পবিত্র যাকাত এমন একটি ভিত্তি যার উপর সম্মনিত দ্বীন ইসলাম সুদৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে

পবিত্র যাকাত উনার গুরুত্ব ও ফযীলত

পবিত্র যাকাত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৫টি রোকন বা স্তম্ভসমূহের মধ্যে ৩য় বা মধ্যবর্তী রোকন বা মূল ভিত্তি। পবিত্র ঈমান ও নামায উনাদের পরেই পবিত্র যাকাত উনার স্থান।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنِ حَضَرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُنِيَ الْاِسْلَامُ عَلَى خَـمْسٍ شَهَادَةِ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُـحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَاِقَامِ الصَّلٰوةِ وَاِيتَاءِ الزَّكوةِ وَالْـحَجّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- পবিত্র ইসলাম পাঁচটি বুনিয়াদ বা ভিত্তির উপর স্থাপিত। (১) ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ বা রব নেই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রসূল’- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া। (২) পবিত্র নামায কায়িম করা। (৩) পবিত্র যাকাত প্রদান করা। (৪) পবিত্র হজ্জ সম্পাদন করা। (৫) পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মাসে রোযা পালন করা।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবু দু‘য়ায়ুকুম ঈমানুকুম : হাদীছ শরীফ নং ৮; মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবু বাইয়ানি আরকানিল ইসলামি ওয়া দা‘য়ায়িমিহিল ইজ্বমি : হাদীছ শরীফ নং ১৬; নাসায়ী শরীফ : কিতাবুল ঈমানি ওয়া শরায়ি‘য়াহ : বাবু ‘আলা কাম বুনিয়াল ইসলাম : হাদীছ শরীফ নং ৫০০১; তিরমিযী শরীফ : কিতাবুল ঈমান ‘আন রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : বাবু মাজাআ বুনিয়াল ইসলামু ‘আলা খ¦ামস : হাদীছ শরীফ নং ২৬০৯)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র যাকাত হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৩য় অর্থাৎ মধ্যবর্তী বুনিয়াদ বা ভিত্তি। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান যার যার ইসলাম নামক ঘরকে দৃঢ় করতে হলে যাকাত নামক মধ্যবর্তী খুঁটি বা ভিত্তিকে অবশ্যই সুদৃঢ় করতে হবেই। মধ্যবর্তী খুঁটি বা ভিত্তি ছাড়া যেমন একটি ঘর সুদৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ঠিক তেমনি প্রত্যেক মুসলমানের যার যার ইসলাম নামক ঘরও মধ্যবর্তী খুঁটি যাকাত ছাড়া কোন ভাবেই সুদৃঢ় থাকতে পারে না।

দ্বিতীয়ত পবিত্র যাকাত সম্মানিত ঈমান উনার দলীল স্বরূপ। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَاَقَامُوْا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ لَـهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّـهِـمْ

অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, আমলে ছলেহ করে, নামায কায়িম করে ও যাকাত আদায় করে, তাদের জন্য বিনিময় রয়েছে তাদের রব তায়ালা উনার নিকট। তাদের কোন ভয় থাকবে না, কোন চিন্তা পেরেশানীও থাকবে না। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭৭)
আর অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-

اَلَّذِيْنَ لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَهُم بِالْاٰخِرَ‌ةِ هُمْ كٰفِرُ‌وْنَ.

অর্থ : যারা পবিত্র যাকাত আদায় করে না, আর তারাই পরকাল অবিশ্বাসী। (পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْـمَنِ بْنِ غَنْمٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ حَضْرَتْ اَبَا مَالِكٍ الاَشْعَرِيَّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حَدَّثَهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ شَطْرُ الاِيـْمَانِ وَالْـحَمْدُ لِلّٰهِ تَـمْلاُ الْمِيْزَانَ وَالتَّسْبِيْحُ وَالتَّكْبِيْرُ يـَمْلاُ السَّمَوَاتِ وَالاَرْضَ وَالصَّلٰوةُ نُوْرٌ وَالزَّكٰوةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْاٰنُ حُجَّةٌ لَكَ اَوْ عَلَيْكَ‏.‏

অর্থ : “হযরত আব্দুুর রহমান ইবনে গাম্মি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আবূ মালিক আশ‘য়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুনেছেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করা ঈমানের অর্ধেক। আর আলহামদুলিল্লাহ্ মীযানকে পরিপূর্ণ করে ফেলবে, তাসবীহ্ ও তাকবীর আসমান-যমীনকে পরিপূর্ণ করে ফেলবে। নামায হলো নূর (আলো) আর যাকাত হলো দলীল, ধৈর্য্য (রোযা) হলো জ্যোতি এবং পবিত্র কুরআন শরীফ হলো তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ।” (নাসায়ী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু উযূবিয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ২৪৩৭)

যেহেতু পবিত্র যাকাত সম্মানিত ঈমান উনার দলীল। তাই কেউ যদি যাকাত আদায় না করে তাহলে স ব্যক্তি ঈমানদার হিসেবে সাব্যস্ত হবে না, বরং কাফির হবে।

তৃতীয়ত–পবত্রি যাকাত হচ্ছে র্অথনতৈকি মুক্তরি র্শত। মহান আল্লাহ পাক তিনি রিযিকের মালিক, তিনি যাকাত ব্যবস্থাপনা দিয়েছেন। একমাত্র পবিত্র যাকাত উনার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বচ্ছলতা আসে এবং আত্মিক পরিতৃপ্তি অর্জন হয়। কুদরতী ফায়সালা হবে, চাহিদাতো মিটবেই সম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمَا اٰتَيْتُم مّن زَكٰوةٍ تُرِ‌يدُونَ وَجْهَ اللهِ فَاُولئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ.

অর্থ : “আর তোমরা যারা যাকাত দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি কামনা কর; তারাই ঐ সম্পদ বহুগুণ প্রাপ্ত হবে।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৯)

বস্তুত যখনই যাকাত ব্যবস্থা জারী হয়েছে তখন ঘরে ঘরে লক্ষ লক্ষ দিনার-দিরহাম। বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আসহাবে ছুফফা উনার সদস্য। তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ক্ষুধার তাড়নায় মাটি কাঁমড়ে পড়ে থাকতেন। সেই হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফাতুছ ছালিছ হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে যখন যাকাত ব্যবস্থা বিস্তৃত পরিসরে বিস্তার লাভ করেলো তখন বলেছেন যে, উনারা কাফতানের কাপড় দিয়ে নাক মুবারক মুছেছেন। সুবহানাল্লাহ!

আবার হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফতকালে যাকাত ব্যবস্থা এমনভাবে জারী হয়েছিলো যে, বায়তুল মাল থেকে যাকাত প্রদানের জন্য জনসাধারণকে জাননো হলেও কেউই যাকাত নিতে আসলো না। এমতবস্থায় বাজারে বাজারে যাকাত গ্রহণের জন্য ঘোষণা প্রদান করা হলো কিন্তু এতেও কেউ আসলো না। অতঃপর খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষ থেকে ফরমান মুবারক দেয়া হলো যে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে যেন যাকাত গ্রহণের জন্য ঘোষণা প্রদান করা হয়। কিন্তু এতেও কোন সাড়া পাওয়া গেল না। সুতরাং এটা সহজেই বোধগম্য যে, যাকাত ব্যবস্থা অর্থনৈতিক মুক্তি কিভাবে এনে থাকে।