করেছেন।
আবার بَابُ الدُّعَاءِ فِي الْوِلَادَةِ – “সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য দোয়া করা” পরিচ্ছদে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে জানা যায় যে, একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দাওয়াতে এসে খানাপিনা করেছেন এবং শিশুর জন্য দোয়া করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَقُوْلُ لَمَّا وُلِدَ لِـي اِيَاسٌ دَعَوْتُ نَفَرًا مِنْ اَصْحَابِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَطْعَمْتُهُمْ فَدَعَوْا فَقُلْتُ اِنَّكُمْ قَدْ دَعَوْتُـمْ فَبَارَكَ اللهُ لَكُمْ فِيْمَا دَعَوْتُـمْ وَاِنّـيْ اِنْ اَدْعُوْ بِدُعَاءٍ فَاَمّنُوْا قَالَ فَدَعَوْتُ لَهُ بِدُعَاءٍ كَثِيْرٍ فِـيْ دِينِهِ وَعَقْلِهِ وَكَذَا قَالَ فَاِنّـيْ لَاَتَعَرَّفُ فِيْهِ دُعَاءَ يَوْمِئِذٍ.
অর্থ : “হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার আওলাদ ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দাওয়াত করে খাবার পরিবেশন করেন। উনারা দোয়া মুবারক করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা দোয়া মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের দোয়া মুবারক উনার উসীলায় আপনাদের বরকত মুবারক দান করুন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন বললেন, তিনিও কতগুলো দোয়া করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেন আমীন বলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি উনার আওলাদের দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের জন্য অনেক দোয়া করলেন। হযরত মুআবিয়া ইবনে কুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুল খিতা-ন : বাবুদ্ দু‘য়ায়ি ফীল উইলাদাত : হাদীছ শরীফ নং ১২৫৫)
সুতরাং জন্মদিন পালন বা জন্মোৎসব করা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার রীতি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রদান করেছেন বলেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শিশুর জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরিবেশিত খাবার খেয়েছেন এমনকি রোযা ভঙ্গ করে খাবার খেয়েছেন এবং দোয়া মুবারক করেছেন। তাই জন্মোৎসব পালন করাকে একটি পৌত্তলিক রীতি বলা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু এই বিষয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শিক্ষা দিয়েছেন।
শিশুর জন্মের ৭ম দিনে শিশুর আক্বীক্বা দিয়ে নাম রেখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন। সন্তান জন্মগ্রহণের শুকরিয়াস্বরূপ যে পশু যবাই করা হয় তাকে আক্বীক্বা বলে। জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করা সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَـمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ كُلُّ غُلَامٍ رَهِيْنَةٌ بِعَقِيْقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُـحْلَقُ وَيُسَمَّى.
অর্থ : “হযরত সামুরাহ ইবনে জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বার বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করতে হয়, মাথার চুল ফেলতে হয় এবং নাম রাখতে হয়।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুল আদ্বহা : বাবু ফিল আক্বীক্বাহ : হাদীছ শরীফ নং ২৮৩৮)
জন্মের ৭ম দিনে আক্বীক্বা করা উত্তম। ৭ম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১তম দিনেও করা যায়। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এই তিন দিনের উল্লেখ আছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
“হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আক্বীক্বার পশু ৭ম বা ১৪তম বা ২১তম দিনে যবাই করা যাবে।” (আল মু’জামুল আওসাত লিত ত্ববারানী ৫/৪৫৭)
সামর্থ না থাকার কারণে এ তিন দিনেও কারো পক্ষে সম্ভব না হলে, পরে যে কোনো সময় আক্বীক্বা করা যেতে পারে।
আক্বীক্বার গোশত কুরবানীর গোশতের মতই। তা নিজে খাবে, আত্মীয় স্বজনকে খাওয়াবে এবং গরীব-মিসকীনকে ছদকা করবে। তবে যেমনভাবে কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজে খাওয়া, একভাগ ছদকা করা এবং এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া হিসাবে দান করা জরুরী নয়, ঠিক তেমনিভাবে আক্বীক্বার গোশতও উক্ত নিয়মে তিন ভাগ করা জরুরী নয়। আক্বীক্বার গোশত যদি সম্পূর্ণটাই রান্না করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এবং অন্যান্য মুসলমানদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায় তাতেও যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ আক্বীক্বার গোশত পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই খেতে পারবে।
সুতরাং আক্বীক্বার গোশত দিয়ে খাদ্য খাওয়ার জন্য দাওয়াতের ব্যবস্থা করার বিধান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ আক্বীক্বার মাধ্যমে জন্মোৎসব পালনের বিধান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রয়েছে।
প্রত্যেক বছর জন্মদিনের তারিখে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
উপরের হাদীছ শরীফ হতে বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন।
এমনকি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন উট যবেহ করে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতেন।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
يَوْمَ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَبَحَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ الصّـِدّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامَ مِائَةَ نَاقَةٍ وَتَصَدَّقَ بِـهَا
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দিনে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ উট যবেহ করতেন এবং তা বিলিয়ে দিতেন।” (আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : পৃষ্ঠা ৫৪)
আর হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন মানুষের মাঝে গম বিলিয়ে দিতেন।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
تَصَدَّقُ حَضْرَتْ اَبُوْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِـىْ ذٰلِكَ بِثَلَاثَةِ اَقْرَاصِ مِنْ شَعِيْرِ
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দিনে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৩ গামলা গম বিলিয়ে দিতেন।” (আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : পৃষ্ঠা ৫৪)
সুতরাং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে জন্মোৎসব বা জন্মদিন পালনের বিধান রয়েছে। আর তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেমন নিজেরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উৎযাপন করেছেন। তেমনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জন্মদিন পালনকে পছন্দ করেছেন বিধায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরবর্তী উম্মতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষায় জন্মোৎসব পালনের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাই জন্মোৎসব পালনকে একটি পৌত্তলিক রীতি বলা কুফরী।
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ব্যক্তি কুফরী করে তওবা ছাড়া মারা গেল তার পরিণাম সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ ثُـمَّ مَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَـهُمْ.
অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনোই তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।” (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَمَاتُوْا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْ اَحَدِهِم مّلْءُ الْاَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدٰى بِهِ ۗ اُولٰـئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ وَمَا لَـهُم مّنْ نَّاصِرِيْنَ ◌
অর্থ : “যারা কাফির হয়েছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা যদি তার পরিবর্তে সারা পৃথিবী পরিমান স্বর্ণও দেয়, তবুও তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব! পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহায্যকারী নেই।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯১)
=================================================
সাবধান! মৌলুদ আর মিলাদ কিন্তু এক নয় !
=================================================
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীরা প্রায় বলে থাকে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নাকি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করেছেন এবং তারা দলীল স্বরুপ বলে থাকে, যেখানে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি বলেন- “যদি আল্লাহর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজকের যুগে থাকতেন আর এই সব মাহফিল দেখতে পেতেন, আমি হেন অধমের দৃঢ় বিশ্বাস যে কখনো তিনি এ কাজ পছন্দ করতেন না, বরং এ সব অনুষ্ঠান একেবারে বন্ধ করে দিতেন”। পাশাপাশি তারা অনেক ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের রেফারেন্স ব্যবহার করে।
কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে বীরুধীতাকারীরা একটি বিষয় এড়িয়ে যায়, তা হলো মৌলুদ আর মাউলিদ/ঈদে মীলাদ এক নয়। ঐ সময় মৌলুদ নামক এক চরম বেহায়া, বেদাতী, হারাম নাজায়েজ অনুষ্ঠানের প্রচলন করা হতো। যেখানে গান-বাদ্য-বেহায়া বেপর্দার ঘটনা ঘটতো। যেসব দলিল ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতায় বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো মূলত মৌলুদ নামক অনুষ্ঠানের, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করে নয়।
যেমন কওমী গুরু আশরাফ আলী থানভী মৌলুদকে হারাম বলেছে, কিন্তু বেহেস্তী জেওরে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অপরিহার্য বলেছেন। তাই যারা মৌলুদ আর ঈদে মীলাদকে এক করে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শত্রু ছাড়া অন্যকিছু নয়।
=================================================
সুওয়াল ৪ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে ইখতিলাফ বা মতভেদ আছে। তাই মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়।
সুওয়াল ৫ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না।
সুওয়াল ৬ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক ১২ তারিখ নয় বরং ৯ তারিখ।
জওয়াব : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ মুবারক নিয়ে কোন ইখতিলাফ বা মতভেদ নেই। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই জানতেন এবং তা বর্ণনাও করেছেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ- ৯ তারিখ নয় বরং ১২ তারিখ।
এ প্রসঙ্গে হাফিয হযরত আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদ সহকারে বছর ও বার উল্লেখপূর্বক সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করেছেন যে, পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ মুবারক হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنِ حَضْرَتِ الـمُطَّلِبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسِ بْنِ مَـخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدّهٖ قَالَ وُلِدْتُ اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ وَسَاَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامَ قُبَاثَ بْنَ اَشْيَمَ اَخَا بَنِيْ يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ اَاَنْتَ اَكْبَرُ اَمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْبَرُ مِنِّي وَاَنَا اَقْدَمُ مِنْهُ فِي الْمِيْلَادِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ.
অর্থ : “হযরত মুত্তালিব ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে কাইস ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা হতে এবং উনার পিতা উনার দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “হাতীর বছরে” বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, আমিও সেই হাতীর বছরেই বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কুবাস বিন আশিয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রশ্ন করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় না আপনি বড়? তিনি উত্তরে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার থেকে বড়, আর আমি উনার পূর্বে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেছি।” (তিরমিযী শরীফ, হযরত আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৭৯ হিঃ), আস সুনান, প্রকাশনা- বৈরুত, দারু ইহ্য়ায়িত তুরাসিল আরাবী, হাদীছ শরীফ নং ৩৬১৯)
আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ بِـهٰذَا الْـحَدِيْثِ زَادَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَرَاَيْتَ صَوْمَ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَيَوْمِ الْـخَمِيْسِ قَالَ فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ اُنْزِلَ عَلَىَّ الْقُرْاٰنُ.
অর্থ : “হযরত আবূ কাতাদা আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ ও ইয়াওমুল খ¦মীস রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, এদিন (ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ) আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭, আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪২৮, সুনানে কুবরা লি বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা : হাদীছ শরীফ নং ২৯২৬, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২২৬০৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় উনাদের বর্ণনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন বছর হিসেবে ‘হাতীর বছর’ আর সাপ্তাহিক বার হিসেবে ‘ইয়াওমুল ইছলাইনিল আযীম শরীফ’।
আর অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَفَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلِيْمِ بْنِ حَيَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَعِيْدِ بْنِ مِينَا رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيّ وَحَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِـيْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الْاَوَّلِ.
অর্থ : “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হস্তি বাহিনী বর্ষের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ হয়েছিল।” সুবহানাল্লাহ! (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আছ ছিহ্হাহ্ ওয়াল মাশাহীর ১ম খ- ২৬৭ পৃষ্ঠা)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ উনারা বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত তাহযীব শরীফ)
“দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ণনাকারী যথাক্রমে হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ শরীফ, তাক্বরীব শরীফ)
সনদের উপরের দুজন তো ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের তো কোন তুলনাই নেই। অপর তিন জন রাবী হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সলিম ইবনে হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে রেজালের কিতাবে বলা হয়েছে উনারা উচ্চ পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম, সিকাহ, তীক্ষè স্মরণশক্তিসম্পন্ন, বিশস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।’’ (খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা, ত্বাকরীবুত তাহযীব ২য় খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা, সমূহ রেজালের কিতাব)
আর হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী। উনাদের বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।” এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই হযরত ইমামগণ উনাদের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ শরীফ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব শরীফ, মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ইত্যাদি)
উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন।
তাহলে ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসের তারিখ মুবারক সম্পর্কে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না’ বলা কত বড় মিথ্যাচার তা সহজেই অনুধাবনীয়। যা অসংখ্য হাদীছ শরীফ অস্বীকারের নামান্তর।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদ প্রত্যেক যামানায় প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে জিন-ইনসানকে প্রদান করেছেন। এমনকি আলমে আরওয়াহতেও মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্ব বিষয়ে উনারা খিদমত মুবারক করবেন।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيّيْنَ لَمَا اٰتَيْتُكُم مّنْ كِتَابٍ وَّحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدّقٌ لّمَا مَعَكُمْ لَـتُؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَنْصُرُنَّهٗ ۚ قَالَ اَاَقْرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِي ۖقَالُوْا اَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُم مّنَ الشَّاهِدِيْنَ ◌
অর্থ : “(হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ব বিষয়ে উনার খিদমত মুবারক করবেন। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে প্রদত্ত ওয়াদা মুবারক অনুযায়ী প্রত্যেক যামানায় প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওল শরীফ উল্লেখ করে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمُبَشّرًا ۢبِرَسُوْلٍ يَّأْتِـيْ مِنْ ۢبَعْدِي اسْـمُهٗ اَحْـمَدُ.
অর্থ : “আমি এমন একজন সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের সুসংবাদদানকারী, যিনি আমার পরে পৃথিবীতে তাশরীফ মুবারক আনবেন, উনার সুমহান নাম মুবারক হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আগমনের ভবিষ্যতদ্বাণী ছহিবে তাওরাত শরীফ, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে জানিয়েছেন। আর পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মাধ্যমে পরবর্তী ইয়াহূদী সম্প্রদায় এই ভবিষ্যতদ্বাণী জেনে বছরের পর বছর সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করতে থাকে শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক হাছিল করার জন্য।
তাহলে যে বিষয়টি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে গিয়েছেন। সে বিষয়টি অর্র্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক নেয়ার বিষয়টি, উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানতেন না এ কথাটি কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। এটি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুস্পষ্ট অপবাদ বৈ কিছুই নয়।
শুধু তাই নয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্য সনদেও এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে। ইমাম হযরত হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে উনার কিতাবে উল্লেখ করেন-
عَنْ حَضْرَتْ مُـحَمَّدِ بْنِ اِسْحَاقَ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاِثْنَتَيْ عَشَرَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ
অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার বারো রাত অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (মুস্তাদরাক লিল হাকিম শরীফ ৪র্থ খ-, ১৫৬৮ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৪১৮২)
অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قَالَ مُـحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وُلِدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ، عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الاَوَّلِ
অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ, হস্তীর বছর, রাত্রির শেষভাগে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি : হাদীছ শরীফ নং ২৩; কিতাবুল ওয়াফা লি আহওয়ালিল মুস্তফা লি আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ৮৭; প্রকাশনা : দারূল কুতুব ইসলামিয়া, বৈরূত, লেবানন)
উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। এটাই সর্বাধিক ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দূর্বল। অতএব তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে হাফিজুল হাদীছ ইমাম হযরত কুস্তালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
هُوَ الْـمَشْهُوْرُ اَنَّهٗ وُلِدَ ثَانِـيْ عَشَرَ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَهُوَ قَوْلُ اِبْنِ اِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَغَيْرِهٖ
অর্থ : “প্রসিদ্ধ মত অনুসারে নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। যা ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যদের এটাই মত।” (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)
অন্যত্র বর্ণিত আছে-
وَعَلَيْهِ عَمَلُ اَهْلِ مَكَّةَ فِـيْ زِيَارَتِـهِمْ مَوْضِعَ مَوْلِدِهٖ فِـيْ هٰذَا الْوَقْتِ
অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক যিয়ারত করার আমল বর্তমান অবধি জারী রয়েছে।’’ (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে ইবনে হিশাম ১ম খ- ১৫৮ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ لِاَرْبَعِيْنَ سَنَةً مّنْ مُلْكِ كِسْرٰي انَوْشِيْرْوَان
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। তখন ছিলো শাসক নাওশেরাওয়ার শাসনকালের ৪০তম বছর।” (তারীখে ইবনে খালদুন ২য় খ- ৩৯৪ পৃষ্ঠা)
ইমাম হযরত জারির তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।’’ (তারীখে ওমুম ওয়াল মূলক ২য় খ- ১২৫ পৃষ্ঠা)
ইমাম হযরত ইবনে কাছীর ও ইমাম হযরত যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বলেন,
وَهُوَ الْـمَثْهُوْرُ عِنْدَ الْـجُمْهُوْرِ .. هُوَ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْعَمَلُ
অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের) তারিখ হিসাবে জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট প্রসিদ্ধ। উক্ত মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক গ্রহণ হিসেবে সবাই পালন করে আসছেন।” (শরহুল মাওয়াহিব ২য় খ- ২৪৮ পৃষ্ঠা)
হাফিজুল হাদীছ হযরত আবুল ফাত্তাহ আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ سَيّدُنَا وَنَبِيُّنَا مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشْرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ قِيْلَ بَعْدَ الْفِيْلِ بِـخَمْسِيْنَ يَوْمًا
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, রাতের শেষ ভাগে হস্তী বাহিনীর বছর দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। বলা হয়, হস্তী বাহিনীর ঘটনার ৫০ দিন পরে তিনি দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (আইনুল আসার ১ম খ- ৩৩ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলিম, শায়েখ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হিসাবে মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই মশহূর। সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের আমল হলো উক্ত মুবারক তারিখে উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান যিয়ারত করতেন।’’ (মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা)
উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “সমস্ত মুসলমান এ বিষয়ের উপর ইজমা করেছেন বা একমত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন।” (মা-সাবাতা বিস সুন্নাহ ৮২ পৃষ্ঠা)
দেওবন্দী ওহাবীদের মুরুব্বীদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে- “সারকথা যে বছর আসহাবে ফীল পবিত্র কা’বা শরীফ আক্রমন করে, সেই বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে মহাসম্মানিত ১২ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) ছিলো পৃথিবীর জীবনে এক অনন্য বিশেষ দিবস। যেদিন নিখিল ভূবন সৃষ্টির মূল লক্ষ্য, দিবস রজনী পরিবর্তনের মূখ্য উদ্দেশ্য, হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও বনী আদমের গৌরব, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিস্তির নিরাপত্তার নিগূঢ় তাৎপর্য, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুআ ও হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভবিষ্যদ্বাণীসমূহের উদ্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে খতিমুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ৪, প্রকাশনা : এমদাদিয়া লাইব্রেরি)
উক্ত কিতাবে একটি টীকা সংযোজন করা হয়েছে, “সর্বসম্মত মতানুসারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হয়েছিল পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস উনার ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। কিন্তু তারিখ নির্ধারণের জন্য ৪টি রেওয়ায়েত প্রসিদ্ধ রয়েছে। যথা- দ্বিতীয়, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ। হাফিজ মোগলতাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (৬৮৯-৭৬২ হিজরী) ২য় তারিখের রেওয়ায়েত গ্রহণ করে অন্যান্য রেওয়ায়েতকে দূর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত হচ্ছে দ্বাদশ তারিখের রেওয়ায়েত। এমনকি হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহার উপর ইজমার দাবী বর্ণনা করেছেন। ইহাকে কামেলে ইবনে আছীরে গ্রহণ করা হয়েছে।”
অথচ উনবিংশ শতাব্দীতে মাহমুদ পাশা আল ফালাকি (১৮১৫-১৮৮৫ ঈসায়ী) নামক একজন মিশরীয় জ্যোতির্বিদ দাবী করেছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছে পবিত্র ৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ। নাঊযুবিল্লাহ! আর তার দাবীকৃত এই বিভ্রান্তিমূলক তারিখটিই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমনরা ব্যবহার করে থাকে। তাদের কাছে ছহীহ হাদীছ শরীফ অপেক্ষা একজন নাস্তিকের দাবী বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাঊযুবিল্লাহ! তাই এই নাস্তিক সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
নাস্তিক মাহমুদ পাশা আল ফালাকি ছিল সে সময়কার তথাকথিত মিশরীয় রেনেসাঁর একজন ব্যক্তি। সে ফ্রান্সের বৃত্তি নিয়ে গবেষণা ও পড়াশোনা চালিয়েছিল। এই মিশরীয় রেনেসাঁকে আরবীতে বলা হয় ‘আন-নাহদা’। ১৮০০-১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়টিতে এই কথিত রেনেসাঁ সংঘটিত হয়। আর আন-নাহদার মূল ব্যক্তি হচ্ছে ‘রিফা আত-তাহতাবী’ নামক এক ব্যক্তি। তাকেও ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল। সে মিশরে এসে প্রচার চালায় যে, মুসলমানদেরকে অবশ্যই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ! রিফা আত-তাহতাবী ছাড়াও এই আন-নাহদার আরেক মূল ব্যক্তি ছিল ‘বুরতুস আল বুস্তানী’। সেও মুসলমান ছিল না, ছিল এক লেবানিজ ম্যারেনাইট খ্রীস্টান। অর্থাৎ মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁ সংশ্লিষ্টরা ফ্রান্সপন্থী ছিল। ফ্রান্সের বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করে তারা মুসলিম মূল্যবোধ মুছে দিয়ে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করতে উঠে পড়ে লেগেছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল খ্রীস্টান, এমনকি তাদের মধ্যে অনেকে শিয়াও ছিল।
আরেকটি বিষয় হলো, মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁপন্থীরা ছিল প্রাচীন মিশরের ফেরাউনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁপন্থীদের এক ভাস্কর্যশিল্পী মাহমূদ মোখতার বানিয়েছিল ‘মিশরের নবজাগরণ’ নামক এক মূর্তি, যা ছিল ফেরাউন ও স্ফিংসের জোড়া ভাস্কর্য। অর্থাৎ মিশরীয় তথাকথিত রেনেসাঁ ছিল ফেরাউনের যুগে ফিরে যাওয়ার চেতনাধারী।
উল্লেখ্য, উনবিংশ শতাব্দীর মিশরীয় নাস্তিক মাহমুদ পাশা আল ফালাকি নাস্তিক্যবাদে উদ্বুুদ্ধ হয়ে কাফিরদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুবারক ১২ই শরীফ তারিখকে বিকৃত করে বই রচনা করেছে। আর বাতিল ৭২ ফিরকার লোকেরা ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাকে পাশ কাটিয়ে এক নাস্তিকের বর্ণনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছে, যা পবিত্র হাদীছ শরীফ অবজ্ঞা করার কারণে কুফরী হয়েছে।
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। মহাকাশবিদগণও গবেষণা করে উল্লেখিত তারিখ ও বার বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করে নিয়েছে।
উপসংহার :
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সুস্পষ্ট বর্ণনা অনুযায়ীই, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছে হাতির বছরের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার ফযীলত
=================================================
এই দুনিয়ার জমিনে জিনারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলািইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করবে তথা ফালইয়াফরাহু পালন করবে তারা পরকালেও ফালইয়াফরাহু পালন করতে পারবে।
আর ইখতিয়ারের মধ্যে দায়িমী ফাল ইয়াফরাহু করলে খালিক্ব মালিক বর মহান আল্লাহ পাক তিনি গইরে ইখাতিয়ারেও তা করার তাওফিক দান করবেন। কবরে জিজ্ঞাসা করা হবে কে কি করতে চায়? কেউ নামায পড়তে চাইলে উনাকে নামায পড়ার এখতিয়ার দেয়া হবে, যে যেটা চাইবেন উনাকে সেটাই দিয়ে দেয়া হবে। আমরা বলব আমরা ফাল ইয়াফরাহু পালন করতে চাই। সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করতে চাই।
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করলে অর্থাৎ ফালইয়াফরাহু তথা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য সর্বশ্রেষ্ট খুশী মুবারক প্রকাশ করলে কি পাওয়া যাবে।
এই বিষয়ে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ الطُّفَيْلِ بْنِ اُبَـىّ بْنِ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا ذَهَبَ ثُلُثَا اللَّيْلِ قَامَ فَقَالَ يَا اَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا اللهَ اذْكُرُوا اللهَ جَاءَتِ الرَّاجِفَةُ تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ جَاءَ الْمَوْتُ بِـمَا فِيْهِ جَاءَ الْمَوْتُ بِـمَا فِيْهِ. قَالَ حَضْرَتْ اُبَـىٌّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ِاِنّـِيْ اُكْثِرُ الصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِـيْ فَقَالَ مَا شِئْتَ، قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ، قَالَ مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قُلْتُ النّـِصْفَ، قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ، قَالَ مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ، قُلْتُ اَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِـيْ كُلَّهَا، قَالَ اِذًا تُكْفٰى هَـمُّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ.
অর্থ : “হযরত তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বলেন, একদা রাতের দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুতবা মুবারক প্রদান করার জন্য দাঁড়ালেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, হে মানুষেরা! মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করুন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করুন। ভূমিকম্প এসেছে, তার সাথে মহামারীও এসেছে, যেভাবে মৃত্যু আসার সেভাবে মৃত্যুও এসেছে। হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার জন্য ছলাত মুবারক, সালাম মুবারক, ছানা-ছিফত মুবারক বেশি বেশি করতে চাই। কত সময় ধরে আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু সম্ভব করুন। তাহলে চার ভাগের এক ভাগ (অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা) আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু সম্ভব করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে। তিনি বললেন, তাহলে অর্ধেক সময় (২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা) আপনার আমি ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে কি হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার যতটুকু সম্ভব আপনি করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ (২৪ ঘণ্টায় ১৬ ঘণ্টা) আমি আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করবো ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে কি হবে? শুনে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি যতটুকু ইচ্ছা পারেন করুন, তবে এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করতে পারলে আরো উত্তম হবে। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আমি আমার জিন্দেগীর সমস্ত সময় (২৪টা ঘণ্টাই) আমি আপনার ছানা-ছিফত মুবারক উনার মধ্যে ব্যয় করবো। সুবহানাল্লাহ!
এটা শুনে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি খুশি হয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, খুব উত্তম! আপনি যদি এটা করতে পারেন তাহলে আপনার জিন্দেগীর যত নেক মকছুদ সবগুলো পুরা করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! এবং আপনার জিন্দেগীর যত গুনাহ-খাতা রয়েছে সব ক্ষমা করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ : কিতাবু ছিফাতিল ক্বিয়ামাতি ওয়া রিক্বাক্ব ওয়া ওয়ারা : হাদীছ শরীফ নং ২৪৫৭; আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২২১তম সংখ্যা ৯১ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার দ্বারাই প্রমাণিত, সমস্ত নেক মাকসুদ পূর্ণ করা হবে এবং সমস্ত গুনাহ খতা মুছে ফেলা হবে’। সুবহানাল্লাহ!
যা চাইবো সব কিছুই পাওয়া যাবে। সুতরাং আমরা চাই
১. মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে
২. হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে
৩. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে।
=================================================
কারা হাক্বীক্বীভাবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করতে পারবে। মূলত এই খুশি মুবারক প্রকাশ নিসবত ব্যতিত কখনোই সম্ভব নয়।
যে ব্যক্তি যমানার মহান মুজাদ্দিদ মামদুহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত পুতপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের জন্য হাক্বীক্বীভাবে খুশি মুবারক প্রকাশ করতে পারবে তার পক্ষেই সম্ভব হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করা। তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা । কারন যে ব্যক্তি মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ও উনার সম্মানিত পুতপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করতে পারবে না সে কখনোই হাক্বীক্বীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে পারবে না।
যে ব্যক্তি বান্দার সুকরিয়া আদায় করতে পারে না। সে কখনো আল্লাহ পাক উনার সুকরিয়া আদায় করতে পারেনা। যিনার মাধ্যম দিয়ে আমরা ঈমান পেলাম, সুন্নতী আমল পেলাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার সম্মানিত পুতপবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান মান জানাতে পারলাম, সর্বোপরি সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পেলাম এখন উনার জন্য যদি আমরা খুশি মুবারক প্রকাশ করতে না পারি তাহলে আমরা কথনোই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করতে পারব না। এবং পালন করা সম্ভব ও না।
এখন যে ব্যক্তি হাক্বীক্বী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে চাই তার জন্য দায়িত্ব হচ্ছে মাহমদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম ও উনার সম্মানিত পুত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাহিমুস সালাম উনাদের আদেশ নির্দেশ মুবারক যথাযথভাবে পালনের মাধ্যম দিয়ে হাক্বীক্বীভাবে খুশি মুবারক প্রকাশ করা এবং এর মাধ্যম দিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবত মুবারক হাসিল করা
তখনই সকলের পক্ষে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে হাক্বীক্বীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা সম্ভব।
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন অর্থাৎ ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন তথা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করার যে আমল তার প্রতিদান চিরস্থায়ী মুসলমান, ঈমানদার উনাদের জন্য তো অবশ্যই এমন কি কাফিরদের জন্যও সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের প্রতিদান চিরস্থায়ী। তাদের জন্যও উপকারী।
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবরাক প্রকাশ করার আমল সার্বজনীন, সর্বকালীন, সর্বপাত্রীয়।
এই বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وما ارسلناك الا رحمة للعالمين
অর্থ: “আমি আপনাকে সারা আলম-এর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
পবিত্র ‘ছহীহ বুখারী শরীফ’-এর দ্বিতীয় খন্ডের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قال عروة وثويبة مولاة لابى لهب كان ابو لهب اعتقها فارضعت النبى صلى الله عليه وسلم فلما مات ابو لهب اريه بعض اهله بشر حيبة قال له ماذا لقيت قال ابو لهب لم الق بعد كم غير انى سقيت فى هذه بعتاقتى ثويبة.
অর্থ: হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী এবং আবু লাহাব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এ খুশি হয়ে উনার খিদমত করার জন্য ওই বাঁদীকে আযাদ করে দিয়েছিলো। এরপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি দুধ পান করান। অতঃপর আবু লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন অর্থাৎ তার ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, আবূ লাহাব সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে।’ আবু লাহাব উত্তরে বললো, ‘যখন থেকে আপনাদের কাছ থেকে দূরে রয়েছি তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে তথা খুশিতে আত্মহারা হয়ে বাঁদী সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে দু’আঙুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠান্ডা ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি। (উমদাতুল ক্বারী ২০ খ-, ৯৩ পৃষ্ঠা, ‘ফতহুল বারী, শরহে বুখারী’ কিতাবের ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা মাওয়াহিবুল লাদুননিয়াহ ১ম খন্ড, শরহুয যারকানী ১ম খ-, ২৬০ পৃষ্ঠা)
সুতরাং, বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করা করা কত বড় উপকারী দুনিয়া ও আখিরাতে। এবং এটাও স্পট হয়ে গেল যে- সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা অবশ্যই সার্বজনীন। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়াও সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহপাক সমস্ত নবী- রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে শপথ / ওয়াদা নিয়েছেন।
এই বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাঝে বর্ণিত আছে-
واذ اخذ الله ميثاق النبين لما اتيتكم من كتاب وحكمة ثم جائكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال اأقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من الشاهدين. فمن تولى بعد ذلك فاولئك هم الفاسقون.
অর্থ: “ যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের জন্য (নুবুওওয়াত ও রিসালতের হাক্বীক্বী ফায়িজ দেয়ার জন্য) আখিরী নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ব বিষয়ে উনার খিদমত করবেন। আপনারা কি এই ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন: আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম। তবে জেনে রাখুন, যারা এই ওয়াদাকৃত বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তারা চরম পর্যায়ের ফাসিক (ও কাফির) হয়ে যাবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১-৮২) সুবহানআল্লাহ!!
=================================================
মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। এই নিয়ামত মুবারক এর জন্য অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করা তথা ফালইয়াফরাহু করা অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ তথা সর্বশ্রেষ্ট খুশি মুবারক প্রকাশ করা উম্মতের জন্য ফরজ। আর সেই খুশি মুবারক প্রকাশ করাই হচ্ছে ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আর এই নিয়ামতের স্মরন বা ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার কথা মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ উনার মধ্যে একাধিকবার বলেছেন। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ
অর্থ: তুমি কি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে। (পবিত্র সূরা ইব্রাহিম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
আয়াতে “যারা” বলতে মক্কার কুরাইশ কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে আর نعمةالله দ্বারা হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বুঝানো হয়েছে (বুখারী – কিতাবুল মাগাযী: হাদীস ৩৯৭৭) এই তাফসীর করেন স্বয়ং হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি। তাহলে আমরা জানতে পারলাম, আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত বলতে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়।
মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে একাধিক স্থানে এই নিয়ামত সম্পর্কে বলেন,
وَمَن يُبَدِّلْ نِعْمَةَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ: আর আল্লাহর নেয়ামত পৌছে যাওয়ার পর যদি কেউ সে নেয়ামতকে পরিবর্তিত করে দেয়, তবে আল্লাহর আযাব অতি কঠিন। (পবিত্র সূরা বাকারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১১)
وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنزَلَ عَلَيْكُم
অর্থ: আল্লাহ পাক উনার সে নিয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে (পবিত্র সূরা বাকারা: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩১)
وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ
অর্থ: তোমরা আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের কথা স্মরন করো ( পবিত্র আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمِيثَاقَهُ الَّذِي وَاثَقَكُم بِهِ إِذْ قُلْتُمْ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
অর্থ: তোমরা আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং ঐ অঙ্গীকারকেও যা তোমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন, যখন তোমরা বলেছিলেঃ আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্তরের বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। ( পবিত্র সূরা নহল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
وَآتَاكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ ۚ وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ الْإِنسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ
অর্থ: যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ। ( পবিত্র সূরা ইব্রাহিম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। আর আল্লাহ পাক বারবার বলেছেন, সে নিয়ামত তথা হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক করতে, এবং এ নিয়ামত এতবড় নিয়ামত যে, যা আলোচনা ছানা সিফত করে শেষ করা যাবে না।
মহান আল্লাহ পাক এই নিয়ামত (হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার জন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করার বিষয়ে ইরশাদ মুবারক করেন,
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مّن رَّبّكُمْ وَشِفَاءٌ لّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْـمَةٌ لّلْمُؤْمِنِيْنَ ◌ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْـمَتِهه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ
অর্থ : “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্যে তাশরীফ মুবারক এনেছেন মহান নছীহত মুবারক দানকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ শিফা মুবারক দানকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত মুবারক দানকারী ও খাছভাবে ঈমানদারদের জন্য, আমভাবে সমস্ত কায়িনাতের জন্য মহান রহমত মুবারক দানকারী (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ফদ্বল বা অনুগ্রহ মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক(হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার জন্য তারা যেনো সম্মানিত ঈদ উদযাপন তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এই খুশি মুবারক প্রকাশ বা ঈদ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া-আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
সুতরাং প্রমাণিত হল আল্লাহ পাক উনার সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত মুবারক হলেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং এই নিয়ামত মুবারক তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি তথা ঈদ পালন করতে হবে যা মহান আল্লাহ পাক উনার ই আদেশ মুবারক।
=================================================
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক মাহফিল যা সমগ্র পৃথিবীতে পালন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন-
اَمَّا اَہْلُ مَکَّۃَ یَزِیْدُ اِہْتِمَامَہُمْ بِہٖ عَلٰی یَوْمِ الْعِیْدِ
অর্থ: “মক্কাবাসীগণ মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি গুরুত্ব ঈদ অপেক্ষাও বেশী দিতেন।” (আল মাওরেদুর রাবী ফি মাওলিদিন নবী)
আর এসব মাহফিলে যে কতবড় নিয়ামত, রহমত নাযিল সে বিষয়ে হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, –
.
“আমি একবার মক্কা মুয়াযযাময় মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীফ-এর দিনে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ-এর স্থানে উপস্থিত ছিলাম। তখন লোকেরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঐসব মু’জিযা শরীফ বর্ণনা করছিলেন, যেগুলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভাগমনের পূর্বে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের পূর্বে প্রকাশ পেয়েছিলো। আমি হঠাৎ দেখতে পেলাম সেখানে জ্যোতিসমূহেরই ছড়াছড়ি। তখন আমি গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করলাম ও বুঝতে পারলাম যে, ঐ ‘নূর’ (জ্যোতি হচ্ছে ঐসব ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, যিনাদেরকে এমন মাহফিলসমূহের (মীলাদ শরীফ ইত্যাদি) জন্য নিয়োজত রাখা হয়েছে। অনুরূপভাবে আমি দেখেছি ‘রহমতের নূর’ ও ফেরেশ্তাদের নূর’ সেখানে একাকার হয়ে গিয়েছে।” (ফুয়ূযুল হেরামাইন)
=================================================
পবিত্র মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ এমন একটি আমল যা কখনোই বিনষ্ট হবে না, অবশ্যই কবুল হবে এই বিষয়ে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক, হযরতুল আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবের দুয়া করে লিখেন,
اے اللہ! میرا کوئی عمل ایسا نہیں ہے جسے آپکے دربار میں پیش کرنے کے لائق سمجھوں، میرے تمام اعمال میں فساد نیت موجود رہتی ہے، البتہ مجھ حقیر فقیر کا ایک عمل صرف تیری ذات پاک کی عنایت کیوجہ سے بہت شاندار ہے اور وہ یہ ہے کہ مجلس میلاد کے موقع پر میں کھڑے ہو کر سلام پڑھتاہوں اور نہایت ہی عاجزی وانکسار ی محبت وخلوص کے ساتھ تیری حبیب پاک صلی اللہ علیہ وسلم پر درود سلام بھیجتا رہا ہوں. اے اللہ! وہ کون سا مقام ہے جہاں میلاد مبارک سے زیادہ تیری خیر وبرکت کانزول ہوتا ہے! اس لئے اے ارحم الراحمین مجھے پکا یقین ہے کہ میرا یہ عمل کبھی بیکار نہ جائیگا بلکہ یقینا تیری بارگاہ میں قبول ہوگا اور جوکوئی درود وسلام پڑھے اور اس کےذریعہ دعا کرے وہ کبھی مسترد نہیں ہو سکتی
অর্থ: আয় আল্লাহ পাক আমার এমন কোন আমল নেই, যা আপনার মুবারক দরবারে পেশ করার উপযুক্ত মনে করি। আমার সমস্ত আমলের নিয়তের মধ্যেই ত্রুটি রয়েছে। তবে আমি নগণ্যের শুধুমাত্র একটি আমল আপনার পবিত্র জাতের দয়ায় অনেক সম্মানিত বা মর্যাদাবান। আর সেটা হচ্ছে পবিত্র মীলাদ শরীফ-এর মজলিসে ক্বিয়ামের সময় দাড়িয়ে সালাম মুবারক পেশ করি। আর একান্ত আজীজী ইনকিসারী, মুহব্বত ইখলাছের সাথে আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করি।
হে আল্লাহ পাক এমন কোন স্থান আছে কি, যেখানে মীলাদ মুবারক-এর চেয়ে অধিক খায়ের বরকত নাযিল হয়? হে আরহামুর রহিমীন, আমর দৃঢ় বিশ্বাস যে আমার এ আমল কখনও বৃথা যাবে না। বরং অবশ্যই আপনার পবিত্র দরবারে কবুল হবে। এবং যে কেউ ছলাত-সালাম পাঠ করবে এবং উহাকে ওসীলা দিয়ে দুয়া করবে সে কখনও মাহরূম হতে পারে না। অর্থাৎ সে অবশ্যই কবুলযোগ্য। সুবহানাল্লাহ! (আখবারুল আখইয়াার ৬২৪ পৃষ্ঠা)
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে আযম,ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক মহান আমল, এমন এক ঈদ, যদি কোন মানুষ এই ঈদ পালন করে তাহলে অবশ্যই সে প্রতিদান পাবেই পাবে !!
মানুষের সমগ্র জীবনের অনেক আমল থাকে, সে আমল আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবুল হতেও আবার নাও হতে পারে ! কিন্তু কেউ যদি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে, খুশি প্রকাশ করে এটা নিশ্চিত তার এই আমল কবুল হবেই হবে !! এ আমল কখনোই বৃথা যাবে না !
আজকে আলোচনায় আমরা এ প্রসঙ্গে সুক্ষ কিছু আলোচনা করবো ! সবাই একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন !!!!
আমরা সবাই আবু লাহাবের কথা জানি। আবু লাহাব হচ্ছে কাট্টা কাফির ! হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নবুওয়াত মুবারক প্রকাশ করার পর থেকে সে লাগাতার বিরোধিতায় লিপ্ত ছিলো ! শুধু তাই নয় এই কাফির আবু লাহাব স্ব পরিবারে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম বিরোধিতা করতো !!
আল্লাহ পাক এই আবু লাহাব এবং তার স্ত্রীর ধ্বংস ঘোষনা করে সূরা লাহাব নামে একটি সূরা নাজিল করে দিলেন ! এছাড়া সূরা বাকারা শরীফ উনার প্রথম দিককার কিছু আয়াত শরীফও আবু লাহাবের ব্যাপারে নাজিল হয় !
তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিলাদত শরীফ লাভ করেন তখন এই আবু লাহাব নিজের ভাই হযরত সাইয়্যিদুনা আবদুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক পুত্র উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে । এ খুশি প্রকাশ কিন্তু সে নবী হিসাবে করে নাই, এ খুশি করেছিলো সে নিজের ভাইয়ের পুত্র উনার আগমন উপলক্ষে !!
আর এই খুশি প্রকাশ করাটাই তার জন্য একটি বিশেষ সুসংবাদের বিষয় হিসাবে প্রমানিত হয়েছে !!
আসুন এবার আমরা সহীহ হাদীস শরীফ থেকে দেখি কি ঘটনা ঘটেছিলো —
قَالَ حَضَرَتْ عُرْوَةُ رَضِىَ الله تَعَالى عَنْهُ وَ حضرت ثُوَيْبَةُ عَلَيْهَا السَلاَمُ مَوْلاَة لاَبِى لَهَب كَانَ اَبُو لَهَب اَعْتَقَهَا فَاَرْضَعَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا مَاتَ اَبُو لَهَب اُرِيَهُ بَعْضُ اَهْلِه بِشَرّ حِيبَةٍ قَالَ لَه مَاذَا لَقِيتَ قَالَ اَبُو لَهَبٍ لَمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْرَ اَنّى سُقِيتُ فِى هَذِه بِعَتَاقَتِى حَضَرَتْ ثُوَيْبَةَ عَلَيْهَا السَلاَمُ
অর্থ : হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বর্ননা করেন, হযরত সুয়াইবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী এবং আবু লাহাব হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি হয়ে উনার খিদমত মুবারক করার জন্য হযরত সুয়াইবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা কে আযাদ করে দিয়েছিলো ! এরপর আখেরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি দুধ পান করান। অতঃপর আবু লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন অর্থাৎ তার ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, আবু লাহাব সে ভিষন কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে! তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে ? আবু লাহাব উত্তরে বললো, যখন থেকে আপনাদের থেকে দূরে রয়েছি তখন থেকেই ভীষন কষ্টে আছি ! তবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বাঁদী সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে দু’আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ/মুক্তি দেয়ার কারনে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠান্ডা ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি !”
(সহীহ বুখারী শরীফ –কিতাবুননিকাহ- ২য় খন্ড ৭৬৪পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী লি শরহে বুখারী ২০ খন্ড ৯৩ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার, হাফিজে হাদীস, হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিজে হাদীস, হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনাদের বুখারী শরীফের শরাহ ‘‘ফতহুল বারী শরহে বুখারী এর ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা এবং উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী এর ২০ তম খন্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায়’’ উল্লেখ করেছেন-
وذكر السهيلى ان العباس قال لما مات ابو لهب رايته فى منامى بعد حول فى شر حال فقال ما لقيت بعد كم راحة الا ان العذاب يخفف عنى فى كل يوم اثنين وذلك ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها.
অর্থ: হযরত ইমাম সুহাইলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে ! সে বললো, (হে ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোন শান্তির মুখ দেখি নাই।
তবে হ্যাঁ, প্রতি সোমবার শরীফ যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন,আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারন হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ এর দিন ছিলো সোমবার শরীফ ! সেই সোমবার শরীফ এ হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাঁদী সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তিনি আবু লাহাবকে জানালেন তখন আবু লাহাব বিলাদত শরীফের খুশির সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে তাৎক্ষনাৎ আযাদ করে দেয় !”
(ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী লি শরহে বুখারী ২০ খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা, মাওয়াহেবুল লাদুননিয়াহ ১ম খন্ড , শরহুয যারকানী ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিজে হাদীস আল্লামা হযরত ইবনু কাছীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে লিখেন–
قال للعباس انه ليخفف على فى مثل يوم الاثنين قالوا لانه لما بشرته ثويبة بميلاد ابن اخيه محمد بن عبد الله اعتقها من ساعته فجوزى بذلك لذلك
অর্থ : আবু লাহাব হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে বললো, ( হে ভাই) অবশ্যই এ কঠিন আযাব সোমবার শরীফ এর দিন লাঘব করা হয়, আল্লামা হযরত সুহাইলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যরা বলেন, হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তিনি আবু লাহাবকে তার ভাতিজা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নূরী আওলাদ,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ এর সুসংবাদ দেন তৎক্ষনাৎ সে খুশিতে উনাকে মুক্ত করে দেয় ! এই কারনেই আযাব লাঘব হয়ে থাকে !” ( আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম খন্ড ৩৩২ পৃষ্ঠা ,মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড ৮৩ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে লিখেন-
قال النبى صلى الله عليه وسلم رأيت ابا لهب فى النار يصيح العطش العطش فيسقى من الماء فى نقر ابهامه فقلت بم هذا فقال بعتقى ثويبة لانها ارضعتك.
অর্থ : ‘‘হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও ! পানি দাও !
অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে। আমি বললাম, কি কারনে এ পানি পাচ্ছো ? আবু লাহাব বললো, আপনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে মুক্ত করার কারনে এই ফায়দা পাচ্ছি ! কেননা তিনি আপনাকে দুধ মুবারক পান করিয়েছেন !”
(তারীখে ইয়াকুবী ১ম খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা )
উপরোক্ত হাদীস শরীফ সমূহের ব্যাখ্যায় হাফিজে হাদীস হযরত আল্লামা কুস্তালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি , হাফিজে হাদীস আল্লামা যুরকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি , ইমামুল মুহাদ্দিসিন শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সহ শত শত ইমাম মুহাদ্দিস গন বলেন –
قال ابن الجزرى فاذا كان هذا الكافر الذى نزل القران بذمه جوزى فى النار بفرحه ليلة مولد النبى صلى الله عليه وسلم به فما حال المسلم الموحد من امته عليه السلام يسر بمولده ويبذل ما تصل اليه قدرته فى محبته صلى الله عليه وسلم لعمرى انما يكون جزاؤه من الله الكريم ان يدخل بفضله العميم جنات النعيم.
অর্থ : ‘‘হযরত ইবনুল জাযরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আবু লাহাবের মত কাট্টা কাফির যার নিন্দায় কুরআন শরীফে আয়াত শরীফ ও সূরা শরীফ পর্যন্ত নাজিল হয়েছে, তাকে যদি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ এর রাত্রিতে আনন্দিত হয়ে খুশি প্রকাশ করার কারনে জাহান্নামেও তার পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে তবে হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কোন মুসলমান যদি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করে, তার সাধ্যনুযায়ী টাকা-পয়সা ইত্যাদি খরচ করে তাহলে তাদের অবস্থা কিরুপ হবে ? নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার দয়া এবং অনুগ্রহে অবশ্যই অবশ্যই তাকে নিয়ামতপূর্ন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন !”
(মাওয়াহেবুল লাদুননিয়া ১ম খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা, শরহুয যারকানী ১ম খন্ড ২৬১ পৃষ্ঠা, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড ৮৩ পৃষ্ঠা)
আর এ প্রসঙ্গে ইমামুল মুহাদ্দিসিন, শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ‘‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবসকে সম্মান করবে এবং খুশি প্রকাশ করবে সে চির শান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।” (মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুতবায়ে ইবনে নুবাতা)
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে উপরোক্ত আলোচনা থেকে থেকে শিক্ষা গ্রহন করার তৌফিক দান করুন । এবং পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে সর্বোচ্চ খুশি মুবারক প্রকাশ করার সৌভাগ্য দান করুন । আমীন ।
=================================================
জগৎ বিখ্যাত ইমাম মুস্তাহিদগন উনাদের তালিকা যিনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং কিতাব লিখেছেন।
আমরা ইতিপূর্বে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ উনার অকাট্য দলীল আদীল্লা এর মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ, ঈদে আযম, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার হুকুম,ফযীলত, গুরুত্ব প্রমান করেছি!
আজকে আমরা দেখবো জগৎ বিখ্যাত ইমাম, মুস্তাহিদ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস , ফকীহ, ইমাম উনাদের তালিকা, যিনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছেন, নিজেরা পালন করেছেন এবং সবাইকে করতে বলেছেন !!
অর্থাৎ এ মহান আমলটির ব্যাপারে সবাই ঐক্যমত্য স্থাপন করেছেন !
