নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজের বিলাদত শরীফ পালন করে খুশি প্রকাশ করেন

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেও নিজের মীলাদ শরীফ তথা বিলাদত শরীফ, বংশ মর্যাদা ও ছানা-ছিফত বা প্রশংসা করেছেন। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن العباس رضى الله تعالى عنه انه جاء الى النبى صلى الله عليه و سلم فكانه سمع شيئا فقام النبي صلى الله عليه و سلم على المنبر فقال من انا ؟ فقالوا انت رسول الله فقال انا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب عليهما السلام. ان الله خلق الخلق فجعلنى فى خيرهم ثم جعلهم فرقتين فجعلنى فى خيرهم فرقة ثم جعلهم قبائل فجعلنى فى خيرهم قبيلة ثم جعلهم بيوتا فجعلنى فى خيرهم بيتا فانا خيرهم نفسا وخيرهم بيتا.

অর্থ: হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমীপে উপস্থিত ছিলাম। ইতোপূর্বে কোনো কোনো লোক আমাদের বংশ মর্যাদা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলো। সম্ভবত এ সংবাদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্ণগোচর হয়েছিলো। এ সময় উনার দরবার শরীফ-এ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মিম্বর শরীফ-এ আরোহণ করতঃ উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে?” তখন সকলে সমস্বরে উত্তর দিলেন, “আপনি হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।” অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “আমি হচ্ছি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পুত্র, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পৌত্র। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে কুল-মাখলূকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, মাখলূকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গোত্র কুরাইশ খান্দানে এবং কুরাইশ গোত্রের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হাশেমী শাখায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘরে আমাকে প্রেরণ করেছেন।”(তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

আরো বর্ণিত রয়েছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই নিজের মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পালনার্থে খুশি প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করেন-

انى دعوت ابراهيم عليه السلام وبشارة عيسى عليه السلام ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضائت لها منه قصور الشام.

অর্থ: “আমি হলাম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ এবং আমার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার দেখা সুস্বপ্ন ও অলৌকিক ঘটনার বাস্তব প্রতিফলন। আমার মাতা আমার বিলাদত শরীফ-এর সময় দেখেছিলেন যে, এক খ- বরকতময় “নূর” যমীনে তাশরীফ নিলেন এবং সে নূর মুবারক-এর আলোর প্রভাবে শাম দেশের বালাখানাসমূহ উনার দৃষ্টিগোচর হলো।” (শরহুস সুন্নাহ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহ থেকে এটাই ছাবিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই নিজের মীলাদ তথা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন।

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেছেন। উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করেছেন।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে আমরা যেভাবে মজলিস করে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের যামানাতেই ছিলো।

যেমন এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে মহান আল্লাহ পাক উনার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত ও সালাম তথা) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى رضى الله تعالى عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.

অর্থ: “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এসেছেন। এই দিবসে ইহা সংঘটিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি)। এমন সময় নূরে মুজাসসাম রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সমস্ত রহমতের দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফদ্বয় থেকে প্রথমত যে বিষয়টি প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল করেছেন। আর আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা শুধু সমর্থনই করেননি বরং তিনি ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মজলিস করার জন্যে উম্মতদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মজলিস করা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।

এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত শিহাবুদ্দীন ইবনে হাজার হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম”-উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

 

وقال على رضى الله تعالى عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنة بغير حساب.

অর্থ: “ইমামুল আউয়াল মিন আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!

قال ابو بكر الصديق رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.

অর্থ: “হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে ব্যক্তি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।”সুবহানাল্লাহ!

وقال عمر رضى الله تعالى عنه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام.

অর্থ: “হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলকে অর্থাৎ বিলাদত শরীফ দিবসকে বিশেষ মর্যাদা দিলো সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!

وقال عثمان رضى الله تعالى عنه من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين.

অর্থ: “হযরত যূননুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আতা ইবনে ইয়াছার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “একদা আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমীপে গেলাম এবং আরজু করলাম, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে না’ত শরীফ তাওরাত কিতাবে আছে তা আমাকে আবৃত্তি করে শুনান। তখন তিনি আমাকে তা আবৃত্তি করে শুনালেন।” (বুখারী শরীফ, দারেমী, মিশকাত)

অর্থাৎ তাওরাত শরীফ-এ বর্ণিত মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে পাঠ করে শুনালেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।