আর এই ইজমা বা ঐক্যমত্যের ব্যাপারে হাদীস শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে —
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَنْ تَـجْتَمِعَ اُمَّتِي عَلَى الضَّلَالَةِ اَبَدًا.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) কখেনোই আমার উম্মত গুমরাহীর মধ্যে একমত হবেন না।” (আল্ মু’জামুল কবীর লিত্ ত্ববারানী শরীফ : ১১তম খ- : ৭৮ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ১৩৪৪৮; মুস্তাদরাক লিল হাকীম শরীফ : কিতাবুল ইলম : ১ম খ- : ১৯৯ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৩৯১)
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে- ‘‘হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা বড় দলের অনুসরন করো । কারন যে জামাত ( আহলে সুন্নাহ) হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাকে পৃথক ভাবে অগ্নীতে নিক্ষেপ করা হবে ।” (মিশকাত শরীফ- কিতাবুল ঈমান-বাবুল ই’তিসামবিলকিতাবওয়াসসুন্নাহ–হাদীস১৬৪)
উক্ত হাদীস শরীফ সমূহ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ঐক্যমত্যের উপর আমাদের থাকতে হবে । বড় দল বা সকল ইমাম মুস্তাহিদগন যেদিকে রায় দিয়েছেন সে পথ থেকে কেউ সরে গেলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর থাকতে পারবে না, সে জাহান্নামী হবে ।
এবার আসুন আমরা দেখি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার যে সমস্ত ইমাম,মুস্তাহিদ,মুফাসসির,মুহাদ্দিস,ফকীহ,মুফতী মীলাদ শরীফ এবং ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করার তাগীদ করছেন উনাদের নাম মুবারকের তালীকা । এগুলা ছাড়াও আরো অসংখ্য নাম মুবারক রয়েছে ।
(১) ইমামুশ শরীয়াত ওয়াত ত্বরীকাত, ইমাম হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২) আল ইমামুল আকবার,শাফেয়ী মাযহাব উনার ইমাম, ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩) বিখ্যাত ফক্বীহ, বিশিষ্ট ওলী হযরত মারুফ কারখী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪) ওলীয়ে কামেল হযরত সাররী সাক্বতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫) সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬) তাজুল মানতেকীন, হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৭) সুলত্বনুল আরেফীন, হাফিজে হাদীস, জালালুদ্দিন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৮) হাফিজে হাদীস, ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৯) ইমাম শামসুদ্দিন মুহম্মদ ছাখাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১০) ইমামুল মুহাদ্দিসিন, মোল্লা আলী কারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১১) ইমামুল মুহাদ্দিসিন, শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১২) ইমামুল মুহাদ্দিসিন, শায়েখ ইবনে হাজর হায়ছামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৩) হাফিজে হাদীস, ইমাম হযরত ইবনে জাওযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৪) হাফিজে হাদীস,হযরত আল্লামা কুস্তালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৫) মুজাদ্দিদে জামান,সুলত্বনুল আওলীয়া, মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৬) ইমাম, হযরত আলী ইবনে ইব্রাহীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি ( সিরাতে হলবীয়া)
(১৭) মুহাদ্দিস, আল্লামা জাযরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৮) হাফিজে হাদীস, বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মুহম্মদ ইবনে ইউসুফ আশশামী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(১৯) হযরতুল আল্লামা,ইমাম, বারজানজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২০) হাফিজে হাদীস, আবু মুহম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে ইসমাঈল রহমাতুল্লাহি আলাইহি [ ইমাম নববীর ওস্তাদ] (২১) ইমামমুল মুহাদ্দেসীন, মুজাদ্দিদে জামান শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২২) ইমামুল মুহাদ্দিসীন, শায়েখ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৩) শায়েখ আল্লামা তাহের জামাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৪) বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হযরত তকি উদ্দিন সুবকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৫) মুহাদ্দিস, ইমামুল আল্লামা, নাসিরুদ্দিন মোবারক ইবনে বাতাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৬) শায়খুল ইমাম, জামাল উদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৭) ইমামুল আল্লামা, জহীর উদ্দিন ইবনে জাফর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৮) শায়েখ, হযরত নাসিরুদ্দিন তায়লাসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৯) শায়খুল ইমাম, আল্লামা সদরুদ্দীন মাওহূব ইবনে উমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩০) হযরত আল্লামা শায়েখ জামাল উদ্দীন ওরফে মির্জা হাসান মুহাদ্দিস লক্ষৌভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩১) শায়েখ, মুফতী মুহম্মদ সাআদুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩২) শায়খুল ইসলাম, হাফিজে হাদীস, হযরত আব্দুল ফজল আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৩) উমদাতুল মুফাসসিরিন হযরত শাহ আব্দুল গনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৪) হাফিজে হাদীস, হযরত জুরকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৫) পবিত্র মক্কা শরীফ এর হানাফী মুফতি শায়েখ জামাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৬) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হানাফী মুফতী শায়েখ আব্দুর রহমান সিরাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৭) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মালেকী মাযহাবের মুফতী হযরত রহমাতুল্লাহ
(৩৮) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার শাফেয়ী মাযহাবের মুফতি মুহম্মদ সাঈদ ইবনে মুহম্মদ আবসীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৯) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হাম্বলী মাযহাবের মুফতি খালফ ইবনে ইব্রাহিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪০) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মালেকী মাযহাবের মুফতি আল্লামা আবু বকর হাজী বাসাউনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪১) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হাম্বলী মাযহাবের মুফতী শায়েখ মুহম্মদ ইবনে হামীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪২) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হাম্বলী মাযহাবের মুফতী মুহম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৩) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মালেকী মাযহাবের মুফতী হযরত মাওলানা হুসাইন ইবনে ইব্রাহীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৪) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার শাফেয়ী মাযহাবের ফতোয়া বোর্ডের সভাপতি শায়েখ মুহম্মদ উমর ইবনে আবু বকর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৫) শায়েখ উছমান হাসান দিমইয়াতী শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৭) মদীনা শরীফ উনার হানাফী মুফতি মুহম্মদ আমীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৮) মদীনা শরীফ উনার শাফেয়ী মুফতি, শায়েখ জাফর হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৯) মদীনা শরীফ উনার হাম্বলী মুফতি আব্দুল জব্বার রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫০) মদীনা শরীফ উনার মালেকী মাযহাবের মুফতি মুহম্মদ শরকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫১) হাফিজে হাদীস, শামসুদ্দীন ইবনে নাসিরুদ্দিন দামেস্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫২) ইমামুল মুফাসসিরিন,শায়েখ ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৩) পীরে কামেল, মুজাদ্দিদে জামান, আবু বকর সিদ্দিক ফুরফুরাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৪) মুফতীয়ে আযম,হাফিযে হাদীস রুহুল আমীন বশিরহাটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৫) হাদীয়ে বাঙ্গাল, কারামাত আলী জৌনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৬) মুফতিয়ে আযম, আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বরকতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৭) শায়েখ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৮) শায়েখ, হাফিয আবুল খাত্তাব ইবনে দাহিয়্যা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৯) হাফিযে হাদীস, শায়েখ ইবনে হাজর মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬০) শায়েখ আল্লামা আবুল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬১) শায়েখ মাওলানা সালামাতুল্লাহ ছিদ্দীক কানপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬২) হযরত বেশরাতুল্লাহ মেদেনীপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬৩) শায়েখ হাফিজ , আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
দলীল–
√সবহুল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্তফা !√আল হাবীলিল ফতোয়া !
√মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া !
√ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল !
√মাসাবাতা বিস সুন্নাহ !
√কিতাবুত তানউয়ীর ফি মাওলুদুল বাশির ওয়ান নাজির !
√আন নি’মাতুলকুবরা
√মাওলুদুল কবীর
√ইশবাউল কালাম !
√খাসায়েছুল কুবরা
√মাকতুবাত শরীফ
√দুররুল মুনাজ্জাম
√হাক্বীকতে মুহম্মদি মীলাদে আহমদী !
√মজমুয়ায়ে ফতোয়া
√তাফসীরে রুহুল বয়ান
√জামিউল ফতোয়া
√ফতোয়ায়ে বরকতী
√সীরাতে শামী
√সীরাতে নববী
√যুরকানী আলাল মাওয়াহেব
√সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ
√মিয়াতে মাসাঈল
√আশ শিফা
√আল মুলাখখ্যাছ
√জাওয়াহিরুল মুনাজ্জাম
√আল ইনসানুল উয়ুন !
√আস সুলুকুল মুনাজ্জাম
√নুজহাতুল মাজালিস
√আল ইনতেবাহে সালাসিল আওলিয়া !
√হাফতে মাসায়িল
√কিয়ামুল মিল্লাহ
√সীরাতে হালবীয়া
√মাজমায়ুল বিহার
√মাওয়ারেদে রাবী ফী মাওলিদিন নবী
√ফুয়ুযুল হারামাঈন
√আরফুত তারীফ ফী মাওলিদিশ শরীফ
√আল ইহতিফাল বিযিকরী মাওলুদুন নাবীয়িশ শরীফ
√সিরাজুম মুনীরা
√শামায়েলে এমদাদীয়া
এছাড়াও আরো হাজার হাজার ইমাম,মুস্তাহিদ,মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকীহ আছেন যিনারা নিজেরাই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করতে উৎসাহিত করেছেন!
এবং পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার হুকুম সম্পর্কে দলীল আদিল্লা দিয়ে কিতাব রচনা করেছেন !
অথচ এর বিপরীতে একজন আলেম,ওলামা উনাদের কোন বক্তব্য, লিখনী, ফতোয়া কেউ দেখাতে পারবে না !
শুধু তাই না, এই বিষয়ে ইজমা সম্পর্কে বর্নিত আছে –
ﻗﺪﺍﺟﻤﻌﺖﺍﻻﻣﺖﺍﻣﺤﻤﺪﻳﺔﻣﻦ
ﺍﻻﻫﻞﺍﻟﺴﻨﺔﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔﻋﻠﻲﺍﺳﺘﺤﺴﺎﻥ
ﺍﻟﻘﻴﺎﻡﺍﻟﻤﺬﻛﻮﺭﻭﻗﺎﻝﻋﻠﻴﻪﺍﻟﺴﻼﻡﻻ
ﺗﺠﺘﻤﻊﺍﻣﺘﻲﻋﻠﻲﺍﻟﻀﻼﻟﺔ
অর্থ: উম্মতে মুহম্মদি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জাময়াতের সকল আলেমগন মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ মুস্তহসান হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত পোষন করেন। আর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,আমার উম্মত (আলেম গন) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবে না ।” (ইশবাউল কালাম:৫৪ পৃষ্ঠা)
সূতরাং এতজন ইমাম, মুস্তাহিদ, মুহাদ্দিস , মুফাসসির, ফকীহ উনাদের বিরোধীতা করে উনাদের ঐক্যমত্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে,বা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করবে তারা আর যাইহোক মুসলমান হতে পারে না ! তারা উপরে বর্নিত হাদীস শরীফের রায় অনুযায়ী জাহান্নামী হবে !
সেটা আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন —
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ
অর্থ: ‘‘যে কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পর রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর মু’মিনদের পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে চলবে, আমি তাকে সে দিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে, এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো ” ( পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আলাত শরীফ ১১৫)
সুতরাং যারা নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে খুশি মুবারক প্রকাশ করার বিরোধিতা করবে এবং এ ব্যাপারে মু’মিনগণ উনাদের ঐক্যমত অস্বীকার করে ভিন্ন পথ অনুসরণ করবে তার গন্তব্য নিশ্চিত জাহান্নাম!!
=================================================
যাদের অন্তরে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বত আছে তাদের পক্ষেই শুধুমাত্র পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন তথা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে সর্বশ্রেষ্ঠ খুশি মুবারক প্রকাশ করা সম্ভব
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
النَّبِيُّ أَوْلَىٰ بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ
অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের জীবন অপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
مَا كَانَ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ وَمَنْ حَوْلَهُم مِّنَ الْأَعْرَابِ أَن يَتَخَلَّفُوا عَن رَّسُولِ اللَّهِ وَلَا يَرْغَبُوا بِأَنفُسِهِمْ عَن نَّفْسِهِ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ لَا يُصِيبُهُمْ ظَمَأٌ
অর্থ: “মদীনাবাসী ও পাশ্ববর্তী পল্লীবাসীদের উচিত নয় রসূলুল্লাহর সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া এবং রসূলের প্রাণ থেকে নিজেদের প্রাণকে অধিক প্রিয় মনে করা।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২০)
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
لا يؤمن احدكم حتي اكون احب اليه من والده ووالده والناس اجمعين وفي رواية من ماله و نفسه
অর্থ : তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান সন্তুতি, এবং সমস্ত মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে। অন্য বর্নায় এসেছে, তার ধন সম্পদ এবং জীবনের চাইতে বেশি মুহব্বত না করবে।” (দলীল- বুখারী শরীফ ১/৭-কিতাবুল ঈমান- হাদীস নম্বর ১৪ এবং ১৫)
হাদীস শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ: ” لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
অর্থ: ‘‘নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, কোন মানুষ মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষন পর্যন্ত নিজের পরিবার, মাল সম্পদ, সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে।’’ (আবু ইয়ালা ৩৮৪২)
হাদীস শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى , قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” لا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ , وَتَكُونَ عِتْرَتِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ عِتْرَتِهِ , وَيَكُونَ أَهْلِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَهْلِهِ , وَتَكُونَ ذَاتِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ ذَاتِهِ ”
অর্থ: কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার নিজের জান থেকে আমাকে বেশি মুহব্বত করতে না পারবে এবং আমার সম্মানিত বংশধরগণ উনাদেরকে তার নিজের বংশধর থেকে বেশি মুহব্বত না করবে। আর আমার সম্মানিত আত্মীয়-স্বজন উনাদেরকে তার আত্মীয়-স্বজন থেকে বেশি মুহব্বত না করবে। আমার সম্মানিত জাত মুবারক উনাকে তার নিজের জাত থেকে বেশি মুহব্বত না করবে।” (মু’জামুল আওসাত লিত তাবারান ৫৯৪০, মুজামুল কবীর ৬৩০০, শুয়াইবুল ঈমান ১৪১৮)
যারা সত্যিকার অর্থে এমনভাবে মুহব্বত করতে পারবে তাদের পক্ষেই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা সম্ভব। তাদের অন্তরেই নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশির আমেজ কাজ করেবে। তাদের পক্ষেই নিয়ামত হিসাবে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে সে নিয়মতকে স্মরন করা ও সে উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
পবিত্র কালাম পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থাৎ “তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরণ কর।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
এখন মুহব্বতের কষ্ঠিপাথর দ্বারা নিজের অবস্থান যাচাই করে নিন। বিন্দুমাত্র মুহব্বত থাকলে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে খুশি মুবারক প্রকাশের বিরুধীতা করা সম্ভব নয়।
=================================================
আজকে আপনাদের মীলাদ শরীফের এমন এক দলীল দেখাবো যে অনেকে হয়তো অবাকই হয়ে যাবেন। বিশেষ করে দেওবন্দী কওমী গ্রুপের লোক যারা তারা এই দলীল দেখার পরও মীলাদ শরীফের বিরোধীতা কিভাবে করে সেটাও দেখার মত একটা বিষয় হবে।
তো আসুন দেখা যাক দেওবন্দীদের অন্যতম মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবীর বেহেশতী জেওর এর ৬ষ্ঠ খন্ডের “সীরাতে পাক” অধ্যায় থেকে বিষয়টা তুলে ধরা যাক:
“রসূলের জীবনী আলোচনার মজলিসকে কেহ সীরাতে পাকের মজলিস বলে।কেহ মওলুদ শরীফ বয়ানের মাহফিল বলে, কেহ মাহফিলে মীলাদ বলে। আসল উদ্দেশ্য একই ভাষা ভিন্ন। ইহা অত্যান্ত জরুরী। মুসলমানদের ঘরে ঘরে এবং দোকানে দোকানে শুধু বৎসরে এক আধবার নয়, শুধু রবীউল আউয়ালের চাঁদে নয়, মাসে মাসে , সপ্তাহে সপ্তাহে এই পবিত্র মাহফিলে মীলাদের অনুষ্ঠান হওয়া বাঞ্ছনিয়।
কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় সমাজে অজ্ঞতা এবং মূর্খতা ক্রমশঃ বাড়িয়া চলিয়াছে। মাহফিলে মীলাদ সমন্ধে বড় বাড়াবাড়ি এবং ঝগড়া বির্তক হইতেছে। ঝগড়া ফ্যাসাদের বির্তকের বাড়াবাড়ি ত্যাগ পূর্বক এই পবিত্র মাহফিলের অনুষ্ঠার সর্বত্র হওয়া দরকার। ………………………………………. সীরাতে পাকের মজলিস বা মাহফিলে মীলাদ নাম দিয়া অনুষ্ঠান করিলে তাহা বিদয়াত হইবে- কখনো নহে।”
[দলীলঃ বেহেশতী জেওর। লেখক- আশরাফ আলী থানবী। অনুবাদক- আশরাফ আলী থানবীর খলীফা শামসুল হক ফরীদপুরী। ভলিউম -২, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা ২২২, অধ্যায়- সীরাতে পাক। প্রকাশনা- এমদাদীয়া লাইব্রেরী ( দেওবন্দী কওমীদের) ]
বেহেশতী জেওরের প্রথম পৃষ্ঠা

বেহেশতী জেওরের প্রকাশনা তথ্য

৬ষ্ঠ খন্ডের সীরাত পাক অধ্যায়

মীলাদ শরীফ সংশ্লিষ্ট আলোচনা

উক্ত বিষয়ের সাথে সুন্নীরাও একমত। অথচ বর্তমান দেওবন্দী কওমীরা তাদের মুরুব্বীর আর্দশ থেকে কতটা বিচ্যুত হয়ে পরেছে। মাহফিলে মীলাদকে থানবী ও ফরিদপুরী অত্যান্ত জরুরী বলে উল্লেখ করেছে, অথচ কওমী দেওবন্দীরা এটা বিদয়াত শিরিক বলে। মীলাদ মাহফিল প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে করা আবশ্যক বলে মুরুব্বীরা ঘোষনা দিয়ে গেছে অথচ বর্তমান কওমীরা মীলদের নামই শুনতে পারে না। শুধু তাই নয় থানবী ও ফরিদপুরী এটাও বলে গেছে , অজ্ঞতা এবং মূর্খতা বশত কিছু লোক মীলাদ শরীফ নিয়ে ঝগড়া বির্তক সৃষ্টি করছে, অর্থাৎ বর্তমান কওমী ওহাবীরা । থানবী ও ফরিদপুরী এই ঝগড়া বির্তক ত্যাগ করে পবিত্র মীলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠার সর্বত্র জারি করা দরকার বলেও রায় দিয়ে গেছে।
এখন বলুন এমন স্পষ্ট দলীল থাকার পরও কি করে মীলাদ শরীফের বিরোধীতা করে দেওবন্দী কওমীরা?
=================================================
প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাদের কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি আপনারা, প্রত্যেক রাজনৈতিক দল দলীয় বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে প্রোগ্রাম করে থাকেন, যেমন:
– কেউ ১৭ই মার্চ পালন করেন,
– কেউ ১৫ই আগস্ট পালন করেন,
– কেউ ১৮ই অক্টোবর পালন করেন,
– কেউ ১৯শে জানুয়ারি পালনে করেন,
– কেউ বা ২০শে নভেম্বর পালন করেন।
তবে আপনারা প্রত্যেক দলই, তাদের দলীয় দিবস ছাড়াও ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, কিংবা বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করেন, ব্যানার ফেস্টুন ছাপিয়ে থাকেন।
তবে আমি বলবো, এসব দিবসকে কেন্দ্র করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানালে আপনারা রাজনৈতিক দলগুলো যতটুকু ফায়দা পাবেন, তার থেকে অনেক অনেক বেশি ফায়দা পাবেন পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানালে। কেননা, যেহেতু এ দিবসটি স্বয়ং আমাদের প্রত্যেকের প্রাণপ্রিয় নবীজি হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত, আর উনার পবিত্র নাম মুবারক শুনলেই প্রত্যেক মুসলমানদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। সেক্ষেত্রে এ দিবসটির শুভেচ্ছা মানুষের অন্তরকে আরো অধিক অধিক পরিমানে নাড়া দিবে।
বিশেষ করে, আওয়ামীলীগের অংগসংগঠনগুলোর মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাতীয়ভাবে উদযাপন শুরু করেছিলেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুই। তাই আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠন গুলোর উচিত এ দিবসটিকে অতিগুরুত্বের সাথে পালন করা। তারা যদি নতুন করে বিষয়টি গুরুত্ব্যের সাথে পালন শুরু করে, সেক্ষেত্রে বিশেষ চমক সৃষ্টি হবে এবং মুসলমানদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
আওয়ামীলীগ যদি, এ ধর্মীয় দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালন করে, তবে বিএনপি’র বসে থাকলে চলবে না, বিএনপিকে আরো গতিশীলতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ বিএনপিকে অনেকেই অধিক ধর্মীয় সম্পৃক্ত দল হিসেবে মনে করে। বিশেষ করে, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনের মাধ্যমে মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিকাশ দ্রুত ঘটবে এটা নিশ্চিত, তাই জাতীয়বাদে বিশ্বাসী বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোকে এক্ষেত্রে আরো বেশী অগ্রগামী হতে হবে।
পরিশেষে বলতে হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ: “আমি আপনাকে (নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারা বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি” (পবিত্র সূরা আল আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
অতএব এ রহমত উনার ভাণ্ডার লাভ করার জন্য, বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত থাকার জন্য, দুনিয়া-আখিরাতে সমৃদ্ধি লাভ করার জন্য আপনাদেরকে অবশ্যই এ দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে।
তাই প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের উচিত হবে, ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ উপলক্ষে
-দেশজুড়ে মিলাদ মাহফিল উনার ব্যবস্থা করা,
-গরীব-মিসকিনদের ভালো খাদ্য খাওয়ানো
-সমগ্র দেশবাসীকে ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড করে শুভেচ্ছা জানানো,
-দেশবাসীর সাথে আনন্দ খুশির জন্য দেখা-সাক্ষাৎ করা।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেককে অতি অতি শান-শওকতের সাথে পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
=================================================
বর্তমান সঙ্কট থেকে সারা বিশ্বের মুসলিম জাতির পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে সারা পৃথিবব্যিাপী হাক্বীক্বীভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে উনার সুমহান শান মুবারকে সর্বেশ্রেষ্ট খুশি মুবারক প্রকাশ করা অর্থাৎ ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা।
সারা বিশ্বে আজ মুসলমানরা নির্যাতিত ও পর্যুদস্ত, এর কারণ-মুসলমানরা রহমত থেকে দূরে সরে গেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وما ارسلناك الا رحمة للعالمين
অর্থ: “আমি আপনাকে সারা আলম-এর জন্য রহমতস্বরূপ (নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রেরণ করেছি।” (পবিত্র সূরা আল আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
আমরা বর্তমান জামানার উম্মতরা নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেই রহমতকে গ্রহণ করতে পারিনি। অথচ ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যাবে, পূর্ববর্তী মুসলমানরা সেই রহমত গ্রহণ করার কারণেই সফলতা অর্জন করেছিলো।
আপনারা সবাই নিশ্চয়ই হযরত সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি’র নাম জানেন। তিনি একাই সকল খ্রিস্টান ক্রসেডারদের নাকানি-চুবানি দিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা’র পক্ষ থেকে অবশ্যই হযরত সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি’র উপর বিশেষ রহমত এসেছিলো। কিন্তু ইতিহাস বলে, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি’র সেই রহমতের উৎস হচ্ছে: তিনি পুরো মুসলিম সালতানাতে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপকভাবে চালু করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ।
এবং ঐ সাইয়্যিদুল আইয়াদ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার কারণে উনার প্রতি নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাস রহমত মুবারক তথা গায়েবী মদদ নাজিল হতো। সুবহানাল্লাহ।
শুূধূ তাই না পূর্ববর্তী জামানাই ও মুসলমানরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার মাধ্যমে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য অর্জন করতেন।
যেমন হাফিজুল হাদীছ আবুল ফয়েয হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
لَازَالَ اَهْلُ الْـحَرَمَيْنِ الشَّرِيْفَيْنِ وَالْـمِصْرِ وَالْيَمَنِ وَالشَّامِ وَسَائِرِ بِلَادِ الْعَرَبِ مِنَ الْـمَشْرِقِ وَالْـمَغْرِبِ يَـحْتَفِلُوْنَ بِـمَجْلِسِ مَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَفْرَحُوْنَ بِقُدُوْمِ هِلَالِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَيَغْتَسِلُوْنَ وَيَلْبَسُوْنَ الثّيَابَ الْفَاخِرَةَ وَيَتَزَيّـِنُوْنَ بِاَنْوَاعِ الزّيْنَةِ وَيَتَطَيّـِبُوْنَ وَيَكْتَحِلُوْنَ وَيَأْتُوْنَ بِالسُّرُوْرِ فِىْ هٰذِهِ الْاَيَّامِ وَيَبْذُلُوْنَ عَلَى النَّاسِ بِـمَا كَانَ عِنْدَهُمْ مِنَ الْـمَضْرُوْبِ وَالْاَجْنَاسِ وَيَهْتَمُّوْنَ اِهْتِمَامًا بَلِيْغًا عَلَى السّمَاعِ وَالْقِرَاءَةِ لِـمَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَنَالُوْنَ بِذَالِكَ اَجْرًا جَزِيْلًا وَفَوْزًا عَظِيْمًا.
অর্থ : “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেছেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান, এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন। উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য অর্জন করেছেন তা প্রকাশ করতেন।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান লি শেখ ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ৯ম খ-, পৃষ্ঠা ৫৬; মীলাদুল উরুস- উর্দু “বয়ান-ই-মিলাদুন নবী”, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫, লাহোর; দুররুল মুনাজ্জাম, পৃষ্ঠা ১০০-১০১; মীলাদুন নবী, পৃষ্ঠা ৫৮)
বর্তমানে সাইয়িদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ (আগমন) উনার সম্মানার্থে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ তথা খুশি মুবারক প্রকাশের বিরোধীতার মূল হচ্ছে সউদী ওহাবীরা। যারা বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে রহমতপ্রাপ্তির এ দিনটি বন্ধ করতে চাইছে। কিন্তু এটা তো সত্যি যে, সউদীদের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে ব্রিটিশ খ্রিস্টানা। আর ব্রিটিশদের পূর্ব পুরুষ সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি’র সাথে ক্রুসেড যুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়েছিলো, তখন তারা গবেষণা করে দেখে মুসলমানদের নৈতিক শক্তির রহস্যগুলো কি । পরবর্তীকালে সেই নৈতিক শক্তির মূলতত্ত্বগুলোই এ সউদীদের মাধ্যমে ভেঙ্গে দেয় ব্রিটিশরা।
সুতরাং মুসলমানদের সেই সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে হলে পুনরায় রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে তাদেরকে। সবাইকে মন-প্রাণ উজার করে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উদযাপন করতে হবে,পালন করতে হবে। তবেই বর্তমান সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পাবে মুসলমানরা।
=================================================
সকল মুসলিম ব্যবসায়ী ভাইদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আসছে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে আপনারা আপনাদের পণ্যে বিশেষ ছাড় দিন। কাস্টমারকে আকৃষ্ট করুন।
আমি হলফ করে বলতে পারি, এ ধারায় যদি আপনারা ব্যবসা চালু করতে পারেন, তবে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আপনাদের ব্যবসায় যত লাভ হয়, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে আপনাদের ব্যবসায় যত লাভ হয়, তার থেকে অনেক অনেক বেশি লাভ হবে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে ব্যবসা করলে। সুবহানাল্লাহ।
কেননা: ঈদুল ফিতর উনার আনন্দ হচ্ছে ফেতরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে,
ঈদুল আযহা উনার আনন্দ হচ্ছে পবিত্র কুরবানী বা ত্যাগের আনন্দকে কেন্দ্র করে,
কিন্তু ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার আনন্দ হচ্ছে স্বয়ং আমাদের নবীজি (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার আগমন মুবারককে কেন্দ্র করে।
সুতরাং নিঃসন্দেহে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার খুশি-আনন্দ সব কিছুকে অতিক্রম করবে।
পরিশেষে বলতে হয়, আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وما ارسلناك الا رحمة للعالمين
অর্থ: “আমি আপনাকে সারা আলম-এর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” ( পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
তাই মূল রহমত উনার আগমন মুবারককে কেন্দ্র করে যা কিছুই করবেন, তাতে আপনার ব্যাবসায়ীক সাফল্য অসংখ্য গুন বেশি হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেক মুসলিম ব্যবাসায়ী ভাইকে সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপলক্ষে বিশেষ ব্যবসায়ীক কার্যক্রম গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
=================================================
অনেকে বলে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি পালন নাকি অমুসলিমদের অনুকরণ। নাউযুবিল্লাহ!!
মূলত যারা এ ধরনের আজগুবি কথা বলে, তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত। কারন জম্মদিন উপলক্ষে কিছু করা যদি অমুসলিমদের রীতি হত তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো জম্মদিন উপলক্ষে রোযা রাখতেন না। রোযা রাখার মাধ্যম দিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখিয়ে দিলেন এটি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মূল বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক না এবং এটি শরীয়ত উনার অন্তর্ভূক্ত বিষয়, যা জায়েজ।
এই ধরনের মূল বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক তখন হয় যখন পদ্ধতি বা নিয়মনীতি কাফেরদের সাথে মিলে যায়। পদ্ধতি যদি শরীয়ত সম্মত হয় তাহলে কখনোই তা শরীয়ত বিরুধী হয় না। যেমন, বিবাহ করা সব ধর্মেই আছে এখন ইহুদী খ্রিস্টানরা বিয়ে করে তাই বলে তো বিয়ে ইসলামে হারাম হয়ে যাবে না। বরং কোন রীতিতে করা হবে তার উপর ফায়সালা।
কেউ বলতে পারে, কোন হারাম কাজ অনুসরণ করে এই দিবস পালন করা ঠিক নয়। তাই বলে পুরোটা হারাম বলে কিভাবে ? কারণ ঐ মাহফিলে তো অনেকে কুরআন তিলওয়াত করে, দুরুদ সালাম পেশ করে, যা সওয়াবের কাজ। পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা যেটা আদেশ করেছেন সেটা হারাম বলা স্পষ্ট কুফরী।
=================================================
অনন্তকালব্যাপী জারিকৃত আযিমুশশান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহ্ফিল তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কেন্দ্রস্থল পবিত্র রাজারবাগ শরীফ কতবেশী মকবুল তার কিঞ্চিত প্রমাণ
যিনি খলিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبّكُمْ وَشِفَاء لّمَا فِى الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لّلْمُؤْمِنِينَ قُلْ بِفَضْلِ الله وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مّمَّا يَجْمَعُوْنَ
অর্থ: “হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন মহাসম্মানিত নছীহতকারী, অন্তরের আরোগ্য দানকারী, হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত দানকারী। (অতএব হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার ফদ্বল ও রহমত স্বরূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের উচিত খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের আমলটি হবে তাদের সমস্ত নেক আমল অপেক্ষা সর্বোত্তম বা সর্বশ্রেষ্ঠ। (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক আদেশ অনুযায়ী উনাদের মুবারক নির্দেশে উনাদের মুবারক সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হয়ে খুশি মুবারক প্রকাশের এ সুমহান মাহফিল তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল যমীনের বুকে অনন্তকালব্যাপী জারি করেন খলীফাতুল্লাহ্, খলীফাতু রসূলিল্লাহ্, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ব ত্বরীকত, ছাহিবু সুলত্বানুন নাছীর, মুর্শিদে রাজারবাগ শরীফ, ইমামে আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনিই। সুবহানাল্লাহ!
ইমামে আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জাহিরী বাতিনী রূহানী জিসমানী সর্ব মাধ্যমে সারা কায়িনাতে অনন্তকালব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল জারি করেছেন। উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে জ্বিন-ইনসানগণ জানতে পেরেছে যে, সম্মানিত সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার সম্মানিত ১২ই শরীফই সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে উনার আযীমুশ শান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন এবং এক তারিখে আযীমুশ শান বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার স্বর্ণালী যুগ থেকেই মুসলিম উম্মাহ আজ প্রায় ১৪০০ শত বৎসরের বেশী সময় যাবত এই মহান নিয়ামত সম্মানিত ১২ শরীফ উনাকে কেন্দ্র করে বিশেষ ঈদ তথা খুশি উদযাপন করেন। পবিত্র হারামাইন শরীফাঈন-এও এই উপলক্ষে ঈদ তথা খুশি বিশেষ জাঁকজমকের সাথেই উদযাপন করা হতো। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অনুসারী গং সউদী রাজতন্ত্র চালু করার পর অনেক হারাম কুফরী বিদয়াত জারির পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহ উনাদের ঈমানী জজবা ও মুহব্বতের অন্যতম শেয়ার বা নিদর্শন সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করা বন্ধ করে দেয়। শুধু এতোটুকুই নয়,ওহাবীরা সারা দুনিয়া থেকে এই মহা সম্মানিত ঈদ বা খুশি উৎখাতের লক্ষ্যে উলামায়ে ‘সূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা অনেক তাফসীর বির রায়, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা, ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের বক্তব্য কাট-ছাঁট করে বিভিন্ন চটি রেসালা, পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। ইদানীং তারা ইন্টারনেটে ওয়েব সাইট খুলে, ব্লগ লিখে, বিভিন্ন হারাম টিভি চ্যানেল খুলে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী উদযাপনের বিরুদ্ধে কুফরীমূলক বিষোদগার চালিয়ে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
ইমামে আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি এসব খারিজী ওহাবী বদ মাযহাব বদ আক্বীদার লোকগুলোর দাঁতভাঙ্গা দালীলিক জবাব দিয়ে মহা সমারোহে জারি করেছেন অনন্তকালব্যাপী মহা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল। আর এই সম্মানিত অনন্তকালব্যাপী জারিকৃত মাহফিল উনার মূল কেন্দ্রস্থল হচ্ছেন পবিত্র রাজারবাগ শরীফ। যে পবিত্র স্থান থেকে সারাবিশ্বে পবিত্র মাহফিল উনার নূর ছড়িয়ে পড়ছে, সেদিন অতি নিকটে যেদিন সারা কায়িনাতে সকল জ্বীন-ইনসান প্রতিটি ঘরে ঘরে মহা পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ মাহফিল অতি উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবেই পালন করবেন ইনশাআল্লাহ্।
মহাপবিত্র মহাসম্মানিত অনন্তকাল ব্যাপী জারিকৃত আযীমুশ শান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার কেন্দ্রস্থল পবিত্র রাজারবাগ শরীফ যে কতবেশী মহা সম্মানিত এবং মকবুল তার কিঞ্চিত প্রমান-নিদর্শন সংশ্লিষ্ট ২টি ঘটনা উল্লেখ করা হলো –
*** ২৯শে ছফর শরীফ ১৪৩৬ হিজরী বাদ আছর পবিত্র দরবার শরীফে হাজার হাজার লাখ লাখ জি¦ন ইনসান ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম একত্রিত হয়েছেন মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, শাহরুল আ’যম পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে ইস্তিকবাল আহলান-সাহলান জানানোর জন্য। সকলেই মাগরিব ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ঠিক ৩০ মিনিট পূর্ব থেকে উচ্চ স্বরে অতি মুহব্বতের সাথে তাকবীর দিচ্ছিলেন, আহলান-সাহলান জানাচ্ছিলেন, স্বাগতম জানাচ্ছিলেন। এ সুমহান সুন্দর মহিমান্বিত জান্নাতি পরিবেশে পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদে আমাদের পীরভাই ক্বারী আব্দুল বারী ভাই তিনি বরকতপূর্ণ রহমতপূর্ণ এক দৃশ্য অবলোকন করেন। তিনি দেখেন, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান বারে ইলাহী আল্লাহ পাক, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সকলেই পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদে তাশরীফ এনেছেন। সকলেই খুব খুশি প্রকাশ করছেন। মুবারক নূরে নূরান্বিত হয়ে গেছে সারা দরবার শরীফ। সুঘ্রানে সকলে মোহিত, জজবায় সকলে উচ্ছসিত।
বিশেষ করে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান বারে ইলাহী আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ মাহবূব লক্ষ্যস্থল ইমামে আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যে অত্যাধিক জওক শওকের সাথে আযীমুশ শান ভাবে ফালইয়াফরাহূ পালন করছেন, অনন্তকালব্যাপী মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ জারি করেছেন তা দেখে উনারা খুব খুব বেশী খুশি হচ্ছেন এবং অবারিত ধারায় অন্তহীন রহমত বর্ষন করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ্।
*** অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত মহা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল চলাকালীন আমাদের এক পীরবোন (উম্মু জাসির আহমদ) তিনি একটি মুবারক স্বপ্ন দেখেন। তিনি দেখেন, আযীমুশ শান পবিত্র দরবার শরীফ উনার ছাদ মুবারকে অনন্তকালব্যাপী জারিকৃত মহা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল হচ্ছে। অনেক পীরভাই মীলাদ শরীফ ও ছলাত-সালাম পাঠ করছেন, মহা সমারোহে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করছেন। পীরভাই গণ উচ্চ আওয়াজে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার খুশিতে তাকবীর দিতে দিতে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করলেন।
পীরভাই গণের মিছিল সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, মিছিলের সম্মুখে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাঁটছেন, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান বারে ইলাহী আল্লাহ পাক তিনি ইমামে আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে অতি আদরে কোলে নিয়ে হাঁটছেন। মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যে আযীমুশ শান ভাবে ফালইয়াফরাহূ পালন করে অনন্তকালব্যাপী মহা সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ জারি করেছেন তা দেখে উনারা উনাকে খুব আদর ও মুহব্বত করছেন। মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাদের আদর মুহব্বতে সন্তুষ্ট হয়ে হাসছেন। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত দুটি মুবারক ঘটনার দ্বারা প্রমানিত হয়, ইমামে আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কতবেশী মকবুল, উনার মহা সম্মানিত পবিত্র দরবার শরীফ কতবেশী মকবুল এবং উনার অনন্তকালব্যাপী জারিকৃত মহা পবিত্র ও মহা সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল কতবেশী মকবুল।
যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ্, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আমাদের সকলকে পবিত্র রাজারবাগ শরীফ এসে অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত মহা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিলে হাজির হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
=================================================
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক আমল যে আমলে অগনিত নিয়ামতের সম্ভার রয়েছে। ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের মাধ্যম দিয়ে মানুষ এসকল নেক কাজ করার সুযোগ ও বিশাল নিয়ামত লাভ করতে পারে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে ,
مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ
অর্থ: ‘হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম শরীফ – কিতাবুজ যাকাত : হাদীস ১০১৭, সুনানে নাসাঈ ২৫৫৪, জামে তিরমিযী – কিতাবুল ইলিম : হাদীস শরীফ ২৬৭৫ )
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে যে কাজ করা হয় তা সবই উত্তম। আসুন দেখা যাক কি করা হয়,
১) পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা হয়: ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে কুরআন শরীফ পাঠ করা
اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ
২) পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করা: পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اولى الناس بى يوم القيامة اكثرهم على صلوة
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ওই ব্যক্তিই ক্বিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে আমার প্রতি অধিক মাত্রায় পবিত্র ছলাত শরীফ (পবিত্র দুরূদ শরীফ) পাঠ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ- আবওয়াবুল বিতর: হাদীস ৪৮৪)
৩) পবিত্র সালাম পাঠ করা: পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ: “তোমরাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করার মতো প্রেরণ করো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
৪) হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা সিফত মুবারক করা:
اِنَّا اَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيرًا. لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُولِه وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وّ َاَصِيلا.
অর্থ : (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীস্বরূপ পাঠিয়েছি; যেন (হে মানুষ!) তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার উপর এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো এবং তোমরা উনার খিদমত করো ও উনার তা’যীম-তাকরীম করো এবং উনার ছানা-ছিফত করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা সর্বদা। (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮, ৯)
৫) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ বিষয়ে আলোচনা করা: “মেশকাতুল মাছাবীহ-এর ৫১৩ পৃষ্ঠায় “ফাযায়েলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন” নামক অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
عن العرباض بن سارية عن رسول الله صلى الله عليه وسلم- انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينة وساخبركم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضاء لها منه قصور الشام–
অর্থঃ- “হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার খামীর যখন প্রস্তুত হচ্ছিল তখনও আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট “খতামুন্নাবিয়্যীন” অর্থাৎ “শেষ নবী” হিসেবে লিখিত ছিলাম। এখন আমি আপনাদেরকে আমার পূর্বের কিছু কথা জানাব। তা হলো, আমি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, আমি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ ও আমি আমার মাতার সুস্বপ্ন। আমার বেলাদতের সময় আমার মাতা দেখতে পান যে, একখানা “নূর মুবারক” বের হয়ে শাম দেশের রাজপ্রাসাদ বা দালান-কোঠা সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে।” (সহীহ ইবনে হিব্বান: হাদীস ৬৪০৪, মুসতাদরেকে হাকীম: হাদীস ৩৬২৩, সিয়ারু আলামীন নুবুলা পৃষ্ঠা ৪৬, মুসনাদে তায়লাসী: হাদীস ১২৩৬, মুসনাদে বাযযার ৪১৯৯, দালায়েলুন নুবুওওয়াত-১ম খন্ডের ৮৩ পৃষ্ঠা ,শোয়াবুল ঈমান-২য় জিঃ, ১৩৪ পৃষ্ঠা, শরহুসসুন্নাহ ও মসনদে আহমাদ)
৬) মানুষকে খাবার খাওয়ানো: হাদীস শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا باليال والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং রাতের বেলায় মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী ১৮৫৫, ইবনে মাযাহ্ ১৩৯৫, আদাবুল মুফাররাদ ৯৮১, আবদ ইবনে হুমাইদ ৩৫৫, দারিমী)
৭) আগমন দিবস স্মরন করা: আর এমন বিশেষ দিন সমূহ স্মরন সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّـهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
অর্থ: ‘তাদেরকে আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ করান। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সূরা ইব্রাহিম ৫)
ফিকিরের বিষয় হচ্ছে , নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিবস কতটা তাৎপর্যপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ। এই দিন হচ্ছে অন্য সকল দিনের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। আর এমন দিনের স্মরন করানোর আদেশ মুবারক আল্লাহ পাক উনি নিজেই দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ অনুযায়ী এই বিশেষ দিন স্মরন করা, সে দিনের বিশেষ ঘটনাবলী আলোচনা করা, সে দিন যিনার আগমনে শ্রেষ্ঠ হলো উনার ছানা সিফত মুবারক করা, শুকরিয়া আদায় করা এটা আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।
উপরোক্ত বিষয় থেকে আমরা দেখতে পেলাম, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে আমারা যে আমল করি সেগুলো প্রতিটি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ সম্মত। এবং সবই উত্তম ও নিয়ামত সমৃদ্ধ, এবং আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারকের অর্ন্তভূক্ত। তাই এই সুমহান আমলের বিরোধীতা করা কোন মুসলমানের পক্ষে সম্ভব না। সূতরাং প্রমাণ হলো, আমরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে যে আমল করি সবই কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফ সম্মত।
=================================================
পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে কুল-কায়িনাতের সকল রাত ও দিনের চেয়েও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি মর্যদাসম্পন্ন ও ফযীলতপূর্ণ রাত ও দিন মুবারক। সুবহানআল্লাহ !
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّا اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সম্মানিত কাউছার বা সমস্ত ভালাই অর্থাৎ সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়গুলো হাদিয়া মুবারক করেছি।” সুবহানাল্লাহ!
(সম্মানিত সূরা কাওছার শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ: ১)
এই সম্মানিত কাওছার শরীফ উনার লক্ষ-কোটি ব্যাখ্যা মুবারক। তার মধ্যে একখানা ব্যাখ্যা মুবারক হচ্ছে, ‘খইরে কাছীর’ তথা সমস্ত প্রকার ভালাই। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত ভালাই তথা সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়গুলো হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্যদিক থেকে উনার সাথে যে বিষয় মুবারকগুলো সম্পৃক্ত হয়েছেন, সে বিষয় মুবারকগুলো সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ!
যার কারণে এই ব্যাপারে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে,
اِنَّ التُّرْبَةَ الَّتِىْ اِتَّصَلَتْ اِلٰى اَعْظُمِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاءِ حَتَّى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার সাথে এক মুহূর্তের তরেও স্পর্শ মুবারক করেছেন, যেই মাটি, ধূলি-বালি তথা পদার্থ-বস্তু যা কিছুই হোক না কেন, তাই মহাসম্মানিত ও বরকতময় এবং ফযীলতপূর্ণ হয়ে গিয়েছেন। আসমান-যমীন; এমন কি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!
অন্য ইজমা মুবারক-এ বলা হয়েছে,
فَاِنَّهٗ اَفْضَلُ مُطْلَقًا مِنَ الْكَعْبَةِ وَالْكُرْسِىّ حَتّٰى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা অবশ্যই সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুর্সী শরীফ; এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত, শ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা আসমান-যমীন, সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুর্সী শরীফ, মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে; এমনকি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি পবিত্র, ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং শ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, সাধারণ মাটি, ধূলি-বালি যার কোনো ক্বদর নেই; কিন্তু নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত স্পর্শ মুবারক-এ আসার কারণে উক্ত মাটি, ধূলি-বালির মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা যদি আসমান-যমীন, কা’বা শরীফ, কুর্সী শরীফ এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি হয়ে যায়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয় মুবারক উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
এই কারণেই যিনি সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত ফতওয়া মুবারক দিয়েছেন যে, ‘সম্মানিত লাইলাতুর রগইব শরীফ’ তথা সম্মানিত রজব মাস উনার পহেলা জুমুয়াহ শরীফ উনার রাত্রি মুবারক উনার মর্যাদা সম্মানিত শবে ক্বদর উনার থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ! কেননা সেই সম্মানিত রাত্রি মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুদরতীভাবে উনার সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এই থেকে প্রমাণিত হয় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় বা বস্তু সেটা মাটি হোক বা দিন তারিখ হোক সকল বিষয়ই সমস্ত কিছুর চাইতে শ্রেষ্ট ও সম্মানিত।
সেটাই হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের স্ব স্ব কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে আলোচনা মুবারক করেছেন। যেমন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ’ উনার মধ্যে বলেন,
اِنّهٗ وُلِدَ لَيْلًا فَتِلْكَ اللَّيْلَةُ اَفْضَلُ مِنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ بِلَا شُبْهَةٍ.
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই সম্মানিত রজনী মুবারক সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, নিঃসন্দেহে সেই সম্মানিত রজনী মুবারক ‘লাইলাতুল ক্বদর উনার থেকে অধিক (লক্ষ-কোটিগুণ বেশি) ফযীলতপূর্ণ।’
(মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ৩৯ পৃষ্ঠা)
আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আবী বকর ইবনে আব্দুল মালিক কুসত্বলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ : ৯২৩ হিজরী শরীফ) বলেন,
اُجِيْبُ بِاَنَّ لَيْلَةِ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ مِنْ وُجُوْهٍ ثَلَاثَةٍ.
অর্থ: ‘আমি জাওয়াব দিবো যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই মহাসম্মানিত রজনী মুবারক-এ সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন তথা সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ তিন কারণে ক্বদরের রজনী থেকেও অত্যধিক (লক্ষ-কোটিগুণ) বেশি সম্মানিত, ফযীলতপ্রাপ্ত, শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। সুবহানাল্লাহ!
(আল মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ বিল মিনাহিল মুহম্মদিয়্যাহ শরীফ ১/৮৮, শরহুয যারক্বনী আলাল মাওয়াহিব)
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল মাওলিদুর রওই শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَيْلَةُ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ.
অর্থ: ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই মহাসম্মানিত রজনী মুবারক-এ সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন তথা সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ ক্বদরের রজনী থেকেও অত্যধিক (লক্ষ-কোটিগুণ) বেশি ফযীলতপূর্ণ, বরকতপূর্ণ, মর্যাদাসম্পন্ন।’ সুবহানাল্লাহ! (আল মাওলিদুর রওই শরীফ-৯৯)
হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বারাহীনুল ক্বিত্বইয়্যাহ ফী মাওলিদি খইরিল বারিয়্যাহ’ উনার মধ্যে বলেন,
فَبِهٰذَا الْوَجْهِ لَوْ جُعِلَتْ لَيْلَةُ الْـمِيْلَادِ اَفْضَلَ مِنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ لَكَانَ اَلْيَقَ وَاَحْرٰى وَقَدْ صَرَحَ بِهِ الْعُلَمَاءُ رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالٰى.
অর্থ: “এই কারণে যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের রজনী মুবারক উনাকে তথা সম্মানিত ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ উনাকে শবে ক্বদর থেকে অত্যধিক (লক্ষ-কোটিগুণ বেশি) ফযীলতপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ বলা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা আরো অধিকতর সমুচিত হবে। এই মতের সমর্থনে হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনেকেই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।”
সুতরাং এই বিষয়ে যারা আপত্তি করবে বুঝতে হবে তারা মহান আল্লাহ পাক এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বত থেকে অনেক দূরে।
=================================================
খায়রুল কুরুনের যুগে পবিত্র রবিউল আউয়াল শরীফ মাসে খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার সম্মানার্থে পবিত্র মীলাদ শরীফ মাসকে তাযীম করায় এক ব্যক্তি ওলী আল্লাহ হিসাবে আখ্যায়িত হলেন। সুবহানাল্লাহ।
আল্লামা সাইয়্যিদ আবু বকর মক্কী আদ দিময়াতী আশ শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত: ১৩০২ হিজরী) উনার বিখ্যাত “ইয়নাতুল ত্বলেবীন” কিতাবে বর্ণনা করেন, বর্ণিত রয়েছে, খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় (১৪৮-১৯৩ হিজরী) বছরা শহরের এক যুবক সে নফসের অনুসরন করে চলতো। শহরের লোকেরা নিন্দনীয় আমলের জন্য তাকে নিন্দার চোখে দেখতো। তবে যখন পবিত্র রবিউল আউয়াল শরীফ মাস আসতো, এই যুবক কাপড় ধৌত করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতেন। সেই সাথে ভালো খাবারের ব্যবস্থাও করতেন। এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাসে এ আমল লম্বা সময়ব্যাপী করতেন। অতপর যখন তিনি ইন্তেকাল করেন তখন শহরবাসীগণ গায়েবী আহ্বান শুনতে পান। সেখানে বলা হচ্ছিলো, হে বসরাবাসী! আপনারা আল্লাহ পাক উনার ওলীদের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত একজন ওলীর জানাজায় শরীক হন। নিশ্চয়ই তিনি আমার কাছে খুবই প্রিয়। অতপর শহরবাসী উনার জানাজায় উপস্থিত হলেন এবং দাফন সম্পন্ন করলেন। উনারা (শহরবাসী) স্বপ্নে দেখলেন, উক্ত যুবক কারুকার্যপূর্ণ রেশমী কাপড় পরিহিত অবস্থায় ঘোরাফেরা করছেন। উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এ ফযিলত আপনি কি করে লাভ করলেন? তিনি বললেন, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে তাযীম করার কারনে।” (ইয়নাতুল ত্বলেবীন ৩য় খন্ড ৬১৩ পৃষ্ঠা ; প্রকাশনা: দারুল হাদীছ , কাহেরা, মিশর)
উল্লেখ্য যে খলীফা হারুনুর রশীদের যামানা ছিলো খায়রুল কুরুনে। উপরোক্ত ঘটনায় বোঝা যায় সে সময় পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের রীতি ছিলো। তাই এক ব্যক্তি তার আমল কিছুটা মন্দ হলেও পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে তাযীম করাকে মহান আল্লাহ পাক তার মর্যাদার কারণ হিসাবে প্রকাশ করলেন। এবং সম্মানিত ওলী আল্লাহ হিসাবে গ্রহন করলেন। সুবহানাল্লাহ।
সুতরাং উপরোক্ত ঘটনা ও সময়কাল থেকে জ্ঞানী মাত্রই যা বোঝার কথা সেটা হলো, উক্ত ঘটনা খায়রুল কুরনের। আর মীলাদ শরীফ নতুন কোন আমল নয়। বরং পবিত্র ইসলাম উনার প্রথম থেকেই এ আমল চলে আসছে। আর সে কারনে সম্মানিত খায়রুল কুরুনে মীলাদ শরীফ উনার ফযীলত সংশ্লিষ্ট অনেক ক্বওল শরীফ কিতাবে পাওয়া যায়। যেমন সে সময়কার বিখ্যাত ফক্বীহ, শাফেয়ী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই বলেন,
قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো, খাদ্য তৈরি করলো, জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক সম্মানিত হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণ উনাদের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতুন নাঈম এ।’ সুবহানাল্লাহ। (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা, মাদরেজুজ সউদ ১৫ পৃষ্ঠা, নাফহতুল আম্বারিয়া ৮ পৃষ্ঠা, ইয়নাতুল ত্বলেবীন ৩য় খন্ড ৬১৩ পৃষ্ঠা)
সুতরাং যারা বলে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবীল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল খায়রুল কুরুনে ছিলো না তারা গন্ডমূর্খ, ইলিমশূন্য।
=================================================
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ উনার ফজিলত ও ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ দিবস উনাকে সম্মান করার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। সুবহানআল্লাহ!
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْلَةُ اثْنَـىْ عَشَرَ مِنْ رَّبِيْع الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِيْهَا طَعَامًا كُنْتُ لَهٗ شَفِيْعًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ اِكْرَامًا فَكَاَنَّـمَا اَنْفَقَ جَبَلًا مِّنْ ذَهَبٍ اَحْمَرَ فِـى الْيَتَامٰى فِـىْ سَبِيْلِ اللهِ
অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি খাদ্য খাওয়ানের মাধ্যমে আমার বিলাদত শরীফ ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ রাত (ও দিবস) উনাকে সম্মান করবেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াতকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার বিলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে এক দিরহাম খরচ করবেন, সে ব্যক্তি ইয়াতীমদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান লাল স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! ( নে’মতে কুবরা উর্দূ ১১ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ كُنْتُ شَفِيْعًا لَّهٗ يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ فَكَاَنَّـمَا اَنْفَقَ جَبَلًا مِّنْ ذَهَبٍ فِـىْ سَبِيْلِ اللهِ تَعَالـٰى
অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার বিলাদত শরীফ (ঈদে মীলাদে হাবীবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে সম্মান করবেন, ক্বিয়ামতের দিন আমি তার জন্য শাফায়াতকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার বিলাদত শরীফ পালন উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করবেন, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!” (নাফহাতুল আম্বরিয়া ৮ পৃষ্ঠা, মাদারিজুস সউদ ১৫ পৃ., তালহীনুছ ছাননাজ ৫ পৃষ্ঠা)
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস
=================================================
হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ মিলাদ মাহফিল উনার অনুষ্ঠান করেছেন |
নিম্নে কয়েকটি প্রমান :
১. হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনার সনদ সহ প্রায় ২ লক্ষ হাদিস শরীফ মুখস্থ ছিল সেই তাজুল মুফাস্সিরীন মোহাদ্দেস মুসান্নিফ সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব ” সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” এ দুই খানা সহিহ হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন |
পবিত্র হাদিস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে ”
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلّمُ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাযাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
২. পবিত্র হাদিস শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত মুবারক ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ!
এই পবিত্র দুই হাদীস শরীফ খানা বিভিন্ন গ্রন্থে এসেছে যেমন : মাওলুদুল কবীর , হকিকতে মোহাম্মদী ( মিলাদ অধ্যায় ), দুররুল মুনাজ্জাম , ইশবাউল কালাম। ইবনে দাহইয়ার আত-তানভির ৬০৪ হিজরি।
=================================================
অনেকে বলে থাকে হযরত সাহাবা ই কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন নাকি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেন নি অথচ হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম গন উনাদের যুগেও ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং এর জন্য উনারা অন্যকে তাগীদও করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উইলদি আদম লি হযরতুল আল্লামা আহমদ শিহাবুদ্দীন হাইতামী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৭ম-৮ম পৃষ্ঠা; নাফহাতুল আম্বারিয়াতু লিইসবাতিল কিয়াম ফি মাওলিদি খাইরিল বারিয়্যাহ লি হযরতুল আল্লামা আব্দুল আউওয়াল জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৮ম পৃষ্ঠা, এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
পবিত্র ইসলাম উনার প্রথম খলীফা, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِىْ فِىْ الْـجَنَّةِ
অর্থ : “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষ্যে খুশি মুবারক প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবেন, তিনি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবেন।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র ইসলাম উনার দ্বিতীয় খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْيَا الْاِسْلَامَ
অর্থ : “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে বিশেষ মর্যাদা দিলেন অর্থাৎ এ উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করলেন, তিনি মূলত দ্বীন ইসলাম উনাকেই পুনরুজ্জীবিত করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র ইসলাম উনার তৃতীয় খলীফা, আমীরুল মুমিনীন, হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَاَنَّـمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرٍ وَّحُنَيْنٍ
অর্থ : “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষ্যে খুশি হয়ে এক দিরহাম খরচ করলেন, তিনি যেনো বদর ও হুনাইন জিহাদে শরীক থাকলেন।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র ইসলাম উনার চতুর্থ খলীফা, আসাদুল্লাহিল গালিব, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لّقِرَائَتِهٖ لايَـخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلَّا بِالْاِيْـمَانِ وَيَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ
অর্থ : “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলেন অর্থাৎ সে উপলক্ষ্যে খুশি প্রকাশ করলেন, তিনি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
বিখ্যাত মুহাদ্দীস আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতে হাদীসগুলো সম্পূর্ণ সহীহ এবং সনদ নির্ভরযোগ্য।যা তিনি উনার ‘জাওয়াহেরুল বিহার’ এর গ্রন্থে ৩য় খন্ডের ৩৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন ।
=================================================
আজ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর পুর্বে আব্বাসীয় খিলাফতে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম পালন হত।
আব্বাসীয় খিলাফতের খলীফা হারুন অর রশীদের আম্মা আল খায়যুরান(মৃত্যু ১৭২ হিজরি ২য় শতক /৭৮৯ খৃষ্টাব্দ – ৮ম শতক) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত মুবারকের স্থানে ইবাদত বন্দেগী করার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। যেখানে মুসলমানগণ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঈদে মিলাদে হাবীবি(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করতেন।
সুত্রঃ
১. Encyclopaedia of Islam, Second Edition. Brill Online Reference Works
২. Mawlid or Mawlud”, Encyclopedia of Islam
The basic earliest accounts for the observance of Mawlid can be found in 8th-century Mecca, when the house in which Muhammad was born was transformed into a place of prayer by Al-Khayzuran (mother of Harun al-Rashid, the fifth and most famous Abbasid caliph)
Source: “Mawlid or Mawlud”., Encyclopedia of Islam, Second Edition. Brill Online Reference Works.
জেনে রাখা দরকার, আব্বাসীয় খিলাফত ইসলামী খিলাফতগুলোর মধ্যে তৃতীয় খিলাফত। আব্বাসীয় খিলাফত হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়া আনহু উনার বংশধরদের কর্তৃক ১৩২ হি/৭৫০ খ্রিস্টাব্দে কুফায় প্রতিষ্ঠিত হয় যা ৬৫৬ হি/১২৫৮ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় থাকেন। ৯২২ হি/ ১৫১৭ সালে ইহা বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়।
এ খিলাফত ইসলাম এবং মুসলমানগন উনাদের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন।
এছাড়াও বাদশা হরুনুর রশীদের সময়কার ঘটনা যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, পবিত্র রবিউল আউয়াল শরীফ মাসে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার সম্মানার্থে পবিত্র মীলাদ শরীফ মাসকে তাযীম করায় এক ব্যক্তি ওলী আল্লাহ হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন,
আল্লামা সাইয়্যিদ আবু বকর মক্কী আদ দিময়াতী আশ শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত: ১৩০২ হিজরী) উনার বিখ্যাত “ইয়নাতুল ত্বলেবীন” কিতাবে বর্ণনা করেন, বর্ণিত রয়েছে, খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় (১৪৮-১৯৩ হিজরী) বছরা শহরের এক যুবক সে নফসের অনুসরন করে চলতো। শহরের লোকেরা নিন্দনীয় আমলের জন্য তাকে নিন্দার চোখে দেখতো। তবে যখন পবিত্র রবিউল আউয়াল শরীফ মাস আসতো, এই যুবক কাপড় ধৌত করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতেন। সেই সাথে ভালো খাবারের ব্যবস্থাও করতেন। এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাসে এ আমল লম্বা সময়ব্যাপী করতেন। অতপর যখন তিনি ইন্তেকাল করেন তখন শহরবাসীগণ গায়েবী আহ্বান শুনতে পান। সেখানে বলা হচ্ছিলো, হে বসরাবাসী! আপনারা আল্লাহ পাক উনার ওলীদের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত একজন ওলীর জানাজায় শরীক হন। নিশ্চয়ই তিনি আমার কাছে খুবই প্রিয়। অতপর শহরবাসী উনার জানাজায় উপস্থিত হলেন এবং দাফন সম্পন্ন করলেন। উনারা (শহরবাসী) স্বপ্নে দেখলেন, উক্ত যুবক কারুকার্যপূর্ণ রেশমী কাপড় পরিহিত অবস্থায় ঘোরাফেরা করছেন। উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এ ফযিলত আপনি কি করে লাভ করলেন? তিনি বললেন, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে তাযীম করার কারনে।” (ইয়নাতুল ত্বলেবীন ৩য় খন্ড ৬১৩ পৃষ্ঠা ; প্রকাশনা: দারুল হাদীছ , কাহেরা, মিশর)
এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখযোগ্যঃ
১. যখন আব্বাসীয় খিলাফত শুরু হয় তখন তাবেয়ী উনাদের যুগ। তার মানে তাবেয়ী উনাদের সময়ে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হত।
২. খলিফা হারুন অর রশিদের আম্মা যেহেতু পালন করেছেন সেহেতু অন্যরাও পালন করেছেন। যা উপরে উল্লিখিত ঘটনাদ্বারা প্রমাণিত হয়।
৩. ইহা নতুন কোন আমল নয়, ইসলামের শুরু থেকেই পালিত একটি আমল। যা মূলত সুন্নাত মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত।
তথ্যসূত্রওঃ
১. https://goo.gl/IO9bCs
২. আল খায়যুরান – https://goo.gl/b7kpm5
৩. আব্বাসীয় খিলাফত –https://goo.gl/OYoCSl
৪. ইয়নাতুল ত্বলেবীন ৩য় খন্ড ৬১৩ পৃষ্ঠা ; প্রকাশনা: দারুল হাদীছ , কাহেরা, মিশর
=================================================
তৃতীয় হিজরী শতকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন : তৃতীয় শতাব্দীর মহান ব্যক্তিত্ব সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدْرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالْاِيـْمَانِ.
অর্থ : “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আয়োজনে উপস্থিত হল এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করলো। সে তাঁর ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশতী হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উইলদি আদম- ৮ম পৃষ্ঠা)
হিজরী ৩য় শতকের পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মুসলিম ইতিহাসবিদ আল আজরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২১৯ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সেখানে নামায আদায় হতো।” (আল মক্কাহ, ২য় খ-, ১৬০ পৃষ্ঠা)
মুফাসসির আন নাক্কাস রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৬৬-৩৫১ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থানে প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুপুরে দোয়া করা হতো।” (আল ফাসি শিফা আল গারাম, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৯৯)
যারা বলে থাকে ঈদে মিলাদে হাবীবি নতুন আমল, ইহা বিদয়াত তারা এর কি জবাব দিবে?
https://goo.gl/eeAzlI
=================================================
অনেকে বলে থাকে বাদশাহ মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিই নাকি সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন শুরু করেন অথচ উনি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রিয়ভাবে ব্যাপক জাকজমকের সাথে পালন করা শুরু করেন কিন্তু ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন এর পুর্ব প্রচলন ছিল
যেমন আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর পুর্বে ওমর বিন মুল্লা মুহম্মদ মউসুলি রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসকে নিয়মিতভাবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জারী রাখার প্রচলন চালু করেন । উনার অনুসরনে ইসলামের অমর সিপাহসালার সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বোনজামাই আরবলের বাদশাহ মালিক আবু সাঈদ মুজাফফর আল দীন (১১৫৪- ১২৩২ খৃঃ) রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যপক প্রচার প্রসার ও জাকজমকের সাথে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুষ্ঠান পালনের প্রচলন করেন । ইবনে খালকান আরবালি শাফেয়ী উক্ত অনুষ্ঠানের সাক্ষী।
‘তারিখ-ই-মারাত আয জামান” এর মতে ঐ অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরছ করা হত । হিজরি ৭ম শতকের শুরুতে সে যুগের বিখ্যাত ওলামা ও প্রসিদ্ধ ফোজালাগণের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব আবুল খাত্তাব উমর বিন হাসান দাওহিয়া ক্বলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপর একটি বই লিখেন যার নাম দেন “আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর”।
ষষ্ঠ হিজরী শতকে মিশরের সুলতান পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করতেন। এ দিবসে হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করতেন। যার সাক্ষী হলেন হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুলতান আবূ হামু মুসা তালামসানী এবং পূর্বেকার আন্দালুস ও আকসার শাসকেরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন। আবদুল্লাহ তন্সী সুম্মা তালামসানী এ উদযাপনের উপর বিস্তারিত একটি কিতাব লিখেছেন যার নাম দিয়েছেন “রাহ আল আরওয়াহ”। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতি খাইরিল ইবাদ লি মুহম্মদ বিন আলী ইউসুফ দামিস্কী; আদ্দূররুল মুনাজ্জাম ফি হুকমী মাওলিদিন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; আনওয়ারুস সাতিয়া ১৩০৭ হিজরী, পৃষ্ঠা ২৬১; ওয়াফইয়াতুদ দায়ান আনবা আবনাউয যামান, কায়রো; মুহাম্মদুর রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, লেখক : আল্লামা মুহম্মদ রাজা মিস্র্রী, লাহোর, পৃষ্ঠা ৩৩)
২. আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে হাফিজুল হাদীছ আবুল ফয়েয হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী (১১১৬-১২০১ খৃঃ) রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
لَازَالَ اَهْلُ الْـحَرَمَيْنِ الشَّرِيْفَيْنِ وَالْـمِصْرِ وَالْيَمَنِ وَالشَّامِ وَسَائِرِ بِلَادِ الْعَرَبِ مِنَ الْـمَشْرِقِ وَالْـمَغْرِبِ يَـحْتَفِلُوْنَ بِـمَجْلِسِ مَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَفْرَحُوْنَ بِقُدُوْمِ هِلَالِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَيَغْتَسِلُوْنَ وَيَلْبَسُوْنَ الثّيَابَ الْفَاخِرَةَ وَيَتَزَيّـِنُوْنَ بِاَنْوَاعِ الزّيْنَةِ وَيَتَطَيّـِبُوْنَ وَيَكْتَحِلُوْنَ وَيَأْتُوْنَ بِالسُّرُوْرِ فِىْ هٰذِهِ الْاَيَّامِ وَيَبْذُلُوْنَ عَلَى النَّاسِ بِـمَا كَانَ عِنْدَهُمْ مِنَ الْـمَضْرُوْبِ وَالْاَجْنَاسِ وَيَهْتَمُّوْنَ اِهْتِمَامًا بَلِيْغًا عَلَى السّمَاعِ وَالْقِرَاءَةِ لِـمَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَنَالُوْنَ بِذَالِكَ اَجْرًا جَزِيْلًا وَفَوْزًا عَظِيْمًا.
অর্থ : “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেছেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান, এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন। উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য অর্জন করেছেন তা প্রকাশ করতেন।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান লি শেখ ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ৯ম খ-, পৃষ্ঠা ৫৬; মীলাদুল উরুস- উর্দু “বয়ান-ই-মিলাদুন নবী”, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫, লাহোর; দুররুল মুনাজ্জাম, পৃষ্ঠা ১০০-১০১; মীলাদুন নবী, পৃষ্ঠা ৫৮)
সুতরাং ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতাকারীদের বক্তব্য ভুল বলে প্রমাণিত হল।
=================================================
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে দেওবন্দী, ওহাবী, সালাফীরা, রাষ্ট্রিয়ভাবে ব্যপক জাকজমকের সাথে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারী গাযী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ভগ্নিপতি শাহ মালিক আল-মুযাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বলে থাকে বাদশা মুজাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নাকি ফাসেক, নিষ্ঠুর ও বেদআতী শাসক ছিলেন। (নাউজুবিল্লাহ)
অথচ দেখুন দেওবন্দী, ওহাবী, সালাফীদের গুরু ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাকে সালাফী / ওহাবীরা তাফসীর ও ইতিহাস শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করে থাকে, তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামের মুজাহিদ সুলতান গাযী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ভগ্নিপতি শাহ মালিক আল-মুযাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। প্রকৃতপক্ষে উনি লিখেন:
ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﺍﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﻛﻮﻛﺒﺮﻱ ﺍﺣﺪ
ﻟﻼﺟﻮﺍﺩ ﺍﻟﺴﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﻜﺒﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﻤﻠﻮﻙ
ﺍﻻﻣﺠﺎﺩﻟﺔ ﺍﺛﺮ ﺣﺴﻨﺔ
অর্থ: “বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন আবু সাঈদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি দানশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। সাথে সাথে তিনি সম্মানিত বাদশাও ছিলেন। উনার বহু পূন্যময় কাজের আলামত এখনও বিদ্যমান রয়েছে।”[সূত্রঃ- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৩ তম, খন্ড ১৩৬ পৃষ্ঠা]
ﻛﺎﻥ ﻳﺼﺮﻑ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻤﻮﻟﺪ ﻛﻞ ﺳﻨﺔ ﻋﻠﻲ
ﺛﻼﺛﺔ ﺍﻟﻒ ﺩﻳﻨﺎﺭ
অর্থ: আরবলের বাদশা হযরত মালিক মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতি বছর পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে তিন লক্ষ দিনার ব্যায় করতেন।”
[সূত্রঃ- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৩ তম, খন্ড ১৩৭ পৃষ্ঠা]
أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى
অর্থঃ “(মুযাফফর শাহ) ছিলেন একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত শাসক, যাঁর সকল কাজ ছিল অতি উত্তম। তিনি কাসিইউন-এর কাছে জামেয়া আল-মুযাফফরী নির্মাণ করেন…..(প্রতি) রবিউল আউয়াল মাসে তিনি জাঁকজমকের সাথে মীলাদ শরীফ (মীলাদুন্নবী) উদযাপন করতেন। উপরন্তু, তিনি ছিলেন দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বিদ্বান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক – রাহিমুহুল্লাহ ওয়া একরাম – শায়খ আবুল খাত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলতানের জন্যে মওলিদুন্ নববী সম্পর্কে একখানি বই লিখেন এবং নাম দেন ‘আত্ তানভির ফী মওলিদ আল-বাশির আন্ নাযীর’। এ কাজের পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দিনার দান করেন। সালাহিয়া আমল পর্যন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তিনি ’আকা’ জয় করেন। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থেকে যান।”আস্ সাবত্ এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন যিনি সুলতানের আয়োজিত মওলিদ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন; ওই ব্যক্তি বলেন: ‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-ভর্তি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মিষ্টির আয়োজন করতেন’।”
[’তারিখে ইবনে কাসীর’, ‘আল-বেদায়াহ ওয়ান্ নেহায়া’ ১৩তম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা]এছাড়াও হাফিজে হাদীস ইমাম যাহাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে লিখেন-
[সূত্রঃ- সিয়ারু আলামীন নবালা, ২২ তম খন্ড, ৩৩৬ পৃষ্ঠা]
এ মহান বাদশার প্রশসায় উনার সমকালীন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী ইবনে খল্লিক্বান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে লিখেন-
ﻭﻛﺮﻡ ﺍﻻﺧﻼﻕ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺳﺎﻟﻢ ﺍﻟﻄﺎﻗﺔ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﻤﻴﻞ ﺍﻟﻲ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻻ ﻳﻨﻔﻖ ﻋﻨﺪ ﻣﻦ ﺍﺭﺑﺎﺏ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ﺳﻮﻱ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﻭﻣﻦ ﻋﺪﺍﻫﻤﺎ ﻻ ﻳﻌﻄﻴﻪ ﺷﻴﺎ ﺍﻻ ﺗﻜﻠﻔﺎ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দিন ইবনে যাইনুদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রসংসনীয়, চরিত্রের অধিকারী, অত্যধিক বিনয়ী ছিলেন। উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তিনি আলিম উলামা, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিসগনদের পিছনে ব্যয় করা ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে ব্যয় করার ব্যাপারে মিতব্যয়ী ছিলেন।”
[সূত্রঃ- ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান, ৪র্থ খন্ড, ১১৯ পৃষ্ঠা]
এ মহান বাদশা বিশুদ্ধ আক্বীদা এবং উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন বলেই সে জামানার সকল আলিম উলামা, মাশায়েখ, সূফী দরবেশ সবাই সে সময় উনার আয়োজিত মীলাদ শরীফ মাহফিলে উপস্থিত হতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ক্বাযী ইবনে খল্লিক্বান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,
ﻭﺍﻣﺎ ﺍﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻤﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻮﺻﻒ ﻳﻘﺼﺮ ﻋﻦ ﺍﻻﺣﺎﻃﺔ ﺑﻬﺎ ﻭﻟﻜﻦ ﻧﺬﻛﺮ ﻃﺮﻗﺎ ﻣﻨﻪ ﻭﻫﻮ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻗﺪ ﺳﻤﻌﻮﺍ ﺑﺤﺴﻦ ﺍﻋﺘﻘﺎﺩ ﻓﻴﻪ ﻓﻜﺎﻥ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺳﻨﺔ ﻳﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﻣﻦ ﺍﺭﺑﻞ ﻣﺜﻞ ﺑﻐﺪﺍﺩ ﻭﺍﻟﻤﻮﺻﻞ ﻭﺍﻟﺠﺰﻳﺮﺓ ﻭ ﺳﻨﺠﺎﺭ ﻭﻧﺼﺒﻴﻦ ﻭﺑﻼﺩﺍ ﺍﻟﻌﺠﻢ ﻭﺗﻠﻚ ﺍﻟﻨﻮﺍﺣﻲ ﺣﻠﻖ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﺼﻮﻓﻴﺔ ﻭﺍﻟﻮﻋﺎﺀﻅ ﻭﺍﻟﻘﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি কতৃক আয়োজিত মীলাদ মাহফিলের গুরুত্ব-মাহাত্ব বলে শেষ করার মত নয়। এতদসত্বেও একটি কথা না বললেই নয়। তাহলো দেশবাসী আক্বীদা ও বিশ্বাসে উনাকে উত্তম লোক বলেই জানতেন। আর তাই প্রতি বছর আরবলের নিকটবর্তী সকল দেশে যেমন-বাগদাদ, মাওয়াছিল, জাযীরাহ, সানজার, নাছীবাইন, আরব-অনারব ও আশ পাশের অসংখ্য আলীম উলামা, ফক্বীহ, ছালিহ, ওয়ায়িজ, ক্বারী ও শায়িরগন উক্ত মীলাদ শরীফ এর মাহফিলে উপস্থিত হতেন।”
[সূত্রঃ- ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান, ৪র্থ খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা]
মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লানত
=================================================
১. সপ্তম হিজরী শতাব্দীর ইতিহাসবিদ শায়েখ আবুল আব্বাস আল আযাফি এবং উনার ছেলে আবুল কাসিম আল আযাফি (সার্জারির জনক) উনাদের কিতাব-এ লিখেন- “পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন ধার্মিক ওমরাহ-হজ্জ যাত্রী এবং পর্যটকেরা দেখতেন যে, সকল ধরণের কার্য্যক্রম (দুনিয়াবী) বন্ধ, এমনকি ক্রয়-বিক্রয় হতো না, উনাদের ব্যতীত যারা সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান জড়ো হয়ে দেখতেন। এ দিন পবিত্র কা’বা শরীফ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হতো।” (দুররুল মুনাজ্জাম)
২. ৮ম শতকের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা তাঁর রিহলায় লিখেন- “প্রতি জুম্মা নামাজের পর এবং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইই ওয়া সাল্লাম উনার জন্মদিনে বানু শায়বা এর প্রধান কতৃক পবিত্র কাবা শরিফের দরজা খোলা হত। মক্কা শরিফের বিচারক নজম আল দীন মুহম্মদ ইবনে আল ইমাম মুহুয়ি আল দিন আল তাবারি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশধর এবং সাধারন জনগনের মাঝে খাবার বিতরন করতেন।”
৩. ইতিহাসবিদ শায়েখ ইবনে যাহিরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘জামীউল লতিফ ফি ফাদলি মক্কাতা ওয়া আহলিহা’, শায়েখ হাফিয ইবনে হাযার আল হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল মাওলিদুশ শরীফুল মুনাজ্জাম’ এবং ইতিহাসবিদ শায়েখ আল নাহরাওয়ালি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল ইমাম বি’আলামি বাইতিল্লাহিল হারাম’ কিতাবের ২০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- “প্রতি বছর মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ বাদ মাগরীব ৪ জন সুন্নী মাযহাব উনার মুকাল্লিদ, বিচারক, ফিক্বহবিদ, শায়েখান, শিক্ষক, ছাত্র, ম্যাজিস্ট্রেট, বিজ্ঞজন এবং সাধারণ মুসলমান মসজিদের বাহিরে আসতেন এবং তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে করতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান- হুজরা শরীফ পরিদর্শন করতেন। মুবারক স্থান- হুজরা শরীফ যাওয়ার পথ আলোকসজ্জা করা হতো। সকলে উত্তম পোষাক পরিধান করতেন এবং সাথে উনাদের আল-আওলাদদের নিতেন। পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থানের ভিতরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময়কার বিভিন্ন বিষয়াদি বিশেষভাবে বর্ণনা করা হতো।
তারপর উসমানীয় খিলাফতের জন্য সবাই দোয়া করতেন এবং বিনয়ের সাথে দোয়া করা হতো। ইশা নামায শুরুর কিছুক্ষণ পূর্বে সকলে মসজিদে চলে আসতেন (যা থাকতো লোকে লোকারণ্য) এবং সারিবদ্ধভাবে মাক্বামে ইবরাহীম উনার সামনে বসতেন।” ইশা নামাজের কিছুক্ষন পুর্বে সকলে মসজিদে চলে আসতেন ( যা থাকত লোকে লোকারন্য ) এবং সারিবদ্ধভাবে মাকামে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সামনে বসতেন ।
=================================================
৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে উল্লেখ করেন-
اَنَّ اَصْلَ عَمَلِ الْـمَوْلِدِ الَّذِيْ هُوَ اِجْتِمَاعُ النَّاسِ وَقِرَاءَةٌ مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْاٰنِ وَرِوَايَةُ الْاَخْبَارِ الْوَارِدَةِ فِيْ مَبْدَاِ اَمْرِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا وَقَعَ فِيْ مَوْلِدِهٖ مِنَ الْاٰيَاتِ ثُـمَّ يَـمُدُّ لَـهُمْ سِـمَاطَ يَأْكُلُوْنَهٗ وَيَنْصَرِفُوْنَ مِنْ غَيْرِ زِيَادَةٍ عَلٰى ذٰلِكَ هُوَ مِنَ الْبِدَعِ الْـحَسَنَةِ الَّتيْ يُثَابُ عَلَيْهَا صَاحِبُهَا لِـمَا فِيْهِ مِنْ تَعْظِيْمِ قَدْرِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاِظْهَارِ الْفَرْحِ وَالْاِسْتِبْشَارِ بِـمَوْلِدِهِ الشَّرِيْفِ
অর্থ : “পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন যা মূলতঃ মানুষদের সমবেত করা, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অংশ-বিশেষ তিলাওয়াত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক (পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ) সংক্রান্ত ঘটনা ও মুবারক লক্ষণগুলোর বর্ণনা পেশ, অতঃপর তবাররুক (খাবার) বিতরণের জন্য দস্তরখানা বিছানো এবং সবশেষে সমাবেশ ত্যাগ, তা উত্তম কাজ (উদ্ভাবন); আর যে ব্যক্তি এর অনুশীলন করেন তিনি সওয়াব অর্জন করেন, কেননা এতে জড়িত রয়েছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান মর্যাদা মুবারক উনার প্রতি গভীর তা’যীম প্রদর্শন এবং উনার সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের প্রতি খুশি প্রকাশ।’’ (আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়া লি ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ১ম খ-, ২৯২ পৃষ্ঠা, মাকতাবাল আসরিয়া, বৈরূত, লেবানন)
=================================================
পবিত্র মক্কা শরীফ- এ সাইয়্যদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হওয়ার প্রমাণ।
১। হিজরী ৩য় শতকের পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মুসলিম ইতিহাসবিদ আল আজরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২১৯ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সেখানে নামায আদায় হতো।” (আল মক্কাহ, ২য় খ-, ১৬০ পৃষ্ঠা)
২। মুফাসসির আন নাক্কাস রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৬৬-৩৫১ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থানে প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুপুরে দোয়া করা হতো।” (আল ফাসি শিফা আল গারাম, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৯৯)
৩। সাইয়্যিদ মুহম্মদ সুলাইমান নদভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “সিরাতুন নবী” জীবনী গ্রন্থের ৩য় খন্ডে উল্লেখ করেছেন ৩/৪ শতক হিজরী মীলাদ শরীফ উদযাপন করা হতো। এছাড়াও ৩৯৪ হিজরী সালে ফাতেমী খিলাফতের অধীনে মিশরে মাসব্যাপী ব্যাপক জাঁকজমকের সাথে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হতো।
৪। হযরত ইবনে জুবায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৪০-৬৪০ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেছেন- “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বাড়ি মুবারক-এ পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হতো।” (কিতাবুর রিহাল, পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫)
৫। হাফিজুল হাদীছ আবুল ফয়েয হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেছেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান, এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন। উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য অর্জন করেছেন তা প্রকাশ করতেন।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান লি শেখ ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ৯ম খ-, পৃষ্ঠা ৫৬; মীলাদুল উরুস- উর্দু “বয়ান-ই-মিলাদুন নবী”, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫, লাহোর; দুররুল মুনাজ্জাম, পৃষ্ঠা ১০০-১০১; মীলাদুন নবী, পৃষ্ঠা ৫৮)
৬। সপ্তম হিজরী শতাব্দীর ইতিহাসবিদ শায়েখ আবুল আব্বাস আল আযাফি এবং উনার ছেলে আবুল কাসিম আল আযাফি (সার্জারির জনক) উনাদের কিতাব-এ লিখেন- “পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন ধার্মিক ওমরাহ-হজ্জ যাত্রী এবং পর্যটকেরা দেখতেন যে, সকল ধরণের কার্য্যক্রম (দুনিয়াবী) বন্ধ, এমনকি ক্রয়-বিক্রয় হতো না, উনাদের ব্যতীত যারা সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান জড়ো হয়ে দেখতেন। এ দিন পবিত্র কা’বা শরীফ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হতো।” (দুররুল মুনাজ্জাম)
৭। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা তিনি লিখেন- “প্রতি জুম‘আ নামায শেষে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসে বনু শায়বা গোত্রের প্রধান কর্তৃক পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দরজা খোলা হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সাধারণ জনগনের মাঝে খাবার বিতরণ করতেন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিচারক নাজমুদ্দীন মুহম্মদ ইবনে আল ইমাম মুহিউদ্দীন আত তাবারী।” (কিতাবুর রিহলা, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৩০৯ ও ৩৪৭)
৮। ইতিহাসবিদ শায়েখ ইবনে যাহিরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘জামীউল লতিফ ফি ফাদলি মক্কাতা ওয়া আহলিহা’, শায়েখ হাফিয ইবনে হাযার আল হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল মাওলিদুশ শরীফুল মুনাজ্জাম’ এবং ইতিহাসবিদ শায়েখ আল নাহরাওয়ালি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল ইমাম বি’আলামি বাইতিল্লাহিল হারাম’ কিতাবের ২০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- “প্রতি বছর মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ বাদ মাগরীব ৪ জন সুন্নী মাযহাব উনার মুকাল্লিদ, বিচারক, ফিক্বহবিদ, শায়েখান, শিক্ষক, ছাত্র, ম্যাজিস্ট্রেট, বিজ্ঞজন এবং সাধারণ মুসলমান মসজিদের বাহিরে আসতেন এবং তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে করতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান- হুজরা শরীফ পরিদর্শন করতেন। মুবারক স্থান- হুজরা শরীফ যাওয়ার পথ আলোকসজ্জা করা হতো। সকলে উত্তম পোষাক পরিধান করতেন এবং সাথে উনাদের আল-আওলাদদের নিতেন। পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থানের ভিতরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময়কার বিভিন্ন বিষয়াদি বিশেষভাবে বর্ণনা করা হতো।
তারপর উসমানীয় খিলাফতের জন্য সবাই দোয়া করতেন এবং বিনয়ের সাথে দোয়া করা হতো। ইশা নামায শুরুর কিছুক্ষণ পূর্বে সকলে মসজিদে চলে আসতেন (যা থাকতো লোকে লোকারণ্য) এবং সারিবদ্ধভাবে মাক্বামে ইবরাহীম উনার সামনে বসতেন।”
যার বিদয়াত বলে এ দিবসকে অস্বীকার করতে চায় তারা কি ইসলামের ইতহাসকে ভুল প্রমান করতে চায় ?
=================================================
মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল মাওরিদুর রাভী” কিতাবে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলীল
বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ইলমে হাদীছ শরীফ উনার ইলম হাছিলের জন্য পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ সব স্থানে ভ্রমন করেন। তিনি সারাজীবন অসংখ্য কিতাব রচনা করে মুসলিম জাহানের জন্য এক বিশাল নিয়ামত রেখে গিয়েছেন। উনার সে অসংখ্য কিতাবের মধ্যে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থের নাম হচ্ছে “মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবী”।
এ কিতাবে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে দলীল পেশ করেছেন এবং সেই সাথে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণ করেছেন যে, সারা পৃথিবীর সকল দেশে জাঁকজমকের সাথে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হতো। উক্ত কিতাব থেকে সে ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো উল্লেখ করা হলো-
(১) সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের মীলাদ শরীফ মাহফিল : আমাদের মাশায়েখ উনাদের ইমাম শায়খ শামসুদ্দিন মুহম্মদ সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানে যারা কয়েক বছর উপস্থিত ছিলেন, আমি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। আমরা মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানের বরকত অনুভব করছিলাম যা নির্দিষ্ট কয়েক ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়।
এ অনুষ্ঠানের মধ্যেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান উনার যিয়ারত আমার কয়েকবার নসীব হয়েছে। আল্লামা সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনারা বরকত ও কল্যাণের খনি। উনারা উক্ত প্রসিদ্ধ পবিত্র স্থানের প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করেন, যেটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান। এটা সাউকুল লাইলে অবস্থিত। যাতে উনার বরকতে প্রত্যেকের উদ্দেশ্য সাধিত হয়। এসব লোক পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন আরো অনেক কিছুর আয়োজন করে থাকেন। এ আয়োজনে আবেদ, নেককার, পরহিজগার, দানবীর কেউই বাদ যান না। বিশেষ করে হিজাজের আমীর বিনা সংকোচে সানন্দে অংশগ্রহণ করেন এবং উনার আগমন উপলক্ষ্যে ওই জায়গায় এক বিশেষ নিশান তৈরী করা হতো। পরবর্তীতে এটি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিচারক ও বিশিষ্ট আলিম আল-বুরহানিশ শাফেয়ী তিনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে আগত যিয়ারতকারী খাদিম ও সমবেত লোকদের খানা ও মিষ্টি খাওয়ানো পছন্দনীয় কাজ বলে রায় দিয়েছেন।
(২) সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের মীলাদ শরীফ মাহফিল : সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী উনারাও মীলাদ শরীফ মাহফিলের আয়োজন করতেন এবং অনুরূপ অনুষ্ঠানাদি পালন করতেন। বাদশাহ মোজাফফর শাহ আরিফ অধিক আগ্রহী এবং সীমাহীন আয়োজনকারী ছিলেন।
হযরত ইমাম আবূ শামা রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম উস্তাদ এবং বিশেষ বুযূর্গ ছিলেন, স্বীয় কিতাব “আল বায়াছ আলাল কদয়ে ওয়াল হাওয়াদিছ” উনার মধ্যে বাদশাহের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন এরকম ভালো কাজ সমূহ উনার খুবই পছন্দ এবং তিনি এ ধরনের অনুষ্ঠান পালনকারীদের উৎসাহ প্রদান ও প্রশংসা করতেন। ইমাম জাজরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো সংযোজন করে বলেন, এসব অনুষ্ঠানাদী পালন করার দ্বারা শয়তানকে নাজেহাল এবং ঈমানদারদের উৎসাহ উদ্দীপনা দানই উদ্দেশ্যে হওয়া চাই।
(৩) মিসর ও সিরিয়াবাসীর মীলাদ শরীফ মাহফিল : পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলে সবচাইতে অগ্রগামী ছিলেন মিসর ও সিরিয়াবাসী। মিসরের সুলতান প্রতি বছর পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের রাত্রে মীলাদ শরীফ মাহফিলের আয়োজনের অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন।
ইমাম শামসুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন আমি ৭৮৫ হিজরীতে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রাতে সুলতান বরকুকের উদ্যোগে আলজবলুল আলীয়া নামক কেল্লায় আয়োজিত পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলে হাজির হয়েছিলাম। ওখানে আমি যা কিছু দেখেছিলাম, তা আমাকে অবাক করেছে, অসীম তৃপ্তি দান করেছে। কোনোকিছুই আমার কাছে অস্বস্থিকর লাগেনি। সে পবিত্র রাতে বাদশাহর ভাষণ, উপস্থিত বক্তাগণের বক্তব্য, ক্বারীগণের তিলাওয়াতে কুরআন শরীফ এবং না’ত শরীফ পাঠকারীগণের না’ত শরীফ আমি সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছি।
(৪) স্পেন ও পাশ্চাত্য দেশে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন : স্পেন ও পাশ্চাত্য শহরগুলোতে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রাতে রাজা বাদশাহগণ জুলুস বের করতেন। সেথায় বড় বড় ইমাম ও উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অংশগ্রহণ করতেন। মাঝ পথে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এসে উনাদের সাথে যোগ দিতেন এবং কাফিরদের সামনে সত্য দাওয়াত তুলে ধরতেন। আমি যতটুকু জানি, রোমবাসীগণও কোন অংশে পিছিয়ে ছিলো না। তারাও অন্যান্য বাদশাহগণের মতো পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের আয়োজন করতেন।
(৫) অনারব দেশে তথা ভারতবর্ষে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : আরব ছাড়াও অনারবে মীলাদ শরীফ মাহফিলের প্রচলন ছিলো মহাসমারোহে। যেমন- পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে এবং মহিমান্বিত দিনে এসকল এলাকার অধিবাসীদের ‘মীলাদ শরীফ মাহফিল’ নামে জাঁকজমক পূর্ণ মজলিসের আয়োজন হতো, গরীব মিসকিনদের মধ্যকার বিশেষ ও সাধারণ সকলের জন্য বহু ধরণের খাবারের বন্দোবস্ত করা হতো।
তাতে ধারাবাহিক তিলাওয়াত, বহু প্রকার খতম এবং উচ্চাঙ্গ ভাষায় প্রশংসা সম্বলিত কবিতা আবৃত্তি হতো। বহু বরকতময় ও কল্যাণময় আমলের সমাহার ঘটতো বৈধ পন্থায়, আনন্দ প্রকাশ করা হতো, বহু বিখ্যাত আলিমগণও তাতে অংশগ্রহণ করতেন। মুঘল বাদশাহ হুমায়ুনও বিশাল জাকজমকের সাথে প্রতিবছর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের আয়োজন করতেন।
(আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। লেখক– ইমামুল মুহাদ্দেসীন হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।)
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতিহাস
১। হিজরী ৩য় শতকের পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মুসলিম ইতিহাসবিদ আল আজরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২১৯ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সেখানে নামায আদায় হতো।” (আল মক্কাহ, ২য় খ-, ১৬০ পৃষ্ঠা)
২। মুফাসসির আন নাক্কাস রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৬৬-৩৫১ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থানে প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুপুরে দোয়া করা হতো।” (আল ফাসি শিফা আল গারাম, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৯৯)
৩। সাইয়্যিদ মুহম্মদ সুলাইমান নদভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “সিরাতুন নবী” জীবনী গ্রন্থের ৩য় খন্ডে উল্লেখ করেছেন ৩/৪ শতক হিজরী মীলাদ শরীফ উদযাপন করা হতো। এছাড়াও ৩৯৪ হিজরী সালে ফাতেমী খিলাফতের অধীনে মিশরে মাসব্যাপী ব্যাপক জাঁকজমকের সাথে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হতো।
৪। হযরত ইবনে জুবায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৪০-৬৪০ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেছেন- “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বাড়ি মুবারক-এ পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হতো।” (কিতাবুর রিহাল, পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫)
৫. হযরত ইবনে যাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন – “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেছেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান, এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন। উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য অর্জন করেছেন তা প্রকাশ করতেন।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান লি শেখ ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ৯ম খ-, পৃষ্ঠা ৫৬; মীলাদুল উরুস- উর্দু “বয়ান-ই-মিলাদুন নবী”, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫, লাহোর; দুররুল মুনাজ্জাম, পৃষ্ঠা ১০০-১০১; মীলাদুন নবী, পৃষ্ঠা ৫৮)
৬। সপ্তম হিজরী শতাব্দীর ইতিহাসবিদ শায়েখ আবুল আব্বাস আল আযাফি এবং উনার ছেলে আবুল কাসিম আল আযাফি (সার্জারির জনক) উনাদের কিতাব-এ লিখেন- “পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন ধার্মিক ওমরাহ-হজ্জ যাত্রী এবং পর্যটকেরা দেখতেন যে, সকল ধরণের কার্য্যক্রম (দুনিয়াবী) বন্ধ, এমনকি ক্রয়-বিক্রয় হতো না, উনাদের ব্যতীত যারা সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান জড়ো হয়ে দেখতেন। এ দিন পবিত্র কা’বা শরীফ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হতো।” (দুররুল মুনাজ্জাম)
৭। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা তিনি লিখেন- “প্রতি জুম‘আ নামায শেষে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসে বনু শায়বা গোত্রের প্রধান কর্তৃক পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দরজা খোলা হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সাধারণ জনগনের মাঝে খাবার বিতরণ করতেন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিচারক নাজমুদ্দীন মুহম্মদ ইবনে আল ইমাম মুহিউদ্দীন আত তাবারী।” (কিতাবুর রিহলা, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৩০৯ ও ৩৪৭)
৮। ইতিহাসবিদ শায়েখ ইবনে যাহিরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘জামীউল লতিফ ফি ফাদলি মক্কাতা ওয়া আহলিহা’, শায়েখ হাফিয ইবনে হাযার আল হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল মাওলিদুশ শরীফুল মুনাজ্জাম’ এবং ইতিহাসবিদ শায়েখ আল নাহরাওয়ালি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল ইমাম বি’আলামি বাইতিল্লাহিল হারাম’ কিতাবের ২০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- “প্রতি বছর মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ বাদ মাগরীব ৪ জন সুন্নী মাযহাব উনার মুকাল্লিদ, বিচারক, ফিক্বহবিদ, শায়েখান, শিক্ষক, ছাত্র, ম্যাজিস্ট্রেট, বিজ্ঞজন এবং সাধারণ মুসলমান মসজিদের বাহিরে আসতেন এবং তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে করতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান- হুজরা শরীফ পরিদর্শন করতেন। মুবারক স্থান- হুজরা শরীফ যাওয়ার পথ আলোকসজ্জা করা হতো। সকলে উত্তম পোষাক পরিধান করতেন এবং সাথে উনাদের আল-আওলাদদের নিতেন। পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থানের ভিতরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময়কার বিভিন্ন বিষয়াদি বিশেষভাবে বর্ণনা করা হতো।
তারপর উসমানীয় খিলাফতের জন্য সবাই দোয়া করতেন এবং বিনয়ের সাথে দোয়া করা হতো। ইশা নামায শুরুর কিছুক্ষণ পূর্বে সকলে মসজিদে চলে আসতেন (যা থাকতো লোকে লোকারণ্য) এবং সারিবদ্ধভাবে মাক্বামে ইবরাহীম উনার সামনে বসতেন।”
৯. সপ্তম হিজরী শতকে ওমর বিন মুল্লা মুহম্মদ মউসুলি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসকে নিয়মিতভাবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জারী রাখার প্রচলন চালু করেন। উনার অনুসরণে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অমর সিপাহসালার সুলতান হযরত সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভগ্নিপতি ইরবিলের বাদশাহ মালিক আবূ সাঈদ মুজাফফরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুষ্ঠান পালন প্রচলন করেন। (রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম করলেও পূর্ব থেকেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হতো।) হযরত ইবনে খালকান ইরবালি শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত অনুষ্ঠানের সাক্ষী।
“তারীখু মারাতিয যামান” এর মতে ওই অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হতো। হিজরী ৭ম শতকের শুরুতে সে যুগের বিখ্যাত উলামা ও প্রসিদ্ধ ফোজালাগণের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব হযরত আবুল খাত্তাব উমর বিন হাসান দাওহিয়া ক্বলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়ে একটি কিতাব লিখেন যার নাম দেন ‘আত-তানউইর ফি মাওলিদিস সিরাজ আন নাযির’। তিনি বাদশাহকে এই কিতাব উপহার প্রদান করেন। তিনি নিজে কিতাবখানা পাঠ করে বাদশাহকে শুনান। বাদশাহ খুশি হয়ে উনাকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন।
রেফারেন্স –১. সুবুল আল হুদা ওয়ার রিশাদ ফি সিরাহ খায়ের আল-ইবাদ – মুহব্বদ বিন আলী ইউসুফ দামিশকি, ২. আদ – দূরর আল – মুনাজ্জাম ফি হুকমী মাওলিদিন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ৩. আনওয়ার আস সাতিয়া ১৩০৭ হিজরি , পৃ ২৬১ ,
১০. হযরত আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা করেন –
“মদিনাবাসী ঈদে মিলাদুন্নবীতে খুবই আগ্রহ ,উৎসাহ ও আনন্দের সহিত এ দিবস উদযাপন করতেন’’। (মাওরিদ আর রাওয়ী ফি মাওলিদ আন নাবী – পৃ-২৯)
১১. হযরত ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ। উনার সময়কালে তিনি নিজে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন। এমনকি তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ যিয়ারতকালে সেখানে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ঘটনা উনার কিতাবে বর্ণনা করেছেন- “আমি এর পূর্বে পবিত্র মক্কা মু’আযযামায় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় হুজরা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর একত্রে দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র মুবারক নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ মুবারক নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং এটাও বলতে পারি না যে, এগুলো কেবল মাত্র অন্তর চক্ষুতে দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ওই সব ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, যাঁরা এ ধরণের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য (ধর্মীয়) স্থানসমূহে (জ্যোতি বিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন। আমার অভিমত হল সেখানে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নূর ও রহমতের নূরের সংমিশ্রণ ঘটেছে।” (ফয়ূযুল হারামাইন [আরবী-উর্দু], পৃষ্ঠা ৮০-৮১)
১২. ১৯৩০ ঈসায়ীতে (১৩৪৮ হিজরী) ওহাবী রাষ্ট্র সউদী আরব প্রতিষ্ঠার পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হতো। যেমন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পত্রিকা আল ক্বিবলা পত্রিকা মতে- “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীরা পালন করতেন যার নাম ছিল ‘ইয়াওম আল ঈদ মাওলিদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। মুসলমান উনারা উত্তম খাবার রান্না করতেন।
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আমীর এবং হিজাজের কমান্ডার তাঁর সেনাদের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ যিয়ারত করতেন এবং পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান মুবারক পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হতো এবং দোকান-পাট সুসজ্জিত করা হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান মুবারক-এ সকলে মিলে পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। পবিত্র ১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার রাতে বাদ ইশা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের লক্ষ্যে একত্র হতেন। পবিত্র ১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার মাগরীব থেকে পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার আছর নামায পর্যন্ত প্রতি নামাযের পরে ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হতো।” (মাসিক তরিকত- লাহোর : জানুয়ারী ১৯১৭ ঈসায়ী (১৩৩৫ হিজরী), পৃষ্ঠা ২-৩)
=================================================
শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহির ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন।
নির্ভরযোগ্য আলেম মাওলানা হাফিজ মুহাম্মদ আব্দুল হক এলাহাবাদী মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর স্বরচিত বিখ্যাত কিতাব “আদ-দুরুল মুনাজ্জাম ফি হুকুমে আমলে মাওলাদিন নাবীয়্যিল আযম” গ্রন্থে শায়েখ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১১৫৭-১২৩৯ হিজরি) এর সঠিক মন্তব্যই তুলে ধরেছেন এভাবে, “শায়েখ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুহররাম মাসের অনুষ্ঠান মরসিয়াখানি (শোক গাথা পাঠ) সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির জিজ্ঞাসার উত্তরে বললেন, সারা বছরের মধ্যে এ ফকীরের (আমার) বাড়িতে দুটি মজলিস অনুষ্ঠিত হয়। একটি হচ্ছে মিলাদ শরীফের আলোচনা অনুষ্ঠান, আর অপরটি হচ্ছে শাহাদাতে হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার আলোচনা মুবারক।
প্রথম মজলিসে আশুরার দিন চারশত বা পাঁচশত এবং প্রায় এক হাজার লোকের সমাগম হয়। সে মজলিসে দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। আমিও সে মজলিসে উপস্থিত হয়ে বসি। আর হযরত হাসনাইন আলাইহিমাস সালাম সম্পর্কে হাদীসে যেসব ফযিলত বর্ণিত হয়েছে মজলিসে তাও বর্ণনা করা হয়। আর হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং উনার সাথীদের শাহাদাত লাভের ফযীলত সম্পর্কেও কিছু কিছু হাদীস বর্ণনা করা হয়।
আর উনাদের শহীদকারীদের খারাপ পরিণত সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। এ উপলক্ষে জীন-পরী থেকে হযরত উম্মুল মু’মিনীন ইম্মে সালমা আলাইহাস সালাস ও অন্যান্য সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যে শোক গাঁথা শুনেছেন তারও কিছু কিছু আবৃতি করা হয়। হযরত ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ অন্যান্য সাহাবীগণ যে বিস্ময়কর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছেন তাও আলোচনা করা হয়।
আর হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, এ হৃদয় বিদারক ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন তাও আলোচনা করা হয়। এরপর কুর’আন মাজিদ খতম করা হয় এবং পাঁচটি আয়াত শরীফ পাঠ করে উপস্থিত লোকদের রূহের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করা হয়। এর মাঝে কোনো ব্যক্তি সুললিত কন্ঠে সালাম পাঠ করলে অথবা (মরসিয়াহ) শোক গাঁথা পাঠ করলে উপস্থিত লোকদের ও ফকীরদের মনটি কোমল হয়ে মহব্বতের আলোকে আবেগে নয়ন যুগল অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে। এবং কান্নায় অস্থির হয়ে যায়। এ ধরণের আরও অনেক পূণ্যময় কাজ করা হয়। অতএব এ কাজগুলো যদি বানোয়াট ও শরীয়ত বিরোধী কাজ হত তাহলে এ ফকীরের তা বৈধ হত না। এবং আদৌ তা সমর্থন করতাম না।এখন আসুন মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠানের আলোচনায়। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ লোকজন পূর্ব আভাস মাফিক আমার বাড়িতে এসে জমা হয় এবং দুরূদ শরীফ পাঠে তারা মশগুল হয়। আর এ ফকীরও দুরূদ শারীফ পাঠে তাদের সাথে শামিল হয়। প্রথমত হযরত নবী কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফযিলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহের কিছু কিছু বর্ণনা করা হয়। এরপর হযরত নবী কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মবৃত্তান্ত ঘটনাবলী। উনার মুবারক দেহের অবয়বের গঠন আকৃতি, দুগ্ধপান কালীন কিছু অবস্থা ও ঘটনাবলীসহ কিছু কিছু হাদীস শরীফ ও বর্ণনা করা হয়। এরপর উপস্থিত লোকদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী এবং ফাতিহার নিয়তে শিরনী ও মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া পুরনো দস্তর অনুযায়ী সব শেষে হযরত নবী কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারক সকলকে দেখানো হয়।”
[সূত্রঃ আদ-দুরুল মুনাজ্জাম ফি হুকুমে আমলে মাওলাদিন নাবীয়্যিল আযম, পৃঃ ২০৯-২১১]
=================================================
بسماللهالرحمنالرحيم
আল্লামা আব্দুর রহীম তুর্কমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১২৮৮ হিজরী সনে মক্কা ও মদিনা এবং জেদ্দাহ ও হাদিদার উলামায়ে কেরামের দ্বারা মিলাদ ও কিয়াম সম্পর্কে একটি ফতোয়া লিখিয়ে হিন্দুস্তানে নিয়ে আসেন এবং নিজ গ্রন্থ ” রাওয়াতুন নাঈম ” -এর শেষাংশে ছেপে প্রকাশ করেন ।
*প্রশ্নঃ আল্লাহ তায়ালা অসীম রহমত আপনার উপর বর্ষিত হোক । নিম্নে বর্নিত বিষয়ে আপনার অভিমত ও ফতোয়া কি ?
”মিলাদ শরীফ পাঠ করা – বিশেষ করে নবী করিম সাল্লাল্লাহয় আলাইহে ওয়াসাল্লামের পবিত্র জন্ম বৃত্তান্ত পাঠকালে কিয়াম করে সম্মান প্রদর্শন করা , মিলাদের জন্য দিন তারিখ নিদিষ্ট করা , মিলাদ মজলিস কে সাজানো , আতর গোলাপ ও খুশবু ব্যাভার করা। কুরআন শরীফ হতে সুরা ক্বেরাত পাঠ করা এবং মুসলমানদের জন্য খানাপিনা (তাবারুক) তৈরি করা – এই ভাবে অনুষ্ঠান করা জায়েয কিনা এবং অনুষ্ঠানকারীগন এতো সাওয়াবের অধিকারী হবেন কিনা ? বর্ণনা করে আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হোন ।
–আব্দুর রহীম তুর্কমানী – হিন্দুস্তান ,১২৮৮ হিজরি ।
মক্কা শরীফের ফতোয়াদাতাগনের জবাব ও ফতোয়া ।
অনুবাদঃ ” জনে নিন – উপরে বর্নিত নিয়মে (কিয়াম) মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করা মোস্তাহসান ও মুস্তাহাব । আল্লাহ ও সমস্ত মুসলমানের নিকট ইহা উত্তম । ইহার অস্বীকারকারীগন বিদআতপন্থী ও গোমরাহ্ । হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্নিত হুজুর (দঃ) -এর হাদিস আছে –
”মুসলমান যে কাজকে পছন্দনীয় বলে বিবেচনা করেন -তা আল্লাহর নিকট ও পছন্দনীয় “।
( মুসলিম )।
এখানে মুসলমান বলতে ঐ সমস্ত মুসলমানকে বুঝায়-যারা কামেল মুসলমান । যেমন পরিপুর্ন আমলকারী উলামা , বিশেষ করে আরবেরদেশ , মিশর , সিরিয়া ,তুরস্ক ও স্পেন-ইত্যাদি দেশের উলামাগন সলফে সালেহীনদের যুগ থেকে অদ্যবধি (১২৮৮ হিঃ)
সকলেই মিলাদ কেয়াম কে মুস্তাহসান, উত্তম ও পছন্দনীয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন । সর্বযুগের উলামাগনের স্বীকৃতির কারনে মিলাদও কিয়ামের বিষয় বরহক ।
উহা গোমরাহী হতে পারে না । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন । ” আমার উম্মত গোমরাহ বিষয়ে একমত হতে পারে না ” ( আল হাদিস )
সুতরাং যারা মিলাদ ও কিয়াম কে অস্বিকার করবে-শরিয়তের বিচারকের উপর তাদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব । ( ফতুয়া সমাপ্ত )
মক্কা শরিফের ফতোয়াদাতা মুফতীগনের স্বাক্ষর ও সিলমোহর
১। আল্লামা আব্দুর রহমান সিরাজ ।
২।আল্লামা আহনদ দাহলান ।
৩।আল্লামা হাসান ।
৪। আল্লামা আব্দুর রহমান জামাল ।
৫। আল্লামা হাসান তৈয়ব।
৬।আল্লামা সোলায়মান ঈছা ।
৭। আল্লামা আহমদ দাগেস্তানী ।
৮। আল্লামা আব্ডুল কাদের সামস ।
৯। আল্লামা আব্দুর রহমান আফেন্দী ।
১০। আল্লামা আব্দুল কাদের সানখিনী।
১১। আল্লামা মুহাম্মদ শারকী ।
১২ । আল্লামা আব্দুল কাদের খোকীর ।
১৩। আল্লামা ইবরাহিম আলফিতান।
১৪। আল্লামা মুহাম্মদ জারুল্লাহ ।
১৫। আল্লামা আব্দুল মুত্তালিব ।
১৬। আললামা কামাল আহমেদ ।
১৭। আল্লামা মুহাম্মাদ ছায়ীদ আল-আদাবি ।
১৮। আল্লামা আলি জাওহাদ ।
১৯। আল্লামা সৈয়দ আব্দুল্লাহ কোশাক।
২০। আল্লামা হোসাইন আরব।
২১ । আল্লামা ইব্রাহিম নওমুছি।
২২। আল্লামা আহমদ আমিন।
২৩। আল্লামা শেখ ফারূক ।
২৪। আল্লামা আব্দুর রহমান আযমী ।
২৫। আল্লামা আব্দুল্লাহ মাশশাত ।
২৬। আল্লামা আব্দুল্লাহ কুম্মাশী।
২৮। আল্লামা মুহাম্মদ বা-বাসীল।
২৯। আল্লামা মুহাম্মদ সিয়ুনী।
৩০। আল্লামা মুহাম্মদ সালেহ জাওয়ারী।
৩১। আল্লামা আব্দুল্লাহ জাওয়ারী।
৩২। আল্লামা মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ ।
৩৩। আল্লামা আহমদ আল মিনহিরাভী ।
৩৪ । আল্লামা সোলাইমান উকবা ।
৩৫। আল্লামা সৈয়দ শাত্বী ওমর ।
৩৬। আল্লামা আব্দুল হামিদ দাগেস্তানী ।
৩৭। আল্লামা মুস্তফা আফীফী ।
৩৮। আল্লামা মানসুর।
৩৯ । আল্লামা মিনশাবী ।
৪০। আল্লামা মুহাম্মদ রাযী ।
(১২৮৮ হিজরী) ।
=================================================
ইদানীং সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা শুনলে কিছু লোক বিদয়াত বিদয়াত বলে চিৎকার করে, কিতাবে নেই, পূর্বের কোনো আউলিয়াগণ করেননি ইত্যাদি ইত্যাদি নানা মিথ্যা কথা বলে থাকে। অথচ শতশত, হাজার বছর ধরে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম-মুজাতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ, উলামায়ে কিরামগণ উনারা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিলের আয়োজন করেছেন, এতে শরীক হয়েছেন এবং এসব বরকতময় আমলের পক্ষে কিতাবও রচনা করেছেন। এখানে ঐ সকল মহান উলামায়ে কিরামগণ উনাদের কয়েকটি বিখ্যাত কিতাবের নাম উল্লেখ করা হলো।
১) হাফিযুল হাদীছ হযরত শিহাবুদ্দীন আবু মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বিন ইসমাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল বাইস আলা ইনকারি বিদাই ওয়াল হাওয়াদিস। ২) হাফিযুল হাদীছ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- হুসনুল মাকসাদ ফী আমালিল মাওলিদ লিস সুয়ূতী। ৩) আল হাবী লিল ফতওয়া লিস সুয়ূতী। ৪) হাফিযুল হাদীছ হযরত শামসুদ্দীন বিন জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আরফুত তা’রীফ বিল মাওলিদিশ শরীফ। ৫) হাফিযুল হাদীছ হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল মাওলিদুশ শরীফ লিইবনুল জাওযী। ৬) আল মাওলিদুল কাবীর লি ইবনিল হাজার। ৭) হাফিযুল হাদীছ হযরত যয়নুদ্দীন ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল মাওলিদুল হানী। ৮) শায়েখ হযরত ছদরুদ্দীন মাওহুর বিন ওমর জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আস সীরাতুশ শামিয়াহ। ৯) হযরতুল আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- ফাতহুল মুবীন লি শরহিল আরবাঈন। ১০) হযরত ইমাম কুসত্বলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া ১ম খন্ড। ১১) আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল বাক্বী যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহিব। ১২) হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল মাওয়ালিদুর রাবী ফী মাওলিদিন নবী। ১৩) শায়েখ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ। ১৪) হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী ৩য় খন্ড, মাকতুব নং ৭২ ১৫) হযরত শাহ আব্দুর রহীম দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আদ্দুররুসু ছামীন ফী মুবাশশারাতিন নাবীয়্যিল আমীন। ১৬) আমীরুল মুহাদ্দিসীন ফিল হিন্দ হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- ফয়ূযুল হারামাইন। ১৭) হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আদ দুররুল মুনাযযাম। ১৮) হযরত শাহ মুহাম্মদ ইসহাক দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মিআতে মাসাঈল, মাসয়ালা নং ১৫ ১৯) হযরত মাওলানা সালামত উল্লাহ কানপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- ইশবাউল কালাম ফী ইসবাতিল মাওলিদ ওয়াল কিয়াম। ২০) হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ফায়সালায়ে হাফত মাসয়ালাহ। ২৩) হযরত শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল মুলাখখাছ। ২৩) হযরত মাওলানা মুফতী সাদুল্লাহ মুরাদাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- ফাতাওয়ায়ে সিন্ধীয়াহ। ২৩) হযরত মাওলানা আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- মজমুয়ায়ে ফতওয়া।
মূলতঃ বর্তমান জামানায় পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে ফতওয়া দেওয়ার কেন্দ্রে রয়েছে ইহুদী-নাসারাদের ষড়যন্ত্র। কারণ তারা চায় আমাদের নবীজির মর্যাদা সম্পর্কে মানুষ না জানুক।
=================================================
ইতিহাস বলছে, সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম গণ ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন (https://goo.gl/i8UX7a)
ইমাম মুজতাহিদগণ ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন (https://goo.gl/iTtzaa)
এবং মুসলিম মিল্লাতে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হয়ে আসছিলো (https://goo.gl/N6aQLJ)
কিন্তু এ অনুষ্ঠানগুলো উনারা করতেন প্রত্যেকে আলাদাভাবে, পারিবারিকভাবে কিংবা জামাতবদ্ধ হয়ে। কিন্তু খিলাফত বা সালতানাতের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হতো না। অথচ বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক মুসলিম দেশেই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরকারিভাবে চালু আছে।
১০৯৯ সনে ইংরেজ, ফ্রেঞ্চ ও জার্মান শক্তি একত্রে মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ দখল করে নেয়। মুসলিম জাতির বীর যোদ্ধা হযরত সালাউদ্দিন অাইয়ুবী রহমতুল্লাহি এমন একটি সময়ে আসেন (১১৩৮-১১৯৩ সন) যখন মুসলিম জাতি দ্বিধাবিভক্ত। কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য যে মনোবল তথা শক্তি দরকার সেটা নাই। এর উপরে ইরাকের খলিফার নৈতিক অধঃপতনের কারণে মুসলিম জাতির তখন টালমাটাল অবস্থা। এমন সময় হযরত সালাহউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগমন।
তিনি চিন্তা করলেন-“এমন একটা কিছু করা দরকার, যার মাধ্যমে মুসলিম জাতির ঈমানি চেতনা বৃদ্ধি পাবে এবং মুসলমানরা কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মনোবল অর্জন করতে পারবে।”
তখন হযরত সালাউদ্দিন অাইয়ুবী রহমতুল্লাহির বোন জামাই এবং ন্যায় পরায়ন ও তাকওয়াধারী বাদশাহ মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি হযরত সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একটি বুদ্ধি দিলেন। বললেন-, সালাতানাতের পক্ষ থেকেই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করার জন্য। এতে মানুষের মধ্যে ঈমানি চেতনা বৃদ্ধি পাবে এবং মুসলমানরা কাফিরদের বিরুদ্ধে শক্ত জবাব দিতে পারবে। হযরত সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি বিষয়টি গ্রহণ করলেন এবং হজ্জে আগত হাজী সাহেবদের জানিয়ে দিলেন তারা এ যেন এ বছর থেকে সবাই একত্রে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে (৫৭৯ হিজরী/১১৮৩ সন)। এর পরের বছর (৫৮০হিজরী/১১৮৪ সন) হযরত সালাউদ্দিন অাইয়ুবী রহমতুল্লাহি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সালতানাতের পক্ষ থেকে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার সহিত ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়োজন করলেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন, এরমধ্যে ছিলো নবীজির জীবনী লেখনি এবং নাত শরীফ রচনা প্রতিযোগীতা। এ প্রতিযোগীতায় শায়েখ জাফর আল লায়তানি প্রথম পুরষ্কার লাভ করেন।
নবীজির বিলাদত দিবস বা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার সহিত পালন করার কারণে মুসলমানদের মধ্যে ঈমানী চেতনা ফিরে আসে এবং মুসলমানরা কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আত্মিক শক্তি লাভ করেন। দেখা যায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই (৫৮৩হিজরী/১১৮৭ সন) মুসলমানরা কাফিরদের পরাজিত করে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সুবহানাল্লাহ।
(তথ্যসূত্র:https://goo.gl/gIEqCy)
উল্লেখ্য ঐ সময় সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুসলিম সালতানাত যতদূর বিস্তৃতি ছিলো সব অঞ্চলেই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরকারিভাবে পালন শুরু করা হয়। বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোতে যে সরকারিভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হচ্ছে সেটাও ঐ অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায়ই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
=================================================
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন ।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম হাক্বানী আলেম –ওলামাদের সুসংগঠিত করে পবিত্র দ্বীন ইসলামে উনার সঠিক রুপ জনগনের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহন করেন। তাঁর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পবিত্র রবিউল আওয়াল শরীফ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে সর্ব প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহন করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধ বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন । একজন সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের উদ্বোধন উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত । এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতি বছর জাতীয়ভাবে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে ।
ঈদে মীলাদে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সরকারী ছুটি ঘোষনা করেন।দিবসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন ।
সুত্রঃ সৈয়দ আবীর রচিত “বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ” ২০০৬ সালে প্রকাশিত, পৃ ২০৮
সুতরাং বর্তমান সরকার নিজেকে বঙ্গুবন্ধুর আদর্শের সরকার প্রমাণ করতে বঙ্গবন্ধুর অনুসরণে সরকারিভাবে মাসব্যাপী ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যতাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
=================================================
বিভিন্ন বাতিলপন্থী ফেরকারা বলে থাকে খ্রিস্টানদের থেকেই নাকি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের রীতি এসেছে ! নাউযুবিল্লাহ অথচ কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ এবং ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা । আমরা সকলেই জানি কোরআন সুন্নাহের মধ্যে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলীল রয়েই গেছে যার দলীল পূর্বে অনেক উল্লেখ করা হয়েছে । আজকে কিছু ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবে।
সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের জমানাই ব্যক্তি পর্যায়ে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হলেও (প্রাপ্ততথ্য মতে) ইতিহাস বলে ৩৯৪ হিজরীতে মিসরে সর্বপ্রথম মাসব্যাপী ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপন শুরু হয় এবং ৫১৭ হিজরী পর্যন্ত নিয়ম মাফিক রবিউল মাসে মাহফিল জারি ছিল। (তায়াজুল খুনাফা ২য় খন্ড- ইমাম মাখরিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি)
পরবর্তীতে ক্রুসেড যুদ্ধের সময় সালতানাতের পক্ষ থেকে আরো বিরাট সমারহে, আরো ব্যাপক জাকজমকের সাথে, আরো ব্যপাক প্রচার প্রসারের সাথে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়োজন শুরু হয় (১২শ’ শতাব্দী)। ইরাকের আরবালের বাদশাহ হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি বিষয়টি বড় উদ্যোগে আয়োজন শুরু করেন। উল্লেখ্য পুরো মুসলিম সালতানাতের সুলতান মুসলিম বীর হযরত সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বোনকে বিয়ে করেছিলেন হযরত মালিক মুজাফফর রহমতুল্লাহি তিনি। সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পৃষ্ঠপোষকতায় বিষয়টি আরো বিস্তৃতি লাভ করে। যার প্রভাব পুরো মুসলিম কায়িনাতে ছড়িয়ে পরে। আজ থেকে ৪শ’ বছর আগে ইমামুল মুহাদ্দেসীন হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবিয়্যি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ কিতাবে বর্ণনা করেন, কিভাবে পবিত্র মক্কা ও মদীনা শরীফের জনগোষ্ঠী, মিসর-সিরিয়া-স্পেনের মুসলমানরা উৎসাহ-উদ্দিনপার সাথে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন ।
এবার আসুন খ্রিস্টানদের ক্রিসমাসের ইতিহাস দেখি:
খ্রিস্টানরা তাদের ক্রিসমাসের গোড়া যত আগে থেকেই দেখাক, ক্রিসমাস শব্দের উৎপত্তি কিন্তু হয়েছে ১০৩৮ সালের একটি রচনা থেকে। ক্রিসমাট ট্রি শব্দটি পাওয়া যায় ১৮৩৫ সালের একটি রচনা থেকে। ১৭শ’ শতাব্দী থেকে মুসলমানদের দেখাদেখি কিছু খ্রিস্টান নিজেদের নবীর বিষয়টি চালু করতে চাইলেও গোড়া খ্রিস্টানরা এর কট্টর বিরোধী ছিলো। তাই খ্রিস্টানদের মধ্যে এ দিবসটি তখন পালন করা হয়নিএবং রেনেঁসার যুগে খ্রিস্টানদের একটি মহল ক্রিসমাস পালন করাকে অধর্মীয় মনে করত। আর এ অনুভূতির কারনে ১৬০০ সালে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার কিছু অংশে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই বিষয়ে The World Book Encyclopedia তে রয়েছে,
“During the Repormation many Christans began to consider chistmas a non religious customs. During the 1600’s. Because of these feelings, Christmas was outlawed in England and in parts of the British colonies in America.” (The World Book Encyclopedia:3) তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে খ্রিস্টানরা ক্রিসমাসকে দিবস হিসেবে পালন শুরু করে উনবিংশ শতাব্দী থেকে। ১৯ শতাব্দীর আগে খ্রিস্টানরা ক্রিসমাসকে বড় উৎসব হিসেবে বড় অনুষ্ঠান করে পালন করেছে এমন ইতিহাস কেউ দেখাতে পারবে না।
বরং ১৯শ’ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত তাদের ক্রিসমাস পালনের তেমন অস্তিত্ব ছিলো না। ১৯শ’ শতাব্দীতে চালর্স ডিকেন্স ‘এ ক্রিসমাস ক্যারল’ নামক উপন্যাস লিখে ক্রিসমাস খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রচারে জোর ভূমিকা রাখে।
তখন থেকেই খ্রিস্টানদের মধ্যে ক্রিসমাস জোর পালন শুরু হয়। কারণ খ্রিস্টানরা তখন দেখতো, মুসলমানরা তাদের নবীজির জন্য ঈদে মীলাদুন নবী কত যাকজমকভাবে পালন করে, ঘরবাড়ি সাজায়, মানুষ খাদ্য খাওয়ায়, উৎসব করে।
এছাড়াও ক্রিসমাসের দিবস নিয়ে খ্রিস্টানরা নিজেরাই সন্দিহান। কেউ পালন করে ২৫শে ডিসেম্বর, কেউ ৬ জানুয়ারি, কেউবা ৭ই জানুয়ারি, কেউবা ১৯শে জানুয়ারি ক্রিসমাস পালন করে থাকে। তবে জাতীয় স্বার্থে তারা বিষয়টি এখন একদিনেই (২৫শে ডিসেম্বর) প্রচার করে থাকে।
এছাড়াও দেখুন Encyclopedia Britannica তে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম কে সঙ্গয়িত করা হয়েছে এভাবে,
“Mawlid also spelled MAWLUD or Milad in islam especially in birthday of the Prophet Muhammad( Milad an Nabi)”
বিশ্বব্যাপী চালু খ্রিস্টানদের এই রেফারেন্স বইয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর আগমনের দিবসকেই বোঝাই। এছাড়াও মীলাদুন্নবী পালন যে খ্রিস্টানদের প্রথা বিরুধী তাও এই বইয়ে উল্লেখ করা আছে।
মূলতঃ মুসলমানদের দেখেই খ্রিস্টানরা ক্রিসমাস পালন শিখে। এ সম্পর্কে ইতিহাস বলে- “Christmas did not become a legal holiday there until 1856. Even then, some schools continued to hold classes on December 25 until 1870
(সূত্র: )
খ্রিস্টানরা কিন্তু কখনই তাদের নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে নিয়ে ক্রিসমাস এভাবে পালন করেনি। এটাই ঐতিহাসিক সত্য, খ্রিস্টানরা আগে ক্রিসমাসকে এখনকার মত পালন করতে জানতোই না। বরং খোদ পোপ পর্যন্ত ক্রিসমাস পালনকে নিষিদ্ধ বলতো।
মজার বিসয় ক্রিসমাসের দিবস নিয়ে খ্রিস্টানরা নিজেরাই সন্দিহান। কেউ পালন করে ২৫শে ডিসেম্বর, কেউ ৬ জানুয়ারি, কেউবা ৭ই জানুয়ারি, কেউবা ১৯শে জানুয়ারি ক্রিসমাস পালন করে থাকে। তবে জাতীয় স্বার্থে তারা বিষয়টি এখন একদিনেই (২৫শে ডিসেম্বর) প্রচার করে থাকে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে নাযে স্বর্ণযুগে মুসলমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি দেখে অনেক কালচার গ্রহণ করেছিলো খ্রিস্টানরা। মুসলমানরা তাদের নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মদিবস পালন উপলক্ষে আনন্দ খুশি করে, সবাইকে খাদ্য খাওয়ায় এ কালচারটা খ্রিস্টানরাও আয়াত্ব করার চেষ্টা করে। এ শিক্ষা থেকেই তারা কথিত ক্রিসমাস পালন শুরু করে।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খ্রিস্টানদের থেকে নয়, বরং খ্রিস্টানরাই মুসলমানদের দেখে ক্রিসমাস চালু করেছে।
=================================================
জগৎ বিখ্যাত যেসব ইমাম মুস্তাহিদ রহমতুল্লাহি আলািইহিমগন পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং কিতাব লিখেছেন উনাদের তালিকা
আমরা ইতিপূর্বে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ উনার অকাট্য দলীল আদীল্লার মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার হুকুম,ফযীলত, গুরুত্ব প্রমান করেছি !
আজকে আমরা দেখবো জগৎ বিখ্যাত ইমাম, মুস্তাহিদ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস , ফকীহ, ইমামদের তালিকা যিনার পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছেন, নিজেরা পালন করেছেন এবং সবাইকে করতে বলেছেন !!
অর্থাৎ এ মহান আমলটির ব্যাপারে সবাই ঐক্যমত্য স্থাপন করেছেন !
আর এই ইজমা বা ঐক্যমত্যের ব্যাপারে হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে —
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻻ ﻳﺠﻤﻊ ﺍﻣﺘﻲ ﺍﻭ ﻗﺎﻝ ﺍﻣﺔ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻠﻲ ﺿﻼﻟﺔ ﻭ ﻳﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻭﻣﻦ ﺷﺬ ﺷﺬ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আমার উম্মত অথবা তিনি বলেছেন, উম্মতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কখনো গোমরাহীর ওপর একত্রিত করবেন না ! আল্লাহ পাক এর সাহায্যের হাত জামাতের (আহলে সুন্নাহ) উপর রয়েছে ! আর যে ব্যক্তি জামাত থেকে (আহলে সুন্নাহ) বিচ্ছিন্ন হবে সে জাহান্নামে যাবে !”
(মিশকাত শরীফ- কিতাবুল ঈমান- বাবুল ই’তিসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নহ- হাদীস ১৬৩, তিরমীযি শরীফ)
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়-
ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﺗﺒﻌﻮﺍ ﺍﻟﺴﻮﺍﺩ ﺍﻻﻋﻈﻢ ﻓﺎﻧﻪ ﻣﻦ ﺷﺬ ﺷﺬ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺮ
অর্থ : ‘নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা বড় দলের অনুসরন করো। কারন যে জামাত ( আহলে সুন্নাহ) হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাকে পৃথক ভাবে অগ্নীতে নিক্ষেপ করা হবে।’
(মিশকাত শরীফ- কিতাবুল ঈমান-বাবুল ই’তিসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ – হাদীস ১৬৪)
উক্ত হাদীস শরীফ সমূহ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত উনার ঐক্যমত্যের উপর আমাদের থাকতে হবে। বড় দল বা সকল ইমাম মুস্তাহিদগন উনার যেদিকে রায় দিয়েছেন সে পথ থেকে কেউ সরে গেলে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উপর থাকতে পারবে না, সে জাহান্নামী হবে।
এবার আসুন আমরা দেখি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার যে সমস্ত ইমাম,মুস্তাহিদ,মুফাসসির,মুহাদ্দিস,ফকীহ,মুফতী রহমতুল্লাহি আলাইহিমগন পবিত্র মীলাদ শরীফ এবং ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করার তাগীদ করছেন উনাদের নাম মুবারকের তালীকা। এগুলা ছাড়াও আরো অসংখ্য নাম রয়েছে।
নিম্নে তালিকা টি দেয়া হলো-
(১) ইমামুশ শরীয়াত ওয়াত ত্বরীকাত, ইমাম হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২) আল ইমামুল আকবার,শাফেয়ী মাযহাব উনার ইমাম, ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩) বিখ্যাত ফক্বীহ, বিশিষ্ট ওলী হযরত মারুফ কারখী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪) ওলীয়ে কামেল হযরত সাররী সাক্বতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫) সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬) তাজুল মানতেকীন, ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৭) সুলত্বনুল আরেফীন, হাফিজে হাদীস, জালালুদ্দিন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৮) হাফিজে হাদীস, ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৯) ইমাম শামসুদ্দিন মুহম্মদ ছাখাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১০) ইমামুল মুহাদ্দিসিন, মোল্লা আলী কারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১১) ইমামুল মুহাদ্দিসিন, শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১২) ইমামুল মুহাদ্দিসিন, শায়েখ ইবনে হাজর হায়ছামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৩) হাফিজে হাদীস, ইমাম হযরত জাওজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৪) হাফিজে হাদীস,হযরত আল্লামা কুস্তালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৫) মুজাদ্দিদে জামান,সুলত্বনুল আওলীয়া, মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৬) ইমাম, হযরত আলী ইবনে ইব্রাহীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি ( সিরাতে হলবীয়া)
(১৭) মুহাদ্দিস , আল্লামা জাযরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১৮) হাফিজে হাদীস, বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মুহম্মদ ইবনে ইউসুফ আশশামী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(১৯) হযরতুল আল্লামা,ইমাম, বারজানজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২০) হাফিজে হাদীস, আবু মুহম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে ইসমাঈল রহমাতুল্লাহি আলাইহি [ ইমাম নববীর ওস্তাদ]
(২১) ইমামমুল মুহাদ্দেসীন, মুজাদ্দিদে জামান শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২২) ইমামুল মুহাদ্দিসীন, শায়েখ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৩) শায়েখ আল্লামা তাহের জামাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৪) বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হযরত তকি উদ্দিন সুবকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৫) মুহাদ্দিস , ইমামুল আল্লামা, নাসিরুদ্দিন মোবারক ইবনে বাতাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৬) শায়খুল ইমাম, জামাল উদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৭) ইমামুল আল্লামা, জহীর উদ্দিন ইবনে জাফর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৮) শায়েখ, হযরত নাসিরুদ্দিন তায়লাসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(২৯) শায়খুল ইমাম, আল্লামা সদরুদ্দীন মাওহূূব ইবনে উমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩০) হযরত আল্লামা শায়েখ জামাল উদ্দীন ওরফে মির্জা হাসান মুহাদ্দিস লক্ষৌভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩১) শায়েখ, মুফতী মুহম্মদ সাআদুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩২) শায়খুল ইসলাম, হাফিজে হাদীস, হযরত আব্দুল ফজল আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৩) উমদাতুল মুফাসসিরিন হযরত শাহ আব্দুল গনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৪) হাফিজে হাদীস, হযরত জুরকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৫) পবিত্র মক্কা শরীফ এর হানাফী মুফতি শায়েখ জামাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৬) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হানাফী মুফতী শায়েখ আব্দুর রহমান সিরাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৭) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মালেকী মাযহাবের মুফতী হযরত রহমাতুল্লা
(৩৮) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার শাফেয়ী মাযহাবের মুফতি মুহম্মদ সাঈদ ইবনে মুহম্মদ আবসীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৩৯) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হাম্বলী মাযহাবের মুফতি খালফ ইবনে ইব্রাহিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪০) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মালেকী মাযহাবের মুফতি আল্লামা আবু বকর হাজী বাসাউনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪১) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হাম্বলী মাযহাবের মুফতী শায়েখ মুহম্মদ ইবনে হামীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪২) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হাম্বলী মাযহাবের মুফতী মুহম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৩) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মালেকী মাযহাবের মুফতী হযরত মাওলানা হুসাইন ইবনে ইব্রাহীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৪) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার শাফেয়ী মাযহাবের ফতোয়া বোর্ডের সভাপতি শায়েখ মুহম্মদ উমর ইবনে আবু বকর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৫) শায়েখ উছমান হাসান দিমইয়াতী শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৭) মদীনা শরীফ উনার হানাফী মুফতি মুহম্মদ আমীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৮) মদীনা শরীফ উনার শাফেয়ী মুফতি, শায়েখ জাফর হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৪৯) মদীনা শরীফ উনার হাম্বলী মুফতি আব্দুল জব্বার রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫০) মদীনা শরীফ উনার মালেকী মাযহাবের মুফতি মুহম্মদ শরকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫১) হাফিজে হাদীস, শামসুদ্দীন ইবনে নাসিরুদ্দিন দামেস্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫২) ইমামুল মুফাসসিরিন,শায়েখ ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৩) পীরে কামেল, মুজাদ্দিদে জামান, আবু বকর সিদ্দিক ফুরফুরাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৪) মুফতীয়ে আযম,হাফিযে হাদীস রুহুল আমীন বশিরহাটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৫) হাদীয়ে বাঙ্গাল, কারামাত আলী জৌনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৬) মুফতিয়ে আযম, আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বরকতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৭) শায়েখ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৮) শায়েখ, হাফিয আবুল খাত্তাব ইবনে দাহিয়্যা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৫৯) হাফিযে হাদীস, শায়েখ ইবনে হাজর মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬০) শায়েখ আল্লামা আবুল ক্বাসিম মুহম্মদ বিন উছমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬১) শায়েখ মাওলানা সালামাতুল্লাহ ছিদ্দীক কানপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬২) হযরত বেশরাতুল্লাহ মেদেনীপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(৬৩) শায়েখ হাফিজ , আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
দলীল এবং কিতাব সমূহের নামঃ
√সবহুল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্তফা
√আল হাভী লিল ফতোয়া
√মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া
√ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল
√মাসাবাতা বিছ সুন্নাহ
√কিতাবুল তানবীর ফি মাওলুদুল বাশির ওয়ান নাজির
√আন নি’মাতুল কুবরা
√মাওলুদুল কবীর
√ইশবাউল কালাম
√খাসায়েছে কুবরা
√মাকতুবাত শরীফ
√দুররুল মুনাজ্জাম
√হাক্বীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী
√মজমুয়ায়ে ফতোয়া
√তাফসীরে রুহুল বয়ান
√জামিউল ফতোয়া
√ফতোয়ায়ে বরকতী
√সীরাতে শামী
√সীরাতে নববী
√যুরকানী আলাল মাওয়াহেব
√সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ
√মিয়াতে মাসাঈল
√আশ শিফা
√আল মুলাখখ্যাছ
√জাওয়াহিরুল মুনাজ্জাম
√আল ইনসানুল উয়ুন
√আস সুলুকুল মুনাজ্জাম
√নুজহাতুল মাজালিস
√আল ইনতেবাহে সালাসিল আওলিয়া
√হাফতে মাসায়িল
√কিয়ামুল মিল্লাহ
√সীরাতে হলবীয়া
√মাজমায়ুল বিহার
√মাওয়ারেদে রাবী ফী মাওলিদিন নবী
√ফুয়ুযুল হারামাঈন
√আরফুত তারীফ ফী মাওলিদিশ শরীফ
√আল ইহতিফাল বিযিকরী মাওলুদুন নাবীয়িশ শরীফ
√সিরাজুম মুনীরা
√শামায়েলে এমদাদীয়া
এছাড়াও আরো হাজার হাজার ইমাম,মুস্তাহিদ,মুহাদ্দিস , মুফাসসির, ফকীহ আছেন যিনারা নিজেরা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করতে উৎসাহিত করেছেন।
এবং পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার হুকুম সম্পর্কে দলীল আদিল্লা দিয়ে কিতাব রচনা করেছেন।
অথচ এর বিপরীতে একজন আলেম,ওলামা উনাদের কোন বক্তব্য, লিখনী, ফতোয়া কেউ দেখাতে পারবে না। শুধু তাই না, এই বিষয়ে ইজমা সম্পর্কে বর্নিত আছে –
ﻗﺪ ﺍﺟﻤﻌﺖ ﺍﻻﻣﺖ ﺍﻣﺤﻤﺪﻳﺔ ﻣﻦ
ﺍﻻﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻋﻠﻲ ﺍﺳﺘﺤﺴﺎﻥ
ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﺍﻟﻤﺬﻛﻮﺭ ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻻ
ﺗﺠﺘﻤﻊ ﺍﻣﺘﻲ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻀﻼﻟﺔ
অর্থ: উম্মতে মুহম্মদি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সকল আলেমগন মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ মুস্তহাসান হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত পোষন করেন। আর নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,আমার উম্মত (আলেম গন) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবে না।”
(ইশবাউল কালাম ৫৪ পৃষ্ঠা)
সূতরাং এতজন ইমাম, মুস্তাহিদ, মুহাদ্দিস , মুফাসসির, ফকীহ উনাদের বিরোধীতা করে তাদের ঐক্যমত্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে,বা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধিতা করবে তারা আর যাইহোক মুসলমান হতে পারে না। তারা কুরআন শরীফে বর্নিত রায় অনুযায়ী জাহান্নামী হবে।
সেটা আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন —
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ
অর্থ: যে কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পর রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর মু’মিনদের পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে চলে, আমি তাকে সে দিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে, এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো । !”( পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৫)
সূতরাং যারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করবে এবং এ ব্যাপারে মু’মিনদের ঐক্যমত্য অস্বীকার করে ভিন্ন পথ অনুসরণ করবে তার গন্তব্য জাহান্নামই হবে!
=================================================
ধর্মব্যবসায়ী, আশাদ্দুদ দরজার জাহিল উলামায়ে সূ’রা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এবং পত্র পত্রিকায় বলেছে, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারী ইরাকের ইরবাল শহরের বাদশাহ মুজাফফর আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন মূর্খ ও যিন্দীক। নাঊযুবিল্লাহ!
এর জাওয়াব হলো:- উলামায়ে সূ’দের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থসমূহ ও নির্ভরযোগ্য বহু কিতাবে উক্ত বাদশাহকে নেককার, পরহেযগার, আলিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাফিযে হাদীছ হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্বীয় বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ “সিয়ারু আলাম আন নুবালা”-এর ২২তম জিঃ ৩৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
ﻛﺎﻥ ﻣﺘﻮﺍﺿﻌﺎ ﺧﻴﺮﺍ ﺳﻨﻴﺎ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ
অর্থ: “বাদশাহ হযরত মালিক মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও উত্তম স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছগণকে অত্যন্ত ভাল বাসতেন।”
এ মহান বাদশাহর প্রশংসায় উনার সমকালীন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী ইবনে হযরত খাল্লিক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান” গ্রন্থের ৪র্থ জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-
ﻭﻛﺮﻡ ﺍﻻﺧﻼﻕ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺳﺎﻟﻢ ﺍﻟﻄﺎﻗﺔ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﻤﻴﻞ ﺍﻟﻲ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻻ ﻳﻨﻔﻖ ﻋﻨﺪ ﻣﻦ ﺍﺭﺑﺎﺏ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ﺳﻮﻱ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﻭﻣﻦ ﻋﺪﺍﻫﻤﺎ ﻻ ﻳﻌﻄﻴﻪ ﺷﻴﺎ ﺍﻻ ﺗﻜﻠﻔﺎ
অর্থ: “বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রশংসনীয় বা উত্তম চরিত্রের অধিকারী, অত্যধিক বিনয়ী ছিলেন। উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।”
মহান বাদশা বিশুদ্ধ আক্বীদা এবং উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন বলেই সে জামানার সকল আলিম উলামা, মাশায়েখ, সূফী দরবেশ সবাই সে সময় উনার আয়োজিত মীলাদ শরীফ মাহফিল উনার মধ্যে উপস্থিত হতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ক্বাযী ইবনে খল্লিক্বান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ﻭﺍﻣﺎ ﺍﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻤﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻮﺻﻒ ﻳﻘﺼﺮ ﻋﻦ ﺍﻻﺣﺎﻃﺔ ﺑﻬﺎ ﻭﻟﻜﻦ ﻧﺬﻛﺮ ﻃﺮﻗﺎ ﻣﻨﻪ ﻭﻫﻮ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻗﺪ ﺳﻤﻌﻮﺍ ﺑﺤﺴﻦ ﺍﻋﺘﻘﺎﺩ ﻓﻴﻪ ﻓﻜﺎﻥ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺳﻨﺔ ﻳﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﻣﻦ ﺍﺭﺑﻞ ﻣﺜﻞ ﺑﻐﺪﺍﺩ ﻭﺍﻟﻤﻮﺻﻞ ﻭﺍﻟﺠﺰﻳﺮﺓ ﻭ ﺳﻨﺠﺎﺭ ﻭﻧﺼﺒﻴﻦ ﻭﺑﻼﺩﺍ ﺍﻟﻌﺠﻢ ﻭﺗﻠﻚ ﺍﻟﻨﻮﺍﺣﻲ ﺣﻠﻖ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﺼﻮﻓﻴﺔ ﻭﺍﻟﻮﻋﺎﺀﻅ ﻭﺍﻟﻘﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি কতৃক আয়োজিত মীলাদ মাহফিলের গুরুত্ব-মাহাত্ব বলে শেষ করার মত নয়। এতদসত্বেও একটি কথা না বললেই নয়। তাহলো দেশবাসী আক্বীদা ও বিশ্বাসে উনাকে উত্তম লোক বলেই জানতেন। আর তাই প্রতি বছর আরবলের নিকটবর্তী সকল দেশে যেমন-বাগদাদ, মাওয়াছিল, জাযীরাহ, সানজার, নাছীবাইন, আরব-অনারব ও আশ পাশের অসংখ্য আলীম উলামা, ফক্বীহ, ছালিহ, ওয়ায়িজ, ক্বারী ও শায়িরগন উক্ত মীলাদ শরীফ এর মাহফিলে উপস্থিত হতেন।”
[সূত্রঃ- ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান, ৪র্থ খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা]
বিখ্যাত তাফসীরকারক ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা হযরত ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”-এর ১৩তম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠায় লিখেন-
أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى
র্অথঃ “(মুযাফফর শাহ) ছলিনে একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহমিান্বতি শাসক, যাঁর সকল কাজ ছলি অতি উত্তম। তনিি কাসইিউন-এর কাছে জামযে়া আল-মুযাফফরী নর্মিাণ করনেৃ..(প্রত)ি রবউিল আউয়াল মাসে তনিি জাঁকজমকরে সাথে মীলাদ শরীফ (মীলাদুন্নবী) উদযাপন করতনে। উপরন্তু, তনিি ছলিনে দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বদ্বিান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক – রাহমিুহুল্লাহ ওয়া একরাম – শায়খ আবুল খাত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলতানরে জন্যে মওলদিুন্ নববী সর্ম্পকে একখানি বই লখিনে এবং নাম দনে ‘আত্ তানভরি ফী মওলদি আল-বাশরি আন্ নাযীর’। এ কাজরে পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দনিার দান করনে। সালাহযি়া আমল র্পযন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তনিি ’আকা’ জয় করনে। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থকেে যান।” আস সাবত এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন-যিনি সুলতানের আয়োাজত মওলুদ অনুষ্ঠানে যোগ দেন; ওই ব্যক্তি বলেন:
‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-র্ভতি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মষ্টিরি আয়োজন করতেন।”
এ মহান বাদশাহ বিশুদ্ধ আক্বীদা ও উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন এবং তিনি যে তরতীবে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল উদযাপন করতেন তা শরীয়তসম্মত ছিল বলেই সে যামানার প্রায় সকল আলিম-উলামা পীর-মাশায়িখ, ছূফী-দরবেশ, ক্বারী, ওয়ায়িজ উক্ত মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলে উপস্থিত হতেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি আরো উল্লেখ করেন,
ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﺍﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﻛﻮﻛﺒﺮﻱ ﺍﺣﺪ
ﻟﻼﺟﻮﺍﺩ ﺍﻟﺴﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﻜﺒﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﻤﻠﻮﻙ
ﺍﻻﻣﺠﺎﺩﻟﺔ ﺍﺛﺮ ﺣﺴﻨﺔ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন আবু সাঈদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি দানশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। সাথে সাথে তিনি সম্মানিত বাদশাও ছিলেন। উনার বহু পূন্যময় কাজের আলামত এখনও বিদ্যমান রয়েছে।” [ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৩ তম, খন্ড ১৩৬ পৃষ্ঠা]
আল্লামা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ সম্বন্ধে উনার‘হুসনুল মাক্বাছীদ ফী আমালিল মাওয়ালিদ’ কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছ আল্লামা হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন যে-
وكان شهما شجاعا بطلا عالما عادلا رحمه الله واكرم مثواه.
অর্থ: ‘তিনি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, সাহসী, বীর্যবান, আলিম ও ন্যায় বিচারক ছিলেন। আল্লাহ পাক উনার উপর রহম করুন এবং উনাকে সম্মানিত বাসস্থান দান করুন।’
অতএব, উক্ত বাদশাহকে মূর্খ ও যিন্দীক অভিহিত করে শরীয়তের ফতওয়া মুতাবিক উলামায়ে ছূ’রা নিজেরাই মূর্খ ও যিন্দীক হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। কারণ, কেউ যদি কাউকে কোন অপবাদ দেয়, সে যদি তার উপযুক্ত না হয় তাহলে যে অপবাদ দিয়েছে সেটা তার উপরই বর্তাবে এবং উক্ত অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েই সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। নাঊযুবিল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان العبد اذا لعن شيأ صعدت اللعنة الى السماء فتغلق ابواب السماء دونها ثم تهبط الى الارض فتغلق ابوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشمالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذى لعن فاذا كان لذالك اهلا والا رجعت الى قائلها
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যখন কোন বান্দা কোন বস্তুকে অভিসম্পাত করে তখন সেই অভিসম্পাত আকাশে উঠে, তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন সেই অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন যমীনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিকে ও বাম দিকে যায় এবং যখন সেখানেও কোন রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়, তবে তার উপর পতিত হয়; অন্যথায় অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে।।” (আবূ দাউদ শরীফ)
=================================================
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরোধী বিদয়াতীরা পবিত্র মীলাদ শরীফকে বিদয়াত প্রমাণ করতে গিয়ে আরেকটি মিথ্যা তথ্য সংযুক্ত করে থাকে। তারা বলে, “পবিত্র মীলাদ শরীফ এর এরূপ তরতীব প্রচলন করেন ছয়শত হিজরীতে একজন ফাসিক বাদশাহ।” নাঊযুবিল্লাহ!
মূলত, তাদের উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়; বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা ও জিহালতপূর্ণ। কারণ নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থসমূহ ও পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য সমস্ত কিতাবেই উক্ত বাদশাহকে নেক্কার, পরহেযগার, ছালেহীন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাফিযে হাদীছ হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্বীয় বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ “সিয়ারু আলাম আন নুবালা”-এর ২২তম জিঃ ৩৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
ﻛﺎﻥ ﻣﺘﻮﺍﺿﻌﺎ ﺧﻴﺮﺍ ﺳﻨﻴﺎ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ
অর্থ: “বাদশাহ হযরত মালিক মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও উত্তম স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছগণকে অত্যন্ত ভাল বাসতেন।”
এ মহান বাদশাহর প্রশংসায় উনার সমকালীন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী ইবনে হযরত খাল্লিক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান” গ্রন্থের ৪র্থ জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-
ﻭﻛﺮﻡ ﺍﻻﺧﻼﻕ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺳﺎﻟﻢ ﺍﻟﻄﺎﻗﺔ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﻤﻴﻞ ﺍﻟﻲ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻻ ﻳﻨﻔﻖ ﻋﻨﺪ ﻣﻦ ﺍﺭﺑﺎﺏ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ﺳﻮﻱ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﻭﻣﻦ ﻋﺪﺍﻫﻤﺎ ﻻ ﻳﻌﻄﻴﻪ ﺷﻴﺎ ﺍﻻ ﺗﻜﻠﻔﺎ
অর্থ: “বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রশংসনীয় বা উত্তম চরিত্রের অধিকারী, অত্যধিক বিনয়ী ছিলেন। উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।”
মহান বাদশা বিশুদ্ধ আক্বীদা এবং উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন বলেই সে জামানার সকল আলিম উলামা, মাশায়েখ, সূফী দরবেশ সবাই সে সময় উনার আয়োজিত মীলাদ শরীফ মাহফিল উনার মধ্যে উপস্থিত হতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ক্বাযী ইবনে খল্লিক্বান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ﻭﺍﻣﺎ ﺍﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻤﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻮﺻﻒ ﻳﻘﺼﺮ ﻋﻦ ﺍﻻﺣﺎﻃﺔ ﺑﻬﺎ ﻭﻟﻜﻦ ﻧﺬﻛﺮ ﻃﺮﻗﺎ ﻣﻨﻪ ﻭﻫﻮ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻗﺪ ﺳﻤﻌﻮﺍ ﺑﺤﺴﻦ ﺍﻋﺘﻘﺎﺩ ﻓﻴﻪ ﻓﻜﺎﻥ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺳﻨﺔ ﻳﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﻣﻦ ﺍﺭﺑﻞ ﻣﺜﻞ ﺑﻐﺪﺍﺩ ﻭﺍﻟﻤﻮﺻﻞ ﻭﺍﻟﺠﺰﻳﺮﺓ ﻭ ﺳﻨﺠﺎﺭ ﻭﻧﺼﺒﻴﻦ ﻭﺑﻼﺩﺍ ﺍﻟﻌﺠﻢ ﻭﺗﻠﻚ ﺍﻟﻨﻮﺍﺣﻲ ﺣﻠﻖ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﺼﻮﻓﻴﺔ ﻭﺍﻟﻮﻋﺎﺀﻅ ﻭﺍﻟﻘﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি কতৃক আয়োজিত মীলাদ মাহফিলের গুরুত্ব-মাহাত্ব বলে শেষ করার মত নয়। এতদসত্বেও একটি কথা না বললেই নয়। তাহলো দেশবাসী আক্বীদা ও বিশ্বাসে উনাকে উত্তম লোক বলেই জানতেন। আর তাই প্রতি বছর আরবলের নিকটবর্তী সকল দেশে যেমন-বাগদাদ, মাওয়াছিল, জাযীরাহ, সানজার, নাছীবাইন, আরব-অনারব ও আশ পাশের অসংখ্য আলীম উলামা, ফক্বীহ, ছালিহ, ওয়ায়িজ, ক্বারী ও শায়িরগন উক্ত মীলাদ শরীফ এর মাহফিলে উপস্থিত হতেন।”
[সূত্রঃ- ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান, ৪র্থ খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা]
বিখ্যাত তাফসীরকারক ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা হযরত ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”-এর ১৩তম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠায় লিখেন-
أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى
র্অথঃ “(মুযাফফর শাহ) ছলিনে একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহমিান্বতি শাসক, যাঁর সকল কাজ ছলি অতি উত্তম। তনিি কাসইিউন-এর কাছে জামযে়া আল-মুযাফফরী নর্মিাণ করনেৃ..(প্রত)ি রবউিল আউয়াল মাসে তনিি জাঁকজমকরে সাথে মীলাদ শরীফ (মীলাদুন্নবী) উদযাপন করতনে। উপরন্তু, তনিি ছলিনে দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বদ্বিান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক – রাহমিুহুল্লাহ ওয়া একরাম – শায়খ আবুল খাত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলতানরে জন্যে মওলদিুন্ নববী সর্ম্পকে একখানি বই লখিনে এবং নাম দনে ‘আত্ তানভরি ফী মওলদি আল-বাশরি আন্ নাযীর’। এ কাজরে পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দনিার দান করনে। সালাহযি়া আমল র্পযন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তনিি ’আকা’ জয় করনে। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থকেে যান।” আস সাবত এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন-যিনি সুলতানের আয়োাজত মওলুদ অনুষ্ঠানে যোগ দেন; ওই ব্যক্তি বলেন:
‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-র্ভতি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মষ্টিরি আয়োজন করতেন।”
এ মহান বাদশাহ বিশুদ্ধ আক্বীদা ও উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন এবং তিনি যে তরতীবে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল উদযাপন করতেন তা শরীয়তসম্মত ছিল বলেই সে যামানার প্রায় সকল আলিম-উলামা পীর-মাশায়িখ, ছূফী-দরবেশ, ক্বারী, ওয়ায়িজ উক্ত মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলে উপস্থিত হতেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি আরো উল্লেখ করেন,
ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﺍﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﻛﻮﻛﺒﺮﻱ ﺍﺣﺪ
ﻟﻼﺟﻮﺍﺩ ﺍﻟﺴﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﻜﺒﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﻤﻠﻮﻙ
ﺍﻻﻣﺠﺎﺩﻟﺔ ﺍﺛﺮ ﺣﺴﻨﺔ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন আবু সাঈদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি দানশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। সাথে সাথে তিনি সম্মানিত বাদশাও ছিলেন। উনার বহু পূন্যময় কাজের আলামত এখনও বিদ্যমান রয়েছে।” [ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৩ তম, খন্ড ১৩৬ পৃষ্ঠা]
আল্লামা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ সম্বন্ধে উনার‘হুসনুল মাক্বাছীদ ফী আমালিল মাওয়ালিদ’ কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছ আল্লামা হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন যে-
وكان شهما شجاعا بطلا عالما عادلا رحمه الله واكرم مثواه.
অর্থ: ‘তিনি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, সাহসী, বীর্যবান, আলিম ও ন্যায় বিচারক ছিলেন। আল্লাহ পাক উনার উপর রহম করুন এবং উনাকে সম্মানিত বাসস্থান দান করুন।’
অতএব, উক্ত বাদশাহকে মূর্খ ও যিন্দীক অভিহিত করে শরীয়তের ফতওয়া মুতাবিক উলামায়ে ছূ’রা নিজেরাই মূর্খ ও যিন্দীক হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। কারণ, কেউ যদি কাউকে কোন অপবাদ দেয়, সে যদি তার উপযুক্ত না হয় তাহলে যে অপবাদ দিয়েছে সেটা তার উপরই বর্তাবে এবং উক্ত অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েই সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। নাঊযুবিল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان العبد اذا لعن شيأ صعدت اللعنة الى السماء فتغلق ابواب السماء دونها ثم تهبط الى الارض فتغلق ابوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشمالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذى لعن فاذا كان لذالك اهلا والا رجعت الى قائلها
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যখন কোন বান্দা কোন বস্তুকে অভিসম্পাত করে তখন সেই অভিসম্পাত আকাশে উঠে, তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন সেই অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন যমীনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিকে ও বাম দিকে যায় এবং যখন সেখানেও কোন রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়, তবে তার উপর পতিত হয়; অন্যথায় অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে।।” (আবূ দাউদ শরীফ)
=================================================
বিভিন্ন বাতিলপন্থীরা পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে হযরত হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহমতল্লাহি আলাইহি উনার নামে মিথ্যাচার করে বলে থাকে তিনি নাকি পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বিরুদ্ধে বলেছেন অথচ তিনি পক্ষেই বলেছেন।
এর পূর্বে বিশেষ ভাবে লক্ষনিয় হযরত আহমদ ফারুক সেরহিন্দ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি এমন পর্যায়ের ওলী আল্লাহ ছিলেন যে, উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে , যা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জামিউল জাওয়াম ও জামিউল আহাদীস কিতাবে উল্লেখ করেন,
يُبْعَثُ رَجُلٌ عَلـٰى اَحَدَ عَشَرَ مِائَةِ سَنَةٍ وَهُوَ نُوْرٌ عَظِيْمٌ اِسْـمُه اِسْـمِىْ بَيْنَ السُّلْطَانَيْنِ الْـجَابِرَيْنِ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِشَفَاعَتِهٖ رِجَالٌ اُلُوْفًا.
অর্থ: “একাদশ হিজরীতে একজন মহান ব্যক্তিত্ব’র আবির্ভাব ঘটবে, তিনি হচ্ছেন ‘মহান নূর’। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারক-এ। তিনি দুই যালিম বাদশাহার মাঝে তাশরীফ নিবেন। উনার শাফায়াতে হাজার হাজার লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (জামউল জাওয়াম, জামিউদ দুরার)
يَكُوْنُ فِـىْ اُمَّتِـىْ رَجُلٌ يُقَالُ لَه صِلَةُ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِشَفَاعَتِهٖ كَذَا وَكَذَا مِنَ النَّاسِ
অর্থ: “আমার উম্মতের মাঝে একজন মহান ব্যক্তিত্ব’র আবির্ভাব ঘটবে। উনাকে ‘ছিলাহ’ বলা হবে। উনার মুবারক শাফায়াতে (সুপারিশে) অসংখ্য মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (জামউল জাওয়াম, জামিউদ দুরার, জামিউল আহাদীছ, যুহুদ, ইবনে সা’দ, বাইহাক্বী)
অর্থাৎ মুযাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি’র নাম ছিলো ‘আহমদ’ এবং উনার আগমণ ঘটেছে বাদশাহ আকবর ও বাদশাহ জাহাঙ্গীরের মধ্যবর্তী সময়ে। হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ প্রতি হিজরী শতকের শুরুতে এমন একজন ব্যক্তিত্ব পাঠান, যিনি উম্মতের স্বার্থে পবিত্র দ্বীন ইসলামের সংস্কার সাধন করেন।” (আবু দাউদ শরীফ)
অর্থাৎ প্রতি হিজরী শতকের শুরুতে একজন করে মুজাদ্দিদ শ্রেণীর ওলী আল্লাহ’র আগমণ ঘটবে, যাদের উছিলায় আল্লাহ তায়ালা পবিত্র দ্বীন ইসলামকে হিফাজত করবেন। আর মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি ছিলেন ঐ শ্রেণীর ওলী আল্লাহগণের মধ্যে অন্যতম। উল্লেখ্য, মুযাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি’র সময় সবচেয়ে বড় ফিৎনা ছিলো বাদশাহ আকবরের তৈরীকৃত দ্বীন-ই ইলাহী নামক সর্বধর্মের মিশ্রন। এই দ্বীনে এলাহী নিশ্চিহৃ করে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আবার ইসলাম কায়েম করেন। আবার সুন্নত সমূহ জারি করেন। সুবহানাল্লাহ্।
এই বিখ্যাত ওলী তিনি পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষে লিখে গেছেন। পবিত্র মীলাদ শরীফ সম্পর্কে বিখ্যাত ওলী কাইয়্যূমে আউয়াল, আফযালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
دیگر درباب مولود خوانی اندراج یا فتہ بود در نفس قران خواندن بصوت حسن وقصائد نعت ومنقبت خواندن چہ مضائقہ است؟ ممنوع تحریف وتغیر حروف قران است والتزام رعایت مقامات نغمہ وتبرید صوت باں طریق الحان باتصفیق منا سب انکہ در شعر نیز غیر مبارح است. اگر ہر نہجے خوانند کہ تحریفے در کلمات قران واقع نشود و در قصائد خواندن شروط مذکورہ متحقق نگردد رواں ہم بغرض صحیح تجویز نما یند چہ مانع است؟
অর্থাৎ সুমিষ্ট আওয়াজে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে সুন্দর ক্বাছীদাবলী আবৃত্তি করতে কি বাধা আছে? নিষিদ্ধ হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফের হরফ বা অক্ষর সমূহের মধ্যে পরিবর্তন বা গানের তাল বা ছন্দ অবলম্বন স্বরের উত্থান-পতন যা সাধারণ কবিতার মধ্যেও জায়িয নেই। যদি পবিত্র মীলাদ শরীফ এমনভাবে পড়া হয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফের মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন আপতিত না হয় এবং পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ আবৃত্তির মধ্যে উপরোক্ত গানের ছন্দ বা তালের অনুসরণ করা না হয়, তাহলে এরূপ পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠে কি বাধা আছে?” (দলীল- মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী ৩য় খ- মাকতুব নং ৭২)
মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত যুগশ্রেষ্ঠ , মনোনীত শ্রেনীর ওলী আল্লাহ তিনি মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে সমর্থন করে গেছেন। সেখানে দুই পয়সার ওহাবী বিদয়াতিরা কোন সাহসে বিরোধীতা করে??
=================================================
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন,
এবং খুশি মুবারক প্রকাশ করেছেন। সহীহ হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, যা হযরত তিবরানী ও হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বর্ণনা করেন,
عن خريم بن أوس رضى الله تعالى عنه قال هاجرت الى رسول الله صلى الله عليه وسلم منصرفه من تبوك، فسمعت العباس يقول يارسول الله صلى الله عليه وسلم انى أريد أن امتدحك. قال: قل لايفضض الله فاك فقال:
من قبلها طبت فى الظلال وفى- مستودع حيث يخصف الورق
ثم هبطت البلاد لا بشر- أنت ولا مضغة ولا علق
بل نطفة تركب السفين وقد- ألجم نسرأ وأهله الغرق
تنقل من صالب الى رحم- اذا مضى عالم بدا طبق
وردت نارا الخليل مستترا- في صلبه أنت كيف يحترق
حتى احتوى بيتك المحيمن من خندف علياء تحتها النطق
وانت لما ولدت اشر قت ال- أرض وضاءت بنورك الأفق.
فتحن فى ذلك الضياء وى- النور وسبل الرشاد تخترق
অর্থ: হযরত খারীম ইবনে আউস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন তাবুক জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন আমি উনার ছোহবত মুবারক-এ গেলাম। এ সময় হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার ছানা-ছিফত মুবারক করতে চাই। তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ পাক আপনার মুখ মুবারককে হিফাযত করুন। অতঃপর তিনি বললেন:
১। (দুনিয়াতে আসার) আগে আপনি ছায়ায় দিনাতিপাত করতেন এবং এমন সুমহান স্থানে (জান্নাতে) অবস্থান করতেন, যেখানে পাতা মিলিত করা হয়। (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)
২। অতঃপর আপনি যমীনে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে) তাশরীফ নিলেন। তখন আপনার মানুষের আকৃতি ছিলো না, না ছিলেন নূরী গোশত পিন্ড, না নূরী জমাট রক্ত খন্ড।
৩। আপনি সেই নূর মুবারক যা নৌকায় আরোহণ করেছিলেন এবং নসর (প্রতিমা) ও নসর পূজারীদেরকে ওই পানি গ্রাস করেছিলো। (হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে)।
৪। আপনি এমনিভাবে জিসিম মুবারক থেকে রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হতে থাকেন এবং যা শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হয়েছিলো।
৫। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন আগুনে অবস্থান করেন, তখন আপনি উনার জিসিম মুবারক-এ ছিলেন। এমতাবস্থায় অগ্নির কি সাধ্য ছিলো যে, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে স্পর্শ বা পোড়াতে পারে।
৬। অবশেষে আপনার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। আপনার রূহ মুবারক খন্দকের উচ্চস্থানকে ঘিরে নিলো, যার নিচে অন্যান্য পাহাড়ের মধ্যবর্তী অংশ আছে।
৭। আপনি যখন যমীনে তাশরীফ নিলেন তখন সারা পৃথিবী আপনার নূর মুবারক-এ আলোকিত হয়ে গেলো।
৮। এখন আমরা সেই মহান নূর মুবারক উনার ছোহবতে আছি। আমাদের সম্মুখে হিদায়েতের পথ উন্মুক্ত। সুবহানাল্লাহ!(দলীল: মুসতাদরেকে হাকিম : হাদীস ৫৪৬৮, দালায়েলুন নবুয়াত ২০৩৫, মা’রিফাতুছ ছাহাব লি আবু নুয়াইম ২৫৩১ , খাছায়িছুল কুবরা)
উপরোক্ত হাদীস শরীফে দেখতে পেলাম, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন বিষয়ে বর্ণনা করেন, এবং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিষয়ে খুশি মুবারক প্রকাশ করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো উনার বিলাদত শরীফ এর ঘটনা বর্ণনা করা শুনে বললেন না , এটা বলবেন না…. এগুলো বিদয়াত… ইত্যাদি। বরং তিনি খুশি হলেন।
সূতরাং যারা বলবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত তারা হাদীস শরীফ বিরোধী এবং বিদয়াতি, সেই সাথে নবীজীর প্রতি বিদ্বেষকারী।
=================================================
দেওবন্দী, তাবলীগি দের চাইতে বড় ভন্ড মুনাফিক দুনিয়ায় আছে কিনা সন্দেহ আছে। আমারা যে আমল গুলো করলে তারা শিরক- বিদয়াতের গরম ফতোয়া দেয়, সে কাজগুলো তাদের মুরুব্বীরা করলে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থাকে।
নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সকল আশেকগনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, উনারা মীলাদ শরীফ এবং ক্বিয়াম শরীফ করে থাকেন। অথচ দেওবন্দী –তাবলীগি- কওমী-খারেজীরা মীলাদ শরীফ এবং ক্বিয়াম শরীফ কে সরাসরি বিদয়াত/ কুফরী/শিরিকী বলে ফতোয়া দেয়।
অথচ, এই দেওবন্দী তাবলীগি দের মুরুব্বীরা এই মীলাদ শরীফ এবং ক্বিয়াম শরীফকে জায়েজ বলেই ফতোয়া প্রদান করেছে এবং পালনও করেছে ।
আসুন তাদের কিতাব থেকেই দলীল প্রদান করি —
আশরাফ আলী থানবী , রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, সহ সকল উলামায়ে দেওবন্দীদের পীর শায়েখে আরব ওয়াল আযম ,হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বর্ননা করেন –>
অর্থ- মীলাদ শরীফের মাহফিলকে বরকত লাভের উসিলা মনে করে আমি প্রতি বছর মীলাদ শরীফ এর মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম শরীফ করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।”
(ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়লা পৃষ্ঠা ৫)
হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্য কিতাবে বলেন —
“আমাদের আলেমগন (দেওবন্দী) মীলাদ শরীফের বিষয়ে খুবই বিরোধ করছে। তবু আমি ক্বিয়াম শরীফ জায়েজ পন্থি আলেমগনের পক্ষেই গেলাম। যখন ক্বিয়াম শরীফ জায়েজ হওয়ার দলীল মওজুদ আছে, তখন কেন এতো বাড়াবড়ি করা হচ্ছে । আমাদের জন্য তো মক্কা শরীফ মদীনা শরীফের অনুকরনই যথেষ্ট। অবশ্য ক্বিয়ামের সময় জন্মের এতেকাদ না রাখা চাই। মীলাদ শরীফ মজলিশে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হতে পারেন এমন বিশ্বাস স্থাপনে কোন দোষ নেই। কারন জড় জগত স্থান ও কাল থেকে মুক্ত নয়, তবে রুহানী জগত স্থান ও কাল হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।
সূতরাং হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ মাহফিলে আগমন করা উনার পবিত্র জাত মুবরকের জন্য অসম্ভব নয় !”
(শামায়েলে এমদাদীয়া ৮ পৃষ্ঠা)
দেওবন্দী সর্বোচ্চ গুরু আশরাফ আলী থানবী তার কিতাবে লিখেছে —
অর্থ– “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের বর্ননা করার জন্য মাহফিল করা জায়েজ বরং মুস্তাহাব, যখন উহা (হিন্দুস্থানের) প্রচলিত বিদয়াত হতে পবিত্র হবে এবং ( মীলাদ শরীফে) তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার সময় ক্বিয়ম করা কখনোই কুফরী নয় !”
(ইমদাদুল ফতোয়া ৪ র্থ খন্ড ৩২০ পৃষ্ঠা)
আশরাফ আলী থানবী অপর এক কিতাবে লিখেছে —-
“ঐ সকল কার্যাবলী ( অর্থাৎ শিরনী, ক্বিয়াম ইত্যাদি) প্রকৃত পক্ষে মুবাহ কাজ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। তাতে কোন ক্ষতি নেই এবং সেজন্য প্রকৃত মীলাদ শরীফ এর ব্যাপারে কোন প্রকার নিষেধ আসতে পারে না।”
(তরীকায়ে মীলাদ ৮ পৃষ্ঠা ।)
দেওবন্দী ইমাম মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রচিত “আল মহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ” কিতাবে পবিত্র মক্কা শরীফ এবং মদীনা শরীফ এর আলেমদের মীলাদ শরীফ সম্পর্কে প্রশ্নের জবাব দেওবন্দী খলীল আহমদ সাহারানপুরী লিখেন-
“রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুবারক বেলাদতের আলোচনা বা মীলাদ শরীফ পাঠ এমন কি তাঁর পাদুকা সংশ্লিষ্ট ধূলি অথবা তাঁর বাহন গাধাটির প্রশ্রাব-পায়খানা মুবারক আলোচনাকে আমরা কেন, কোন সাধারণ মুসলমান বেদআতে মুহররমা বা হারাম বলতে পারে না। না আমরা কখনো বলিনি বলিও না।
ঐ অবস্থা যার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক হযরত রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে রয়েছে তার আলোচনা আমাদের মতে অধিকতর পছন্দনীয় ও উন্নতমানের মুস্তাহাব।”
দলীল- {আল মহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ ২১ তম প্রশ্নের জবাব।
লেখক- মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী দেওবন্দী।
প্রকাশনা- ইত্তেহাদ বুক ডিপো, দেওবন্দ (ইউ পি)}
খলীল আহমদ সাহারানপুরী এই বইতে লিখেছে এটাই দেওবন্দী আকাবিরদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষনকারীরা দেওবন্দী গ্রুপের নয়।
সকল দেওবন্দী ও বাংলাদেশর কওমীদের অন্যতম গর্ব আশরাফ আলী থানবীর খলীফা , শামছুল হক ফরিদপুরী তার “তাছাউফতত্ত্ব” কিতাবে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ এর ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে লিখেছে —
“ক্বিয়াম জিনিসটা আসলে ফিকাহের অন্তর্ভুক্ত নাহে –ইহা তাছাউফের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ মুহব্বত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে হযরত রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তারিফের কাসীদা পড়া হয় তাহা দ্বারা মুহব্বত বাড়ে এবং লোকজন মুহব্বতের জোশে খাড়া হইয়া যায় । মুহব্বতের জোশে খাড়া হইলে তাহাকে বিদয়াত বলা যায় না। তাহা ছাড়া হযরত নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম করার সময় বসিয়া বসিয়া সালাম করা শরীফ তবিয়তের লোকের কাছে বড়ই বেয়াদবী লাগে।”
দলীল— (তাছাউফ তত্ত্ব ৪১ পৃষ্ঠা)
শুধু তাই নয়, দেওবন্দী সিলসিলার প্রতিষ্ঠিাতা সহ, সকল দেওবন্দীদের পীর সাহেব হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজের ত্বরীকা সম্পর্কে সকল অনুসারীদের মধ্যে কিছু উপদেশ লিখিত আকারে রেখে গিয়েছিলেন। আসুন দেখা যাক উপদেশগুলা কি ছিলো –>
★গৌরব করবে না।
★নিজেকে বড় মনে করবে না।
★খায়ের ও বরকতের জন্য মীলাদ মাহফিলের আঞ্জাম করবে এবং ক্বিয়াম করবে।
★পীর আওলিয়া গনের ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে যোগদান করবে!
★ফাতেহা খানীতে যোগদান করবে।
★মাশায়েখ ও পীর আওলিয়াগনের মাযার শরীফ যিয়ারত করবে।
★অবসর সময় তাঁদের মাযার শরীফের পার্শ্বে এসে রূহানীয়ত সহ মুতাওজ্জুহ হবে এবং স্বীয় মুর্শিদের সুরতে তাদের ধ্যান করবে ও ফয়েজ হাসিলের চেষ্টা করবে। কারন তাঁরা আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্থলাভিষিক্ত বলে গন্য!
★এগুলোই আমার ত্বরীকা !
আর এসবই বরকতময় কর্ম। আমার লেখা “ফায়সালায়ে হাফতে মাসায়লা” কিতাবে এ সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে !””
(যিয়াউল কুলুব- কতিপয় বিশেষ উপদেশ পরিচ্ছেদ )
লেখক- হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি !
মুসলমান ভাইগন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে-দেওবন্দী সিলসিলায় কয়জন এই উপদেশ মান্যকরে ?
দেওবন্দী দের কাছে এই আমাল গুলাতো শিরিক আর বিদয়াত !!
তবে তারা কি উনাকে মুশরিক/বিদয়াতি বলবে ?
পীরের ত্বরীকা অস্বীকার করে কি তারা পীরের সিলসিলায় থাকতে পারে ?
জবাব পেলে ভালো হতো।
এবার একটু চিন্তা করুন দেওবন্দীরা কত নিকৃষ্ট। নিজেদের সিলসিলার সবাই মীলাদ -ক্বিয়ামের পক্ষে ফতোয়া দিয়ে গেছে সেটা দেখে না। আমরা সুন্নী মুসলমানরা মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ করলে সেটা তাদের কাছে শিরক-বিদায়াত হয়ে যায়। যদি আমাদেরকে শিরকি- বিদয়াতী ফতোয়া দিতে চায় তাহলে সর্বপ্রথম যেন নিজেদের মুরুব্বী দের মুশরিক আর বেদাতী ফতোয়া দিয়ে নেয় । নচেত আমাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার অধিকার তাদের নাই।
=================================================
পবিত্র মিলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে মক্কা শরীফ-মদিনা শরীফ-এর মুফতীগণের প্রাচিন ফতোয়ার কালেকশন
بسماللهالرحمنالرحيم
আল্লামা আব্দুর রহীম তুর্কমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১২৮৮ হিজরী সনে পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদিনা শরীফ এবং জেদ্দাহ ও হাদিদার উলামায়ে কেরামের দ্বারা পবিত্র মিলাদ শরীফ ও কিয়াম শরীফ সম্পর্কে একটি ফতোয়া লিখিয়ে হিন্দুস্তানে নিয়ে আসেন এবং নিজ গ্রন্থ ‘রাওয়াতুন নাঈম’ -এর শেষাংশে ছেপে প্রকাশ করেন ।
প্রশ্নঃ আল্লাহ তায়ালা অসীম রহমত আপনার উপর বর্ষিত হোক । নিম্নে বর্নিত বিষয়ে আপনার অভিমত ও ফতোয়া কি ?
মিলাদ শরীফ পাঠ করা – বিশেষ করে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জন্ম বৃত্তান্ত পাঠকালে কিয়াম করে সম্মান প্রদর্শন করা , মিলাদের জন্য দিন তারিখ নিদিষ্ট করা , মিলাদ মজলিস কে সাজানো , আতর গোলাপ ও খুশবু ব্যাভার করা। পবিত্র কুরআন শরীফ হতে সুরা ক্বেরাত পাঠ করা এবং মুসলমানগণ উনাদের জন্য খানাপিনা (তাবারুক) তৈরি করা – এই ভাবে অনুষ্ঠান করা জায়েয কিনা এবং অনুষ্ঠানকারীগন এতো সাওয়াবের অধিকারী হবেন কিনা ? বর্ণনা করে আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হোন ।
–আব্দুর রহীম তুর্কমানী – হিন্দুস্তান ,১২৮৮ হিজরি ।
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার ফতোয়া দাতাগনের জবাব ও ফতোয়া ।
অনুবাদঃ ‘জনে নিন – উপরে বর্নিত নিয়মে (কিয়াম) মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করা মোস্তাহসান ও মুস্তাহাব । আল্লাহ ও সমস্ত মুসলমানের নিকট ইহা উত্তম । ইহার অস্বীকারকারীগন বিদআতপন্থী ও গোমরাহ্ । হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্নিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -্উনার পবিত্র হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে –
‘মুসলমানগণ যে কাজকে পছন্দনীয় বলে বিবেচনা করেন -তা আল্লাহর নিকট ও পছন্দনীয় ’(মুসলিম শরীফ )।
এখানে মুসলমান বলতে ঐ সমস্ত মুসলমানকে বুঝায়-যারা কামেল মুসলমান । যেমন পরিপুর্ন আমলকারী উলামা , বিশেষ করে আরবেরদেশ , মিশর , সিরিয়া ,তুরস্ক ও স্পেন-ইত্যাদি দেশের উলামাগন সলফে সালেহীনদের যুগ থেকে অদ্যবধি (১২৮৮ হিঃ) সকলেই পবিত্র মীলাদ শরীফ ও কেয়াম শরীফ কে মুস্তাহসান, উত্তম ও পছন্দনীয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন । সর্বযুগের উলামাগনের স্বীকৃতির কারনে মীলাদ ও কিয়ামের বিষয় বরহক ।
উহা গোমরাহী হতে পারে না । নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন । ‘আমার উম্মত গোমরাহ বিষয়ে একমত হতে পারে না’
সুতরাং যারা পবিত্র মীলাদ শরীফ ও কিয়াম শরীফ কে অস্বিকার করবে-সম্মানিত শরিয়ত উনার বিচারকের উপর তাদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব । ( ফতুয়া সমাপ্ত )
পবিত্র মক্কা শরিফ উনার ফতোয়াদাতা মুফতীগনের স্বাক্ষর ও সিলমোহর
১। আল্লামা আব্দুর রহমান সিরাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২।আল্লামা আহমদ দাহলান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩।আল্লামা হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৪। আল্লামা আব্দুর রহমান জামাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৫। আল্লামা হাসান তৈয়ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৬।আল্লামা সোলায়মান ঈছা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৭। আল্লামা আহমদ দাগেস্তানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৮। আল্লামা আবদুল কাদের সামস রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৯। আল্লামা আব্দুর রহমান আফেন্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১০। আল্লামা আব্দুল কাদের সানখিনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১১। আল্লামা মুহাম্মদ শারকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১২ । আল্লামা আব্দুল কাদের খোকীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১৩। আল্লামা ইবরাহিম আলফিতান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১৪। আল্লামা মুহাম্মদ জারুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১৫। আল্লামা আব্দুল মুত্তালিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১৬। আললামা কামাল আহমেদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১৭। আল্লামা মুহাম্মাদ ছায়ীদ আল-আদাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১৮। আল্লামা আলি জাওহাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
১৯। আল্লামা সৈয়দ আব্দুল্লাহ কোশাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২০। আল্লামা হোসাইন আরব রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২১ । আল্লামা ইব্রাহিম নওমুছি রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২২। আল্লামা আহমদ আমিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২৩। আল্লামা শেখ ফারূক রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২৪। আল্লামা আব্দুর রহমান আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২৫। আল্লামা আব্দুল্লাহ মাশশাত রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২৬। আল্লামা আব্দুল্লাহ কুম্মাশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২৮। আল্লামা মুহাম্মদ বা-বাসীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
২৯। আল্লামা মুহাম্মদ সিয়ুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩০। আল্লামা মুহাম্মদ সালেহ জাওয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩১। আল্লামা আব্দুল্লাহ জাওয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩২। আল্লামা মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৩। আল্লামা আহমদ আল মিনহিরাভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৪ । আল্লামা সোলাইমান উকবা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৫। আল্লামা সৈয়দ শাত্বী ওমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৬। আল্লামা আব্দুল হামিদ দাগেস্তানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৭। আল্লামা মুস্তফা আফীফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৮। আল্লামা মানসুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৩৯ । আল্লামা মিনশাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
৪০। আল্লামা মুহাম্মদ রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
(১২৮৮ হিজরী) ।
=================================================
ইদানীং সাইয়্যিদে ঈদে আকবর ওয়া ঈদে আ’যম পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ উনার নাম শুনলে কিছু লোক বিদয়াত বিদয়াত বলে চিৎকার করে, কিতাবে নেই, পূর্বের কোনো আউলিয়াগণ করেননি ইত্যাদি ইত্যাদি নানা মিথ্যা কথা বলে থাকে। অথচ শতশত, হাজার বছর ধরে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম. যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম-মুজাতাহিদ, উলামায়ে কিরামগণ উনারা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিলের আয়োজন করেছেন, এতে শরীক হয়েছেন এবং এসব বরকতময় আমলের পক্ষে কিতাবও রচনা করেছেন। এখানে ঐ সকল মহান উলামায়ে কিরামগণ উনাদের কয়েকটি বিখ্যাত কিতাবের নাম উল্লেখ করা হলো।
১) হাফিযুল হাদীছ হযরত শিহাবুদ্দীন আবু মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বিন ইসমাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল বাইস আলা ইনকারি বিদাই ওয়াল হাওয়াদিস।
২) হাফিযুল হাদীছ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- হুসনুল মাকসাদ ফী আমালিল মাওলিদ লিস সুয়ূতী।
৩) হাফিযুল হাদীছ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব আল হাবী লিল ফতওয়া
৪) হাফিযুল হাদীছ হযরত শামসুদ্দীন বিন জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আরফুত তা’রীফ বিল মাওলিদিশ শরীফ।
৫) হাফিযুল হাদীছ হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল মাওলিদুশ শরীফ লিইবনুল জাওযী।
৬) আল মাওলিদুল কাবীর লি ইবনিল হাজার।
৭) হাফিযুল হাদীছ হযরত যয়নুদ্দীন ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল মাওলিদুল হানী।
৮) শায়েখ হযরত ছদরুদ্দীন মাওহুর বিন ওমর জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আস সীরাতুশ শামিয়াহ।
৯) হযরতুল আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- ফাতহুল মুবীন লি শরহিল আরবাঈন।
১০) হযরত ইমাম কুসত্বলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া ১ম খন্ড।
১১) আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল বাক্বী যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহিব।
১২) হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল মাওয়ালিদুর রাবী ফী মাওলিদিন নবী।
১৩) শায়েখ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ।
১৪) হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী ৩য় খন্ড, মাকতুব নং ৭২
১৫) হযরত শাহ আব্দুর রহীম দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আদ্দুররুসু ছামীন ফী মুবাশশারাতিন নাবীয়্যিল আমীন।
১৬) আমীরুল মুহাদ্দিসীন ফিল হিন্দ হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- ফয়ূযুল হারামাইন।
১৭) হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আদ দুররুল মুনাযযাম।
১৮) হযরত শাহ মুহাম্মদ ইসহাক দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মিআতে মাসাঈল, মাসয়ালা নং ১৫
১৯) হযরত মাওলানা সালামত উল্লাহ কানপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- ইশবাউল কালাম ফী ইসবাতিল মাওলিদ ওয়াল কিয়াম।
২০) হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ফায়সালায়ে হাফত মাসয়ালাহ।
২৩) হযরত শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- আল মুলাখখাছ।
২৩) হযরত মাওলানা মুফতী সাদুল্লাহ মুরাদাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব- ফাতাওয়ায়ে সিন্ধীয়াহ।
প্রশ্ন হচ্ছে পবিত্র মীলাদ শরীফের বিরোধিতা তাহলে করলো কারা ? যুগ শ্রেষ্ঠ সবাইতো পক্ষেই ফতোয়া দিয়েছেন….
এ থেকেই সহজেই বোঝা যায় বিরোধিতা একমাত্র নব্য ফের্কা ওহাবী, সালাফী, দেওবন্দী , জামাতিরাই করে থাকে……।
=================================================
মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই ধরা পৃষ্ঠে প্রেরণের সুসংবাদ পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহে উল্লেখ করেছেন। বর্ণিত হয়েছে যে, “ইয়েমেনের বাদশাহ আসআদ বিন কার্ব তুব্বা ইরাক ও সিরিয়া জয় করার উদ্দেশ্যে বের হলে পথিমধ্যে তিনি আমিয়া শহরে (যা বর্তমানে মদিনা শরীফ নামে পরিচিত) সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে সেটি দখল করে নেন এবং উনার পুত্রকে সেখানকার অধিকর্তা নিয়োগ করে দেশে ফিরে যান, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ষড়যন্ত্রের ফলে আসআদ বিন কার্ব তুব্বার পুত্র মারা যায়। পুত্র হত্যার সংবাদে তিনি এতই প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠেন যে, আমিয়া নগরীকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সমূলে উচ্ছেদ তথা ধ্বংস করার অভিপ্রায় নিয়ে পুনরায় আমিয়াতে আসেন এবং তার নিদের্শ মোতাবেক সেনাবাহিনী ধ্বংসলীলা শুরু করে, কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো উনার সেনাবাহিনী প্রত্যহ যেটুকু ধ্বংস করে, পরবর্তী দিন দেখা যায় তা পূনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। ফলশ্রুতিতে আসআদ বিন কার্ব তুব্বা ঘটনার মর্ম জানার জন্য উনার বন্দীকৃত লোকজনের মধ্যে যেসমস্ত তাওরাতপন্থী ইহুদী পন্ডিত ছিলেন তাদের নিকট এই অত্যাশ্চর্য ঘটনার কারণ জিজ্ঞেস করায় তারা বাদশাহ্ আসআদ বিন কার্ব তুব্বাকে বলেন যে, আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী সবকিছু করতে পারলেও এই শহরের বিন্দুমাত্র ক্ষতি সাধন করতে পারবেন না। কেননা আখেরী জামানার প্রতিশ্রুত নবী ভবিষ্যতে এ শহরের আতিথ্য গ্রহণ করবেন। তখন আসআদ বিন কার্ব তুব্বা ইহুদীদের এ কথার সত্যতার প্রমাণ কোথায় রয়েছে তা জানতে চাইলে তারা তাদের প্রতি নাজিলকৃত তাওরাত কিতাবের কথা বললেন, এবং সত্যতা যাচাইয়ের প্রেক্ষিতে তাওরাত কিতাব সহ দু’জন তাওরাত পন্থীকে অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হলে দেখা গেল যে, তাওরাত পন্থী দু’ব্যক্তি কিতাব সহ সেই জলন্ত অগ্নিকুন্ড থেকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসেন। অথচ আসআদ বিন কার্ব তুব্বা যখন তার দুই অগ্নিপূজক অনুচরকে তাঁদের অগ্নিদেবের মূর্তিসহ অগ্নি কুন্ডে প্রবেশ করতে বললেন তখন দেখা গেলো যে, তারা অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করার পূর্বেই তাদের সমস্ত শরীর ঝলসে গেল।
এসব ঘটনা অবলোকন করে বাদশাহ আসআদ বিন র্কাব তুব্বা সম্পূর্ণ অন্য মানুষে পরিনত হন এবং পবিত্র শহরে ধ্বংসের ব্যর্থ কোশেশের জন্যে তীব্র অনুশোচনায় পাপ খন্ডানোর নিমিত্তে তার বন্দীকৃতদের মধ্যে থেকে তাওরাত কিতাবের উপর পান্ডিত্যের অধিকারী চারশত ইহুদি আলিমকে মুক্তি দিয়ে তাদের কে আমিয়া নগরীতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার বন্দোবস্ত করে দেন এবং তাদের মধ্যকার নেতা শাহাউল নামক জনৈক আলেমকে প্রতিশ্রুত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-্উনার নিকট তার লেখা একটি চিঠি দেন এবং আদেশ করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াত মোবারকে যদি এ শহরে আগমন করেন তবে যেন তিনি এই চিঠিটি উনার হাত মুবারকে দেন। যদি উনার হায়াত মোবারকে না আসেন তবে যেন চিঠিটি ইন্তেকালের পূর্বে উনার পুত্রের নিকট দিয়ে যান, এভাবে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আগমন না ঘটা পর্যন্ত যেন বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। বাদশাহ আসআদ বিন কার্ব তুব্বা আরো বলে দেন যে, তিনি শাহাউলের জন্য যে বাড়ীটি নির্মান করে দিয়েছেন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শহরে তাশরীফ মুবারক আনবেন তখন যেন তিনি ঐ বাড়ীতেই অবস্থান মুবারক করেন এবং এজন্য তিনি যেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুরোধ করেন।
৬২২ খ্রীষ্টাব্দের হজ্ব মৌসূমে মদীনা থেকে ৭৩ জন মুসলিমের একটি দল রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মদিনা শরীফ উনার অতীথি হবার অনুরোধ জানিয়ে পবিত্র মদীনাবাসীদের একটি আমন্ত্রণ নামা পেশ করে। উক্ত প্রতিনিধি দলে আবু লাইল নামে এক যুবক ছিলো, সে ছিলো সেই শাহাউল যাঁর নিকট রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার কাছে লিখিত বাদশাহ আসআদ বিন কার্ব তুব্বার চিঠিও অর্পিত ছিলো, উনার বংশধর আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার পুত্র আবু লাইল যখন উক্ত প্রতিনিধি দলের সাথে যাচ্ছিলেন তখন আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যন্ত গোপনে উনার পুত্রের হাতে চিঠিটি দিয়ে বললেন যে, উনি যেন চিঠিটির কথা গোপন রাখে এবং যদি রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিঠিটির কথা জিজ্ঞেস না করেন তবে যেন এ ব্যাপারে কিছু বলা না হয় এবং চিঠি ফেরৎ নিয়ে আসে। অথচ দেখা গেলো উক্ত প্রতিনিধি দলটি রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলে তিনি আবু লাইল-এর দিকে আঙ্গুলনিদের্শ করে বললেন, তোমার নামতো আবু লাইল, তোমার কাছে বাদশাহ্ আসআদ বিন কার্ব তুব্বা কর্তৃক আমার জন্য লিখিত পত্র খানি লুকায়িত আছে। উহা বের কর। একথায় উপস্থিত সকলেই আশ্চর্যান্বিত হল।: অতপর আবু লায়লা চিঠিটি বের করে নিজেই উচ্চস্বরে জনসম্মুখে পড়ে শুনালো। চিঠি পড়ে সকলেই অবহিত হলো যে, এটি প্রায় ১৪০০ বৎসর পূর্বে লেখা। চিঠিটি ছিলো এই-
“হে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি দরুদ ও সালামের পর আমি এই মর্মে ঘোষনা করছি যে, আমি আপনার এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার কর্তৃক আপনার প্রতি যাবতীয় বিষয়ের উপর ঈমান আনলাম। আমি আরও ঘোষনা করছি, আমি আপনার ধর্মে ধর্মান্তরিত হলাম, অর্থাৎ আপনার দ্বীনকে গ্রহণ করলাম এবং আপনার সৃষ্টিকর্তার উপর ঈমান আনলাম এবং আল্লাহ পাক উনার নিকট হতে আপনার জন্য ইসলামী শরীয়তের যে সমস্ত আইন বলবৎ রবে তাও মেনে নিলাম।
আমি প্রার্থনা করছি, শেষ বিচারের দিন আপনি যেন আমাকে শাফায়াত দান করেন এবং ঐ দিন যেন আমাকে ভুলে না যান। আমি আপনার প্রথম উম্মত ও অনুসারী হলাম। আপনার নিকট আমার দাবী আরো জোরদার করার লক্ষ্যে, আমি আপনার পূর্ব পুরুষ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার ধর্মে দীক্ষিত হলাম এবং সেই ধর্মানুযায়ী আমি বর্তমান জীবন যাপন করছি।”
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাঝে হিজরত মুবারক করেন তখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সমস্ত মুসলমানই উনাদের নিজ নিজ বাড়িতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবস্থান নিতে অনুরোধ জানান, এতে করে সকলের মন রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আমার উট সেচ্ছায় যে বাড়ীর সম্মুখে অবস্থান নিবে সে বাড়িতেই আমি অবস্থান নিবো। দেখা গেলো উটটি তার নিজের ইচ্ছায় আবু লাইল-এর পিতা হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু- উনার বাড়ীর সম্মুখে বসে পড়লো যা কিনা রাজা আসআদ বিন কার্ব তুব্বা ১৪০০ বৎসর পূর্বে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বসবাসের জন্য বিশেষ ভাবে নির্মান করেছিলেন।(সুবহানাল্লাহ্)
অর্থাৎ বিষয়টা হচ্ছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছুর পূর্বে নূর, নবী, রসূল, রহমত, নিয়মাত ইত্যাদি করে সৃষ্টি করে মহান আল্লাহ পাক নিজের কুদরত মুবারকে মওজুদ রেখেছেন। আর উনার আগমন মুবারক হচ্ছে সবচাইতে বড় নিয়ামত। যেই সুসংবাদ মহান অাল্লাহ পাক অসংখ্যবার দিয়েছেন। উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি মুবারক প্রকাশ করাই সবচাইতে বড় আমল। সুবহানাল্লাহ্ !! (তাফরিহুল আজকিয়া ফি আহ্ওয়ালিল আম্বিয়া” নামক কিতাবের ২য় খন্ড ১১০ পৃষ্ঠা)
=================================================
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়োজন করেন, এবং ছুটি ঘোষনা করেন।
জাতীয় পর্যায়ে ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন : স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম হাক্বানী আলেম –ওলামাদের সুসংগঠিত করে পবিত্র ইসলাম উনার সঠিক রুপ জনগনের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহন করেন। তাঁর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠ পোষকতায় ঢাকার সীরাত মজলিস নামে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পবিত্র রবিউল আওয়াল শরীফ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে সর্ব প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহন করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধ বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন । সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের উদ্বোধন উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত । এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতি বছর জাতীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে । ঈদে-মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষনাও করেন। ( তথ্যসূত্রঃ আবু তাহের মুহাম্মদ মানজুর, ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান,ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা (ঢাকা:ই.ফা.বা. )জানুয়ারী-মার্চ-২০০৯ পৃ-৪১,মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান,মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও ইসলাম সম্প্রসারনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদান,অগ্রপথিক, জাতীয় শোক দিবস সংখ্যা, ঢাকা: ই.ফা.বা.)আগষ্ট-১৯৯৯,পৃ-২৪ )
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের পর থেকে আজ অবধি বাইতুল মোকারমে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হয়ে আসছে। এজন্য বঙ্গবন্ধুকে আল্লাহ পাক উত্তম প্রতিদান দান করুন।
১) এখন কথা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু চেতনার কথা যারা দিন রাত বলে বেড়ান তারা কি এই সুমহান আমলের বিষয়ে সচেতন?
২) আরো জাঁকজমকের সাথে বিপুল আয়োজনে কেন অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে না সে বিষয়ে তারা কি জবাব দিবে?
৩) শুধু ইসলামী ফাঊন্ডেশনে আবদ্ধ না রেখে দেশের সমগ্র মসজিদ মাদ্রাসায় কেন ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না?
৪) কেন সরকারী ভাবে এই ঈদ উপলক্ষে বোনাস দেয়া হচ্ছে না?
কেন ছুটি বাড়ানো হচ্ছে না?
৫) যারা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করাকে বিদয়াত হারাম বলতেছে কেন তাদের রাষ্ট্রীয় আইন অবমাননা করার কারনে অাইনের আওতায় আনা হচ্ছে না?
=================================================
মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই ধরা পৃষ্ঠে প্রেরণের সুসংবাদ পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহে উল্লেখ করেছেন। বর্ণিত হয়েছে যে, “ইয়েমেনের বাদশাহ আসআদ বিন কার্ব তুব্বা ইরাক ও সিরিয়া জয় করার উদ্দেশ্যে বের হলে পথিমধ্যে তিনি আমিয়া শহরে (যা বর্তমানে মদিনা শরীফ নামে পরিচিত) সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে সেটি দখল করে নেন এবং উনার পুত্রকে সেখানকার অধিকর্তা নিয়োগ করে দেশে ফিরে যান, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ষড়যন্ত্রের ফলে আসআদ বিন কার্ব তুব্বার পুত্র মারা যায়। পুত্র হত্যার সংবাদে তিনি এতই প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠেন যে, আমিয়া নগরীকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সমূলে উচ্ছেদ তথা ধ্বংস করার অভিপ্রায় নিয়ে পুনরায় আমিয়াতে আসেন এবং তার নিদের্শ মোতাবেক সেনাবাহিনী ধ্বংসলীলা শুরু করে, কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো উনার সেনাবাহিনী প্রত্যহ যেটুকু ধ্বংস করে, পরবর্তী দিন দেখা যায় তা পূনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। ফলশ্রুতিতে আসআদ বিন কার্ব তুব্বা ঘটনার মর্ম জানার জন্য উনার বন্দীকৃত লোকজনের মধ্যে যেসমস্ত তাওরাতপন্থী ইহুদী পন্ডিত ছিলেন তাদের নিকট এই অত্যাশ্চর্য ঘটনার কারণ জিজ্ঞেস করায় তারা বাদশাহ্ আসআদ বিন কার্ব তুব্বাকে বলেন যে, আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী সবকিছু করতে পারলেও এই শহরের বিন্দুমাত্র ক্ষতি সাধন করতে পারবেন না। কেননা আখেরী জামানার প্রতিশ্রুত নবী ভবিষ্যতে এ শহরের আতিথ্য গ্রহণ করবেন। তখন আসআদ বিন কার্ব তুব্বা ইহুদীদের এ কথার সত্যতার প্রমাণ কোথায় রয়েছে তা জানতে চাইলে তারা তাদের প্রতি নাজিলকৃত তাওরাত কিতাবের কথা বললেন, এবং সত্যতা যাচাইয়ের প্রেক্ষিতে তাওরাত কিতাব সহ দু’জন তাওরাত পন্থীকে অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হলে দেখা গেল যে, তাওরাত পন্থী দু’ব্যক্তি কিতাব সহ সেই জলন্ত অগ্নিকুন্ড থেকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসেন। অথচ আসআদ বিন কার্ব তুব্বা যখন তার দুই অগ্নিপূজক অনুচরকে তাঁদের অগ্নিদেবের মূর্তিসহ অগ্নি কুন্ডে প্রবেশ করতে বললেন তখন দেখা গেলো যে, তারা অগ্নিকুন্ডে প্রবেশ করার পূর্বেই তাদের সমস্ত শরীর ঝলসে গেল।
এসব ঘটনা অবলোকন করে বাদশাহ আসআদ বিন র্কাব তুব্বা সম্পূর্ণ অন্য মানুষে পরিনত হন এবং পবিত্র শহরে ধ্বংসের ব্যর্থ কোশেশের জন্যে তীব্র অনুশোচনায় পাপ খন্ডানোর নিমিত্তে তার বন্দীকৃতদের মধ্যে থেকে তাওরাত কিতাবের উপর পান্ডিত্যের অধিকারী চারশত ইহুদি আলিমকে মুক্তি দিয়ে তাদের কে আমিয়া নগরীতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার বন্দোবস্ত করে দেন এবং তাদের মধ্যকার নেতা শাহাউল নামক জনৈক আলেমকে প্রতিশ্রুত রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-্উনার নিকট তার লেখা একটি চিঠি দেন এবং আদেশ করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াত মোবারকে যদি এ শহরে আগমন করেন তবে যেন তিনি এই চিঠিটি উনার হাত মুবারকে দেন। যদি উনার হায়াত মোবারকে না আসেন তবে যেন চিঠিটি ইন্তেকালের পূর্বে উনার পুত্রের নিকট দিয়ে যান, এভাবে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আগমন না ঘটা পর্যন্ত যেন বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। বাদশাহ আসআদ বিন কার্ব তুব্বা আরো বলে দেন যে, তিনি শাহাউলের জন্য যে বাড়ীটি নির্মান করে দিয়েছেন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শহরে তাশরীফ মুবারক আনবেন তখন যেন তিনি ঐ বাড়ীতেই অবস্থান মুবারক করেন এবং এজন্য তিনি যেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুরোধ করেন।
৬২২ খ্রীষ্টাব্দের হজ্ব মৌসূমে মদীনা থেকে ৭৩ জন মুসলিমের একটি দল রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মদিনা শরীফ উনার অতীথি হবার অনুরোধ জানিয়ে পবিত্র মদীনাবাসীদের একটি আমন্ত্রণ নামা পেশ করে। উক্ত প্রতিনিধি দলে আবু লাইল নামে এক যুবক ছিলো, সে ছিলো সেই শাহাউল যাঁর নিকট রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার কাছে লিখিত বাদশাহ আসআদ বিন কার্ব তুব্বার চিঠিও অর্পিত ছিলো, উনার বংশধর আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার পুত্র আবু লাইল যখন উক্ত প্রতিনিধি দলের সাথে যাচ্ছিলেন তখন আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যন্ত গোপনে উনার পুত্রের হাতে চিঠিটি দিয়ে বললেন যে, উনি যেন চিঠিটির কথা গোপন রাখে এবং যদি রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিঠিটির কথা জিজ্ঞেস না করেন তবে যেন এ ব্যাপারে কিছু বলা না হয় এবং চিঠি ফেরৎ নিয়ে আসে। অথচ দেখা গেলো উক্ত প্রতিনিধি দলটি রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলে তিনি আবু লাইল-এর দিকে আঙ্গুলনিদের্শ করে বললেন, তোমার নামতো আবু লাইল, তোমার কাছে বাদশাহ্ আসআদ বিন কার্ব তুব্বা কর্তৃক আমার জন্য লিখিত পত্র খানি লুকায়িত আছে। উহা বের কর। একথায় উপস্থিত সকলেই আশ্চর্যান্বিত হল।: অতপর আবু লায়লা চিঠিটি বের করে নিজেই উচ্চস্বরে জনসম্মুখে পড়ে শুনালো। চিঠি পড়ে সকলেই অবহিত হলো যে, এটি প্রায় ১৪০০ বৎসর পূর্বে লেখা। চিঠিটি ছিলো এই-
“হে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি দরুদ ও সালামের পর আমি এই মর্মে ঘোষনা করছি যে, আমি আপনার এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার কর্তৃক আপনার প্রতি যাবতীয় বিষয়ের উপর ঈমান আনলাম। আমি আরও ঘোষনা করছি, আমি আপনার ধর্মে ধর্মান্তরিত হলাম, অর্থাৎ আপনার দ্বীনকে গ্রহণ করলাম এবং আপনার সৃষ্টিকর্তার উপর ঈমান আনলাম এবং আল্লাহ পাক উনার নিকট হতে আপনার জন্য ইসলামী শরীয়তের যে সমস্ত আইন বলবৎ রবে তাও মেনে নিলাম।
আমি প্রার্থনা করছি, শেষ বিচারের দিন আপনি যেন আমাকে শাফায়াত দান করেন এবং ঐ দিন যেন আমাকে ভুলে না যান। আমি আপনার প্রথম উম্মত ও অনুসারী হলাম। আপনার নিকট আমার দাবী আরো জোরদার করার লক্ষ্যে, আমি আপনার পূর্ব পুরুষ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার ধর্মে দীক্ষিত হলাম এবং সেই ধর্মানুযায়ী আমি বর্তমান জীবন যাপন করছি।”
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাঝে হিজরত মুবারক করেন তখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সমস্ত মুসলমানই উনাদের নিজ নিজ বাড়িতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবস্থান নিতে অনুরোধ জানান, এতে করে সকলের মন রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আমার উট সেচ্ছায় যে বাড়ীর সম্মুখে অবস্থান নিবে সে বাড়িতেই আমি অবস্থান নিবো। দেখা গেলো উটটি তার নিজের ইচ্ছায় আবু লাইল-এর পিতা হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু- উনার বাড়ীর সম্মুখে বসে পড়লো যা কিনা রাজা আসআদ বিন কার্ব তুব্বা ১৪০০ বৎসর পূর্বে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বসবাসের জন্য বিশেষ ভাবে নির্মান করেছিলেন।(সুবহানাল্লাহ্)
অর্থাৎ বিষয়টা হচ্ছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবকিছুর পূর্বে নূর, নবী, রসূল, রহমত, নিয়মাত ইত্যাদি করে সৃষ্টি করে মহান আল্লাহ পাক নিজের কুদরত মুবারকে মওজুদ রেখেছেন। আর উনার আগমন মুবারক হচ্ছে সবচাইতে বড় নিয়ামত। যেই সুসংবাদ মহান অাল্লাহ পাক অসংখ্যবার দিয়েছেন। উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি মুবারক প্রকাশ করাই সবচাইতে বড় আমল। সুবহানাল্লাহ্ !! (তাফরিহুল আজকিয়া ফি আহ্ওয়ালিল আম্বিয়া” নামক কিতাবের ২য় খন্ড ১১০ পৃষ্ঠা)
=================================================
সিরিয়ার শাসক নুরুদ্দিন জঙ্গি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম শুনেনি এমন খুব কম লোক আছে। তিনি ছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শায়েখ। সুলতান নুরুদ্দিন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরেকটি ঘটনার জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত। ঘটনা হলো- একবার দুই ইহুদী পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শরীর মুবারক চুরি করতে ষড়যন্ত্র করেছিলো। সেই সময় নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুরুদ্দিন জঙ্গী রহমতুল্লাহির আলাইহি উনার স্বপ্নে আগমন করেন এবং ঐ দুই ষড়যন্ত্রকারীর চেহারা দেখিয়ে বলেন তাদের শাস্তি দিতে। এরপর নুরুদ্দিন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ দুই ইহুদীকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেন।
নুরুদ্দিন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ সময় আরেকটি কারণে বিশেষ পরিচিত ছিলেন, সেটা হলো তিনি খুব বেশি বেশি মীলাদ শরীফ উনার মাহফিল করতেন এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের জন্য সকল ব্যবস্থা করেছিলেন। মানুষ যেন ভালোভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল করতে পারে সে জন্য তিনি ‘ওয়াফ’ নামক একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষকে খাবার, ফল-ফলাদি, কাপড় ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বিলি করতেন যেন সবাই স্বাচ্ছন্দে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসব পালন করতে পারেন। এ ইতিহাস পাবেন ঐতিহাসিক গ্রন্থ Al-‘Alaq al-khatira fi dhikr umara’ al-Sham wa’l-Jazira লেখক- Ibn Shaddad
=================================================
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম উনার বিরুধীতাকারীরা বলে থাকে জন্মাষ্টমীর অনুসরনেই নাকি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হয়ে থাকে!!! নাউযুবিল্লাহ!!
অথচ এই কথা একান্তই অবান্তর যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দুদের জন্মাষ্টমী, বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা বা খ্রিস্টানদের ক্রিসমাস থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। বরং মুসলমানগণ উনাদের থেকেই অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন দেখেই এ সমস্ত যবন, ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য জাতিরা তাদের কথিত জন্মোৎসবগুলো চালু করেছে।
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দুদের জন্মাষ্টমী থেকে নয়:
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে কৃষ্ণের জন্ম। কিন্তু তখন থেকে জন্মাষ্টমী পালনের কোনো ইতিহাস নেই। কৃষ্ণের জন্ম পৃথিবীতে নাকি নক্ষত্রে তা নিয়ে যেমন রয়েছে একদিকে বিতর্ক তেমনি কৃষ্ণের জন্মের পর থেকে গত পাঁচ হাজার বছর পর্যন্ত এভাবে জন্মাষ্টমী পালনের ইতিহাসও নেই। জন্মাষ্টমী হিন্দুদের জন্য সার্বজনীন কোন উৎসবও নয়। বরং ইতিহাস পাঠে জানা যায়, শাসক শ্রেণী তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে জন্মাষ্টমী ও দুর্গাপূজার প্রচলন এবং বিকাশ ও বিস্তার ঘটিয়েছে।
লেখক ভুবন মোহন বসাক এবং যদুনাথ বসাকের দুটি বই থেকে জন্মাষ্টমীতে মিছিলের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে ভাসা ভাসা ধারণা পাওয়া যায়। বই দু’টির একটি ১৯১৭ সালে এবং অপরটি ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয়। দু’টি বইতে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জন্মাষ্টমী উৎসবে মিছিলের শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতকে।
ভুবন মোহনের লেখা বই অনুসারে ইসলাম খাঁর ঢাকা নগরের পত্তনের (১৬১০ সাল) আগে বংশালের কাছে এক সাধু বাস করতো। ১৫৫৫ সালে সে রাধাষ্টমী উপলক্ষ্যে বালক ও ভক্তদের হলুদ পোশাক পরিয়ে একটি মিছিল বের করেছিলো। এর প্রায় ১০-১২ বছর পর সেই সাধু ও বালকদের উৎসাহে রাধাষ্টমীর কীর্তনের পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে আরো জাঁকজমকপূর্ণ একটি মিছিল বের করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল। সে উদ্যোগেই ১৫৬৫ সালে প্রথম জন্মাষ্টমীর মিছিল ও শোভাযাত্রা বের হয়।
জেমস টেলর-এর লেখনী থেকে জানা যায়, ১৭২৫ সালে জন্মাষ্টমী পালনের জন্য দু’টি পক্ষের সৃষ্টি হয়। নবাবপুর পক্ষকে বলা হতো লক্ষ্মীনারায়ণের দল আর ইসলামপুর পক্ষকে বলা হতো মুরারি মোহনের দল। সপ্তদশ শতকে শোভাযাত্রার শুরু হলেও তা বিকশিত হয়েছিল ঊনিশ শতকের শেষার্ধে, বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ধারা বলবৎ ছিল।
উপরের ইতিহাস ভিত্তিক আলোচনা হতে সুস্পষ্ট হলো যে, ঈসায়ী ষোড়শ শতকের দিকে হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানাদি প্রচলিত হয়। এর পূর্বে হিন্দুদের এ ধরণের কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় না।
তাহলে এ কথা কি করে বলা যেতে পারে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দুদের জন্মাষ্টমী হতে এসেছে! বরং যারা এ ধরনের তথ্য উপস্থাপন করে থাকে তাদের অন্তর বা কল্ব হিন্দুদের মহব্বতে গরক থাকার কারণেই তারা এ ধরনের মিথ্যা ও অবান্তর একপেশে তথ্য উপস্থাপন করছে।
=================================================
সৃষ্টির শুরুই হয়েছে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলািইহি ওয়া সাল্লাম পালনের জন্য।
১. এ সম্পর্কে হাদীছে কুদসী শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে,
كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف.
অর্থ: “আমি গুপ্ত ছিলাম। আমার মুহব্বত হলো যে, আমি জাহির হই। তখন আমি আমাকে (রুবুবিয়্যত) জাহির করার জন্যই সৃষ্টি করলাম মাখলূকাত (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে)।”
দলীল –
আল মাকাসিদুল হাসানা/ ৮৩৮,
কাশফূল খিফা/২০১৩,
আসনাল মুত্বালিব/১১১০,
তমীযুত তীব/১০৪৫,
আসরারুল মারফুআ/৩৩৫,
তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮,
আদ্দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০,
আত তাযকিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬,
সিররুল আসরার, কানযুল উম্মাল)
২. হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্নিত,
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد
أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك
অর্থ: “ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক আনেন তখন তিনি সবসময় কান্নাকাটি করতেন। একদিন তিনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহ! মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায় আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন ওহী মুবারক নাজীল হয়- মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপনি কিভাবে চিনলেন, আপনি তো উনাকে কখনো দেখেননি? তখন তিনি বললেন-যখন আপনি আমাকে সৃষ্টি মুবারক করেছেন, আমার অভ্যন্তরে রুহ মুবারক প্রবেশের পর মাথা তুলে আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই যার নাম মুবারক আপনি স্বীয় নাম মুবারকের সাথে রেখেছেন। তখন অহী মুবারক নাজীল হল-তিনি সর্বশেষ নবী। আপনার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে। যদি তিনি না হতেন, তাহলে আপনাকেও সৃষ্টি করা হতো না।”
★ ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নাবায়িয়্যাহ : ৫/৪৮৯ পৃ
★ ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ মুসতাদরাকে হাকেম – ২/৪৮৬ পৃ : হাদিস : ৪২২৮
★ ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মাদখাল : ১/১৫৪
★ তাবরানী : আল মুজামুল আওসাত : ৬/৩১৩ : হাদীস নং-৬৫০২
★ তাবরানী : আল মুজামুস সগীর : ২/১৮২ : হাদীস নং-৯৯২,
★ তাবরানী : মুজমায়ে কবীর’
★ ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২২৭
★ ইমাম আজলুনী : কাশফুল কাফা : ১/৪৬ ও ২/২১৪
★ আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
★ আল্লামা সুবকী -শেফাউস সিকাম
★ ইবনে আসাকির : নিজ ‘তারিখে দিমাশক’: ৭/৪৩৭ পৃ
★ ইবনুল জাওজী : আল ওয়াফা বি আহওয়ালিল মোস্তফা : ৩৩
★ ইবনুল জাওজী : বয়ানুল মীলাদুন্নবী : ১৫৮
★ ইবনে কাসীর : আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া : ১/১৮ পৃ
★ ইবনে হাজর হায়সামী : মাযমাউজ যাওয়ায়েদ : ৮/২৫৩
★ শিহাবউদ্দীন খাফাজী : ‘নাসীম আর-রিয়াদ’
★ ইমাম সুয়ুতী : কাসায়েসুল কুবরা : ১/১২ : হাদিস ১২
★ ইমাম সুয়ুতী : আদ দুররে মানসুর : ১/১৪২
★ আল্লামা কাসতাল্লানী -আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ : ১/ ৮২ ও ২/৫২৫
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১৭২
★ ইমাম হালাবী : সীরাতে হালাবিয়্যাহ : ১/৩৫৫
★ মুহাদ্দিসে শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী : তফসীরে আজিযী : ১/১৮৩
★ ইমাম নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক : ১৩৭
★ ইমাম নাবহানী : আনোয়ার-ই-মোহাম্মাদীয়া : ৯-১০
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪
★ ইমাম নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৩১ পৃ ও ৭৯৫ পৃ
(মাকতুবাত এ তাওফিক হিয়্যাহ, কাহেরা,মিশর)
★ আল্লামা শফী উকারবী : যিকরে হাসীন : ৩৭
★ আশরাফ আলী থানবী : নাশরুত্তীব : ২৮
★ ফাযায়েলে আমাল, ৪৯৭, উর্দু এডিশন
মান পর্যালোচনা :
যে সকল মুহাদ্দিসগন এ হাদিস সহিহ বলেছেনঃ
১) ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ। আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫
২) ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।শিফাউস সিকাম, পেইজ-১২০
৩) ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ। দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২
৪) ইমাম কস্তল্লানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহঃ১/১৬৫
৫) ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ। ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯
৬) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।আল খাসাইসঃ১/৮
৭) ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদীসটি দলীল হিসাবে তার কিতাবে উল্লেখ করেছে। মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯
‘যদি মুহাম্মাদ না হতেন, তবে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না’-এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছে, এ হাদীসটি পূর্বের কথাকে শক্তিশালী করেছে। রেফারেন্সঃ মাজমু উল ফাতাওয়া- ২/১৫৯
৮) বাতিল দের জবাবে ইমাম ইবনু কাসীর পরিস্কার বলেছেন, এই হাদীসটি বানোয়াট নয়। এটা দ্বারা নির্দ্বিধায় দলীল প্রদান করা যাবে।
রেফারেন্সঃআস সীরাতুন নাবাওইয়্যাহ- ১/১৯৫
৯) বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী কারী বলেন, একথাটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।রেফারেন্সঃ আল আসরারুল মারফুআহ- ১/২৯৫
৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-উনাকে বলেছেন, ওহে ঈসা আলাইহিস সালাম! হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতকেও তা করতে বলুন । রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হলে আমি আদম (আলােইহিস সালাম) উনাকে সৃষ্টি করতাম না, বেহেশত বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না।”
রেফারেন্সঃ
★ ইমাম হাকিম নিশাপুরী : আল মোসতাদরেক’ : ২/৬৭১ : হাদিস ৪২২৭
★ ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
★ ইমাম ইবনে সাদ : তানাকাতুল কোবরা
★ ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী : ‘শিফাউস্ সিকাম ৪৫
★ শায়খুল ইসলাম আল-বুলকিনী : ফতোওয়ায়ে সিরাজিয়া ১/১৪০
★ ইবনে হাজর রচিত ‘আফদালুল কোরা
★ আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ ও ৪/১৬০
★ ইবনে কাসীর : কাসাসুল আম্বিয়া : ১/২৯ পৃ
★ ইবনে কাসীর : সিরাতে নববিয়্যাহ : ১/৩২০
★ ইবনে কাসীর : মুজিজাতুন্নবী (সা) : ১/৪৪১
★ ইবনে হাজর আসকালানী : লিসানুল মিযান : ৪/৩৫৪
★ ইমাম যাহাবী : মিজানুল ইতিদাল : ৫/২৯৯, রাবী নং ৬৩৩৬
★ ইবনে হাজর হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/৪২
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১২/২২০
★ আবু সাদ ইব্রাহীম নিশাপুরী : শরহে মোস্তফা : ১/১৬৫
★ ইমাম সুয়ুতী : কাসায়েসুল কুবরা : ১/১৪ : হাদিস ২১
★ ইমাম ইবনে হাইয়্যান : ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী : ৩/২৮৭
★ কানযুল উম্মাল- হাদীস ৩২০২২
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১/২৯৫, হাদিস : ৩৮৫
★ ইবনে শামী সালেহ : সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ১২/৪০৩
হাদিসের মান পর্যালোচনা :★ ইমাম দায়লামী : হাদিসটির মান সনদের দিক থেকে হাসান। আল মুসনাদিল ফেরদাউস : ৫/২৪২
৪. হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন: “হযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম এসে পৌঁছে দেন আল্লাহর বাণী, ‘(হে রাসূল) আপনার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কাউকেই আমি সৃষ্টি করি নি। আমি বিশ্বজগত ও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সবই সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আপনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে। আমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না, যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম’।”
রেফারেন্সঃ
★ ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৩/৫১৭
★ মোল্লা আলী কারী : মাওজুয়াতুল কবীর : ১০১
★ ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ১/১৮২
★ ইমাম নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২৮৯
★ কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/১০৫
৫ : এই হাদিসের ২টা সনদ সহকারে উল্লেখ্য করলাম :
১ম সনদ :
হযরত ইমাম হাকিম নিসাপুরী
↓
হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
↓
হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
↓
জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
↓
হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,
২য় সনদ :
ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
↓
হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি , তিনি
↓
হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি,
↓
সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
↓
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত,
-حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاريحدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لامحمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه “لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه وسلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আপনি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে উনাকে যারা পেতে চায় তাঁদের নির্দেশ করুন, তাঁরা যেন উনার প্রতি ঈমান আনে।
যদি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন হতেন তবে আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতাম না, যদি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি না হতেন তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।
আর যখন আমি পানির উরর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যেلا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।”
এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ।
রেফারেন্সঃ
★ মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিশাপুরী (রহ),
কিতাব : তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহিআলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন
খন্ড : ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা
★ মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খন্ড ১০৬৭ পৃষ্ঠা
=================================================
খলীফাতুল্লাহ, খলফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক পৃথিবীর ইতিহাসে নজীরবিহীন অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ শান মুবারক ৬৩ দিনব্যাপী আয়োজিত বিশেষ মাহফিলের ১ম ৩০ দিন প্রতিযোগীতা মাহফিল শেষে ২য় ৩০ দিন বিষয়ভিত্তিক ওয়াজ মাহফিল এবং সবশেষে ৩ দিন পবিত্র সামা(বাদ্য যন্ত্র বিহীন হামদ,নাত,ক্বাছিদা) শরীফ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। রাজারবাগ শরীফ পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদে এসব মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য শাহরুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাসে রাজারবাগ শরীফ সুন্নতী জামে মসজিদে আরো অনেক বিশেষ মাহফিল মুবারক অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিদিনই বিশেষ তবারুক বিতরণ করা হয়।
১ রবীউল আউওয়াল শরীফ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হিজরত দিবস।
২ রবীউল আউওয়াল শরীফ: ইবনু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছানী (হযরত ত্বইয়িব) আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ: ইবনু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ (হযরত ত্বাহির) আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ: উম্মু রসূলিনা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
৭ রবীউল আউওয়াল শরীফ: সাইয়্যিদাতুন নিসা, ক্বায়িম মাক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন, হাবীবাতুল্লাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ: ইবনু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছানী (হযরত ত্বইয়িব) আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
১০ রবীউল আউওয়াল শরীফ: উম্মু রসূলিনা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার এবং ইবনু রসূলিল্লাহ র্আ-রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাদের পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
১১ রবীউল আউয়াল শরীফ: ফখরুল উলামা, ইমামুছ ছরফ, সুলতানুল আরেফিন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ রুকনুদ্দীন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ শরীফ।
১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ: সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদ আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম বিলাদত শরীফ দিবস ও ইবনু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ছালিছ (হযরত ত্বাহির) আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
১৩ রবীউল আউওয়াল শরীফ: আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক গ্রহণ দিবস ও সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
১৭ রবীউল আউওয়াল শরীফ: হযরত শাফিউল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতাজান উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।
১৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদ আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম আক্বীক্বা শরীফ দিবস।
পৃথিবীর ইতিহাসে নজীরবিহীন অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিশেষ শান মুবারক ৬৩ দিনব্যাপী আয়োজিত এসব মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে তাশরীফ মুবারক গ্রহন খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
একইভাবে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা মাদরাসায় ছাত্রী ও মহিলা আনজুমান উনাদের উদ্যোগে প্রতিদিন বাদ যোহর থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে নজীরবিহীন অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিশেষ শান মুবারক ‘ফাল ইয়াফরাহু’ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া মাসব্যাপী মহিলাদের বিশেষ তালীম অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মহিলাগণ এবং বিভিন্ন মহিলা আনজুমান উনার আমীলগণ অংশগ্রহণ করেন।
সম্মানিত এসব মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, আফযালুন নিসা, ইমামাতুস সিদ্দীকা, নুরে জাহান, আল মাবরুরা, আল মাহযুবা, আল ক্বারীবা ওয়াল মুক্বাররিবা, হাবীবাতুল্লাহ, আওলাদে রসূল, উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযুর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
=================================================
অনেকে বলেন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের তারিখ সংশ্লিষ্ট করে আজকেও সে তারিখে কেন পালন করতে হবে? তারিখ পালনের কোন ভিত্তি কি শরীয়তে আছে?
আমার উত্তর, অবশ্যই আছে। কিন্তু বুঝতে গেলে প্রশ্নকারীদের অন্তরে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বত থাকতে হবে। বুখারী শরীফে একটা হাদীছ শরীফ আছে। বুখারী শরীফের “কিতাবুল জানায়েয” অধ্যায়ে একটা পরিচ্ছেদ আছে ‘বাবু মাওতা ইয়াওমাল ইছনাইন’। এখনে একটা হাদীছ শরীফ আছে,
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ دَخَلْتُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ فَقَالَ فِي كَمْ كَفَّنْتُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ فِي ثَلاَثَةِ أَثْوَابٍ بِيضٍ سَحُولِيَّةٍ، لَيْسَ فِيهَا قَمِيصٌ وَلاَ عِمَامَةٌ. وَقَالَ لَهَا فِي أَىِّ يَوْمٍ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ. قَالَ فَأَىُّ يَوْمٍ هَذَا قَالَتْ يَوْمُ الاِثْنَيْنِ. قَالَ أَرْجُو فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ اللَّيْلِ. فَنَظَرَ إِلَى ثَوْبٍ عَلَيْهِ كَانَ يُمَرَّضُ فِيهِ، بِهِ رَدْعٌ مِنْ زَعْفَرَانٍ فَقَالَ اغْسِلُوا ثَوْبِي هَذَا، وَزِيدُوا عَلَيْهِ ثَوْبَيْنِ فَكَفِّنُونِي فِيهَا. قُلْتُ إِنَّ هَذَا خَلَقٌ. قَالَ إِنَّ الْحَىَّ أَحَقُّ بِالْجَدِيدِ مِنَ الْمَيِّتِ، إِنَّمَا هُوَ لِلْمُهْلَةِ. فَلَمْ يُتَوَفَّ حَتَّى أَمْسَى مِنْ لَيْلَةِ الثُّلاَثَاءِ وَدُفِنَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ
অর্থ: হযরত আয়িশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কয় খণ্ড কাপড়ে আপনারা হযরত নাবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে কাফন দিয়েছিলেন? হযরত আয়িশা সিদ্দিক আলাইহাস সালাম বললেন, তিন খণ্ড সাদা সাহুলী কাপড়ে, এগুলোতে (সেলাইকৃত) জামা ও পাগড়ী ছিল না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোন দিন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছাল শরীফ প্রকাশ করেন? হযরত আয়িশা সিদ্দিক আলাইহাস সালাম বললেন, সোমবার। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আজ কি বার? হযরত আয়িশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বললেন, আজ সোমবার। তিনি [হযরত আবূ বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম ] বললেন, আমিও সেটাই আশা রাখি যে, আজ সন্ধ্যার মধ্যে যেন এই ইহকাল ত্যাগ করতে পারি। এরপর অসুস্থকালীন আপন পরিধেয় কাপড়ের প্রতি লক্ষ্য করে তাতে জাফরানী রং এর চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, আমার এ কাপড়টি ধুয়ে তার সাথে আরো দু’খণ্ড কাপড় বৃদ্ধি করে আমার কাফন দিবেন। হযরত আয়িশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বললেন, এটা (পরিধেয় কাপড়টি) পুরাতন। তিনি বললেন, ইন্তেকাল প্রাপ্ত ব্যাক্তির চেয়ে জীবিতদের নতুন কাপড়ের প্রয়োজন অধিক। আর কাফন হল বিগলিত শবদেহের জন্য। তিনি মঙ্গলবার রাতের সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেন, প্রভাতের পূর্বেই উনাকে দাফন করা হয়। (বুখারী শরীফ: কিতাবুল জানায়েয : হাদীছ নং ১৩০৪)
এখন ফিকিরের বিষয় হলো, ইন্তেকালের সময়ও তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা ভুলেন নাই। তিনি বিছাল শরীফের তারিখ কি সেটা খোঁজ করেছেন, নিজেও বরকত ও সুন্নতের খেয়ালে সেই বারে বিছাল প্রকাশের আকাঙ্খা করেছেন।
এ থেকে কি এটা প্রমান হয় না যে, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছু সেটা তারিখ / বার/ মাস/ সময় সবই মর্যাদাপূর্ণ ও সেটা পালন করার চেষ্টা করা উম্মতের দায়িত্ব? যদি তাই না হতো তবে সিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম জীবনের শেষ সময় এসে কেন সেই বারে ইন্তেকাল প্রকাশের আগ্রহ করলেন?
যিনি জীবনের কঠিনতম সময়ে সেই বারে ইন্তেকাল প্রকাশের আরজি করতে পারেন তিনি কি নবীজীর বিলাদত বা জন্ম তারিখে বা বারে খুশি প্রকাশ করতে ভুলে গিয়েছিলেন? নাউযুবিল্লাহ।
ভুলেন নাই বলেই সর্বশ্রেষ্ট সাহাবী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক আলাইহিস সালাম বলেন-
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قِرا ةَ مَوْ لِدِ النَّبىُ صلي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَان رفيقي فىِ الجَنّةِ
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে”। (দলীল- আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং-৭, মাদারেজ আস সউদ ১৫ পৃষ্ঠা, নাফহাতুল আম্বরিয়া” ৮ পৃষ্ঠা, ই’য়ানাতুত ত্বলেবীন)
=================================================
এক শ্রেনীর লোক প্রচার করে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাকি চালু হয়েছে ৬শত হিজরীতে। অথচ কথাটি মোটেও সত্য না,
খলীফা হারুনুর রশীদের (১৪৮-১৯৩ হিজরী) মাতা আল খায়জুরান (ইন্তেকাল ৭৮৬ ঈসায়ী সন) পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য ব্যবস্থা করেন। হিজরী ৩য় শতকের পবিত্র মক্কা শরীফের মুসলিম ইতিহাসবিদ আল আজরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২১৯ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন,
فَمِنْهَا الْبَيْتُ الَّذِي وُلِدَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دَارِ أَبِي يُوسُفَ، وَلَمْ يَزَلْ هَذَا الْبَيْتُ فِي الدَّارِ حَتَّى قَدِمَتِ الْخَيْزُرَانُ أُمُّ الْخَلِيفَتَيْنِ مُوسَى، وَهَارُونَ، فَجَعَلَتْهُ مَسْجِدًا يُصَلَّى فِيهِ،
“হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সেখানে খলীফা হারুনুর রশীদ ও খলীফা মুসার মাতা খায়জুরান রহমতুল্লাহি আলাইহা তাশরীফ আনেন। সেই জায়গাকে নামায আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন।।” (আল মক্কাহ, ৪র্থ খ-, ৫ পৃষ্ঠা)
চিন্তার বিষয় হচ্ছে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের স্থান থেকে কাবা শরীফ একদম নিকটবর্তী। তাহলে উনার বিলাদত শরীফের স্থানে নামাজের স্থান বানারো হাকীকত কি?
৩৯৪ হিজরীতে মিশরে মাস ব্যাপী পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করা হতো। আপত্তিকারীদের দেয়া সনের প্রায় ২০০ বছর আগে।
বিখ্যাত আলেমে দ্বীন ইমাম মাকরিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাজুল হুনাফা” কিতাবে এ প্রসঙ্গে লিখেন।,
سنة أربع وتسعين وثلثمائة
তিনশত চুরানব্বই হিজরী
وفي ربيع الأول ألزم الناس بوقود القناديل بالليل في سائر الشوارع والأزقة بمصر
অর্থ: “রবিউল আউয়াল মাসে (হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে) সব মানুষকে রাষ্ট্রীয় ভাবে ঘোষনা করে দেয়া হলো, সম্পুর্ন মাস রাস্তায় রাস্তায় বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হবে।” (তাজুল হুনাফা ২/৪৮, আজজামেউ ফিল মাওলুদ৩/১২)
সূতরাং ৬ শত হিজরীতে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ প্রথম শুরু হয়েছে কথাট ঠিক নয়। ৪ শত হিজরীতেও আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হয়েছে। মূলত এই মাহফিল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় থেকেই চলে আসছে যা ছিল ব্যক্তিগত ও ঘরোয়া ভাবে।
বিলাদত শরীফের স্থানকে তাযিম করার, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করার জন্যই এই ব্যবস্থা। যা খায়রুল কুরুনেই সম্পন্ন হয়। অথচ একশ্রেনীর লোক বলে খাইরুল কুরুনে কেউ পালন করে নাই… কি হাস্যকর কথা।
=================================================
এক শ্রেণীর লোক বলে থাকে পহেলা বৈশাখ একটা সার্বজনীন উৎসব. তারা আরো বলে ধর্ম যার যার উৎসব নাকি সবার। তাদের যুক্তি সম্পুর্ন মনগড়া । এমন উৎসব মুসলমানগন উনাদের জন্য কথনোই পালনীয় নয় যা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কেলাপ।
ইাতহাস থেকে জানা যাই আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়।
পহেলা বৈশাখে মুসলমানদের কোনো উৎসব নেই; বরং হিন্দু ও উপজাতিদের প্রায় ১৪ প্রকার পূজা রয়েছে। তাহলে এখানে পরিষ্কার করে দেখা যাচ্ছে যে, পহেলা বৈশাখে মুশরিকদের অনেক পূজা থাকলেও মুসলমানদের কোনো উৎসব নেই। তাহলে কি করে ইহা সার্বজনীন হতে পারে?
ইসলাম ধর্মে অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব পালন করা নিষেধ, হারাম। অন্য ধর্মের সংস্কৃতি, পোষাক থেকে শুরু করে উপাসনা পর্যন্ত সবই ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ।
পক্ষান্তরে পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল ধর্মের সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। ইহা এমন একটি দিবস, যে দিবস যদি কোন কাফির পালন করে তাহলে সেও এর বদলা পরকালেই পাবেই পাবে। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল আবু লাহাব।
আমরা সবাই কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী আবু লাহাব এর নাম সবাই জানি । দীর্ঘ এক যুগ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেওয়ার কোশেশ করেছিল । যার সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ পাক সুরা লাহাব শরীফ নাযিল করেছিলেন । অথচ সেই আবু লাহাব জাহান্নামে থেকেও প্রতি সোমবার শরিফে বিশেষ ব্যবস্থায় আযাব লাঘব হয়। কিভাবে সম্ভব হল ?
যেটা হাদিস শরিফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে -“হযরত ইমাম সুহাইলি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে , হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন , আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর স্বপ্নে দেখি যে সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার সাথে কিরুপ ব্যবহার করা হয়েছে ?
আবু লাহাব বলল , হে ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনাদের কাছ থাকে বিদায় নেওয়ার পর আমি কোন সুখ শান্তির মুখ দেখিনি । তবে হা প্রতি সোমবার শরিফ যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাগব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি । হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন আবু লাহাবের এ শান্তির কারন হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরিফ সোমবার শরিফ এর সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাদি হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি যখন আবু লাহাব কে জানালেন তখন আবু লাহাব বিলাদত শরিফ এর খুশির সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে তৎক্ষনাত আযাদ করে দেয় “। সুবহানাল্লাহ ।
– ফতহুল বারী, ৯ম খন্ড , ১১৮ পৃষ্ঠা ,
– উমদাতুল কারী ২০ খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা
অনুরুপভাবে বুখারি শরিফ মুল ২য় খন্ড ,৭৬৪ পৃষ্ঠায় হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মারফত উক্ত হাদিস শরিফ বর্ননা করা হয়েছে । আরো উল্লেখ রয়েছে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম খন্ড ৩৩২ পৃষ্ঠা, মাছাবাতা বিস সুন্নাহ১ম/৮৩ পৃষ্ঠা
আবু লাহাব যে খুশি প্রকাশ করেছিল তা নবি -রাসুল হওয়ার কারনে করেনি করেছিল তার ভ্রাতিষ্পুত্র হওয়ার কারনে ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে আবু লাহাব কাফির হয়েও জাহান্নামে বিশেষ ব্যবস্থায় জান্নাতী নিয়ামত পাচ্ছে । তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কোন মুসলমান যদি খুশি প্রকাশ করে তাহলে তার প্রতি আল্লাহ পাক কতটুকু রহম করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।
এমনকি যদি কাফিরেরাও খুশি প্রকাশ করে তারাও আবু লাহাবের মত জাহান্নামে থেকেও জান্নাতি নিয়ামত লাভে ধন্য হবে। অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই একমাত্র সার্বজনীন উৎসব। যে উৎসব পালন সকল ধর্মের লোকের জন্য রয়েছে পরকালে নিশ্চিত পুরষ্কার।
=================================================
এ কথা একান্তই অবান্তর যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দুদের জন্মাষ্টমী, বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা বা খ্রিস্টানদের ক্রিসমাস থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। বরং মুসলমান উনাদের থেকেই অর্থাৎ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন দেখেই এ সমস্ত যবন, ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য জাতিরা তাদের কথিত জন্মোৎসবগুলো চালু করেছে।
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা থেকে নয়
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক মতে, গৌতম বুদ্ধ ৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্ব সালে (দুই হাজার ৫৫৮ বছর আগে) নেপালের লুম্বিনি নামক স্থানে জন্মলাভ করে। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে বৈশাখী পূর্ণিমার অপর নাম দেয়া হয় ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা’।
প্রাপ্ত তথ্য মুতাবিক, বৌদ্ধ পূর্ণিমা প্রায় এক শতাব্দী যাবত বৌদ্ধ ধর্মের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। ১৯৫০ সালে শ্রীলঙ্কাতে বিশ্ব বুদ্ধ সহায়ক সংস্থা (ঃযব ডড়ৎষফ ঋবষষড়ংিযরঢ় ড়ভ ইঁফফযরংঃং) প্রথমবারের মতো বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৪৯ বছর পর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ তথা ইয়াহূদীসংঘ বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালনের ইতিহাস এখনো ১০০ বছর পার করতে পারেনি। তাহলে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি করে বৌদ্ধ পূর্ণিমা হতে উৎপত্তি লাভ করলো! যেখানে ১৯৫০ সালের আগে বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালনেরই ইতিহাস নেই। কাজেই কোন মিথ্যাচারিতা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। সত্য তার স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত হবেই।
=================================================
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে স্বয়ং আখেরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতে সাহাবীদের আদেশ করেছেন।
বিখ্যাত ইমাম ইবনে আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “উসদুল গবা ফি মা’রিফাতিস সাহাবা” যা দারু কুতুব আল ইলমিয়া থেকে প্রকাশিত এর ১ম খন্ড ১২৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,
حَدَّثَنَ حَضْرَتْ مَكْحُوْلْ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِبِلَالٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ لَا يُغَادِرَنَّكَ صِيَامُ يَوْمِ الْاِثْنَيْنِ، فاِنّـِي وُلِدْتُّ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ، وَاُوْحِيَ اِلَيَّ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ، وَهَاجَرْتُ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ
অর্থ: হযরত মাকহুল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্নিত, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, হে বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! আপনি কখনো সোমবার রোজা রাখা পরিত্যাগ করবেন না। কারন আমি সোমবার বিলাদত শরীফ গ্রহন করেছি। এদিন ওহী মুবারক নাযিল হয়, এ দিন হিজরত করি।”
সূতরাং দেখা গেলো স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের দিবসটি পালন করতে বলতেন। আর বিদয়াতিরা বলে ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা নাকি বিদয়াত। নাউঝুবিল্লাহ !!
=================================================
বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর সময় এই আমল এত ব্যাপকভাবে পালন হতো যে বাদশা মালেক মুজাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চাইতেও বেশি রাজকীয়ভাবে সেটাই মনে হয়।
বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত “বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস” বইয়ের ২য় খন্ডে ১৯৭ পৃষ্ঠায় তাকালে আমরা দেখতে পাই,
১) বাংলার মুসলমানগন অত্যান্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে ও ধুমধামের সাথে ঈদে মীলাদ পালন করতো।
২) নবাব এ দিনকে বিশেষ উৎসবের দিনে হিসাবে পালনের ব্যবস্থা করেন।
৩) রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম ১২ দিন পালনের ব্যবস্থা করেন।
৪) এ উপলক্ষে তিনি সম্পূর্ণ মুর্শিদাবাদ শহর ও পর্শ্ববর্তী এলাকা আলোকমালায় সজ্জিত করতেন।
৫) ১ লক্ষ মানুষ শুধু আলোক সজ্জার কাজে নিয়োজিত থাকতেন।
৬) কামান গর্জনের মাধ্যমে সড়ক ও নদীপথ আলোকিত হয়ে উঠতো।
৭) মুসলমান শাষনকর্তাগন ও জনসাধারনগন এই উপমাহাদেশব্যাপী ঈদে মীলাদ পালন করতো।
৮) আওলাদে রসূল ও আলেমদের উপহার দেয়া হতো।
৯) রাজ প্রসাধে রবিউল আউয়াল শরীফ মাসের ১ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত উলামায়ে কিরাম উনাদের মজলিস হতো।
১০) ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাদীছ শরীফ আলোচনা করতেন।
উপরোক্ত ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়, সেসময় এই্ উপমহাদেশে এত সমৃদ্ধশালী ছিলো তার মূল কারন ছিলো এত মর্যাদার সাথে ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সেসময় ১ টাকায় ৮মন চাল পাওয়া যেত। মানুষের কোন অভাব ছিলো না। মানুষজন সুখী ও সমৃদ্ধ ছিলো।
আর আজকে মানুষ এত আযাবে আছে তার কারন কি? কারন হচ্ছে ব্রিটিশরা যাওয়ার সময় ওহাবী মতবাদ রেখে গেছে ঈমান ধ্বংস করার জন্য। তারা এখন পবিত্র এই আমলকে বিদয়াত হারাম ফতোয়া দেয়। নাউযুবিল্লাহ।
মানুষ যদি আবার সেই সমৃদ্ধ অর্জন করতে চায় তাহলে আবারো ঈদে মীলাদ পালন করতে হবে
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন না করার শাস্তি
=================================================
মহান আল্লাহ পাক বলেন- তোমরা আমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর,আমি তোমাদের নিয়ামত বাড়িয়ে দিব। আর মহান আল্লাহ পাক উনার দেওয়া নিয়ামতকে যদি কেউ অস্বীকার করে, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তাকে এমন কঠিন শাস্তি দিবেন,যা বিশ্বজগতে আর কাউকে দিবেন না। ইন্না আ’যাবি লা শাদীদ।
সুতরাং, সমস্ত কুলমাখলুকাতের মধ্যে আল্লাহপাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছেন- আমাদের নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।সুবহানাল্লাহ! তাহলে এই নিয়ামতকে অস্বীকার করার কি পরিণতি আশা করি বুঝতে কারো বাকী থাকার কথা নয়।
=================================================
যখন নিয়ামত নাযিল হয় তখন কেউ যদি গাফিল থাকে তাহলে কঠিন পরিণতি হয় এর উদাহরণ হচ্ছে-
১. ইহুদিরা। তারা হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করেছিল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য। বনু কায়নুকা, বনু নাযির ইত্যাদি ইহুদি গোত্রসমূহ হাজার বছর ধরে অপেক্ষমান ছিল আখেরী নবী উনার জন্য। যখন তিনি তাশরিফ মুবারক নিলেন তখন তারা নফসানিয়াতের কাছে হেরে গেল। তারা ভেবেছিল তিনি বনী ইসরাইল এর মধ্যে আগমন করবেন কিনতু তিনি বনী ইসমাঈলে হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে আগমন করার কারণে তারা বিদ্বেষী হয়ে উঠল। তারা নফসানিয়াতের কাছে হেরে গেল। চির লা’নতগ্রস্থ হয়ে গেল।
২. উদাহরণ মক্কাবাসী মুশরিকরা। তারা প্রচলিত রীতিনীতি ছাড়তে পারলনা। তারাও চির লা’নতগ্রস্থ হযে গেল।
৩. আরেকটি উদাহরণ হল কুফাবাসী। আশুরার দিনে তারা ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার খিদমত মুবারকে সাড়া না দিয়ে তারা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিল। তারাও চির লা’নতগ্রস্থ হযে গেল।
৪. আর একটি উদাহরণ হচ্ছে- সা’য়লাবা ইবনে হাতিফ। তার চরম পরিণতি। তার অন্তরে মুনাফিকি তৈরী করে দেয়া হয়েছে ইলা ইয়াওমিয়াল কাওনাহু। কেউ তার যাকাত গ্রহণ করেনি। কেন, যখন তাকে শুকরিয়া আদায় করতে বলা হলো তখন সে শুকরিয়া আদায় করেনি।
যারা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে অবহেলা করবে, সাধারণভাবে নিবে তাদেরও ঠিক একই পরিণতি হবে।
=================================================
আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে, হাফিযে হাদীছ আবুল ফয়েয হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
لَازَالَ اَهْلُ الْـحَرَمَيْنِ الشَّرِيْفَيْنِ وَالْـمِصْرِ وَالْيَمَنِ وَالشَّامِ وَسَائِرِ بِلَادِ الْعَرَبِ مِنَ الْـمَشْرِقِ وَالْـمَغْرِبِ يَـحْتَفِلُوْنَ بِـمَجْلِسِ مَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَفْرَحُوْنَ بِقُدُوْمِ هِلَالِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَيَغْتَسِلُوْنَ وَيَلْبَسُوْنَ الثّيَابَ الْفَاخِرَةَ وَيَتَزَيّـِنُوْنَ بِاَنْوَاعِ الزّيْنَةِ وَيَتَطَيّـِبُوْنَ وَيَكْتَحِلُوْنَ وَيَأْتُوْنَ بِالسُّرُوْرِ فِىْ هٰذِهِ الْاَيَّامِ وَيَبْذُلُوْنَ عَلَى النَّاسِ بِـمَا كَانَ عِنْدَهُمْ مِنَ الْـمَضْرُوْبِ وَالْاَجْنَاسِ وَيَهْتَمُّوْنَ اِهْتِمَامًا بَلِيْغًا عَلَى السّمَاعِ وَالْقِرَاءَةِ لِـمَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَنَالُوْنَ بِذَالِكَ اَجْرًا جَزِيْلًا وَفَوْزًا عَظِيْمًا
অর্থ : “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেছেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান, এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন। উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করে যে নিরাপত্তা ও স্বস্তি, জীবিকার মানোন্নয়ন, শিশু ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং শহরের শান্তি ও উনাদের সাফল্য অর্জন করেছেন তা প্রকাশ করতেন।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান লি শেখ ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি- ৯ম খ-, পৃষ্ঠা ৫৬; মীলাদুল উরুস- উর্দু “বয়ান-ই-মিলাদুন নবী”, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫, লাহোর; দুররুল মুনাজ্জাম, পৃষ্ঠা ১০০-১০১; মীলাদুন নবী, পৃষ্ঠা ৫৮)
কেউ এড়িয়ে যাবেন না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মক্কা শরীফ- মদীনা শরীফ, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া, এক কথায় সমগ্র পৃথিবীতে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হয়েছে। সকল আলেম উলামা, ইমাম, মুহাদ্দিস গন তা পলন করতেন। দেশব্যাপী জাতীয়ভাবে পালন করতেন। যদি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন শরীয়তে নাই থেকে থাকে তবে,
১) বিগত নয়শ বছরে কোন কোন আলেম নিষিদ্ধ বলছেন?
২) নিষিদ্ধ হওয়ার কারনে কয়টা বই লেখা হয়েছে?
৩) ৯০০ বছরে কেউ কি শরীয়ত বুঝতেন না?
৪) তবে কি পৃথিবীব্যাপী এতকাল সবাই হারাম করে আসছে, আর নব্য বিরোধীতাকারীরা শুক্রে শুক্রে সাত দিন ধরে কি হালাল জারি করতে আসছে?
৫) বিরোধীতা শুরু হলো কত হিজরী থেকে?
শেষ উত্তরটা আমিই দেই, বিরোধীতা শুরু হয় খুব হলেও ৩০/৪০ বছর ধরে। ৯০০ বছর ধরে জাতীয়ভাবে একটি চলে আসা আমল কি করে ৩০/৪০ বছর আগের বিরোধীতা দ্বারা বাতিল হতে পারে?
মূলত যারা বিরোধীতা করে তারাই বিদয়াতি। কারন পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির শুরু থেকেই চলে আসছে। আর বিরোধীতার উৎপত্তি হচ্ছে ৩০/৪০ বছর ধরে। তাহলে বিদয়াত কোনটা? যারা বিরোধীতা করে তারাই নব্য, তারাই বিদয়াতি। এদের কথা শোনা যাবে না।
=================================================
পবিত্র মীলাদ শরীফ এবং ক্বিয়াম শরীফ এবং ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নত এটা কুরআন শরীফ,হাদীস শরীফ, ইমাম মুস্তাহিদ উনাদের দলীল দ্বারা অকাট্য ভাবে প্রমানিত হয়েছে । তারপরও কিছু ধর্মব্যবসায়ী ভন্ড মুনাফিক যেমন দেওবন্দী/খারেজী/তাবলীগি/জামাতি/সালাফি ইত্যাদি বাতিল ফির্কা মীলাদ শরীফ উনাকে বিদয়াত বলে থাকে।
নাউযুবিল্লাহ !
মীলাদ-ক্বিয়াম বিরোধীরা বলে থাকে “মীলাদ-ক্বিয়াম”বিদয়াত তাদের এ ফতওয়া সম্পূর্ণ ভুল, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর যা শরীয়ত বিরোধী এবং কুফরীর অন্তর্ভূক্ত ।
মূলতঃ তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, তারা বিদয়াত সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ ও জাহেল । কেননা বিদয়াত সম্পর্কে যদি তাদের সামান্যতম ইলমও থাকতো, তবে তারা কখনোই মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ কে বিদয়াত বলে ফতওয়া দিতনা। তাই তাদের সহীহ্ সমঝের জন্য বিদয়াত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা হলো- মূলতঃ বিদয়াত সম্পর্কে বুঝতে হলে, আমাদেরকে প্রথমেই জানতে হবে বিদয়াতের লোগাতী ও শরয়ী অর্থ । অতপরঃ জানতে হবে বিদয়াত কত প্রকার ও কি কি? কোনটি গ্রহণযোগ্য ও কোনটি পরিত্যাজ্য |
বিদয়াতের লোগাতী অর্থ–>>
বিদয়াতের লোগাতী অর্থ হচ্ছে-
(১) “বিদয়াত হলো-দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া।” দলীল-লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিঃ পৃঃ৩, বায়ানুল লিসান, পৃঃ১১৫
(২) “বিদয়াতহলো- নমুনা ব্যতীত সৃষ্ট জিনিস।” (মিছবাহুল লোগাত, পৃঃ ২৭)
(৩) “বিদয়াত মূলতঃ ওটাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে ।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিঃ পৃঃ২১৯,মিরকাত শরীফ)
(৪) “জেনেরাখ, হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে উদ্ভব ঘটেছে এমন প্রত্যেক কাজই বিদয়াত।”
(আশয়াতুল লোমআত)
(৫) “বিদয়াতহলো- নতুনকথা, নতুন প্রথা ।”(আরবী ফিরোজুল লোগাত পৃঃ৫৩)
(৬) “বিদয়াত ওটাকে বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয় ।” (লোগাত আল মনজিদ পৃঃ৭৬)
(৭) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা।” (লোগাতে সাঈদী পৃঃ৯৬)
সুতরাং বিদয়াত শব্দের লোগাতী বা আভিধানিক মূল অর্থ হলো- নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি। পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলনা ।
বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ—>>
(১) বিদয়াতের শরীয়ী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,-
“প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা ।”
(ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬)
(২) আল্লামা ইসমাইল নাবহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, (শায়খুল ইসলাম) ইজদুদ্দীন ইবনে সালাম বলেন, —
“বিদয়াত এমন একটি কাজ, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় সম্পন্ন হয়নি।” (জাওয়াহিরুল বিহার পৃঃ২৮০)
(৩) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,-
“শরীয়ত মুতাবেক বিদয়াত হচ্ছে- এমনসব নব আবিস্কৃত জিনিসের নাম, যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা।”(শরহে মুসলিম লিন নববী)
(৪) হাফেজ ইবনে রজব রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,-
“বিদয়াত ঐ বিষয়কেই বলা হয়, যার ভিত্তি শরীয়তে নেই । সুতরাং শরীয়তে যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে, শরীয়ত মুতাবেক তা বিদয়াত নয়, যদিও আভিধানিক অর্থে বিদয়াত বলা হয় ।”
(জামিউল উলূম ওয়াল হাকাম পৃঃ১৯৩, ইরশাদুল উনূদ পৃঃ১৬১)
(৫) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, –
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ হচ্ছে এমন একটি নতুন কর্ম, যা হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছিলনা ।’” (তাহযীবুল আসমা ওয়াল লোগাত)
শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদয়াত শব্দের মূল অর্থ হলো- ঐ নতুন উদ্ভব বিষয়, যার ভিত্তি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই ।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, বিদয়াত হলো- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত প্রত্যেক নতুন বিষয় । এখন তা ‘খায়রুল কুরুনে’ ও হতে পারে অথবা তার পরেও হতে পারে।
বিদয়াতের ব্যাখ্যা—>>>
উপরোক্ত লোগাতী ও শরীয়তী অর্থের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত হলো হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত প্রত্যেক নতুন বিষয় । অতএব, নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ের কোনটি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য ও কোনটি পরিত্যাজ্য, তা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
তাই এ বিদয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ শরীফের কিতাব মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরীফে উল্লেখ করেন,-
قال الشافعى رحمة الله مااحدث لمايخالف الكتاب اوالسنة او الاثر او الاجماع فهو ضلالة- وما احدث لمالا يخالف شيأكما ذكر فليس بمذموم– (مرقات شرح مشكوة ج ১ صفه ১৮৯)
অর্থ: “ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে নব উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, আসার (অর্থাৎ সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের আমল বা কাওল) অথবা ইজমার বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত, সেটাই গোমরাহী ও নিকৃষ্ট । আর যে নব উদ্ভাবিত কাজ উল্লেখিত কোনটির বিপরীত বা বিরুদ্ধ নয়, তা মন্দ বা নাজায়েয নয় ।” (মেরকাত শরহে মেশকাত, ১ম জিঃ পৃঃ১৮৯)
ইমাম শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-
“প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিই যে নিকৃষ্ট বা নিষিদ্ধ হবে, তার কোন যুক্তি নেই ।” (আরওয়ারে কুদসিয়্যাহ্)
অথচ আজকাল কিছু জাহিল লোক সকল বিদয়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গোমরাহী বলে থাকে এবং দলীল হিসাবে তারা নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ খানা পেশ করে থাকে । যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.
অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াত ই গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহ লোকই জাহান্নামে যাবে।”
অথচ এই হাদীস শরীফ উনার ব্যাখ্যা সম্পর্কে তারা নেহায়েতই অজ্ঞ । এ হাদীস শরীফ উনার ব্যাখ্যা “মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরীফে” উল্লেখ করা হয়, –
“সাহেবে মেরকাত হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আল আজহার” নামক কিতাবে كل بدعة ضلالة
হাদীস শরীফের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে, “সকল বিদয়াতে সাইয়্যিয়াই গোমরাহী ।”
আর তাই শায়খ ইব্রাহীম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,-
وعدم النقل عن النبى صلى الله عليه وسلم وعن الصحابة والتابعين رضى الله عنهم وكونه بدعة لا ينافى كونه حسنا. (كبيرى شرح منية المصلى صفه ২৫১)
অর্থ: “নতুন উদ্ভাবিত কোন কাজ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম গণের নিকট হতে প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদয়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে, তা মন্দ বা গোমরাহী একথা যুক্তিযুক্ত নয়, বরং তা ভালও হতে পারে ।”
(কবীরী শরহে মুনিয়াতুল মুসল্লী পৃঃ২৫১)
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও উনার এহইয়াউল উলুম কিতাবের ২য় খন্ড ২৬ পৃষ্ঠায় অনুরূপ মন্তব্য করেন।
কেউ কেউ আবার হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম ওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে বলেন যে, সকল বিদয়াতই নাকি পরিত্যাজ্য । পবিত্র হাদীস শরীফ টি হল, –
من احدث فى امرنا هذا هذا ماليس منه فهورد.
অর্থ-“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, সেটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য ।”
এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মাওলানা শাব্বীর আহমদ ওসমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
قوله ماليس منه يدل على ان الا مور التى لها اصل من الكتاب او من سنة رسول الله صلى الله عليه وسلم او من الخلفاء الراشدين اوتعا هل عامة اسلف او الاجتها دالمعتبر بشروط، المستند الى النصوص لا تسمى يدعة شرعية لاى (يدعة سية) فان هذه الا صول كلها من الدين– (فتح الملهم شرح المسلم ج ২ صفه ৪০৭)
অর্থ: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উক্ত “ماليس منه হাদীস শরীফের উক্ত শব্দ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, যে সকল দ্বীনী কাজের সনদ কুরআন শরীফ অথবা হাদীস শরীফ বা খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বীয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সুন্নত অথবা বুযুর্গানে দ্বীনের পারস্পরিক কার্যকলাপ অথবা গ্রহণযোগ্য শর্তাদীসহ শরীয়তের স্পষ্ট দলীলসমূহের ভিত্তিতে যে ইজতিহাদ করা হয়েছে, তার মধ্যে পাওয়া যায়, তবে সেগুলোকে নিকৃষ্ট বিদয়াত (বিদয়াতে সাইয়্যিায়াহ্) বলা যাবেনা । কারণ এ ভিত্তিসমূহ দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত ।”
(ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম, ২য় জিঃ পৃঃ৪০৭)
অতএব, যে সকল কাজ উল্লেখিত ভিত্তিসমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত, তা দ্বীন অর্থাৎ শরীয়তের অন্তর্ভূক্ত বলেই বিবেচিত হবে ।
অনুরূপ মোযাহেরে হক্ব ১ম খন্ড ৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হাদীছ শরীফে ,-
– উদ্দেশ্য এই যে, যে সকল কাজ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের বিরুদ্ধ নয়, সেগুলোকে বিদয়াতের গন্ডি বহির্ভূত করে রাখা । কারণ এ সকল কাজ নতুন উদ্ভুত হলেও গোমরাহী বা নিকৃষ্ট নয় ।
উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত মাত্রই পরিত্যাজ্য নয় এবং সকল বিদয়াতই গোমরাহী নয় । যদি তাই হতো, তবে তারাবীহ্ নামাজ জামায়েতে পড়া জায়েয হতো না। কেননা এটাকেও বিদয়াত বলা হয়েছে, অর্থাৎ উত্তম বিদয়াত ।
এখন মূল বিষয় হলো- বিদয়াত কত প্রকার ও কি কি এবং তার মধ্যে কোনটি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য আর কোনটি শরীয়তে পরিত্যাজ্য, তা নির্ণয় করা ।
বিদয়াতের শ্রেণী বিভাগ–>>
ইমাম, মুজতাহিদগণ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিদয়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন-
১| বিদয়াতে ই’তেক্বাদী, অর্থাৎ আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদয়াত ।
২| বিদয়াতে আ’মালী, অর্থাৎ কর্মগত বিদয়াত।
(১) বিদয়াতে ই’তেক্বাদী বা আক্বীদা গত বিদয়াত হলো–>>
যে সমস্ত আক্বীদা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মূলনীতি বহির্ভূত, মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদয়াতের সবটাই হারামের পর্যায়ভূক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য । যেমন- খারেজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া, ওহাবী,তাবলীগি ইত্যাদি বাতিল ফিরকার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরকার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী ।
(২) বিদয়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদয়াত->>
বিদয়াতে আ’মালী প্রথমতঃদু’ভাগে বিভক্ত-
(ক) বিদয়াতে হাসানা,
(খ) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ।
(ক) বিদয়াতে হাসানা আবার তিন প্রকার-
(১) বিদয়াতে ওয়াজিব,
(২) বিদয়াতে মোস্তাহাব ও
(৩) বিদয়াতে মোবাহ্ ।
আর এ বিদয়াতে হাসানাহ্ সম্পর্কেই হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,-
من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجرمن عمل بها من بعده. (رواة مسلم)
অর্থ: “যে কেউ দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে সাওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার সাওয়াবও সে পাবে ।” (মুসলিম শরীফ মিশকাত শরীফ)
উল্লেখিত হাদীস শরীফ উনার দৃষ্টিতে বিদয়াতে হাসানাকে বিদয়াত লিদদ্বীন বলা হয় । কেউ কেউ আবার উক্ত হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে বিদয়াতে হাসানাকে ‘বিদয়াতে লোগবী’ও বলে থাকেন। অর্থাৎ যদিও শাব্দিক অর্থে বিদয়াত বলা হয়েছে, মূলতঃ এগুলো সুন্নাতেরই অন্তর্ভূক্ত । কারণ হাদীছ শরীফে (سنة) সুন্নাত শব্দ উল্লেখ রয়েছে।
(খ) আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ দু’প্রকার-
(১) বিদয়াতে হারাম,
(২) বিদয়াতে মাকরূহ্
এই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ সম্পর্কেই হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,-
من احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهورد. (مشكوة شريف)
অর্থ-“যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন বিষয়ের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য ।” (মিশকাত শরীফ)
আর এ বিদয়াত সম্পর্কেই ইরশাদ হয়েছে,
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار
অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াত ই গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহ লোকই জাহান্নামে যাবে ।
উল্লেখিত হাদীস শরীফ উনার দৃষ্টিতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বিদয়াত ফিদদ্বীন বলা হয় । আর এ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ কেই ‘শরয়ী’বিদয়াত বলা হয়।
মূলকথা হলো- যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর নতুন উদ্ভব হয় এবং তা দ্বীনের সাহায্য করে থাকে অথবা সাহায্যকারী না হলেও দ্বীনের কোন ক্ষতি করে না, সেটাই বিদয়াত লিদদ্বীন বা লোগবী বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে হাসানা। আর যে নতুন বিষয় উদ্ভব হওয়ার কারণে দ্বীনের কিছুমাত্র ও ক্ষতি হয়, তবে সেটাই হবে বিদয়াতে ফিদদ্বীন বা শরয়ী বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ।
উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত বলতেই পরিত্যাজ্য নয় । অর্থাৎ যেই নতুন উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের বিপরীত তা অবশ্যই বর্জনীয়। আর সেটাই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ যা হারামের অন্তর্ভূক্ত, যদিও তা “কুরুনে সালাসার”মধ্যে উদ্ভাবিত হোক না কেন। আর যেই নতুন উদ্ভাবিত কাজ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অনুকুলে তা অবশ্যই জায়েয এবং উত্তম, আর এটাকেই বিদয়াতে হাসানাহ্ বলা হয় । যদিও তা ‘কুরুনে সালাসার’ পরে উদ্ভাবিত হয়।
বিদয়াতে হাসানা ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ-এর বিশ্লেষণ—>>>
নিম্নে বিদয়াতে হাসানা ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়ার উদাহরণভিত্তিক ব্যাখ্যা দেয়া হলো-
১| বিদয়াতে ওয়াজিবঃ- যা পালন না করলে ইসলামের ক্ষতি বা সংকট হবে, যেমন- কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ কাগজে কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা, কুরআন শরীফের জের, জবর, পেশ দেওয়া, মাদ্রাসা নির্মাণ করা, নহু সরফ, উসুল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিতাব লেখা ও পড়া ।
২| বিদয়াতে মোস্তাহাবঃ- যা শরীয়তে নিষেধ নেই এবং তা সমস্ত মুসলমানগণ ভাল মনে করে সাওয়াবের নিয়তে করে থাকেন, যেমন- তারাবীহ্ নামাজ জামায়াতে পড়া, মুসাফিরখানা, ইবাদতখানা, লঙ্গরখানা, ইত্যাদি জনহিতকর কাজ করা। খতিবের সম্মুখে আজান দেওয়া, রমাদ্বান শরীফে বিতর নামাজ জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি | এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,-
ما راه الناس حسنا فهو عندا لله حسنا- لا تجتمع امتى على الضلالة. (مشكوة)
“লোকে যা ভাল মনে করে তা আল্লাহ্ পাক-এর নিকটও ভাল। আমার উম্মতগণ কখনো গোমরাহীর মধ্যে একমত হবে না।”
(মেশকাত শরীফ)
৩| বিদয়াতে মোবাহ –ঐ সমস্ত নতুন কাজ যা শরীয়তে নিষেধ নেই, যেমন- পোলাও, বিরিয়ানী, বুট, মুড়ী, পিয়াঁজো ইত্যাদি খাদ্য খাওয়া, ট্রেন, মোটরগাড়ী, প্লেন ইত্যাদি যান-বাহনে চড়া ।
৪| বিদয়াতে হারামঃ- যা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এর পরিপন্থি বা ওয়াজিব আমলগুলি ধ্বংসের কারণ। যেমন- ইহুদী, নাসারা ও ভন্ড ফকিরদের কু-প্রথা বা আক্বীদাসমূহ ।
৫| বিদয়াতে মাকরূহ- যার দ্বারা কোন সুন্নত কাজ বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন- বিধর্মীদের পোশাক পরিধান করা, টাই পরিধান করা এবং বিধর্মীদের অনুসরণ করা ইত্যাদী । কেননা হাদীস শরীফ উনার মদ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- ما احدث قوم بدعة الارفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خير من احداث بدعة. (رواه احمد)
অর্থ: “যখনই কোন ক্বাওম একটি বিদয়াতের উদ্ভব ঘটিয়েছে, তখনই একটি সুন্নত লোপ পেয়েছে । সুতরাং একটি সুন্নতের আমল করা (যদিও ওটা ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হয়) একটি বিদয়াত উদ্ভব করা হতে উত্তম (যদিও ওটা বিদয়াতে হাসানা হয়)।” (মসনদে আহমদ)
বিদয়াতের অনুরূপ ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা নিন্মোক্ত কিতাবসমূহেও রয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফের শরাহ ফাতহুল মুবীন, হাশিয়ায়ে মেশকাত, আশআতুল লোময়াত, ফতওয়ায়ে শামী, এশবাউল কালাম, আসমা ওয়াল লোগাত, হুসনুল মাকাছেদ ইত্যাদি আরো আনেক কিতাব সমূহে।
কেউ কেউ আবার বলে থাকে, খাইরুল কুরুনের পর আবিস্কৃত প্রত্যেক নতুন জিনিসই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ । অথচ এটা মোটেও শুদ্ধ নয় । কেননা যদি তাই হতো, তবে আমাদের সামাজে প্রচলিত এমন অনেক নতুন বিষয় রয়েছে, যা অবশ্যই পরিত্যাগ করা জরুরী হয়ে পড়তো । যেমন-
(ক) বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসায় ইলম শিক্ষা দেওয়া হয়, সেই পদ্ধতি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে “খাইরুল কুরুন”পর্যন্ত কারো সময় ই ছিলনা।
(খ) বর্তমানে আমরা যে নাহু সরফ শিক্ষা করে থাকি, তাও “খাইরুল কুরুনে” ছিল না ।
(গ) বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে তারাবীহর নামাজ পড়ে থাকি, এ পদ্ধতিও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা ।
(ঘ) বর্তমানে আমরা মসজিদে জামায়াতের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে থাকি, তাও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালিন হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা ।
(ঙ) বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে জুময়ার সানী আজান দিয়ে থাকি, এ পদ্ধতি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা ।
(চ) বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে ওয়াজ মাহফিল করে থাকি ঐরূপ পদ্ধতিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াজ মাহফিল করেননি ।
(ছ) বর্তমানে আমরা যে পোলাও, বিরিয়ারী কোর্মা, বুট, মুড়ী, পিয়াজো খেয়ে থাকি, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাননি ।
(জ) বর্তমানে আমরা যে সকল যান-বাহনে চড়ে থাকি যেমন- মোটরগাড়ী, ট্রেন, প্লেন, রকেট, রিক্সা জাহাজ ইত্যাদি এবং পবিত্র হজ্বব্রত পালন করি ও বিদেশ ভ্রমনে যাই, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা, তিনি ঐগুলোতে কখনো চড়েননি ।
(ঝ) বর্তমানে মানুষ যে সকল খাট-পালঙ্ক, সোকেস-আলমারী ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করেননি ।
(ঞ) বর্তমানে বিয়ে-শাদীতে যে কাবিননামা করা হয়, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা ।
(ত) বর্তমানে যে সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি মানুষ ব্যবহার করছে, যেমন- ফ্যান, ঘড়ি, চশমা, মাইক, কম্টিউটার ইত্যাদি, এগুলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।
(থ) বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসার জন্য চাঁদা আদায় করা হয়, যেমন সদকা, ফেৎরা, যাকাত, কুরবানীর চামড়া, মান্নতের টাকা ইত্যাদি এবং যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসা তৈরী করা হয়, তা যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা । তদ্রুপ ‘খায়রুল কুরুনেও’ ছিলনা।
এমনিভাবে আরো অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা “খায়রুল কুরুনে” ছিলনা কিন্তু আমরা তা দায়েমী ভবে করছি। আপনারা কি এগুলো ব্যবহার হতে বিরত থাকেন আছেন?
সুতরাং মূলকথা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর নতুন উদ্ভব হয় এবং তা দ্বীনের সাহায্য করে থাকে অথবা সাহায্যকারী না হলেও দ্বীনের কোন ক্ষতি করে না, সেটাই বিদয়াতে হাসানা । আর যে নতুন বিষয় উদ্ভব হওয়ার কারণে দ্বীনের কিছুমাত্রও ক্ষতি হয়, তবে সেটাই হবে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ।
এখন যেসকল বাতিল ফির্কা মীলাদ শরীফ উনার বিরোধিতা করো এখন এই পোস্ট পড়ে তাওবা করে বিরোধিতা ত্যাগ করো। অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদের হাতছানি দিচ্ছে……
=================================================
বর্তমানে যারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারাই স্বীকার করবে তাদের একমাত্র পছন্দনীয় ইমাম হচ্ছে ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদী। এরা ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে শুরু করে সকল ইমাম মুস্তাহিদ আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগন উনাদের বিরোধীতা করলেও ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদীর কোন বিরোধীতা করে না। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে তাদের কোন ফতোয়া যদি নিজেদের মন মত না হয় তবে সেটা সযত্নে গোপন করে রাখে। কিন্তু সত্য কি গোপন রাখা যায়?
ওহাবীদের গুরু ইবনে তাইমিয়া (১২৬৩খৃঃ –১৩২৮খৃঃ) তার “ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম” কিতাবে লিখেছে,
“যদি মিলাদ মাহফিল নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়ে থাকে তবে মহান আল্লাহ পাক এ মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে সওয়াব বা প্রতিদান দেবেন।” (দলীলঃ ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৩)।
একই কিতাবের অন্যত্র সে লিখেছে, “বরং ঐ দিনে (রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মদিনে) পরিপূর্ণরূপে অনুষ্ঠান করা এবং এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, উত্তম নিয়ত এবং হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি মুহাব্বত প্রদর্শন বড় প্রতিদানের কারন হবে।” (দলীলঃ ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৫)।
ওহাবীদের নেতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী (১৭০৩খৃঃ-১৭৯২খৃঃ) তার কিতাব “মুখতাসার সিরাতে রাসুল” এ লিখেছে, “কট্টর কাফির আবু লাহাব রাসুলে কারিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জন্মের সুসংবাদ শুনে মনের খুশীতে নিজ দাসী সুয়ায়বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা কে মুক্তি দেয়ার কারনে সে প্রতি সোমবার (নবীজীর বেলাদত শরীফের দিন) দোযখে থেকেও শান্তিদায়ক পানীয় পেয়ে থাকে।
উল্লেখ্য , আব্দুল ওহাব নজদী আবু লাহাবের শাস্তি হ্রাসের বিষয় উল্লেখ করে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের গুরুত্বের কথা স্বীকার করে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, সে শামসুদ্দীন নাসের দামিস্কির কিতাব ‘মওরদুস সাদী ফি মওলদিল হাদী’ থেকে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে এবং সেখানে দামিস্কি রহমতুল্লাহি আলাইহি এর রচিত শেরটি ও হুবহু উদ্ধৃত করেছে।
বিরোধিতাকারীদের কাছে জানতে চাই , আপনারা কুরআন শরীফের দলীল মানেন না…তাফসিরের দলীল মানেন না … হাদীস শরীফ এর দলীল মানেন না…ইমাম মুস্তাহিদের ঐক্যমত্যের দলীল মানেন না…. মানবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারন অস্বীকার কারী দুনিয়াতে সব সময়ই ছিলো, কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।তাই বলে কি এখন নিজেদের মুরুব্বীদের ফতোয়াও মানবেন না ? তাহলে মানবেন কাকে ?
=================================================
প্রধানমন্ত্রীরা নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে ।
_মুফতী ফজলুল হক আমীনি।স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ইসলামী ঐক্যজোটোর চেয়ারম্যান মুফতী ফজলুল হক আমীনি এমপি তার সাথে সাক্ষাত করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে ।
পরে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে লালবাগ মাদ্রাসার এক দুয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোনাজাতের প্রক্কালে মুফতী আমীনি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ারা সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ পরিচালনায় বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে ।
এদিকে প্রাপ্ত খবরে আরো জানা যায় ম্যাডামের জন্মদিন উপলক্ষে আমীনি সাহেব গরু জবাই করে ভূরি ভোজনের ব্যবস্থও করেছিলেন। অনেককেই আপ্যায়নও করেছেন।”
তথ্যসূত্র : দৈনিক ইনকিলাব, ১৬ই আগষ্ট,২০০৬ ।
কৌতুহলী মনে উদিত দেওবন্দী কওমীদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন-
১. হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা আপনাদের কাছে বিদয়াত, কিন্তু খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করা কোন দলীলে জায়িয ছিলো ?
২. নারী নেতৃত্ব হারাম, কিন্তু কোন দলীলে নারী নেতৃত্বেরা জন্য দোয়া করা এবং প্রসংসা করা বৈধ হলো ?
৩. সম্মিলিত মুনাজাত আপনাদের ভাষায় বিদয়াত, কোন দলীলের ভিত্তিতে খালেদার জন্যে আমীনি সম্মিলিত মুনাজাত করলো ?
৪. সুন্নীরা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে তাবারুক করলে সেটা অপচয় হয়, কিন্তু খালেদার জন্মদিনে কোন দলীলে গরু জবাই করে ভুরিভোজন করা হলো ?
৫. বেপর্দা হওয়া হারাম, কোন দলীলের ভিত্তিতে আমীনি মুফতী হয়ে মহিলা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলো ??
আল্লাহ পাক উনার কসম !! যদি ঈমানদার দাবি করে থাকেন নিজেকে তাহলে জবাব দিন !

৪৭)দেওবন্দী মুফতে শফীর কিতাবে নবীজীর বিলাদত শরীফের তারিখ ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলে দেওবন্দী ওহাবীরা অপপ্রচার চালায় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের তারিখ ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ নয়। তারা তাদের পক্ষের দলীল দেয়ার জন্য মিশরের নাস্তিক মাহমুদ পাশার দলীল দেয়।
অথচ তাদের মুরুব্বীরা এই প্রসঙ্গে কি বলেছে দেখে নেন-
“সারকথা যে বছর আসহাবে ফীল কা’বাআক্রমনকরে, সেই বছর রবিউল আউয়াল মাসে ১২ তারিখ রোজ সোমবার দিনটি ছিলো পৃথীবির জীবনে এক অনণ্য সাধারন দিবস। যে দিন নিখিল ভুবন সৃষ্টির মূল লক্ষ্য , দিবস রজনী পরিবর্তনের মূখ্য উদ্দেশ্য , হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও বণী আদমের গৌরব, হযরত নূহ আলাইহিস সালামের কিস্তির নিরাপত্তার নিগূঢ় তাৎপর্য , হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের প্রর্থনা ও হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর ভবিষ্যতবানী সমূহের উদৃষ্ট পুরুষ অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীর বুকে আগমন করেন।” (দলীল: সীরোতে খতিমুল আম্বিয়া, লেখক- মুফতে শফী পাকিস্তান, পৃষ্ঠা ৪, প্রকাশনা – এমদাদীয়া লাইব্রেরি)

উক্ত কিতাবে একটা টীকা সংযোজন করা হয়েছে, “সর্বসম্মত মতানুনারে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার হয়েছিলো। কিন্তু তারিখ নির্ধরনের জন্য ৪ টি রেওয়ায়েত প্রসিদ্ধ রহিয়াছে। যথা- দ্বিতীয়, অষ্টম, দশম, দ্বদশ। হাফিজ মোগলতাঈ (রহ) ২য় তারিখের রেওয়ায়েত গ্রহন করিয়া অন্যান্য রেওয়ায়েতকে দুর্বল বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত হচ্ছে দ্বাদশ তারিখের রেওয়ায়েত। এমনকি ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহার উপর ইজমার দাবী বর্ণনা করেছেন। ইহাকে কামেলে ইবনে আছীরে গ্রহন করা হয়েছে।
মাহমূদ পাশা মিশরী যাহা গননার মাধ্যমে ৯ তারিখকে গ্রহন করেছেন তাহা জমহুরের বিরোধী সনদবিহীন উক্তি। চন্দ্রোদয়ের বিভিন্ন হওয়ার কারনে গননার উপর এমন কোন নির্ভযোগ্যতা জন্ম হয় না যে ইহার উপর ভিত্তি করিয়া জমহুরের বিরুদ্ধাচারণ করা হইবে।”

মজার বিষয় এই কিতাবকে বাংলাদেশের দেওবন্দীদের অন্যতম গুরু বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক ব্যাপক প্রশংসা করেছে। সে আশরাফ আলী থানবীর রেফারেন্সে বলেছে, ইহাকে বিভিন্ন আনজুমান ও পাঠ্যপুস্তকের তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছিলো।
এখন আপনারাই বলুন দেওবন্দী মুরুব্বীদের মতামতের বিরোধীতা করে বর্তমান দেওবন্দীরা কেন ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফের বিরোধীতা করে??
=================================================
ওহাবীরা বলে সর্বপ্রথম আরবলের বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিই নাকি ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চালু করেছেন। কতটা হাস্যকর তাদের চিন্তা ভাবনা, ভাবলেই হাসি আসে।
বিষয়টা একটু ভেঙ্গেই বলি। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৯৭৪ সালে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন ও ছুটি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । এখন ১০০ বছর পর কেউ যদি বলে বঙ্গবন্ধুই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের প্রবক্তা, তাহলে বিষয়টা কেমন হাস্যকর হবে?
মূল বিষয় হচ্ছে যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে মুসলমানরা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন চলে আসছিলো, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় ভাবে পালনের একটা বন্দোবস্ত করে। তার মানে বঙ্গবন্ধু তো এটাই সূচনা করেন নাই। বরং সূচিত হওয়া একটা অনুষ্ঠানকে সকলের পালনের জন্য ব্যবস্থা করেছেন মাত্র।
তদ্রুপ আরবলের বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রাষ্ট্রীয় ভাবে পালনের একটা ব্যবস্থা করেন। সকল মানুষ যাতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করতে পারে তার ব্যবস্থা করেন। তার মানে এই নয় যে তিনি মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল প্রথম আবিষ্কার করছেন। নাউযুবিল্লাহ!
বরং প্রথম থেকে অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম গণ উনাদের সময় থেকে ঘরে ঘরে, বাড়িতে বাড়িতে চলে আসা মাহফিলকে বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের জাঁকজমকপূর্ণ ব্যবস্থা করে দেন।
এ বিষয়ে কিতাবে বর্ণিত আছে, সর্বজনমান্য ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী হযরত ইবনে খাল্লিকান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ‘তারীখে ইবনে খাল্লিক্বান’ কিতাবে লিখেন,
الحافظ ابو الخطاب كان مواعيان العلماء ومشاهر الفضلاء قدم المغربفدخل الشام والعراق احتاز باربل سنة اربع ست مائة فوجد ملكهاالمظفر الدين زين الدين يعتنى بمولد النبى صلى الله عليه وسلم فعملله كتاب التنوير
অর্থ: “হাফিযে হাদীছ আল্লামা হযরত আবুল খত্তাব ইবনে দাহইয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি শীর্ষ স্থানীয় উলামা কিরামগণ উনাদের অন্যতম। তিনি ৬০৪ হিজরী সনে যখন মাগরীব থেকে সফর করে শাম দেশের “আরবাল” শহরে পৌঁছেন, তখন তথাকার দ্বীনদার পরহেযগার বাদশাহ হযরত মালিক মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাদশাহ কে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও জাঁকজমকের সাথে “পবিত্র মীলাদ শরীফ” মাহফিলের ব্যবস্থা করতে দেখে তিনি “ পবিত্র মীলাদ শরীফ” উনার উপর “আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর”নামক একখানা মহামূল্যবান কিতাব রচনা করেন।”
সূতরাং মূর্খতা সুলভ চিন্তা পরিহার করে প্র্যাকটিক্যাল চিন্তা করুন।
=================================================
এক শ্রেনীর ইসলাম বিদ্বেষীরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাবারুক নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়। তারা ব্যঙ্গাত্মকভাবে সিন্নীখোর, বিরানীখোর ইত্যাদি অশালীন কথা বলে। এদর কথা শুনে মনে হয় এরা নিজেরাও না খেয়ে থাকে, অন্যকে তো খাবার খাওয়াই না। (অবশ্য কওমী ওহাবীরা অন্যরটা খেতে অভ্যস্থ, মানুষকে খাওয়ানোর কথা তারা স্বপ্নেও দেখে নাই)
মানুষকে খাদ্য খাওয়ানোর ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ উনার মধ্যে অনেক দলীল দেয়া আছে।
খাদ্য খাওয়ানো ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ লাভে ধন্য হবেন। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لاَ نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلاَ شُكُوْرًا
অর্থ: “তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার্য দান করি, তোমাদের নিকট এর কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও কামনা করি না’ (পবিত্র সূরা দাহর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৬/৯)
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا باليال والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং রাতের বেলায় মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী শরীফ ১৮৫৫, ইবনে মাযাহ্ শরীফ ১৩৯৫, আদাবুল মুফাররাদ ৯৮১, আবদ ইবনে হুমাইদ ৩৫৫, দারিমী)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ’ উনার ২৮ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফি উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক স্মরণ করে উনার দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করো। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।”
আতএব মানুষকে খাদ্য খাওয়ানোও একটা ইবাদত। যারা এ বিষয়কে টিটকারী তুচ্ছ্য তাচ্ছিল্য করে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র হাদীস শরীফ এহানতকারী। আর অন্য একটা বিষয় হচ্ছে এরা নিম্ন শ্রেনীর ফ্যামিলির লোক। এরা নিজেরাও খায় না। অন্যকে খাওয়ানোর কথা ভাবে না। কলিকাতার হিন্দুদের মত এদের অবস্থা। যারা বলে অর্ধেকটি দিলুম, পুরাটা খাবেন।
=================================================
বিভিন্ন বাতিল ফির্কা লোকেরা চোখ কান বুজে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হারাম/নাজায়িয/শিরক বলে থাকে !
নাউযুবিল্লাহ !!
অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ, ইজমা শরীফ , এবং কিয়াস শরীফ উনাদের স্পষ্ট এবং অকাট্য দলীলে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমানিত !!
কিন্তু আসুন আমরা এখন ওই সকল দলীল ছাড়াই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জায়িয প্রমান করবো, এবং যারা নাজায়িয বলবে তারা যে মূর্খ এবং চরম গোমরাহ এবং ধোঁকাবাজ সেটা একটু প্রমান করে দেখাবো !!
কোন জিনিসকে হারাম বলতে গেলে সে বিষয়ে স্পষ্ট দলীল দিতে হবে ! অর্থাৎ কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফ উনার স্পষ্ট হারামের দলীল দেখাতে হবে !
কারন সকল হারাম বিষয় সমূহ স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে ! নতুন করে কেউ ইচ্ছা মতো হারাম বলতে পারবে না !
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وقد فصل لكم ما حرم عليكم
অর্থ : তোমাদের প্রতি যা হারাম করা হয়েছে, আল্লাহ পাক তা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।
( পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
অর্থাৎ হারাম বিষয়ের সকল বিবরন স্পষ্ট বলে দেয়া আছে !
এখন যারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নাজায়িয/হারাম বলে তারা কি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ উনার থেকে একটা আয়াত শরীফ অথবা একটা হাদীস শরীফ দেখাতে পারবে, যেখানে বলা আছে – “ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হারাম”??
নাউযুবিল্লাহ ! চ্যালেঞ্জ থাকলো পারলে একটা আয়াত অথবা একটা হাদীস শরীফ যেনো প্রমান হিসেবে পেশ করে !
যদি দেখাতে না পারে তবে যারা হারাম/নাজায়িয বলবে তারা প্রকাশ্য গোমরাহ এবং ভন্ড এবং নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন।
এবং এ প্রমান দেখাতে না পারলে কোন ভাবেই হারাম বলার সুযোগ নেই !
এবার আসুন আমরা সরাসরি দলীল ছাড়াই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমান করি !
যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোথাও হারাম/নাজায়িয বলা হয় নাই তাহলে সহজ ভাবেই বোঝা যায় হারাম এবং নাজায়িয এর বিপরীতে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জায়িয এবং হালাল ।
কারন হারাম যদি না হয় তাহলে বিপরীতে হালালই হবে ।
নাজায়িয যদি না হয় তাহলে বিপরীতে জায়িযই প্রমানিত হবে !
সুবহানাল্লাহ্ !!
আসুন দলীলটা দেখি —
الحلال ما احل الله في كتبه و الحرم ما حرم الله في كتابه وما سكت عنه فهو مما عفي عنه
অর্থ : হালাল হচ্ছে, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কিতাবে হালাল করেছেন আর হারাম হচ্ছে, যা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কিতাবে হারাম করেছেন ! এবং যেটা সম্পর্কে নীরব রয়েছেন, সেটা মাফ!”
দলীল-
√ মিশকাত শরীফ- كتاب الا طعمة
এ পবিত্র হাদীস শরীফ উনার থেকে বুঝা যায়, যেটা হালাল সেটা কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলা আছে, যেটা হারাম সেটাও বলা আছে ! আর যে বিষয়ে কিছু বলা হয় নাই, সেটা মুবাহ হবে !
সেটা ফিকাহ এর কিতাবে আছে ,
المختار ان الاصل الاباحة عند الجمهور من الحنفية و الشافعية
অর্থ : জমহুর হানাফী এবং শাফেয়ী উনাদের এ মতামতই রয়েছে যে, প্রত্যেক কিছু মূলত মুবাহ হয়ে থাকে !”
দলীল-
√ ফতোয়ায়ে শামী-১য় খন্ড- কিতাবুত্তাহারাত !
অর্থাৎ, প্রত্যেক বিষয়ের মূল মুবাহ, স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ছাড়া কখনোই সেটা হারাম/নাজায়িয হয় না !
সূতরাং আমরা যদি তর্কের খাতিরে স্পষ্ট দলীল পেশ নাও করি তারপরও কোন ওহাবী/দেওবন্দী/খারেজীর ক্ষমতা নাই ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হারাম বা নাজায়িয বলা !
তাই আমি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসারী ভাই এবং বোনদের বলবো, আপনারা ওহাবী/দেওবন্দী/খারেজী দের ধোঁকায় বিভ্রান্ত হবেন না !
তারা যদি আপনাদের বলে হালালের দলীল দিতে, আপনারা হারামের দলীল তলব করবেন !
কারন কোন বিষয়কে নাজায়িয প্রমান করতে হারামের দলীল পেশ করতে হয় !
হারামের দলীল না থাকলে সেটা এমনিতেই মুবাহ এবং জায়িয হয় !
সুবহানাল্লাহ্ !!
পরিশেষে, যারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করে তারা যে ইবলিশ শয়তানের গোলাম সে বিষয়ে একটা প্রামান্য দলীল–
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফে সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো কে জানেন ? সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো ইবলিশ শয়তান । সে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, কষ্টে সে রীতিমত কান্না করছে।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্নিত আছে–>
ﺃﻥ ﺇﺑﻠﻴﺲ ﺭﻥ ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻧﺎﺕ ﺣﻴﻦ ﻟﻌﻦ ﻭﺣﻴﻦ
ﺃﻫﺒﻂ ﻭﺣﻴﻦ ﻭﻟﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺣﻴﻦ ﺃﻧﺰﻟﺖ ﺍﻟﻔﺎﺗﺤﺔ
“শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল ,প্রথম বার যখন মহান আল্লাহ পাক তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন; দ্বিতীয়বার যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়। তৃতীয়বার, যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলাদত শরীফ হয়। এবং চতুর্থবার যখন সূরা ফাতেহা শরীফ নাযিল হয়।”
দলীল-
√ আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২য় খণ্ড ১৬৬ পৃষ্ঠা
এখন সমাজে মানুষ রুপী কিছু ইবলিশ আছে, ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা শুনলেই এদের শরীর জ্বালা পোড়া করে। সূতরাং প্রমান হচ্ছে, যারা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধী তারা শয়তানের শাগরেদ । কারন এদিনে শয়তানও কষ্ট পেয়েছিল এখন তার শাগরেদরা কষ্ট পাচ্ছে। তাই এসকল শয়তানদের নিজেদের বিষের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মরতে দিন।
পরিশেষে যিনি বিখ্যাত মুহাদ্দিস, যিনি মদীনা শরীফ উনাতে ইলমের চর্চা করেছেন। যিনি প্রতিদিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভ করতেন, সেই ইমামুল মুহাদ্দিসিন শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য এবং দোয়ার মাধ্যমে আমরাও বলতে চাই—
“আয় আল্লাহ পাক ! আমার এমন কোন আমল নেই, যা আপনার মুবারক দরবারে পেশ করার উপযুক্ত মনে করি। আমার সমস্ত আমলের নিয়তের মধ্যে ত্রুটি রয়েছে । তবে আমি নগণ্যের শুধুমাত্র একটি আমল আপনার পবিত্র জাতের দয়ায় অনেক সম্মানিত বা মর্যাদাবান। আর সেটা হচ্ছে- পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করে এর মজলিস করি এবং এ মজলিসে ক্বিয়ামের সময় দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করি। আর একান্ত আজীজী,ইনকিসারী, মুহব্বত, ইখলাছের সাথে আপনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করি। আয় আল্লাহ পাক ! এমন কোন স্থান আছে কি যেখানে মীলাদ মুবারক উনার চাইতে অধিক খায়ের বরকত নাজিল হয় ?
হে আরহামুর রাহিমীন! আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমার এ আমল কখনো বৃথা যাবে না। বরং অবশ্যই আপনার পবিত্র মুবারক দরবারে কবুল হবে এবং যে কেউ পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি মুবারক প্রকাশ করে ছলাত-সালাম পাঠ করবে এবং উহাকে উসিলা করে দোয়া করবে সে কখনো মাহরূম হতে পারে না। অর্থাৎ সে অবশ্যই কবুলযোগ্য !”
দলীল-
√ আখবারুল আখইয়ার ৬২৪ পৃষ্ঠা
সুবহানাল্লাহ্ !!!
=================================================
অনুগ্রহ করে নিম্নে উল্লেখিত নামগুলো একটু পড়ুন- এবং দুইটি প্রশ্নের উত্তর দিন।
(১) হাফিজে হাদীস ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(২) হাফিজে হাদীস ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৩) ইমামুল আইম্মাহ হযরত তকিউদ্দিন সুবুকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৪) ইমামুল মুহাদ্দেসীন মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৫) ইমামুল মুহাদ্দেসীন ইবনে হাজর হায়তামি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৬) ইমামুল মুহাদ্দেসীন আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ।
(৭) হাফিজে হাদীস ইমাম জাওজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৮) ইমামুল মুহাদ্দেসীন ইমাম সাখাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(৯) শায়খুল হিন্দ, ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(১০) ইমামুল মুহাদ্দেসীন, শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(১১) হাফিজে হাদীস ইমাম কুস্তালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(১২) হাফেজে হাদিস ইবনে রজব রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(১৩) মুফতীয়ে আযম আমিমুল ইহসান বরকতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
ভাইজানেরা, কেউকে যদি বলা হয় উপরে উল্লেখিত সবগুলা আলেমই বিদয়াতী ছিলো, এরা শরীয়তের কিছুই জনতো না, ফাসিক ছিলো, এদের অনুসরন করা যাবে না ইত্যাদি……..!!
১ম প্রশ্ন : এটা শুনে আপনি তখন কি জবাব দিবেন ?
উত্তরটা ঠিক করে নিয়ে দ্বিতীয় প্রশ্নটি পড়ুন-
↓২য় প্রশ্ন: উনারা সকলেই পবিত্র মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ করেছেন। পবিত্র মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম মরিফের পক্ষে কিতাব লিখছেন। আজীবন পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিল সমর্থন করছেন। এখন আপনার প্রথম উত্তর আগের অবস্থানে আছে তো ???
=================================================
ভাত রান্না হয়েছে কিনা এটা বুঝতে পাতিলের সবগুলো ভাত টিপে দেখতে হয় না। দুই একটা ভাত টিপলেই পুরা পাতিলের খবর জানা যায়। ইসলাম ধ্বংস করতে ইহুদী-নাসারাদের বিভ্রান্তি বাংলাদেশে প্রচারকারী আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের পতিলের খবর জানতেও তার সবকিছু গবেষনা করার দরকার নাই। ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করতে গিয়ে সে যে নিকৃষ্ট মিথ্যাচারের আশ্রয় গ্রহন করেছিলো তা দেখে ইবলিসও লজ্জা পেয়েছে।
এই ইহুদী-নাসারাদের এজেন্ট আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার বইতে লিখেছে – ‘‘ইবন আববাস বলেন, একদিন তিনি নিজ বাড়িতে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জন্মের ঘটনাবলি বর্ণনা করছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আগমন করেন এবং বলেন: তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত পাওনা হলো।’’ (জালিয়াত লক্ষ্য করে নি যে, ইবন আববাসের বয়স ৮ বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগেই রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ইন্তেকাল হয়। তিনি কি ৫/৬ বৎসর বয়সে ছেলেমেয়েদের হাদীস শুনাচ্ছিলেন!)
পাঠক লক্ষ্য করুন, ওহাবী আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেছে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের সময় হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বয়স নাকি ৮ বছরের কম ছিলো। মাদ্রসায় পড়ুয়া আলিম শ্রেনীর ছাত্র অথবা জেনারেল শিক্ষিত ইন্টারনেট সম্পর্কে নূন্যতম ধারনা সম্পন্ন লোকের পক্ষেও জাহাঙ্গীরের জালিয়াতি ধরা সহজ।
হাদীস শরীফ উনার রাবীদের পরিচিতি নিয়ে লিখিত ‘আসমাউর রেজাল’ খুলে দেখুন, সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে ‘ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিযরত মুবারক এর ৩ বছর আগে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু জন্মগ্রহন করেন। ’ অথাৎ নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেছাল শরীফের সময় ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বয়স হয় ১১+৩= ১৪ বছর। অর্থাৎ ১১ হিজরী হচ্ছে বিছাল গ্রহন আর তিন বছর যোগ করে হয় ১৪ বছর।
ইন্টারনেটে উইকিপিডিয়তে সার্চ করে দেখেন সেখানেও পাবেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের সময় হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বয়স ছিলো ১৪ বছর। উইকিপিডিয়তে আছে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার জন্ম ৬১৯ সালে। সূতরাং (৫৭০+৬৩) = ৬৩৩। এখন এই ৬৩৩ সাল থেকে ৬১৯ সাল বিয়োগ করুন (৬৩৩-৬১৯)= ১৪ বছর।
অথচ মুনাফিক, ইহুদী নাছারাদের টাকার পরিচালিত এজেন্ট আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেছে ইবন আববাসের বয়স ৮ বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগেই রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ইন্তেকাল হয়।
তাহলে সহজেই বোঝা যচ্ছে ইহুদী এজেন্ট আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অস্বীকার করার জন্য চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলো। ১৪ বছর বয়সী একজন ছাহাবীর বয়স ইচ্ছাকৃতভাবে অর্ধেক কমিয়ে ৮ বছরের কম বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলো।
লেখার শুরুতেই যেটা বললাম, পাতিলের ভাত সব টিপতে হয় না। সূতরাং আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের লেখায় হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বয়স হের ফের হাতে নাতে চুরির প্রমান দ্বারাই বোঝা যায় তার লেখায় সবগুলো কথাই চুরি এবং মিথ্যাচারে পরিপূর্ন ।
=================================================
বিষয়টা এখনি ফয়সালা করে নেয়া দরকার। সঠিক অবস্থানটা পরিষ্কার করা দরকার।
বাতিল ফের্কার একটা পার্ট পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করে তথাকথিত নামধারী কিছু ভন্ডের কারনে। এই বিদয়াতিগুলো এসকল বিশেষ দিন সহ সবসময়ই গানবাজনা, নাচানাচি, ঢোল তবলা, নেশাগ্রস্থ হওয়া, পুরুষ মহিলা একাকার হওয়া সহ বিভিন্ন বেশরা কাজ করে। এদের এসকল ভন্ডামীর কারনে কিছূ মানুষ পবিত্র অনুষ্ঠানকে বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ।
উদাহরন স্বরূপ, মাজার শরীফ যিয়ারত করা সুন্নত। কিন্তু মাজারে একশ্রেনীর বিদয়াতী ভন্ডের গাঁজা সেবন সহ বিভিন্ন বেশরা কাজ করার কারনে ওহাবীরা সুন্নত মাযার যিয়ারতকে মাজার পুজা বলার মত সাহস পায়।
তদ্রুপ এসকল বিদয়াতীরা গুরুত্বপূর্ণ দিবসে তাদের অঙ্গনে বসে ভন্ডামী করে। ওহাবীরা এসব দেখে মনে করে পুরো কার্যক্রমটাই বোধহয় এমন। তারাও ঢালাই ভাবে প্রচার করে পবিত্র মীলাদ শরীফ বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ।
কথা হচ্ছে, মাথা ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলার সুযোগ নাই। গাছে রোগ হলে গাছ কেটে ফেলার দরকার নাই। বরং মাথা ব্যাথার ওষুধ খেতে হবে। গাছের রোগ হলে গাছ না কেটে গাছের গোড়ার ওষুধ দিতে হয়। সূতরাং কোন বিদয়াতীর বদ আমল দেখে মূল আমল বাদ না দিয়ে বিদয়াতী বেশরা আমল বাদ দিতে হবে।
শিয়ারা নামাজ পড়ার সময় সিজদায় মাথার নিচে মাটির টুকরা রাখে, নিজেদের বাড়িতে কাবা শরীফ উনার অনুরুপ ঘড় বানিয়ে তাওয়াফ করে। এদের বিদয়াত কাজ দেখেতো আপনি নামাজ ও তাওয়াফ বাদ দিবেন না। বরং এদের ভন্ডামী আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে সঠিক আমল করবেন।
ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাহফিলে আমরা প্রকৃত মুসলানরা যে আমল করি,
১) ছলাত ও সালাম পাঠ করি। যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীস শরীফ উনাদের সুস্পষ্ট র্নিদেশ মুবারক।
২) হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান ছানা সিফত মুবারক করা হয়। যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং মাহান আল্লাহ পাক নিজেই করেছেন।
৩) উনার আগমন সর্ম্পকে হাদীস শরীফ বর্ণনা করা হয়। যা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই করেছেন।
৪) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে শুকরিয়া আদায় করা হয়।
উপরোক্ত সব কাজই শরীয়ত সম্মত। এই কাজ গুলো করতে কোন মুসলমানের আপত্তি থাকার কথা নয়।
আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারনে খুশি নয় এমন কোন মুসলমান পৃথিবীতে আছে বলে মনে হয় না। কারন যে খুশি নয় সে আদৌ মুসলামনও নয়। তাহলে এতবড় নিয়ামত পেয়ে খুশি প্রকাশ করতে সমস্য কোথায়?
কোন বিদয়াতি, ভন্ড যদি হুক্কা খায়, গাঁজা খায়, ঢোল তবলা বাজায়, গান গায়, মহিলা পুরুষ একাকার করে সমাবেশ করে এই গুনাহের কাজের দায়ভার শুধুমাত্র তাদের। তাদের ভন্ডামীর জন্য পবিত্র আমল বাদ দেয়া যাবে না। বরং শরীয়ত সম্মতভাবে আরো বেশি মুহব্বতের সাথে কিভাবে আয়োজন করা যাবে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
=================================================
প্রতি বছর সৌদি গ্রান্ড মুফতী আব্দুল আজিজ আশ-শেইখ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনরি বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়। কিন্তু সউদী গ্রান্ড মুফতীর ফতওয়া কতটকু গ্রহণযোগ্য ? আসুন তার অন্যান্য ফতওয়াগুলো দেখি-
-(১) ইসরাইল-বিরোধী মিছিল করা সম্পূর্ণ হারাম।
-(২) ইয়াযিদের বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর অবস্থান ছিল হারাম। (না্উযুবিল্লাহ)
-(৩) সৌদি আরবের জাতীয় উৎসব (জন্মদিন) পালন করা হালাল ও বৈধ। (সূত্র: দৈনিক উকায)
-(৪) ব্যঙ্গ চলচ্চিত্রের প্রতিবাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা করা হারাম।
-(৫) হ্যারিকেন স্যান্ডি যুক্তরাষ্ট্রের উপর খোদায়ী গজব এ কথা বলা হারাম।
-(৬) মসজিদুল হারামের আশেপাশের প্রাচীন (ইসলামী) নিদর্শন ভেঙ্গে দেয়া অন্যতম হালাল ও উত্তম কাজ।-
-(৭) নারী কর্তৃক নারীদের অন্তর্বাস বিক্রয় করা হারাম!-
-(৮) সৌদী আরব সম্প্রতি তার জাতীয় দিবস রাজতন্ত্রের জন্মদিনে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কেক বানিয়েছে। রাজতন্ত্রের জন্মদিন কিংবা কেক তৈরীর বিরুদ্ধে অবশ্য গ্র্যান্ড মুফতী ফতওয়া দেয়নি, বরং বলেছে সউদী আরবের জন্মদিন পালন করা নিয়মত।
-১০) নারী নেতৃত্ব হারাম। অথচ সম্প্রতি সউদী আরবের পবিত্র মক্কা প্রদেশে নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কোন ফতওয়া দেয়নি গ্র্যান্ড মুফতি।
গ্র্যান্ড মুফতীর অন্যান্য ফতওয়া দেখলে সহজেই অনুধাবন করা যায়, পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইইহ ওয়িা সাল্লাম উনার বিরোধীতা করা তার পক্ষেই সম্ভব।
=================================================
একসময় বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদের এক সময়কার খতিব ছিলেন ওবায়দুল হক। সে সব সময় ঈদে মীলাদুন্নবী এর বিরোধীতা করতো। ঈদে মীলাদুন নবী আসলেই বলত, “ঈদে মিলাদুন্নবি বিদয়াত” । নাউযুবিল্লাহ।
অপরদিকে হিন্দুয়ানী পহেলা বৈশাখ আসলে বলতে– “আল্লাহর বহু বড় নিয়ামত হলো নববর্ষ। নববর্ষ পালন করতে গিয়ে দান-খয়রাত করতে হবে, শুকরিয়া আদায় করতে হবে, দোয়া করতে হবে।” নাউযুবিল্লাহ।
( তথ্যসূত্র: দৈনিক মানবজমিন ১০/০৪/২০০৪ ইং শেষ পৃষ্ঠা)
ওবায়দুল হকের এ ভুল ফতওয়ার কারণে মৃত্যুর পর এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটেছিলো। প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, মৃত্যুর সাথে সাথে তার লাশের অস্বাভাবিক পচন ধরেছিলো। পচন রোধে লাশকে চর্তুপাশ থেকে বরফ দিয়ে ঢাকা হয়, এমনকি তার লাশকে বরফের বিছানার উপর রাখা হয়। তারপরও পচন-দুর্গন্ধের কারণে টেকা সম্ভব হচ্ছিলো না। শুধু দুর্গন্ধ নয়, লাশের অস্বাভাবিক বিকৃত ঘটেছিলো। তার পেট এত বড় হতে থাকে যে, অনেকেই ধারণা করেছিলো তার পেট হয়ত ফেটে যাবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের ভুল ফতওয়া দেওয়ার হাত থেকে আমাদের আলেম সমাজকে হেফাজত করুন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারর শানমান এর বিরোধীতাকারীর চেহারার বিকৃতি ।
যারা আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান এর খিলাপ কথা বলবে ও ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করবে তাঁদের পরিনতি এমনই ভয়াবহ হবেই হবে । http://bit.ly/2gYck1W
=================================================
একদল ভণ্ড আছে, যারা তাবারুক নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক শব্দ বলে। শিন্নিখোর, জিলাপীখোর. মিষ্টিখোর বিরিয়ানীখোর ইত্যাদি বলে। অথচ তারাই ঐ অনুষ্ঠানে গেলে পেট পুরে খাওয়া ছাড়া বের হয় না।
তাবারুক শব্দের অর্থ বরকতময় খাদ্য। যে অনুষ্ঠানের তাবারুক, সে অনুষ্ঠানের শান-মানের সাথে তাবারুক মান মর্যাদা হবে। যেমন আপনি যদি নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কোন মাহফিল করেন, তবে অবশ্যই সেই তাবারুককে সম্মান করা উচিত।
বাস্তবে তাবারুককে অবজ্ঞা করা মানে কুফরী করা। কারণ অপরকে খাদ্য খাওয়ানো সুন্নত। আর কোন দ্বীনি মাহফিল উপলক্ষে খাদ্য খাওয়ানো অবশ্যই আরো বেশি ফজিলতের কারণ। কিন্তু সেটাকে অবজ্ঞা করা কোন মুসলমানদের কাজ হতে পারে না।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
১) “উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে আহার করান অভাবগ্রস্ত ইয়াতীম ও বন্দিদেরকে।”
( পবিত্র সূরা আদ দাহর শরীফ : ৮)
২) “এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করে উনার দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করো। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।”
(সূরা হজ্জ : ২৮ )
৩)“হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, দারিমী )
মানুষকে খাওয়ানো সুন্নত এবং মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ মুবারক। কিন্তু যারা দ্বীনি মাহফিলের তাবারুক নিয়ে কূরুচিপূর্ণ বাক্য উচ্চারণ করে, তারা তাদের অন্তরের কুফরীর বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
=================================================
১) নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি দুঃখ প্রকাশ করেছিলো ইবলিশ শয়তান। সে কি ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভূক্ত??
উত্তর- হ্যা, সে ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভূক্ত। সে মালউন, জাহান্নামী।
২) নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করেছিলো আবু লাহাব। এর দ্বারা কি সে উপকৃত হয়েছিলো ??
উত্তর- উপকৃত হয়েছিলো, এবং এখনো হচ্ছে। জাহান্নামে গিয়েও সে জান্নাতের নিয়ামত লাভ করে। অথচ জাহান্নামে জান্নাতের সকল নিয়ামত নিষিদ্ধ, তারপরও নিয়ম ভেঙ্গে তাকে তা দেয়া হয়। (√ সহীহ বুখারী শরীফ – কিতাবুন নিকাহ- ২য় খন্ড ৭৬৪ পৃষ্ঠা)
উপরের দুটো দলিল যথেষ্ট নবীজির আগমন উপলক্ষে খুশি করলে মুসলমানরা উপকৃত হবে নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি মুসলমানরা উপকৃতই হয়, তবে কেন মুসলমানদের সেই মহান কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে ??
=================================================
সউদী আরবের জন্মদিন বা ন্যাশলান ডে হচ্ছে ২৩শে সেপ্টেম্বর। ১৯৩২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। এদিন উপলক্ষে সউদী আরব সরকার ব্যাপক আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিনটি অতি গুরুত্বের সাথে আনন্দ উদ্দীপনার সাথে পালন করা হয়। জনগণও এ দিন রাস্তায় নেমে আসে। সবাই এক সাথে আনন্দ উদযাপন করে।
এ সম্পর্কে ভিডিওগুলো দেখতে পারেন:
১) https://youtu.be/dcJZbMs12VY
২) https://youtu.be/nGJs6DWGl0M
৩) https://youtu.be/y52RW0TSeoI
৪) https://youtu.be/LExN44iiWa0
৫) https://youtu.be/GswAJy6z-5w
উল্লেখ্য সউদী মুফতীরা, তাদের পূর্বপুরুষ এবং তাদের সাথে যোগসাজস রাখা সকল বক্তরা (পিসটিভি) ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করে বলে থাকে, জন্মদিন পালন করা নাকি হারাম!! এ সম্পর্কে সউদী গ্রান্ড মুফতি ফতওয়া দেয় ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা গুনাহের কাজ। নাউঝুবিল্লাহ! (http://www.moroccoworldnews.com/2015/01/148807/saudi-grand-mufti-says-celebrating-prophets-birthday-is-sinful/)।
অনেকে বলে, সউদী আরবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হয় না, বাংলাদেশে কেন হয় ? এগুলো বিদআত। তাদের জন্য এ পোস্ট। সউদী মুফতীদের ফতওয়া- নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মদিন পালন করা হারাম, কিন্তু সউদী আরবের জন্মদিন পালন করা হালাল।
তবে এটাও তাদের জেনে রাখা দরকার- বর্তমান সউদী ওহাবী সরকার আসার আগে দেশটিতে মহাসমারহে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হতো এবং এর বিরুদ্ধে কেউ ফতওয়া দিলে তাকে কাফির বলে ফতওয়া দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সউদী সরকার এসে তা বন্ধ করে (https://goo.gl/AFIAVr) এবং নিজ সরকারের জন্মদিন পালন শুরু করে। আর তাদের কথামত ফতওয়া দেয় তাদের সরকারী আলেমরা।
মুসলমানরা আজ অন্ধভাবে সউদীদের অনুসরণ করে গোমরাহ হচ্ছে। এ ঘটনাই তার প্রমাণ।
=================================================
পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা কারীদের প্রতি সতর্কবাণী, এখনো তওবা না করলে আবু লাহাবে মতো পচে-গলে আকৃতি বিকৃত হয়ে মরতে হবে.
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “আবু লাহাব ও তার দুই হাত ধ্বংস হোক। তার ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না। আবু লাহাব ও তার স্ত্রী অতি শীঘ্রই প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে।” (পবিত্র সূরা লাহাব).
বর্তমানেও যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক জাত পাক উনার সাথে সম্পর্কিত পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করছে তাদের আবু লাহাবের কথা স্মরণ রাখা উচিত। আবু লাহাব যেমন পচে-গলে আকৃতি বিকৃতি হয়ে মারা গিয়েছিল, ঠিক তেমনি তারাও লানতপ্রাপ্ত হয়ে পচে-গলে আকৃতি বিকৃতি হয়ে মারা যাবে।.
ইতোমধ্যে এ ধরনের বহু দলিল পাওয়া গেছে। যেমন:
১) বায়তুল মোকাররম মসজিদের সাবেক খতিব উবায়দুল হক, যে প্রতি বছর পবিত্র সাইয়িদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করতো। তার মৃত্যুর সাথে সাথে তার লাশে পচন ধরে যায় এবং তা ধারণ করে বিকট আকৃতি। বহু ফরমালিন আর চারপাশে বরফের আস্তরণ দিয়েও তার লাশের পচন থামানো যায়নি।
২) বাংলাদেশে দেওবন্দীদের গুরু শায়খুল হদস আজিজুল হক। সে মারা যাওয়ার আগে তার এক ধরনের চর্মরোগ হয় এবং সেখান থেকে পচন সৃষ্টি হয়; যা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য আবু লাহাবেরও একইভাবে চর্মরোগ থেকে সারা শরীরে পচন ছড়িয়ে পড়েছিল। হদসের ছেলে এই ঘটনা নিজ মুখেই স্বীকার করেছে। হদসের ছেলে এ সম্পর্কে বলেছে, “ইন্তেকালের ৬/৭ মাস আগে আব্বার শরীরে চর্ম রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে চামড়ার মধ্যে পানির মতো জমাট বেঁধে ফোস্কা পড়ত। অতঃপর সেই ফোস্কা ফুটে গিয়ে দগদগে ক্ষত সৃষ্টি হতো। ক্ষতগুলো এতটাই প্রকট আকারের হতো যে, পরিবারের সদস্যদের জন্য তা সহ্য করা সম্ভব হতো না।)
৩) মুফতে আমিনী ওরফে কমিনী ২০০২ সালের ১৫ই আগস্ট লালবাগের বড় কাটরা মাদরাসায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে গরু জবাই করে খাওয়ায়। যে খবরটি পরদিন ১৬ই আগস্ট দৈনিক ইনকিলাবে ছাপা হয়। অথচ এই ধর্মব্যবসায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ বা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধিতা করত। (নাউযুবিল্লাহ) যার কারণে কমিনীর দেহ মৃত্যুর সাথে সাথে পচে যায় এবং বিকট আকৃতি ধারণ করে।
তাই এখনো যে সমস্ত কুলাঙ্গার পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করে যাচ্ছে তাদের উচিত তাদের ওস্তাদদের কঠিন পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। কারণ যখন গযব শুরু হয়ে যাবে তখন তা ঠেকানোর কোনো উপায় থাকবে না, দুনিয়া-আখিরাত দুইটিই পরিণত হবে কঠিন জাহান্নামে। (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক).
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে বোনাস ভাতা
=================================================
দুই ঈদের জন্য বোনাস ও ছুটি থাকলে, দুই ঈদের চেযেও শ্রেষ্ঠ তম ঈদে তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য বোনাস ও ছুটি নেই কেন?
পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমানগন উনাদের জন্য ঈদের দিন। পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنِ ابْنِ السَّبَّاقِ , أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جُمُعَةٍ مِنَ الْجُمَعِ قَالَ : ” يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ , إِنَّ هَذَا يَومٌ جَعَلَهُ اللَّهُ عِيدًا لِلْمُسْلِمِينَ
“হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুয়ার দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন। (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮, মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)
এ পবিত্র হাদীস শরীফ উনার থেকে আমরা জানতে পারলাম, জুমুয়ার দিনকে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদের দিন হিসাবে ঘোষনা করেছেন।
কতবড় ঈদের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন জানেন কি ? দেখুন পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে কি বলা হয়েছে-
قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الـجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৩৭, মুজামুল কবীর তাবরানী ৪৫১১, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাকী : হাদীস ২৯৭৩, মিশকাত শরীফ)
এই পবিত্র হাদীস শরীফ উনার থেকে আমরা জানতে পারলাম, জুমুয়ার দিন অন্য দিন সমূহের সর্দার, এমনকি পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহা থেকেও বেশি সম্মানিত।
এবার দেখূন কেন পবিত্র জুমুয়ার দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহার চাইতে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত:
ان من افضل ايامكم يوم الـجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।’ (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫, তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ – কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, দুনিয়ায় আগমন, বিছাল শরীফ এর জন্য পবিত্র জুমুয়ার দিন এত শ্রেষ্ঠ। এতটাই শ্রেষ্ঠ যে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহার চাইতেও বেশি শ্রেষ্ঠ।
শুধু তাই নয় নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ ও পবিত্র বিছাল শরীফ সবই ঈদের ও শান্তির দিন। যেমন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وسلم عليه يوم ولد ويوم يـموت ويوم يبعث حيا .
অর্থ: ‘উনার প্রতি সালাম (শান্তি), যেদিন তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন এবং যেদিন তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন।’ (সূরা মারইয়াম শরীফ, আয়াত শরীফ: ১৫)
তাহলে সমস্ত নবীদের নবী, সমস্ত রসূলদের রসূল হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক না করলে মহনি আল্লাহ পাক তিনি কিছুই সৃষ্টি মুবারক করতেন না। এমনকি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার আগমন ও বিছাল শরীফের কারনে যে জুমুয়ার দিন ঈদের দিন, সেই আদম আলাইহিস সালাম উনিও সৃষ্টি হতেন না হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সৃষ্টি না হলে। যেমন পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
قال الله تعالـى ولو لا مـحمد رسول الله صلى الله عليه وسلم ما خلقتك. هذا حديث صحيح الاسناد.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন , যদি আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন, তাহলে আমি আপনাকেও (হযরত আদম আলাইহিস সালাম) সৃষ্টি করতাম না।” সুবহানাল্লাহ! এ পবিত্র হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ। (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ ১ম খ- ৮৮ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুস্তাদরাক ২য় খ- ১০৬৯ পৃষ্ঠা, আত তাওয়াসসুল ১১৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরুদ দুররিল মানছূর লিস সুয়ূত্বী ১ম খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ১১ খ- ৪৫৫ পৃষ্ঠা)
তাহলে এখন প্রশ্ন,
জুমুয়ার দিন ঈদের দিন হওয়ার কারনে যদি সরকারি ভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হয়..
ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহা ঈদের দিন হওয়ার কারনে বাৎসরিক ছুটির দিন হয় ও সরকারী বোনাস দেয়া হয়…
তাহলে যে তারিখে, যে বারে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন বা বিলাদত শরীফ, সে দিনে সরকারী ও বেসরকারী বোনাস কোথায়????
কেন শুধুমাত্র একদিন দায়সারা ছুটি ??
কেন পবিত্র রবিউল আউয়াল সারা মাস ব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না??
=================================================
হিন্দুরা মুসলমানদের উৎসবে বোনাস নেয় না, মুসলমানরা হিন্দুর উৎসবে বোনাস নেবে কেন ?
বাংলাদেশর মুসলমানরা ধর্মীয় উৎসবে বোনাস পায় দুটি। একটি রোজার ঈদে, অন্যটি কোরবানীর ঈদে। অপরদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানরা রোজার ঈদ বা কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে কোন বোনাস পায় না। পায় দূর্গা পূজা, বৌদ্ধ পূর্নিমা কিংবা ক্রিসমাস উপলক্ষে। তবে বোনাসের অর্থে সমতা আনার ক্ষেত্রে দূর্গা পূজা, বৌদ্ধ পূর্নিমা কিংবা ক্রিসমাসে মুসলমানদের ভাতা দ্বিগুন করে বোনাস প্রদান করা হয়।
এই বিষয়টি দ্বারা বোঝা যায়, অমুসলিমরা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য কোন বোনাস নেয় না, নেয় তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে।
বর্তমানে পহেলা বৈশাখ উৎসব উপলক্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বোনাস পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা । যদিও পহেলা বৈশাখ মুসলমানদের কোন অনুষ্ঠান নয়, হিন্দু-বৌদ্ধ-মজুসিদের ধর্মীয় উৎসব। তাই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মুসলমানদের বোনাস না দিয়ে অন্য কোন ইসলামী উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ভাতা দেয়া উচিত।
আর মুসলমানদের সেই বিশেষ দিবসটি হচ্ছে পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এদিনটি ঈদ বা খুশির দিন যা রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা উচিত, অথচ সরকারের কোন পৃষ্ঠপোষকতা সেখানে চোখে পড়ে না। সরকারের উচিত পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে বোনাস ভাতা প্রদান করে, মুসলমানদের আরো শান-শওকত ও জজবার সাথে দিবসটি পালনের সুযোগ করে দেয়া।
=================================================
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ সাহেব সর্বপ্রথম বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ঢাকায় ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পবিত্র রবিউল আউওয়াল শরীফ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে সর্ব প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহন করেন। সরকার প্রধান হিসেবে আপনার পিতা বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন । একজন সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের উদ্বোধন উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম এবং বিরল দৃষ্টান্ত ।
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সাহেব ই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ঈদে মিলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সরকারী ছুটি ঘোষনা করেন। দিবসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য তিনি সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন ।
সুত্রঃ
১. সৈয়দ আবীর “ইসলামী মুল্যবোধ ও বঙ্গবন্ধু” , জাগৃতি প্রকাশনী,পঞ্চবিংশ অধ্যায়-ইসলামের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান,পৃষ্ঠা ২০৮
২.আবু তাহের মুহাম্মদ মানজুর “ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান” ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা(ঢাকা:ই.ফা.বা.)জানুয়ারী-মার্চ-২০০৯ পৃ-৪১,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী –
১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন চট্টগ্রামে স্থায়ী হন তখন উনার সঙ্গী ছিলেন আপনার পুর্বপুরুষ শেখ আউয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি। দরবেশ শেখ আউয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রিয় মুরিদ এবং বিশ্বাসীজন। সে হিসেবে আপনার পুর্বপুরুষেরা দ্বীনের তালিম তালকিন দিয়েছেন। বাংলার জমিনে ইসলামের আবাদ করেছেন। আপনি সেই ধার্মিক পুর্বপুরুষেরই বংশধর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী –
ইসলামের প্রতি আপনার পিতার যে অনুভূতি আর দরদ কি রকম গভীর ছিল তা ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে তার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। আপনার পিতা আপনাদের বাড়িতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান করতেন। আপনিও আপনার পিতার আদর্শ অনুসরণ করে নির্বাচনী ওয়াদায় কুরআন – সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবেনা বলে ঘোষণা দিয়েছেন যা ৯৮ ভাগ মুসলমানের হৃদয়কে আন্দোলিত করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী –
আপনি সেই পিতার সন্তান।যার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে তড়িৎ গতিতে এগুচ্ছে। যিনি পরপর দু’বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সবসময় বঙ্গবন্ধু শেখ সাহেবের স্বপ্ন পুরনের কথা বলেন। বাস্তবায়িত করার কথা বলেন। সেই আপনার পিতা-ই নুরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এতই মুহব্বত করতেন যে স্বয়ং ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বাংলার জমিনে সরকারীভাবে জাঁকজমকের সাথে পালন করেছেন।
আপনিও সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী –
আপনার পিতার আদর্শই আপনার জীবনের পথচলার পাথেয়। আপনার পিতার আদর্শকে বাস্তবায়ন করা এবং বাস্তবায়নকৃত বিষয়কে আর বেগবান করা কন্যা হিসেবে আপনার দায়িত্ব এবং কর্তব্য।সে হিসেবে আপনার পিতার বাস্তবায়নকৃত পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ভাতা-বোনাস দিবেন যা ৯৮ ভাগ মুসলিম এই দেশে মুসলমানদের প্রানের দাবী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী –
আপনি যদি সর্বোত্তম আমল পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ভাতা-বোনাস চালু করতে পারেন তাহলে আপনার পিতার রুহের মাগফেরাত কত অসীম হবে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। একজন মৃত ব্যক্তি জীবিত তার বংশধরদের কাছে তা-ই আশা করেন। শুধু তাই নয় আপনি যদি ভাতা বোনাস চালু করতে পারেন আপনি নিজেও বিশাল নিয়ামত লাভ করবেন এবং মহিলা ওলিদের মত আপনার অবদান ও যুগ যুগ ধরে স্বরন করা হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী –
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে কে কি বলেছে আপনি তা আমলে নেননি। নিজের ইচ্ছার উপর দৃঢ় থেকে , অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে আপনি এই বাংলার জমিনকে কলংকমুক্ত করেছেন। ঠিক তেমনি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ভাতা বোনাস চালু করতে কে কি বলেছে তার পাত্তা দেওয়া যাবেনা। কারন এ দিবস খোদ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী –
যদি আপনি তা-ই করতে পারেন তাহলেই কেবল আপনার পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়া এবং ইহকাল-পরকাল উভয়কালেই কামিয়াবি অর্জন করা সম্ভব।
মহান আল্লাহ পাক আপনাকে সেই ঈমানী কুওওয়ত দান করুন। আমীন।
=================================================
৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে হিন্দুয়ানী পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নয়, বরং ‘১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উপলক্ষে বোনাস’ দিতে হবে। পহেলা বৈশাখ উৎসব উপলক্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বোনাস পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
এখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে- সারা বছরে এত উৎসব থাকার পরেও পহেলা বৈশাখে কেন এই বোনাস দেয়া হচ্ছে? বলা হচ্ছে, পহেলা বৈশাখ সার্বজনীন উৎসব। নাউযুবিল্লাহ! তাই সবার মাঝেই এই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিতেই এই বোনাস দেয়া হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! বাদশাহ আকবর যেমন করে তার রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পৃথক একটি ধর্ম চালু করেছিল। সেই ধর্মের নাম দিয়েছিল দ্বীন-ই-এলাহী। দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় থাকার জন্য কথিত সার্বজনীন উৎসবের নাম করে পহেলা বৈশাখে বোনাস দিচ্ছে। অথচ পহেলা বৈশাখে মুসলমানগণ উনাদের কোনো উৎসব নেই; বরং হিন্দু ও উপজাতিদের ১৪ রকম পূজা রয়েছে।
তাহলে এখানে পরিষ্কার করে দেখা যাচ্ছে যে, পহেলা বৈশাখে মুশরিকদের অনেক পূজা থাকলেও মুসলমানগণ উনাদের কোনো উৎসবই নেই। তাহলে কি করে এখানে মুসলমানদেরকে জড়ানো যেতে পারে? মূলত, কাফির-মুশরিকরা মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করার জন্যই মুসলমানদেরকে কাফির-মুশরিকদের বিভিন্ন উৎসবে যেতে উৎসাহিত করে। নাউযুবিল্লাহ! তাছাড়া মুসলমানগণ একটা ঘটনা ফিকির করলে সহজেই বুঝতে পারবে। ঘটনাটি হলো- এক এলাকায় এক বুজুর্গ ইন্তেকাল করলেন। কয়েকদিন পর তার এক বন্ধু স্বপ্নে উনাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কেমন আছেন? তিনি তখন বললেন, আমি এখন ভালো আছি, তবে আমি এর আগে কঠিন পেরেশানিতে ছিলাম। তিনি বললেন, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা যখন আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে নিয়ে গেলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তুমি তো পূজারী, তোমার জাহান্নামে যাওয়া উচিত। আমি তখন ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, সেদিনের কথা কি তোমার মনে পড়ে না- যেদিন হিন্দুদের হোলিপূজা চলছিল আর তোমার পাশ দিয়ে একটি গাধা যাচ্ছিল, যার গায়ে কোনো রং ছিলো না। তুমি তখন পান খাচ্ছিলে। মুখ থেকে সেই পানের চিপটি গাধাকে লাগিয়ে বলেছিলে- তোমাকে তো কেউ রং লাগিয়ে দেয়নি, আমি লাগিয়ে দিলাম। এটা কি পূজা হয়নি? তখন আমি ভীষণ লজ্জিত হয়ে বললাম, হে বারে ইলাহী! আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বিষয়টা ফিকির করিনি। কেউ আমাকে বিষয়টা ধরিয়েও দেয়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। মহান আল্লাহ পাক অন্যান্য নেক আমলের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবে সেই ভুলের জন্য আমি এখনো খুবই লজ্জিত আছি।
তাহলে ফিকিরের বিষয়, হিন্দুদের পূজার সাথে মিল করার কারণে যদি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে যারা সরাসরি মুশরিকদের পূজায় অংশগ্রহণ করবে তাদের কি অবস্থা হবে? কঠিন আযাব-গযবে মহান আল্লাহ পাক তাদের গ্রেফতার করবেন। তাই ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সবাই যেন বেশি বেশি করে খুশি প্রকাশ করে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে খুশি মুবারক পালন করতে পারে সেজন্য ‘১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উপলক্ষে বোনাস’ প্রদান করতে হবে- মুশরিকদের পহেলা বৈশাখে নয়!
পবিত্র যাকাত
=================================================
পবিত্র যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থঃ زكوة ‘যাকাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি, বরকত, পবিত্রতা ইত্যাদি। যেহেতু পবিত্র যাকাত প্রদানে যাকাতদাতার মাল বাস্তবে কমে না; বরং বৃদ্ধি পায়, পবিত্র হয় এবং কৃপণতার কলুষ হতে নিজেও পবিত্রতা লাভ করে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সরাসরি ৩২ বার زكوة ‘যাকাত’ শব্দ মুবারক উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে ২৬ স্থানে সরাসরি পবিত্র নামায উনার সাথে সাথেই, ২ স্থানে পবিত্র অর্থে এবং ৪ স্থানে স্বতন্ত্রভাবে পবিত্র যাকাত উনার কথা উল্লেখ আছে। আবার পবিত্র যাকাত উনাকে ৯ বার صدقات ‘ছদাকাত’ এবং ৪৩ বার انفاق ‘ইনফাক্ব’ শব্দ মুবারক দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে انفاق ‘ইনফাক্ব’ শব্দটি ব্যাপক, صدقة ‘ছদক্বাহ’ শব্দটি সাধারণ ও زكوة ‘যাকাত’ শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে কখনো কখনো এর কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও এ তিনটি শব্দ মুবারক একে অন্যের স্থলে ব্যবহার হয়ে থাকে। সে হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ৮২ বার যাকাত শব্দ মুবারক উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ১৫০ বারেরও অধিক খরচের বিষয়ে বলা হয়েছে।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যেখানে কোন বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র একবার আদেশ মুবারক করলেই তা সমস্ত কায়িনাতের জন্য পালন করা ফরযে আইনের উপর ফরয হয়ে যায়। সেখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি ৩২ বার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র যাকাত উনার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। তাহলে পবিত্র যাকাত উনার গুরুত্ব কতখানি তা ফিকির করতে হবে।
সম্মানিত যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ : زكوة ‘যাকাত’ শব্দের একটি আভিধানিক অর্থ হ”েছ বরকত বা বৃদ্ধি। যেহেতু সম্মানিত যাকাত আদায়ের ফলে যাকাতদাতার মাল বাস্তবে কমে না; বরং বৃদ্ধি পায়, বরকত হয়। আর ‘যাকাত’ শব্দের অন্য আরেকটি আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। যেহেতু সম্মানিত যাকাত আদায়ের ফলে সম্পদ হারাম হওয়া থেকে পবিত্র হয় এবং জিসমানী ও রূহানী মুহলিকাত বা কলুষতা হতে পবিত্রতা লাভ হয়।
সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (الـحوائج الاصلية) বা মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত যদি কোন মাল বা অর্থ-সম্পদ নিছাব পরিমাণ তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য অথবা এ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ কারো অধীনে পূর্ণ এক বছর থাকে তাহলে তা থেকে ৪০ ভাগের ১ ভাগ মাল বা অর্থ-সম্পদ সম্মানিত যাকাত বা ছদকা গ্রহণের উপযোগী কোন গরীব, ফকীর-মিসকীন মুসলমানকে তথা পবিত্র শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত খাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সš‘ষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বিনা স্বার্থে ও বিনা শর্তে প্রদান করাকে সম্মানিত যাকাত বলে।
الزكوة واجبة علي الـحر الـمسلم البالغ العاقل اذا ملك نصابا كاملا ملكا تاما وحال عليه الـحول
অর্থ: বয়স্ক সু¯’ মস্তিস্ক স্বাধীন মুসলমান যখন নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হন এবং উক্ত সম্পদ উনার অধিকারে পূর্ণ এব বছর থাকে তখন উনার উপর যাকাত ফরয হয়। (মুখতাসারুল কুদূরী, কিতাবুয যাকাত, পৃষ্ঠা ১১৫, প্রকাশনী মুওয়াসসাতুর রাইয়্যান)
আবার, প্রাপ্ত বয়স্ক, সু¯’ মস্তিস্কসম্পন্ন নিছাব পরিমাণ বর্ধনশীল সম্পদের অধিকারী প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তির পক্ষ থেকে উক্ত নিছাবের উপর পূর্ণ এক চন্দ্র বছর অতিবাহিত হলে, সম্মানিত শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মালিক বানিয়ে দেয়াকে সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় সম্মানিত যাকাত বলে। (আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৬-২৫৭)
=================================================
পবিত্র যাকাত উনার গুরুত্ব ও ফযীলত
পবিত্র যাকাত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৫টি রোকন বা স্তম্ভসমূহের মধ্যে ৩য় বা মধ্যবর্তী রোকন বা মূল ভিত্তি। পবিত্র ঈমান ও নামায উনাদের পরেই পবিত্র যাকাত উনার স্থান।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ حَضَرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُنِيَ الْاِسْلَامُ عَلَى خَـمْسٍ شَهَادَةِ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُـحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلٰوةِ وَاِيتَاءِ الزَّكوةِ وَالْـحَجّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- পবিত্র ইসলাম পাঁচটি বুনিয়াদ বা ভিত্তির উপর স্থাপিত। (১) ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ বা রব নেই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রসূল’- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া। (২) পবিত্র নামায কায়িম করা। (৩) পবিত্র যাকাত প্রদান করা। (৪) পবিত্র হজ্জ সম্পাদন করা। (৫) পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মাসে রোযা পালন করা।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবু দু‘য়ায়ুকুম ঈমানুকুম : হাদীছ শরীফ নং ৮; মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবু বাইয়ানি আরকানিল ইসলামি ওয়া দা‘য়ায়িমিহিল ইজ্বমি : হাদীছ শরীফ নং ১৬; নাসায়ী শরীফ : কিতাবুল ঈমানি ওয়া শরায়ি‘য়াহ : বাবু ‘আলা কাম বুনিয়াল ইসলাম : হাদীছ শরীফ নং ৫০০১; তিরমিযী শরীফ : কিতাবুল ঈমান ‘আন রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : বাবু মাজাআ বুনিয়াল ইসলামু ‘আলা খ¦ামস : হাদীছ শরীফ নং ২৬০৯)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র যাকাত হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৩য় অর্থাৎ মধ্যবর্তী বুনিয়াদ বা ভিত্তি। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান যার যার ইসলাম নামক ঘরকে দৃঢ় করতে হলে যাকাত নামক মধ্যবর্তী খুঁটি বা ভিত্তিকে অবশ্যই সুদৃঢ় করতে হবেই। মধ্যবর্তী খুঁটি বা ভিত্তি ছাড়া যেমন একটি ঘর সুদৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ঠিক তেমনি প্রত্যেক মুসলমানের যার যার ইসলাম নামক ঘরও মধ্যবর্তী খুঁটি যাকাত ছাড়া কোন ভাবেই সুদৃঢ় থাকতে পারে না।
দ্বিতীয়ত পবিত্র যাকাত সম্মানিত ঈমান উনার দলীল স্বরূপ। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَاَقَامُوْا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ لَـهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّـهِـمْ
অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, আমলে ছলেহ করে, নামায কায়িম করে ও যাকাত আদায় করে, তাদের জন্য বিনিময় রয়েছে তাদের রব তায়ালা উনার নিকট। তাদের কোন ভয় থাকবে না, কোন চিন্তা পেরেশানীও থাকবে না। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭৭)
আর অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
اَلَّذِيْنَ لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَهُم بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كٰفِرُوْنَ.
অর্থ : যারা পবিত্র যাকাত আদায় করে না, আর তারাই পরকাল অবিশ্বাসী। (পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْـمَنِ بْنِ غَنْمٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ حَضْرَتْ اَبَا مَالِكٍ الاَشْعَرِيَّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حَدَّثَهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ شَطْرُ الاِيـْمَانِ وَالْـحَمْدُ لِلّٰهِ تَـمْلاُ الْمِيْزَانَ وَالتَّسْبِيْحُ وَالتَّكْبِيْرُ يـَمْلاُ السَّمَوَاتِ وَالاَرْضَ وَالصَّلٰوةُ نُوْرٌ وَالزَّكٰوةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْاٰنُ حُجَّةٌ لَكَ اَوْ عَلَيْكَ.
অর্থ : “হযরত আব্দুুর রহমান ইবনে গাম্মি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আবূ মালিক আশ‘য়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুনেছেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করা ঈমানের অর্ধেক। আর আলহামদুলিল্লাহ্ মীযানকে পরিপূর্ণ করে ফেলবে, তাসবীহ্ ও তাকবীর আসমান-যমীনকে পরিপূর্ণ করে ফেলবে। নামায হলো নূর (আলো) আর যাকাত হলো দলীল, ধৈর্য্য (রোযা) হলো জ্যোতি এবং পবিত্র কুরআন শরীফ হলো তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ।” (নাসায়ী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু উযূবিয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ২৪৩৭)
যেহেতু পবিত্র যাকাত সম্মানিত ঈমান উনার দলীল। তাই কেউ যদি যাকাত আদায় না করে তাহলে স ব্যক্তি ঈমানদার হিসেবে সাব্যস্ত হবে না, বরং কাফির হবে।
তৃতীয়ত–পবত্রি যাকাত হচ্ছে র্অথনতৈকি মুক্তরি র্শত। মহান আল্লাহ পাক তিনি রিযিকের মালিক, তিনি যাকাত ব্যবস্থাপনা দিয়েছেন। একমাত্র পবিত্র যাকাত উনার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বচ্ছলতা আসে এবং আত্মিক পরিতৃপ্তি অর্জন হয়। কুদরতী ফায়সালা হবে, চাহিদাতো মিটবেই সম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمَا اٰتَيْتُم مّن زَكٰوةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللهِ فَاُولئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ.
অর্থ : “আর তোমরা যারা যাকাত দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি কামনা কর; তারাই ঐ সম্পদ বহুগুণ প্রাপ্ত হবে।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৯)
বস্তুত যখনই যাকাত ব্যবস্থা জারী হয়েছে তখন ঘরে ঘরে লক্ষ লক্ষ দিনার-দিরহাম। বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আসহাবে ছুফফা উনার সদস্য। তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ক্ষুধার তাড়নায় মাটি কাঁমড়ে পড়ে থাকতেন। সেই হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফাতুছ ছালিছ হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে যখন যাকাত ব্যবস্থা বিস্তৃত পরিসরে বিস্তার লাভ করেলো তখন বলেছেন যে, উনারা কাফতানের কাপড় দিয়ে নাক মুবারক মুছেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আবার হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফতকালে যাকাত ব্যবস্থা এমনভাবে জারী হয়েছিলো যে, বায়তুল মাল থেকে যাকাত প্রদানের জন্য জনসাধারণকে জাননো হলেও কেউই যাকাত নিতে আসলো না। এমতবস্থায় বাজারে বাজারে যাকাত গ্রহণের জন্য ঘোষণা প্রদান করা হলো কিন্তু এতেও কেউ আসলো না। অতঃপর খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষ থেকে ফরমান মুবারক দেয়া হলো যে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে যেন যাকাত গ্রহণের জন্য ঘোষণা প্রদান করা হয়। কিন্তু এতেও কোন সাড়া পাওয়া গেল না। সুতরাং এটা সহজেই বোধগম্য যে, যাকাত ব্যবস্থা অর্থনৈতিক মুক্তি কিভাবে এনে থাকে।
=================================================
সম্মানিত পবিত্র শরীয়ত মতে যাদের উপর পবিত্র যাকাত আদায় করা ফরয।
==> (১) পবিত্র যাকাতদাতাকে মুসলমান হতে হবে।
(২) বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক।
(৩) আক্বেল বা বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন।
(৪) আযাদ বা স্বাধীন।
(৫) নিছাব অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য বা টাকা অর্থাৎ নিছাব পূর্ণ হওয়া।
(৬) যদি এককভাবে কোন পণ্য বা দ্রব্যের মূল্য নিছাব পরিমাণ না হয় কিন্তু ব্যক্তির সবগুলো সম্পদের মূল্য মিলিয়ে একত্রে সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য মূল্যের সমান হয় তবে ওই ব্যক্তির নিছাব পূর্ণ হবে। অর্থাৎ নিছাবের একক মালিক হওয়া।
(৭) সাংসারিক প্রয়োজনে গৃহীত ঋণ কর্তনের পর নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে পবিত্র যাকাত দিতে হবে।
(৮) হাওয়ায়েযে আছলিয়ার অতিরিক্ত।
(৯) বর্ধনশীল মাল যেমন- স্বর্ণ, চান্দি, নগদ টাকা, মালে তিজারত বা ব্যবসায়িক মাল এবং সায়েমা বা চারণ ভূমিতে বিচরণকারী পশু।
(১০) বর্ষ পূর্ণ হতে হবে অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ সম্পদ তার অধীনে পূর্ণ ১ বছর থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنِ اسْتَفَادَ مَالًا فَلَا زَكٰوةَ عَلَيْهِ حَتَّى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ عِنْدَ رَبّهِ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোন মাল লাভ করেছে, তা এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ওই মালের পবিত্র যাকাত নেই।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুয যাকাত ‘আন্না রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : বাবু মাজায়া লা যাকাতা ‘আলাল মালিল মুসতাফাদ্বি হাত্তা ইয়াহূলা ‘আলাইহিল হাওলু : হাদীছ শরীফ নং ৬৩১ ও ৬৩২)
আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ اُمُّ الْمـُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ قَالَتْ : لَيْسَ فِي مَالٍ زَكٰوةٌ حَتَّى يَـحُولَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ.
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে পবিত্র যাকাত ফরয হবে না।” (ইবনে আবী শায়বা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৩২২)
আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضَرَتْ عَلِىّ عَلَيْهِ السَّلَامَ مرفوعا ليس فى مال زكوة حتى يـحول عليه الـحول.
অর্থ : “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে পবিত্র যাকাত ফরয হবে না।” (আবূ দাউদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ফী যাকাতিস সায়িমাহ : হাদীছ শরীফ নং ১৫৭৩; মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল শরীফ : ১ম খ- : পৃষ্ঠা ১৪৮ : বাবু মুসনাদে আলী ইবনে আবি ত্বলিব আলাইহিস সালাম : হাদীছ শরীফ নং ১২৬৪; দারে কুতনী শরীফ : ২য় খ- : পৃষ্ঠা ৪৭০ : হাদীছ শরীফ নং ১৮৯২)
আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ فِي مَالِ الْمُسْتَفِيْدِ زَكٰوةٌ حَتَّى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ
অর্থ : “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে পবিত্র যাকাত ফরয হবে না।” (দারে কুতনী শরীফ : ২য় খ- : পৃষ্ঠা ৪৬৮ : হাদীছ শরীফ নং ১৮৮৮; সুনানে কুবরা বায়হাক্বী শরীফ : ৪র্থ খ- : ১০৪ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৭১১৫)
যদিও যাকাত ফরয হওয়ার জন্য বর্ষ পূর্ণ হওয়া শর্ত অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ সম্পদ কারো অধীনে পূর্ণ ১ বছর থাকা শর্ত। কিন্তু বর্ষপূর্ণ হওয়ার পূর্বেও যাকাত প্রদান করা যায়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامَ اَنَّ حَضْرَتِ الْعَبَّاسٍ عَلَيْهِ السَّلَامَ سَاَلَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ تَعْجِيْلِ صَدَقَتِهِ قَبْلَ اَنْ تَـحِلَّ فَرَخَّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ.
অর্থ : “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, একবার হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আপন যাকাত বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই দেয়া সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে পবিত্র যাকাত প্রদানে অনুমতি দিলেন।” (আবূ দাউদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ফী তা’যীলিয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১৬২৪, তিরমিযী শরীফ : কিতাবুয যাকাত ‘আন্না রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : বাবু মাজায়া ফী তা’যীলিয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ৬৭৮; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু তা’যীলিয যাকাতি ক্ববলা মাহিল্লিহা : হাদীছ শরীফ নং ১৭৯৫)
আবার বছরের শুরুতে ও শেষে নিছাব ঠিক থাকলেও বছরের মাঝখানে যদি কমেও যায়, তবু যাকাত দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন, বছরের শুরু এবং শেষে তথা নির্ধারিত তারিখে নিছাব ঠিক থাকলে তাকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত দিতে হবে, যদিও মাঝখানে কখনো নিছাব থেকে কিছু অংশ কমে যায়। এরপরও তাকে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। (কুদূরী, আল হিদায়া)
=================================================
পবিত্র যাকাত উনার নিসাব: যে পরিমাণ অর্থ-সম্পদ বা নগদ অর্থ কোন ব্যক্তির সাংসারিক সকল মৌলিক প্রয়োজন বা চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ যা সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা ঐ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ নির্দিষ্ট তারিখে পূর্ণ এক বছর ঐ ব্যক্তির মালিকানায় থাকলে তা থেকে পবিত্র যাকাত প্রদান করা ফরয হয়, নূন্যতমভাবে ঐ পরিমাণ অর্থ-সম্পদকে পবিত্র শরীয়ত উনার পরিভাষায় ‘নিছাব’ বলে। আর যিনি নিছাব পরিমাণ মাল-সম্পদের মালিক হন উনাকে ছাহিবে নিছাব বলে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
وَالَّذِيْنَ فِي اَمْوَالِـهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ. لّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوْمِ.
অর্থ : “আর তাদের তথা ধনীদের মালে রয়েছে নির্ধারিত হক অভাবী ও বঞ্চিতের।” (পবিত্র সূরা মাআরিজ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে বুঝা গেল যে, পবিত্র যাকাত উনার সুনির্দিষ্ট হক্ব মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক নির্ধারিত। তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে, যেমন-
عَنْ حَضَرَتْ عَلِىّ عَلَيْهِ السَّلَامَ عَنِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبَعْضِ اَوَّلِ هَذَا الْـحَدِيثِ قَالَ فَاِذَا كَانَتْ لَكَ مِائَتَا دِرْهَمٍ وَحَالَ عَلَيْهَا الْـحَوْلُ فَفِيْهَا خَـمْسَةُ دَرَاهِمَ وَلَيْسَ عَلَيْكَ شَىْءٌ يَعْنِى فِى الذَّهَبِ حَتَّى يَكُوْنَ لَكَ عِشْرُوْنَ دِيْنَارًا فَاِذَا كَانَ لَكَ عِشْرُوْنَ دِيْنَارًا وَحَالَ عَلَيْهَا الْـحَوْلُ فَفِيْهَا نِصْفُ دِيْنَارٍ فَمَا زَادَ فَبِحِسَابِ ذَلِكَ.
অর্থ : “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমার ২০০ দিরহাম তথা সাড়ে ৫২ তোলা (বা প্রায় ৬০০ গ্রাম) রৌপ্যমুদ্রা থাকে এবং তোমার মালিকানায় এক বছর পূর্ণ হয়, তাহলে তাতে ৫ দিরহাম তথা ২.৫% বা ১৫ গ্রাম রূপা যাকাত ফরয হবে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে তোমাকে কোন যাকাত দিতে হবে না, যতক্ষণ না তুমি ২০ দীনার বা মিছকাল তথা সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের মালিক হও। যখন তোমার নিকট ২০ দীনার বা মিছকাল তথা সাড়ে ৭ তোলা বা প্রায় ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ হবে এবং তাতে এক বছর পূর্ণ হবে, তখন তা থেকে অর্ধ দীনার বা অর্ধ মিছকাল তথা ৪০ ভাগের ১ ভাগ পবিত্র যাকাত প্রদান করতে হবে। এর বেশি যা হবে, তা থেকে এ হিসেবেই দিতে হবে।” (আবূ দাউদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ফী যাকাতিস সায়িমাহ : হাদীছ শরীফ নং ১৫৭৩)
সুতরাং উপরোল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে ৪০-এ ১ টাকা, ১০০-তে ২.৫ টাকা, ২০০-তে ৫ টাকা, ১০০০-এ ২৫ টাকা যাকাত ধার্য করা হয়েছে। এভাবে যত উর্ধ্বে যাক না কেন সে অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে।
মাল-সম্পদের প্রকৃতি বা ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন মালের নিছাব বিভিন্ন রকম। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
=================================================
মূলত পবিত্র যাকাত মুসলমান উনাদের প্রায় যাবতীয় মালেই ফরয, যদি তার নিছাব ও শর্ত পূরণ হয়। যেমন- সোনা-রূপা, নগদ অর্থ, যমীনে উৎপন্ন ফসল ও ফলফলাদি, যমীনে প্রাপ্ত গুপ্ত ধন, খণিতে প্রাপ্ত খণিজ দ্রব্য, ব্যবসায়ের পণ্যদ্রব্য, গৃহপালিত পশু, যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এসকল প্রকার মালেই পবিত্র যাকাত ফরয। (আল হিদায়া)
পবিত্র যাকাত প্রদানের জন্য মাল-সম্পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তাবলী :
১. মাল নিছাব (শরীয়ত নির্ধারিত) পরিমাণ হওয়া।
২. উক্ত মাল নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য ও স্থাবর মালের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া।
৩. উক্ত মালের উপর পূর্ণ এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া।
৪. মালের উপর ব্যক্তির পূর্ণ মালিকানা থাকা।
৫. মুদ্রা, টাকা বা ব্যবসায়ের পণ্য হওয়া।
৬. পশুর যাকাতের ক্ষেত্রে পশু সায়িমা তথা বিচরণশীল ও বর্ধনশীল হওয়া।
৭. ফসলের পবিত্র যাকাত তথা ওশরের ক্ষেত্রে, যমীনে উৎপাদিত ফসল কম-বেশি যাই হোক; (বিনা শ্রম ও সেচে) তার দশ ভাগের এক ভাগ অথবা (শ্রম ও সেচে) বিশ ভাগের এক ভাগ পবিত্র যাকাত দেয়া, আমাদের সম্মানিত হানাফী মাযহাবে ফসলের কোন নিছাব নেই।
খ) যে সব মাল অর্থ-সম্পদের উপর পবিত্র যাকাত ওয়াজিব নয় :
১. বসবাসের ঘর।
২. পরিধেয় বস্ত্র।
৩. ঘরের আসবাব পত্র।
৪. আরোহণের পশু বা যানবাহন।
৫. কাজের জন্য ভাতা প্রদত্ত দাস-দাসি তথা খাদিম-খাদিমা।
৬. ব্যবহারের হাতিয়ার বা যুদ্ধাস্ত্র।
৭. হারানো বা লোকসান যাওয়া মাল।
৮. সমুদ্রে ডুবে যাওয়া মাল।
৯. ছিনতাই করে নিয়ে গেছে এমন মাল।
১০. মাটিতে পুতে রাখা মাল-সম্পদ যার স্থান স্মরণে নেই।
১১. ঋণ প্রদত্ত মাল যা গ্রহীতা বারবার অস্বীকার করেছে।
১২. লুণ্ঠিত মাল।
১৩. ব্যবসার অযোগ্য মাল।
১৪. স্থানান্তরের অযোগ্য ও স্থাবর ধন-সম্পদ।
১৫. এক বছর পূর্ণ হয়নি এমন মাল।
১৬. ইয়াতীম, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও দাস-দাসীর মাল।
এছাড়া হারাম কামাই দ্বারা অর্জিত মালের কোন পবিত্র যাকাত নেই। যদি কেউ পবিত্র যাকাত উনার নিয়ত করে পবিত্র যাকাত দেয় তাহলে তার কবীরা গুনাহ হবে। বৈধ মনে করলে কুফরী হবে। কাজেই অবৈধ মালের যেমন পবিত্র যাকাত নেই, তেমন তার মালিকের উপরও পবিত্র যাকাত নেই অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম উনার পরিভাষায় সে ছাহিবে নিছাব হবে না। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
=================================================
ফিকাহ ও ফতোয়ার শতসিদ্ধ মতানুসারে সরকারী রাজস্ব খাতে খাজনা, কর ও ইনকামট্যাক্স ইত্যাদি দিলেও যাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয তাদেরকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত ও পবিত্র উশর আলাদাভাবে আদায় করতে হবে।
মূলত পবিত্র যাকাত, মুসলমান উনাদের মালের ট্যাক্স বা খাজনা ও কর কোনটাই নয়; ইহা মুসলমান উনাদের এটা একটি পবিত্র মালি ইবাদত। ইহা শুধু মুসলমান উনাদের জন্য প্রযোজ্য। এ কারণেই ইহা খিলাফত উনার অধীনে অমুসলমান নাগরিকদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয করা হয়নি।
ইনকামট্যাক্স হচ্ছে গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক বা কুফরী মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠ সরকার তাদের সুবিধার জন্য তারা জোরপূর্বক জনগণের আয়ের উপর যে সুনির্দিষ্ট অর্থ ধার্য করে। এক কথায়- আয়ের উপর যে ট্যাক্স বা কর ধার্য করা হয় তাকে ইনকাম ট্যাক্স বা আয় কর বলে।
আর সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া মুতাবিক ইনকামট্যাক্স জায়েয নেই। যতটুকু সম্ভব এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত। এর সাথে পবিত্র যাকাত উনার কোন প্রকার সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা নেই অর্থাৎ ইনকামট্যাক্স দিলেও যাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয তাকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।
আর কর ও খাজনা হচ্ছে সরকার জনগণকে যে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে এবং জনগণও সরকার কর্তৃক যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে তার পরিবর্তে সরকার কর্তৃক ‘ধার্যকৃত অর্থ’ রাজস্ব খাতে প্রদান করাকেই ‘কর’ বলে। যেমন- বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল, পৌরকরসহ সর্বপ্রকার লাইসেন্স ইত্যাদি। আর ভূমি সংরক্ষণ, জরিপ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে যে সুযোগ-সুবিধা জনগণ লাভ করে থাকে তার বিনিময় সরকার কর্তৃক ‘ধার্যকৃত অর্থ’ রাজস্ব খাতে প্রদান করাকেই ‘খাজনা’ বলে। এই সমস্ত খাজনাগুলি আদায় করা জনগণের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই সমস্ত খাজনার সাথে পবিত্র যাকাত উনার কোন প্রকার সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা নেই।
সুতরাং ইনকামট্যাক্স, বৈধ কর ও খাজনা দেয়ার পর যাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয হবে তাদেরকে অবশ্যই পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।
=================================================
গরীবদের উপকার্থে বর্তমানে রুপার নিছাব হিসেবে যাকাত দেওয়া উত্তম।
মূলত পবিত্র যাকাত যে সময়ে ফরয হয় সে সময়ে সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের মূল্য সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্যের সমান ছিল বিধায় সোনা ও রূপা উভয়টিই নিছাবের মূল সূত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই এ সূত্রানুসারে উভয়ের যে কোন একটির মূল্য ধরলেই হয়।
তবে বর্তমানে যেহেতু রূপার মূল্য সোনার মূল্য অপেক্ষা অনেক কম তাই সতর্কতা ও পরহেযগারী হলো অল্পটি নেয়া। অর্থাৎ সোনা ও রূপা উভয়টির মধ্যে যেটাকে নিছাব হিসেবে গ্রহণ করলে গরীবের উপকার হয় সেটাকেই নিছাব হিসেবে গ্রহণ করা উত্তম ও তাক্বওয়ার অন্তর্ভূক্ত। এতে একদিকে যেমন পবিত্র যাকাতদাতার (ইবাদাতকারীর) সংখ্যা বাড়বে অন্যদিকে গরীবের বেশি উপকার হবে; যা পবিত্র যাকাত, ছদাকাত ও ইনফাকের মৌলিক চাহিদা। এটাই ইমাম ও মুজতাহিদীনগণ উনাদের গ্রহণযোগ্য মত। (কুদূরী, হিদায়া)
উল্লেখ্য : ১ ভরি = ১ তোলা বা ১১.৩৩ গ্রাম
সুতরাং ৭.৫ তোলা = ৮৫ গ্রাম (প্রায়),
৫২.৫ তোলা = ৫৯৫ গ্রাম (প্রায়)।
=================================================
উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা আব্রাহাম লিংকনের হারাম গনতন্ত্র,কমিউনিস্ট মাউসেতুং এর লংমার্চ,মুশরিক গান্ধীর হরতাল, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না।
যেমন পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে তথা ধর্মব্যবসায় ও পবিত্র দ্বীন-ইসলাম বিরোধী কাজেই ব্যয়িত হয়। কাজেই এদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের যাকাত আদায় হবে না।
এছাড়া যে সকল মাদরাসার ছাত্ররা হারাম খেলাধুলা করে দেখে, বেপর্দা হয়, গান বাজনা শুনে, টিভি সিনেমা দেখে। তাদের মাদরাসায় ও যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না।
আনজুমানে মফিদুল ইসলাম নামে একটি সংগঠন রয়েছে যারা পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের উপভোগের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমান উনাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে-
ক) পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম উপভোগের মাধ্যমেও তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
গ) আরেক দিক থেকে যাকাতদাতাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাতদাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাতদাতাদের কোন যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে পবিত্র যাকাত উনার টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
অনুরূপভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমান উনাদের জন্য শিক্ষা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমান উনাদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে, অন্যদিকে মুসলমান উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকান্ডে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।
বিশেষ পোস্ট সংক্ষিপ্ত
=================================================
পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীনদার, পরহেযগার ন্যায়পরায়ণ ও আশিকে রসূল বাদশাহ তরতীব মুতাবিক পালনের ব্যবস্থা করেন
=================================================
পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বিরোধী বিদয়াতীরা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে বিদয়াত প্রমাণ করতে গিয়ে আরেকটি মিথ্যা তথ্য সংযুক্ত করে থাকে। তারা বলে, “সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার এরূপ তরতীব প্রচলন করেন ছয়শত হিজরীতে একজন ফাসিক বাদশাহ।” নাঊযুবিল্লাহ!
মূলত, তাদের উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়; বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা ও জিহালতপূর্ণ। কারণ নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থসমূহ ও সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য সমস্ত কিতাবেই উক্ত বাদশাহকে নেক্কার, পরহেযগার, ছালেহীন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাফিযে হাদীছ হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্বীয় বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ “সিয়ারু আলাম আন নুবালা”-উনার ২২তম জিঃ ৩৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
ﻛﺎﻥ ﻣﺘﻮﺍﺿﻌﺎ ﺧﻴﺮﺍ ﺳﻨﻴﺎ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ
অর্থ: “বাদশাহ হযরত মালিক মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও উত্তম স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছগণকে অত্যন্ত ভাল বাসতেন।”
এ মহান বাদশাহর প্রশংসায় উনার সমকালীন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী ইবনে হযরত খাল্লিক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন
ﻭﻛﺮﻡ ﺍﻻﺧﻼﻕ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ ﺣﺴﻦ ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺳﺎﻟﻢ ﺍﻟﻄﺎﻗﺔ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﻤﻴﻞ ﺍﻟﻲ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻻ ﻳﻨﻔﻖ ﻋﻨﺪ ﻣﻦ ﺍﺭﺑﺎﺏ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ﺳﻮﻱ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﻭﻣﻦ ﻋﺪﺍﻫﻤﺎ ﻻ ﻳﻌﻄﻴﻪ ﺷﻴﺎ ﺍﻻ ﺗﻜﻠﻔﺎ
অর্থ: “বাদশাহ হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রশংসনীয় বা উত্তম চরিত্রের অধিকারী, অত্যধিক বিনয়ী ছিলেন। উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।” (“ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান” গ্রন্থের ৪র্থ জিঃ ১১৯ পৃষ্ঠা)
মহান বাদশা বিশুদ্ধ আক্বীদা এবং উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন বলেই সে জামানার সকল আলিম উলামা, মাশায়েখ, সূফী দরবেশ সবাই সে সময় উনার আয়োজিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার মধ্যে উপস্থিত হতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ক্বাযী ইবনে খল্লিক্বান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ﻭﺍﻣﺎ ﺍﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻤﻮﻟﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﺎﻥ ﺍﻟﻮﺻﻒ ﻳﻘﺼﺮ ﻋﻦ ﺍﻻﺣﺎﻃﺔ ﺑﻬﺎ ﻭﻟﻜﻦ ﻧﺬﻛﺮ ﻃﺮﻗﺎ ﻣﻨﻪ ﻭﻫﻮ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻗﺪ ﺳﻤﻌﻮﺍ ﺑﺤﺴﻦ ﺍﻋﺘﻘﺎﺩ ﻓﻴﻪ ﻓﻜﺎﻥ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺳﻨﺔ ﻳﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﻣﻦ ﺍﺭﺑﻞ ﻣﺜﻞ ﺑﻐﺪﺍﺩ ﻭﺍﻟﻤﻮﺻﻞ ﻭﺍﻟﺠﺰﻳﺮﺓ ﻭ ﺳﻨﺠﺎﺭ ﻭﻧﺼﺒﻴﻦ ﻭﺑﻼﺩﺍ ﺍﻟﻌﺠﻢ ﻭﺗﻠﻚ ﺍﻟﻨﻮﺍﺣﻲ ﺣﻠﻖ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﺼﻮﻓﻴﺔ ﻭﺍﻟﻮﻋﺎﺀﻅ ﻭﺍﻟﻘﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﺸﻌﺮﺍﺀ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি কতৃক আয়োজিত মীলাদ মাহফিলের গুরুত্ব-মাহাত্ব বলে শেষ করার মত নয়। এতদসত্বেও একটি কথা না বললেই নয়। তাহলো দেশবাসী আক্বীদা ও বিশ্বাসে উনাকে উত্তম লোক বলেই জানতেন। আর তাই প্রতি বছর আরবলের নিকটবর্তী সকল দেশে যেমন-বাগদাদ, মাওয়াছিল, জাযীরাহ, সানজার, নাছীবাইন, আরব-অনারব ও আশ পাশের অসংখ্য আলীম উলামা, ফক্বীহ, ছালিহ, ওয়ায়িজ, ক্বারী ও শায়িরগন উক্ত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাহফিলে উপস্থিত হতেন।”
[সূত্রঃ- ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান, ৪র্থ খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা]
বিখ্যাত তাফসীরকারক ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা হযরত ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”-উনার ১৩তম জিঃ ১৭৪ পৃষ্ঠায় লিখেন-
أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى
র্অথঃ “(মুযাফফর শাহ) ছলিনে একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহমিান্বতি শাসক, যাঁর সকল কাজ ছলি অতি উত্তম। তিনি কাসইিউন-উনার কাছে জামযে়া আল-মুযাফফরী নর্মিাণ করনেৃ..(প্রত) রবীউল আউয়াল মাসে তিনি জাঁকজমকরে সাথে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ (মীলাদুন্নবী) উদযাপন করতনে। উপরন্তু, তিনি ছলিনে দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বদ্বিান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক – রাহমিুহুল্লাহ ওয়া একরাম – শায়খ আবুল খাত্তাব রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলতানরে জন্যে মওলদিুন্ নববী সর্ম্পকে একখানি বই লখিনে এবং নাম দনে ‘আত্ তানভরি ফী মওলদি আল-বাশরি আন্ নাযীর’। এ কাজরে পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দিনার দান করনে। সালাহিয়া আমল র্পযন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তিনি ’আকা’ জয় করনে। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থেকে যান।” আস সাবত এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন-যিনি সুলতানের আয়োাজত মওলুদ অনুষ্ঠানে যোগ দেন; ওই ব্যক্তি বলেন:
‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-র্ভতি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মষ্টিরি আয়োজন করতেন।”
এ মহান বাদশাহ বিশুদ্ধ আক্বীদা ও উত্তম আমলের অধিকারী ছিলেন এবং তিনি যে তরতীবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ-উনার মাহফিল উদযাপন করতেন তা শরীয়তসম্মত ছিল বলেই সে যামানার প্রায় সকল আলিম-উলামা পীর-মাশায়িখ, ছূফী-দরবেশ, ক্বারী, ওয়ায়িজ উক্ত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ-উনার মাহফিলে উপস্থিত হতেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি আরো উল্লেখ করেন,
ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺍﻟﻤﻈﻔﺮ ﺍﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﻛﻮﻛﺒﺮﻱ ﺍﺣﺪ
ﻟﻼﺟﻮﺍﺩ ﺍﻟﺴﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﻜﺒﺮﺍﺀ ﻭﺍﻟﻤﻠﻮﻙ
ﺍﻻﻣﺠﺎﺩﻟﺔ ﺍﺛﺮ ﺣﺴﻨﺔ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন আবু সাঈদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি দানশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। সাথে সাথে তিনি সম্মানিত বাদশাও ছিলেন। উনার বহু পূন্যময় কাজের আলামত এখনও বিদ্যমান রয়েছে।” [ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৩ তম, খন্ড ১৩৬ পৃষ্ঠা]
আল্লামা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত বাদশাহ সম্বন্ধে উনার‘হুসনুল মাক্বাছীদ ফী আমালিল মাওয়ালিদ’ কিতাবে সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিছ আল্লামা হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন যে-
وكان شهما شجاعا بطلا عالما عادلا رحمه الله واكرم مثواه.
অর্থ: ‘তিনি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, সাহসী, বীর্যবান, আলিম ও ন্যায় বিচারক ছিলেন। আল্লাহ পাক উনার উপর রহম করুন এবং উনাকে সম্মানিত বাসস্থান দান করুন।’
=================================================
পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীনদার, পরহেযগার ন্যায়পরায়ণ ও আশিকে রসূল বাদশাহ তরতীব মুতাবিক পালনের ব্যবস্থা করেন উনাকে মূর্খ ও যিন্দীক অভিহিত করে শরীয়তের ফতওয়া মুতাবিক উলামায়ে ছূ’রা নিজেরাই মূর্খ ও যিন্দীক হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে।
কারণ, কেউ যদি কাউকে কোন অপবাদ দেয়, সে যদি তার উপযুক্ত না হয় তাহলে যে অপবাদ দিয়েছে সেটা তার উপরই বর্তাবে এবং উক্ত অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েই সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। নাঊযুবিল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان العبد اذا لعن شيأ صعدت اللعنة الى السماء فتغلق ابواب السماء دونها ثم تهبط الى الارض فتغلق ابوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشمالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذى لعن فاذا كان لذالك اهلا والا رجعت الى قائلها
অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যখন কোন বান্দা কোন বস্তুকে অভিসম্পাত করে তখন সেই অভিসম্পাত আকাশে উঠে, তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন সেই অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন যমীনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিকে ও বাম দিকে যায় এবং যখন সেখানেও কোন রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়, তবে তার উপর পতিত হয়; অন্যথায় অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে।।” (আবূ দাউদ শরীফ)
